Thursday, 30 September 2021
১৯৩৩ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
১৯৩৩, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!
#চতুর্থ_এপিসোড #৪থ_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৪থ_ভাগ
এখন আসে ১৯৩৩ সাল, ১ লা জানুয়ারী তে জার্মান সংবাদপত্র (Frankfurter Zeitung) ফ্রাঙ্কফুর্টার জেইটুং ঘোষণা করেছিল যে,- The mighty nazi assault on the democratic state has been repulsed অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী নাৎসি আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে এবং (Vosicha Zaitong)ভোসিচা জাইতং ঘোষণা করে যে,- The republic has been rescued! মানে প্রজাতন্ত্র কে উদ্ধার করা হয়েছে! আর মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসাবে বসানো হবে ...
এটি কোন দুর্ঘটনা নয়। আমি মনে করি ১৯৩৩ সালে যখন ওয়েইমার প্রজাতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছিল তখন এটি তাদের একটি ছোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। রক্ষণশীল অভিজাতরা, যারা ভেবেছিলেন এখানে তাদের সুযোগে হিটলারকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে, তারা তাকে হেরফের করা থেকে সাহায্য করতে পারে এবং তাদের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে যা তারা কোনভাবে ১৯১৯ সালে হারিয়েছিল।
অন্যদিকে, ১৯৩৩ সালের শুরুতেই হিটলার 'মেইন ক্যাম্পফ' থেকে রয়্যালটি বাবদ এবং সমর্থকদের কাছ থেকে উপহারগুলির মাধ্যমে যে জীবন অতিবাহিত করছিলেন, তা ছিল বেশ আরামদায়ক। প্রকৃতপক্ষে একজন কোটিপতির মতো, যা ছিল ইতিমধ্যে তার সমকালীন জার্মান জনগনের তুলনায় কল্পনার অতীত।
তার বাড়ি মিউনিখের একটি ফ্যাশনেবল অংশে একটি বড় অ্যাপার্টমেন্টে ছিল, তার পরিবহন ছিল চালকচালিত মার্সিডিজ লিমোজিন, তিনি নিজে কখনো গাড়ি চালানো শেখেননি। পার্টির সদর দপ্তর ছিল আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় প্রাসাদসম। ১৯৩০ সালের কর্মী ৫৬ জনের থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭৫ জন। তিনি দুপুরের আগে খুব কমই বিছানা থেকে বেরোতেন এবং বাভারিয়ান আল্পসে কেনা শ্যালে বা কাঠের তৈরি অট্টালিকা তে প্রায়শই ছুটি কাটাতেন। তাই তার জন্য জীবন অনেকের মত একেবারেই নয়,
তার সহকর্মী জার্মানদের মতোন তো কোনোভাবেই নয়। কেউ দাবিও করতে পারেনা যে তারও জীবন খারাপ চলছিল ঐ সময়ে, এবং তারপর এক সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায়, জানুয়ারী ৩০, ১৯৩৩ সালের পর থেকে এটি আরও ভালোতে পরিণত হয়ে গেল!
রাষ্ট্রপতি পল ভন হিন্ডেনবার্গ তাকে চ্যান্সেলর পদে বসানোর জন্য শপথ গ্রহণ করান। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের আশেপাশের লোকেরা অনুভব করেছিল যে তারা হিটলার ব্যবহার করতে পারে এবং
নাজিদের সমর্থন ব্যবহার করে যে কোনো কার্যসিদ্ধ করবে। ওরা ভেবেছিল যে তারা তাদের ব্যবহার করে একটি রক্ষণশীল কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং তারপর তারা তাদের থেকে মুক্তি পাবে। অবশ্যই তারা যে মারাত্মক ভুলটা করেছে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি, হিটলার ঠিক একই জিনিস ভাবছেন এবং তিনি তাদের থেকে পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছেন। আমি মনে করি হিটলারের মতো মানুষের সাথে সাধারন মানুষের ভুলের অনেক হিসেব-নিকেশ আছে, যাকে বলে 'হিউম্যান এরর'। হিটলার দীর্ঘদিন ধরে যা ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছিলেন তা বহাল রাখার শপথ করেছিলেন প্রজাতন্ত্রের আইন এবং সংবিধান মেনেই। এদিকে সাপ্তাহিক নিউজ রিল যা প্রপোগান্ডা ছড়াতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিল, তা সারা জার্মানি জুড়ে দেখানো হয়, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছয়টি গল্প নিয়ে তা গঠিত। সেখানে একটি স্কি জাম্প, ঘোড়দৌড় এবং একটি ঘোড়া শো তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যাডলফ হিটলারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটির ষষ্ঠ এবং চূড়ান্ত বিষয় ছিল ঐ রিলের।
এমন টা তখন জার্মানি তে প্রচার করা হয় যে, 'জার্মান জাতীয় আন্দোলনের নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর করা হয় এবং বার্লিন তার বিজয়ের উদযাপনে বন্য হয়ে যায়। বার্লিন নাইটদের মতো টর্চলাইটের(মশাল) কুচকাওয়াজ, সমর্থকরা রাস্তায় এবং ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের মধ্য দিয়ে মিছিল করে তাঁর বিজয়কে স্মরণ ও উদযাপিত করে,' ইত্যাদি!
হিটলারের নিয়োগ কোন অলৌকিক ঘটনা ছিল না, যদিও এটি নিজের সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করেছিল, তিনি নিজের নিয়তির সাথে আপসহীন, একজন অপ্রতিরোধ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন।
কিছুই না, এটা একটা জরাজীর্ণ, লজ্জাজনক, ব্লান্ডারে পরিণত হয়েছিল! ওয়েইমার সংবিধানে চ্যান্সেলরের পদ মন্ত্রিসভা চেয়ারম্যানের চেয়ে একটু বেশি ছিল এবং সরকারী সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার ভোটে নিতে হতো। এত চতুরতার সাথে তারা সব গোছগাছ করেছিল, যেভাবে তারা ভেবেছিলেন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং তার উপদেষ্টারা হিটলারকে রাজি করেছেন যে নাৎসিজম কেবিনেটকে মাত্র তিনটিতে সীমাবদ্ধ করতে এবং ভন পাপেনকে তার ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ করতে। এর মানে হল যে পাপেন সবসময় মন্ত্রিসভায় ৮-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং দুই মাসের মধ্যে পাপেন বলেছিলেন, "We will have pushed hitler so far into a corner that he will squeak অর্থাৎ আমরা হিটলারকে এতদূর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব যে সে চিৎকার করে গুটিয়ে যাবে", কিন্তু সময় অন্য কথা বলছিল...
হিটলার কখনও অসাংবিধানিকভাবে কাজ না করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, নাৎসিরা একটি বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপে উঠেছিল। আমি মনে করি ভোটারদের সাফল্যের দিক থেকে যারা হিটলারকে ক্ষমতায় এনেছে এবং যারা জার্মানদের মধ্যে ভোটার ছিল তারা, তার স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কাছে এককথায় হোস্টেজ, সমর্পিত বা বাধ্য হয়েছিলেন, তা আসলে (Alfred Hugenberg) আলফ্রেড হুগেনবার্গের মিডিয়া সাম্রাজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম সংস্থাগুলির দ্বারা, তারা ঐসব মাধ্যমকে সমর্থন করেছিলেন, ওরা যা কিছু খবর বানিয়েছে তাই আপামর জনসাধারণ দেখতে বাধ্য হয়।
এটা সত্যিই যে হিটলারের দল এবং তার এজেন্ডার জন্য হুগেনবার্গের সমর্থন বিশেষ ভুমিকা পালন করে, আমি বিশ্বাস করি যে এটি ৩২ থেকে ৩৩ এর মধ্যে তার প্রচারণার সাফল্যের জন্য একটি সিদ্ধান্তমূলক পার্থক্য তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তার ক্যারিশমা হিসাবে যা জানি, তারও উত্থানের জন্য মিডিয়ার দায় অনস্বীকার্য। হিটলারকে অনেক লোকের সত্যিই বেশ হাস্যকর লেগেছিল, অনেকে তাকে খুব একটা গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। অবশ্য সেই মানুষটা, মানে হিটলার, খুব ভালো ভাবে জানত, কিভাবে জনতাকে বশ করতে হয়, তার কাছে ছিল শব্দের, বক্তৃতার জাদুকাঠি, যার ছোঁয়ায় লোককে বশীভূত করতে পারত তার কথায় ও যুক্তিতে।
এমন চরম পলিটিক্যালি কারেক্টনেস এর কথা যে কেউ ভাবতে বাধ্য হবে, "You would think that the end of the world is coming, proclaiming the dawn of a new nation but calling on all not to let Germany forget what she had suffered at the hands of her enemies!" অর্থাৎ এই যে পৃথিবীর শেষ দিনে এসে একটি নতুন জাতির কাছে ভোরের ঘোষণা করছে, সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে জার্মানিকে যাতে ভুলে না যাওয়া হয় যে কিভাবে সে তার শত্রুদের হাতে এবং কতটা নিষ্ঠুর আচরণ সে ভোগ করেছিল!
জানুয়ারিতে চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের দুই দিনের মধ্যেই হিটলার একটি নির্বাচন ডেকেছিলেন যাতে নাৎসিরা রাইকস্ট্যাগে তাদের অবস্থান উন্নত করেছিল। যখন নতুন সংসদ একত্রিত হয়, হিটলারের (enabling act)এনাবলিং অ্যাক্টকে আইনের দিকে ঠেলে দিতে কোনও অসুবিধা হয়নি, চ্যান্সেলরকে ডিক্রি দিয়ে রাইকস্ট্যাগ এবং শাসনকে বাইপাস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা হিন্ডেনবার্গের অধীনে কর্তৃত্ববাদী একনায়কত্বের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, তা হিটলারের অধীনে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। সাংবিধানিক সংকট পতনের হাত থেকে বাঁচতে একটি প্রজাতন্ত্রের জোটের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, অ-সংসদীয় চ্যান্সেলরদের সরাসরি নিয়োগ বা হিন্ডেনবার্গের হিটলারের প্রতি ঝোঁক পুরো বিষয়টিকে চরম ডানপন্থী দিকে নিয়ে যায় ...
(ক্রমশ)
©উshaস চttopaধ্যায়~
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment