Sunday, 26 December 2021
ঠুনকো সম্পর্ক!
ঠুনকো সম্পর্ক:-
*************
রানা ছুঁড়ে কাঁচের গ্লাসটা ফেলে ভাঙলো, যাতে ক্রিসমাসের রাতে মদ খাচ্ছিল।
টুকরো টুকরো কাঁচগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রইল মেঝেতে। সেই সাথে রেনুর লাসটাও, রানা ওঠাল না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়নাটায় ফুটে ওঠা প্রতিচ্ছবিটির দিকে। অবসন্ন, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত এক মানুষের প্রতিচ্ছবি যেন। রানা তাকিয়েই রইল। তারপর হঠাৎই পা ফেলে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গেল ভাঙা গ্লাসের কাঁচের টুকরোগুলোর ওপর দিয়ে। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জেগে উঠছে পায়ের তলায়। কাঁচের টুকরোগুলো পায়ের মাংসে গেঁথে গিয়ে তাকিয়ে আছে! কতটা ভীষণ তীক্ষ্ম, কি ভয়ংকর ক্ষুধার্ত!
রানা তাও আরেকবার হেঁটে গেল, তীব্র যন্ত্রণায় তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। সে বিড়বিড় করে বলল, 'আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?'
ঘরে তো আর কেউ নেই, শুধু রেনুর লাসটা। এই প্রশ্ন সে কাউকে করেও নি। স্রেফ স্বগতোক্তি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আয়নার ভেতর থেকে ক্লান্ত, অবসন্ন, বিধ্বস্ত একটা প্রতিমূর্তি কথা বলে উঠল, 'তুমি পাগল হয়ে যাও নি'!
রানার অবাক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সে একটুও অবাক না হয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল, 'তাহলে?'
আয়নার ভেতর থেকে প্রতিমূর্তিটা বলল, 'তাহলে আর কী? তুমি একটা সত্য আবিস্কার করে ফেলেছো'।
রানা বলল, 'কী সত্য?'
সেই রূপটা বলল, 'সম্পর্ক এত ছোট ছোট সন্দেহে টেকে না, মানছি রেনুর মৃত্যু তোমাকে ভাবিত করে তুলেছে কিন্তু ও যেটা দিনের পর দিন করছিল তাও তোমায় ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো, সম্পর্ক ভেঙে গেলে এমন খুনে, আততায়ী হয়ে যায়, লুকিয়ে থাকা চেহারাটা বের হয়।'
রানা বলল, 'কেন?'
রূপটা বলল, 'খানিক আগে যে গ্লাসটায় ঠোঁট ডুবিয়ে মদ খেলে, কি মোলায়েম, মসৃণ আর পেলবতা ছুঁয়ে দিল তোমার ঠোঁট। অথচ এখন দেখ, সেই গ্লাসটাই ভেঙে গিয়ে কতটা তীক্ষ্ণ আর ধারালো হয়ে উঠেছে, পা কেটে রক্ত অবধি বের করে দিল, তাই না?'
রানা জবাব দিল না। প্রতিমূর্তিটা বলল, 'অথচ এই ভয়ংকর টুকরোগুলোই কিন্তু আস্ত গ্লাসটার ভেতর লুকিয়ে ছিল! তখন কি একটুও বুঝতে পেরেছো?'
রানা অবাক গলায় বলল, 'না'।
রূপটা বলল, 'সম্পর্কগুলোও এমন, ভেঙে গেলেই শুধু পুরোপুরি টের পাওয়া যায়, ভেতরে কি লুকিয়ে ছিল, কি ধারালো, কি তীক্ষ্ণ আর ভয়ংকর!'
রানা কোনো কথা বলল না। সে তাকিয়ে রইল রেনুর মৃতদেহ আর কাঁচের টুকরোগুলোর দিকে। ঝাপসা চোখের ভেতর সেগুলো ক্রমশই যেন পুরনো সব স্মৃতি হয়ে ফিরে আসছে। খুব দ্রুত ফিরে আসছে স্মৃতিরা। ফিরে আসছে প্রিয় কিছু মানুষ, তাদের মুখ, ফেলে আসা সময়, কিংবা একান্ত নিজের একার কোন মানুষ হয়ে। তার একান্ত কোন স্মৃতি, স্মৃতিময় সময়, সম্পর্ক কিংবা অনুভব হয়ে!
আহা, সে বলার জন্য উপযুক্ত আর কিছু পেল না!
রানা আবার উঠে দাঁড়াল। উঠে সে পুলিশকে ফোন করে তার ঠিকানা দেয় আর খবর দেয় যা ঘটেছে, তারপর চট করে ঝাঁট দিয়ে মেঝে থেকে কাঁচগুলো সরিয়ে নিল। সে আর একবার কারুর পা কাটতে চায় না, রক্তাক্ত হতে দিতেও চায় না।
সে জানে, কিছু সম্পর্ক, সম্পর্কের স্মৃতিও এই কাঁচের মতনই ঠুনকো, তার থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, যত দ্রুত মুছে ফেলা যায় তত ভালো। না হলে ক্রমাগত এমন করেই কেটে কেটে যেতে হয়, রক্তাক্ত হতে হয়! হয়তো আরও বেশ কয়েকটা বছর...
©উshaস চttopaধ্যায়~
Labels:
Short Story
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment