Monday 24 October 2022

দিওয়ালির বোনাস...

সবাইকে দীপাবলির শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আজকের সকালে আমার এই গল্পটা দিলাম, পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে আশা করি! 

জানাতে ভুলবেন না, কেমন লাগল 🙏🏼🙂

***********************************

এগারো হাজার নশো, এই নিয়ে বার তিনেক গুনলাম। আমি জানতাম এখানে এগারো হাজার নশো টাকাই আছে। তারপরও পর পর দুইবার আবারো গুনলাম। আরও দুই হাজার টাকা লাগবে। অফিসে এসেই অয়ন স্যারের কাছে গেলাম, যদিও আগের পাঁচ'শ টাকা এখনো শোধ করা হয়নি। তারপরও গিয়ে বললাম, 'স্যার হাজার দুয়েক টাকা লাগতো! প্রতি মাসে পাঁচ'শ করে ফেরত করে দেব।' 

'কী ব্যাপার রজত বাবু, সকাল সকাল টাকা ধার চাইছ, দিওয়ালির বোনাস ও কম পড়ল নাকি?' 

'সে তো বটেই স্যার, আর একটা কাজ ও আছে স্যার..' 

'সেটা তো বুঝলুম, তুমি তো কাজ ছাড়া এক টাকাও খরচ করো না! তবে কাজটা কী, শুনি? 

'মেয়েটার জন্য একটা ফোন কিনব স্যার, স্মার্ট ফোন। মেয়েটা কলেজে ভর্তি হয়েছে কিনা! লেখাপড়ার নানা কাজ এই ফোন ছাড়া নাকি হয় না। মাঝে মাঝে তো নাকি ফোনেও ক্লাস হয়! মেয়ের মামা মোবাইল একটা দিয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা অনেক পুরনো। আজ ঠিক তো কাল সারাই করার দোকানে, এটা চলে তো ওটা চলে না। মেয়েটা নাজেহাল হয় ঠিকই কিন্তু আমার আয়ের কথা জানা আছে বলে মুখ ফুটে কিছু বলে না। মেয়ের মা কয়েকদিন ধরে বলছিল, স্মার্ট ফোন কেনার মতো এত গুলো টাকা একসাথে জোগাড় করা বেশ কঠিন। গত কয়েক মাসে মোটামুটি কিছু টাকা জমিয়েও ফেলেছি, আজ বোনাস পেয়ে ও দামে কুলোচ্ছে না..' 

'ভালো কথা, কিন্তু আমার হাতে এখন নগদ অতোগুলো টাকা তো নেই রজত। লাঞ্চের সময় বাইরে গেলে এটিএম থেকে কিছু টাকা তুলে দেব, তখন না হয় নিও, কেমন?' 

'ঠিক আছে স্যার, তখন দিলেই হবে।..' 

অয়ন স্যারের কাছ থেকে ফিরে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন লাঞ্চের সময় হবে। টাকাটা বের করে আরেকবার গুনতে ইচ্ছে হলো। যদিও গুনে কোনো লাভ নেই সেটা আমি জানি। ওখানে এগারো হাজার নশো টাকাই আছে। এদিকে মেয়েটা দু-তিনবার মিসকল দিয়েছে। মিসকল দেওয়ার কারণও আছে। ভেবেছিলাম, সকালে অফিসে এসে অয়ন স্যারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য ছুটি নেব। মেয়েটাকে তেমন করে বলেও রেখেছি। কথা ছিল অফিসে এসে হাতের কাজ গুছিয়ে আমি ফোন করব। আমি ফোন করলেই দুই মেয়ে আর তার মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়বে, দমদম মতিঝিল থেকে ডালহৌসি। সেই ডালহৌসির কাছেই একটা মোবাইল শোরুম থেকে আমরা ফোনটা নেব, ঠিক করে রেখেছি। এদিকে হাতের কাজ গুছিয়ে ফেললেও টাকা জোগাড় হয়নি। ভেবেছিলাম একটু পরে মেয়েদের ফোন করে বলব দুপুরের পর বাড়ি থেকে বেরোতে। কিন্তু তার আগেই মেয়েটার দু-দুবার মিসকল দিয়ে দিয়েছে। আমি জানি, মেয়েরা এই নিয়ে খুব উত্তেজিত। অনেকদিন এতো দাম দিয়ে আমার বাড়িতে কিছু কেনা হয়নি। মেয়েদের সাথে মেয়ের মাও ভীষণ খুশি। মেয়ের মা খুশি কারণ এখন সে মাঝে মাঝে বাড়িতে ভিডিও কল করতে পারবে বলে। তাছাড়া সে শুনেছে, স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে নাকি টাকা ছাড়াও কল করা যায়, কী যেন গুগুলে না স্কাইপিতে। এইটা শোনার পরে সে মহা খুশি। গতকাল অফিস বন্ধের পরে আমি আর বড় মেয়ে শিখা এই ফোনটা একবার দেখে গিয়েছি। মেয়েটা একটু লাজুক প্রকৃতির। কিনব না, কিন্তু দামদর করে দেখতে শোরুমে যেতে একটু ইতস্তত করছিল। আমিই জোর করলাম। বললাম, 'দামি জিনিস। একটু আগে থেকে দেখে শুনে কিনলে ঠকবো না। তাছাড়া আমাদের তো আর জানা শোনা নেই। আগে থেকে দেখে শুনে দামদর করে একটু দেখে আসলে সুবিধাই হবে।' 
আমার কথায় মেয়েটা রাজি হলো। ডালহৌসিতেই দু-চারটে শোরুম ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আমাদের বাপ-বেটিকে দেখে দোকানিরা দামি দামি সব ফোন দেখায়। ফোনের নানা সব ফাংশান বলে, ওতসব আমার জানা নেই। মেয়েটা কিছু কিছু জানে বটে; ওইটুকুই ভরসা। কিন্তু দামি ফোন দেখে মেয়েটা কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে থাকে। আমাকে কানে কানে ফিসফিস করে বলতে থাকে, 'বাবা, এখানে দেখার দরকার নেই, চলো এখান থেকে..' 

আমি বুঝতে পারি, মেয়ে আমার দাম নিয়ে ভয় পাচ্ছে। দোকানের বাইরে এসে বাপ-মেয়ে শলাপরামর্শ করি, তারপর আবার দোকানে যাই। হাজার দশেকের মধ্যে মোবাইল খুঁজি। মেয়েটার কাজ হবে এমন মোবাইল হাজার দশেকের মধ্যে পাওয়া মুশকিল। মেয়েটার মন খারাপ হয়। আমি জানি বার বার এই দোকান সেই দোকান ঘুরতে তার লজ্জা কচ্ছে। তারপরও সেই লজ্জা আমার কাছে লুকিয়ে রেখে মেয়েটা বলে, 'বাবা, আমরা না হয় আর কিছুদিন পরে ফোনটা কিনি!' 
মেয়েটার কথা আমার বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে। এত আশা নিয়ে, এতটা পথ এসে ফোন কেনা হবে না ভাবতেই আমার কেমন যেন বুকটা ফেটে যেতে চাইছে। মনে মনে ভেবে রাখলাম আজ ফোন পছন্দ করেই তবে ফিরব। হাজার দুই তিনেক টাকা বেশি লাগে তো লাগুক। মেয়েকে নিয়ে আবার ঘুরতে লাগলাম। শেষে এই তের হাজার আটশো টাকা দামের ফোনটা আমাদের খুব পছন্দ হলো। সেই পছন্দ করা হয়ে গেলে, বাপ-মেয়ে বেশ খোশ মেজাজে বাড়ি ফিরলাম। আমার ছোট মেয়েটা পড়ে ক্লাস সিক্স। সেও বায়না ধরল ফোন কেনার সময় সাথে যাবে। এদিকে মেয়ের মাকেও দেখলাম যেতে রাজি। ভাবলাম ভালোই হলো, একটা ফোন যখন কিনছি তবে সবাই গিয়েই না হয় কিনি। সেই থেকে বাড়িতে উৎসব লেগে আছে। এমনিতেই দীপাবলির অনেক অফার বেরিয়েছে। গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত দেখলাম দুই মেয়ে ফিসফিস করে এই ফোন নিয়ে কী সব বলছে। মেয়েদের খুশি দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগে। হাজার দশেক টাকা আগেই জমানো ছিল। রাতে মাটির ব্যাংকটা ভাঙলাম। ভেবেছিলাম বাকি টাকা ওখানে পাওয়া যাবে। কিন্তু পেলাম ঐ হাজারের কাছাকাছি। এদিকে মেয়েদের কথা দিয়ে রেখেছিলাম আজই ফোন কিনব। সুতরাং রাতেই ভেবে রেখেছি, অফিসে এসে অয়ন স্যারের কাছ থেকে বাকি দু-হাজার টাকা ধার নিয়ে ফোনটা কিনে ফেলব। বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি, দুপুরের পরেই রওনা দিতে। এদিকে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন লাঞ্চের সময় হবে। বড় স্যারের কাছ থেকে আগেভাগে লাঞ্চের পর থেকে ছুটি নিয়ে রেখেছি। এখন টাকাটা হাতে পেলেই হলো। ডালহৌসির ট্রাভেল এজেন্সির এই অফিসে আমরা লোকজন বলতে জনা দশেক। বড় স্যারের পর ওই অয়ন স্যার। বড় স্যার ধার দেনা পছন্দ করে না। এদিকে অয়ন স্যার ছাড়া বাকি সবার হাতের অবস্থা ঠিক আমার মতো। বিপদে আপদে ওই অয়ন স্যার আমাদের অনেকের ভরসা, আজও তাই। তাছাড়া আমার মতো অফিস পিয়নকে টাকা পয়সা ধার দিতে ও সচরাচর অনেকে ভয় পায়। আমিও খুব একটা বিপদে না পড়লে ধারদেনা পছন্দ করি না। আমার অল্প মাইনে আর শিখার মায়ের সেলাই এর কাজের টাকা দিয়ে টেনে টুনে সংসার চলে যায়, তাই নিয়ে আমরা খুশি। কিন্তু হঠাৎ করে এই ফোনের টাকা জোগাড় করতে এবার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। 

লাঞ্চের সময় কিছুটা পেরিয়েছে। অয়ন স্যার একটু আগে বেরিয়েছেন, আমাকে বলে গেলেন লাঞ্চ করে আধ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবেন। আমার টাকার কথা তার মনে আছে। যাওয়ার সময় আমাকে আশ্বস্ত করায় আমি কিছুটা সাহস পেলাম। এদিকে আমিও মেয়েদের বলে দিলাম রওনা দিতে। এতক্ষণে এসেও গিয়েছে বোধহয়। শিখা জানে কোথায় দাঁড়াতে হবে। তাছাড়া আমি বলে দিয়েছি যে দোকানটায় ফোন পছন্দ করে রেখেছি সেখানে গিয়ে ফোনটা দেখে রাখতে। আমাকে যেহেতু মিস কল দিয়েছে তাই নিশ্চিত হলাম পৌঁছে গিয়েছে। 

লাঞ্চের সময় ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেল। অয়ন স্যার এখনো আসেন নি। আমি একটু বিচলিত হয়ে পড়লাম। এদিকে মা-মেয়েরা এসে দাঁড়িয়ে আছে। বড় মেয়েটা দুবার ফোন দিয়ে জানতে চাইলো আমার আসতে দেরি হবে কি না। তারা নাকি বেশ কিছুক্ষণ ওই দোকানেই ছিল। এখন বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ফোন না কিনে দীর্ঘক্ষন একটা দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ অস্বস্তির। অয়ন স্যারকে ফোন করলাম, তিনি ফোন ধরছেন না। এমন তো হওয়ার কথা নয়.. 

সময় আরো কিছু পেরিয়েছে। আমার ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে। আমার অফিস থেকে মিনিট দশেক হাঁটলেই সেই মোবাইল ফোনের দোকান। এদিকে অয়ন স্যার আসবে আসবে করে আমি কোথাও নড়তে পারছি না। এখন মনে হচ্ছে কোথাও পালিয়ে যাই। মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি, কিছু টাকা জোগাড় হয় নি শুনেও মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে বাড়ি যাবে; ফোনের কথা একবার ও তুলবে না। মেয়েটা তখন অন্য একটা গল্প জুড়ে দেবে। সেই গল্প শুনে আমার হাসি পাবে, খুব হাসি। মেয়েটা লাজুক হলেও ভীষণ ভালো গল্প বলে। এতো গল্প তার মাথায় কোথা থেকে আসে আমি বুঝি না। আমার শুনতে বেশ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন মেয়েটার কাছে গিয়ে বসি। মেয়েটা খুব বুঝতে পারে, আমাকে মন খারাপের কোনো কারণ জিজ্ঞেস না করেই গল্প বলা শুরু করে। মাঝে মাঝে সেই গল্প শুনে আমি হাসি। বাচ্চাদের মতো করে হাসি। আমার হাসি দেখে বউ বলে আমি নাকি পাগল। কিন্তু আমি জানি, আজ আমার গল্প শুনতে ভালো লাগবে না। একটুও না। আজ গল্প বললেও আমার মন ভালো হবে না। তাই আমি বসে আছি। মনে মনে ভাবলাম আর কিছুক্ষণ দেখি। অয়ন স্যার এসে পড়লে সব সমাধান হয়ে যাবে। মা-মেয়েরা না হয় আরোও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুক। 
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমি রওনা হলাম স্ত্রী এবং মেয়েরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেইখানে। যাওয়ার আগে লাজ-লজ্জা ফেলে দু-একজনের কাছে দুই হাজার টাকা ধার চাইলাম, কেউ পারল না দিতে। মোবাইল ফোনের দোকানের কাছে এসেই দেখলাম দোকান থেকে একটু আড়ালে মা-মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে তাদের দেখে আমার পা যেন আটকে গেল। আমি তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু পা দুটি যেন অসাড় হয়ে আছে। নিজেকে টেনে নিয়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে দেখেই বড় মেয়েটা দ্রুত পায়ে কাছে এসে বলল, 'বাবা, আজকে ফোন নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা না হয় দুদিন পরে নিই। চলো আজ আমরা কিছুক্ষণ এসপ্ল্যানেডে ঘুরে বাড়ি ফিরি।' 

আমি কিছু একটা বলতে গেলাম কিন্তু গলাটা কেমন যেন আটকে আসল। মেয়েরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। আমার আজকের সীমাবদ্ধতার কারণও নিশ্চয় মেয়েটার জানা হয়ে গিয়েছে। জানা হয়ে গিয়েছে বলেই হয়তো আমারে কাছে কোনো কৈফিয়ৎ জানতে চেয়ে আমাকে কষ্ট দিতে চাইছে না মেয়েটা। 

ডালহৌসি থেকে আমরা সবাই হাঁটা ধরলাম এসপ্ল্যানেডের দিকে। ভাবলাম সেখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সময় কাটিয়ে বাসে করে সবাই মতিঝিল ফিরে যাব। 

কিছুটা দূর আসতেই দেখি অয়ন স্যার ফোন করছেন। ফোন ধরতেই বলল, 'রজত বাবু, তুমি কোথায়?' 

'আমি বাড়ি যাচ্ছি স্যার..' 

'এখন আছো কোথায় তুমি?' 

'গ্র্যান্ড হোটেলের তলায়..' 

'তুমি ওখানেই দাঁড়াও, আমি এখুনি আসছি..' 

পাঁচ মিনিটের মধ্যে অয়ন স্যার এসে হাজির। এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, 'তুমি তো দেখলে আমি লাঞ্চে গেলুম। যেইমাত্র খেতে বসেছি অমনি বাড়ি থেকে ফোন এলো যে আমার ছোট মেয়েটা রুমে আটকা পড়েছে। কিছুতেই লক খুলতে পারছে না। এদিকে মেয়েটার আবার শ্বাস কষ্ট আছে, ভয়ে সেই শ্বাস কষ্ট আরো বেড়ে যায়। আমি কিছু না ভেবেই রওনা দিলুম বাড়ির দিকে। জ্যামের কারণে অর্ধেক পথ গেলুম দৌড়ে, এ ছাড়া উপায় ও নেই। আমার খুব আদরের মেয়ে। মেয়ের কথা ভেবে কাঁদছি আর দৌড়চ্ছি। শেষে আমি গিয়ে, দরজার তালা ভেঙে মেয়েকে বের করলুম। এত কিছুর মধ্যে তোমার টাকার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলুম রজত। সবকিছু শান্ত হতেই তোমার কথা মনে পড়ল। ভেবেছিলুম আসব না। কিন্তু আমি চাই না আজ তোমার মেয়ের একটুও মন খারাপ হোক।' 

আমি বললাম, 'আরে, সমস্যা নেই স্যার। আরেক দিন নিয়ে নিতাম।' 

'আরেক দিন মানে? আমি আবার আসলম ফোন কিনতে আর তুমি বলছ আরেক দিন? চলো কোথায় ফোন দেখেছিলে..' 

অয়ন স্যারের জোরাজুরি তে আমরা সবাই আবার ফিরে গেলাম সেই দোকানে। ফোন নিয়ে অয়ন স্যার সব টাকা তার কার্ড থেকে পরিশোধ করে দিয়ে বলল, আজ এই ফোন আমার শিখা মায়ের জন্য আমার তরফ থেকে উপহার। এই টাকা তোমাকে শোধ করতে হবে না।' 

আমি খুব না করলাম কিন্তু অয়ন স্যার বলল, 'এটা আমি খুশি হয়ে দিচ্ছি। তোমার মতো ভালো মানুষের মেয়েকে কিছু দিতে পারলে আমার ভালো লাগবে। তুমি না করলে আমি কষ্ট পাব!' 

অয়ন স্যারের কথা ওপর কিছু বলার সাহস আমার হলো না। ফোন কিনে অয়ন স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা দিলাম বাড়ির দিকে। ডালহৌসি থেকে একটা ট্যাক্সি নিলাম, জানি খরচ একটু বেশি হবে; তারপরেও নিলাম। ট্যাক্সিতে মেয়েটা লুকিয়ে কাঁদছে। আমি জানি মেয়েটা খুশিতে কাঁদছে। মেয়েটা চুপচাপ। অন্য সময় হলে কিছু একটা নিয়ে মেয়েটা গল্প করত। আজ করছে না। ছোট মেয়েটা একবার ফোনটা বের করে দেখতে চাইলো। শিখা নিপাট রাগ দেখিয়ে বলল, 'হাত দিবি না এখন, এই ফোন এখন ধরা যাবে না।' 

বাড়িতে ফিরে সবাই নেড়েচেড়ে ফোনটা দেখলেও এই ফোন দিয়ে কোথাও ফোন করতে দেবে না মেয়েটা। শিখার মা বলল, 'তোমার মামাকে একটা ভিডিও কল করো। অনেকদিন দেখি না ভাইটা কে, সেই সুযোগে বুড়ো বুড়িকেও দেখা হয়ে যাবে..' 

শিখার এক কথা, 'আজ কোথাও ফোন করা যাবে না, কাউকে ফোন হাতে দেওয়া যাবে না। সবকিছু কাল থেকে হবে।' আমরাও আর জোর করলাম না। মেয়েটা যেমন চায় করুক। তার খুশিতেই আমাদের খুশি। 

পরদিন সকালে আমি অফিসে এসেছি অফিসে পুজোর গোছগাছ করতে, একটু দেরিতে। পথে ভীষণ জ্যাম ছিল। এরই মধ্যে মেয়ে দুইবার ফোন করেছে। আমি অফিসে এসে বড় স্যারের একটা কাজ করছিলাম অমনি অয়ন স্যার ডাক দিয়ে তার মোবাইল ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলল, 'তোমার তো আবার বাটন ফোন। শিখা তাই আমার ফোনে ভিডিও কল করেছে। নতুন ফোন দিয়ে তোমার সাথে নাকি প্রথমে কথা বলবে। এই কারণে অন্য কারো সাথে এখনো কথা বলেনি। কথা বলো রজত..' 

ফোনটা হাতে নিতে দেখলাম আমার শিখা মেয়েটার মুখ। মেয়েটা কাঁদছে। আমিও যেন কেমন বাচ্চা হয়ে গেলাম। আমি কাঁদছি। ভিডিও কলে আছি, অথচ আমরা বাপ-মেয়ে কোনো কথা বলছি না। দুজন দুজনের কান্না দেখছি। মেয়ের সেই কান্না দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো এক সুখের গল্প শুনছি। মুখে না বললেও মেয়ের সেই গল্প ঠিকই আমি শুনতে পাচ্ছি। 

আমাদের বাপ-মেয়ের মধ্যে কোনো কথা না হয়ে সেই ভিডিও কল শেষ হলো। বুঝলাম মেয়েটা কেন গতকাল রাতে আমার ফোন থেকে অয়ন স্যারের ফোন নাম্বার নিয়েছিল। আমি একটু আড়ালে হাতের কব্জি দিয়ে দুচোখ মুছে অয়ন স্যারের দিকে ফোনটা দিলাম। স্যার আমার হাত থেকে ফোন নিতে নিতে বলল, 'পৃথিবীতেও কিছু স্বর্গ সুখ আছে রজত বাবু! আজ তোমাদের বাপ-মেয়েকে দেখে মনে হলো আমি সেই স্বর্গ সুখ দেখছি..' 

॥ দিওয়ালির বোনাস ॥

©Chatujje Moshai - চাটুজ্জে মশাই~

Tuesday 11 October 2022

সুখানুভূতির সাথে কিছুক্ষণ!

 


সারাটা দুপুরের উৎকন্ঠার বেড়াজালে কাটিয়ে, আঁধার নামতেই ঘরে নিয়ন আলোটি জ্বেলে টেবিলের ওপর বই খুলে বসলাম আমি। ফাইনাল সেমিস্টার সন্নিকটে, পড়ার চেষ্টা করলাম তাই। কিন্তু আঁখিপল্লব দু'টি বার বার ঝাপসা হয়ে এসে কাজে ব্যাঘাত ঘটালো। কোন বাঁধা-নিষেধ মানলো না অবাধ্য অশ্রুজল। নয়নের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝোরে। স্তব্ধ কক্ষে ভাসছে নাক টানার অস্ফুট শব্দ। টেবিলের একপাশে উপেক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা মুঠোফোনটি জ্বলে উঠছে বারংবার। সাইলেন্ট মোড অন করে রাখা, রিংটোনের বদলে ভাইব্রেট করে উঠছে প্রতিক্ষণে। টেবিলও সে সুবাদে শিহরণ দিচ্ছে তালে তালে। হোমস্ক্রিনে মেসেজ, মিসড কলের স্তুপ জমেছে। অথচ অভিমানি মন অদেখার ভাণ করে আছে। পুনরায় মুঠোফোনটি ভাইব্রেট করে উঠতে ঝাপসা চোখে তাকালাম পাশে, উজ্জ্বল স্ক্রিনে ভাসছে 'অয়ন' নামটি। কান্নার বেগ বাড়লো। বিতৃষ্ণা চেপে ধরতেই বন্ধ করে ফেললাম ফোনটি। প্রিয় মানুষটির নামও দেখতে অসহ্য লাগছে আজ। অথচ এই মানুষটিই আমার প্রিয় তালিকায় শীর্ষে। সহসা মাথায় অবাধ যন্ত্রণা করে উঠতেই বইয়ের ওপর দুই হাত ভাঁজ করে মাথা নুয়ে ফেললাম। নেত্রপল্লব বন্ধ করা মাত্র নোনাজলে ভিজে যেতে থাকলো প্রিন্টের বইটি। কখন যে টেবিলের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই। 

ঘুম ভাঙলো আমার মাথায় কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে, পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম। দৃষ্টি মেলার পর সর্বপ্রথম মায়ের চিন্তিত মুখটি সুস্পষ্ট হলো অক্ষিপটে। মা কন্ঠস্বর নামিয়ে বলছে, "টেবিলে মাথা রেখে কেউ ঘুমায়? আর শরীর খারাপ নাকি তোর? চোখ লাল হয়ে আছে কেন? জ্বর এসেছে নাকি?"


কথাটা বলেই মা উদ্বিগ্ন হয়ে কপালে, গালে হাত ছোঁয়ালো। গায়ের তাপমাত্রা গরম, জ্বর আসবে আসবে ভাব। আমি দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে ফেললাম, মাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না আমি কেঁদেছিলাম। নাহলেই বিপদ। কোনরকম জিভ ঠেলে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে কন্ঠ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললাম, "ঠিক আছি মা।"


মা রাগান্বিত ভঙ্গিতে চেঁচিয়ে উঠলো, "কতটা ঠিক আছিস সেতো দেখতেই পাচ্ছি। সকালে বৃষ্টিতে ভিজেছিলিস, তাই না?"


আমি উত্তর দিলাম না। আলগোছে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম শুধু। মা আমাকে খেতে দেওয়ার আগেই স্নানে যাওয়ার সময় বলে গেছিল খাবার গরম করতে। মা যেতেই অবসন্ন হাতে ফোনটা তুলে নিলাম, ফোনটা অন করবো কী-না দ্বিধাদ্বন্দে কিছুক্ষণ থেকে ফোনটা পুনরায় অবহেলায় ফেলে রাখলাম। খাওয়া দাওয়া হলো, ইত্তস্বরে মাথার যন্ত্রণাটা আবার বেড়েছে। ইচ্ছে করছে মাথাটা কেটে দুভাগ করে ফেলতে। মা নিজের হাতে খাবার, ওষুধ, জল খায়িয়ে দিয়ে বিছানায় ঘুমোনোর আদেশ দিয়ে গেল। আমিও ভদ্রবাচ্চার মত বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম, চোখে আবার জ্বালাটা শুরু হয়েছে, মাথাটাও ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে যেন, শরীর দূর্বল হয়ে এসেছে। মনের কোণে কড়া নাড়ছে বিকেলের স্মৃতিটুকু। 



[এর আগে..]

অবসর সময়টুকু ফেসবুক করেই কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় একটা পোস্ট চোখে পড়লো যেখানে লেখা, "গেট ওয়েল সুন ব্রো।" 

পোস্টটা সাধারণ, চোখে পড়ার সেরকম কারণ নেই তবে পোস্টটা অয়নের প্রোফাইলের ওয়ালে তারই এক বন্ধু কয়েক ঘন্টা আগেই পোস্ট করেছে। মুহূর্তেই অপ্রীতিকর ভাবনাগুলো চেপে ধরলো আমায়। উৎকন্ঠিত হয়ে তৎক্ষনাৎ ফোন লাগালাম অয়নকে। দুবার রিং হতেই ফোন তুলল সে, "হ্যাঁ বলো.."


আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করি, "কি হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছ তো?"


অন্যপাশ থেকে নিরস গলায় উত্তর এলো, "কেন কি হয়েছে?"


তার উত্তরে বুঝতে দেরি নেই সে কথা ঘোরাচ্ছে। আমি বললাম, "কথা ঘোরাচ্ছ কেন? সত্যি করে বলো কি হয়েছে? অভ্র দা কেন 'গেট ওয়েল সুন' বলে পোস্ট করলো? তোমার কি কিছু হয়েছে?"


ওপাশ থেকে সাথে সাথে উত্তর এলো না। কিছুটা সময় নিয়ে বলল, "আরে... বাইকে ব্যালেন্স রাখতে পারিনি। তাই পড়ে গিয়েছিলাম এই আরকি। হাতের কনুই আর পায়ে গোড়ালির দিকে সামান্য কেটেছে, খুব বেশি না।"


মুহুর্তেই আত্মা কেঁপে উঠলো আমার। তটস্থ মন বিষিয়ে গেল অজানা এক ভয়ে। প্রশ্ন জাগলো মনে, কখন হলো এসব? আমাকে জানাল না কেন? বেশি আঘাত পেয়েছে কী? নিজের উৎকন্ঠিত ভাব দমন করে বললাম, "ভিডিও কলে আসবে একটু?"


অয়ন উত্তর দেওয়ার আগেই আমি কল কেটে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে বসলাম। কারণ এখন ওকে উত্তর দিতে বললেই না করে বসবে, প্রচন্ড একরোখা। অধিকার না খাটালে কোন কাজ আদায় করা যায় না। অয়ন সময় নিয়েই ফোনটা ধরল। পিঠে বালিশ দিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে সে, বাড়িতেই যে আছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। চোখে মুখে তার বিরক্তির সুক্ষ্ম রেখা। এবার ভাবনা বেড়ে গেলো আমার, ও তো বাড়িতে বসে থাকার মানুষ না। গুরুতর কিছু না হলে অফিস ভুলেও কামাই করে না। তার মানে চোট কী বেশি পেয়েছে? পুনরায় ধক করে উঠলো প্রাণটা। হটাৎ কপালের পাশে দু'টি ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ আড়াআড়িভাবে লেপ্টে থাকতে দেখে নিজের উৎকন্ঠা ভাব লুকাতে ব্যর্থ হলাম। জিজ্ঞেস করে উঠলাম, "কখন হলো এসব? আমায় জানালে না কেন? বেশি ব্যথা পেয়েছ তাই না? কপালও কেটেছে অথচ বলে চলেছে কনুই, গোড়ালিতে ব্যথা পেয়েছে। সত্যি করে বলো তো আর কোথায় কোথায় কেটেছে? ওষুধ খেয়েছ? মলম লাগিয়েছ? দেখি তো একটু।"


সে বিরক্তিবোধ করল বোধহয়। মুখ কুঁচকে উত্তর দিল, "সকালে অফিস যাওয়ার সময় হয়েছে। এখন ঠিক আছি আমি, আর ন্যাকামো করতে হবে না।"


তার শেষ কথাটুকু শুনে থম মেরে বসে রইলাম। তার কাছে আমার চিন্তা, অস্থিরতা ন্যাকামো লাগছে? আজ তার মেজাজ এতই চটে আছে যে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করতে পিছপা হচ্ছে না? জানি মানুষটা রগচটা ধরনের তবে আগে কখনো আমাকে তার রূঢ়তার বা কঠোরতার শিকার হতে হয়নি। তবে আজ কেন? বেশি ব্যথা পেয়েছে বলে? আমি নিজের খারাপ লাগাটা একপাশে রেখে বললাম, "রাগ করছ কেন? আমি তো ক্ষতটা দেখতে চাইছিলাম শুধু। আর তোমাকে কতবার না বারণ করেছি বাইক-টাইক চালাতে.. কিন্তু তুমি আমার কথা শুনলে তো? এখন হলো তো এক্সিডেন্ট? ভুগছে এবার কে বলো তো? আর আমাকে ও একটিবার ফোন করে জানালে না। লুকোলে কথাটা। মনে রাখব আমি ও.."


হঠাৎ তার কি হলো কে জানে। ও চেঁচিয়ে বলে উঠলো, "আমি কি করবো না করবো তার কৈফিয়ত তোমায় দিতে হবে নাকি, আজব তো! এসব ন্যাকামো নেক্সট টাইম আমার সাথে করতে আসবে না তো। অসহ্য লাগে আমার।"


তার কথার প্রেক্ষিতে নীরব থেকে গেলাম। কথার উত্তর খুঁজে পেলাম না কোন। এতদিন যে মানুষটার কাছ থেকে ভালোবাসার মিষ্টি বুলি শুনেছি তার কাছ থেকে আজ তিক্ত কথাগুলো হজম করতেই পারছি না। অন্তঃস্থলে সুক্ষ্ম এক ব্যথার আবির্ভাব আঁচ করতে পারছি। চোখের কোণে জমে আসা জলটুকু আড়াল করতে দৃষ্টি নত করে মেঝেতে স্থির করলাম। অপমানে মুখ থমথমে হলেও জোরপূর্বক হাসি টেনে বললাম, "মা-বাবা না বীরভূম গিয়েছে জমির কাজে? তো দেখাশোনা কে করছে তোমার? আমি কি আসবো?"


অয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে এক মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এলো। মেয়েটা বলছে, "অয়ন তোর জন্য স্যুপ এনেছি, খেয়ে নে। আমি একটু প..."


এদিকে আমি চোখ তুলে তাকাতেই ভিডিও কলে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি অয়ন ভড়কে উঠে চোখের ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলছেন। হয়তো সে ভুলে গিয়েছিল আমরা ভিডিও কলে আছি। তবে কন্ঠের মালিককে আমি স্পষ্ট চিনি, তিনি নীলিমা দি। অয়নের কোন এককালের প্রাক্তন। দুইজনই সমবয়সী, এক-দুই বছরের ডিফারেন্স। ওরা কলেজে থাকাকালীন নীলিমাদির সাথে প্রেমে পড়েছিল তবে সম্পর্কের মেয়াদ ছিল মাত্র দু'মাস। বোঝাপড়ায় সমস্যায় থাকায় তারা বেশি দূর এগোনোর সাহস পায়নি। সম্পর্ক শেষে তাদের সম্পর্ক পুনরায় বাকি আট-দশটা বন্ধুদের মতোই হয়ে যায়। অয়ন নিজেই জানিয়েছিল আমাকে ওদের বিষয়টা। কিন্তু আজ দু'জন একা এক বাড়িতে আছে দেখে অজানা ভয়ে গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠলো। রাগ অভিমান গুলো ছুঁয়ে উঠলো আকাশ সমান। যতই তারা বলুক তারা শুধুই বন্ধু এখন, কিন্তু কোন এককালে তো তাদের মাঝে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। যদিও নীলিমা দির বিয়ে ঠিক হয়েছে তবুও সে যে অয়নের এক্স এই কথাটার কি পরিবর্তন করা সম্ভব? তাহলে তার পাশে এসময়ে তাকে সহ্য করি কী করে? রাগে মন-মাথা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। তার উপর অয়নের এই লুকোচুরি খেলা, কথা লুকানো, রুক্ষ ব্যবহার। সবকিছুতেই বিরক্তি লাগছিল। আমি ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটিয়ে তুলে বলি, "কে? নীলিমা দি না?"


আমার গলা শুনে অয়ন চোরা চোখে আমার দিকে তাকাল। নীলিমা দি চমকালো কী না জানা নেই, কারণ তার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়নি। নীলিমাদি পাশ থেকে হয়তো অয়নকে বলল ফোনটা দিতে, অয়ন ফোনটা দিতে চাইল না বোধহয়, হাবেভাবে তাই বুঝলাম। কিন্তু নীলিমাদি একপ্রকার জোর করেই ফোনটা নিল। মুহূর্তেই আমার স্ক্রিনে নীলিমা দির মুখশ্রীটা ভেসে ওঠে। সে বলল, "কেমন আছো বিতস্তা?"


আমি নিজের অনুভূতি চাপা দিয়ে হাসি মুখেই বললাম, "ভালোই আছি, তুমি?"


"খুব যে ভালো আছি তা বলতে পারছি না। সকালেই এক্সিডেন্ট করেছি, বা হাতের অবস্থা ততটা ভালো না। অনেক খানি ছুলে গিয়েছে।"


নীলিমাদি হয়তো কথাগুলো সরল মনেই বলছিল তবে আমার কানে তীরের মত লাগে কথাটা। কৌতূহল হয়েই জিজ্ঞেস করি, "তোমরা দু'জনে কী একসাথে ছিলে?"


দিদি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললেন, "হ্যাঁ! আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছিল বলে আমি অয়নকে বলেছিলাম আমাকে আজ অফিসে নামিয়ে দিতে। যাওয়ার পথেই হঠাৎ একটা অটো সামনে চলে আসায় অয়ন ব্যালেন্স হারায়, আর আমরা মাঝ রাস্তায় পরে যাই। আমার তো মাথায় হেলমেট ছিল বলে এত আঘাত পাইনি, বা হাতটাই ছুলেছে যা। তবে অয়নের কপালে, হাতে আর পায়ে ভালোই চোট পায়। খানিকটা কেটেওছে।"


আমি কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই অয়নের ধমক কানে এলো, "মিলি মোবাইলটা দে আমার, আর তোকে না ভাস্কর নিতে আসবে? আসে নি এখনো নাকি? আসলে যা তো, দূর হ চোখের সামনে থেকে। এসব আদিখ্যেতা আর ভাল্লাগে না আমার।"


নীলিমা দি মুখ কালো করে অয়নের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিতে গিয়ে বলল, "যাচ্ছি তো! সবসময় এমন করিস কেন? বললাম তো সরি।"


কথাটা বলে নীলিমা দি চলে যায়। অয়ন মুখের সামনে ফোনটা ধরতেই আমার ক্রন্দনরত মুখ দেখতে পায়। আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে এবার হয়তো তার রাগ পড়লো। সাথে সাথে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো, "মানা, তুমি ভুল বুঝছো। এমন কিছু.."


আমি তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অভিমানী হয়ে বলি, "যেহেতু তোমাকে দেখাশোনা করার মানুষ আছে সেহেতু আমার আসার প্রয়োজনবোধ করছি না। আর চিন্তা নেই, তোমাকে আমি আর ফোন করে বিরক্ত করবো না, রেস্ট করো। খামোখা একজন গুরুত্বহীন মানুষের ন্যাকামো আর সহ্য করতে হবে না।"


কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিলাম আমি। আঁখিপল্লব জুড়ে নামলো তীব্র বর্ষণের ঘনঘটা। ঝাপসা চোখেই দেখলাম অয়ন নিজের থেকে কল করছে। কিন্তু ততক্ষণে তার সাথে কথা বলার আগ্রহ, সমস্ত স্পৃহাই যে চলে গিয়েছে আমার। ফোনটা টেবিলের পাশে রেখে এক ভাবে তাকিয়ে রইলাম মেঝের দিকে। 



আমাদের দুইজনের ফেসবুকেই পরিচয় এবং সেখান থেকেই প্রেম। টানা তিনবছর প্রণয়ের পরে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি পরিশেষে। ছ'মাস আগেই দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের ঘরোয়াভাবে বিয়ে হয়েছে, ফাইনাল পরীক্ষার পরেই আমায় নিয়ে যাওয়ার কথা। আমাদের সম্পর্ক থাকাকালীন কথা কাটাকাটি, মনমালিন্য হয়েছে অসংখ্যবার। কিন্তু অয়ন কখনো এতটা রুক্ষ, এত রূঢ় আচরণ করেননি আমার সাথে। দোষ আমার হলেও না। আমাকে আঘাত দিয়ে কথা বলার অভ্যাস তার নেই। অথচ সেই অভ্যাস আজ বদলে গেল? ভালোবাসা নাকি রঙ বদলায়, আসলেই যে বদলায়, এটাই তার নমুনা? কিভাবে পারল সে আজ আমায় এভাবে কথা শোনাতে? এক তো নিজের এক্সিডেন্ট কথা লুকোল, মিথ্যে বলল। দ্বিতীয় নীলিমাদিকে নিয়ে একাই বাড়িতে থাকল? এতটা অবনতি? যে মানুষটার ভালোবাসায় সিক্ত থাকা আমার অভ্যাস সে মানুষটার তুচ্ছতাচ্ছিল্য কিভাবে সহ্য করি আমি? 

আমার ভাবনার মাঝেই কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়লো কে জানে? তবে দূরে মন্দিরের মিষ্টি আরতির ধ্বনিতেই হুঁশ ফিরল আমার।



রাত তখন ক'টা বাজে জানা নেই৷ পুরো ঘর আচ্ছাদিত ভয়ঙ্কর আঁধারে৷ আকাশে মেঘ ডাকছে, বৃষ্টি নামবে হয়তো। ঠিক এমন সময় উতপ্ত পেটের কাছে কারো শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব হলো, ধীরে ধীরে বাঁধন শক্ত হলো, কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আমায়। মুহূর্তেই তন্দ্রাভাব কেটে গিয়ে আতঙ্ক ভর করে বুকে। আমি পাশ ফিরে তাকানোর আগেই অতি শীতল অধরযুগলের আলতো ছোঁয়া অনুভব করতে পারি কাঁধের কাছে। ক্ষণেই যেন বিদ্যুৎ খেলে যায় সর্বাঙ্গে। দূর্বল শরীরেই পাশের মানুষটিকে নিজ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তার শক্তির সাথে পেরে উঠতে না পেরে যেই না চেঁচাতে যাবো তখনই ব্যক্তিটি আমার কানে ঠোঁট স্পর্শ করে বলে, "সরি বউ!"


কন্ঠটি কানে যাওয়া মাত্রই শান্ত হয়ে যাই আমি। একধাপেই তাপমাত্রা বেড়ে যায় দু ডিগ্রি। আনমনে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম, "ভুল শুনলাম নাকি? অয়ন কী সত্যি এখানে?" আমার ভাবনার মাঝেই অয়ন আবার বলে উঠল, "কী, কথা বলবে না? আর শরীরে এমন ভয়াবহ জ্বর বাঁধালে কী করে? তোমার তাপে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি তো।"


দ্বিতীয়বারের মত তার আওয়াজ কর্ণগোচর হতেই ঠোঁট দুটো আপন শক্তিতেই আলাদা হয়ে এলো আমার। তার মানে মানুষটা সত্যি এসেছে? সে তার ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়েই কলকাতা টু বহরমপুরের সফর করে ফেলল? কেন করল? আমার জন্য কী? মনটা একটু হালকা হলো তখন। আমি হুট করে জিজ্ঞেস উঠলাম, "তুমি এখানে?"


সে পুনরায় কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল, "তা না হলে আর কে?"


মুহূর্তের মধ্যেই বিকেলের ঘটনা মনে পড়ে যায় আমার। তার বলা প্রত্যেকটা কথা সূঁচের মতো বিঁধে উঠলো শরীরে। রাগ-অভিমানের পাল্লা ভারি হলো। আমি তার বাঁধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করতেই সে আরও নিবিড়ভাবে আমায় জড়িয়ে ধরল, গা থেকে ভেসে এলো তার নিজস্ব গন্ধ। সে ধীর কন্ঠে বলল, "আমার শক্তির সাথে পারবে না তুমি মানা! এমনিতেই শরীর দূর্বল তোমার, ব্যথা লাগবে।"


আমি কন্ঠস্বর খানিকটা উঁচিয়েই বললাম, "কেন এসেছ তুমি? আমার ন্যাকামো দেখতে নাকি আরও কিছু বলার ছিল তোমার? থাকলে বলে বিদায় হোন, আমার মত ন্যাকার সাথে তোমার থাকা শোভা পায় না। তাই যার কাছে ছিলে তার কাছে ফিরে যাও।"


"তখন মাথার ঠিক ছিল না, তাই তোমার সাথে ভুলবশত অমন আচরণ করে ফেলেছি মানা; আ'ম সরি মানা।"


আমি কান্নারত অবস্থায় বলি, "সরি বললেই বুঝি সব ঠিক হয়ে যায়? তুমি আজ আমায় কত আঘাত করেছ তার কোন ধারণা আছে?"


সে অনুতপ্ত কন্ঠেই বলল, "আমি ইচ্ছে করে তোমায় আঘাত করতে চাইনি। আসলে তখনকার পরিস্থিতিটা বলে বোঝাতে পারবো না। আজকে এক্সিডেন্টের জন্য আমার একটা ইমপরট্যান্ট মিটিং মিস হয়ে যায় ফলে কোম্পানিকে কয়েক লাখ টাকার লোকসান ফেস করতে হয়। এর জন্য দুপুর নাগাদ বসের কাছে অকথ্য ভাষায় গালাগালি খেতে হয়, সাথে ওয়ার্নিং দেন, নেক্সট টাইম এমন হলে আমার চাকরিটাই যাবে। এই ঘটনার পর একরকম মন-মেজাজ খারাপই ছিল তার উপর নীলিমা তখন ওষুধপত্র গোছাতে গিয়ে তোমার দেওয়া ঘড়িটাকেও ভেঙে ফেলে। ঘড়িটা আমার কত প্রিয় ছিল সেটা একমাত্র আমিই জানি, দেড় বছর ইউস করেও সামান্য আঁচড় ও পড়তে দিইনি। অথচ ও কিনা ভেঙে ফেললো? মাথা বিগড়নো স্বাভাবিক কী না? আর তারমধ্যে এলো তোমার ফোন, তোমার ঘ্যানঘ্যান করা, বিষন্নতা ভালো লাগছিল না। এতগুলা প্রশ্ন করছিলে যে রাগ উঠে গেছিল আর আগে-পরের সবকিছুর রাগ গিয়ে পড়ে তোমার ওপর। তাই ওভাবে কথা শুনিয়ে ফেলি। কিন্তু পরে বুঝতে পারি যে কত বড় ভুল করে ফেলেছি- আর এর জন্য আমি সত্যি অনুতপ্ত।"


তার কথা শেষ হতেই শব্দ করে কেঁদে উঠি আমি। মান-অভিমান সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে পড়ে ফ্লোরে। অয়ন আমাকে তার বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, "কাঁদে না সোনা। সরি বলছি তো!"


আমি অস্পষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করি, "আমাকে কেন জানালে না আগে এক্সিডেন্টের কথা? লুকালে কেন?"


"টেনশনে ফেলতে চাইনি তোমায়।"


আমি নাক টেনে জিজ্ঞেস করি, "এই শরীর নিয়ে জার্নি কেন করলে? শরীর খারাপ লাগছে না?"


সে হেসে বলে, "এতক্ষণ লাগছিল কিন্তু তোমাকে বুকের মাঝে নেওয়ার পর থেকে আর লাগছে না। আর বউ রুষ্ট হয়ে থাকলে একটু-আধটু কষ্ট করাই যায়।"


"পরবর্তীকালে কখনো নীলিমাদির সাথে একা একই কোন বাড়িতে থাকলে একদম খুন করে ফেলবো তোমায়।"


"এইরকম দুঃসাহস আর এই বান্দা দেখাচ্ছে না গো। পরবর্তীকালে একা থাকতে হলে বউ নিয়ে থাকবো।"


হটাৎ করে একটা প্রশ্ন মাথায় আসতেই জিজ্ঞেস করলাম, "গেট কে খুলে দিল?"


অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে বলল, "শ্বশুরমশাই! বুঝলে বাবা ভয়ঙ্কর রকমের অভিজ্ঞ একজন মানুষ৷ আমাকে দেখেই চট করে জিজ্ঞেস করে বসলেন, তার মেয়ের সাথে ঝগড়া করেছি কি-না? মানে বুঝতে পারছো একটা মানুষের কতটা এক্সপিরিয়েন্স হলে জামাইয়ের মুখ দেখেই বলে দেয় সমস্যাটা কি?"


আমি তার পেটে আস্তে করে গুঁতো মেরে বলি, "চুপ! শ্বশুর হয় তোমার। আর এত রাতে আসলে যে কেউ বুঝবে গল্পটা কি, হুঁ!"


অয়ন আকস্মিক ভাবে আমার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল, "তা ম্যাডাম, জ্বর কমাতে একটু সাহায্য করবো নাকি?"


গলায় তখন তার বদমাইশি। আমি তার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে বলি, "খবরদার!"


কিন্তু একরোখা মানুষটা কি আর আমার কথার ধার ধারে? অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরজুড়ে ঘুরতে থাকে আমার অনুভূতিগুলো, যেন কারুর নজর না লাগে। লাগলেই বা কী, আমি আছি আর অয়ন আছে আমার সুখানুভূতির সাথে কিছুক্ষণ!..


[সমাপ্ত]



॥ সুখানুভূতির সাথে কিছুক্ষণ ॥


©চাটুজ্জে মশাই~


[অনেকদিন পর আবার কিছু লিখলাম। জানি না কেমন হয়েছে, যদিও ছন্নছাড়া লাগছে। এখন পাঠকরাই বলবে কেমন হয়েছে? সকলের দুষ্টু-মিষ্টি, ভালোবাসাময় ছোট-বড় মন্তব্যগুলা ভীষণভাবে মিস করছি। 

তা আজ সবাই একটু কষ্ট করে মন্তব্য করবেন কেমন? আবদার আমার। ভালোবাসা রইলো, নমস্কার 🙏🏼❤️]

Sunday 2 October 2022

গান্ধী, জাতির জনক নাকি...?

"গান্ধী জাতির জনক নাকি ভন্ড" 


                                    - উষস চট্টোপাধ্যায়!



গান্ধীজি, জাতির জনক! অর্থাৎ আমরা মানি আর না মানি, জন্মানোর পরপরই যবে থেকে গান্ধীজির কর্ম, নাম এবং কীর্তি র সাথে অবগত হই, তখনই নিজেদের বে.জ.ন্মা গালাগাল দিয়ে থাকি। হয়তো আমার এই কথার অনেক ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া হতে চলেছে, তবু একটু সময় দিলে, নিজের বিচারবুদ্ধি কে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। কিভাবে একটা দেশ শুধু একজনের ই বিচারবুদ্ধির সেবক হলো, আইডিয়োলজির শিকার হলো। না হলে আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ী, অবিভক্ত বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ, চিত্র পরিচালক তপন সিংহ, বা ফুটবলে উন্মাদনা প্রিয় বাঙালির সুভাষ ভৌমিকের ও আজ জন্মদিন। কারোর জন্মদিন নিয়ে এরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিনা, এমনই তাঁর মাহাত্ম্য! 


স্কুলে যাওয়ার সময় থেকেই শুনে আসছি যে মহাত্মা গান্ধী একজন ব্যারিস্টার ছিলেন। তখন থেকেই ভাবতাম যে উনি নিশ্চয়ই অনেক শিক্ষিত, অনেক জ্ঞানী। পরে জানতে পারলাম যে গান্ধীজি তাঁর সারাজীবনে একটিই মাত্র শিক্ষাগত সার্টিফিকেট অর্জন করতে পেরেছিলেন, তা হল ম্যাট্রিক পাসের সার্টিফিকেট। ১৮৮৭ সালে গান্ধীজি টেনেটুনে কোনমতে থার্ড ডিভিশনে ম্যাট্রিক পাশ করেন! তখনকার দিনে ব্যারিস্টার হতে হলে কোন পরীক্ষাই দিতে হতো না, কিছুদিন কোন বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ ব্যারিস্টারের সহকারী হিসেবে কাজ করলেই ব্যারিস্টার হিসেবে বার এসোসিয়েশনের সদস্য হওয়া যেতো। কিন্তু এই সহকারী হওয়ার জন্যও গান্ধীজির ভারতীয় সার্টিফিকেট এবং তার ফলাফল গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। এ জন্য গান্ধীজিকে আবার লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসতে হয়। প্রথম বার সেই পরীক্ষায় ফেল করার পর গান্ধীজি দ্বিতীয় বারে কোনমতে পরীক্ষায় পাশ করতে সক্ষম হন এবং একজন ব্যারিস্টারের সহকারী হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করেন। তখনকার যুগের অনেক মানুষেরই প্রথাগত শিক্ষা খুব বেশি থাকতো না, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তাঁরা ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু গান্ধীজির আচরণে এটা স্পষ্ট হয় যে তাঁর মধ্যে সেই স্বশিক্ষা ছিল না।


গান্ধীজির এক গালে চড় মারার থিওরি নিয়ে নানা মানুষ মত দিয়েছেন কিন্তু তিনি নাকি এইটা বলতেন, “একজন সত্যাগ্রহী সব সময় আক্রমণকারীর দ্বারা নিহত হবার কামনা করবে, কিন্তু কাউকে হত্যা করার কামনা করবে না।" ভাবতে পারা যায়? 


যেখানে পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্রতম প্রাণীও আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে টিকে থাকার চেষ্টা করে, সেখানে গান্ধীজির এই নীতির অসারতা সহজেই অনুমেয়।


বসন্তের টিকা দেওয়াকে গান্ধীজি পাপ বলে মনে করতেন। এর মূল কারণ হল গান্ধীজি ছিলেন পাশ্চাত্য চিকিৎসা পদ্ধতির বিরোধী। তিনি ইঞ্জেকশন দেওয়াকে ও অপারেশন করাকে হিংসা বলে মনে করতেন। ১৯৪৬ সালে গান্ধীজির স্ত্রী কস্তুরবাইয়ের ম্যালেরিয়া জ্বর হয়। ডাক্তার তাঁকে পেনিসিলিন ইনজেকশন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই জন্য বৃটিশ সরকার তাঁর জন্য লণ্ডন থেকে পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন নিয়ে আসে, কিন্তু গান্ধীজী হিংসার নাম করে সেই ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে বাধা দিলেন। এর ফলে গান্ধীজির স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। অথচ ১৯২২ সালে যখন কারাবাসের সময় গান্ধীজির খুব আমাশা হয় এবং ডাক্তার তাঁকে নিয়মিত ইঞ্জেকশন নিতে বলেন, তখন তিনি তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর গান্ধীজির এ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়, গান্ধীজি তখন অপারেশন ও করান।


নেতাজি বলেছিলেন, “বৃটিশের নির্দেশে গান্ধীজি যখনই কোন আন্দোলন তুলে নিতেন, তখনই তিনি নিজের শয়তানীকে চাপা দেওয়ার জন্য বা দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য অনশন শুরু করতেন।” গান্ধীজির সকল প্রকার অনশন ও কারাবাস ছিল বৃটিশদের পরিকল্পনার অংশ।


ড. আম্বেদকরের মতে, “গান্ধীজি ছিলেন শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন একবার গান্ধীজি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলামের মধ্যে তুলনা করে একটি বক্তৃতা দেন, সেই বক্তব্যে একটি বিশেষ জাতি ক্ষুব্ধ হয় এবং ১৯০৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কয়েকজন 'শান্তিপ্রিয়' মানুষ তাঁর ওপর হামলা করে এবং তাঁকে প্রচণ্ড প্রহার করে। এরপর থেকেই গান্ধীজি সেই বিশেষ জাতির সর্বপ্রকার সমালোচনা করা বন্ধ করে দিলেন এবং তারপর থেকেই তিনি তাদের অত্যন্ত গর্হিত অপরাধকেও অপরাধ বলে মনে করতেন না।


মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। ১৯২২ সালে যখন তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে পুনের জেলে ছিলেন তখন তাঁর জন্য জেলের মধ্যে দুটি ঘর বরাদ্দ করেছিল চিরশত্রু ইংরেজ। একটি ঘর শোয়ার জন্য, আরেকটি চরকা চালানো ইত্যাদি কাজকর্মের জন্য। 


তাঁর রোজকার খাদ্য তালিকায় ছিল: ২৫০ গ্রাম আটার রুটি, মাখন, সওয়া এক কিলোগ্রাম ছাগলের দুধ, চারটে কমলা লেবু, দুটো পাতি লেবু, ৫০ গ্রাম কিসমিস, খাবার সোডা ইত্যাদি। 


এসব জেনেও প্রাণ কাঁদে! কি কষ্টেই না থাকতেন তিনি! আর চরকা চালিয়েই তো আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে… তাই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া জাতির জনককে শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর আরেক দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা আপামর জনসাধারণের মন থেকে মুছে দিতে চলেছি। তিনিও নাকি মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে এক বিরাট কোনো গোপন তথ্য জেনেছেন বলে তাঁর স্ত্রী কে জানিয়েছিলেন রাশিয়া থেকে। সেই গোপন তথ্য যে কী, তা তাঁর রহস্যময় মৃত্যুর সাথে ই চিরতরে হারিয়ে গেছে।


শহীদ ভগত সিংকে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানোর সময় “অহিংসা পরম ধর্ম”- এই কথার প্রবর্তক এবং প্রচারক মহান অহিংসাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “বৃটেনের বিনাশের বদলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা চাই না”। তিনি আরও বলেছিলেন, “ভগত সিং-এর বন্দনার ফলে দেশের সমূহ ক্ষতিসাধন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ফাঁসী শীঘ্র কার্য্যকর করা হোক। আর যাতে ৩০শে মার্চ, করাচীতে কংগ্রেসের অধিবেশনে কোনপ্রকার বাধাবিপত্তি না আসে, তার ও ব্যবস্থা করা হোক” অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর কথা অনুসারে তিনি কাউকে ফাঁসী দেওয়াকে হিংসা বলে গণ্য করতেন না। হিপোক্রিট কত ধরনের হতে পারে..


শহীদ উধম সিং যখন ইংল্যণ্ডে জেনারেল ডায়ার'কে হত্যা না করতে পেরে সেই বিচার দেওয়ার আরেক ম্যাজিসেট্রট ডায়ার কে হত্যা করেন, তখন মহাত্মা গান্ধী তাঁকে পাগল আখ্যা দেন। তাই প্রসিদ্ধ লেখক শ্রীযুক্ত নীরদ চৌধুরী লিখেছেন, “গান্ধী পৃথিবীর সবথেকে সফল ভণ্ড.."


আরও একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রীযুক্ত যতীন দাসকে যখন ইংরেজরা আগ্রায় মৃত্যুদণ্ড দেয়, তখন মহাত্মা গান্ধী আগ্রাতে ছিলেন। যখন মহাত্মা গান্ধীকে ওনার পার্থিব শরীরে মালা দিতে বলা হয় তখন উনি স্পষ্টতঃ অনীহা প্রকাশ করেন। অর্থাৎ মহান শহীদ যতীন দাসের দেশের জন্য এই আত্মবলিদান মহাত্মা গান্ধীর বিন্দুমাত্র সহানুভূতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয় নি। অথচ কংগ্রেস এবং মহাত্মা গান্ধী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজদের সমর্থন করেছিলেন। যতটুকু জানি যুদ্ধক্ষেত্রে কোন সৈনিক অপর পক্ষের সৈনিককে ভালোবেসে মিষ্টি উপহার দিতে আসে না, সেখানে হিংসারই প্রতিফলন ঘটে। আশ্চর্য্য অহিংসাবাদী নেতা ছিলেন আমাদের মহাত্মা গান্ধী! তাই না?


যখন ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস অধ্যক্ষ পদের নির্বাচনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং মহাত্মা গান্ধীর মনোনীত প্রার্থী ডঃ পট্টভী সীতারামাইয়া-এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হয় তখন মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ডঃ পট্টভী সীতারামাইয়া নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন। বলাবাহুল্য, নেতাজি বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়ী হন (অবশ্য পরে মহাত্মা গান্ধীর সম্মান রক্ষার্থে তিনি পদত্যাগ করেন)। যদিও আমরা দেখতে পাই যে মহাত্মা গান্ধী আমৃত্যু সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।


তদ্রূপ মহাত্মা গান্ধীর আরও একটি উক্তি ছিল যে, “পাকিস্তান যদি সৃষ্টি হয় তবে সেটা আমার মৃতদেহের উপরে হবে।” যদিও পাকিস্তান তাঁর সামনে সৃষ্টি ও হয়ে গেল আর এখন ও আমাদের পেছনে কাঠি করে চলেছে। এর পরেও কী মনে হয় না, যে এতে তাঁরও (মহাত্মা গান্ধীর) পূর্ণ সমর্থন ছিল। কি অসাধারণ সত্যবাদী ছিলেন আমাদের মহাত্মা গান্ধী তা পাঠকদের বিবেচনা ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।


মহাত্মা গান্ধী তাঁর জীবনে তিনটি আন্দোলন এর সূচনা করেন এবং নেতৃত্ব দেন। আশ্চর্য্যের বিষয় যে সেই তিনটি আন্দোলনই তিনি মাঝপথে থামিয়ে দেন। তা সত্ত্বেও ভারতবর্ষে প্রচার করা হয় যে চরকা কেটে মহাত্মা গান্ধী ভারতবর্ষ স্বাধীন করেছিলেন। কি হাস্যকর কথা! 


ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সম্পর্কে ইতিহাসবিদ আর সি মজুমদার লিখেছেন, “ভারতের স্বাধীনতার জয়মাল্য গান্ধীর গলায় পরানো সত্যের সাথে মজা (মস্করা) করার সামিল হবে। এই কথা বলা যে সত্যাগ্রহ এবং চরকা দিয়ে উনি স্বাধীনতা এনেছেন এটা চরম মূর্খতা হবে। সেইজন্য গান্ধীকে স্বাধীনতার ‘নায়ক’ বলা সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা হবে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের রক্ত বইয়েছিলেন।” 


ঋষি অরবিন্দ বলেছিলেন- “ভারতবর্ষ সেদিনই প্রকৃত স্বাধীন হবে, যেদিন দেশবাসী গান্ধীবাদের আদর্শকে যতখানি সম্ভব ঝেড়ে ফেলতে পারবে। ....."


ক্লেমেন্ট রিচার্ড অ্যাটলী যিনি ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা সিদ্ধান্তের কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি ১৯৫৬ সালে একবার ভারত সফরে এসে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল জাস্টিস পি বি চক্রবর্তীর গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়েছিলেন। পি বি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি ক্লেমেন্ট অ্যাটলীকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কী কারণে আপনারা এত দ্রুত ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?’ তিনি আমাকে বলেন, ‘নেতাজির সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মধ্যে ব্রিটিশ রাজের প্রতি বিদ্রোহ দানা বাঁধছিল। তারা আর অনুগত থাকছিল না।’


পি বি চক্রবর্তী জানান, "আমি আরও জানতে চাইলাম, ভারত ছাড়ার পেছনে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের ভূমিকা কতটুকু ছিলো?’ অ্যাটলী তখন ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি টেনে বললেন, মি-নি-ম্যা-ল অর্থাৎ (সামান্যই)।"


যারা নেতাজীর ভয়ে দেশ ছেড়ে পালালো তারা নিজেরাই স্বীকার করছে তারা নেতাজী সুভাষের কর্মকাণ্ডের ভয়ে পালিয়েছে, আর আমরা ৭৫টা বছর ধরে গান্ধীজীর দর্শন নিয়ে মাথা কুটে মরছি। 


এতো কিছুর পরেও একটা জিনিসের কথা আমার অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, গান্ধী ভারতবর্ষের প্রথম সাধারণ ও সার্বিক নেতা, যে দেশবাসীর নাড়ির খবর রেখেছিল। এই পরিমান ব্যাপ্তি, যে দেশে দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার সকলের কাছের এবং নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল, তার কিছু পরিমাণ ক্যারিশমা তো ছিলই, তাই না? 


আমি গান্ধীর জন্মদিনে এই আলোচনা সবার সামনে রাখলাম, আশা করি লোকজনের চোখ একটু বেশিই উন্মুক্ত হবে, লোকজনের বিচার করার ক্ষমতা একটু বাড়বে, জয় হিন্দ!

        


*তথ্যসূত্র:-


১). "আম্বেদকর বনাম গান্ধী”, 

২). "গান্ধীজির অপকর্ম”, 

৩). “আমি সুভাষ বলছি”, 

৪). ”সুভাষ ঘরে ফেরে নাই”, 

৫). গান্ধীর আত্মজীবনী “My Experiment with truth”, 

৬). “হস্তান্তর”– শ্রীশঙ্কর ঘোষ, 

৭). নীরদ চৌধুরী ও ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার গ্রন্থ। 

Sunday 13 February 2022

মোহর ভালোবাসার!


#মোহর_ভালোবাসার

[ভালোবাসা উপলক্ষে একটি ছোট্ট পরিবেশনা। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।]
...................................................

ছেলেটা অপরাধীর মতো মেয়েটার পাশে দাড়িয়ে আছে। আর মেয়েটা জেরা করে যাচ্ছে অনবরত।

: কি? আমাকে ভালোবাসো?
- হুম।
: খুব বেশী?
- হুম।
: প্রেম করতে চাও?
- হুম।
: আমি কিন্তু ডেঞ্জারাস টাইপের মেয়ে। দুদিন পর প্রেম করার শখ মিটে যাবে নাতো?
- না।
: আমার সাথে প্রেম করতে হলে অনেক শর্ত মেনে চলতে হবে। পারবে?
- পারবো।
: শর্ত না শুনেই পারবে?
- হুম।
: তবুও বলে দিচ্ছি, যখন তখন দেখা করতে চাইবে না!
- আচ্ছা।
: রিকসায় উঠলে আমার চেয়ে চার আঙ্গুল দূরে বসবে, অযথা রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা বলে রিকসার হুড উঠানোর চেষ্টা করবে না।
- আচ্ছা।
: রাস্তা পারাপারের সময়, রিকসায় ওঠা ইত্যাদি নানান অজুহাতে হাত ধরতে চাইবে না। এতোদিন একাই চলেছি। এসব আমি ভালোই পারি। আমার কেয়ার আমি নিজেই করতে পারি।
- আচ্ছা।
: আর সব শেষের কথা, আমার সাথে প্রেম করবে সে ভালো কথা কিন্তু আলগা পিরিত দেখাবে না। এসব আমার সহ্য হয়না। 'আলগা পিরিত' কি বোঝ তো?
- হুম বুঝি। আচ্ছা দেখাবো না। মাত্র এই ক'টা শর্ত!?
: আপাতত এই ক'টাই, পরে লাগলে আরও দেবো।

ছেলেটা মনে মনে ভাবছে, এই মেয়ে তো দেখি খাঁটি  দজ্জাল! দজ্জাল মেয়েদের সাথে প্রেম করার উপায়টা শিখে নিতে হবে। ছেলেটা আর কোন কথা না বাড়িয়ে সকল শর্তে রাজি হয়ে গেলো।

বেশ কিছুদিন পর, এই জুটি রিকসায় করে কোথাও যাচ্ছে। মেয়েটা ছেলেটার হাত আকড়ে হঠাৎ বলে উঠলো,
: এই তুমি কি সত্যিই ছেলে?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? কোন সন্দেহ আছে?
: সন্দেহ নেই, কিন্তু ছেলেরা তো অনেক কেয়ারিং হয়। তুমি মোটেও কেয়ারিং না।
- তোমার আবার কোন কেয়ারের অভাব পড়ল?
: দেখছো না কত ঠান্ডা? হুডটা উঠিয়ে দিলেই তো পারো।
- তুমি তো আমাকে হুড ওঠাতে বারন করেছিলে তো! শর্তের কথা মনে নেই?
: মনে আছে। কিন্তু সব কথা কি শুনতে হবে? কিছু কিছু শর্ত তো না শুনলেও পারো।
ছেলেটি রিকসার হুড ওঠাতে ওঠাতে বললো, "শর্ত ভাঙ্গলে তুমি কি আমাকে আস্তো রাখতে? ঝগড়া করে করে আমাকে শেষ করে দিতে না!"
: সব কথা শুনলেও তো ঝগড়া করি। এইযে, এখন যেমন করছি।
- এতো দেখি উভয় সঙ্কট! কথা শুনলেও ঝামেলা; না শুনলেও ঝামেলা।
: আচ্ছা, এখন থেকে সব কথা শুনতে হবে না। কিছু কিছু কথা না শুনলেও হবে। এখন টিস্যু পেপার দাও তো!
- টিস্যু দিয়ে কি করবে?
: লিপস্টিক মুছবো।
- কেন? কী দরকার? সুন্দর লাগছে তো।
: তাহলে কিন্তু তোমার গালে লাল লিপস্টিক লেগে যাবে।

ছেলেটা এই দজ্জাল মেয়েটাকে আর কিচ্ছু বলার সাহস পেলো না। তবে জীবনে এই প্রথম বার মেয়েটার সাথে 'আলগা পিরিত' দেখাল। টিস্যু বের করে নিজ হাতে ঠোঁটের লাল লিপস্টিক মুছে দিলো। সাদা টিস্যু পেপারে মেয়েটার টকটকে লাল ঠোঁটের ছাপ বসে যাচ্ছে। এই টিস্যু পেপারটা ফেলে দেওয়া যাবে না, যত্ন করে বুক পকেটে রেখে দিতে হবে।
...................................................
[একটা ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাস এরকমই ছিলো। তবে স্ট্যাটাসের প্রথম অংশটুকু তার নিজের জীবনের সাথে মিল থাকলেও পরের অংশটুকু শুধুই কল্পনা।]

কোনো এক ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেই ছেলেটি তার জুটিসহ রিকসায় করে ঘুরছিল। মেয়েটি হঠাৎ বলল,
: তুমি ওরকম স্ট্যাটাস যে দিলে, সবাই তো মনে করবে এটা আমাদের ঘটনা!
- প্রথম অংশটুকু তো আমাদের ঘটনাই।
: কী! তার মানে তুমি আমাকে দজ্জাল বলেছ?
- তুমি তো দজ্জালই। সমস্যা নেই, দজ্জাল মেয়েই আমার পছন্দ। আর কেউ কি জানে যে তোমাকে কল্পনা করে লিখেছি?
: জানুক আর না জানুক লিখেছ তো। তুমি এক্ষুনি এই স্ট্যাটাস ডিলিট করবে।
- আচ্ছা, আচ্ছা। করছি।
: থাক, হয়েছে। ডিলিট করতে হবে না। সবাই যা বোঝার বুঝে গেছে। আচ্ছা, সত্যিই তুমি কি টাইপের ছেলে গো? আমি বলা মাত্রই তুমি ডিলিট করতে গেলে কেন? আমার সব কথাই কি তোমার শুনতে হবে? মাঝেমাঝে কোন কথা না শুনে ঝগড়া করতে পারো না?
- কি ব্যাপার? আমার গল্পটা কি মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে নাকি?
: কেন? নায়িকা হিসেবে কি আমি পারফেক্ট না?
- পারফেক্ট, কিন্তু আমার কাছে কিন্তু টিস্যু পেপার নেই তো!
: জানতাম তোমার কাছে থাকবে না, সমস্যা নেই। আমার অনেকদিনের শখ তোমার গালে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দিই। সবাই আমার সীলমোহরযুক্ত তোমাকে দেখবে আর হাসবে। কোন মেয়ে আর কখনো তোমার দিকে তাকাবে না। সবাই জানবে এই সীলমারা পাগল ছেলেটা শুধুই আমার।

অতঃপর ছেলেটি নিজের লেখা গল্পে, নিজেই নায়ক হয়ে গেলো।

(মোহর ভালোবাসার)

#প্রেম #শুধু_তোমার_জন্য #প্রাপ্তমনস্কদের_জন্য

©উshaস চttopaধ্যায়~
< তাং- ১৩|০২|২০২২ খ্রিস্টাব্দ >
৷ব্যারাকপুর | কলকাতা৷

*-*-*

ভালো লাগলে কমেন্ট ও ফিডব্যাক এর মাধ্যমে উৎসাহ দেবেন, পাশে থাকবেন!😊🙏🏼 

Sunday 9 January 2022

Money, is it all bad?


Hey there!
We have been taught some negative things about money 💰 that must be unlearned..

Here are some negative phrases that put us into the wrong frame of thinking:

“They must have stepped on someone to get to the top”

“Money is the root of all evil”

“Money is not everything”

“Only the cunning get all the money”

“I must fall in this category in order to make a lot of money”

“They were lucky or inherited it from someone”

“Only the greedy get all the money”

The list goes on and on…

Here is what I want you to know. People with big hearts can have big money. You must decide how much of it you want and “why”.

Money is a channel in which we can express ourselves more, see the world, share with our loved ones and do things for our communities and planet 🌎 that lights up our soul.

Money is only energy. ✨ It’s why we call it currency 👍 Your energy will always determine how much of it you earn. If you choose to argue this and make an excuse for an outside force that keeps you from doing that; well that is the kind of energy you don’t want to place upon it.

Money like anything takes time and clarity. See it not as only a means to survive but as a means in which to channel more of your ideas and visions to reach others to spread more of your amazing force throughout your communities and planet.

Money is for everyone. There is plenty of it in abundance. You can have a big 🧡 heart and make some big money 💰 There is nothing wrong with having both! The world needs more who have both.

It starts with your feelings about your worthiness.

#sundaymotivation #MindsetMatters #changeyourthought #SuccessMindset #ChinUpFiGHTERs #money