Tuesday, 28 September 2021
খুশির হাসি ...
খুশির হাসি:-
আমার সাথেই এগুলো হতে হয়, সকাল থেকে খালি উল্টো-পাল্টা ক্লায়েন্টদের প্রেশার সামলাতে হচ্ছে, তার ওপর আজকে আমার সিনিয়রও ডুব মেরে বসল। যাই হোক, আমার যতগুলো ক্লায়েন্ট ভিজিট ছিল, সেই গুলো তো করতেই হবে উল্টে তারও দু-চারটে ভিজিটে যেতে হবে! চাকরি তো করি না, যেন ওদের কেনা গুলাম...
এসব ভাবতে ভাবতে, ডায়েরি টা উল্টে-পাল্টে একটু দেখে নিতে গেলাম। সব ঠিক আছে কিনা, তা আমার কপালে একস্ট্রা ৩টে ভিজিট বরাদ্দ হল! আমি স্যাম্পল কালেক্টর, এক বেসরকারি সংস্থার সাথে যুক্ত। লোকজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে, তাদের রক্ত, মল, মূত্র, কফ ইত্যাদি কালেক্ট করে বেড়াই। এমনিতেই ফোন নং ছড়িয়ে আছে এপাড়া সেপাড়াতে ল্যাম্পপোস্টে বা ব্যানারে। রোজ মিনিমাম ৫টা কল চলেই আসে আর্জেন্ট বেসিসে! সেইদিন ও এল।
সেই সকাল বেলা বাড়ির থেকে বেরোই, কিছু টিফিনের জোগাড় করতে পারি না। রাস্তার চায়ের দোকান বা ছোটোখাটো ধাবাই ভরসা। তাই ডায়েরি খুলে ছক কষে নেওয়া যে কোনটিতে কখন যাব!
সব ঠিক আছে, কিন্তু একটা মজার ব্যাপার চোখে পড়ল! লাস্ট নামটা রয়েছে একটি খুশি নামের ক্লায়েন্টের! একটু হলেও খুশি যে হইনি তা না, নামটিতেই যেন আনন্দ উথলে পড়ছে। কি জানি, যার নামেই এত আনন্দ সে নিজে কত না রূপসী হবে। তো যাই হোক, মনে মনে নিজের সিনিয়র কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সারাদিনের কাজের ম্যাপিং করে ফেললাম। কাজগুলোও হয়ে গেল ভীষনই সুষ্ঠু ভাবে! হতে পারে মনের মধ্যে একটা স্পৃহা কাজ করছিল, যে কখন খুশি নামের রূপসীর সান্নিধ্যে আসতে পারি। এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
ঠিকানা যা দেওয়া আছে, সেটা ঠিক করে মিলিয়ে নিলাম, দিয়ে কলিং বেল বাজালাম। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এল! এসে বলে;
--হ্যা কি ব্যাপার?
-না, আমি সুশ্রুত থেকে এসেছি। কারুর বোধহয় ব্লাড স্যাম্পল নেওয়ার ছিল...
বলতেই, সাথে সাথে এত আতিথেয়তার সাথে ভিতরে নিয়ে গেল যে বলার নয়। কিন্তু আমার মনটা কেমন করছে! যিনি আমায় সাথে করে নিয়ে গেলেন, তিনি ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী, হিজড়ে। মনটা স্বাভাবিকভাবেই কেমন মুষড়ে পড়েছে। কত কি না আশা করেছিলাম, কিন্তু শেষ অবধি এই! যাই হোক, ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখি সেকি তোড়জোড়, পুরো বাড়ি টা যেন সাজানো হয়েছে। বেলুন, ফুলের মালা, আরো কত কী! আমি আঁটোসাঁটো হয়ে বসলাম একটা দেখিয়ে দেওয়া সোফায়। দিয়ে একজন সুস্মিতা নামের আমার সামনে মিষ্টির থালা সাজিয়ে ধরল, বলল;
--কোনটা আপনার পছন্দ, একটা মিষ্টি খেতেই হবে আপনাকে।
আমি ইতস্ততঃ করছি দেখে, যিনি ভিতরে এনেছিলেন, মানবী, তিনি বলে উঠলেন;
--আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, কেননা আমাদের সেলিব্রশন এর সময়, একজনের জন্মদিন তাই!
আমিও সাথে সাথে একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে বললাম
-নানা, এতো খুব ভালো ব্যাপার!
বলে একটা কাজু বরফি তুলে নিলাম, আর নিজের কাজের তাড়া দেখিয়ে বললাম;
-যদি, কার স্যাম্পল নিতে হবে একটু ডেকে দেন তো...
সঙ্গে সঙ্গে মানবী বলল,
--হ্যা হ্যা একদম ভুলেই গেছি, এই সুস্মিতা একটু খুশি কে নিয়ে আয়তো..
আমি ততক্ষণে মিষ্টি টার সদ্ব্যবহার করে ফেললাম। করে জল খাচ্ছি তখনই ঘরে ঢুকল ৩কি সাড়ে ৩ বছরের একটি ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে! সবার আপ্যায়ন দেখেই নিশ্চিত করা গেল, যে এই সেই খুশি!
কী সুন্দর একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে, তো তার সাথে কি আর বন্ধুত্ব না করে আর পারা যায়। ও আসতেই সবার মধ্যে একটা উৎফুল্লতা, উৎসাহ চোখে পড়ল! এমনিতেই খুব ভালো ব্লাড কালেক্ট করি আমি, ওকেও বললাম;
- এই তো, এইবার এই হাতটা চেপে পাম্প করতে হবে, তোমার কোন কার্টুন টা সবচাইতে পছন্দ?
ও বলল; --বার্বি ডল! আমার খুব পছন্দ,
আমি বললাম; - ওরে বাবা, তা আজকে বার্বি ডলের কোন এপিসোড দেখিয়েছে টিভিতে...
কথায় ভুলিয়ে ব্লাড কালেক্ট করাই ছিল আসল কাজ, তা সম্পন্ন হয়েছে! দিয়ে ওকে বললাম যে;
-হয়ে গেছে, ব্যথা একটুও বুঝতে দিইনি, তাইনা...
ও হাসি মুখে সরে গেল। মানবী বলে ওঠে যে;
--কবে এই রিপোর্ট টা, পাওয়া যাবে?
-এই তো, এখনই স্যাম্পল টা অফিসে পাঠিয়ে দেবো, কাল কে দুপুরের মধ্যে বিল দেখিয়ে রিপোর্ট টা কালেক্ট করে নিলেই হবে। তা বার্থডে টা কার ছিল জানতে পারি কি?
--এ মা, আজকে খুশি-রই বার্থডে, সরি বলা হয়নি!
-না না, সে ঠিকআছে, তা ওর বয়স কত হল?
--আমাদের জন্য তো একদিন, আজই ওকে ভোরে পাওয়া গিয়েছে এক ডাস্টবিন থেকে, আমাদের লোকেরা ওকে নিয়ে আসে, ও আসলে আমাদেরই মতোন তো!
কথাটা যেন তির হয়ে বুকে বিঁধলো, ঐ টুকু ফুলের মতো বাচ্চাকেও কে ছেড়ে দিতে পারে? দুনিয়ার লোকেরা কি পাশবিক যে হয়ে গেছে, তা আর বলার নয়! এদের কেই এখনো সমাজ সঠিক মর্যাদা দেয় না, আর ওরাই কিনা বাঁচিয়ে তুলছে একটা নিষ্পাপ প্রান!
মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল, সব বুঝিয়ে দিয়ে যখন বেরিয়ে এসছি, তখন মনটা খচখচ করতে লাগল। সামনের দোকান থেকে একটা এক'শ টাকার ক্যাডবেরি কিনে আবার দরজার কলিং বেল বাজাই, যথারীতি মানবী দরজা খোলে। ওর হাতে ক্যাডবেরি টা দিয়ে বলি যেন খুশি কে দেয়। ওর মুখে প্রশস্তিমূলক হাসি। ফিরে যাওয়ার পথে ভাবতে থাকলাম খুশি কে নিয়ে, ও এখন ভালো লোকেদের সাথে ই আছে!...
©উshaস চttopaধ্যায়~
Labels:
Short Story
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment