Wednesday, 29 December 2021
মাঝি মাল্লার জীবন
মাঝিমাল্লার জীবন *****************
পাল উঠেছে নৌকো ভাসে
পূর্ণিমার ঐ জ্যোৎস্না হাসে
ঢেউয়ের দোলায় দুলছে জীবন,
দ্যাখো সময় কাটে রঙ্গরসে।
তাদের প্রাণের মাঝে তুমি
বানিয়ে নিয়ে সুখের বাসা
জীবন চাইছে আকড়ে সেথায়
ভরিয়ে দেবে ভালো বাসা।
ইচ্ছে গুলো স্বপ্নে রাতে
ঘুমের জমি দখল করা
বুনছে চারা রঙীন দিনের
প্রভাত আলোয় ছন্ন ছাড়া।
হারালে খন তুমিও শেষে
গেলে যোগ বিয়োগের দেশে
একলা ঘরে আমিও আছি
বসে ঝরা পাতার বেশে।
সন্ধ্যা নামল মোহিনী রূপে
স্থিতধী ঐ নদীর বুকে
আলো আঁধারি তরী মাঝে
মাঝিরা মাতে গল্পে সুখে!
উপরে সেতু আলোক সাজে
নিয়েছে যেন মৌন ব্রত
আঁধার বুকে হাসে উচ্ছ্বল
তরঙ্গ রাশি অবি-রত।
নদীর বুকে ভাসে নৌকা
অপরূপ সাঁঝের রূপ-কল্প
গোধূলি আলোয় মগ্ন দেখো
মাঝি-মাল্লার জমায় গল্প॥
_______________________
©উshaস চttopaধ্যায়~
<তাং- ২৯|১২|২১>
Tuesday, 28 December 2021
পাহাড় কোলে!
#কবিতা #পাহাড়_কোলে
***************
পাহাড় চূড়ায় মেঘেরা অমন
হুঙ্কার কেনো ছাড়ে,
নানা সূত্রে কলহ ওদের
যেনো যৌথ পরিবারে!
গুমরে ওঠে কালো মেঘে,
বৃষ্টি আসছে ঝেঁপে
পাহাড় কোলের ঝর্ণা বয়ে
পুরো পাকদন্ডী কেঁপে।
শেষে তুমিও ঝর্না হলে
পড়ছে চরণ যত্র-তত্র
মলিন সেতো স্মৃতি এখন
তোমার পাঠানো শেষ পত্র।
ঝর্ণা শাণিত, পাথর কেটে
রাস্তা বানায় নিজে,
তুমিও চালাও ধারালো ছুরি
ঠিক হৃদয়েরই ভাঁজে?
পাথর খন্ডে শ্যাওলা জমে
যে খানে জল পড়ে
তুমিও যেমন দুঃখ আঁকো
আমার দর্প চূর্ণ করে।
পাহাড়ের ঐ কোলেই দ্যাখো
খোঁজে তাদের বাসা
এখানেই আছে হেঁয়ালি হয়তো
রূপকথার যাওয়া আসা..
আরে, তুমি আমি কাছাকাছি
হলেও সাত জন্মের তফাৎ,
বাঁচতে হলে মরতে হবেই
এটাও জানায় জলপ্রপাত।
©উষস চট্টোপাধ্যায়~
<তাং - ২৮|১২|২১>
Sunday, 26 December 2021
ঠুনকো সম্পর্ক!
ঠুনকো সম্পর্ক:-
*************
রানা ছুঁড়ে কাঁচের গ্লাসটা ফেলে ভাঙলো, যাতে ক্রিসমাসের রাতে মদ খাচ্ছিল।
টুকরো টুকরো কাঁচগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রইল মেঝেতে। সেই সাথে রেনুর লাসটাও, রানা ওঠাল না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়নাটায় ফুটে ওঠা প্রতিচ্ছবিটির দিকে। অবসন্ন, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত এক মানুষের প্রতিচ্ছবি যেন। রানা তাকিয়েই রইল। তারপর হঠাৎই পা ফেলে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গেল ভাঙা গ্লাসের কাঁচের টুকরোগুলোর ওপর দিয়ে। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জেগে উঠছে পায়ের তলায়। কাঁচের টুকরোগুলো পায়ের মাংসে গেঁথে গিয়ে তাকিয়ে আছে! কতটা ভীষণ তীক্ষ্ম, কি ভয়ংকর ক্ষুধার্ত!
রানা তাও আরেকবার হেঁটে গেল, তীব্র যন্ত্রণায় তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। সে বিড়বিড় করে বলল, 'আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?'
ঘরে তো আর কেউ নেই, শুধু রেনুর লাসটা। এই প্রশ্ন সে কাউকে করেও নি। স্রেফ স্বগতোক্তি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আয়নার ভেতর থেকে ক্লান্ত, অবসন্ন, বিধ্বস্ত একটা প্রতিমূর্তি কথা বলে উঠল, 'তুমি পাগল হয়ে যাও নি'!
রানার অবাক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সে একটুও অবাক না হয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল, 'তাহলে?'
আয়নার ভেতর থেকে প্রতিমূর্তিটা বলল, 'তাহলে আর কী? তুমি একটা সত্য আবিস্কার করে ফেলেছো'।
রানা বলল, 'কী সত্য?'
সেই রূপটা বলল, 'সম্পর্ক এত ছোট ছোট সন্দেহে টেকে না, মানছি রেনুর মৃত্যু তোমাকে ভাবিত করে তুলেছে কিন্তু ও যেটা দিনের পর দিন করছিল তাও তোমায় ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো, সম্পর্ক ভেঙে গেলে এমন খুনে, আততায়ী হয়ে যায়, লুকিয়ে থাকা চেহারাটা বের হয়।'
রানা বলল, 'কেন?'
রূপটা বলল, 'খানিক আগে যে গ্লাসটায় ঠোঁট ডুবিয়ে মদ খেলে, কি মোলায়েম, মসৃণ আর পেলবতা ছুঁয়ে দিল তোমার ঠোঁট। অথচ এখন দেখ, সেই গ্লাসটাই ভেঙে গিয়ে কতটা তীক্ষ্ণ আর ধারালো হয়ে উঠেছে, পা কেটে রক্ত অবধি বের করে দিল, তাই না?'
রানা জবাব দিল না। প্রতিমূর্তিটা বলল, 'অথচ এই ভয়ংকর টুকরোগুলোই কিন্তু আস্ত গ্লাসটার ভেতর লুকিয়ে ছিল! তখন কি একটুও বুঝতে পেরেছো?'
রানা অবাক গলায় বলল, 'না'।
রূপটা বলল, 'সম্পর্কগুলোও এমন, ভেঙে গেলেই শুধু পুরোপুরি টের পাওয়া যায়, ভেতরে কি লুকিয়ে ছিল, কি ধারালো, কি তীক্ষ্ণ আর ভয়ংকর!'
রানা কোনো কথা বলল না। সে তাকিয়ে রইল রেনুর মৃতদেহ আর কাঁচের টুকরোগুলোর দিকে। ঝাপসা চোখের ভেতর সেগুলো ক্রমশই যেন পুরনো সব স্মৃতি হয়ে ফিরে আসছে। খুব দ্রুত ফিরে আসছে স্মৃতিরা। ফিরে আসছে প্রিয় কিছু মানুষ, তাদের মুখ, ফেলে আসা সময়, কিংবা একান্ত নিজের একার কোন মানুষ হয়ে। তার একান্ত কোন স্মৃতি, স্মৃতিময় সময়, সম্পর্ক কিংবা অনুভব হয়ে!
আহা, সে বলার জন্য উপযুক্ত আর কিছু পেল না!
রানা আবার উঠে দাঁড়াল। উঠে সে পুলিশকে ফোন করে তার ঠিকানা দেয় আর খবর দেয় যা ঘটেছে, তারপর চট করে ঝাঁট দিয়ে মেঝে থেকে কাঁচগুলো সরিয়ে নিল। সে আর একবার কারুর পা কাটতে চায় না, রক্তাক্ত হতে দিতেও চায় না।
সে জানে, কিছু সম্পর্ক, সম্পর্কের স্মৃতিও এই কাঁচের মতনই ঠুনকো, তার থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, যত দ্রুত মুছে ফেলা যায় তত ভালো। না হলে ক্রমাগত এমন করেই কেটে কেটে যেতে হয়, রক্তাক্ত হতে হয়! হয়তো আরও বেশ কয়েকটা বছর...
©উshaস চttopaধ্যায়~
Sunday, 19 December 2021
The Chaos...
Okay I get it. 💁🏻♂️
Life can literally have its shitty moments. It happens to us all. No matter how optimistic one can be, every now and then the f… bombs will fly out of our mouths.. 😄
Well maybe it is just me 🤣
However you choose to release that stress or frustration, chaos will find a way to do its thing. 🙏
The thing is this: It pulls things apart that we want to hold on to but don’t need to, in order to bring things together that will eventually workout to something better for us.
This is called CHANGE. And with it comes discomfort 😞
We will still kick and scream like children in a toy store not getting what they want, but once the dust settles we actually see what we are now receiving. We get a better playing hand 🤚🏽at life.
In the midst of chaos, hold steady, go with the flow and allow things to take their course.
#experience #leadership #success #motivation #education #ChinUpFiGHTERs
Thursday, 9 December 2021
সূর্য সেন ও চট্টগ্রামে বিদ্রোহ
"বাবা, কি দেখছো?" ছেলে জিজ্ঞেস করলো। ছাত্র পড়িয়ে এখনকার কোভিড সময়ের CBSE ও ICSE-র টার্ম-১এর ফাঁকা টাইমে ইউটিউবে দেশাত্মবোধক এটা সেটা সার্চ করতে করতে সূর্য সেন নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, আমার রিসার্চের সেম-টাইমফ্রেমের মধ্যেই পড়ছিল।
উত্তরে আমি বললাম যে, "আজকের দিনে আমরা যে স্বাধীন দেশটি অর্জন করতে পেরেছি, যাদের জন্য পেরেছি, তাদেরই মধ্যে একজনের স্বমন্ধে প্রতিবেদন। এই যেমন গতকাল বিনয়, বাদল, দিনেশ এর জন্য মনে রাখা উচিত..."। বলে দুইজনে হুজুগে দু-দুটি সহজপ্রাপ্য সিনেমাও দেখে ফেললাম সকাল থেকে। ছেলেরও এখন ছুটি, সদ্য অ্যানুয়াল শেষ হওয়ায়। বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ও প্রতিবেদন দেখার পরে যে মুভি দুটি দেখলাম তা হল; ১: Chittagong (2012)
২: Khele Hum Jee Jaan Se (2010)
আপনারা আশা করি বুঝতেই পারছেন যে কোন বিপ্লবীর কথা আমরা বলাবলি করছিলাম। হ্যা, সূর্য সেন, 'মাস্টার দা' সূর্য সেন। তা ছেলের ইতিহাস বইতে সেও পড়েছে 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন'.. ব্যাস, ওর-ও বেশ ইচ্ছা চেপে বসল। ইতিহাসকে আরো জানার, আরো শেখার! স্বভাবতই প্রশ্ন এলো, "কে এই মাস্টার দা?" তার উত্তরে নিচের প্রতিবেদনটি লেখা রইল! 👇🏼
বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক হলেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক 'মাস্টার দা' সূর্য সেন। ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে সূর্য সেন তার ছাত্র ও সহযোগীদের নিয়ে 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি' গড়ে তোলেন। ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রি অম্বিকা চক্রবর্তী, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখ ৬৫ জন সঙ্গীকে নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ ও লুন্ঠন করেন। তাঁরা টেলিফোন, টেলিগ্রাফের তার বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে ‘স্বাধীন বিপ্লবী সরকার’ গঠন করেন। এরপর ইংরেজ সৈন্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করলে বিপ্লবীরা নিকটবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং যুদ্ধ শুরু করেন। সশস্ত্র যুদ্ধে কয়েকজন বিপ্লবী নিহত হন ও অন্যান্যরা পলায়ন করে কিছুদিন ধরে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে যান। মাস্টারদার অন্যতম শিষ্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন এবং পুলিশের হাতে ধরা পরার আগে আত্মহত্যা করেন। অবশেষে ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দে বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সূর্যসেন ধরা পড়েন, বিচারে তাঁর ফাঁসি (১৯৩৪ খ্রীঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী) হয়। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের এই যুব বিদ্রোহ সমগ্র ভারতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করে। চট্টগ্রামের ঘটনার গুরুত্ব বিচার করতে গিয়ে স্যার স্যামুয়ের হোয় একে ‘বিপ্লবীদের ইতিহাসে অভূতপূর্ব' বলে অভিহিত করেছেন।
এই হল সারমর্ম, কিন্তু আমার ইতিহাস আর ক্লাস সিক্সে পড়ার ইতিহাস কিছু হলেও ভিন্ন তো হবে, তাই না? আসুন আরো গভীরে যাওয়া যাক।
একপাশে কালী অপরদিকে বিবেকানন্দের ছবি রেখে যুদ্ধের বার্তা দিতেন মাস্টারদা:
'মৃত্যু কিংবা স্বাধীনতা', এই মন্ত্রে বিশ্বাস করতেন মাস্টারদা, তিনি সবার মাস্টারদা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বড় মুখ। সেই মাস্টারদা তাঁর সহ যোদ্ধাদের প্রত্যেকের ঘরে স্বামীজির ছবি রাখার কথা বলেছিলেন। বিবেকানন্দের আদর্শে যেমন উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন নেতাজী, তেমনই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনও। সেই তথ্য মেলে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে।
শঙ্করীপ্রসাদ বসু তাঁর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’-এর ষষ্ঠ খণ্ডে ‘বিবেকানন্দ ও বিপ্লব আন্দোলন’ অধ্যায়ে বিপ্লবী অনন্ত সিংহের লেখা ‘সূর্য সেনের স্বপ্ন ও সাধনা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, সূর্য সেন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে কতখানি প্রভাবিত ছিলেন সে সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন তাঁর আর এক সহকর্মী অনন্ত সিংহ। "মাস্টারদা… বিনয়ের সঙ্গে অথচ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে চারজন বিপ্লবী বন্ধুকে বললেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের বুকে বসে মাত্র এই পাঁচজনে ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবের পরিকল্পনা করছি। আমার মনে হয় বর্তমানে মূলত আনন্দমঠের আদর্শে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চলা উচিত এবং মা-কালী পূজা, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের বাণী ও গীতাপাঠ কর্তব্য হওয়া প্রয়োজনʼ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবাই আলোচনার পরে মাস্টারদার এই সমস্ত প্রস্তাবগুলো মেনে নিলেন। প্রত্যেকের নিজের ঘরে মা-কালীর ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, স্বামী বিবেকানন্দের ছবি, ও একখানা গীতা রাখাটা নিয়মে পরিণত হল। আমাদের পরে যারা দলভুক্ত হয়েছে তারাও মা-কালী ও স্বামীজীর ছবি ঘরে রাখত এবং গীতা সঙ্গে রাখত।”
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য স্বামী পূর্ণাত্মানন্দকে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলেছেনঃ “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক লোকনাথ বল মহাশয়ের অধীনস্থ কর্মচারী ছিলাম। তাঁর নিজের মুখ থেকেই শুনেছি, মাস্টারদা যেমন আমাদের গীতার মর্মকথা বুঝিয়েছিলেন, তেমনি স্বামী বিবেকানন্দের বীরবাণী, বর্তমান ভারত, কর্মযোগ ও স্বামীজীর উদ্দীপনাময়ী বক্তৃতাবলী পড়তে উৎসাহ যোগাতেন।”
সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রাজমনি সেন এবং মায়ের নাম শশী বালা সেন। রাজমনি সেনের দুই ছেলে আর চার মেয়ে। সূর্য সেন তাদের পরিবারের চতুর্থ সন্তান। দুই ছেলের নাম সূর্য ও কমল। চার মেয়ের নাম বরদাসুন্দরী, সাবিত্রী, ভানুমতী এবং প্রমিলা। শৈশবে পিতা মাতাকে হারানো সূর্য সেন কাকা গৌরমনি সেনের কাছে মানুষ হন। সূর্য সেন ছেলেবেলা থেকেই খুব মনোযোগী ও ভাল ছাত্র ছিলেন এবং ধর্মভাবাপন্ন ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন।
১৯১৬ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি বলে প্রসিদ্ধ, অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। সূর্য সেন ১৯১৮ সালে বিএ পাশের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন ও উমাতারা উচ্চ-বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক রুপে যোগদান করেন। সেই শুরু, বাকিটা ইতিহাস।
১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে এক বিশেষ আদালতে রাজদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জন বন্দির বিচার আরম্ভ হয়। সূর্য সেন মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। একই সাথে তিনি আদালত ভবন ধ্বংস করারও উদ্যোগ নেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কল্পনা দত্ত। হামলার দিন ধার্য করা হয়েছিল ৩রা জুন। শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ মাইনটি বসানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ায় গোটা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।
সূর্য সেনের দলের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু সূর্য সেন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেলেন। এই সময় তাঁর গ্রেফতারের জন্য ৫০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল। এরই ভিতরে ১৩ জুন পটিয়ার ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে বিপ্লবীরা মিলিত হন। এই বাড়িতে তখন ছিলেন সূর্য সেন, নির্মল সেন, প্রীতিলতা এবং অপূর্ব সেন। সেখানে আচম্বিতে গোর্খা সৈন্য নিয়ে হানা দেয় ক্যাপ্টেন ক্যামেরন। এখানকার যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন নিহত হয়। বিপ্লবীদের পক্ষে শহিদ হয়েছিলেন নির্মল সেন। পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন অপূর্ব সেন (ভোলা)।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর ডায়রি থেকে জানা যায়, এই সময় অপূর্ব সেন জ্বরে কাতর ছিলেন। দোতলার একটি ঘরে প্রীতিলতা, অপূর্ব সেন ও নির্মল সেন ছিলেন। সৈন্যদের আগমনের কথা সূর্য সেন এসে সবাইকে জানান। সূর্যসেন প্রীতিলতাকে নিচের তলার মেয়েদের ভিতর পাঠিয়ে দেন। আক্রমণের শুরুতেই ক্যামেরন নির্মল সেনের গুলিতে আহত হয়। এরপর আরও কিছুক্ষণ উভয় পক্ষের ভিতর গুলি চলে। এক পর্যায়ে নির্মল সেন মৃত্যুবরণ করেন। পরে প্রীতিলতা ও অপূর্ব সেনকে নিয়ে সূর্য সেন সন্তর্পণে এই বাড়ি ত্যাগ করেন। এই সময় সৈন্যদের গুলিতে অপূর্ব সেন মৃত্যুবরণ করেন।
জুলাই মাসে সরকার সূর্য সেনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তৎকালীন আনন্দবাজার পত্রিকায় এই বিষয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
'সূর্য সেনকে ধরিয়া দিতে পারিলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার।' এই ছিল শিরোনাম, নিচে বিস্তারিত খবরের বিবরণ দেওয়া হল।
খবরটি ছিল-
'১৯৩০ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কার্যে বিপ্লবী দলের নেতা বলিয়া কথিত সূর্য সেনকে যে ধরিয়া দিতে পারিবে, বা এমন সংবাদ দিতে পারিবে যাহাতে সে ধরা পড়ে, তাহাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হইবে বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। বিগত ১৩ই জুন তারিখে পটিয়ার বিপ্লবীদের সহিত যে সংঘর্ষের ফলে ক্যাপ্টেন ক্যামেরণ নিহত হইয়াছেন, সূর্যসেনই নাকি সেই সংঘর্ষের পারিচালক।'
(আনন্দবাজার। ৩রা জুলাই ১৯৩২)
এরপর সূর্য সেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করলেন। এ অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে আক্রমণ করা হল ইউরোপীয়ান ক্লাব। সফল আক্রমণ শেষে ফেরার পথে এক ইংরেজ অফিসারের গুলিতে প্রীতিলতা আহত হলেন। ধরা না দেবার প্রত্যয়ে, সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ পান করে তিনি আত্মাহুতি দিলেন। ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম নারী শহীদের নাম প্রীতিলতা।
‘ধন্যি ছেলে, দেখিয়ে গেছে আমরাও জবাব দিতে জানি’...তখন সবার মুখে মুখে এই কথা!
সূর্য সেন ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি গৈরালা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই সময় ইংরেজ সরকার তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছিল দশ হাজার টাকা। এখানে ব্রজেন সেন মাস্টারদাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। এই গ্রামের বিশ্বাস-বাড়ির গৃহবধু ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে ছিলেন। ব্রজেন সেনের বাসা থেকে কার জন্য খাবার নিয়ে ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে যাচ্ছে, তা জানার জন্য ব্রজেন সেনের ভাই নেত্র সেন বিশেষ আগ্রহী হয়ে ওঠে। পরে সূর্য সেনের অবস্থানের কথা জানতে পরে, পুলিশকে খবর দেয়। তারপর রাতের বেলা আলোর সংকেত দেখিয়ে নেত্র সেন সৈন্যদের পথ দেখায়। বিষয়টি ব্রজেন সেন বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করেও সূর্য সেনকে রক্ষা করতে পারেননি। ক্যাপ্টেন ওয়ামস্লীর নেতৃত্বে একদল গোর্খা সৈন্য সূর্য সেনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারিতে তাঁর ফাঁসি হয়।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। মূল লেখাটি ছিল ইংরেজিতে। নিচের তারই বাংলা তুলে ধরা হল -
'আমার শেষ বাণী –আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই তো আমার সাধনার সময়। এই তো আমার বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সময়, হারানো দিনগুলোকে নতুন করে স্মরণ করার এই তো সময়।
কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্রহীন আমার এই জীবনের একঘেয়েমিকে ভেঙে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধুরা – এগিয়ে চল, এগিয়ে চল – কখনো থেমো না, পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলের চট্টগ্রাম ইস্টারের দিনের সেই বিদ্রোহের কথা কোনো দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলখা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো। আমাদের সংগঠনে যেনো বিভেদ না আসে কখনো– এটাই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
চট্টগ্রাম কারাগার
১১ই জানুয়ারি, ১৯৩৪
বন্দেমাতরম
সকাল ৭টা।
©উshaস চttopaধ্যায়~
[#তথ্যসূত্র_ঋন 👇🏼
• চিটাগং এন আপরাইসিং: মানিনি চ্যাটার্জি, কলকাতা ও সুবোধ রায়ের সাক্ষাৎকার ২০০৫
• চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : চারুবিকাশ দত্ত, কলকাতা
• আমি সুভাষ বলছি। প্রথম খণ্ড । শৈলেশ দে। বিশ্ববাণী প্রকাশনী। কলকাতা-৯। অগ্রহায়ণ, ১৩৭৫
ও শঙ্করীপ্রসাদ বসুর বই এবং উইকিপিডিয়া]
Thursday, 2 December 2021
রুজভেল্ট কে অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ!
১৯৩৩-এ অর্থনৈতিক অবস্থা! (রুজভেল্ট-কে সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ)
#৮ম_এপিসোড #৮ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৮ম_ভাগ
[৮ম এবং এই সিজনের অন্তিম পর্ব ***]
রুজভেল্টের মুখোমুখি হওয়া সমস্যার একটি অংশ ছিল যে ১৯৩৩ সালে কোন সুস্পষ্ট চুক্তি ছিল না, প্রকৃতপক্ষে কি কারণে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল কোন স্পষ্ট চুক্তি দ্বারা এটা বলা ছিল না যে কেন এটা এতটা খারাপ হয়ে গেছে অর্থনীতি, তাই রুজভেল্টের নতুন চুক্তি, বিভিন্ন উদ্যোগের একটি নীতি শুরু করেন। এমতাবস্থায় রুজভেল্ট ঘোষণা করেছিলেন, "আমাদের অবজেক্টিভস-এর মধ্যে আমি নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখি, এবং তা সমগ্র দেশের পুরুষ, নারী ও শিশুদের সর্বপ্রথম।" ৮ই এপ্রিল রুজভেল্ট তার অ্যাডভাইজারদের একথা জানান, এবং এতে তারা যে খুব একটা খুশি ছিলেন, তা কিন্তু নয়। সবাই যে ক্ষেঁপে উঠেছিল তা না হলেও, সার্বিক মতামত ভালো ছিলনা। তার মধ্যে রয়েছে আরো একটি ব্যাপার, কার্যকরভাবে সোনার থেকে ডলারকে মুক্ত করা, মুদ্রার যথেষ্ট অবমূল্যায়ন করে সমগ্র আর্থিক বিশ্বের বিস্ময় ডেকে আনা।
অতিরিক্ত টাকা মুদ্রণ, মি. রুজভেল্ট মুদ্রাস্ফীতিকে অবলম্বন করেছিল যা আর আগের মতো ভয়ঙ্কর কার্যকরী কখনোই নয়। স্টক এক্সচেঞ্জের ডাউ, রকেটের মতো ওপরের দিকে উঠে গেল। সেই সময় নতুন যন্ত্রপাতির জন্য ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সামগ্রিক শিল্প উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাতীয় শিল্প পুনরুদ্ধারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়ে সে বছর। অনেকেই বলে যে এইসব ১৯৩৩ সালের আইনের অংশ ছিল কিন্তু পুনরুদ্ধারের গল্পের পুরোটা মোটেই এটা নয়, মানে বললে কম বলা হবে। এটি ১২২,০০০ পাবলিক বিল্ডিং, এক মিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা, ৭৭,০০০টি ব্রিজ বা সেতু এবং ২৮৫টি বিমানবন্দর ছাড়াও আরও অনেক কিছুর মধ্যে অর্থ নিবেশ করেছিল।
প্রায় ৪৫০,০০০ আমেরিকান, রাষ্ট্রীয় অফিসে তার প্রথম সপ্তাহে তাদের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছিলেন এবং প্রতিদিন চার থেকে সাত হাজার আইটেমের মধ্যে মেল বা চিঠি আসতে থাকে। হুভারের প্রেসিডেন্সির সময় যেখানে একজন ব্যক্তি হোয়াইট হাউসের মেল রুমে কাজ করত, সেখানে এফ. ডি. আর.-এর জন্য কর্মীদের সংখ্যা ৭০-এ উন্নীত করা হয়।
বেশিরভাগ আমেরিকানরা তাদের রাষ্ট্রপতিকে আগে কখনও কথা বলতে শোনেনি, তাই তারা বিশ্বাস করেছিল যে, তিনি তাদের ভালো করতে চান। এবং যখন তার নীতি ব্যর্থ হয়, তখন তারা এই রূপ বলাবলি শুরু করে যে, আমাদের প্রেসিডেন্টকে ব্যাঙ্কার, কর্পোরেট হেডরা হারিয়ে দিচ্ছে, ওদের দ্বারা ব্যর্থ হচ্ছে ওনার তৈরী করা কর্মসূচী। আমাদের নিজের হাতে কিছু জিনিস তুলে নিতে হবে, নিজেরাই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি কারণ আমরা জানি এই যে রাষ্ট্রপতি আমাদের এগুলি করা দেখতে চান।
১৬ই জুন কংগ্রেসের জরুরি অধিবেশন শেষ হওয়ার সময়, রাষ্ট্রপতি যে অধিবেশনের আহ্বান করেছিলেন
শপথ নেওয়ার সময় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, এফ.ডি.আর. আইনে ১৫টি বিলে স্বাক্ষর করে লাগু করেছিল, আর এতেই একশো দিন পার হয়ে গেছিল!
নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন-এর মতে যে জিনিস টা পরিচালিত করেছিল সংস্কারক প্যাকেজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, যদিও কখনো এর আগে এত ব্যাপকভাবে আমেরিকান কংগ্রেসে আইন প্রবর্তন করা হয়নি, এটি ছিল কৃষি ও খামার বিল! এটি কৃষি খাতে কয়েক দশক ধরে চলা স্লাইডকে আটক করতে চাওয়া, যেটি ১৯৩৩ সাল নাগাদ প্রতি মাসে আনুমানিক ২০,০০০ হারে খামার বন্ধক রাখা, ব্যাংকগুলি এসব বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে এইসব কিছুর জন্য একটি সহযোগিতামূলক আদেশ আনার চেষ্টা করা হয়েছিল লন্ডনের রয়্যাল বরো অফ কেনসিংটনের একটি জাদুঘরে, পাথর এবং জীবাশ্মের মধ্যে সকলে একত্রিত হয়েছিল।
১৯৩৩ সালে লন্ডনে দ্বিতীয় বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ডিসার্মামেন্ট সম্মেলনের সাথে মিলে যায়। এটিও কমবেশি একই সময়ে, জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হয়। পুরোটা না হলেও আংশিকভাবে, তবে কেন লন্ডনে? কারণ সমস্ত হোটেল জেনেভায় বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর লোকজনে ভর্তি। সম্মেলনে লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী (Ramsey Mcdonald) রামসে ম্যাকডোনাল্ডের বর্ণনা দিয়েছিলেন, "The fate of generations may well depend upon the courage the sincerity width of you which we are to show during the next few weeks. Let the world know, that we can show decision and give leadership অর্থাৎ প্রজন্মের ভাগ্য আপনার আন্তরিকতার ও সাহসের উপর নির্ভর করতে পারে। যা আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখাব। বিশ্বকে জানতে দিন, আমরা সিদ্ধান্ত দেখাতে পারি এবং নেতৃত্ব দিতে পারি।" তারপর এফ.ডি.আর. উদ্যোগটি ভেঙে দেয়, ৩-রা জুলাইয়ের বোমারু বার্তা হিসাবে যার পরিচিতি রয়েছে, তিনি এটি পরিষ্কার করে বলেছেন যে, জাতীয় অর্থনীতি ঠিক করা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ঠিক করার চেয়ে তার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে...
সুতরাং ১৯৩৩ সালের সারমর্ম, বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের ট্র্যাজেডি হল এই যে তিনটি প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তি একটি অর্থনৈতিক নীতি এবং একটি আর্থিক চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল। আমি বলতে চাইছি না যে, আপনারা তর্কে যেতে পারেন যে, তাদের সঠিক ধরণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না কিন্তু সহযোগিতা করার কোন রকম রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল না। এর ফলে হল যে
এরপরে জার্মানি বা ইতালি বা জাপানের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করার পরে যা কিছু হয়েছিল তা অনেক বেশি সমস্যাযুক্ত ছিল। অবশ্যই তাদের অর্থনীতি তার থেকে বিন্দুমাত্র ওপরের দিকে উঠে আসেনি, আরো বিষণ্ণতা ছেয়ে গেছিল, তার থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি যা অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, এক কথায় ১৯৩০-এর সম্পূর্ণ দশকে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল!
১৯৩৩ সালেই হিটলার চ্যান্সেলর হিসাবে তার প্রথম বক্তৃতা রেখেছিলেন, প্রকৃত ইতিহাস সর্বদা একই সময়ে অনেক কিছু ঘটার গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ১৯৩৩ সালে জেনারেল মোলা, যিনি স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পরিণত হওয়া ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তিনি লিখেছেন যে, 'হিটলার নিশ্চিত যে তার লোকেরা অর্থাৎ এন্টি সেমাইট জার্মান-রা আবার নিজেরা উপরের দিকে উঠতে পারবে না যতদিন ইহুদি জাতির লোকেরা তার মধ্যে মিলে মিশে থাকবে। সেজন্য সে তাদের নির্যাতিত করেছে, আর যা করেছে বেশ করেছে।' ১৯৩৩ সালে হিটলার সন্ত্রাসের ব্রাউন বইটি ২৭টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল খুবই সন্তর্পণে এবং যাচাইকরণের সাথে নাৎসি শাসনের রেজিমগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যাতে লোকেরা সেগুলো জানতে পারে। ১৯৩৩ সালে একটি জার্মান ক্যাথলিক সংবাদপত্র হিটলারের চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের বর্ণনা দেয় 'অন্ধকারে চলার মতো', কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আরো গাঢ় অন্ধকারে লাফেতে পরিণত হয়েছিল কিনা তা গোটা পৃথিবী জানে!!!
[১ম সিজন শেষ হল]
©উshaস চttopaধ্যায়~
Tuesday, 23 November 2021
পুতুলদের সংসার!
পুতুলদের সংসার:
(এক প্রায় ৪০ বছর বয়সী বাবা আর তার ৬ বছরের ছেলের কথোপকথন। তারা প্রায় দিনের মতো সেদিনও বিকেলে বেড়াতে বেরিয়েছে, একথা-সেকথা বলতে বলতে তাদের খিদে পেয়ে গেল। তখনই ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করে...)
-বাবা, আজকে আমরা কি দিয়ে ভাত খাবো?
-আজকে আমরা ইলিশ দিয়ে ভাত খাবো বাবা!
-ইলিশ মাছ? (উদগ্রীব হয়ে ওঠে সে, কিন্তু পরমুহূর্তে থিতিয়ে যায় উত্তেজনা) তুমি না বলেছো ইলিশ মাছে অনেক কাঁটা বাবা? আমি কি কাঁটাওআলা মাছ খেতে পারব বাবা?
-কাঁটা হলেই বা কী! আমি তোকে মাছ বেছে দেবো বাবা!
ছেলেকে মাছ বেছে দেয়ার কথা বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো শ্যামল বাবু! কারণ তিনি শত চেষ্টা করেও ছেলেকে মাছের কাঁটা বেছে দিতে পারবেন না! তিন বছর আগে এক এক্সিডেন্টে তার দুই হাত হারিয়ে এখন প্রায় অচল সে! নিজের এই অসহায় জীবন তার দিনে দিনে খুব অসহ্য হয়ে উঠছে আর তার পা কাটা না থাকলেও খুব একটা শক্তি তার দুই পায়ের একটাতেও এখন আর নেই। নাহলে কবে সে এই জগত সংসারের মুখে লাথি মারে!...
-বাবা সত্যিতো, ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাবো? তুমি রোজ মাছের কথা, মাংসের কথা বলো, কিন্তু মাছ মাংস আর খাওয়াও না। সেদিন বললে মাংস দিয়ে ভাত খাবো; আমি সারাদিন হাত ধুয়ে বসেই ছিলাম আর মা খালি ডাল দিয়ে ভাত খাইয়ে দিলো! আজকে যদি মাছ না খাওয়াও আমি কিন্তু ভাত খাবো না, সত্যিই ভাত খাবো না বাবা!
শ্যামলের হাত না থাকলেও, পা দুটো প্রায় অবশ হলেও চোখ দুটো কিন্তু ঠিক সচল! ছেলেটার কথা শুনলে শ্যামলের সেই সচল চোখ সব সময় ভিজে ওঠে! তার কষ্ট আরো বাড়ে যখন এই চোখের জল ছেলেকেও দেখাতে হয়! আর বুকটা ফেটে যায় যখন তার ছয় বছরের ছেলেটা তার ছোট ছোট হাতে বাবার চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, 'বাবা ইলিশ মাছ ভালো না, আমি মাছ খাবো না বাবা! মাছে খালি কাঁটা ভরা! আমি আর মাছ খাবো না বাবা!'
তবে আজ ইলিশের ব্যবস্থা তার ঘরে হবে! কারণ আজ তার ঘরে অতিথি এসেছে! ঘরে অতিথি আসলে শ্যামল ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে অনেক দূরে কোথাও চলে আসে।
প্রায় সময় ছেলেটা তাকে প্রশ্ন করে, বাবা বাড়িতে ওরা কারা আসে, কেন আসে? সে উত্তর দেয়, বাড়িতে অতিথিরা আসে! তাদের কাজ থাকে মা-র সাথে।
-বাবা অতিথিদের সাথে আমরা দেখা করি না কেন?
-আমি পঙ্গু মানুষ যে বাবা। তাই অতিথিদের সামনে যাই না বাবা। লজ্জা করে! আমার না গেলেই ভালো...
-আমিওতো, অতিথি দের সাথে দেখা করতে যাই না বাবা!
-তুমি আমার সঙ্গে না থাকলে আমি গল্প করবো কার সাথে বাবা? তাই তোমাকে আমার সাথে নিয়ে আসি।
আজ ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে একটু বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে শ্যামলের। ঘরে এসে দেখে পুতুল রান্না ঘরের চুলায় রান্না চাপিয়েছে। খুব ইচ্ছা করছে কাছে গিয়ে একটু কথা বলতে, কী রান্না চাপিয়েছে একটু দেখতে! কিন্তু যেদিন ঘরে অতিথি আসে সেদিন পুতুলের মন মেজাজ খুব খারাপ থাকে। অল্প কথায় রেগে যায়। এমনি অবশ্য সে খুব ভালো মেয়ে। নাহলে এত কষ্টের সংসারে কেউ থাকে? কার এত ঠেকা পড়েছে ল্যাংড়া, পঙ্গু লোকের সাথে ঘর করার?
ঘরের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে পুতুল ভাতের প্লেট রাখতে রাখতেই তার ছেলে জেনে গিয়েছে আজ তাদের বাড়িতে ইলিশ রান্না হয়েছে! সেই আনন্দে ছেলেটা ছটফট করছে! বারেবারে হাত ধুতে যাচ্ছে আর আসছে সে। ছেলের ছটফটানি দেখে পুতুল একটা ধমক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। দু'দিন আগে ছেলেটা জ্বর থেকে উঠেছে, একটু ভালো মন্দ যে ছেলেটাকে খাওয়াবে সেই অবস্থা পুতুলের সংসারে নেই। অতিথি আসলে তার মন মেজাজ খারাপ থাকলেও আজ সে একটু খুশি কারণ আজ সে কিছু টাকা বেশি পেয়েছে। সেই টাকাতেই ইলিশ কিনে আনা হয়েছে। যদিও এই ইলিশ খাওয়ার মত বিলাসিতার ফল অনেকদিন তাকে ভোগ করতে হবে সে জানে। তবুও ছেলেটা একটু পেট ভরে ভাত খাক আজ!
পুতুলের ছেলেটা হাত ধুয়ে আসলেও সে তার মায়ের হাতেই ভাত খাচ্ছে। একটা মাছে এত কাটা থাকে যে কিভাবে সে ভেবেই পাচ্ছে না। তার মধ্যে তরকারিটাও হয়েছে ঝাল! তার মা এক দলা ভাত মুখে দেয় আর সে একটু করে জল খায়! যদিও সে ভেবেছিল লঙ্কা খাবে ভাত দিয়ে, তাই হাতে একটা কাঁচালঙ্কা নিয়েছিল সে, কিন্তু তরকারি যে এমন ঝাল হবে বোঝেনি সে, তাই লঙ্কাটা হাতেই রেখে দিয়েছে।
শ্যামল চুপচাপ দূরে বসে ছেলের খাওয়া দেখছে। ছেলের খাওয়া শেষ হলেই পুতুল তাকে ভাত বেড়ে খাইয়ে দেবে। ছেলেটার এত আরাম করে খাওয়া দেখে তার খিদেও বেড়ে যাচ্ছে। পুতুলেরও খিদে পাওয়ার কথা, কাল রাতে ভাত খায় নি সে। খিদেতো লাগারই কথা। খুব ইচ্ছা করছে পুতুলকে বলতে, চলো, এই প্লেটেই ভাত আরেকটু বেশি নাও, আমরা তিন জনেই এক সাথে খাই! তবুও বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেলো সে। যদি রাগ করে কিছু বলে বসে পুতুল? ঘরে অতিথি আসলে মেয়েটার মন মেজাজ একটু বেশি খারাপ থাকে! এছাড়া অবশ্য সে খুব ভালো মেয়ে। নাহলে কার এত ঠেকা পড়েছে ল্যাংড়া, পঙ্গু লোকের সঙ্গে সংসার করার?
আধুনিকতা থেকে দূরে, বহু দূরে এক গ্রামে পুতুলের সংসার। সে গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ ঢোকে নি, তাই সূর্য ডোবার পরে কুপির আলোতেই আলোকিত হয় পুতুলদের সংসার! সেই আলোতে অতিথি আপ্যায়ন করতে করতে ক্লান্ত ঘামে ভেজা পুতুলের ঝলমলে মুখটা দেখে শ্যামলের খুব ইচ্ছা করে পুতুলের মুখটা একটু মুছে দিতে! আর তা ভাবতে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে!..
©উshaস চttopaধ্যায়~
Thursday, 18 November 2021
রুজভেল্ট এর শাসনের সূত্রপাত!
১৯৩৩-এ আমেরিকান অবস্থা! (রুজভেল্ট-র শাসনের সূত্রপাত)
#৭ম_এপিসোড #৭ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৭ম_ভাগ
[৭ম পর্ব ***]
২রা মার্চ, fdr বা রুজভেল্ট এর অফিস উদ্বোধনের দুই দিন আগেও, নিউ ইয়র্ক ফেডারেশন এর সর্বনিম্ন সোনার রিজার্ভের মূল্য অনুপাতের নিচে নেমে গেছিল। ৩ তারিখে এটি আরও ৩৫০ মিলিয়ন ডলার নেমে গেছিল, যার মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার ওয়্যার ট্রান্সফারের আকারে চলে গিয়েছিল দেশের বাইরে।
যখন (Charles Evans Hughes) চার্লস ইভান্স হিউজ একটি ডাচ বাইবেলে রুজভেল্টের শপথ গ্রহণ করান, যা রুজভেল্ট দের পরিবারে ৩০০ বছর ধরে ছিল, সেদিনও তড়িঘড়ি করা হয়, কারণ, আমেরিকার সেই সময় কার জরুরী অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারনা করা ছিল, 'নিড অফ দ্যাট আওয়ার'। সকলেই উৎকন্ঠার সাথে প্রতীক্ষায় ছিল কি হয়, কি হয়! রুজভেল্ট ঘোষণা করলেন, "This is preeminently the time to speak the truth! the whole truth frankly and boldly nor need we shrink from honestly facing conditions in our country today, this great nation will endure as it has endured অর্থাৎ, সত্য কথা বলার এটাই প্রধান সময়! সম্পূর্ণ সত্য অকপটে এবং সাহসিকতার সাথে এবং আমাদের দেশে আজ সততার সাথে পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া থেকে সঙ্কুচিত হওয়ার দরকার নেই, এই মহান দেশ দরকারে আরো সহ্য করবে যেমনটি এত বছর সহ্য করে এসেছে।"
যখন রুজভেল্ট অফিসের শপথ গ্রহণ করেছিলেন বেশিরভাগ রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ ছিল এবং অন্যগুলিতে, আপনি কতটা তুলতে পারবেন তার একটি সীমাবদ্ধতা ছিল এবং এটি একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কতটা পক্ষাঘাতের কাছাকাছি, তা আমরা বুঝতে পারি। ২৮টি রাজ্যে ব্যাঙ্কগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল,
বাকি ২০ টির মধ্যে কিছু আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। সমস্ত ঘর-পরিবারের অর্ধেক বন্ধকী এমাউন্ট ডিফল্ট ছিল।
এবার আসি অটোমোবাইল শিল্পে, যা আগে দিনে কুড়ি হাজার যানবাহন উৎপাদন করতো, তা এখন নির্মাণ করছিল দুই হাজারের কাছাকাছি! পৃথিবীর বিতর্কিত সবচেয়ে ধনী দেশে, মোট জনসংখ্যা ১২০ মিলিয়নের মধ্যে, ৩৪ মিলিয়ন আমেরিকান দের, যাদের আয়ের কোন আপাত নিশ্চিত উৎস ছিল না, উপায় ছিল না, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল। এরকম সময়ে, একটা নতুন কিছু করবার সময় ছিল, কিছু একটা অস্বাভাবিক রকমের হলেও!
রাষ্ট্রপতি হিসাবে FDR-এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল ৯ ই মার্চ পর্যন্ত সমস্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া। আশ্চর্যজনকভাবে আমেরিকানরা সেটিরও মোকাবিলা করে। তিনি অগত্যা গার্হস্থ্য নীতির ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক চিন্তাবিদ হয়ে ওঠেননি কখনোই, তবে তিনি একজন রাজনৈতিক বাস্তববাদী হয়ে উঠতে সক্ষম হন। তিনি প্রথম এবং সর্বাগ্রে জানতেন যে, একজন রাষ্ট্রপতি কে, ১৯৩৩ সালে আমেরিকাকে আবার নতুন করে তার পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেই হবে, পিছু হটার কোনো উপায় নেই।
(I OWE YOU) আই ওয়্য ইউ, যার অর্থ আপনাকে সাহায্য করার জন্য কাউকে ধন্যবাদ জানানো এবং আপনি ভবিষ্যতে তাদের জন্য কিছু করবেন বলে বলার উপায়, সেই সিস্টেম বা নীতি চালু করা হয়েছিল, সবার কাছে গৃহীত হয়েছিল এবং সম্মানিত বিনিময়ের প্রথা ভালোই নেওয়া হয়েছিল।
মিচিগানের বেশ ক'য়েকটি দোকান Saginaw Bay Herrings সেগিনায় বে হেরিংস বা মাছের তিনটি ব্যারেল জন্য একটি পোশাকের বিনিময় প্রথা চালু করেছিল। এমনকি বক্সিং টুর্নামেন্টের জন্য সমর্থকদের কাছ থেকে ৫০ সেন্ট মূল্য হিসাবে মূল্যায়ন করা কিছু নিতেও স্বীকার করেছিল।
রবিবার ১২ই মার্চ রুজভেল্ট রেডিওতে, তৎকালীন 'মন কি বাত', ইয়ে থুড়ি, 'ফায়ারসাইড চ্যাটে'র প্রথম শুরুয়াত করেন, 'আমার বন্ধুরা, আমি কয়েক মিনিটের জন্য কথা বলতে চাই ইউনাইটেড স্টেটস এর জনসাধারণের সাথে ব্যাঙ্কিং সম্পর্কে,' ৬০ মিলিয়ন মানুষ শুনেছিলেন সেই সম্প্রসারণ, যার মধ্যে হাস্যরসাত্মক (Will Rogers)উইল রজার্সও ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, "The president had taken the subject of banking and made everyone understand it, even the bankers! যার মানে, প্রেসিডেন্ট ব্যাঙ্কিং বিষয় নিয়ে সবাইকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছে, এমনকি ব্যাঙ্কারদেরও।" অনুষ্ঠানটি ১৫ মিনিটের কিছু কম সময় ধরে চলে। তার সম্প্রচারের জন্য দর্শকরা অসাধারণ, অভূতপূর্ব হারে, মানে ৭০%-এরও বেশী আমেরিকানরা যুক্ত হয়েছিলেন এই সম্প্রচারগুলিতে, এতটাই সফল হয় যা কিনা আমেরিকার প্রায় প্রতিটি সাধারন বাড়িতেই ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদিকে কেউ জানত না যে ব্যাঙ্কগুলি আবার চালু হলে কী হবে। আতঙ্কের সূত্রপাত ঘটে তা দেখতে পাওয়া যায়, সারা দেশে ব্যাঙ্কের বাইরে সুদীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। এটা ছিল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ঠিক একদিন পর এবং সেই সমস্ত আমেরিকানরা সারিবদ্ধভাবে আসেন তাদের সঞ্চিত অর্থ জমা করানোর জন্য। কেননা, তাদের অর্থ সুরক্ষিত বা ফেরত হবেই, যেখানে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সেটি নিরাপত্তায় থাকবে।
আমরা শুধু এই 'ফায়ারসাইড চ্যাট' গুলিকেই যেন রাষ্ট্রপতি নেতৃত্বের প্রধান মুহূর্তগুলি হিসাবে ভাবতে অভ্যস্ত না হয়ে উঠি, সেদিকেও মনোনিবেশ করতে হবে, যদিও যতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আশ্চর্যজনকভাবে খুব কমই দেখা যাচ্ছে বা লেখা হয়েছে, তবুও; কিছু বছর তিনি তাদের ফ্রি-রেশনের ব্যবস্থা করছিলেন, আবারও এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় ছিল। তিনি নিজেকে বড়োবেশি উন্মুক্ত করেননি, তিনি এই সব ছোটোখাটো নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসগুলিকেই বড়ো করে তুলছিলেন। বড়ো ঘটনা, যাতে মানুষ বাস্তবে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে চলেছে, সেজন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বলার আছে, শোনার আছে, এমনটা মনে করতে পারে।
মার্চের শেষ অবধি, জনসাধারণের যাবতীয় বাড়ির সঞ্চয় যেমন মোজার থেকে, গদি-বালিশের কভার, চালের ড্রাম, স্যুটকেস ইত্যাদি থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার সংযোজন করা হয় এবং আবার ব্যাঙ্কে রাখা হয়। ১৯৩৩ সালের মধ্যে মার্কিন বেকারত্ব ১২ মিলিয়নে পৌঁছেছিল, যার এক চতুর্থাংশ কর্মীদের মধ্যে অর্ধেক রাসায়নিক, ইস্পাত এবং মেশিন শিল্পে জড়িত ছিল। শহরের ফ্রি এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি বা কর্মসংস্থান সংস্থাগুলো সকাল ন'টায় খুলে বিকেল ৩টের মধ্যেই হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত, সারাটা দিন। যেন কখনও শেষ না হওয়া স্রোতের মতো তারা আসত! দৃশ্যগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে ঝামেলামুক্ত ছিল, যদিও মাঝে মাঝে, কেউ কেউ তার পালার আগে, লুকিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেই থাকতো, তা আর নতুন করে বলার নয়। এত কিছুর পরেও, ১৫ই মার্চ স্টক এক্সচেঞ্জের টিকার টেপটি এই কথাটির সাথে স্বাক্ষরিত হয়েছিল যে, 'হ্যাপি ডেজ আর হেয়ার এগেইন, মানে আনন্দের দিন আবার এখানে।' কথাটা কোথাও যেন শোনা শোনা মনে হচ্ছে না?
আচ্ছে দিন ...
(ক্রমশ)
©উshaস চttopaধ্যায়~
Thursday, 7 October 2021
হিটলারের ক্ষমতায়নের পর...
১৯৩৩-এ জার্মানির অবস্থা! (হিটলারের ক্ষমতায়ন)
#পঞ্চম_এপিসোড #৫ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৫ম_ভাগ
ওয়েইমার রিপাবলিক কে প্রায়ই গণতান্ত্রিক ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক দুর্বলতার অন্যতম এক উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু যখন এটিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করতে শুরু করেন, তখন দেখবেন যে এটি আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘতম বেঁচে থাকা গণতন্ত্রের মধ্যে একটি। তৃতীয় রাইকে রূপান্তরের শুরুর দিকে, ২৭-এ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ সন্ধ্যার ঠিক পরেই, পথচারীরা রাইকস্ট্যাগের বা তার কাছেপিঠের থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনতে পায় এবং কিছুক্ষণ পরেই ভবনের অভ্যন্তরে আগুন জ্বলতে দেখে। ঘটনাস্থলে হিটলার, গোয়ারিং এবং গোয়েবলস পৌঁছানোর পর অস্ত্রাগার আক্রমণকে কমিউনিস্ট চক্রান্ত বলে ঘোষণা করেন, যা করা হয়েছিল আগুন এবং সন্ত্রাস কে ব্যবহার করে, এটি গোয়েবেল তার ডায়রিতে লিখেছিলেন, যা কিনা প্রদর্শিত হয় জনসাধারণের আতঙ্ককে ক্রমান্বয়ে বিভ্রান্তি হিসেবে তুলে ধরা এবং নিজেদের জন্য ক্ষমতার উপলব্ধি করানো হয়েছিল, যদিও এ ব্যাপারে দ্বিমত আছে। (Sefton Delmer) সেফটন ডেলমার, একজন নামী সাংবাদিক, যিনি সেদিনের জন্য রিপোর্ট করছিলেন, লন্ডন ডেইলি এক্সপ্রেসের হয়ে। তিনি ঘটনাস্থলে আসার সাথে সাথে, হিটলার তার কাছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বললেন, "you are now witnessing the beginning of a great new epoch in german history, Herr Delmer! অর্থাৎ আপনি এখন জার্মান ইতিহাসে একটি মহান নতুন যুগের সূচনা করতে দেখছেন"।
এ ব্যাপারে ডেলমারের রায়, বার্লিন স্পোর্টস প্যালেসের সমাবেশে, ১৫০০০ অন্যান্যদের সাথে যোগ দেওয়ার পর হিটলারের সম্বন্ধে দিয়েছিলেন এই বলে, "তিনি একজন ক্র্যাকপট মানে বোকা বা অবাস্তব লোক ছিলেন।"
অগ্নিকাণ্ডের ঠিক পরদিন সকালে মন্ত্রিসভা যেটা এখনও নাৎসি দের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, একটি জরুরী ডিক্রি তৈরির জন্য বৈঠক করে, যা জার্মানিতে নাগরিক স্বাধীনতা বাতিল করে। এটি বাক স্বাধীনতা, সমাবেশ বা মিটিং-মিছিল করবার অনুমতিকে, বিজ্ঞপ্তি বা সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাতিল করে দিয়েছিল, ঠিক আমাদের দেশের ইমার্জেন্সির সময়ের মতো। কয়েক মাসের মধ্যেই, মানে গরমকাল আগমনের আগেই সমস্ত বিরোধী দল চূর্ণ করা হয়ে গিয়েছিল, ১০০,০০০ জনেরও বেশি কমিউনিস্ট, সামাজিক গণতান্ত্রিক দলবলের লোকজন এবং নাজিদের অন্যান্য বিরোধীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগকেই 'Dachau/ডাকাউ' নামে শহরের বাইরে একটি নতুন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
এখন নাৎসিরাই ছিল একমাত্র আইনি দল এবং হিটলার এখনও কোনোভাবেই অসাংবিধানিকভাবে কোনো কাজ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তার ক্রিয়াকলাপ গণভোটে ৯৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিল।
৩২ এর অক্টোবরে, জার্মানি লীগ অফ নেশনস এবং নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসে এবং যার ফলে (Sir Horace Rumbold) স্যার হোরেস রাম্বোল্ড, যিনি হিস ম্যাজেস্টির এম্বাসেডর ছিলেন ও বার্লিনের মহামান্য রাষ্ট্রদূত হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন যে, "many in the diplomatic corps have a feeling that we are living in a country where fanatics, hooligans and eccentrics have got the upper hand! যার মানে, কূটনৈতিক মহলের অনেকের মনে এমন ভাবনা আছে যে আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে ধর্মান্ধ, গুন্ডা এবং খামখেয়ালি ছিটিয়ালরা সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে!"...
'ভয়' এখন জার্মান জনজীবনের মূল চালিত ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছিল। ভয়ের চোটে ৫০০ নেতৃস্থানীয় পৌরসভার সিভিল সার্ভেন্ট বা কর্মচারী এবং ৭০ টি শহরের মেয়রকে অফিস থেকে বের করে দিতে বাধ্য করেছিল, এমনই ছিল হঠাৎ করে অচেনা, অজানা আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক কিছুর আসল এবং স্পষ্ট ভয় যা, ৫৬ শতাংশ জার্মান, যাদের ভোট নাৎসিদের কাছে যায়নি, তারাও সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, কিছু পরিমান সাহসের দেখা দিয়েছিল কিন্তু খুব বেশি মানুষ তাতে অঙ্গভঙ্গিও করেনি, এককথায় সেটাও দাবিয়ে দেওয়া হয়। এখন স্লোগানগুলি তাদের কাছে একজোট হওয়ার দাবি করেছে, কিছু মানুষ সত্যিকারের উৎসাহ নিয়ে করছিল। লোকেরা একে অপরকে, তাদের প্রতিবেশীদের, ইউনিফর্মের ভিতর ফাঁকা ফানুসের মতো ঠগদের ভয় পেতে লাগল...
জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও প্রচারের জন্য গোয়েবলসের রাইকমিনিষ্ট্রি বা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছিল, ১৩ মার্চ। আমেরিকান মুভি কোম্পানি ট্রেড প্রেসকে এক দীর্ঘ ফটোশুটের জন্য একটি চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গোয়েবলস মেশিন, মানে লোকজন, তাদের এককথায় যা ভালো মনে করত তাই ওদের খাইয়ে বা গিলিয়ে দিত, তাই তারা একে প্রপোগান্ডা না বলে 'নাজি-গান্ডা' বলত। তাদের মতে, "হিটলারকে সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডানদিকের থেকে, বাম দিক থেকে, প্রতিটি এঙ্গেলস থেকে ছবি তোলা হয়েছিল, যেন সব ছবিতেই মেন আকর্ষণ হিটলার, হিটলার এবং হিটলারের সমাহার!
মিউজিক্যাল কমেডি, 'মাই উইকনেস' নামের এক মুভি, শুধু এই কারণেই জার্মান মুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়ে যে, মেয়েদের ছোট প্যান্টি বা অন্তর্বাস পড়ানো হয়। গোয়েবলসের অধীনস্থ মন্ত্রীসভার মতে সেটি তৎকালীন নতুন জার্মানির নৈতিকতাকে দূষিত করবে। কিং কং, যা কিনা বছরের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ সিনেমা, সেটাকেও অনুমোদন দেওয়া হয় নি এই বলে যে, জার্মান জাতি প্রবৃত্তির ঘৃণ্য হিসেবে।
১০ই মে, গোটা জার্মানি জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, বইয়ের কার্টলোডগুলি অগ্নিকুণ্ডের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল পুরো যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো, সামরিক প্রস্তুতির চেতনায় জাতির শিক্ষার জন্য, তার মান আরো উন্নত করার জন্য, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি।
গোয়েবলস সেদিনের অসাধারণ জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা (Fritz Lang) ফ্রিটজ ল্যাংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, জার্মান চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান কার্যনির্বাহী হতে। নিচে তাদের পাওয়া কথোপকথনের অনুবাদ বাংলায় দেওয়া হল, যা ইন্টারনেট থেকে সহজেই পাওয়া যায়;
"তোমার জানা আছে কিনা জানি না" ল্যাং বলে, "যে আমার ঠাকুমা একজন ইহুদি ছিলেন"। নিজের ভয়ে স্বীকার করে বলেন, আর তার প্রত্যুত্তরে "আমি সিদ্ধান্ত নিই যে কে ইহুদি আর কে নয়", গোয়েবল শাসানোর সুরে বলে, ল্যাং ঠিক তার পরপরই জার্মানি ছেড়ে চলে যায় ...
(ক্রমশ)
©উshaস চttopaধ্যায়~
Tuesday, 5 October 2021
শেষের সূচনা!
#শেষের_সূচনা :-
===================
রনি ক'দিন ধরে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। তার বোন কি এখনো তার সাথে কথা বলবে না? এই নিয়ে প্রায় সাত বছর হলো, তার বোন রিনি তার সাথে শেষ কথা বলেছে; দীর্ঘ সাত বছর…
রনি বেঙ্গালুরুর একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। তার বয়স ২৫ বছর। সে আর্কিটেকচার ও ডিজাইনে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে এবং ক্যাম্পাসিং নিয়োগের মাধ্যমে এক কোম্পানিতে যোগদান করে। তার বোন রিনি তার থেকে মাত্র এক বছরের ছোট ছিল। কেরালার ত্রিচুরে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর করার পর সেও 'পি ডব্লিউ ডি'তে কাজ করছে। আগামী মাসে রিনির বিয়ে।
তাদের মা, রীতা ফোন করে রনিকে জানিয়েছিলেন যে, রিনি এক চমৎকার ছেলের প্রেমে পড়েছিল এবং তারা উভয় পরিবার, তাদের বিষয়ে যৌথভাবে তাদের বিয়েতে সম্মত হয়েছিল।
"তুই কি এখানে তোর বোনের বিয়ের জন্য আসবি? - হ্যাঁ কি না?" রীতা জিজ্ঞেস করল।
"হ্যাঁ মা! আমি যাব” রনি বলল।
“তুই তো এখন অন্তত বলতে পারিস, তোদের দুজনের মধ্যে কি হয়েছে? সে ওর জন্মের দিন থেকে তোরা অবিচ্ছেদ্য, একসাথে সবকিছু, এবং তারপর একটা বাজে দিনের সকালের পর থেকে, তোরা একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলি। আমি জানি, তুই ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে ছিলিস, একটা চুরির ঘটনায়, কিন্তু, সেতো অনেক আগে। একটা আধটা ভুল যে কারোরই হতে পারে। কেন তুই ওকে জ্বালাবি আর নিজেও কষ্টে থাকবি, শুধু শুধু তুই ওকে ক্ষমা করতে এবং মিলমিশ করতে পারছিস না?" বলে রিতা কাঁদছিল।
"তুমি বুঝতে পারবে না মা। ওর সাথে কথা বলতে আমার কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু, ও নিজেই কথা বলতে চায় না। আমি অনেকবারই চেষ্টা করেছি। আশা করি আমি যখন ওর বিয়ের জন্য আসব তখন ও কথা বলবে, তুমি দেখো, সব ঠিকঠাক হবে” রনি বলল।
মিলমিশ, ঠিকঠাক এটা সত্যি ছিল, কিন্তু চুরির ঘটনা .... সেটা অন্য কথা। রনি ঠিক যেন গতকালের ঘটনার মতো সবকিছু মনে করতে থাকে।
এই ঘটনাটা ঘটে যখন রনি ১১তম ক্লাসে ওঠে, সে একটি নতুন বন্ধু পেয়েছিল, যার নাম অনিল। তারা যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সেখানে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত শিশুরাই পড়াশোনা করত। রিনিও একই স্কুলে তার এক বছরের জুনিয়র হিসাবে পড়াশোনা করেছিল। এই অনিলই রনিকে ধূমপানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। স্কুলের একটি বিশাল ক্যাম্পাস ছিল যেখানে প্রচুর খালি জমি, পিছনের দিকটা জঙ্গল মতো এবং স্কুল-বাড়ির পিছনের অংশে পুরোনো বিল্ডিংটা ছিল ভাঙা ভাঙা গোছের, তাদের পক্ষে লুকিয়ে ধূমপান করাও সহজ ছিল, এবং কেউ দেখলেও লুকিয়ে পড়াটা ছিল আরো সহজ। তারা মজা করার জন্য প্রথমে শুরু করেছিল এবং শীঘ্রই রনি এতে জড়িয়ে পড়ে। তখনই একদিন অনিল ধূমপানের জন্য গঞ্জিকা বা "স্টাফ" নিয়ে আসে।
প্রথমদিকে রনি এটা স্পর্শ করার ব্যাপারেও খুব ভয় পেয়েছিল, খুবই কনশ্যাস ছিল ও। সে ঐটা মুখে নিতে সরাসরি অস্বীকার করে দেয়।
রনির বাবার মা-বাবা অর্থাৎ রনির দাদু-ঠাম্মা মারা যাওয়ার পর থেকে রনির কাকা রনির পরিবারের সাথেই থাকতেন। তার বাবা তার ছোট ভাইকে তার নিজের বাচ্চা হিসাবে মানুষ করেছিলেন। কিন্তু, যখন রনির বাবা জানতে পারলেন, তার কাকা মাদকাসক্ত, তখন তিনি রনির কাকাকে সময় নষ্ট না করে ও বিনা আস্কারায়, করুণায় বাড়ি থেকে বের করে দেন। রনির বাবা সবসময় বলতেন, "আমি মাদক ব্যবহার ছাড়া সব কিছু ক্ষমা করতে পারি। মাদক মানুষকে দিশেহারা, শয়তান করে তোলে।”
রনির কাকা পাঁচ বছর আগে রাস্তায় মারা যান। এমনকি তার বাবা মৃতদেহ গ্রহণ করতেও স্বীকার করেননি। রনির কাকাকে পৌরসভার শ্মশানে দাহ করা হয়েছে, পারিবারিক রীতিনীতি ছাড়াই।
কিন্তু কিছু দিন পর থেকে, রনি শুধু সিগারেট খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেল। এবার যখন অনিল অন্য জিনিসপত্রের প্রস্তাব দিল, তখন সে একটা পাফ বা টান লাগাল। তারপর, আস্তে আস্তে সে আরও বেশি করে পাফ নিতে লাগল। কিন্তু, ততদিনে তার, গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে, সে যানে যে কিভাবে জিনিসের লোভ লাগাতে হয় এবং সাথে সাথে অনিলও "স্টাফ" বিনামূল্যে দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে রনিকে জিনিস কিনতে টাকার জোগাড় করতে বলে।
রনির সামান্য যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তা খুব তাড়াতাড়ি গ্রাস করা হয়ে যায়। তারপর থেকে যখনই সে বাড়ির কিছু কেনাকাটার জন্য যেত তখন সে জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে মিথ্যা বলতে শুরু করে। তাড়াতাড়ি সে দিনও গেল, এটিও তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তারপর সে বই কেনার অজুহাত করতে লাগল এবং বাবা-মার কাছ থেকে টাকা আদায় করার সুযোগ পেল। যখন সে বুঝতে পারলো, যে তার বাবা তাকে সন্দেহ করতে শুরু করছেন, তখনই সে বন্ধ করে দিলো।
কিন্তু, সে এত সহজে নেশার থেকে বের হতে পারেনি। এক সপ্তাহের মধ্যেই সে আবার ড্রাগ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবার সে রিনির কাছে গেল। সে রিনিকে বলল, সে এবং তার বন্ধুরা ট্রেকিং করতে যেতে চায়। কিন্তু, সে তাদের বাবাকে বলতে পারবে না কারণ, সে নিশ্চিত যে তিনি তা করতে যেতে দেবেন না। সে রিনিকে দিয়ে বাবাকে বানিয়ে বলতে বলেছিল, তাদের স্কুলে কিছু বিশেষ ফি দিতে হবে, সরকারি রেজিস্ট্রেশন, সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট হিসেবে। এসব বুজরুকি দিয়ে কিছু পরিমাণে টাকা যাতে তার হাতে আসে!
রিনি প্রথমে বাধা দেয়, কিন্তু সে তার ভাইকে সাহায্য করতে খুব আগ্রহী ছিল। সে মিথ্যা কথা বলে, রনির জন্য টাকা পেয়ে তাকে দেয়। কিন্তু বিকেলে, রিনি এবং বন্ধুরা যখন তাদের স্কুল নাটকের অনুশীলনের জন্য পুরনো বিল্ডিং এ এসেছিল, তখন সে তার ভাইকে এবং তার অন্য দুই বন্ধুকে, আধা অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। তখনই সে জানতে পারে, যে তার ভাই মাদকাসক্ত, আর তার ভাই সেই টাকা ব্যবহার করে ড্রাগস কিনতো, তখন আর দেখে কে!
রিনি তার বাবা -মাকে পুরো বিষয়টা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু, তখনই তার কাকার মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সে নিশ্চিত হয়ে গেছিল যে, রনির পরিণতি তাদের কাকার মতো হবে, একই ভাগ্যের শিকার হবে তারা, মুখোমুখি হবে কঠোর শাস্তির, যদি সে তাদের বাবাকে বলে। যখন সে স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছল, সে দেখতে পেল তার বাবা রেগে আগুন। তার বাবা তাকে চড় মেরে জিজ্ঞেস করলেন, "তুই আমার কাছ থেকে ফি বাবদ যে টাকা নিয়েছিলিস তা দিয়ে তুই কী করেছিস? এত টাকা তোর কি কাজে লাগে? তুই আমাকে না বলে আর কি কি করছিস? অনেক বড়ো হয়ে গেছিস? তুই আমাকে ঠকিয়েছিস, নাহলে এতো টাকা তোর কি কাজে লাগে তুই আমায় বল, খুব সহজে আমাদের বোকা বানিয়েছিস তুই, এক কথায় চুরি করেছিস তুই, কেন, বল কেন?"
রিনি বুঝতে পেরেছিল যে, তার বাবা কোনো ভাবে জানতে পেরেছিলেন, সে ফি সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। রিনি মুখ খোলেনি, সে চুপ করে থাকে। যদি সে মুখ খুলত, তাহলে তার ভাই পরিবারের বাইরে থাকত। কিন্তু, সত্যি না বলার অর্থ, তার বাবা তাকে কঠোর শাস্তি দিতে যাচ্ছেন। সে দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছিলো। সে তার বাবার কাছে মার খেয়েছে। পরে তার বাবা রিনিকে তাদের সামনের উঠোনে বালির উপর ২ ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দেন।
তখনই রনি মাদকের প্রভাব মিটে যাওয়ার ফলে বাড়ি ফিরে আসে। সে রিনিকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। রিনি তাকে শুধু একটি কথা বলে,
"আমি জানি তুমি টাকা দিয়ে কি করেছো" এটাই ছিল রনির সাথে কথা বলা শেষ বাক্য।
রনি বিপদ বুঝতে পেরে তাকে অনুরোধ করে, এটা তাদের বাবার কাছে না বলার করার জন্য। পরে রনি জানতে পারে কি ঘটেছে তার মায়ের কাছ থেকে। সে মরিয়া হয়ে রিনিকে যন্ত্রণা ও অপমান থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু, তার মানে, সে তো নিজে জড়িত হবে। রনি কিছু বলল না!
এর পর, রনি মাদক ব্যবহার ছেড়ে দেয়। সে অনেকবার রিনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, রিনি কখনো কথা বলেনি। সময় পেরিয়ে যায়। রনি এবং রিনি তাদের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি পেয়েছে এবং নিজের নিজের জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
****
বিয়ের দুই দিন আগে রনি বাড়িতে এসে পৌঁছায়। সন্ধ্যায় সে রিনিকে তার সাথে সমুদ্রের সৈকতে, যা তাদের বাড়ির কাছেই ছিল, সেখানে আসতে বলে। তাকে অবাক করে রিনিও রাজি হয়ে গেল। মুখে স্নিগ্ধ হাসি!
যখন তারা সৈকতে হাঁটছিল, রনি আবার রিনির কাছে ক্ষমা চাইল। সাত বছর পর রিনি তার সাথে কথা বলে।
“হ্যাঁ, আমি তোমার উপর রাগ করেছিলাম। কিন্তু, রাগের কারণে আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করিনি। তুমি আমার খুব প্রিয় ছিলে এবং আমিও তোমার আদরেরই ছিলাম। অপমান এবং যন্ত্রণা আমাকে কখনো প্রভাবিত করেনি। কিন্তু, যখনই আমি তোমাকে আমাদের কাকার জায়গায় কল্পনা করতাম, তখন আমি তা সহ্য করতে পারিনি। তাই, আমি ভাবলাম আমি কি আর করতে পারি। আমি চেয়েছিলাম এমন কিছু একটা করতে যাতে তুমি খুব মনে আঘাত পাও, যা তোমার আবার ড্রাগস ব্যবহার করতে বারন করবে। তারপর আমি খুঁজে পেলাম, আমার নীরবতাই সেরা বাজি হবে। আমি চেয়েছিলাম তুমি এটা অনুভব কর, যখনই তুমি আবার ড্রাগস ব্যবহার করতে চাও তখনই যেন তোমার মনে পড়ে যে ড্রাগ ব্যবহারের কারণে তুমি আমাকে হারিয়েছো।"
"আমি খুবই নিশ্চিত, আর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এটি কাজ করেছে। আজ, আমি আমার নিজের নতুন জীবনে প্রবেশ করছি। তুমিও সেই খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত, তুমি সফল। আমি তোমার জন্য খুশি” রিনি বলে!
“আমি ভীষণই খুশি, ইটস আ কজ্ ফর সেলিব্রশন, আমি এটি উদযাপন করব। আমি আমার বোনকে ফিরে পেয়েছি” রনি মুক্ত কন্ঠে ঘোষণা করল।
রিনির বিয়ের আগেরদিন রাতে, রনি একটি ফাইভ স্টার মলে বন্ধুর সাথে উদযাপন করতে বেরিয়েছিল। যেখানে তার সেই পুরনো বন্ধু অনিলের সাথে দেখা হয়, সব বন্ধু বান্ধব দের মধ্যে সেও পড়ে, যে এখন একজন পূর্ণকালীন মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত। যখন অনিল রনিকে আনন্দিত মেজাজে দেখল, তখন সে রনিকে একটি উদ্দীপনার ড্রাগ দিয়েছিল, রনির অজান্তেই, যাতে সে উদযাপনের আসল অনুভূতি পায়। একটা ড্রিঙ্কস এর সাথে সে ওই মাদকটি মিশিয়ে দেয়। রনিও খুবই ভালো মনে আনন্দ উপভোগ করতে লাগে, এটা জেনে যে, তার বোন অন্য পরিবারে যাচ্ছে এবং সে আর যাই হোক স্বাধীন, রনি সেই পানীয় টি নেয় ও তাতে পুরো চুমুক দেয় ..
এবং, এটি ছিল তার জীবনের "শেষের সূচনা"...
উshaস চttopaধ্যায়~
####################
[একটি অনুরোধ: কোনো মিল যদি থাকে তা সাম্প্রতিক বিতর্ক প্রসঙ্গে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক, ছোটোখাটো ভুলত্রুটি জন্য ক্ষমা প্রার্থী, একটু মানিয়ে নেবেন। যদি আপনি গল্পটি পছন্দ করে থাকেন, তবে অনুগ্রহ করে পেজে ক্লিক করুন এবং লাইক করুন, যাতে একটি নতুন গল্প প্রকাশিত হলে আপনাকে অবহিত করা হয়।] 🙏🏼
Thursday, 30 September 2021
১৯৩৩ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
১৯৩৩, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
#চতুর্থ_এপিসোড #৪থ_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৪থ_ভাগ
এখন আসে ১৯৩৩ সাল, ১ লা জানুয়ারী তে জার্মান সংবাদপত্র (Frankfurter Zeitung) ফ্রাঙ্কফুর্টার জেইটুং ঘোষণা করেছিল যে,- The mighty nazi assault on the democratic state has been repulsed অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী নাৎসি আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে এবং (Vosicha Zaitong)ভোসিচা জাইতং ঘোষণা করে যে,- The republic has been rescued! মানে প্রজাতন্ত্র কে উদ্ধার করা হয়েছে! আর মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসাবে বসানো হবে ...
এটি কোন দুর্ঘটনা নয়। আমি মনে করি ১৯৩৩ সালে যখন ওয়েইমার প্রজাতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছিল তখন এটি তাদের একটি ছোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। রক্ষণশীল অভিজাতরা, যারা ভেবেছিলেন এখানে তাদের সুযোগে হিটলারকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে, তারা তাকে হেরফের করা থেকে সাহায্য করতে পারে এবং তাদের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে যা তারা কোনভাবে ১৯১৯ সালে হারিয়েছিল।
অন্যদিকে, ১৯৩৩ সালের শুরুতেই হিটলার 'মেইন ক্যাম্পফ' থেকে রয়্যালটি বাবদ এবং সমর্থকদের কাছ থেকে উপহারগুলির মাধ্যমে যে জীবন অতিবাহিত করছিলেন, তা ছিল বেশ আরামদায়ক। প্রকৃতপক্ষে একজন কোটিপতির মতো, যা ছিল ইতিমধ্যে তার সমকালীন জার্মান জনগনের তুলনায় কল্পনার অতীত।
তার বাড়ি মিউনিখের একটি ফ্যাশনেবল অংশে একটি বড় অ্যাপার্টমেন্টে ছিল, তার পরিবহন ছিল চালকচালিত মার্সিডিজ লিমোজিন, তিনি নিজে কখনো গাড়ি চালানো শেখেননি। পার্টির সদর দপ্তর ছিল আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় প্রাসাদসম। ১৯৩০ সালের কর্মী ৫৬ জনের থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭৫ জন। তিনি দুপুরের আগে খুব কমই বিছানা থেকে বেরোতেন এবং বাভারিয়ান আল্পসে কেনা শ্যালে বা কাঠের তৈরি অট্টালিকা তে প্রায়শই ছুটি কাটাতেন। তাই তার জন্য জীবন অনেকের মত একেবারেই নয়,
তার সহকর্মী জার্মানদের মতোন তো কোনোভাবেই নয়। কেউ দাবিও করতে পারেনা যে তারও জীবন খারাপ চলছিল ঐ সময়ে, এবং তারপর এক সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায়, জানুয়ারী ৩০, ১৯৩৩ সালের পর থেকে এটি আরও ভালোতে পরিণত হয়ে গেল!
রাষ্ট্রপতি পল ভন হিন্ডেনবার্গ তাকে চ্যান্সেলর পদে বসানোর জন্য শপথ গ্রহণ করান। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের আশেপাশের লোকেরা অনুভব করেছিল যে তারা হিটলার ব্যবহার করতে পারে এবং
নাজিদের সমর্থন ব্যবহার করে যে কোনো কার্যসিদ্ধ করবে। ওরা ভেবেছিল যে তারা তাদের ব্যবহার করে একটি রক্ষণশীল কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং তারপর তারা তাদের থেকে মুক্তি পাবে। অবশ্যই তারা যে মারাত্মক ভুলটা করেছে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি, হিটলার ঠিক একই জিনিস ভাবছেন এবং তিনি তাদের থেকে পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছেন। আমি মনে করি হিটলারের মতো মানুষের সাথে সাধারন মানুষের ভুলের অনেক হিসেব-নিকেশ আছে, যাকে বলে 'হিউম্যান এরর'। হিটলার দীর্ঘদিন ধরে যা ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছিলেন তা বহাল রাখার শপথ করেছিলেন প্রজাতন্ত্রের আইন এবং সংবিধান মেনেই। এদিকে সাপ্তাহিক নিউজ রিল যা প্রপোগান্ডা ছড়াতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিল, তা সারা জার্মানি জুড়ে দেখানো হয়, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছয়টি গল্প নিয়ে তা গঠিত। সেখানে একটি স্কি জাম্প, ঘোড়দৌড় এবং একটি ঘোড়া শো তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যাডলফ হিটলারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটির ষষ্ঠ এবং চূড়ান্ত বিষয় ছিল ঐ রিলের।
এমন টা তখন জার্মানি তে প্রচার করা হয় যে, 'জার্মান জাতীয় আন্দোলনের নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর করা হয় এবং বার্লিন তার বিজয়ের উদযাপনে বন্য হয়ে যায়। বার্লিন নাইটদের মতো টর্চলাইটের(মশাল) কুচকাওয়াজ, সমর্থকরা রাস্তায় এবং ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের মধ্য দিয়ে মিছিল করে তাঁর বিজয়কে স্মরণ ও উদযাপিত করে,' ইত্যাদি!
হিটলারের নিয়োগ কোন অলৌকিক ঘটনা ছিল না, যদিও এটি নিজের সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করেছিল, তিনি নিজের নিয়তির সাথে আপসহীন, একজন অপ্রতিরোধ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন।
কিছুই না, এটা একটা জরাজীর্ণ, লজ্জাজনক, ব্লান্ডারে পরিণত হয়েছিল! ওয়েইমার সংবিধানে চ্যান্সেলরের পদ মন্ত্রিসভা চেয়ারম্যানের চেয়ে একটু বেশি ছিল এবং সরকারী সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার ভোটে নিতে হতো। এত চতুরতার সাথে তারা সব গোছগাছ করেছিল, যেভাবে তারা ভেবেছিলেন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং তার উপদেষ্টারা হিটলারকে রাজি করেছেন যে নাৎসিজম কেবিনেটকে মাত্র তিনটিতে সীমাবদ্ধ করতে এবং ভন পাপেনকে তার ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ করতে। এর মানে হল যে পাপেন সবসময় মন্ত্রিসভায় ৮-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং দুই মাসের মধ্যে পাপেন বলেছিলেন, "We will have pushed hitler so far into a corner that he will squeak অর্থাৎ আমরা হিটলারকে এতদূর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব যে সে চিৎকার করে গুটিয়ে যাবে", কিন্তু সময় অন্য কথা বলছিল...
হিটলার কখনও অসাংবিধানিকভাবে কাজ না করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, নাৎসিরা একটি বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপে উঠেছিল। আমি মনে করি ভোটারদের সাফল্যের দিক থেকে যারা হিটলারকে ক্ষমতায় এনেছে এবং যারা জার্মানদের মধ্যে ভোটার ছিল তারা, তার স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কাছে এককথায় হোস্টেজ, সমর্পিত বা বাধ্য হয়েছিলেন, তা আসলে (Alfred Hugenberg) আলফ্রেড হুগেনবার্গের মিডিয়া সাম্রাজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম সংস্থাগুলির দ্বারা, তারা ঐসব মাধ্যমকে সমর্থন করেছিলেন, ওরা যা কিছু খবর বানিয়েছে তাই আপামর জনসাধারণ দেখতে বাধ্য হয়।
এটা সত্যিই যে হিটলারের দল এবং তার এজেন্ডার জন্য হুগেনবার্গের সমর্থন বিশেষ ভুমিকা পালন করে, আমি বিশ্বাস করি যে এটি ৩২ থেকে ৩৩ এর মধ্যে তার প্রচারণার সাফল্যের জন্য একটি সিদ্ধান্তমূলক পার্থক্য তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তার ক্যারিশমা হিসাবে যা জানি, তারও উত্থানের জন্য মিডিয়ার দায় অনস্বীকার্য। হিটলারকে অনেক লোকের সত্যিই বেশ হাস্যকর লেগেছিল, অনেকে তাকে খুব একটা গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। অবশ্য সেই মানুষটা, মানে হিটলার, খুব ভালো ভাবে জানত, কিভাবে জনতাকে বশ করতে হয়, তার কাছে ছিল শব্দের, বক্তৃতার জাদুকাঠি, যার ছোঁয়ায় লোককে বশীভূত করতে পারত তার কথায় ও যুক্তিতে।
এমন চরম পলিটিক্যালি কারেক্টনেস এর কথা যে কেউ ভাবতে বাধ্য হবে, "You would think that the end of the world is coming, proclaiming the dawn of a new nation but calling on all not to let Germany forget what she had suffered at the hands of her enemies!" অর্থাৎ এই যে পৃথিবীর শেষ দিনে এসে একটি নতুন জাতির কাছে ভোরের ঘোষণা করছে, সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে জার্মানিকে যাতে ভুলে না যাওয়া হয় যে কিভাবে সে তার শত্রুদের হাতে এবং কতটা নিষ্ঠুর আচরণ সে ভোগ করেছিল!
জানুয়ারিতে চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের দুই দিনের মধ্যেই হিটলার একটি নির্বাচন ডেকেছিলেন যাতে নাৎসিরা রাইকস্ট্যাগে তাদের অবস্থান উন্নত করেছিল। যখন নতুন সংসদ একত্রিত হয়, হিটলারের (enabling act)এনাবলিং অ্যাক্টকে আইনের দিকে ঠেলে দিতে কোনও অসুবিধা হয়নি, চ্যান্সেলরকে ডিক্রি দিয়ে রাইকস্ট্যাগ এবং শাসনকে বাইপাস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা হিন্ডেনবার্গের অধীনে কর্তৃত্ববাদী একনায়কত্বের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, তা হিটলারের অধীনে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। সাংবিধানিক সংকট পতনের হাত থেকে বাঁচতে একটি প্রজাতন্ত্রের জোটের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, অ-সংসদীয় চ্যান্সেলরদের সরাসরি নিয়োগ বা হিন্ডেনবার্গের হিটলারের প্রতি ঝোঁক পুরো বিষয়টিকে চরম ডানপন্থী দিকে নিয়ে যায় ...
(ক্রমশ)
©উshaস চttopaধ্যায়~
Tuesday, 28 September 2021
খুশির হাসি ...
খুশির হাসি:-
আমার সাথেই এগুলো হতে হয়, সকাল থেকে খালি উল্টো-পাল্টা ক্লায়েন্টদের প্রেশার সামলাতে হচ্ছে, তার ওপর আজকে আমার সিনিয়রও ডুব মেরে বসল। যাই হোক, আমার যতগুলো ক্লায়েন্ট ভিজিট ছিল, সেই গুলো তো করতেই হবে উল্টে তারও দু-চারটে ভিজিটে যেতে হবে! চাকরি তো করি না, যেন ওদের কেনা গুলাম...
এসব ভাবতে ভাবতে, ডায়েরি টা উল্টে-পাল্টে একটু দেখে নিতে গেলাম। সব ঠিক আছে কিনা, তা আমার কপালে একস্ট্রা ৩টে ভিজিট বরাদ্দ হল! আমি স্যাম্পল কালেক্টর, এক বেসরকারি সংস্থার সাথে যুক্ত। লোকজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে, তাদের রক্ত, মল, মূত্র, কফ ইত্যাদি কালেক্ট করে বেড়াই। এমনিতেই ফোন নং ছড়িয়ে আছে এপাড়া সেপাড়াতে ল্যাম্পপোস্টে বা ব্যানারে। রোজ মিনিমাম ৫টা কল চলেই আসে আর্জেন্ট বেসিসে! সেইদিন ও এল।
সেই সকাল বেলা বাড়ির থেকে বেরোই, কিছু টিফিনের জোগাড় করতে পারি না। রাস্তার চায়ের দোকান বা ছোটোখাটো ধাবাই ভরসা। তাই ডায়েরি খুলে ছক কষে নেওয়া যে কোনটিতে কখন যাব!
সব ঠিক আছে, কিন্তু একটা মজার ব্যাপার চোখে পড়ল! লাস্ট নামটা রয়েছে একটি খুশি নামের ক্লায়েন্টের! একটু হলেও খুশি যে হইনি তা না, নামটিতেই যেন আনন্দ উথলে পড়ছে। কি জানি, যার নামেই এত আনন্দ সে নিজে কত না রূপসী হবে। তো যাই হোক, মনে মনে নিজের সিনিয়র কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সারাদিনের কাজের ম্যাপিং করে ফেললাম। কাজগুলোও হয়ে গেল ভীষনই সুষ্ঠু ভাবে! হতে পারে মনের মধ্যে একটা স্পৃহা কাজ করছিল, যে কখন খুশি নামের রূপসীর সান্নিধ্যে আসতে পারি। এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
ঠিকানা যা দেওয়া আছে, সেটা ঠিক করে মিলিয়ে নিলাম, দিয়ে কলিং বেল বাজালাম। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এল! এসে বলে;
--হ্যা কি ব্যাপার?
-না, আমি সুশ্রুত থেকে এসেছি। কারুর বোধহয় ব্লাড স্যাম্পল নেওয়ার ছিল...
বলতেই, সাথে সাথে এত আতিথেয়তার সাথে ভিতরে নিয়ে গেল যে বলার নয়। কিন্তু আমার মনটা কেমন করছে! যিনি আমায় সাথে করে নিয়ে গেলেন, তিনি ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী, হিজড়ে। মনটা স্বাভাবিকভাবেই কেমন মুষড়ে পড়েছে। কত কি না আশা করেছিলাম, কিন্তু শেষ অবধি এই! যাই হোক, ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখি সেকি তোড়জোড়, পুরো বাড়ি টা যেন সাজানো হয়েছে। বেলুন, ফুলের মালা, আরো কত কী! আমি আঁটোসাঁটো হয়ে বসলাম একটা দেখিয়ে দেওয়া সোফায়। দিয়ে একজন সুস্মিতা নামের আমার সামনে মিষ্টির থালা সাজিয়ে ধরল, বলল;
--কোনটা আপনার পছন্দ, একটা মিষ্টি খেতেই হবে আপনাকে।
আমি ইতস্ততঃ করছি দেখে, যিনি ভিতরে এনেছিলেন, মানবী, তিনি বলে উঠলেন;
--আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, কেননা আমাদের সেলিব্রশন এর সময়, একজনের জন্মদিন তাই!
আমিও সাথে সাথে একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে বললাম
-নানা, এতো খুব ভালো ব্যাপার!
বলে একটা কাজু বরফি তুলে নিলাম, আর নিজের কাজের তাড়া দেখিয়ে বললাম;
-যদি, কার স্যাম্পল নিতে হবে একটু ডেকে দেন তো...
সঙ্গে সঙ্গে মানবী বলল,
--হ্যা হ্যা একদম ভুলেই গেছি, এই সুস্মিতা একটু খুশি কে নিয়ে আয়তো..
আমি ততক্ষণে মিষ্টি টার সদ্ব্যবহার করে ফেললাম। করে জল খাচ্ছি তখনই ঘরে ঢুকল ৩কি সাড়ে ৩ বছরের একটি ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে! সবার আপ্যায়ন দেখেই নিশ্চিত করা গেল, যে এই সেই খুশি!
কী সুন্দর একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে, তো তার সাথে কি আর বন্ধুত্ব না করে আর পারা যায়। ও আসতেই সবার মধ্যে একটা উৎফুল্লতা, উৎসাহ চোখে পড়ল! এমনিতেই খুব ভালো ব্লাড কালেক্ট করি আমি, ওকেও বললাম;
- এই তো, এইবার এই হাতটা চেপে পাম্প করতে হবে, তোমার কোন কার্টুন টা সবচাইতে পছন্দ?
ও বলল; --বার্বি ডল! আমার খুব পছন্দ,
আমি বললাম; - ওরে বাবা, তা আজকে বার্বি ডলের কোন এপিসোড দেখিয়েছে টিভিতে...
কথায় ভুলিয়ে ব্লাড কালেক্ট করাই ছিল আসল কাজ, তা সম্পন্ন হয়েছে! দিয়ে ওকে বললাম যে;
-হয়ে গেছে, ব্যথা একটুও বুঝতে দিইনি, তাইনা...
ও হাসি মুখে সরে গেল। মানবী বলে ওঠে যে;
--কবে এই রিপোর্ট টা, পাওয়া যাবে?
-এই তো, এখনই স্যাম্পল টা অফিসে পাঠিয়ে দেবো, কাল কে দুপুরের মধ্যে বিল দেখিয়ে রিপোর্ট টা কালেক্ট করে নিলেই হবে। তা বার্থডে টা কার ছিল জানতে পারি কি?
--এ মা, আজকে খুশি-রই বার্থডে, সরি বলা হয়নি!
-না না, সে ঠিকআছে, তা ওর বয়স কত হল?
--আমাদের জন্য তো একদিন, আজই ওকে ভোরে পাওয়া গিয়েছে এক ডাস্টবিন থেকে, আমাদের লোকেরা ওকে নিয়ে আসে, ও আসলে আমাদেরই মতোন তো!
কথাটা যেন তির হয়ে বুকে বিঁধলো, ঐ টুকু ফুলের মতো বাচ্চাকেও কে ছেড়ে দিতে পারে? দুনিয়ার লোকেরা কি পাশবিক যে হয়ে গেছে, তা আর বলার নয়! এদের কেই এখনো সমাজ সঠিক মর্যাদা দেয় না, আর ওরাই কিনা বাঁচিয়ে তুলছে একটা নিষ্পাপ প্রান!
মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল, সব বুঝিয়ে দিয়ে যখন বেরিয়ে এসছি, তখন মনটা খচখচ করতে লাগল। সামনের দোকান থেকে একটা এক'শ টাকার ক্যাডবেরি কিনে আবার দরজার কলিং বেল বাজাই, যথারীতি মানবী দরজা খোলে। ওর হাতে ক্যাডবেরি টা দিয়ে বলি যেন খুশি কে দেয়। ওর মুখে প্রশস্তিমূলক হাসি। ফিরে যাওয়ার পথে ভাবতে থাকলাম খুশি কে নিয়ে, ও এখন ভালো লোকেদের সাথে ই আছে!...
©উshaস চttopaধ্যায়~
Thursday, 23 September 2021
১৯৩২ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
সাল ১৯৩২, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
#তৃতীয়_এপিসোড #৩য়_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৩য়_ভাগ
২৬ শে ফেব্রুয়ারি হিটলার (Brunswick) ব্রান্সউইকের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি এবং পরিমাপের অফিসে একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে তার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি ব্যবস্থা, যা তাকে টেকনিক্যালি অস্ট্রিয়ান-জার্মান নাগরিকত্ব দিয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেছিল। ১৯৩২ সালে, ১৩ মিলিয়ন জার্মানরা নাজিদের পক্ষে ভোট দিয়েছিল কিন্তু হিটলারকে ক্ষমতায় আনার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না। তিনি শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় চ্যান্সেলরশিপ অর্জন করতে পারেননি, তাকে সেদেশের মূর্খ নাগরিকদের কিছু ব্যবসায়ীক সদস্যরা, যাদের অহংকার ও নির্বুদ্ধিতা তাদের প্ররোচিত করেছিল, অনেকের কাছে এই 'ভালগারিয়ান'কে একনায়কতন্ত্র বা ডিকটেটরশিপ এর পরিচালনা করতে। বলতে হয় যে, সেই সময় এমন সব পুরানো পরিবারের লোকজন ছিল যারা হিটলারকে ভেবেছিল শুধু একটু লাফিয়ে, লাফিয়ে, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে পারে, তার বেশী কিছু না! ওরা তাকে ততদিন সিরিয়াসলি নেয়নি যতক্ষণ না খুব দেরি হয়ে যায়।
"We engaged him for our own ends/আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনে তাকে নিযুক্ত করেছি", এমন মন্তব্য ছিল (Franz Yosef Hermann Michael Mario Von Pappen) ফ্রাঞ্জ ইয়োসেফ হারমান মাইকেল মারিও ভন পাপ্পেনের। আভিজাত্য এবং সম্পদে জন্মগ্রহণ করা, ভন পাপেনকে চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
বার্লিনে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত অবিশ্বাস্যতার সাথে তার সাথে দেখা করেছিলেন। (Andre Francois)আন্দ্রে ফ্রাঙ্কোয়া একবার বলেছিলেন যে, "Pappen was taken seriously by neither his friends nor his enemies অর্থাৎ পাপেনকে শুধু তার বন্ধুরা কেন শত্রুরাও, মানে কেউই গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।" সেই পাপেনের মতানুযায়ী, "German people desire nothing more than to live in peace in order to turn all the energies which they possess to the great problems which will have to be solved to bring about reconstruction of the world after the war অর্থাৎ, জার্মান জনগণ শান্তিতে বসবাস করা ছাড়া আর কিছুই চায় না যাতে তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে বড় বড় বিষয়গুলি কে মীমাংসার দিকে পরিণত করে যা যুদ্ধের পর বিশ্বের পুনর্গঠন আনার জন্য সমাধান করতে পারে।"
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিন্ডেনবার্গের কাছে হিটলারের চরম পরাজয়ের পর সেই পাপেনই, নতুন নির্বাচন ডেকে এনেছিলেন। মানুষজন সাধারণ নির্বাচনে সমর্থনের দিক দিয়ে নাজির পতন মোটামুটি অব্যাহত ছিল, যদিও তারা আন্দোলনের আবেদনে স্পষ্টভাবে তুঙ্গে তুলে ধরেছিল। "We won't get to an absolute majority this way/আমরা এভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব না', (Goebbels) গোয়েবলস তার ডায়েরিতে একথা স্বীকার করেছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রুশিয়াতেও আবার নির্বাচন হয়েছিল এবং নাজিরা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়, শক্তি নিয়ে প্রচার চালায় এবং প্রথম রাজনৈতিক পটভূমিতে আসে একটি বিমান, ঠিক যেন আকাশ থেকে নেমে আসছেন, কোনো দেবদূত। হিটলার তার দলের প্রতিনিধিত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়, যেটা ১৯২৮ সালে মাত্র ৬ সিট বা আসন পেয়েছিল, সেখান থেকে ১৬২ আসনে উপনীত হয় ১৯৩২ সালে। অন্যান্য রাজ্য যেমন (Bavaria, Wittenberg, Anhult) বাভেরিয়া, উইটেনবার্গ, আনহল্ট এই ধারা অনুসরণ করেছিল। "it's a fantastic victory, এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়", গোয়েবলস বলেছিলেন।
তাদের সাফল্যে হবু নাৎসিদের মধ্যে একজন (Richard J Evans) রিচার্ড জে ইভান্সের বাক্যে প্রকাশ করেছে, "A rainbow coalition of the discontented অর্থাৎ অসন্তুষ্টদের একটি রামধনু জোট রুপে জয়লাভ সাধিত হয়।"
১৯৩২ সালের মধ্যে (SA)এস এ, বা (Sturmabteilung) ব্রাউন শার্ট নামে যারা পরিচিত ছিল, তারা শান্তি বন্দোবস্তের অধীন অনুযায়ী অনুমোদিত ছোট সেনাবাহিনীর এক জনের চেয়ে চার জন, অর্থাৎ আগের থেকে এত বেশি হয়ে গেছিল। (Reichsbanner) রাইক্সব্যানার যা কিনা সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের আধাসামরিক শাখা এবং আধা সামরিক ভেটেরান্স বা প্রবীণ দের সংগঠনে ৩০০,০০০ সেনা, শক্তিশালী (Stalhom) স্টালহোমেরও একই অবস্থা ছিল। ইউনিফর্মের মধ্যে ৪০০,০০০ (Stormtroopers) স্টর্মট্রুপারও ছিল। এখন কল্পনা করা কঠিন যে এই ধরনের 'বেসরকারি সেনাবাহিনী' সহ্য করা ও পালন করা হচ্ছিল যা, এতো পরিপক্ক গণতন্ত্রে প্রশংসা কম হলেও কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।
যা দেখা গিয়েছিল, তা হল গণতান্ত্রিক ভোটে এর প্রভাব! যেমন মানুষজন যারা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছিল, অতীতের গুন্ডাদের যারা শীতলতার সাথে মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা করত, তাদেরকে টপকে কিভাবে তারা ভোট দিয়েছিল, তা মূল্যায়ন করা রীতিমতো কঠিন।
ভয় ইতিমধ্যেই সীমান্তের পারে লোকবল পাঠাচ্ছিল। ১৯০১ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে জার্মানিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে ২৫ জন নোবেল বিজয়ী ছিলেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন মাত্র পাঁচজন।
বেশিরভাগই (national socialism) ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের বা জাতীয় সমাজতন্ত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, এইরকম আটজন রিফিউজি বিজ্ঞানী (Manhattan Project) ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, পরমাণু বোমা তৈরি করতে।
১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে (Geneva) জেনেভায় শান্তি সম্মেলন তৈরিতে ছয় বছর লেগেছিল এবং এটি প্রায় সার্বজনীন ভাবে আশাবাদী ছিল যে এতে শান্তি সুরক্ষিত হবে। সাধারণের কাছে এমনই একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং যতই সময় যায়, ক্রমবর্ধমান ভাবে ভঙ্গুর বলে মনে হচ্ছিল। প্রায় বিশ্বব্যাপী ৬৪টি ভিন্ন দেশের প্রায় সার্বজনীন প্রতিনিধিরা 'জেনেভার কনফারেন্স হলে' এসেছেন বৈঠকের জন্য যা আশা করা যায় বিশ্বব্যাপী অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োগ হ্রাস করাবে। মিটিংয়ে তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে আবেদনে উৎসাহিত হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ স্বাক্ষর নিয়ে গঠিত হয় মহাদেশ হিসাবে, ১৮ মাস ধরে তারা একে অপরের সাথে বিতর্ক করেছিল। আর ঠিক তারপরেই, হিটলার তার প্রতিনিধিদলকে বের করে নেয়, যা পুরো ব্যাপারটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
লক্ষ লক্ষ অনুগত অনুসারীদের নেতৃত্বে তাদের বলিষ্ঠ নেতা, অ্যাডলফ হিটলার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে সরে আসছেন। হিটলার লিগ অফ নেশনস থেকে পদত্যাগ করলে বিশ্বের দূর্বল স্নায়ু ভীত হয়ে পড়ে। অনেক কিছুই আছে যেমন, যদি এটা করা যেত, বা ওটা করলে হয়তো হতো না, কিংবা এটা অমুক জানতেন, বা এটি অবশ্যই বন্ধ করা যেত ইত্যাদি, ইত্যাদি! এখন এইরকম হাজার একটা জিনিস থাকবে! কিন্তু আসল জিনিসটি হল যখন আপনি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গতে শুরু করেন, তখন যদি একজন ব্যক্তি কিছু নিয়ে গায়ের জোয়ারি করে পালিয়ে যায় বা একটি দেশ কিছু নিয়ে পালিয়ে যায় তা অন্যদেরও উৎসাহিত করে। (Aldous Huxley) অ্যালডাস হাক্সলির Chilling Future Vision/চিলিং ফিউচার ভিশন নামে বইয়ের সিরিজ ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি এটিকে Brave New World বা সাহসী নতুন বিশ্ব বলেছিলেন ...
(ক্রমশ)
©উshaস চttopaধ্যায়~
Tuesday, 21 September 2021
বোধের বোধোদয় ..
বোধের বোধোদয়:-
মার্কেটের শো রুম বন্ধ করে এক্সাইড মোড়ে সিগন্যালের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বাস, গাড়ি আসছে আর যাচ্ছে। সিগন্যালেও থামার কোনো নাম নাই কারণ বাস ভর্তি যাত্রী। সবাই পুজোর ছুটিতে যার যার বাড়ি যেতে ব্যস্ত! দশমীর একদিন পরেই ঈদুল ফিতর, ফলে ব্যস্ততা আর ও বেশি! আর আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যস্ত এই সড়কের যেকোনো একটা বাসের নিচে ঝাঁপ দেবো বলে অপেক্ষা করছি!
নতুন জয়েন করেছি মাল্টিপ্ল্যানের একটা কম্পিউটারের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে। মাত্র দশ দিন হয়েছে চাকরীর। বাড়ির বড়ো ছেলে হিসেবে আমার উপর এখন সংসার চালানোর দায়িত্ব!
বাবা ব্যবসায় লস খেয়ে পথে নেমেছেন অনেকদিন। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াও আমার পক্ষে আর সম্ভব হল না। তাই লেখাপড়া ছেড়ে কাজে নেমেছি সংসারের চাকা ঘোরাতে!
দশদিন জয়েনের চাকরী তাই মাইনে হয় নি আমার, আর কদিন পরেই পুজো! ছোটো ছেলেটা টুতে পড়ে আর বোন সামনে টুয়েল্ভ দেবে! বোন যতই বড়ো হয়ে যাক, বায়না তো একটু দাদার কাছে করবেই, এমনিতে বোঝদার হলেও ছোটো বোনটার পুজোর আগের থেকেই বায়না এই বার লাল রঙের একটা কুর্তি লাগবেই, আর তার সাথে আমার ছেলের আবদার পাঞ্জাবী! বড়দের না হয় বোঝাতে পারা যায় তবে ছোটদের?
বাড়িতে গেলেই ছোটো ছেলেটা আমার পিছু পিছু ঘুরবে আর আস্তে আস্তে করে কানের কাছে এসে বলবে "বাবা, আনবে কবে?" তাকে বলা হয়েছে, সেলাই করতে দেওয়া হয়েছে! পুজোতে অনেক মানুষ জামা কাপড় বানায় তাই জামা দিতে দেরি হচ্ছে কিন্তু অষ্টমীর আগেই নতুন পাঞ্জাবী চলে আসবে; সাথে জুতো, বড়োদের জামাকাপড়, আমাদের পায়জামা, পাঞ্জাবী ইত্যাদি!
দোকান থেকে বাড়িতে গেলেই সে দৌড়ে আমার জন্যে জল নিয়ে আসে, খাতির যত্ন করে, মাথা টিপে দেয়, আর এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করবে, "বাবা, আমার পাঞ্জাবী?"
মোটামুটি সচ্ছল পরিবারেরই ছিলাম আমরা, কিন্তু আমার বাবার মানুষের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস আর খরুচে হাতের ফল খুব করে টের পাচ্ছি এখন! একটা পুজোতে নিজেরা কিছু গায়ে না দি, কিন্তু ছোটো ছেলেটার কথা ভাবতেই চোখটা ভিজে যাচ্ছে আমার!
দোকান মালিককে বলতেও লজ্জা লাগলো আমাকে কিছু টাকা এডভান্স দিন! মাত্র কয়েকদিন চাকরীতে ঢুকেই এখনই টাকা পয়সা এডভান্সে চেয়ে চাকরীটাই না যায় ভেবে তাকেও বলা হয় নি!
খালি হাতে বাড়িতে ফিরে ছেলেটার চোখের দিকে তাকাতে পারবো না! বড়ো মানুষ হলেও বুঝিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু বাচ্চা মানুষকে কেমন করে বোঝাই? লজ্জায় চোখে জল যেমন আসলো তেমনি গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেয়ার জন্যেও সাহসও এলো!
সাহস করে ঝাঁপ দেয়ার মুহূর্তে পেছন থেকে এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন, "এই যে একটু শুনুন!"
পেছন ফিরে দেখলাম ভদ্রলোকের গায়ে সাদা চেক শার্ট, শার্টের হাতা গোটানো, সুঠাম দেহ, দারুণ একটা পারফিউমের গন্ধ আসছে তার থেকে ভেসে! সাদা পাকা চুলের মানুষটা বললেন, "আসুন চা খাই! ঝাঁপ পরেও দিতে পারবেন, রাস্তাতো আর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে না!"
অবাক হয়ে ভদ্রলোককে দেখলাম! উনি জানলেন কিভাবে আমি ঝাঁপ দেবো?
ভদ্রলোক বললেন, "অবাক হচ্ছেন? তা এটা স্বাভাবিক! আমার জানার কথা না আপনি বাসের নিচে ঝাঁপ দেবেন! তবুও কেন জানি না, আমার মনে হলো আপনি ঝাঁপ দেবেন! আসুন, চা খেতে খেতে গল্প করি! এক্সাইড মোড়ে সিগন্যালের এই মালাই চাটা হেব্বি কিন্তু!"
চা হাতে নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, "বছর পঁচিশ আগে আমিও আপনার মতন অবস্থায় পড়েছিলাম! লজ্জায় আমিও গাড়ি খুঁজছিলাম ঝাঁপ দিতে! আচ্ছা আপনি ঝাঁপ দিলেন, তারপর? মারা গেলেন কিন্তু এরপর? আপনার পরিবারের কী অবস্থা হবে? মানে আপনার লাশ পোড়ানোর পয়সা কী আছে? সেটা থাকলে ছোট্ট ছেলেটার পাঞ্জাবী কেনাই হয়ে যেত, তাই না? পরে আরেক বিপদ হবে আপনার লাশ পোড়ানোর জন্যে মানুষের কাছ থেকে টাকা ওঠানো! সেটা আরো লজ্জার হবে তাই না? আবার ধরুন গাড়ির নিচে পড়লেন কিন্তু মরলেন না কিন্তু হাত পা কিছু ভেঙ্গে পড়ে আছেন তখন চিকিৎসা করবে কে? খরচই বা কোথায় পাবেন? বা কাজকর্মই বা করবেন কিভাবে?"
ভদ্রলোক কী করে জানলেন আমার ছেলের একটা পাঞ্জাবী লাগবে, ভাবতেই বললেন, "শুনুন! আমার ছেলেরও পাঞ্জাবীর জন্যেই আমি ঝাঁপ দিচ্ছিলাম সেদিন গাড়ির নিচে! লজ্জা লাগছিলো এই ভেবে একটা পাঞ্জাবী ছেলেকে কিনে দিতে পারবো না? তখন আমাকেও কেউ একজন থামায়! কে থামায় একদিন আপনিও বের করতে পারবেন। যান যান বাড়িতে যান! ছেলেকে বোঝান যে, এক পুজোতে পাঞ্জাবী গায়ে না দিলে কিচ্ছু হবে না! বেঁচে থাকুন! বেঁচে থাকলে পুজোর শপিং প্রতিদিন করতে পারবেন পরিবারের জন্যে! বেঁচে থাকাটা উপভোগ করুন! বেঁচে থাকাটা অনেকে আনন্দের! যান যান বাড়িতে যান! আর তারপরেও যদি মনেহয় আপনার স্বাধীনতা আছে ঝাঁপ দেওয়ার ব্যস্ত নগরীতে গাড়ির অভাব নেই!"
ভদ্রলোক চলে যাচ্ছেন! ভদ্রলোককে কেমন যেন খুব চেনা চেনা লাগছে আমার! তার সাথে আমার খুব গভীর সম্পর্ক আছে কিন্তু সেটা কী, তা আমি জানি না! আমার কাছে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন হচ্ছে! ঘোরের ভেতর আছি আমি!
আমি বাড়িতে ফিরি! ছেলে দৌড়ে এসে দরজা খুলে বলে, "বাবা, পাঞ্জাবী এনেছো?" তাকে জড়িয়ে ধরে বলি, "একদিন একটা পাঞ্জাবীর দোকান কিনে দেবো তোমাকে! আমি বাঁচি! আমি বাঁচলে তোরাও বাঁচবি!"
আমার ক্লাস টুতে পড়া ছোট্ট ছেলেটা এখন ডাক্তারি পড়ছে! আমি যে খুব বড়োলোক হয়ে গেছি তা না, তবে সচ্ছল হয়েছি অনেক! বোনটার বিয়ে দিয়েছি। আমার বাবা রোজ সকালে উঠে বাজারে যান, বাড়িতে এসে বারান্দায় চা হাতে কাগজ আর পত্রিকা পড়েন আর সংসার চালান আমার মা আর আমার গিন্নি! ছেলেমেয়েদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি কাজে যাই!
প্রায়শই আমি আমার অতীতের কথা ভাবি! প্রায় আমাকে সেদিন গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিতে বাধা দেয়া মানুষটার কথা ভাবি! কে ছিলেন তিনি? আয়নার সামনে মাঝেমাঝে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখি! আমি দেখতে ঠিক সেই মানুষটার মতন এখন! একদম সেই মানুষটাই আমি!
সাদা চেক, শার্টের হাতা গুটিয়ে দামী পারফিউম মেখে আয়নার সামনে দাঁড়াই, প্রায় সেই মানুষটাকে দেখতে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি না হাসলেও আয়নার ভেতরে থাকা মানুষটা হাসে! হেসে হেসে বলে, "কী দেখলেনতো, বেঁচে থাকাটা কত আনন্দের?"
মাঝেমাঝে ভাবি, ভবিষ্যতের আমিই কী সেদিন আমাকে বাঁচাতে অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম, নাকি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো আমার বোধ?
©উshaস চttopaধ্যায়~
Tuesday, 14 September 2021
অবিস্মরণীয় মূহুর্তের দোষী ...
"অবিস্মরণীয় মূহুর্তের দোষী"
মঞ্চে উঠলেন অরুনা। এটি ছিল মাইসোরের একটি বিখ্যাত আর্টস কলেজের কোনো এক বিশেষ বর্ষপূর্তির শেষ দিন উদযাপন। অরুনা একজন নামকরা সমাজকর্মী। সে তার সামাজিক সেবার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেছে। সে ঐ কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী হওয়ায় তাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্যাকড অডিটোরিয়ামে সে মাইক হাতে নিয়ে তার বক্তব্য শুরু করল। "বন্ধুরা, সুপ্রভাত! এটি আপনাদের জন্য একটি বিশেষ দিন। আপনার তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সের আজ শেষ দিন। আপনাদের মাঝে কেউ হয়তো উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করেছেন, আবার আপনারা কেউ হয়তো ক্যাম্পাসের চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং পরীক্ষার পর যোগদানের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আপনার নিজ নিজ ক্ষেত্র নির্বাচন করার জন্য আমি আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আজ আমি বক্তৃতা দেওয়ার পরিবর্তে আপনাদেরকে একটি গল্প বলতে যাচ্ছি। এটি একটি বাস্তব গল্প যা ১০ বছর আগে ঘটেছিল। কোনো এক সময়ে এক কলেজে একদল শিক্ষার্থী তাদের চূড়ান্ত বর্ষের ব্যাচেলর ডিগ্রি করছিল। সেই দলের ভিড়ে ছিল দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অরুনা এবং নিকিতা। তারা স্কুলকাল থেকেই বন্ধু ছিল এবং তারা দুজন একই কলেজে স্নাতক হওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল। উভয়ই পড়াশোনায় এবং অতিরিক্ত ক্রিয়াকলাপেও দুর্দান্ত ছিল। অরুনা এবং নিকিতা দুজনেই তাদের পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিল। যদিও তারা প্রায় সব কিছুতেই সমান ছিল, কিন্তু নিকিতা অরুনার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল, বিশেষ করে পড়াশোনায়। স্কুলের দিন এবং কলেজের দিনগুলিতে, নিকিতা সবসময় অরুনার চেয়ে ভাল গ্রেড বা স্কোর অর্জন করেছিল। কমপক্ষে একবার নিকিতাকে পরাজিত করার জন্য অরুনা খুব চেষ্টা করেছিল। একবার, শুধুমাত্র নবম শ্রেণীতে ছাড়া অরুনা কখনোই কোনো বিষয়ে নিকিতার চেয়ে বেশি স্কোর অর্জন করতে পারেনি, তাও সেবছর কোনো উপলক্ষ্য ছাড়াই যখন নিকিতা অসুস্থ হয়ে পড়ে, এছাড়া আর কোনো বছর না।
তারপর এল ডিগ্রির বছর, যেহেতু এটি স্নাতকের শেষ বছর ছিল, তাই অরুনা জানত যে, সুযোগটি তার হাত ফস্কাতে চলেছে, নাও অর নেভার। সে ভীষনভাবে পড়াশোনা করেছিলো, কিন্তু মক্ টেস্ট পরীক্ষায় সে জানতে পেরেছিল যে নিকিতা অনেক এগিয়ে আছে এবং সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা দশজন রেঙ্ক হোল্ডারদের মধ্যে হতে পারে। অরুনা, নিকিতাকে পরাজিত করার উপায় বের করতে শুরু করে। সেই সময়ই সুযোগটা বেরিয়েও এল। এইরকম চূড়ান্ত সময়ে, নিকিতা এবং অরুনাসহ একদল ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলে গেট-টুগেদারের পর রাতের খাবারে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। গ্রুপের ছেলেরা দাবি করেছিল, যেহেতু এটি বর্ষের শেষ দিন, তাই তারা মদ্যপান করতে চায় এবং তারা একটি বার-কাম-রেস্তোরাঁয় গেলেই তারা যোগ দেবে, নচেৎ নয়। যেহেতু তারা একে অপরকে ভালভাবে চিনত, জানত, তাই মেয়েরাও রাজি হয়েছিল।
তারা তাদের রাতের খাবারের জন্য একটি ভাল হোটেলে গিয়েছিল এবং খাবার খেতেও শুরু করেছিল। তারা সেই দুর্দান্ত মুহূর্তগুলির ছবি তুলছিল। নিকিতা এবং অরুনার ছবি ও ছোট ভিডিও ক্লিপও নিতে শুরু করে। ছেলেরা বিয়ার অর্ডার করেছিল এবং তারা পান করতে শুরু করে। তারপর তারা মেয়েদের এই পানীয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেয়েরা তা প্রত্যাখ্যান করে। এইসময় ছেলেরা জেদ ধরে বসে, ছেলেরা মেয়েদের চ্যালেঞ্জ করে বলে, 'তোমরা সবসময় লিঙ্গ সমতার কথা বলো কিন্তু তোমাদের কখনো মদ খাওয়ার সাহস থাকে না। তোমাদের কোন আত্মনিয়ন্ত্রণ নেই এবং তোমরা ভয় পাও যে, একবার তোমরা এটি পেয়ে গেলে, এটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। তোমাদের যদি সাহস থাকে তাহলে এই রকম ভাবে অফার ফিরিয়ে দিতে না, অন্তত সাহস করো এটির স্বাদ নেওয়ার'। মেয়েরা একে অপরের দিকে তাকাল। নিকিতা গ্রুপের সবচেয়ে সাহসী হওয়ায় বিয়ারের বোতলটা হাতে নিল। অরুনা-ও তার সুযোগ হাতে নাতে পেয়েছে। সে উঠল এবং তার ফোনে ঘেঁটে সে বলল "আমার এক পিসি আমাকে স্কাইপে ইনভাইট করছে, অনেক দুরে থাকে, আমাকে নিতেই হবে কলটা"। সেই অজুহাতে সে ভিডিওটি চালু করে এবং একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করে যেখানে নিকিতা বোতল থেকে সরাসরি বিয়ার খাচ্ছিল এবং তার চারপাশের বন্ধুরা জোরে জোরে উল্লাস করছিল। নিকিতা কেবল একটি চুমুক নিয়ে বোতলটি ফেরত দিয়ে বলল "আমাদের সাহস আছে, তাই চ্যালেঞ্জ করবে না"। কিন্তু, ততক্ষণে অরুনা ক্লিপটা পেয়ে গিয়েছে। অরুনা প্রাথমিকভাবে ক্লিপটি মুছে ফেলার কথা ভেবেছিল। কিন্তু, সে এটা রেখে দিয়েছিল। দ্বিতীয় মক্ টেস্ট এর (চূড়ান্ত পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ আগে) ফলাফল দেখার পর, অরুনা নিশ্চিত হয় যে, সে কখনো নিকিতাকে হারাতে পারবে না। তারপর সে চরম সিদ্ধান্তটি নিয়ে নেয়। সে "অবিস্মরণীয় মুহূর্ত" ক্যাপশন দিয়ে ক্লিপটি তার বন্ধুদের কাছে পাঠিয়েছিল এবং তার পরে কি হবে তা আপনারা বিচার করতে পারেন। ক্লিপটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং শুধু ২ দিনের মধ্যে! এটি তাদের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ লক্ষ লক্ষের কাছে পৌঁছে যায়। আপলোড করা অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে "অবিস্মরণীয় মুহূর্ত" থেকে ক্যাপশনটি "আজকের দায়িত্বজ্ঞানহীন মাতাল মেয়ে" তে পরিণত হয়ে গেছে। নিকিতাকে তার আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় মানুষ এবং বন্ধুদের দ্বারা মাতাল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অরুনা যা পরিকল্পনা করেছিল তা ঘটেছিল। নিকিতা বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল। নিকিতা ফার্স্ট পেপার টির জন্য পরীক্ষায় এসেছিল। কিন্তু, সে চূড়ান্ত পরীক্ষার বাকি কোনোটিতেও উপস্থিত হয়নি। নিকিতা তার ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরে বসেছিল। শেষ পরীক্ষার পরের দিন, অরুনা খবর পেল যে নিকিতা নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
যখন অরুনা তার বন্ধুর শেষকৃত্যে গিয়েছিল, নিকিতার বাবা -মায়ের মনোভাব তাকে অবাক করেছিল। তারা বলেছিল, "এইভাবে তাও ভাল। অন্যথায়, আমাদের সারা জীবনে এবং আমাদের আত্মীয়দের জন্য সে একটি বোঝা হয়ে উঠত"।
পুলিশ ঘটনার তদন্ত করেছিল, এটি ছিল 'ননসেন্স' এর একটি স্পষ্ট ঘটনা। একটি পার্টি চলাকালীন একটি মেয়ে হোটেলে অ্যালকোহল গ্রহন করেছিল, তার পরিণতি চিন্তা না করেই এবং সে যার জন্য ভুগেওছিল, মামলা বন্ধ করে দিয়েছিল তারা!
কিন্তু সেটাই ছিল অরুনার গল্পের শুরু। দোষী নিজের দোষ সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় তাকে তাড়া করতে শুরু করে নিজের বিবেক এবং অরুনা হতাশ হয়ে পড়ে। সে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যে, এটি নিকিতার অজ্ঞতার কাজ যা তার ভাগ্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তার মস্তিষ্কের আরেক অংশ সেই যুক্তিটা মানতে প্রস্তুত ছিল না। এটা তাকে বলতে থাকে, সেই দায়ী। অরুনার সামনে দুটি চয়েস ছিল, হয় একজন অপরাধীর মত আচরণ শুরু করা, যে বিশ্বাস করে তার অন্যের জীবনের ওপর অধিকার আছে কারণ অন্যরা অতটা স্মার্ট নয়। অতএব তার কাজগুলি ন্যায়সঙ্গত এবং যে কোনও উপায়ে অন্যদের দ্বারা তাদের পথে আটকে দাঁড়িয়ে থাকাকে দূর করাতে কোন ভুল নেই। আর অন্য বিকল্প ছিল অনুশোচনা করা এবং ভুল সংশোধনের জন্য যা সম্ভব তা করা। অরুনা অপরাধমূলক মানসিকতা নিয়ে জন্মায়নি বা বড় হয়নি, তাই সে দ্বিতীয়টি বেছে নেয়। অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েশনের রেজাল্ট বেরিয়েছিল এবং অরুনা কলেজের টপার হয়েছিল। এটি তাকে একটি ভাল চাকরি পেতে করতে সাহায্য করেছিল। সে নিকিতার বাবা -মায়ের সাথে দেখা করে তাদের বলেছিল যে তাকে নিজের মেয়ে হিসাবে দেখতে বা বিবেচনা করতে। সে তার বেতনের ৫০% নিকিতার বাবা -মাকে দেওয়া শুরু করেছিল যারা ততক্ষণে অবসর নিয়েছিলেন। তার নিজের বাড়িতে, অরুনার বাবা -মা তার জন্য সম্বন্ধ খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু সে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। অপরাধবোধ তাকে তাড়া করে বেড়াত এবং সে জানত, এটা তাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। অনেক বছর পর, অরুনা উইমেনস ফোরামে একটি সামাজিক সেবার চাকরি হিসাবে বেছে নেয় যেখানে সে বিষণ্নতার সমস্যাযুক্ত তরুণ ছেলে-মেয়েদের পরামর্শ দেয়। এখন আমার বন্ধুরা দেখো, একটি ক্ষণস্থায়ী ভুল অনেক জীবনকে বিপদে ফেলেছে। অরুনা খুশি নয় এবং সে কখনো সুখী হবে না। নিকিতা তার জীবন হারিয়েছে এবং তার বাবা -মা তাদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছে। অরুনা তাদের মেয়ে হওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোন কিছুই প্রকৃত কন্যার জায়গা নিতে পারে না এবং এই প্রক্রিয়ায়, অরুনার বাবা -মাও একটি কন্যা সন্তানের সুখ থেকে বঞ্চিত হন। সবাই অসুখী ছিল। সুতরাং, ক্ষণস্থায়ী লাভের জন্য কখনও, কখনও বোকার মতো কিছু করবে না। তুমি যে দোষী সেই অনুভূতিটাই সামলাতে পারবে না। আর তোমরা যে গল্পটি শুনছো তাতে অরুনা, হলাম আমি"।
তারপর সে কথা বন্ধ করে দিল...
পরদিন ছাত্ররা সোশ্যাল মিডিয়ার খবর পড়ে যে, “অরুনা, যিনি একজন সুপরিচিত সমাজকর্মী, তার বন্ধুর আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে যা ১০ বছর আগে ঘটেছিল। কলেজে অরুনা যে ভাষণটি দিয়েছে তা তার অপরাধের স্বীকারোক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পুলিশ মামলাটি পুনরায় চালু করেছে”...
--©উshaস চttopaধ্যায়~----
###########################
[আপনার কি এই গল্পটি পছন্দ হয়েছে? একটি নতুন গল্প প্রকাশিত হলে আপনি কি বিজ্ঞপ্তি পেতে চান? যদি আপনার উত্তর হ্যা হয়, তবে অনুগ্রহ করে এই পেজে ক্লিক করুন এবং লাইক করুন, এবং সঙ্গে থাকুন॥] 🙏🏼