Thursday, 2 December 2021

রুজভেল্ট কে অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ!


১৯৩৩-এ অর্থনৈতিক অবস্থা! (রুজভেল্ট-কে সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ)


#৮ম_এপিসোড #৮ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৮ম_ভাগ


[৮ম এবং এই সিজনের অন্তিম পর্ব ***]


রুজভেল্টের মুখোমুখি হওয়া সমস্যার একটি অংশ ছিল যে ১৯৩৩ সালে কোন সুস্পষ্ট চুক্তি ছিল না, প্রকৃতপক্ষে কি কারণে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল কোন স্পষ্ট চুক্তি দ্বারা এটা বলা ছিল না যে কেন এটা এতটা খারাপ হয়ে গেছে অর্থনীতি, তাই রুজভেল্টের নতুন চুক্তি, বিভিন্ন উদ্যোগের একটি নীতি শুরু করেন। এমতাবস্থায় রুজভেল্ট ঘোষণা করেছিলেন, "আমাদের অবজেক্টিভস-এর মধ্যে আমি নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখি, এবং তা সমগ্র দেশের পুরুষ, নারী ও শিশুদের সর্বপ্রথম।" ৮ই এপ্রিল রুজভেল্ট তার অ্যাডভাইজারদের একথা জানান,  এবং এতে তারা যে খুব একটা খুশি ছিলেন, তা কিন্তু নয়। সবাই যে ক্ষেঁপে উঠেছিল তা না হলেও, সার্বিক মতামত ভালো ছিলনা। তার মধ্যে রয়েছে আরো একটি ব্যাপার, কার্যকরভাবে সোনার থেকে ডলারকে মুক্ত করা, মুদ্রার যথেষ্ট অবমূল্যায়ন করে সমগ্র আর্থিক বিশ্বের বিস্ময় ডেকে আনা।

অতিরিক্ত টাকা মুদ্রণ, মি. রুজভেল্ট মুদ্রাস্ফীতিকে অবলম্বন করেছিল যা আর আগের মতো ভয়ঙ্কর কার্যকরী কখনোই নয়। স্টক এক্সচেঞ্জের ডাউ, রকেটের মতো ওপরের দিকে উঠে গেল। সেই সময় নতুন যন্ত্রপাতির জন্য ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সামগ্রিক শিল্প উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাতীয় শিল্প পুনরুদ্ধারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়ে সে বছর। অনেকেই বলে যে এইসব ১৯৩৩ সালের আইনের অংশ ছিল কিন্তু পুনরুদ্ধারের গল্পের পুরোটা মোটেই এটা নয়, মানে বললে কম বলা হবে। এটি ১২২,০০০ পাবলিক বিল্ডিং, এক মিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা, ৭৭,০০০টি ব্রিজ বা সেতু এবং ২৮৫টি বিমানবন্দর ছাড়াও আরও অনেক কিছুর মধ্যে অর্থ নিবেশ করেছিল।

প্রায় ৪৫০,০০০ আমেরিকান, রাষ্ট্রীয় অফিসে তার প্রথম সপ্তাহে তাদের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছিলেন এবং প্রতিদিন চার থেকে সাত হাজার আইটেমের মধ্যে মেল বা চিঠি আসতে থাকে। হুভারের প্রেসিডেন্সির সময় যেখানে একজন ব্যক্তি হোয়াইট হাউসের মেল রুমে কাজ করত, সেখানে এফ. ডি. আর.-এর জন্য কর্মীদের সংখ্যা ৭০-এ উন্নীত করা হয়।

বেশিরভাগ আমেরিকানরা তাদের রাষ্ট্রপতিকে আগে কখনও কথা বলতে শোনেনি, তাই তারা বিশ্বাস করেছিল যে, তিনি তাদের ভালো করতে চান। এবং যখন তার নীতি ব্যর্থ হয়, তখন তারা এই রূপ বলাবলি শুরু করে যে, আমাদের প্রেসিডেন্টকে ব্যাঙ্কার, কর্পোরেট হেডরা হারিয়ে দিচ্ছে, ওদের দ্বারা ব্যর্থ হচ্ছে ওনার তৈরী করা কর্মসূচী। আমাদের নিজের হাতে কিছু জিনিস তুলে নিতে হবে, নিজেরাই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি কারণ আমরা জানি এই যে রাষ্ট্রপতি আমাদের এগুলি করা দেখতে চান।
১৬ই জুন কংগ্রেসের জরুরি অধিবেশন শেষ হওয়ার সময়, রাষ্ট্রপতি যে অধিবেশনের আহ্বান করেছিলেন
শপথ নেওয়ার সময় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, এফ.ডি.আর. আইনে ১৫টি বিলে স্বাক্ষর করে লাগু করেছিল, আর এতেই একশো দিন পার হয়ে গেছিল!

নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন-এর মতে যে জিনিস টা পরিচালিত করেছিল সংস্কারক প্যাকেজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, যদিও কখনো এর আগে এত ব্যাপকভাবে আমেরিকান কংগ্রেসে আইন প্রবর্তন করা হয়নি, এটি ছিল কৃষি ও খামার বিল! এটি কৃষি খাতে কয়েক দশক ধরে চলা স্লাইডকে আটক করতে চাওয়া, যেটি ১৯৩৩ সাল নাগাদ প্রতি মাসে আনুমানিক ২০,০০০ হারে খামার বন্ধক রাখা, ব্যাংকগুলি এসব বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে এইসব কিছুর জন্য একটি সহযোগিতামূলক আদেশ আনার চেষ্টা করা হয়েছিল লন্ডনের রয়্যাল বরো অফ কেনসিংটনের একটি জাদুঘরে, পাথর এবং জীবাশ্মের মধ্যে সকলে একত্রিত হয়েছিল।

১৯৩৩ সালে লন্ডনে দ্বিতীয় বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ডিসার্মামেন্ট সম্মেলনের সাথে মিলে যায়। এটিও কমবেশি একই সময়ে, জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হয়। পুরোটা না হলেও আংশিকভাবে, তবে কেন লন্ডনে? কারণ সমস্ত হোটেল জেনেভায় বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর লোকজনে ভর্তি। সম্মেলনে লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী (Ramsey Mcdonald) রামসে ম্যাকডোনাল্ডের বর্ণনা দিয়েছিলেন, "The fate of generations may well depend upon the courage the sincerity width of you which we are to show during the next few weeks. Let the world know, that we can show decision and give leadership অর্থাৎ প্রজন্মের ভাগ্য আপনার আন্তরিকতার ও সাহসের উপর নির্ভর করতে পারে। যা আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখাব। বিশ্বকে জানতে দিন, আমরা সিদ্ধান্ত দেখাতে পারি এবং নেতৃত্ব দিতে পারি।" তারপর এফ.ডি.আর. উদ্যোগটি ভেঙে দেয়, ৩-রা জুলাইয়ের বোমারু বার্তা হিসাবে যার পরিচিতি রয়েছে, তিনি এটি পরিষ্কার করে বলেছেন যে, জাতীয় অর্থনীতি ঠিক করা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ঠিক করার চেয়ে তার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে...


সুতরাং ১৯৩৩ সালের সারমর্ম, বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের ট্র্যাজেডি হল এই যে তিনটি প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তি একটি অর্থনৈতিক নীতি এবং একটি আর্থিক চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল। আমি বলতে চাইছি না যে, আপনারা তর্কে যেতে পারেন যে, তাদের সঠিক ধরণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না কিন্তু সহযোগিতা করার কোন রকম রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল না। এর ফলে হল যে
এরপরে জার্মানি বা ইতালি বা জাপানের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করার পরে যা কিছু হয়েছিল তা অনেক বেশি সমস্যাযুক্ত ছিল। অবশ্যই তাদের অর্থনীতি তার থেকে বিন্দুমাত্র ওপরের দিকে উঠে আসেনি, আরো বিষণ্ণতা ছেয়ে গেছিল, তার থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি যা অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, এক কথায় ১৯৩০-এর সম্পূর্ণ দশকে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল!

১৯৩৩ সালেই হিটলার চ্যান্সেলর হিসাবে তার প্রথম বক্তৃতা রেখেছিলেন, প্রকৃত ইতিহাস সর্বদা একই সময়ে অনেক কিছু ঘটার গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ১৯৩৩ সালে জেনারেল মোলা, যিনি স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পরিণত হওয়া ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তিনি লিখেছেন যে, 'হিটলার নিশ্চিত যে তার লোকেরা অর্থাৎ এন্টি সেমাইট জার্মান-রা আবার নিজেরা উপরের দিকে উঠতে পারবে না যতদিন ইহুদি জাতির লোকেরা তার মধ্যে মিলে মিশে থাকবে। সেজন্য সে তাদের নির্যাতিত করেছে, আর যা করেছে বেশ করেছে।' ১৯৩৩ সালে হিটলার সন্ত্রাসের ব্রাউন বইটি ২৭টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল খুবই সন্তর্পণে এবং যাচাইকরণের সাথে নাৎসি শাসনের রেজিমগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যাতে লোকেরা সেগুলো জানতে পারে। ১৯৩৩ সালে একটি জার্মান ক্যাথলিক সংবাদপত্র হিটলারের চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের বর্ণনা দেয় 'অন্ধকারে চলার মতো', কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আরো গাঢ় অন্ধকারে লাফেতে পরিণত হয়েছিল কিনা তা গোটা পৃথিবী জানে!!!

[১ম সিজন শেষ হল]

©উshaস চttopaধ্যায়~

No comments:

Post a Comment