Thursday, 23 September 2021
১৯৩২ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
সাল ১৯৩২, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
#তৃতীয়_এপিসোড #৩য়_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৩য়_ভাগ
২৬ শে ফেব্রুয়ারি হিটলার (Brunswick) ব্রান্সউইকের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি এবং পরিমাপের অফিসে একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে তার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি ব্যবস্থা, যা তাকে টেকনিক্যালি অস্ট্রিয়ান-জার্মান নাগরিকত্ব দিয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেছিল। ১৯৩২ সালে, ১৩ মিলিয়ন জার্মানরা নাজিদের পক্ষে ভোট দিয়েছিল কিন্তু হিটলারকে ক্ষমতায় আনার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না। তিনি শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় চ্যান্সেলরশিপ অর্জন করতে পারেননি, তাকে সেদেশের মূর্খ নাগরিকদের কিছু ব্যবসায়ীক সদস্যরা, যাদের অহংকার ও নির্বুদ্ধিতা তাদের প্ররোচিত করেছিল, অনেকের কাছে এই 'ভালগারিয়ান'কে একনায়কতন্ত্র বা ডিকটেটরশিপ এর পরিচালনা করতে। বলতে হয় যে, সেই সময় এমন সব পুরানো পরিবারের লোকজন ছিল যারা হিটলারকে ভেবেছিল শুধু একটু লাফিয়ে, লাফিয়ে, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে পারে, তার বেশী কিছু না! ওরা তাকে ততদিন সিরিয়াসলি নেয়নি যতক্ষণ না খুব দেরি হয়ে যায়।
"We engaged him for our own ends/আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনে তাকে নিযুক্ত করেছি", এমন মন্তব্য ছিল (Franz Yosef Hermann Michael Mario Von Pappen) ফ্রাঞ্জ ইয়োসেফ হারমান মাইকেল মারিও ভন পাপ্পেনের। আভিজাত্য এবং সম্পদে জন্মগ্রহণ করা, ভন পাপেনকে চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
বার্লিনে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত অবিশ্বাস্যতার সাথে তার সাথে দেখা করেছিলেন। (Andre Francois)আন্দ্রে ফ্রাঙ্কোয়া একবার বলেছিলেন যে, "Pappen was taken seriously by neither his friends nor his enemies অর্থাৎ পাপেনকে শুধু তার বন্ধুরা কেন শত্রুরাও, মানে কেউই গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।" সেই পাপেনের মতানুযায়ী, "German people desire nothing more than to live in peace in order to turn all the energies which they possess to the great problems which will have to be solved to bring about reconstruction of the world after the war অর্থাৎ, জার্মান জনগণ শান্তিতে বসবাস করা ছাড়া আর কিছুই চায় না যাতে তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে বড় বড় বিষয়গুলি কে মীমাংসার দিকে পরিণত করে যা যুদ্ধের পর বিশ্বের পুনর্গঠন আনার জন্য সমাধান করতে পারে।"
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিন্ডেনবার্গের কাছে হিটলারের চরম পরাজয়ের পর সেই পাপেনই, নতুন নির্বাচন ডেকে এনেছিলেন। মানুষজন সাধারণ নির্বাচনে সমর্থনের দিক দিয়ে নাজির পতন মোটামুটি অব্যাহত ছিল, যদিও তারা আন্দোলনের আবেদনে স্পষ্টভাবে তুঙ্গে তুলে ধরেছিল। "We won't get to an absolute majority this way/আমরা এভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব না', (Goebbels) গোয়েবলস তার ডায়েরিতে একথা স্বীকার করেছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রুশিয়াতেও আবার নির্বাচন হয়েছিল এবং নাজিরা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়, শক্তি নিয়ে প্রচার চালায় এবং প্রথম রাজনৈতিক পটভূমিতে আসে একটি বিমান, ঠিক যেন আকাশ থেকে নেমে আসছেন, কোনো দেবদূত। হিটলার তার দলের প্রতিনিধিত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়, যেটা ১৯২৮ সালে মাত্র ৬ সিট বা আসন পেয়েছিল, সেখান থেকে ১৬২ আসনে উপনীত হয় ১৯৩২ সালে। অন্যান্য রাজ্য যেমন (Bavaria, Wittenberg, Anhult) বাভেরিয়া, উইটেনবার্গ, আনহল্ট এই ধারা অনুসরণ করেছিল। "it's a fantastic victory, এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়", গোয়েবলস বলেছিলেন।
তাদের সাফল্যে হবু নাৎসিদের মধ্যে একজন (Richard J Evans) রিচার্ড জে ইভান্সের বাক্যে প্রকাশ করেছে, "A rainbow coalition of the discontented অর্থাৎ অসন্তুষ্টদের একটি রামধনু জোট রুপে জয়লাভ সাধিত হয়।"
১৯৩২ সালের মধ্যে (SA)এস এ, বা (Sturmabteilung) ব্রাউন শার্ট নামে যারা পরিচিত ছিল, তারা শান্তি বন্দোবস্তের অধীন অনুযায়ী অনুমোদিত ছোট সেনাবাহিনীর এক জনের চেয়ে চার জন, অর্থাৎ আগের থেকে এত বেশি হয়ে গেছিল। (Reichsbanner) রাইক্সব্যানার যা কিনা সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের আধাসামরিক শাখা এবং আধা সামরিক ভেটেরান্স বা প্রবীণ দের সংগঠনে ৩০০,০০০ সেনা, শক্তিশালী (Stalhom) স্টালহোমেরও একই অবস্থা ছিল। ইউনিফর্মের মধ্যে ৪০০,০০০ (Stormtroopers) স্টর্মট্রুপারও ছিল। এখন কল্পনা করা কঠিন যে এই ধরনের 'বেসরকারি সেনাবাহিনী' সহ্য করা ও পালন করা হচ্ছিল যা, এতো পরিপক্ক গণতন্ত্রে প্রশংসা কম হলেও কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।
যা দেখা গিয়েছিল, তা হল গণতান্ত্রিক ভোটে এর প্রভাব! যেমন মানুষজন যারা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছিল, অতীতের গুন্ডাদের যারা শীতলতার সাথে মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা করত, তাদেরকে টপকে কিভাবে তারা ভোট দিয়েছিল, তা মূল্যায়ন করা রীতিমতো কঠিন।
ভয় ইতিমধ্যেই সীমান্তের পারে লোকবল পাঠাচ্ছিল। ১৯০১ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে জার্মানিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে ২৫ জন নোবেল বিজয়ী ছিলেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন মাত্র পাঁচজন।
বেশিরভাগই (national socialism) ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের বা জাতীয় সমাজতন্ত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, এইরকম আটজন রিফিউজি বিজ্ঞানী (Manhattan Project) ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, পরমাণু বোমা তৈরি করতে।
১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে (Geneva) জেনেভায় শান্তি সম্মেলন তৈরিতে ছয় বছর লেগেছিল এবং এটি প্রায় সার্বজনীন ভাবে আশাবাদী ছিল যে এতে শান্তি সুরক্ষিত হবে। সাধারণের কাছে এমনই একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং যতই সময় যায়, ক্রমবর্ধমান ভাবে ভঙ্গুর বলে মনে হচ্ছিল। প্রায় বিশ্বব্যাপী ৬৪টি ভিন্ন দেশের প্রায় সার্বজনীন প্রতিনিধিরা 'জেনেভার কনফারেন্স হলে' এসেছেন বৈঠকের জন্য যা আশা করা যায় বিশ্বব্যাপী অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োগ হ্রাস করাবে। মিটিংয়ে তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে আবেদনে উৎসাহিত হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ স্বাক্ষর নিয়ে গঠিত হয় মহাদেশ হিসাবে, ১৮ মাস ধরে তারা একে অপরের সাথে বিতর্ক করেছিল। আর ঠিক তারপরেই, হিটলার তার প্রতিনিধিদলকে বের করে নেয়, যা পুরো ব্যাপারটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
লক্ষ লক্ষ অনুগত অনুসারীদের নেতৃত্বে তাদের বলিষ্ঠ নেতা, অ্যাডলফ হিটলার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে সরে আসছেন। হিটলার লিগ অফ নেশনস থেকে পদত্যাগ করলে বিশ্বের দূর্বল স্নায়ু ভীত হয়ে পড়ে। অনেক কিছুই আছে যেমন, যদি এটা করা যেত, বা ওটা করলে হয়তো হতো না, কিংবা এটা অমুক জানতেন, বা এটি অবশ্যই বন্ধ করা যেত ইত্যাদি, ইত্যাদি! এখন এইরকম হাজার একটা জিনিস থাকবে! কিন্তু আসল জিনিসটি হল যখন আপনি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গতে শুরু করেন, তখন যদি একজন ব্যক্তি কিছু নিয়ে গায়ের জোয়ারি করে পালিয়ে যায় বা একটি দেশ কিছু নিয়ে পালিয়ে যায় তা অন্যদেরও উৎসাহিত করে। (Aldous Huxley) অ্যালডাস হাক্সলির Chilling Future Vision/চিলিং ফিউচার ভিশন নামে বইয়ের সিরিজ ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি এটিকে Brave New World বা সাহসী নতুন বিশ্ব বলেছিলেন ...
(ক্রমশ)
©উshaস চttopaধ্যায়~
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment