Tuesday 31 August 2021

দশটা সুঁই পাঁচ ট্যাকা!


---দশটা সুঁই পাঁচ ট্যাকা

দশটা সুঁই পাঁচ ট্যাকা, পাঁচ ট্যাকা ....... দূর থেকে একটা জীর্ণ, ক্লান্ত স্বর ধীরে ধীরে উত্তমের কানে স্পষ্ট হতে থাকে, কানে লো ভলিউমে বাজতে থাকা অঞ্জনের "একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে" ছাড়িয়ে তীব্র হতে থাকে কন্ঠের আকুতি। সকাল সকাল নিউ-ব্যারাকপুর রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছে উত্তম। আজ ট্রেন লেট করেছে, অফিসে যেতে দেরি হবে সেই বিরক্তিকে ছাপিয়ে, এমন কন্ঠের প্রতি আকৃষ্ট হওয়াটাও তাকে বিরক্তই করছে বৈকি। আজকাল সাহায্য চাওয়ার ধরন দেখে মানুষ কে বিশ্বাস করা খুব কঠিন। আচ্ছা এই ভদ্রলোক তো সাহায্য চাইছেন না, তিনি তো সুঁচ বিক্রির প্রচার করছেন।

ততক্ষণে উত্তমের মনে পড়লো, সে এখনো ঠিকমতো লোকটিকে দেখেইনি। মাথা ঘুরে তাকাতেই উত্তমের চোখে পড়লো, বৃদ্ধ এক ব্যাক্তি। বয়সের ভারে নুয়ে গেছেন পুরো, ধনুকের মতো বাঁকা শরীরটাকে ধরে রেখেছেন ডান হাতে থাকা একটা লাঠিতে ভর করে। সে লাঠিতে ছোট ছোট শাখার মতো ডাল বাঁধা, তাতে ঝুলছে বিভিন্ন সাইজের কাইতন(সুঁচে সুতো পরানোর মেশিন), তাবিজ, কড়ি, ছোট নেল কাটার সহ বিভিন্ন পণ্য। বাঁ হাতে একটা পকেট নোট বুক টাইপের কিছু একটা, যার মধ্যে কিছু খুচরো পাঁচ/দশ/কুড়ি টাকার নোট আর ছোট ছোট কাগজ ভাজে ভাজে যাতে সুঁচ গেঁথে রাখা। প্রতি কাগজে দশটা করে সুঁচ।

'দশটা সুই পাঁচ ট্যাকা,পাঁচ ট্যাকা......' ভদ্রলোক ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ডাকলে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে পণ্য হাতে তুলে দিয়ে টাকাটা বা হাতের নোট বুকের ভাজে পুরে রাখছেন, আর প্রয়োজনে বাকি টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এ সময়টাতে হাতের লাঠিটাকে ডান হাতের কনুইয়ের ভাজে এক সুনিপুণ কৌশলে আটকে রাখছেন। পৃথিবীতে কেউ খুচরো টাকাকে এমন মমতায় হাতে তুলতে পারে, এই ভদ্রলোককে না দেখলে হয়তো উত্তমের জানাই হতোনা।

এখন উত্তমের অস্থিরতা কেটে গেছে, কেমন শান্ত একটা অনুভুতি কাজ করছে ভেতর ভেতর। কানে বাজছে পল সাইমনের "সাউন্ড অব সাইলেন্স" অরিজিনালটা না, ডিস্টার্বড এর কভারটা। উত্তমের ভীষণ কাছের এই ভার্শানটা, বিশেষ করে ডেভিড ড্রাইম্যানের ব্যারিটোন ভয়েসের সাথে কিবোর্ডিস্ট ভ্যান ডোনেগানের কম্বিনেশনে গানটা মনে হয় অন্য মাত্রা পেয়েছে! আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, এই গানটার কিবোর্ড পিসে উত্তমের মাঝে মাঝেই মনে হয় বুঝি যতিন-ললিতের সুরে কেয়ামত সে কেয়ামত তক সিনেমার "অ্যায় মেরে হমসফর " গানটি শুরু হয়ে যাবে। আচ্ছা সাউন্ড অব সাইলেন্স কে তো নৈশব্দের শব্দ বলা যায় তাইনা?

ভদ্রলোক উত্তমকে অতিক্রম করে বা দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। হঠাৎ একজন বোরখা পরিহিতা ভদ্রমহিলা বয়স হয়তো চল্লিশোর্ধ্ব হবে "জয়দেব কাকা" বলে এগিয়ে আসেন। ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে যান। ভদ্রমহিলা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, "কাকা আপনি এখানে কি ব্যাপার? কাকিমার খবর কি? আপনি এটা কী ব্যাচেন?" ভদ্রলোক কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। তাঁর চোখে নোনা জল জমাট বাঁধতে শুরু করেছে, তিনি শুধু ভাঙা গলায় বলেন " আমার সব লেইক্ষা লইয়া, আমগোরে বাইর কইরা দিসে" বলেই তিনি ধিরে ধিরে হাঁটতে শুরু করেন। আর ডাক তোলেন, দশটা সুঁই পাঁচ ট্যাকা,পাঁচ ট্যাকা...... এবারের সুরটায় খুব মায়ায় ভরা।

ভদ্রমহিলা জয়দেব কাকার পিছু পিছু হাঁটতে থাকেন, তাদের কথা চলমান কিন্তু উত্তমের শ্রবণসীমায় তার কিছুই পৌঁছায় না। উত্তমের এখন অস্থির লাগা শুরু হয়েছে, জয়দেব কাকার সব কিছু লিখে নিয়ে কে তাঁকে বের করে দিয়েছে? জানবার তো উপায় নেই। এমন অবস্থায় সিগারেট খুব কাজে দেয়। উত্তম বসবার জায়গা ছেড়ে ফুটওভার ব্রিজের গোড়ায় এসে সিগারেট জ্বালায়। এ জায়গাটায় দুটো মাঝারি ধরনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, আর একটা চায়ের দোকান। এ যায়গাটাকে স্টেশনের অলিখিত স্মোকিং জোন বলা যায়। পাবলিক প্লেসে নন স্মোকারদের মাঝে দাঁড়িয়ে উত্তমের সিগারেট খেতে ইতস্তত বোধ হয় খুব। কিন্তু এ শহরে স্মোকিং জোন কোথায়? তাই এই অলিখিত স্মোকিং জোন ফর্মুলা।

সিগারেট শেষ হতে হতেই, এনাউন্সমেন্ট হয় যে শিয়ালদা যাওয়ার গাড়ি ২ নম্বর লাইনে প্রবেশ করবে। উত্তমও প্রস্তুত হতে থাকে। ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মে থামতেই উত্তম দেখে তার সামনের বগিটা মোটামুটি খালিই। সামনে দু’চারজন মহিলা আর গোটা দশেক পুরুষ যাত্রী। তাই তাড়াহুড়ো না করে আস্তে ধীরে ট্রেনে উঠে বগীর শেষদিকে যেতেই চোখে পড়ে সেই ভদ্রমহিলা বসে আছেন, তাঁর পাশের সিটটা ফাঁকা। উত্তম বেশি কিছু চিন্তা না করেই পাশে বসে পড়ে।

ট্রেন চলতে শুরু করলেই উত্তম ভেবে চিন্তে ভদ্রমহিলাকে আঞ্চলিক সুরে জিজ্ঞেস করে ওঠে "আপা, জয়দেব কাকার ঘটনাডা কী? আপনে তাঁরে চিনেন? আমি আফনেগো কতা শুনছি। আমারে কওন যায়?" ভদ্রমহিলা তখন বলা শুরু করলেন। ৭১এর সময়, যখন ওপারে সব গোলমাল চলছে, তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন, তখন তাঁর বাবা-মা সহ ওনারা জয়দেব কাকার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। দুর্গানগর রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে ছিলো জয়দেব কাকার নিজস্ব বাড়ি। সামনে ছিলো একটা বড় আকৃতির মুদি দোকান। আর তাঁরা ছাড়াও ছিলো আরো তিনটা ভাড়াটিয়া পরিবার। জয়দেব কাকা এবং তাঁর স্ত্রীর আচরণের কারনে তাঁরা সবাই ছিলেন পরিবারের মতো। কাকার ছিলো ছোট একটা ছেলে, যাকে ভীষণ ভালবাসতেন তাঁরা সবাই। ভদ্রমহিলার বাবার চাকরির সুবাদে তাঁরা বহুদিন আগেই কামারহাটি চলে যাওয়ায় আর যোগাযোগ থাকেনা তাদের মাঝে।

আজ তিনি কাকার কাছে শুনলেন, সেই ছোট ছেলেটি এখন অনেক বড়, বিয়ে করেছে সংসার হয়েছে। স্ত্রীর সাথে বাবা-মায়ের বনিবনা না হওয়ায় কায়দা করে সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে, সে সব বিক্রি করে ছেলে এখন বউ নিয়ে চলে গেছে। আর কাকা এবং কাকি থাকেন এক বস্তিতে। দিনে যতটুকু উপার্জন করতে পারেন তাই দিয়ে চলে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত জীবন চাকা। ঘটনা বলতে বলতে ভদ্রমহিলার কন্ঠ ভারি হয়ে আসে। তিনি বলেন "জানেন ভাই আমারো একটাই পোলা" বলেই চোখ মুছতে থাকেন তিনি। দমদম স্টেশন চলে আসে, ভদ্রমহিলা নেমে যান। উত্তমের ও এখানেই নামবার কথা, কিন্তু মন চাইছে না।

ট্রেন চলতে শুরু করেছে- উত্তম সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কানে বাজছে, অ্যান্ড্রু কিশোরের গাওয়া "ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে..."। গানের মাঝে হঠাৎ সেই স্বর দশটা সুঁই পাঁচ ট্যাকা, পাঁচ ট্যাকা ....... উত্তম চট করে এদিক ওদিক খুঁজে দেখে বগিতে অল্প কিছু মানুষ যার যার মতো ব্যস্ত।

উত্তম আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। কানে বাজতে থাকে-
"ও আমি কত জনে কত কি দিলাম,
যাইবার কালে একজনারও দেখা না পাইলাম।
আমার সঙ্গের সাথী কেউ হলো না,
আমার সঙ্গের সাথী কেউ হলো না রে,
রইবো না আর বেশী দিন তোদের মাঝারে"
এবং দশটা সুই পাঁচ ট্যাকা, পাঁচ ট্যাকা .......

-©উshaস চttopaধ্যায়~----- 

Tuesday 24 August 2021

প্রিয়া ...


---প্রিয়া


প্রিয়া। হ্যাঁ, প্রিয়া আমার স্ত্রী। এক ঘন্টা পঁচিশ মিনিট আগে মারা গিয়েছে। আমার সাথে একটি কথা না বলেই মরে গেল। আমাকে একটি বার বলে দিয়ে গেল না এই ফুটফুটে সুন্দর এতটুকু একটা মেয়েকে আমি কেমন করে সামলে রাখব।

আমি গিয়েছিলাম শান্তি বাজারে। প্রিয়ার জন্যই যেতে হলো। প্রিয়া বলে রেখেছিল, মেয়ে হওয়ার খবর শুনলেই তুমি মার্কেট থেকে আমার মেয়ের জন্য গোলাপি রঙের খুব সুন্দর একটা জামা কিনে নিয়ে আসবে। ওখানে ছোট ছোট বাচ্চার খুব সুন্দর সুন্দর জামা পাওয়া যায়। আমার গোলাপি রঙ পছন্দ। প্রথমেই আমি এই গোলাপি জামা পরা একটা পরীর মতো সুন্দর মেয়ে দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই, তুমি হাসি হাসি মুখ করে আমার গোলাপি মেয়েটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো।

আমি জামা নিয়ে আসলাম বিয়াল্লিশ মিনিটের মধ্যে। বি এন বোস মহকুমা হাসপাতাল থেকে চিড়িয়ামোড়ের শান্তি বাজার বিয়াল্লিশ মিনিট খুব কম সময়। আমি বিয়াল্লিশ মিনিটের মধ্যে গেলাম আর আসলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে গেলাম। লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দুপুরবেলা তপ্ত রোদে একটা মানুষ দৌড়াচ্ছে, পাগল টাগল নাকি, ভর দুপুরে বেলা রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। কলকাতা শহরে তবু মানা যায়, কিন্তু শহরতলি তে এই দৃশ্য বেশ বেমানান। তারপরও আমি দৌড়ে গেলাম চিড়িয়ামোড়। জামাটা নিয়ে এসে শুনি প্রিয়া মারা গেছে, সাথে পেটের বাচ্চা টা ও!

আমি এখনো মেয়েটাকে দেখতে যাই নি। আমার সবকিছু কেমন উল্টো-পাল্টা লাগছে। মনে হচ্ছে আমি একটা টিভির সামনে বসে আছি। বসে বসে সিনেমা দেখছি। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থাকতেই ছুটির দিন দুপুরবেলা খুব সিনেমা দেখতাম। বাংলা, হিন্দি, তেলেগু, ইংরেজি সব ভাষার! সিনেমার করুণ দৃশ্যগুলোতে আমি অনেকবার কেঁদেছি। মাঝে মাঝে হাউমাউ করে কাঁদতাম। কিন্তু আজ আমার একটুও কান্না পাচ্ছে না। হাসপাতালের লোকজনগুলো কী করুণভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা বাংলা সিনেমার করুণ কোনো দৃশ্য দেখছে।

না, এটা সিনেমা হচ্ছে না। ডাক্তার এসে আমাকে প্রিয়ার মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত বললেন। প্রিয়ার প্রেগনেন্সিটা একটু জটিল ছিল এটা ঠিক, কিন্তু শেষে এসে এমনটা হবে তা আমি কল্পনাও করিনি। এই সেই প্রিয়া, যে আমায় সাহস জুগিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে একরত্তি একটা মেয়েকে নিয়ে আসার! সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে হাল ছাড়েনি, যেকোনো উপায়ে তার ঐ শিশুটিকে চাই-ই চাই! সে যে এইভাবে আমার সঙ্গ ছেড়ে দেবে, তা আমি ভাবিনি!

আমি তখন আফগানিস্তানে ফরেন ডিপার্টমেন্ট কর্মরত, দেশে তালিবানি শাসকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, মার্কিন সেনাদের সদ্য প্রস্থানে। দেশে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, সবাই বাঁচতে চায়, আমারও মাথার মধ্যে একইরকম অবস্থা। এমতাবস্থায় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে কোনো এক মা-বাবা, নিজেদের ঐটুকু সন্তান কে ছেড়ে, বিমানে করে পালিয়েছে! এসেছিল সেও তার মা-বাবার সাথে পালাবে বলে, কিন্তু পারেনি। বাবারা না হয় অতটা জড়ায় না, কিন্তু মা টাই বা কি?
যাই হোক, প্রিয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছায় শিশুটিকে আমাদের সাথে ছাড়তে রাজি হল সে দেশের আইনী ব্যবস্থা, যথেষ্ট কাগজ পত্তরের মাধ্যমে, এবং আমার সরকারি জানাশোনা, সুযোগ সুবিধার কারণে একটু হলেও সুবিধা যে হয়নি তা নয়! তবু, বহু চেষ্টার ফলে আমাদের মিতু আমাদের কোলে এসেছিল! প্রিয়া হয় তো বা বুঝতে পেরেছিল যে তার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছিল, তাই হয়তো এতটা উঠেপড়ে লেগেছিল সে ঐ বাচ্চাটিকে আঁকড়ে ধরতে। দেশে ফিরতে না ফিরতেই হসপিটালে আসতে হল ওর কমপ্লিকেশনের জন্য, আর তার সাথে সেই ছোট্ট একরত্তি শিশুটিকেও। হসপিটালের তরফ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিল, আর জানালো যে শিশুটিকে আমরা এনেছি, সে মোটামুটি সুস্থ, খালি নজর দিতে হবে কোনোরকম আতঙ্কের পরিবেশ থেকে তাকে যত দুরে রাখা যেতে পারে!
যখন আমার মেয়েটাকে কোলে দিল তখন আমি ঠিক বুঝতে পারলাম। হ্যাঁ, আমি কোন সিনেমা দেখছি না। আস্তে আস্তে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে। আমার পালিয়ে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। হাসপাতাল থেকে দুরে কোথাও পালিয়ে যাই। আমি বার বার ইচ্ছে করেই ভাবতে চেষ্টা করছি আমার কেউ নেই। প্রিয়া নামের কোন মানুষকে আমি চিনি না। আমি একা। আমি একা ছিলাম। আমি একা ছিলাম। আমি বার বার সবকিছু ভুলে যেতে চেষ্টা করছি।

ফুটফুটে পরীর মত মেয়েটা আমার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। মেয়েটার দিকে তাকালেই আমার কান্না আসছে। ভীষণ কান্না। এই মেয়েকে নিয়ে আমি কী করব? আমি কোথায় যাব? আমি ভয়ে কাঁদি না। নিজের ভেতর সব কান্না চেপে রাখি। আমার মনে হচ্ছে আমি কাঁদলে এই মেয়েটা তার খুব ছোট্ট চোখ দুটি দিয়ে আমার কান্না দেখে ফেলবে।

দুই বছর আগে এপ্রিল মাসের পনেরো তারিখে প্রিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়। পরিবারের পছন্দেই বিয়ে। বিয়ের পর পরই নিরাকে আফগানিস্তানে নিয়ে যাই। বেশ ভালই চলছিল আমাদের সংসার। সেখানে আমার আর প্রিয়ার আত্নীয় স্বজন বলতে কেউই নেই। প্রিয়ার এক মামা থাকেন ইরানে, তেলের খনিতে সিস্টেম ইন্জিনিয়ার। আমার চোদ্দ গুষ্টির কেউ সেখানে থাকেন না। আফগানিস্তানে শুক্রবার ছুটি, তাই শুক্রবার বন্ধের দিন আমি আর প্রিয়া নিজের মত করে ঘুরি। বেশির ভাগই ঐ শিশু পার্কে। কেনো জানি না, প্রিয়া শিশুপার্কে যেতেই বেশি ভালোবাসতো। তার নাকি বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি দেখতে বেশ ভালো লাগতো। আমার আর কী করার। প্রিয়ার পছন্দেই শিশু পার্কে গিয়ে বসে থাকি। এই রাইড সেই রাইডের পাশে গিয়ে প্রিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের খেলা দেখতো। মাঝে মাঝে-তো বেশ অস্থির হয়ে পড়ত ও। আমাকে বলে দেখেছো দেখেছো বাচ্চাটা কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে। ও পড়ে যাবে তো, পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে।

প্রিয়ার কান্ড দেখে আমি হাসতাম। হাসতে হাসতে বলতাম। ধুর, তুমি এত চিন্তা কর না। পাশে বাচ্চাটার মা দাঁড়িয়ে আছে, উনি শক্ত করে ধরে আছেন।

মুসুর ডালের পিঁয়াজি আমার খুব পছন্দের। অফিস থেকে ফেরার পর প্রিয়া প্রত্যেকটা দিনই আমার জন্য এই মুসুর ডালের পিঁয়াজি ভাজতো। মুসুর ডাল শিল-নোড়াতে পিষতে হয়, মিক্সিতে পেস্ট করলে তার হতো না। একসাথে বেশ কিছু ডাল শিল-নোড়ায় পিষে ফ্রিজে রাখতো। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি অফিস থেকে ফিরলে পিঁয়াজি ভাজা হত। মাঝে মাঝে বেগুনীও ভাজত প্রিয়া। বেগুনী ও বেশ স্বাদের। এত স্বাদের বেগুনী আমি আগে কখনো খাই নি।

আমার আর প্রিয়ার খুব শখ আমাদের প্রথম সন্তান একটা মেয়ে হবে। এই নিয়ে প্রিয়া আর আমি নানান পরিকল্পনা করতাম। মেয়েকে কোন স্কুলে ভর্তি করবো তাই নিয়ে আমাদের মাঝে তুমুল তর্ক। সেই রাতে আমার উপর রাগ করে প্রিয়া ভাত খায় নি। আমি অনেক জোর করলাম। তারপরও প্রিয়ার রাগ ভাঙ্গেনি। শেষে আমি মেনে নিলাম, প্রিয়ার যেমনটা ইচ্ছে তাই হবে। আমার কথা শুনে প্রিয়া কেঁদে দিল। খুশিতে কাঁদল। আমি সেদিন সেখানকার ফজরের নামাজের পর উপরওয়ালার কাছে দোয়া করেছিলাম, যেন আমাদের একটা মেয়ে সন্তানই দেন। সব ধর্ম ই তো এক, কে জানে! ওপরে হয়তো আকাশে তাদের কথোপকথন আছে, নীচেই খালি মারামারি!

প্রেগনেন্সির প্রথমদিকে ডাক্তার আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করে বলেছিল, এখনও ঠিক নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আরও কিছুদিন পর আল্ট্রা করলে সঠিক বলা যাবে। তবে এখন মনে হলো, বোধহয় ছেলে হবে।

ডাক্তারের কথা শুনে প্রথমে আমি আর প্রিয়া একটু মন খারাপ করেছিলাম। তারপর দুজনেই খুশি মনে মেনে নিলাম ভগবান যা দেবেন তাতেই আমরা খুশি। এরপর আমরা আর আল্ট্রা করিনি। ইচ্ছে করেই করিনি।

বাচ্চা ডেলিভারির দিকে এসে প্রিয়ার শরীরটা একটু বেশি খারাপ হয়ে গেল, ধকলের কারণে। প্রিয়ার প্রেশার নামতে লাগল। ডাক্তার বলল, সিজার ছাড়া উপায় নেই।

সিজারটাও একটু জটিল হয়েছিল। সবকিছুর শেষে, ডাক্তার আমাকে বলল, 'আপনি তো ভাগ্যবান মশাই, এক সন্তান হারিয়েও আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন, এই হল ভগবানের আশীর্বাদ। জটিলতা তো ছিলই, আর কয়েকটা দিন হাতে পেলে ভালো হত। বাচ্চার আর তার মায়ের শরীরটা বাঁচানো গেল না, আই অ্যাম সরি।'

প্রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে যাবে এই বিষয়টা আমার মাথায় ভুলেও আসেনি, কারণ এই ভাবনাটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে চাইতাম না। ওদের হারাবার খবর শুনে আমি কেঁদে ফেললাম, আর মনে মনে আশ্বস্ত হলাম আমার মিতুকে কোলে পেয়ে। আমি আর প্রিয়া জানতাম আমাদের ছেলে হচ্ছে, কিন্তু উপরওয়ালার অন্য প্ল্যান ছিল। আমার বার বার প্রিয়ার চেহারাটা মনে পড়ছে। ভাবছি, এই খবরটা শুনে প্রিয়া নিশ্চয় হাউমাউ করে কাঁদতো। মেয়েটা একটু খুশি হলেই কাঁদতো। প্রিয়া এই রোগটা আমার মধ্যেও ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। এখন আমারও অল্পতেই কান্না চলে আসে।

আমার মনে পড়ে গেল প্রিয়ার সেই বায়নার কথা। মেয়ে হলে যেন গোলাপি জামা কেনা হয়। সেই গোলাপি জামাও কেনা হলো আর আমাদের মেয়েও হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাকে কোলে নেওয়া গেল না। বদলে আমার কোলে থাকা গোলাপি জামা পরা, তার পছন্দকরে সাথে নিয়ে আসা ফুটফুটে পরীটাকে প্রিয়া দেখতে পারল না। প্রিয়ার ওপর আমার খুব রাগ হচ্ছে, খুব রাগ। প্রিয়ার ওপর আমার রাগ আগেও হয়েছে। রাগ হলে আমি বারান্দায় প্রিয়ার লাগানো সাদা গোলাপ গাছটার তিন চারটে পাতা ছিঁড়ে দিতাম। এতেই প্রিয়ার শিক্ষা হয়ে যেত। আমি পাতা ছিঁড়ব বললেই আর উল্টো-পাল্টা কাজ করতো না। এখন আমি কি করি। আমার যে এখন কিছুই করার নেই। আমি বুকের সাথে আমার মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি। মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।

আজ দেখতে দেখতে চার বছর পেরিয়ে গেছে। হ্যাঁ, আমি চার বছর পরের কথা বলছি।

কি ভাবলেন, আমি বিয়ে করেছি?

একেবারেই না। ঐ বিয়ের চিন্তা আমার মাথাতেও আসেনি। কতশত মানুষ একটা বিয়ে না করেও জীবন পার করছে। আমি-তো একবার বিয়ে করেছি। আমার পরীর মত একটা মেয়ে আছে। পরীটার নাম মিতু, সেও আমাকে বাবা বলে মেনেছে। এই নাম প্রিয়ার পছন্দের। প্রিয়া মারা যাওয়ার পর মিতুর নানী আমাদের সাথেই থাকে, তিনিও সব কিছু মেনে ও মানিয়ে নিয়েছেন। আমাদের বাপ মেয়ের জ্বালায় তিনি মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে পড়েন। রাগারাগি করে মাঝে মধ্যে তার ভাইয়ের বাড়িতে চলে যান, তবে এই চলে যাওয়াটা তিনি বেশির ভাগ আমার অফিস ছুটির দিনই করেন। আমি বুঝি, খুব বুঝি। তিনি কখনও মিতুকে একা রেখে যাবেন না। এই মানুষটা আমাদের বাপ-বেটির বিশাল এক মায়ায় জড়িয়ে গেছেন।

প্রিয়ার মত মিতুরও প্রিয় জায়গা শিশুপার্ক। ছুটির দিনে আমরা বাপ মেয়ে এই শিশু পার্কে গিয়ে বসে থাকি। আমি একটা জিনিস দেখে বেশ অবাক হই, বেশ অবাক। মিতু দেখি তার মায়ের মত পার্কে রাইডে চড়ার চেয়ে বসে বসে দেখতে বেশি ভালোবাসে। মাঝে মাঝে দুই একটা চড়লেও বাচ্চাদের দেখেই সে বেশি আনন্দ পায়।

সেদিন আমি বেশ অবাক হলাম, ভীষণ অবাক। দোলনায় একটা বাচ্চাকে চড়তে দেখে মিতু অস্থির হয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, বাবা দেখ, দেখ ঐ বাবুটা পড়ে যাচ্ছে। ঐ বাবুটা পড়ে যাচ্ছে। তুমি দোলনা বন্ধ করতে বলো না।

হ্যাঁ, এমনই করত প্রিয়া। কোনো বাচ্চাকে একটু অসর্তক হতে দেখলেই প্রিয়া অস্থির হয়ে পড়তো। মিতুর কথা শুনে আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন সবকিছু ওলটপালট করা শুরু করল। মিতুর সামনে আমি কখনও কাঁদতে চাই না। তারপরও আমার চোখের কোণায় জল জমতে শুরু করল।

ছুটির দিন আমার আর মিতুর যাওয়ার আরেকটা ভীষণ প্রিয় জায়গা আছে, তালপুকুর। হ্যাঁ, এই তালপুকুরের রাসমণি শ্মশানই আমাদের প্রিয় জায়গা, পাশেই গঙ্গার ঘাট। প্রিয়াকে এই শ্মশানেই পোড়ানো হয়েছে। আমরা শ্মশানে যাই খুব ভোরে। তখন সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। অন্যদিন মিতুকে এত সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগাতে বেশ বেগ পেতে হলেও ছুটির দিনে তালপুকুর শ্মশান যাওয়ার নামেই মিতু লাফিয়ে উঠে পড়ে। ঐ জায়গাটা তারও বেশ প্রিয়। মিতু এখন একটু একটু লিখতে পারে। তার মায়ের নাম লেখাটা সে আগে শিখেছে। শ্মশানে যাওয়ার সময় সাদা কাগজে তার মায়ের নামটা লিখে নিয়ে গেল। মায়ের সাথে তার কী সব কথা হয়, আমাকে বলতে চায় না। আমি জানতে চাইলে রাগ দেখিয়ে বলে. তোমার এত সব শুনে কাজ কী? এইটুকু আফগান মেয়ের মুখে বাংলা শুনেও ভালো লাগে, পুরো পরিস্কার! একদম 'আফগান জলেবি'...

তালপুকুর শ্মশানের ঠিক পশ্চিমে বিশাল এক আম গাছ। এই গাছের কাছেই প্রিয়াকে পোড়ানো হয়ে। এখানে আমাদের বাপ বেটির খুব প্রিয় একটা জায়গা আছে। আমরা গেলে ওখানেই বসি। মিতু আজ নতুন একটা মন্ত্র শিখেছে, আদ্যাস্তোত্র। তার মায়ের শ্মশানের কাছাকাছি গিয়ে এই মন্ত্র, সুর করে পড়ার আগে দুই তিনবার আমাকে বলে শোনাবে। বার বার জানতে চাইবে ভুল হচ্ছে কি না। মিতু চায় না তার মায়ের কাছে গিয়ে ভুল সুরে স্তোত্র পড়ুক। তালপুকুরের শ্মশানে মিতুর আরেকজন প্রিয় মানুষ আছে সেটা হল বিজন কাকা। এই মানুষটাকে মিতু দাদুভাই বলেই ডাকে। বিজন কাকা শ্মশানের পাশেই থাকেন, শ্মশানে মরা মানুষ পোড়ান। পরিবার পরিজন আছে বলে মনে হয় না। মিতু নানীর কাছে নতুন নতুন সুরে স্তোত্র শিখে তার মাকে অবাক করে দিতে চায়। এই বয়সে তার অনেক গুলো স্তোত্র মুখস্ত, আমিও জানি না অনেকগুলো। যেগুলো আমি জানি না সেগুলো মিতু বিজন কাকার কাছে গিয়ে বলে। মিতুর স্তোত্র বলা শুনে বিজন কাকা লুকিয়ে চোখের জল মোছেন। তিনি অনেকক্ষণ আমার পরীর মতো মেয়েটাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখেন। আমি কিছু বলি না। শুধু দুর থেকে তাকিয়ে থাকি।

আজ আমার পরী মেয়েটা সুর করে আদ্যাস্তোত্র বলা শিখেছে। পুরোটা শিখেছে। মাঝে মাঝে কয়েকবার ভুল বলেছিল। সেটা গতকাল রাতেই ঠিক করে নিয়েছে। মিতু তার মায়ের শ্মশানের পাশে দাঁড়িয়ে সেটাকে পড়ছে। আমি আর বিজন কাকা দাঁড়িয়ে আছি একটু দুরে। বিজন কাকা কাঁদছেন। অন্যদিন বিজন কাকা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদেন। আজ তিনি কান্না লুকাচ্ছেন না। তিনি বাচ্চাদের মত করে কাঁদছেন।

পৃথিবীতে সুখ পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সৃষ্টিকর্তা সুখটাকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। আমার সুখ গ্রহনের সময় হলেই তিনি তা আমাকে বিরামহীনভাবে দিতে থাকবেন। আজ আমার সুখ গ্রহনের সময়। এই সময়টা প্রকৃতি আমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছে, অনেক আগে থেকে।

আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। প্রিয়ার সেই রোগটা আমার এখনো আছে। বেশি খুশি আর সুখ পেলে আমার এখনো কান্না চলে আসে। মিতুর ভয়ে আমি অনেকদিন কান্না চেপে রেখেছি। কান্না আসলেও কাঁদতাম না। মেয়েটা কান্না একটুও পছন্দ করে না। আজ আর কান্না চেপে রাখতে ইচ্ছে করছে না।

আমার পরী মেয়েটা দুর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটা আমার পুরো স্তোত্রটা পড়তে পেরেছে, মুখস্ত। পড়তে পেরেছে বলেই খুশিতে হাসছে।

দুর থেকে মেয়েটার হাসি হাসি মুখ দেখে আমি আর কান্না চেপে রাখতে পারলাম না। প্রিয়ার উপর এতদিন বিশাল একটা অভিমান আমি পুষে রেখেছি নিজের ভেতর, বিশাল অভিমান। এই অভিমান ঠিক সমুদ্রের মত বড় ছিলো। আমাকে একা রেখে এভাবে পালিয়ে যাওয়া তার কিছুতেই ঠিক হয় নি। আজ আমার সব অভিমান শ্মশানের মাটিতে মিশে গেল।

আমি কাঁদছি, হ্যাঁ আমি কাঁদছি নিজের ভেতর বিশাল একটা সুখ নিয়ে। বিশাল সুখ। হাজার বছর বাঁচলেও এমন সুখ অর্জন করা যায় না।

সুখের জন্য প্রহর গুনতে হয়...


-©উshaস চttopaধ্যায়~-----

Sunday 22 August 2021

Look at only 'ME' syndrome...

We can't see that we are in an era of attention. There are pointless things being recycled on social media platforms that scream only 😱 for that attention of “look at me,” or if needed with a 'pleeeeaaaasssseeee!'

So many have been duped into the delusion that if I get enough attention I will get paid… Now, there is nothing wrong with earning money for services rendered because you should get paid.

But… You must ask yourself what is service really? Am I doing this for the attention or I am really doing this to impact and help to change lives for the better?

Impact lasts to improve lives while popularity is just a flash in the pan of attention, cheers…

#sundaymotivation #success #leadership #mindcoach #ushas #change #chinupfIghterS 

Thursday 19 August 2021

হিটলার ২-য় পর্বে!


 #হিটলার_২য়_পর্বে:


যেহেতু জার্মানির সামরিক বাহিনী কমাতে হয়েছিল, সেহেতু যুদ্ধের পর হিটলার আর সৈনিক থাকতে পারেননি, কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর জন্য একজন তথ্যদাতা(informer) হিসেবে কাজ করতে থাকেন। যুদ্ধের পরে, জার্মানিতে কমিউনিস্টরা একটি বিপ্লবের চেষ্টা করেছিল এবং সরকার সাধারণভাবে সাম্যবাদ নিয়ে চিন্তিত ছিল, তাই হিটলারের উপর অনুপ্রবেশ করা এবং কমিউনিস্ট হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন নতুন রাজনৈতিক দলের সম্বন্ধে রিপোর্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি নামে একটি নতুন দল পুরো লাল পতাকা জুড়ে ছেয়ে ফেলেছিল, মনে করা হয়েছিল যে বোধহয় কমিউনিস্ট পার্টি, তাই হিটলার তাদের একটি আয়োজিত সভায় গেছিলেন কিন্তু দেখা গেল যে তারা মোটেও কমিউনিস্ট ছিল না উল্টে, তারা ছিল চরম বামপন্থী একটা দল! এবং সেই পার্টি তার চরম বিশ্বাসের অনেক কিছুতেই মতের মিল পাওয়া যায়, তাই তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে এবং পার্টিতে যোগদান করেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই, তার অসাধারণ কথা বলার ক্ষমতা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সমর্থকদের মুগ্ধ করেছিল, এবং তিনি খুব দ্রুত উপরে উঠতে লাগলেন। খুব শীঘ্রই তিনি পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনও হন। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে পার্টির ক'একটি পরিবর্তন বা মেকওভার দরকার, তাই তিনি এটির নতুন নামকরণ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি (National Socialist German Workers' Party), বা সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি, এবং তিনি একটিতে যে হালকা ব্যাঁকানো স্বস্তিকা চিহ্ন-র ব্যবহার করেছিলেন তা তার নিজেরই করা, একটি নতুন রঙের স্কিমও দিয়েছিলেন তিনি। নাৎসিরা নীতি সম্পর্কে খুব-একটা সুনির্দিষ্ট ছিল না, কিন্তু হিটলার জার্মানিকে তার আগের গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে এবং সমস্ত নৈতিক জার্মানদের এক জাতি, গোষ্ঠীতে পুনর্মিলন করতে, তিনি জার্মানি কে পুনরায় সমস্ত গৌরব ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর হন। তিনি আরও চেয়েছিলেন যে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ আর্যদের(pure Aryans) নাগরিক হতে দেওয়া উচিত এবং সব ইহুদিরা তাদের নাগরিকত্ব হারাবে। চরম ডানপন্থী রাজনীতিতে এই ধারণাগুলো আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, কিন্তু যেটা নাৎসিদের বাকি চরম ডানপন্থী দলগুলোর থেকে আলাদা করেছিল তা হল হিটলার নিজেই। তারা খুব দ্রুতই জার্মানির চরম ডানপন্থী নেতৃস্থানীয় দল হয়ে ওঠে। সেই সময়ে জার্মানির অনেক রাজনৈতিক দলের আধাসামরিক শাখা ছিল এবং নাৎসিরাও এদের থেকে আলাদা ছিল না। হিটলার খুবই বর্ণনামূলক ভাবে এদের গঠন সম্পর্কে সচেষ্ট হন, এদের নামকরণ-এর বিভিন্নতা যেমন "হল সুরক্ষা বিচ্ছিন্নতা/Hall Protection Detachment," পরবর্তী সময়ে যা হয় "Gymnastic and Sports Division/জিমন্যাস্টিক এবং ক্রীড়া বিভাগ," এবং অবশেষে অশুভ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী "Storm Detachment/ঝড় বিচ্ছিন্নতা", বা সংক্ষেপে এসএ/SA গোষ্ঠী স্থাপন করা। তাদের কাজ ছিল নাৎসি দলের সভা, কার্যালয় রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং তারা প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত হত রাস্তা-ঘাটে কমিউনিস্টদের সাথে। যেহেতু মিত্র শক্তিরা জার্মানির সামরিক আকার-আকৃতি কমানোর দাবি করেছিল, তাই অনেক প্রশিক্ষিত সৈন্য বেকার হয়ে পড়েছিল। তারা স্বাভাবিক ভাবেই নাৎসি মতাদর্শ পছন্দ করত, এবং এসএ -তে যোগদান করা তাদের জন্য স্বাভাবিক ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরও বড় হতে থাকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হওয়া নতুন গণতান্ত্রিক সরকার বেশ দুর্বল এবং অকার্যকর ছিল। শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ (reparations) দিতে হয় মিত্র শক্তিদের কাছে, ফলে আরও বেশি পরিমানে অর্থ মুদ্রণের কাজ শুরু করে। সমস্যাটি হল, অর্থ মুদ্রণ বা টাকা ছাপানো আসলে একটি দেশকে বেশি অর্থের মালিকানা দেয় না - এটি শুধু অর্থকে কম মূল্যবান করে তোলে। সুতরাং জার্মানি দেশটি যত বেশি টাকা ছাপিয়েছে, ততই এটি কম এবং আরো কম মূল্যবান হয়ে উঠেছে এবং একসময় এসে মুদ্রার মূল্য ক্র্যাশ করেছে। ১৯১৯ সালে, একটি ইউ.এস. ডলারের মূল্য ছিল ৪.৫ জার্মান মুদ্রার সমান, কিন্তু ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি ইউ.এস. ডলার ছিল ৪,২ ট্রিলিয়ন মার্কের সমান। পাউরুটিরও দাম বেড়ে হয় ২০০ বিলিয়ন মার্কস। ব্যাঙ্কের ব্যবসা পুরোপুরি মূল্যহীন হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে, এই জাতীয় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জার্মানি মিত্র শক্তিদের অর্থ প্রদানের জন্য প্রচন্ড সংগ্রাম করছিল। ফরাসিরা এ নিয়ে বিরক্ত হয়েছিল। তাই তারা কারখানা দ্বারা পরিপূর্ণ এলাকা রুহর (Ruhr) অঞ্চল দখল করে নেয় এবং অর্থ প্রদানের পরিপূরক হিসাবে এলাকা থেকে অর্থনৈতিক উৎপাদন নিজেরাই গ্রহণ করে। তারা জার্মান নাগরিকদের সাথেও খারাপ আচরণে লিপ্ত হয় এবং মোটামুটিভাবে একশ ত্রিশজন জার্মান, এইসব ফরাসি দখলদারিত্বের সময় নিহত হয়েছিল। জার্মানরা ক্ষিপ্ত ছিলই এবং হিটলার এবং নাৎসিরা ভেবেছিল যে এখন এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার একটি দুর্দান্ত সময় হবে। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে, ঠিক এক বছর আগের এক সাহসী ইতালীয়র নকল করে(Benitto Mussolini),
হিটলার একটি বিয়ার হলে একটি সভায় ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেন। তার সমর্থকদের সাথে, তিনি মিউনিখের রাস্তায় মিছিল বের করেছিলেন, এই আশায় যে পুলিশ তার পাশে যোগ দেবে। কিন্তু না, তারা যেটা দিয়েছিল তা হল বন্দুকের গুলি! প্রায় ১৫জন সিনিয়র অফিসিয়াল সেই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন ও মারা যান, আহত হন হিটলার নিজেও। মাস খানেক আত্মগোপন করলেও তাকে ধরা পড়তে হয়। হিটলারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে আনা হয়েছিল। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারত, কিন্তু ডানপন্থী বিচারকরা ভেবেছিলেন তিনি একটি খুব শান্ত লোক, হিটলারও বিচারকদের চিনতেন এবং জানতেন যে তারা নমনীয় হবেন। তাই তিনি বিচারের সময় এবং শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট বক্তৃতা করার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন! তাকে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে তিনি মাত্র নয় মাস কারাভোগ করেছিলেন। যখন আমি কারাগার বলেছিলাম, তখন একেবারেই তার কারাবন্দি-র মতো ব্যবহার করা হয় নি, বরং এটি একটি মনোরম হোটেলে থাকার মতো ব্যাপার ছিল যেখানে তার একটি বিখ্যাত বই 'মেইন কাম্পফ' (Mein Kampf অর্থাৎ মাই স্ট্রাগল) লেখার জন্য প্রচুর সময় ছিল। যেটি একদিকে তার জীবনের কাহিনী তো অন্য দিকে এক সুনির্দিষ্টভাবে প্রস্তাবনা ও তার পার্টির হলফনামা নামে পরিচিত!
গোটা বিষয়টি দেশব্যাপী মিডিয়া দ্বারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল এবং এটি হিটলারকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। হিটলার এবং তার চরম বার্তা বা নীতি এখন পুরো জার্মানি জুড়ে পরিচিত হচ্ছিল। কিন্তু দৈনন্দিন জার্মানরা এখনও তার জন্য খুব একটা চিন্তিত ছিল না, এককথায় তারা পাত্তা দেয়নি। ১৯২৮ সালের নির্বাচনে, নাৎসিরা কেবল জেতে ২% ভোট। অনেকেই তখনও নাৎসি দের সহিংসবাদি চেহারা এবং হৈচৈতে রাজি ছিলেন না ও তারা হিটলারকে অ-রাজনীতিবিদ হিসেবে গন্য করেছিলেন। কিন্তু একটি নতুন অর্থনৈতিক সংকট সব পরিবর্তন করে দেয়। জার্মানিকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে সাহায্য করার জন্য, আমেরিকা তাকে লোন দিতে রাজি হয়েছিল। ১৯২৯ সালের অক্টোবরে, ওয়াল স্ট্রিট চরম অর্থাভাবের সূচনা ঘটেছিল এবং আমেরিকা তার টাকা ফেরত চেয়েছিল। ইতিমধ্যেই সংগ্রামী জার্মানির ওপর যে অর্থনৈতিক চাপ ছিল তা ছিল মারাত্মক।
বেকারত্ব হচ্ছিল আকাশচুম্বী। দারিদ্র্যতা ব্যাপক থেকে ব্যপকতর হচ্ছিল এবং জার্মানরা এটা ভালোভাবে নিচ্ছিল না। এটা স্পষ্ট ছিল যে নবগঠিত গণতন্ত্র কাজ করছে না। সংকটের মুখে, জার্মানরা সেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে, যা হল চরমপন্থী! চরমপন্থী দল হিসেবে জার্মানরা নিজেদের বিভাজন করছিলেন এবং পরিবর্তন করতে চাইছিল নিজেদের মানসিকতার, যদি তুমি একজন প্রকৃত জার্মান হও এবং দেশের বদল আনতে চাও, এখন তোমার পছন্দগুলি ছিল সীমিত, হয় কমিউনিস্ট বা নাৎসি।

হিটলার দাবি করেছিলেন তিনিই একমাত্র জার্মানিকে তার আগের গৌরবে ফিরিয়ে আনতে পারেন। নাৎসি দল হিটলারকে একজন মহান এবং শক্তিশালী হিসেবে মানুষের মনে ধরানোর জন্য প্রচার করেছিল, ব্যবহার করেছিল একটা প্রপোগান্ডা হিসেবে এবং তারা জার্মান জনগণকে তাদের সব কষ্টের জন্য দোষারোপ করার মতো একটি বলির পাঁঠাও খুঁজে দিয়েছিল। একক শক্তিশালী স্বৈরশাসকের প্রতিশ্রুতি ছিল ব্যর্থ গণতন্ত্রের এতবছর পরে জার্মানদের জন্য তাজা বাতাসের প্রশ্বাস। রাতারাতি সবকিছু পাল্টে যায়, হটাৎ যেন মনে হতে থাকে, কেউ কেউ তার চরম আদর্শকে কিনে নিয়েছে। কেউ কেউ বর্ণবাদ বা বৈষম্যের সাথে একমত নন, কিন্তু যেভাবেই হোক তাকে ভোট দিতে ইচ্ছুক। অনেকেই রাজনীতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না, কিন্তু শুধু প্রচারের জালে ধরা পড়ে তাকেই চেয়েছিল। নির্বাচনের পর নির্বাচন, নাৎসিরা ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ক্রমশ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সালে তারা জার্মান পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় দল হয়ে ওঠে। সেই দেশের লোকজন হিটলারের প্রতি সত্যিকারের অর্থেই বিশ্বাস করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে তিনি জার্মানির এক ধরণের মহান নিয়ন্ত্রক, ত্রাণকর্তা ছিলেন। তিনি পরিণত হয়েছিলেন এক স্বৈরাচারী, মেগালোম্যানিয়াকে। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে ভাল ফলও করেছিলেন, কিন্তু তখনও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে অত্যন্ত জনপ্রিয় জেনারেল পল ভন হিন্ডেনবার্গের কাছে হেরে যান। যেহেতু হিটলার এখন সবচেয়ে বড় দলের নেতা, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে তাকে চ্যান্সেলর করার দাবি জানান। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ অনিচ্ছুক ছিলেন, হিটলারকে দেখে স্পষ্টতই তার মনে হত যে কত বড় বর্ণ-বৈষম্যবাদী। শিল্প নেতারা আগ্রহ জানান, যেন হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে চ্যান্সেলরশিপ দিয়ে দেন, এছাড়াও কমিউনিজমের ক্রমবর্ধমান উপদ্রবের আশঙ্কায় এবং কেন্দ্রীয় দলের নেতা ভন পাপেন, যিনি গোপনে হিটলারের সাথে আলোচনা করেছিলেন, তিনি হিন্ডেনবার্গকে বললেন, যে 'আমরা হিটলারকে চ্যান্সেলর করব এই শর্তে যে আমি ভাইস চ্যান্সেলর হব এবং বেশিরভাগ সরকারি চাকরি আমাদের কাছেই যাবে, যা কিনা মধ্যপন্থী, রক্ষণশীল। এই ভাবে আমি আমার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারব, আমি বলতে চাইছি যে, আমরা আমাদের ক্ষমতা ধরে রাখব এবং আমরা হিটলারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এমনভাবে যেন সে আমাদের খেলনা ক্ষুব্ধ পুতুল হিসাবে। এতে কি আর ভুল হতে পারে?' যার উত্তর হল, সবকিছু...

হিটলার ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন, কিন্তু তিনি তখনও স্বৈরশাসক ছিলেন না। ফেব্রুয়ারিতে জার্মান পার্লামেন্ট ভবনে আগুন লাগানো হয়। ঐতিহাসিকরা এখনও নিশ্চিত নন যে এটি কে করেছে তবে অনেকেরই সন্দেহ নাৎসিরা নিজেরাই করেছে। হিটলার কিন্তু  কমিউনিস্টদের দায়ী করেছেন এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে একটি জরুরী ডিক্রিতে স্বাক্ষর করতে রাজি করান যা তাকে সকল কমিউনিস্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বন্দী করবার অনুমতি দেয়। কমিউনিস্টদের এবং অন্যান্যদের ডাকাউতে (Dachau) প্রথম কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। এই সময়ে, প্রবীণ রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গ মারা গেলেন, এই হল হিটলারকে নিখুঁত একটি সুযোগ দেওয়া। তিনি পার্লামেন্টে একটি আইন (1933 Enabling ACT) প্রবর্তন করেন যা তাকে ভবিষ্যতের সকল আইন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্পূর্ণ অনুমতি দেয় শুধুমাত্র তার নিজের উপর। কারাগারে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরকে এবং অন্যদের এসএর ভয় দেখিয়ে হিটলারের আইন পাস হয়। চ্যান্সেলর হওয়ার মাত্র দুই মাস পর হিটলার এখন একনায়ক, ডিকটেটর!
তার এখনও একটি সমস্যা ছিল। এস এ-এর নেতা রোহম(Rohm) চেয়েছিলেন এস এ, নিয়মিত জার্মান সেনাবাহিনীর চাকরি গ্রহণ করবে এবং জার্মান সেনাবাহিনী সেই ধারণা পছন্দ করেনি। হিটলারের তার পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত জার্মান সেনাবাহিনীর সমর্থন বজায় রাখার প্রয়োজন ছিল, তার রুক্ষ, রাগী, বদমেজাজি এবং খামখেয়ালি এস এ-র চেয়ে বেশি। তাই ১৯৩৪ সালে জুনের এক রাতে, তিনি রোহম এবং তার নিজের এস এ অফিসারদের অনেককে গ্রেপ্তার করে হত্যা করেছিলেন। তিনি সুযোগটি নিষ্ঠুরভাবে কিছু ব্যক্তিগত কিছু নিজস্ব হিসাবেরও নিষ্পত্তি করেছিলেন। কিছু রাজনীতিবিদ, যারা অতীতে তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, যেসব সাংবাদিক তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক নিবন্ধ ছাপিয়েছিলেন, এমন এক ব্যক্তি যিনি একেবারেই কিছুই করেননি, কিন্তু তারা ভেবেছিল সে অন্য কেউ, এরকম প্রচুর কারুর হত্যা করিয়েছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে, তাদের পরিবারের লোকজনকেও হত্যা করা হয়েছিল। মোট, ২০০ জন লোককে হত্যা করা হয়েছিল যা দীর্ঘ ছুরির রাত (the Night of the Long Knives) হিসাবে পরিচিত হয়েছিল। সেনাবাহিনী, এখন সন্তুষ্ট যে তাদের প্রতিস্থাপন করা হবে না, তাদের নতুন ফিউরারের (জার্মানিতে যার অর্থ নেতার ও নেতা) প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং হিটলারের নিয়ন্ত্রণ এখন নিশ্চিত। জার্মানিতে জীবন হিংস্রভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যার কিছুটা ছাপ ৭৫র ভারতেও দেখা যায়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অভিব্যক্তি প্রকাশ, এবং জনসমাবেশ স্থগিত করা হয়েছিল। ইহুদিরা প্রাথমিকভাবে ব্র্যান্ডেড মানে চিহ্নিত করা এবং তাদের ব্যবসা বয়কট করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, হিটলার ছয় মিলিয়ন ইহুদি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদেরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে, যদিও এখনো অবধি পাওয়া কোনো তথ্যেই হিটলারের সই দেখা যায় নি, তবু একথা অনস্বীকার্য যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজই সংগঠিত হত না। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বা অসম্পূর্ণতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে, বিশেষত শিশুদেরও  জীবাণুমুক্ত বা স্টেরিলাইজড করতে বাধ্য করা হয়েছিল। 'হিটলার ইয়ুথ' তরুণদের ব্রেনওয়াশ করার একটি সহজ উপায় হয়ে ওঠে। ছেলেদের যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত স্কুলে থাকতেই এবং ক্যাম্প থেকে হিংস্র অবস্থায় বাড়ি ফিরত। মেয়েদের বলা হয়েছিল তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল অনেক বিশুদ্ধ আর্য সন্তান জন্ম দেওয়া! তারা মাঝে মাঝেই গর্ভবতী হয়ে ক্যাম্প থেকে ফিরে আসত। যখন তাদের বাবা -মা বোধগম্যভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ত, তখন তাদের সন্তানরা তাদের হুমকি দিতো যে তারা তাদের গেস্টাপোর (Gestapo বা জার্মান পুলিশ) কাছে ধরিয়ে দেবে কারণ তারা বাধা দিচ্ছে জার্মানির মাহাত্ম্যকে ফিরিয়ে আনার কাজে। সাধারন অভিবাদনের রীতি নীতির পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং এটি ঠিকঠাক ব্যবহার না করার জন্যও আপনাকে একটি কনসেনট্রেশন শিবিরে পাঠানো যেতো। এই ভাবে, মনে হত যে সবাই নাৎসি সমর্থক। আপনি যদি হিটলারকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সাহস করেন বা তার বিরুদ্ধে কোনোভাবে কথা বলেন, আপনাকেও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হতো। এইভাবে জার্মান জাতীয়তাবাদ তরুণ অ্যাডলফাসকে মোহিত করেছিল। রাস্তায় কঠিন জীবন যাপনকারী একজন যুবক হিসেবে চরম মতাদর্শ এবং ইহুদি-বিরোধীতা তার মধ্যে যেন অন্তর্নিহিত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় তার মধ্যে ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার তৃষ্ণায় তাকে পূর্ণ করে তুলেছিল। একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা তাকে ঈশ্বরের সমান বানিয়ে তুলেছিল এবং শত শত, হাজার হাজার মানুষ তাকে তার ত্রাণকর্তা বা রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখেছিল নিজেদের হারানো গৌরব, গর্ব ফিরিয়ে আনার জন্য যা তাকে একজন ক্ষমতালোভী, একজন মেগালোম্যানিয়াক বানিয়ে তুলেছিল এবং শীঘ্রই, তার আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতি বিশ্বকে দ্বিতীয় মর্মান্তিক বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে টেনে এনেছিল, যাকে আমরা চিনি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা World War 2 নামে ... 


©উshaস চttopaধ্যায়~

#দ্বিতীয়_বিশ্বযুদ্ধ #হিটলার #ইহুদি #কমিউনিস্ট  #হলোকাস্ট #জার্মান #প্রথম_বিশ্বযুদ্ধ

Tuesday 17 August 2021

তিস্তার কান্না!


---তিস্তার কান্না:-



তিস্তার গায়ে হলুদ আজকে। ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন তার। রাতে বরপক্ষ অল্প কিছু মানুষ নিয়ে আসবে বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ে নিয়ে চলে যাবে এই হচ্ছে আয়োজন।

মেয়ের বিয়েতে বড়ো আয়োজন করার ইচ্ছে থাকলেও তাড়াহুড়া করে বিয়েতেও তিস্তার মা তার মেয়ের জন্যে গায়ে হলুদের আয়োজন রেখেছেন।

বরপক্ষ আসতে আসতে রাত হবে আর বিকালের মধ্যেই গায়ে হলুদের পর্ব সেরে, মেয়েকে তিনি সন্ধ্যার মধ্যে বিয়ের জন্যে সাজিয়ে দেবেন।

সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি আসলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তিস্তাদের একতলা বাড়ির সামনে অনেক খানি জায়গা জুড়ে উঠোন। বাড়ির উঠোন ডুববে তো ডুববে সাথে বাড়ির সামনের রাস্তায় জল জমলে বরপক্ষের গাড়ি ঢুকবে কিভাবে সেই চিন্তায় তিস্তার বাবা, ভাই আর ছোটো কাকা বাড়ির সামনে জল যাওয়ার ব্যবস্থা করে বরপক্ষের খাবারের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত এখন।

তিস্তার গায়ে বিয়ে উপলক্ষে আসা মানুষজন হলুদ দিচ্ছেন, গান গাইছেন আজকাল কার ট্র্যাডিশন মেনে সবাই মিলে কিন্তু তিস্তা নির্লিপ্ত হয়ে বসে আছে। বাপের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় এমন মন খারাপ মেয়েদের হওয়াই স্বাভাবিক ধরে নিয়েছেন সবাই।

গায়ে হলুদ পর্ব শেষ করে তিস্তা স্নান করে আসলে তিস্তার আত্মীয় স্বজন তিস্তাকে বউয়ের সাজে সাজিয়ে বসিয়ে অপেক্ষা করছে বর আসার জন্যে,  ঠিক তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে!

বৃষ্টি নামার সাথে সাথে বাড়ির ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েরা ওদের উঠোনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে! বাড়ির বড়রা বাচ্চাদের শাসন করতে গেলেও চুপ হয়ে যায়, একটু আমোদ ফুর্তি বিয়ের দিন করাই যায় এটা ভেবে!

তিস্তা তার ঘরে চুপ করে বউ সেজে বসে আছে আর তখন তার ছোটো বোন দৌড়ে আসে তার রুমে! তার হাতে দুটো কদম ফুল! এসেই বলে, দিদি দেখ দেখ ঝড়ে গাছের সব কদম পড়ে গেছে!

তিস্তা বোনের হাতে কদম দেখে দৌড়ে গিয়ে নিজের ঘরের জানালা খুলে! গাছ ভর্তি কদম এসেছে খেয়ালই করা হয় নি তার!

বোনের হাত থেকে কদম দুটো নিয়ে চুপ চাপ বসে আছে তিস্তা! তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে! বাড়ি ঘরদোর সবকিছু কাঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! ভীষণ মনে পড়ছে রানার কথা! প্রতিবার রানা গলির মুখে তাকে নামিয়ে দিতে এসে উঠোনের কদম গাছটা দেখিয়ে বলতো বিয়ের পরে এই গাছটা উঠিয়ে নিয়ে যাবো আমরা! বর্ষায় এমন ঝাঁকে ঝাঁকে কদম ধরা গাছ কলকাতা শহরে আর কোথাও কখনো দেখে নি সে! কদম ফুল দেখলেই বাচ্চাদের মতন খুশি হয়ে যেতো রানা!

তিস্তার খুব ইচ্ছে করছে শেষবারের মতন একবার রানার সাথে কথা বলতে! আর কথা বলেই বা কী হবে? তবুও সে ভাবছে কী করছে রানা এখন? নিশ্চয়ই চুপচাপ বসে জোরে জোরে পা নাচাচ্ছে সে! রানা অস্থির হয়ে গেলে, কষ্ট পেলে কখনো মুখ ফুটে বলে না। চুপচাপ বসে পা নাচাবে। নিশ্চয় অনেক কষ্ট হচ্ছে রানার!! একবারের জন্যে শেষ কথা বলাও হবে না রানার সাথে আর তার! তিস্তার খুব ইচ্ছে করছে আশেপাশে কাউকে জড়িয়ে ধরে বলতে আমি রানার কাছে যাবো! আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!

বিয়ের আয়োজন শেষে নতুন বউকে গাড়িতে উঠিয়ে তিস্তার বর সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে দেখে তিস্তা কাঁদছে! খুব চিৎকার করে তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে একটাবার আমাকে রানার কাছে নিয়ে যাবেন? আমি রানাকে বলতেও পারি নি 'তুমি ভালো থেকো!'

তিস্তার বর চুপচাপ বসে তিস্তার কান্না দেখছে। কী বলে তিস্তাকে সে থামাবে বুঝতেও পারছে না। তবে বাপের বাড়ি ছেড়ে আসার সময় মেয়েরা কাঁদবেই স্বাভাবিক! কিছু বলল না, কাঁদুক কিছুক্ষণ! কিন্তু বেচারা কোনোদিন জানতেও পারবে না এই কান্না প্রেমিক হারানো এক প্রেমিকার কান্না!...

-©উshaস চttopaধ্যায়~----

Sunday 15 August 2021

দেশাত্ম বলিদান!


দেশাত্ম বলিদান:


প্রনব খাবার টেবিলে বসে আছে। তার সামনে টেবিলে রাখা চা ঠান্ডা হচ্ছে সেদিকে সে না তাকিয়ে, তাকিয়ে আছে মিতুর দিকে।

মাস দুইয়েক হয় মিতু আর তার বিয়ের। মিতুর বাবা আর ভাইকে ষোলোই আগস্ট উনিশ'শ ছেচল্লিশ,  দাঙ্গাকারীরা ধরে নিয়ে যায়।

প্রাক স্বাধীনতার সেই আমলে ১৬ থেকে ১৮ই আগস্টের রাতগুলো ছিল বিভীষিকাময়! ইংরেজ আর সোহরাওয়ার্দী মিলিটারিদের চালানো ডাইরেক্ট একশানের তাণ্ডবে কোনো ভাবে প্রনব রক্ষা পায়। এরপর পরেই মিতুর খোঁজে বের হলে জানতে পারে মিতুর বাবা আর ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৬র রাতেই। তারপরেই বহুদিনের প্রেমিকা মিতুকে বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে আসে প্রনব।

মিতু স্থির দৃষ্টিতে প্রনবের দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রনব মিতুকে গত কয়েকদিন ধরেই বোঝাচ্ছে সে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেবে। মিতুর ভয় সে মাকে হারিয়েছে ছোটবেলাতেই। বাবা ও ভাইকেও হারিয়েছে এই ক' দিন আগে! সে জানেও না তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে। তার শেষ অবলম্বন প্রনবকে সে হারাতে চায় না কোনো ভাবেই আর যুদ্ধেতো মেয়েরাও যাচ্ছে, সেই কোন আমল থেকে! তাহলে প্রনব আর সে দুজন মিলেই যুদ্ধে অংশ নিক। কিন্তু সেখানে প্রনবের বাধা।

কারণ সপ্তাহ খানেক আগে সে জেনেছে মিতু মা হবে। আশেপাশে তার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন মারা গেছে ইংরেজ মিলিটারিদের হাতে, দেশে দাঙ্গাও চলছে। প্রবল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, আবার অনেকে যুদ্ধেও যোগ দিচ্ছে, ইংরেজ সরকার এদেশ থেকে যাবে, এটা খালি সময়ের অপেক্ষা। আর এই সময়ে প্রনব চুপ চাপ লুকিয়ে লুকিয়ে, ভয়ে ভয়ে পালিয়ে বেঁচে থাকবে? প্রনব তার সন্তানের জন্যে একটা স্বাধীন দেশ আনবে। স্বাধীন দেশের পতাকা হাতে তার সন্তান আর সে স্বাধীন দেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে।

প্রনব যেন ঠিক যুদ্ধ শেষে ফিরে আসে এই প্রতিজ্ঞায় মিতু প্রনবকে বিদায় জানায়।

একদিন সাতচল্লিশের পনেরোই আগস্ট আসে। যুদ্ধ শেষ হয়। কত শত বিজয় মিছিল হয় শহরের রাস্তায় অলি গলিতে পতাকা হাতে হাতে। কত মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ জয় করে ঘরে ফেরে, শুধু প্রনবের আর ফেরা হয় না।

মিতুর অপেক্ষাও শেষ হয় না! প্রনবের যুদ্ধে যাওয়ার মূল্য ইংরেজ পুলিশ আর দাঙ্গাবাজেরা খুব ভালো করেই আদায় করে নিয়েছে মিতুর থেকে! তাদের বুটের চাপে মিতুর গর্ভের সন্তানটা মরলেও মিতু সাহস করে এখনো বেঁচে আছে প্রনবের হাতদুটো ধরে নালিশ করার জন্যে, বলার জন্যে যে, 'জানো ওরা আমার কোনো আকুতি মিনতি শুনলো না! আমার সন্তানকে আমার গর্ভেই মেরে ফেললো!?'

এক সময়ের টগবগে তরুণী মিতু এখন তিরানব্বই তে পা দিয়েছে, তবু এখনো বুড়ির প্রাণ আছে! এই বৃদ্ধার গল্প আশেপাশের অনেকেই জানে। তবুও যারা জানে না যখন মিতু কে স্বামী, সংসার, সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করে তখন মিতু বলে - স্বামী স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়ে আর ফেরে নি আর আমারতো একটাই সন্তান সবাই যাকে ডাকে "ভারতবর্ষ"!

-©উshaস চttopaধ্যায়~-----

Thursday 12 August 2021

শিশু বা যুবক হিটলার...


 এই শিশুটির দিকে তাকান। এত ভদ্র, সুন্দর, এত নিরীহ। আপনি কি ভাববেন, যে এই শিশুটি বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ, একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠবে। ঠিক আছে, আবার একটু ভাবুন। কারন এটি হিটলারের প্রথম প্রকাশিত ছবি!

হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির একটি ছোট শহরের ব্রানাউ(Braunau) অঞ্চলে, অ্যাডলফাস হিটলার(Adolphus Hitler) নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অ্যালোইস শিকলগ্রুবার(Alois Schicklgruber) নামে জন্মগ্রহণ করলেও, নানা জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে, শেষ পর্যন্ত তার নাম পরিবর্তন করে তার সৎ বাবার নামে নাম রাখেন এবং অ্যালোইস হিটলার হন। অ্যালোইস ছিলেন একজন মধ্য-স্তরের অস্ট্রিয়ান কাস্টমস অফিসার! নগদ ঘুষ বা টাকা-পয়সার দিক থেকে তিনি সেরকম বিশেষ কিছু লাভ করতে সক্ষম ছিলেন তা নয়, তবে অবশ্যই মহিলাদের মধ্যে তার যে সৌখিনতা ছিল, তার পরিচয় মেলে। তিনি একজন ধনী, বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু তারপরেই খুব অল্প বয়সী গৃহকর্মী বা চাকর সম্প্রদায়ের একজনের সাথে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর পরে, তিনি তার অসুস্থ স্ত্রীকে তার উপপত্নীর (গৃহকর্মী) সাথে রেখে কার্যসূত্রে বাইরে যান, কিন্তু যেহেতু ক্যাথলিক চার্চ সেই সময় বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেয়নি, তাই তিনি তাকে বিয়ে করতে পারেননি। তাই তিনি তার বৃদ্ধ স্ত্রীর মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলেন এবং এরই মধ্যে তাদের একটি সন্তানও হয়। তারপরে তার স্ত্রী মারা যান, তাই তিনি তার উপপত্নীকে বিয়ে করেন এবং অন্য একটি সন্তান পান, কিন্তু এরপর তার নতুন স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে, তিনি তার অনেক, অনেক দূরের এবং বয়সে ছোট এক তুতো বোন ক্লারাকে তার যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। তারপর যখন তার নতুন স্ত্রী মারা যান, তখনই তিনি ক্লারাকে, যে কিনা তার তুতো বোন ছিল তাকে গর্ভবতীও করেছিলেন এবং তারপর তার সাথে বিয়েও সম্পন্ন করেছিলেন ...
সেই জন্য, এক কথায় এইদিকে তিনি খেলোয়াড় ছিলেন! ক্লারা এবং অ্যালোইস, তাদের একত্রে তিনটি সন্তান ছিল যারা শৈশবেই দুঃখজনকভাবে মারা গিয়েছিল, তাই যখন চতুর্থ সন্তান অ্যাডলফ এসেছিল, ক্লারা তাকে যথেষ্ট আস্কারা দিয়ে নষ্ট করেছিল। হিটলারদের আরও দুটি বাচ্চা ছিল এবং পরিবারটিকে গ্রেটার জার্মানি তে কয়েকবছর ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল, যার ফলে অ্যাডলফকে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে হয়েছিল।
অ্যাডলফের বাবা ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, দ্রুত রেগে যেতেন। যার ফল ভোগ করত প্রথম পক্ষের সবচেয়ে বড় ছেলে। তার উপর বেশিরভাগটাই ছাপিয়ে পড়ার কারণের ফলে সে ততদিন নিয়ে যায় যতক্ষণ না তার পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি হয়ে যাচ্ছিল এবং শেষপর্যন্ত সে পালিয়ে যায়, চোদ্দ বছর বয়সে! এর ফলে, সাত বছর বয়সী অ্যাডলফকে বেশিরভাগ কাজ, যেমন বাগান পরিস্কার, বাগানের বেড়ার রক্ষনাবেক্ষন, বাড়ির সীমান্ত পরিস্কার ইত্যাদি করতে হত এবং পান থেকে চুন খসলেই তার বাবার বিরক্তির কারণ হতে হত এবং তার দ্বারা উত্তম মধ্যম মার হজম করতে হত। যেটা বিভিন্ন ঐতিহাসিক দের মতে তার কঠিন হৃদয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ! ফলাফলটি এই যে, তার বাবার সাথে তার একটি খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল যেখানে তিনি তার মায়ের সাথে অত্যন্ত কাছের হয়ে বেড়ে উঠেছিলেন এবং তার স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত চিন্তিত ছিলেন তার মা, ক্লারা। প্রথমদিকে হিটলার স্কুলে ভালো উন্নতি করছিল, তার গ্রেড যথেষ্ট ভাল ছিল এবং তার শিক্ষকরা তার প্রশংসা করেছিলেন। তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন এবং যুদ্ধের খেলা খেলতে বা তাদের সাথে একজোট হওয়া বা তাদের একত্রিত করাকে উপভোগ করতেন, একজন পাদ্রি বা বিশপ হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। তিনি পড়তে পছন্দ করতেন এবং বিশেষ করে কাউবয় এবং নানান ফিকশনাল গল্প পড়া তিনি পছন্দ করতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, তিনি সমস্যায় পড়তে শুরু করেন। তিনি একবার ধূমপান করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন স্কুলে শিক্ষকদের হাতে, একটি স্থানীয় আপেল বাগানে অভিযানের আয়োজন করেছিলেন তিনি, ভাবা যায়! এমন কি, তার অস্ট্রিয়াপন্থী ধর্মের শিক্ষককে প্রতীকী অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে জ্বালাতন করে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন যা তার আনুগত্য প্রদর্শনের রাস্তা। এগুলি করে সে বৃহত্তর জার্মান রাষ্ট্রের অধীনে ঐক্যবদ্ধ জার্মানি-অস্ট্রিয়ার জনগণের ধারণা সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।।

এ সবই অ্যাডলফের বাবাকে ক্ষুব্ধ করেছিল, যিনি তাকে কঠোর শাস্তি দিতেন। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যে অঞ্চলে হিটলার বসবাস করতেন তা একসময় জার্মান কনফেডারেশনের অংশ ছিল, তার নাম ছিল বাভেরিয়া। সেখানে বসবাসকারী অনেকেই নিজেদেরকে জার্মান বলে মনে করতেন, তাদের ভাষা, ওঠা-বসা সবেতেই, মানে তারা মনে প্রাণে ছিলেন ও তাই, জার্মান। অ্যাডলফ কে তার বাবা যা যা বলেছিলেন, তিনি তার বিরুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন এবং যেহেতু তার বাবা অস্ট্রিয়ান পাবলিক অফিসিয়াল ছিলেন মানে অস্ট্রিয়ার একজন নিষ্ঠাবান নিবাসী, হিটলার তাই জার্মান জাতীয়তাবাদে ভর করে বড়ো হচ্ছিলেন। এসব কিছু অ্যাডলফের বাবাকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, ফলস্বরূপ উনি তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। এমনও দিন গেছে, যে উনি লোহার রড, বেল্ট ইত্যাদি দিয়ে প্রহার করতে করতে, তার মার গায়ে কয়েক ঘা পড়ে যেত, এর থেকেই তার মনে এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়, যে ভয় আর জোর খাটিয়ে যা খুশি তা করা যায়, যদিও মতান্তর থাকতেও পারে। এই সময় একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি ঘটে। তার ছয় বছর বয়সী ভাই, যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন, অ্যাডলফের ১০ বছর বয়সের সময়, হাম হওয়ার কারণে মারা যায় এবং তাদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই তাকে কবরস্থ করা হয়। এই সময় প্রায়ই প্রতিবেশীরা উঠতি বালকটির আচরণের পরিবর্তনের সম্পর্কে খবর দেয়। অদ্ভুত কিছু আচরণ যেমন, গাছের সাথে কথা বলা এবং কবরস্থানের পাঁচিলে শুয়ে, দাঁড়িয়ে থেকে তারার দিকে তাকিয়ে থাকা, ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের মনে কথা বলে চলা, ইত্যাদি। তিনি ধর্মের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং তার স্কুলের গ্রেড কমতে শুরু করে, যা তার বাবাকে আরো ক্ষুব্ধ করে তোলে, যিনি আবারো তাকে কঠোর শাস্তি দেন।
এর পরে সে সদ্য উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল এবং শহরের মারকুটে ছেলেদের তার সংস্পর্শ খুব একটা ভালো ছিল না। তার সাথে গ্রামীণ চাষাভুষো বলে অপদস্থ করায়, বা বাজে আচরণ করায় তাকে ক'একটি ক্লাসের পুনরাবৃত্তিও করতে হয়েছিল! এতেও তার লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বেশিরভাগ স্কুলের বিষয়গুলিতে তার আগ্রহ ছিল না বরং তার চেয়ে, সে সময় ইতিহাস পড়া এবং ছবি আঁকাতে সে ব্যয় করত যাতে সে বেশ ভাল হয়ে উঠেছিল। এ সম্বন্ধে একটা বিখ্যাত কথা মনে পড়ে, তা হল, একদিন তার বাবা বলেছিলেন যে 'একদিন, তুমি আমার মতো বড় রকমের পাবলিক অফিসার হবে' এবং অ্যাডলফ তাতে উত্তর দিয়েছিল, 'না বাবা, আমি একজন শিল্পী হতে চাই এবং চিন্তা করতে চাই যে আমি ঈগলদের সাথে মেঘের উপরে উড়ে যাচ্ছি'। এতে তার বাবা যথেষ্ট রুষ্ট হয়েছিল। এই সময়ে তিনি যথেষ্ট বৃদ্ধ হয়েছিলেন, ও ফুসফুসের একটি রক্তক্ষরণের কারণে হিটলার তার শেষ সেমিস্টার পাস করার পরপরই বা আগেই, তিনি মারা যান। এটি তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়, প্রায়ই তিনি মাতাল হয়ে রাস্তায় ঘাটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতেন। যাইহোক, তিনি সামগ্রিক ফাইনাল স্কুল পরীক্ষা দেননি বরং শুধু শুধু স্কুল থেকে তিনি বাদ পড়েছিলেন। এখন ১৬ বছর বয়সী ছেলেটি জীবনের অনেক উদ্দেশ্য ছিল, মানে কোনো একটাতে মনোনিবেশ করতে পারত না। এর পরবর্তী তিন বছর বেকার ছিলেন তিনি। তার একমাত্র বন্ধু অগাস্ট কুবিজেকের(August Kubizek) সাথে অপেরাতে, থিয়েটারে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন। আগস্ট কুবিজেক পরে তরুণ হিটলারের স্মৃতিতে লিখেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি আবেগের সাথে অনেক কিছুতে আগ্রহী ছিলেন, অনুভব করেছিলেন যে তিনি তার বয়সের চেয়ে অনেক বিষয়ে ভালো ছিলেন, তার পিতার মতো বদমেজাজি এবং অবিশ্বাস্য বক্তা ছিলেন, যা তিনি বারংবার নিজের চেষ্টায় রপ্ত করছিলেন।
যখন তার বয়স ১৮, তখন সে তার মাকে খুব দুঃখজনক অবস্থায় বিদায় জানাতে বাধ্য হয়েছিল। তখন সে আর্ট স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে ভিয়েনায় গিয়েছিল, যদিও সে ব্যর্থ হয়েছিল। খুব শীঘ্রই তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল কারণ তার মা অসুস্থ ছিলেন এবং তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটছিল। হিটলার ঠায় তার পাশে ছিলেন এবং যখন তাঁর মা শেষ পর্যন্ত মারা যান তখন পারিবারিক ডাক্তার বলেছিলেন যে, তিনি হিটলারের মতো দুঃখ নিয়ে এতটা অভিভূত হতে কাউকে দেখেননি। তারপর হিটলার চারুকলায় নিজের ক্যারিয়ার খুঁজে পাওয়ার আশায় ভিয়েনায় ফিরে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু পিতামাতার সমর্থন ছাড়া তিনি কখনোই কোনো কিছুতেই সফলতা লাভ করতে পারেননি। হিটলার এখন ২০-র দশকের প্রথম দিকে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তিনি গৃহহীন হয়ে অনাথদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতেন এবং ঘরছাড়া হয়ে বাড়ির বাইরে বেশ কিছুদিন, কয়েকটা বছর কাটিয়েছেন। পোস্টকার্ড বিক্রি করে তিনি যা কিছু রোজগার করতে পেরেছিলেন তা তিনি করেছিলেন। হিটলারের চরমতা কখন এবং কীভাবে গড়ে উঠেছিল তা ঠিক ভাবে হয়তো ব্যক্ত করা কঠিন, সময়-অসময়ে নানান মতাদর্শিক বিশ্বাস গড়ে ওঠে, কিন্তু ভিয়েনা সেই সময় অবশ্যই এন্টি-সেমাইটিসম বা ইহুদি বিরোধ একটি বিশেষ ভূমিকা নেয় যা কিনা পালন করতে সবাই অগ্রসর হয়। কোনো সভ্য সমাজের সামনে যদি বহু প্রচলিত কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলন চলে, তবে তা নিশ্চিত হারে ক্ষমতা আসতে চাওয়া কোনো দল যদি চায়, যে সেটাই নিয়ে প্রচার চালাবে, তবে তা ব্যাপক ভাবে প্রসার পায়। শহরে ইহুদি-বিরোধীতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে হিটলার যিনি একজন স্পষ্টভাষী-বিরোধী সমর্থক ছিলেন, তিনি সমর্থন করেছিলেন।
এ সময় অনেক ডানপন্থী এন্টি-সেমিটিক দল ছিল, যাদের কাজ, লিফলেট বিলি বা নিউজলেটারের মাধ্যমে প্রচার হচ্ছিল, হিটলার এইসব ষড়যন্ত্র তথ্যগুলিকে কেনার ব্যাপারে, সংকলনের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ নিয়েছিলেন এবং একই ধারণায় দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছিলেন। অনেকে আছেন, যারা একে অপরের সাথে বিভিন্ন জাতিসত্তার লড়াই এবং ক্রমাগত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান, যা হিটলারের মনোবৃত্তির সাথে খাপ খায়, তা ছিল জার্মান আর্য জনগোষ্ঠী এবং এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যে জনগোষ্ঠী ছিল (হিটলারের মতে) তা হল ইহুদীদের। যেহেতু অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ছিল একটি বহু-জাতিগত সাম্রাজ্য যা কমবেশি প্রচুর জাতি, উপজাতি তে ভরা, তাই হিটলার কখনোই এর অন্ধ ভক্ত ছিল না। তার কাছে প্রধান জাতি হল আরয়ান, আর সবচাইতে শুদ্ধ হল জার্মান আরয়ান।

তাই যখন তার বয়স ২৪, তখন সামরিক সেবা অর্থাৎ মিলিত হয়ে দেশ সেবা করা এড়াতে তিনি জার্মানির মিউনিখে চলে যান এবং আরও একটি বছর পর্যন্ত তিনি রাস্তায় একজন ভবঘুরের মতো দিনযাপন করছিলেন। এরপর তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন আসে, বিশাল একটা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, সমগ্র ইউরোপকে। ১৯১৪ সালে ইউরোপে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরম্ভ হয়েছিল। ইউরোপ জুড়ে জনতা এই খবর উদযাপন করেছে, রীতিমতো ভয়াবহতার সৃষ্টি হয় সবার মধ্যে। কিছুদিনের মধ্যে হিটলার জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য স্বেচ্ছায়, স্বতস্ফূর্ত ভাবে যোগদান  করেছিলেন এবং এটি তাকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য দিয়েছিল। তার সহযোদ্ধারা তাকে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্ব উপহার দিয়েছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্ত্বেও হিটলার এটিকে তার জীবনের সেরা সময় বলে মনে করতেন, পরবর্তীকালে তার আত্মজীবনীতেও তার উল্লেখ করেন। তিনি একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন, খবরাখবর আদানপ্রদানের জন্য তাকে যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হত। যাতে তিনি যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দেন। ভাগ্যও তাকে বেশ ক'কয়েকবার তার সহায়তা করে, খুব অল্পের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি বোমের আঘাত থেকে রক্ষা পান এবং তাকে আয়রন ক্রস, প্রথম শ্রেণীতে অর্থাৎ করপোরাল পদে ভূষিত করা হয়েছিল। তিনি খুবই ভাগ্যবান ছিলেন এবং মৃত্যুর সাথে অনেকবার তার খুব ঘনিষ্ঠ মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯১৬ সালে তার ভালো ভাগ্যের পালা ফুরিয়ে যায়, যখন একটি কামানের গোলা তার পায়ে আঘাত করে। তখন সে শুশ্রুষার জন্য জার্মানিতে ফিরে যায় এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পুনরায় ফিরে আসেন। এসময় কিছুসংখ্যক ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত জার্মান জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের তিনি সম্মুখীন হন। জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সার্থে তিনি ফ্রন্টলাইনে ফিরে আসেন কিন্তু ১৯১৮ সালে ব্রিটিশদের ভয়ানক বিষ গ্যাসের আক্রমণের কারণে সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এক মাস পরে, যখন তিনি হাসপাতালে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় হিটলার জার্মানির পরাজয় এবং আত্মসমর্পণ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। শান্তি চুক্তির শর্তাবলী(Versailles Treaty) জার্মানির জন্য কঠিন ছিল, এতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ প্রদান, যা যুদ্ধ শুরু করার জন্যে তাদের ঘাড়ে বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং প্রচুর সংখ্যক সৈন্য হারাতে হয়েছিল। পরবর্তী পরিস্থিতি জার্মানিকে দুর্বল করে এবং জার্মান জনগণকে ক্রমাগত অপমানিত করে। বলা হয় যে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে ইঙ্গ-ফ্রেন্চ-মার্কিন রা যেখানে যখন খুশি ঢুকে পড়ে যেকোনো জার্মানকে কয়েক ঘা কষাতে পারবে, যাতে জার্মানদের কিছুই বলার বা করার থাকবে না! যুদ্ধের পর ইউরোপের সীমানাও বদল হয় আমূল ভাবে। রাশিয়ার হারানো ভূখণ্ড থেকে নতুন দেশ গঠিত হয়েছিল, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি বিলুপ্ত হয়েছিল এবং সেখানে একটি বড় নতুন দেশ, পোল্যান্ড, জার্মানিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিল। হিটলার, দেশের এই অবস্থা দেখে, তিনি এইভাবে অপমানিত হতেন যে, তার মধ্যে ঘৃণা, ক্ষোভ এবং প্রতিহিংসা জন্মেছিল। যুদ্ধে আত্মসমর্পণের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল অর্থাৎ কমিউনিস্ট এবং ইহুদিরা, যাঁরা বিশ্বাস করতেন যে ভিন্নমতেরও প্রয়োজন আছে ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারের মাধ্যমে জার্মানির পিঠে ছুরিকাঘাত করেছিলেন বলে তার মনে দৃঢ়তার সাথে গেঁথে যায় ...

(চলবে)

©উshaস চttopaধ্যায়~

#দ্বিতীয়_বিশ্বযুদ্ধ #হিটলার #ইহুদি #কমিউনিস্ট  #হলোকাস্ট #জার্মান #পোল্যান্ড #অস্ট্রিয়া #হাঙ্গেরি #প্রথম_বিশ্বযুদ্ধ

Tuesday 10 August 2021

প্রায় এগারো বছর পর!


--- প্রায় এগারো বছর পর


বিথীর জন্য একটা শাড়ি কিনেছি। খয়েরি পাড় দেওয়া বেগুনী রঙের একটা সুতির শাড়ি। ঠিক এগারো বছর পর বোধহয় আমি বিথীর জন্য শাড়ি কিনলাম। না না, শুধু শাড়ি না। আমার মনে হয় এই এগারো বছরে আমি বিথীর জন্য কিছুই কিনিনি। সত্যিইতো, হ্যাঁ সত্যিই, আমি এই এগারো বছরে বিথীর জন্য একটা জিনিসও কিনিনি। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, গয়না, কসমেটিক্স কিছুইতো কিনিনি।

আমার ছেলে আর্যর বয়স এগারো আর মেয়ে শাওনের ছয়। বিয়েটা আমাদের নিজেদের পছন্দেই করা। পরিবারের সম্মতিও ছিলো। প্রায় তের বছর আগের বিয়ে। বিয়ের পর প্রায় বছর দুয়েক আমিই কেনাকাটা করতাম। মাঝে মাঝে বিথী আমার সাথে গিয়ে কিনতো। তখন অল্প মাইনের চাকরি। একটা বাজেট নিয়ে সবকিছু কেনাকাটা করি। বিথীর তখন থেকেই তাঁতের শাড়ি বেশ পছন্দ। সেই সময় খরচ কমাতে অফিস শেষ করে আমি চলে যেতাম দেশপ্রিয় পার্কে। অল্প টাকায় বেশ ভালো ভালো শাড়ি পাওয়া যেত সেখানে। মাঝে মাঝে আমার সাথে বিথী গেলেও বেশির ভাগ শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ আমি নিজে কিনতাম। বিথীই বলতো, আমার পছন্দই তার পছন্দ।

কেনাকাটা যেহেতু আমিই করি তাই বিথীর কিছু লাগলে আমাকে বলতো। আমি চাঁদনী চক, এসপ্ল্যানেড, নিউ মার্কেট ঘুরে এটা-সেটা কিনে আনতাম। চেষ্টা করতাম অল্প খরচের মধ্যে ভালো জিনিস কিনতে। সেই জিনিস পেয়ে বিথী কি যে খুশি হতো। মাঝে মাঝে শনিবার আমি আর বিথী একসাথে গিয়ে এটা সেটা কিনে অনেক রাতে বাড়িতে ফিরতাম। এই কেনাকাটার ওছিলায় আমাদের একটু ঘোরাঘুরিও হতো।

আমার ছেলে আর্য জন্মের পর চাকরিটা পাল্টালাম। ভালো একটা চাকরি পেলাম। চাকরির পাশাপাশি আস্তে আস্তে টুকটাক ব্যবসাপাতি শুরু করলাম। দিন দিন আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। কেনাকাটাগুলোকে আমি কেমন করে জানি দিন দিন এড়িয়ে যাচ্ছি। চাইলেও সংসারের অনেককিছুতে আমার আর সময় দেওয়া হচ্ছে না। বিথীও বিষয়টা খুব স্বাভাবিকভাবে নিল। আমি চাকরি করছি, ব্যবসাপাতি করছি। দিনদিন আর্থিক উন্নতি হচ্ছে, সংসারের উন্নতি হচ্ছে। এই কারণে সংসারের আমার অনেক কাজ বিথী নিজের কাঁধে নিয়েছে। এই নিয়ে বিথীরও কোন অভিযোগ নেই। বিথী খুব ভালো করেই দেখছে আমি দিনদিন কতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাঝে মাঝে বিথী ইচ্ছে করেই সংসারের অনেক ঝামেলার কাজ আমাকে না জানিয়ে সমাধান করছে। সংসার, ছেলেমেয়েদের স্কুল, লেখাপড়া, আত্নীয় স্বজনদের দেওয়া-নেওয়ার সব বিষয়গুলোতে বিথী একটু একটু করে জড়িয়ে গেল। এমন হয়েছে, যে আমার জামা কাপড়ও দেখি বিথী কেনাকাটা করছে। সংসারের কাজ নিয়ে বিথী বেশ ব্যস্ত। আমি কী করলাম, কী কিনলাম এসব নিয়ে তার তেমন কোন অভিযোগ নেই। এতগুলো বছর এভাবে চলে গেল।

শাড়ির প্যাকেটা নিয়ে আমি হাঁটছি। আমি ইচ্ছে করেই আজ হেঁটে বাড়ি ফিরছি। শাড়িটা কেনার পর থেকে আমার ভেতর ভীষণ একটা ভালো লাগা কাজ করছে। এই ভালোলাগাটা এগারো বছর আগে আমি প্রায়ই পেতাম। একটা শাড়ি, জামা বা কিছু একটা কিনে কি এক আগ্রহ আর উদগ্রীবতা নিয়ে বাড়ি ফিরতাম তা আজ খুব মনে পড়ছে। মনে মনে ভাবতাম এই জিনিস কি বিথী পছন্দ করবে? বিথী কি খুশি হবে? আরো কত কত চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়িতে ফিরতাম।

যখন দেখতাম বিথীর খুব পছন্দ হয়েছে তখন কি যে ভালো লাগতো। সেই সুখ বা অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। অথচ আমি এই এগারো বছর বিথীর জন্য একটা জিনিসও কিনিনি। আচ্ছা এই এগারো বছরে বিথী কি এই সুখগুলো ভুলে গেল। বিথীর কি একটিবারও অভিমান হয়নি? একটিবার আমার কাছ থেকে একটা শাড়ি, একটা জামা বা একটা উপহার আশা করেনি? প্রতীক্ষায় থাকেনি সে?

আমি ভাবছি আর বাড়ির দিকে হাঁটছি। আমি জানি এখন আমাদের আর্থিক কোন অভাব নেই। চাইলেই অনেককিছু কেনা যায়। পাওয়া যায়। তাই বলে আমরা আমাদের সেই সুখ ভুলে গেলাম!

শাড়িটা নিয়ে বাড়ি ঢুকলাম রাত দশটায়। অন্যদিন হয়তো আরো রাত করে বাড়িতে ফেরা হয়। আজ একটু তাড়াতাড়ি। শাড়ির প্যাকেট বিথী খেয়াল করেনি। প্রত্যেক দিনইতো কাগজ পত্রের কত প্যাকেট নিয়ে বাড়িতে ঢুকি। এই নিয়ে বিথীর কোন আগ্রহ দেখায় ও না, থাকেও না। শোবার ঘরে এক কোণায় প্যাকেটটা রেখে দিলাম। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করেছি। ছেলে মেয়েরাও ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আর বিথী নিজেদের রুমে এটা ওটা নিয়ে গল্প করছি।

সত্যি, হ্যাঁ সত্যি আমার কেন জানিনা লজ্জা লাগছে বিথীকে শাড়ির প্যাকেটটা দিতে। এই লজ্জা আমাকে ভয়ানক শংকা আর অপরাধবোধের মাঝে ফেলে দিল। যে আমি, একটা সময় একটি কানের দুল কিনে উদগ্রীব থাকতাম কখন বাড়ি ফিরে বিথীর হাতে দেবো, কখন বিথীর খুশি খুশি মুখটা দেখবো, এখন সেই আমি কিনা লজ্জা বা দ্বিধায় ইতস্ততঃ বোধ করছি!

শেষ পর্যন্ত বিথীর হাতে আমি প্যাকেটটা দিলাম। বিথী খুব অবাক হয়ে শাড়ির প্যাকেটটা আমার হাত থেকে নিয়েছে। প্যাকেট খুলে শাড়িটার দিকে কতক্ষণ সে তাকিয়ে ছিলো আমি জানিনা, তবে অনেকক্ষণ।

বিথীর চোখ দুটি জলেতে টলমল করছে। একসময় আমার দিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। আমি বুঝলাম বিথী কাঁদছে। আমি বিথীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বিথী আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো। আমি বিথীকে শক্ত করে ধরে আছি। হঠাৎ বিথী হাউমাউ করে বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠলো। হ্যাঁ, বিথী হাউমাউ করে কাঁদছে। এমন করে বিথীকে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি। না কোন অভিযোগ করে বিথী কাঁদছে না। বিথী কাঁদছে স্বল্প দামের সামান্য একটা শাড়ি বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে। কী এক মমতা আর ভালোবাসা নিয়ে বুকের কাছে জড়িয়ে রেখেছে শাড়িটা। আমি ইচ্ছে করেই জানতে চাইলাম কী হয়েছে বিথী?

বিথী কান্নার মধ্যেও হাসতে হাসতে বললো, কিছু না।

বিথীর যে শাড়ি, গয়না বা অন্যান্য জিনিস কম আছে তা কিন্তু না। এখন অনেককিছুই বেশি বেশি আছে। আলমারি ভর্তি করা জামা কাপড়। থরে থরে সাজানো আলমারি। সেই আলমারির একটা জায়গায় পরম মমতা আর যত্ন নিয়ে এগারো বছর আগের শাড়িগুলোও আছে। আমি জানিনা বিথীর কতটা আবেগ বা মমতা এখানে লুকিয়ে আছে।

বিথী আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে এখনো। আমি বুঝতে পারি। বুঝতে পারি বলেই অনেকক্ষণ চুপ করে থাকি। আমাদের এতদিনের সংসারে একটু-আধটু মান অভিমান ছিলো না যে তা নয় কিন্তু সংসারে অশান্তি, অবিশ্বাস বা কঠিন কোন সময় আমরা নিজেদের নিয়ে পার করিনি। তারপরও কেমন করে, কি করে, সময়ের প্রয়োজনে আমরা কিছু সুখ আর সময় থেকে সরে গিয়েছি। আমি ভাবছি আর খুব খুব অবাক হচ্ছি।

বিথী দুচোখ ভরা জল নিয়ে হাসতে হাসতে বললো, জানো আমি এত সুখ বোধহয় অনেকদিন পাইনি। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি আমার জন্য কিছু একটা আনতে পারো, শুধু আমার জন্য আলাদা করে কিছু কিনতে পারো। আমার ভীষণ মনে পড়ে গেল আমাদের সেই দিনগুলির কথা। জীবনের প্রয়োজনে আমরা দিন দিন কতটা পাল্টে নিয়েছি।

বিথীর সাথে আমিও হাসছি। বুকের ভেতর পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে হাসছি। প্রিয় মানুষগুলো চাইলেই নিজেদের কত চাওয়া পাওয়ার সুখগুলো সহজে এড়িয়ে যায়। এটা ভীষণ অন্যায়। হয়তো প্রিয় মানুষ বলে, আস্থার মানুষ বলে, নির্ভরতার মানুষ বলে আমরা নিজেদের বঞ্চিত করি, তাদের বঞ্চিত করি। নিজেদের সুখগুলোকে অবহেলা করি। এটা যে ভীষণ অন্যায়। অজস্র ব্যস্ততা, জীবন সংগ্রাম আর টানাপোড়নের মাঝেও কিছু প্রিয় মানুষের সুখ যত্ন করে রাখাটা ভীষণ জরুরী...


-©উshaস চttopaধ্যায়~-----

Friday 6 August 2021

হিটলার ও ইন্ডিয়া!


ভারতের সাথে হিটলারের সম্পর্ক কি ছিল?

গোটা বিশ্ব হিটলারকে ঘৃণা করে, কিন্তু ভারতের কি একই অবস্থা? একজন নাৎসি স্বৈরশাসক যার সঙ্গে একসময় ভারতের নেতা-মন্ত্রীরা অবধি জড়িত ছিলেন! আমার রিসার্চের টপিক হিসাবে যা কিছু মন্তব্য করবার, আমি সেটাকে আত্মস্থ করব! তবু ভারতের জনপ্রিয় সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে, হিটলার অনমনীয়তার সমার্থক। মানুষ প্রায়ই তাদের বস বা কঠোর শিক্ষককে হিটলার বলে উল্লেখ করে থাকে।
সুতরাং, এই লোকটির সাথে ভারতের সম্পর্ক ঠিক কী ছিল তা নিয়ে আমার একটি বিশেষ প্রতিবেদন, আসুন একসাথে খুঁজে বার করি..

আউশভিটজ (Auschwitz) সম্পর্কে ভারত অনেকটা অজ্ঞ ছিল, হলোকাস্ট বা এই ধরনের ঘটনা, যার জন্যে দোষারোপ করা থেকে বিরত ছিল কারণ শারীরিক বা মানসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
অথবা বলা যায় যে ভারতের জন্য সার্বিক না হওয়ার কারণ হল এই যে, হলোকাস্টের গল্পগুলি ছিল অনেক দূরে একটি দেশ থেকে আসা গল্পের মতো। ১৯৪০ -এর দশকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ রাজের অধীনে ভারতের চূড়ান্ত কয়েক বছর ছিল, ভারত একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার ইচ্ছাতে পরিবর্তন আনতে চাইছিল, তার জন্য যে কোনো শৃঙ্খল কে ভাঙতে চাইছিল সমগ্র দেশবাসী বা ছোট বড় নেতারা।

ভারতীয় জনসাধারণের কাছে তখন হিটলারের ভাবনা ছিল, একজন 'নো-ননসেন্স ম্যান' বা এককথায় খাঁটি মানুষ! এমন একজন, যিনি দৃশ্যত জার্মানিকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লড়াই করছিলেন। ভারত এবং হিটলারের উভয়েরই তখন একটি সাধারণ শত্রু ছিল, যা হল ব্রিটেন। এটি একটি তাৎক্ষণিক সংযোগ ছিল বলে মনে হয়!
হিটলার ভারতের শক্তি, সামর্থ্য কে স্বীকার করেছেন, কিন্তু তার নিজস্ব পদ্ধতিতে। তার জন্য ভারত ছিল এই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী ভূমি এবং ব্রিটেনের ভারত শাসন ছিল, একটি শাসনের পাঠ্যপুস্তক স্বরূপ  উদাহরণ। ঠিক একভাবেই তিনি রাশিয়াকে শাসন করতে চেয়েছিলেন, হিটলার প্রায়ই তার লোকদের ভারতের থেকে শিক্ষা নিতে বলতেন, কেস হিস্ট্রি হিসেবে। এ সম্বন্ধে তার একটি উক্তি যা ১৭ই অক্টোবর ১৯৪১ সালে দেন যা হল,"The basic reason for English pride is India, 400 years ago the English didn't have this pride", অর্থাৎ এই উদ্ধৃতাংশ থেকেই পরিষ্কার যে, 'ইংরেজি গর্বের মূল কারণ হল ভারতবর্ষ, যা ৪০০ বছর আগে ইংরেজদের এই অহংকার ছিল না'। সেই বছরের শুরুর দিকে, হিটলার বলেছিলেন যে ব্রিটেন খুব ভালো করেই জানে, এটার, মানে ভারতের অস্তিত্বের উপর, তাদের সাম্রাজ্য নির্ভর করে। হিটলারের জন্য ভারত ছিল ব্রিটেনের 'অ্যাকিলিসের হিল'। ১৯৪২ সালে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিতর্কিত সবচেয়ে প্রিয় নেতার সাথে দেখা করেন, ভারতীয় প্রথম জাতীয় সেনাবাহিনীর নেতা, সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে, এটি ছিল ২৭শে মে। বোস বিপ্লবের স্বার্থে, হিটলারের সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতে, তার কর্মপরিকল্পনায় একটি অভ্যুত্থান সহ উপনিবেশিক শক্তি কে বিভ্রান্ত করা! এটি তার নিজের দেশেরই অন্তর্ভূক্ত করা এক অন্তবর্তী ঝামেলায় ফাঁসানো স্বরূপ, তাই জন্য এটি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীকে আরো দুর্বল কর তুলবে। বোসের হিসাব অনুযায়ী, জার্মানি সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দখল করবে কারণ ব্রিটেনকে পরাজিত করবে এবং এর ডমিনো প্রভাব ভারতকেও মুক্ত করবে। হিটলার অবশ্য অস্বীকার করেছিলেন বোসকে সাহায্য করার জন্য। ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে এর একটি কারণ ছিল বোস, নাৎসি নেতাকে 'মেইন ক্যম্পফ' বা তার নিজের জীবনীর থেকে কয়েকটি প্যাসেজ কেটে দিতে বলেছিলেন, যা উনি ভালো ভাবে নেননি। তার জবাবে হিটলার লিখেছিলেন কিভাবে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারতের জন্য ভাল হবে। বোসের এর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
জার্মানরা অবশ্য জাপানে পালাতে বোসকে সাহায্য করেছিল। হিটলার সে বছর পরে যা বলেছিলেন তা হল, "in a book on India which I read recently it was said that India educated the British and gave them their feeling of superiority the lesson begins in the street itself" যার অর্থ, 'ভারত সম্পর্কে একটি বইয়ে যা আমি সম্প্রতি পড়েছি তাতে বলা হয়েছিল যে ভারত ব্রিটিশদের শিক্ষিত করেছে এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে।'
মহাত্মা গান্ধীও হিটলারকে চিঠি লেখেন যখন তিনি ১৯৩৯শে চেকোস্লোভাকিয়া দখল করেন। গান্ধী লিখেছিলেন তিনি মানবতার জন্য, যা কিছু মূল্যবান হতে পারে তার জন্য আবেদন করছেন। ইতিহাস এটার স্বাক্ষ্য বহন করছে যে হিটলার, ভারতীয় হকি কিংবদন্তি, মেজর ধ্যান চাঁদের ভক্ত ছিলেন। ১৯৩৬ সালের অলিম্পিকে ভারতের কাছে জার্মানি হেরেছিল।
হিটলার ধ্যানচাঁদের কাছে পৌঁছান, এমনকি তাকে জার্মান সেনাবাহিনীতে পদ দেওয়ারও প্রস্তাব দেন, যা পরবর্তী কালে মেজর প্রত্যাখ্যান করেন।
হলোকাস্টের সময়ে কয়েক বছর, ভারতের সাথে নাৎসি নেতা, হিটলারের সাথে যোগাযোগের সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ দেশের সিঙ্গেল পয়েন্ট দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছিল, যে কিনা আমাদের খুব নিজস্ব, নেতাজি, সুভাষ চন্দ্র বসু!

ইদানিং, এই ধরনের মডার্ন ইতিহাস সম্পর্কে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যদি পাঠকদের আপত্তি না থাকে বা মতামত পাই, তবে পরবর্তী সংখ্যা খুব শীঘ্রই আসবে! 🙏🏼

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

Tuesday 3 August 2021

ভরসার ডিঙি ...


ভরসার ডিঙি:


বাইরে বাজ পড়ছে, বিকেল থেকেই আবহাওয়ার ঠিক নেই! এমনিতে বৃষ্টি ভালোবাসে মালতি, কিন্তু আজ সুজন আসবে বলেছিল না!

মালতি এমনি দেখতে সুন্দর, গায়ের রঙটি যদি পরিস্কার হতো, তবে হালকা আদল পাওয়া যেত আলিয়া ভট্টের সাথে! তা সে সন্ধ্যা বেলা গা টা ধুয়ে আলমারি থেকে সেই নীল রঙের শাড়ি, যেটা আগের বারে সুজন এনেছিল, জিয়াগঞ্জ এর হাট থেকে, সেটা পড়ল, তার সাথে পিঠে দড়ি বাঁধা ডিজাইন করা ব্লাউজ! আয়না দেখে চুল টুল আঁচড়ে নিচ্ছিল সে, এখন ঠোঁটের লালির দিকে নজর দিল। লাল লিপস্টিক ছাড়া তার আবার ভালো লাগে না কিছুই! রেডিওতে গান ভেসে আসছিল, "সাজনা হ্যা মুঝে, সাজনা কে লিয়ে..." শুনে, সে সাউন্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে দিল।
মোটামুটি সে রেডি, ফাইনাল টাচআপ দিতে সে ব্যস্ত ..

এমন সময়, দরজার কড়া নাড়ার শব্দ, সাথে চাপা গলায় সুজন বলছে যে, "আরে খোল না, বেকার দেরী কর কেন, আর যে সবুর সয় না, ভিজে যাচ্ছি যে"... বলে ক্রমাগত কড়া নাড়িয়েই চলেছে!

বেশ কিছুক্ষণ পর মালতি গিয়ে দরজার খিল টা খুলে দিল, খুলে ও নিজে চলে এসে আসে আয়নায় নিজের অবয়ব টা দেখতে...

এতক্ষণে সুজনও ঘরে ঢুকে হাতের লন্ঠন টা রেখে জামাটামা খুলছে।
মালতি খাটে বসে পানের ডাবাটা নিয়ে একটা পান সাজলো, সুজন এতক্ষণে খাটে বসে ওর দিকে তাকাচ্ছে দেখে ওকে জিজ্ঞেস করল যে ওর জন্য সাজাবে কিনা!

শুনে সুজন ওকে টেনে নিল নিজের খুব কাছে, কানের কাছে মুখটা ঘষতে ঘষতে বলল, যে সে পান খেতে আসেনি, সে এসেছে অন্য কিছু খেতে, আর সেটা সে নিজেই খুঁজে নেবে...
দুজনেই একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে ভালবাসায় গড়িয়ে গেল, সুজন ধীরে ধীরে মালতির পিঠের ডিজাইনার দড়ি খুলে তার গলায় একটা গভীর চুম্বন করে, সাথে সাথে মালতি নিজের শরীর পুরো উজাড় করে দিল সুজনের কাছে, দুজনের মিলনে যেন কোথাও কোনো ত্রুটি নেই। সুজন ও মালতি সেই রাতে খুব নিবিড় এক ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকল! বর্ষা ও তেমন হলো সেই রাতে, যেন প্রকৃতি দু হাত পা ছড়িয়ে কেঁদেই চলেছে, সে কি বৃষ্টি।

এদিকে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী ভোর হয়েছে, আবার কাজে ফেরার তাড়া। সুজন স্বভাব মতো নিজের লন্ঠন হাতে তুলে রওনা দিল নিজের ডিঙি টার উদ্দেশ্যে! বাঙলার শস্য শ্যামলা ঝোপঝাড় পেরিয়ে যখন সে ঘাটটার কাছে এল, এসে দেখে যে তার ডিঙি টা নেই, নদীতে জোয়ার এসেছে, তাহলে কি জলের তোড়ে ভেসে গেছে তার ডিঙি খানা! মাথায় বাজ ভেঙে পড়লে তার, একটা মাঝির জীবনে, ডিঙি নৌকা যে কত গুরুত্ব রাখে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাতের বৃষ্টি তে নদী তে জলের পরিমান বেড়ে যায়, এমনিতেই স্রোতের টানে ভেসে কোথায় যে গেছে কেউ জানে না!

কাল রাতে তো এই ঘাটেই বেঁধে রেখেছিল, পাশাপাশি এই ঘাট সে ঘাট তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও পেল না। পাগলের মতো লাগছে সুজনের, খুঁজতে গিয়ে পথে দেখা হলো বন্ধু পরানের সাথে! তার কাছে কেঁদে নালিশ করল আর নিজের ভাগ্য কে দুষল! আরো বলল যে যদি কোনো জাগায় খোঁজ পায় তালে যেন জানায়। 
অবশেষে, এদিক সেদিক খুঁজে, আর চোখে না দেখতে পেয়ে মনের দুঃখে বাড়ির দিকে ফিরে এলো! মন-মেজাজ তার একদম ভালো নেই, বাড়ির দাওয়ায় বউ সুমনা মনমরা হয়ে বসে রয়েছে, তার সামনে একটা আঁশবোটি খুলে রাখা রয়েছে! তার কাছে গিয়ে মনের দুঃখের কথাটি বলা, যে সব ভেসে গেছে জোয়ারে।

সুমনা কেমন ভারি মুখে বলে, "সব তো শেষ হয়েই গেছে, আমার ভরসার ডিঙি টাও স্রোতের টানে চলে গেছে, তাহলে আর কি মুখে ফেরা বাড়ির দিকে!"

কথাটা শুনে সুজনের মাথায় রাগ চেপে বসল, সে এক লাথি মেরে ঐ বোঁটি টা ফেলে দিল! খুব রাগারাগি করল সে, হটাৎ সুমনার ওপর চেঁচামেচি করতে করতে তার নজর গেল বাড়ির পিছনের ঘাটের দিকে, নজর যেতেই তার স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ডিঙি টার নজরে আসে! হটাৎ করে সে যেন লাফিয়ে ওঠে, তার হারানো ডিঙি, যা কিনা এতক্ষণ ধরে খুঁজে পাচ্ছিল না, সে কিনা ভেসে নিজের ঠিকানায় চলে এসেছে। কি আনন্দ যে হচ্ছিল তখন, বলে বোঝানো যাবে না! সে ছুটে চলে যায় তার ডিঙির কাছে, সেখানে গিয়ে দেখে, যে তার ডিঙি টা বাঁধা আছে একটা খুঁটিতে, আর খুঁটিতে বাঁধা একটা সুমনার শাড়ি দিয়ে!...

কি করে সম্ভব, তালে কি বউ সব জেনে গেছে, সব জেনে শুনে...
এক বিশাল অপরাধের বোঝা যেন সুজনের বুকে চেপে বসেছে, নিশ্চয়ই ও তার আর মালতির কথা যেনে ফেলেছে, ওই দিকে সুমনার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্নার শব্দ, সুজনের বুঝতে আর বাকি রাখে না!... 

কানে একটাই কথা আসে, "তুমি আমারে ঠকালে মাঝি, আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিলা..."


©উshaস চttopaধ্যায়~

Sunday 1 August 2021

মোটকু বন্ধু (হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে)


 ---মোটকু বন্ধু:-


আমাদের মোটকু। ক্লাস এইটের বি সেকশন। আমরা তো তাকে সেই মোটকু নামেই ডাকি, ভালো নাম সৌনক পাল। মোটকু আমাদের স্কুলের ফুটবল টিমের গোল কিপার। ভোলানন্দ হাই স্কুলের সাথে ফাইনাল ম্যাচ। সেই ম্যাচে মোটকু পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিল। মোটকুর জন্য জিতে গেলাম আমরা। ম্যাচ শেষে আমরা সবাই মোটকু কে কাঁধে নিয়ে মিছিল করলাম। লম্বু বান্টি, খুশি হয়ে তার ক্যাসিও ঘড়ি টা মোটকুর হাতে পরিয়ে দিয়ে বলল, এই ঘড়ি তোর কাছে তিন দিন রাখিস। আমি খুশি হয়ে রাখতে দিলাম।

মোটকু খুশি হয়ে বান্টি কে জড়িয়ে ধরল। মোটকুর খুব শখ ছিল এই ঘড়ি পরার।

আমরা তাকে মোটকু নামেই ডাকি, সে রাগও করে না। মোটকু, মোটকু এবং মোটকু।

স্কুলের পিকনিকে মুরগি, ডিম, আর খাসি রান্না হলো। ইমন খাসির মাংস টা মোটকুর প্লেটে দিয়ে বলল, আমি এতো খেতে পারব না। তুই খা।

শৌর্য তার ডিমটা দিয়ে দিল মোটকুর প্লেটে। মোটকু খুশি হয়ে সব খাচ্ছে। বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে। আমরা সবাই দেখছি আর হাসছি। মোটকুও হাসে। মোটকু হাসলে তার মুখের ভেতর ডিমের হলুদ কুসুম দেখা যায়।

আমরা তাকে মোটকু নামে ডাকি। সত্যি সত্যি আমরা তাকে মোটকু নামে ডাকি। আমাদের কোনো আয়োজন মোটকু ছাড়া অসম্ভব ! মোটকু থাকতেই হবে। সেই মোটকুর একদিন জ্বর হলো। খুব জ্বর। একদিন, দুই দিন, তিন দিন। মোটকু তো স্কুলে আসে না। খবর আসল মোটকুর বেশ খারাপ জ্বর হয়েছে।

খবর শুনে আমাদের ভীষণ মন খারাপ। নিজেদের জমানো টাকা থেকে সবাই চাঁদা দিয়ে আধ কেজি আঙ্গুর কেনা হলো। সেই আঙ্গুর নিয়ে আমরা পনের জন দল বেঁধে গেলাম মোটকুর বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকতেই মোটকুর বাবার সাথে দেখা, বলে কি ব্যাপার! অয়ন সামাল দিয়ে বলল, আমরা মোটকুর কাছে এসেছি। মোটকু আমাদের বন্ধু।

মোটকুর বাবা একটা হাসি দিয়ে বলল, যাও ভেতরে যাও।

আমরা তো তাকে মোটকু নামেই চিনি। ও আমাদের মোটকু। মোটকু কে এমন করে শুয়ে থাকতে দেখে আমাদের খুব কষ্ট হলো। মনিশ লুকিয়ে কাঁদল। ক্লাসে মনিশ মোটকুর পাশেই বসে।

হ্যাঁ আমরা তাকে মোটকু নামে ডাকি।

আমাদের মোটকু ডাক শুনে সে এতটুকু কষ্ট পেত না কারণ মোটকু জানত আমরা তাকে কতটা ভালোবাসি। আমাদের যে কোনো আয়োজনে মোটকু কে সবার আগে ডাকি । মোটকু ছাড়া আয়োজন অসম্ভব। আমাদের খেলাধুলা, আড্ডা, লুকিয়ে সিনেমা দেখা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া সব কিছুতে মোটকু কে আমরা সবার আগে রাখতাম। আমরা এমন করে ভালোবাসতাম বলেই মোটকু কখনো আমাদের উপর অভিমান করে থাকতে পারত না।

ঠিক এতো বছর পর এসে কেন জানিনা এই মোটকুর কথা খুব মনে পড়ছে। অনেকদিন দেখা হয় না। অনেক দিন। এবার বাড়ি গেলে মোটকু কে জড়িয়ে ধরে রাখব অনেকক্ষণ। যেমন করে জড়িয়ে ধরেছিলাম ভোলানন্দ হাই স্কুলের সাথে ম্যাচ জেতার পর।

আমি জানি না নিজের ভেতর এমন করে এতো অস্থিরতা কেমন করে জমা হচ্ছে। কিছু ঘটনা, কিছু নির্মমতা, কিছু দৃশ্য দেখে আমার ভেতর পুষে রাখা গল্প গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে।

মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বন্ধন টা যখন শক্ত হয়ে পড়ে তখন অন্য সব ম্লান হয়ে যায়। আমাদের ক্লাস এইটের সৌনক পাল মানে মোটকুর প্রতি আমাদের ভালোবাসা, মায়া এবং বন্ধুত্ব টা এতো বেশি দৃঢ় ছিল যে তাকে মজা করে ডাকা মোটকু নামটা খুব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল সবার কাছে। মোটকুর কাছেও।

আরে আমাদের ক্লাসে শুধু মোটকু না। ছিল কালা রবি, চিকনা কৌশিক, লম্বু বান্টি, বাইট্যা সোমনাথ সহ অনেকে, আমার নাম ছিল, 'ম্যাও', সে আবার পরে বলা যাবে একদিন ক্ষন। আমরা সত্যি সত্যি এই নামেই বন্ধুদের ডাকতাম। তারা কখনো রাগ করত না। রাগ করত না কারণ আমরা সবাই ছিলাম বন্ধু। আমরা বন্ধুরা সবাই জানতাম একজন আরেকজন কে কেমন ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই আমাদের সম্পর্কের মধ্যে নামের চেয়ে টান টা বেশি বড় হয়ে উঠেছিল।

অথচ সমসাময়িক কিছু নির্মমতা নিজের সেই সময়গুলো কে একটা দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে।

প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, গেমসে আসক্তি, এ প্লাস বা আরো বেটার নম্বর প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা এই সবকিছু কেমন করে যেন স্কুলের বন্ধু-বান্ধব দের সম্পর্ক গুলোকে খুব ঠুনকো করে দিয়েছে। সারাদিন লেখাপড়া আর প্রযুক্তি নির্ভর এটা সেটা নিয়ে সময় কাটাতে কাটাতে ছেলেমেয়েদের খুব কাছের বন্ধু হয়ে ওঠার মানুষ যেন খুঁজে পাওয়া কঠিন। এখন বন্ধুত্বের চেয়ে প্রতিযোগিতা বেশি। সেই প্রতিযোগিতায় লম্বু, মোটকু, চিকনা কেউ কারো বন্ধু হয়ে উঠে না। হয়ে ওঠে শত্রু। লম্বু বলে যে বন্ধুটা জড়িয়ে ধরতে পারে না, সেই বন্ধুর লম্বু ডাক অবশ্যই বিষাদ লাগে, লাগা উচিতও। আপন যে মানুষ হতে পারে না, সেই মানুষ কখনও এমন করে ডাকার অধিকার পেতে পারে না।

প্রতিযোগিতা আমাদের বন্ধুত্বের চেয়ে শত্রু হতে শেখাচ্ছে বেশি। এই প্রতিযোগিতা কারণে সময়ের অভাবে আমাদের একসাথে খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি, আড্ডা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। দুরে সরিয়ে নিয়েছে মানবিক গুণাবলী, নৈতিকতা এবং মমত্ব বোধ...



-©উshaস চttopaধ্যায়~-----