Sunday 30 May 2021

বন্ধুদের স্মৃতি ...

বন্ধু! এই শব্দটির সাথে আমাদের অনেক স্মৃতি, অনেক মায়া জড়িয়ে থাকে, আমারও আছে!


ছোটবেলায় আমাদের পরিবারের বাইরে অধিকাংশ সময় কাটতো বন্ধুদের সাথেই।

স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস- জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আমাদের জীবনে বন্ধুদের ভূমিকা অপরিসীম।

স্কুলে খেলার সাথী ছিলো বন্ধু। পরীক্ষার হলে দুঃসময়ের সাথী ছিলো বন্ধু। স্কুল পালানো সহ সকল দুষ্টুমির সাথী ছিলো বন্ধু।

একটু বড় হয়ে যখন স্কুলগন্ডি পেরিয়ে কলেজে গেলাম তখন স্কুলের বন্ধুগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলো সময়ের ব্যবধানে। কলেজে যেতেই নতুন বন্ধু হলো। নতুন স্বপ্নের শুরুটাও এই বন্ধুর হাত ধরেই। কাউকে ভালো লাগলেও সেই বন্ধুদেরই সাথে শেয়ার করা, কেউ কষ্ট দিলেও কাঁধে হাত রাখে ঐ বন্ধুটিই।

কলেজ পেরিয়ে জীবনের সংগ্রাম, অফিস, তাতে যেতে হলে ট্রেন বাস বা কতকিছু। পুরোনো বন্ধুগুলো তখন জীবনের নতুন বন্ধু পেয়ে ভুলে যায় কিংবা সময়ের অভাবে ব্যস্ততার অজুহাতে দেখা করা বা ওভাবে ফোনে কথা বলার সুযোগ পায় না। আমরাও আস্তে আস্তে ভুলে যাই নতুন জায়গায় নতুন বন্ধুদের পেয়ে!

জীবন সংগ্রামের এই কঠিন পথে এখনো সময়ে অসময়ে আমাদের একমাত্র ভরসা এই বন্ধু। যে কথা পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারি না সেই কথা কতো সহজেই না শেয়ার করতে পারি কাছের বন্ধুটির সাথে। আমি হাসলে তারাও হাসে। আমি কাঁদলে তারা কাঁদে। মন খারাপ দেখলে নানা অজুহাতে মন টা ভালো করার চেষ্টা করে। কি না করে বন্ধুরা!

একটা সময়, যখন লেখাপড়া শেষ হয়, বন্ধুরা সবাই কর্ম জীবনে প্রবেশ করে, সংসার শুরু করে, একদিকে চাকরি, আরেকদিকে সংসারের দায়িত্ব, সন্তানের দায়িত্ব, বৃদ্ধ বাবা - মা এদের দায়িত্ব। এতো এতো দায়িত্বের ভীড়ে বন্ধুদের সাথে নিয়ম করে কথা বলা, দেখা করাটা আর হয়ে ওঠে না।

আমরা আস্তে আস্তে ভুলতে শুরু করি তাদের সাথে কাটানো মূহুর্তের সেই স্মৃতিগুলো। কতো সন্ধ্যায় একসাথে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নিজের জীবনের গল্প বলতে চেয়ে কতো হেসেছি তাদের সাথে, কতো চোখের জল মুছে দিয়েছে তারা। সময়ের পরিক্রমায় সেসব স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে যায়।

পথ চলতে চলতে কিংবা কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অথবা কোনো রেস্টুরেন্টে কখনো যদি বন্ধুর সাথে দেখা হয় তখন শুধুমাত্র কুশল বিনিময় টুকুই হয়। কেমন আছিস? কেমন চলছে? ব্যস, এই টুকুই!

ব্যস্ত সময়ের মাঝে একটু ফাঁকা সময় পেলে যখন আমাদের গান শুনতে ইচ্ছে করে তখন মনের অজান্তেই সার্চ করে ফেলি সায়ানের "এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে সকাল বিকেল বেলা, কতো পুরনো নতুন পরিচিত গান গাইতাম খুলে গলা।" কিংবা পার্থ বড়ুয়ার, "দেখা হবে বন্ধু কারণে অকারণে, দেখা হবে বন্ধু চাপা কোনো অভিমানে" অথবা অনুপমের "বন্ধু চল রোদ্দুরে। মন কেমন মাঠজুড়ে। খেলবো আজ ঐ ঘাসে। তোর টিমে, তোর পাশে.."

কখনও মনের অজান্তেই গেয়ে উঠি মান্না দে র অতি পরিচিত সেই গানের একটি লাইন "কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেল গুলো সেই, আজ আর নেই।"

হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা অবসর সময়ে স্মৃতিচারণ হয়ে যায় বন্ধুদের সাথে কাটানো সেই সোনালী সময়ের হাজারো মূহুর্তের কথা। মনের অজান্তেই তখন মুখে ম্লান হাসি এঁকে আমরা বলি "যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস বন্ধুরা..."

#বন্ধুদের_স্মৃতি

©উষস চট্টোপাধ্যায়~
তাং- ৩০|৫|২১

Friday 28 May 2021

কানের দুল ...

--ম্যাডাম, আগামী মাসের মাইনেটা অ্যাডভান্সে দেওয়া যাবে?

- খুব বেশী প্রয়োজন কী স্যার?
--আঞ্জে হ্যা, একটু প্রয়োজন তো ছিলই।
- আচ্ছা।।

যাক দু হাজার টাকার জোগাড় হল টিউশন থেকে। বাকী আরো তিন হাজার। হাতে সময় বেশি নেই।

আমি হাটছি। আর ভাবছি কীভাবে তিন হাজার টাকা জোগাড় করা যায়।

বন্ধু বিতান বলেছিলো একটা টিউশনি পেয়েছে, কথা হয়ে গিয়েছে। সেখানে গেলাম। ক্লাশ নাইনের দুজন ছাত্র। অথচ মাইনে মাত্র সাত 'শ টাকা করে। তবুও রাজী হয়ে গেলাম। বলতেই এক মাসের মাইনে অগ্রিম পেয়ে গেলাম। বাড়িতে এসে গত এক বছর ধরে জমানো টাকা গুনলাম। একুশ 'শ টাকা হল।

আজ আমি অনেক খুশি। পাঁচ হাজার টাকার মতোন জোগাড় হল।

ধর স্বর্নকারের দোকানে প্রতিদিন যেতাম। এক জোড়া কানের দুল কিনব। মনের মতন কানের দুলটা শুধু এই দোকানটাতেই আছে। গত একটি বছর যাবত দুলটি পাহারা দিয়ে আসছি। অবশ্য প্রতিমাসে একশ টাকা করে দিতাম যাতে দুলটি বিক্রি না করে। আজ পাঁচ হাজার টাকায় আমার দুলটি কিনে নিলাম।।

আমি অয়ন, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত টিচার, মা গৃহিনী, আর ছোট বোনটা এখনো উচ্চ-মাধ্যমিক দেয়নি। অভাবটা আমার বড়ই আপন। মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সময় কোনভাবেই ভর্তির টাকাটা ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। মা আমার বাবার দেওয়া একমাত্র স্মৃতি একজোড়া কানের দুল আমার হাতে তুলে দেন। তখন আমি নিরুপায়। বাবাও নিশ্চুপ। বাধ্য হয়েই সেই দুল জোড়া ধর স্বর্নকারের দোকানে বিক্রি করে দিলাম। আজ সেই দুলজোড়াই আবার কিনলাম।

আজ মে মাসের শেষ রবিবার। এই মে মাসেই, দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস, সেদিনের মধ্যে চেষ্টা করেছি অনেক, কিন্তু হয়ে ওঠেনি, আজ পারলাম। মেস থেকে বাড়ি আসলাম। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মায়ের দুটো কান খালি।বেশ বেমানান লাগছে।

সুন্দর একটা কেক নিয়ে ছিলাম। মাকে কেকটা কাটতে দিলাম, বললাম মাদার্স ডে তে আসা হয় নি, তো রোজই তো মাদের দিন, তাই না। ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা কৌটো। মা হাতে নিলেন। কৌটোটা খুললেন। মা'র চোখ আটকে গেল এক বছর আগে হারানো কানের দুলটির দিকে।

মা আমার কাঁদছেন। দুচোখের জল মুছে বললাম "এমা, কাঁদছো কেন, সুন্দর একটা দিন সেলিব্রেট করছি, কাঁদতে নেই। আজকের এই দিনটা শুধু তোমার জন্য"।

বাবা নিরব দর্শক ছিলেন, উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, বোন ও জড়িয়ে ধরল আমায়, চোখের কোনটা আমারও কিচকিচ করে উঠল।।

তিনজন তিনপাসে আকড়ে ধরে আছে আমায়। মা-বাবা-বোনের শীতল স্পর্শে মনটা নেচে উঠল।।

:
"সুখগুলো আমারই থাকে দুঃখগুলো না। কষ্টগুলো ভাগ করে নেয়, সে যে আমার মা"।

জনম জনম মায়ের প্রতি ভালোবাসা হোক অকৃত্রিম।।

©Uষস চttopadhyay~
তাং:- ২৮|৫|২১

Wednesday 26 May 2021

এত বছরের সামাজিক আন্দোলন ও একটি মেয়ে ...


#এত_বছরের_সামাজিক_আন্দোলন_ও_একটি_মেয়ে:

যদি তোমার মনে হয় 'এই জীবন চাই না'...

একথা অনস্বীকার্য যে, আমরা তো বেঁচে থাকি অন্যের মধ্যে দিয়েই। কোনও অস্তিত্বই তো কখনো হয় না সম্পূর্ণ একক অস্তিত্ব। কিন্তু, তা সত্ত্বেও কোনো কোনো অস্তিত্ব যেন একটু বেশিই অন্যের দৃষ্টি দ্বারা নির্ধারিত হয়। মানে, একটু স্পষ্ট করে বলি। একজন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বা গৃহবধূর জীবনে ঠিক কতটা থাকে অন্যের স্মৃতিচারণ করার মতো? কী থাকে সেই স্মৃতিচারণের কেন্দ্রস্থলে? তার মেয়েবেলা, রাঁধাবাড়া, অন্যের যত্নআত্তি আর সংসারটাকে ধরে রাখার নিত্যনৈমিত্তিকতা ছাড়া? যে নিত্যনৈমিত্তিকতা আবার ঠিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু নয়, কোনোদিন সেইভাবে হয়েও ওঠেনি? পারিবারিকতাই তাই বহু সময়ে হয়ে ওঠে একজন মধ্যবিত্ত গৃহবধূর জীবনের প্রধান বেঁচে থাকার কেন্দ্র, পরিচিতির কেন্দ্র। তবু, যদি সহজ করে বলতেই হয়, তবে মনে কর, এটা ৭০এর দশক, তুমি একজন বাঙালি নারী কিন্তু তোমার না আছে সেরকম কোনো তথাকথিত শিক্ষা, শুধুমাত্র ২-৪টি ক্লাস পড়াশোনা, গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র ছড়িয়ে প্রশাসনের কড়া নজরদারি। এলাকা ছাড়লে তুমি ভালো ভবিষ্যতের আশায় যেখানে তোমার অন্যান্য বোনেরা থাকে। সেখান থেকে তুমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে জড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক কাজে, যা কিনা তোমার চোখে ন্যায়সঙ্গত অধিকারের লড়াই মনে হয়েছিল! ধরা পড়ে মারাত্মক মার, লাঞ্ছনা ও কত কিছুর শিকার হলে তুমি, অর্ধমৃত অবস্থার থেকে প্রান বাঁচাতে যা মনে হয়েছে তাই করেছ তুমি।

তুমি পালিয়ে গেলে সেখান থেকেও, কারণ অর্ধেকের বেশি বন্ধু হয় মারা গেছে নয়তো জেলে ঢুকেছে, নয়তো তারাও কোথাও পালিয়েছে। কিছু স্বল্পবয়স্ক তোমার আত্মীয়স্বজনেরা শক্তিশালী সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার বৃথা স্বপ্ন দেখে, আসলে তাদের নিজের প্রানটুকুও তারা ফেরত আনবে কিনা জানেনা!

এই বিদেশ বিভুঁয়ে তোমার কোনো যোগ্যতা নেই যে তুমি শিক্ষিত সমাজে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ পাবে বা করবে! তুমি নিজের মতো করে চাইলে কোনো ছোটোখাটো কাপড় বা অন্য কিছুর ব্যবসা করতে। কিন্তু ব্যাগড়া দিল প্রশাসন, এবং কপালে জুটল আরও লাঞ্ছনা, তোমার সমস্ত জিনিস লুঠতরাজ হতে লাগল!

তবু কিছু পরিমাণ তুমি সঞ্চয় করতে শিখলে, এখান সেখান থেকে, এবং সবচেয়ে বড় কথা, তুমি আলাদা করে সরিয়ে রাখতে শিখলে ওইসব বাবুদের চোখে পড়ার আগেই!
এরপর তোমার বিচরন স্থান হল ছোটখাটো কাপড়ের দোকান থেকে আসবাব; পিঁড়ে, মোড়া, ঘটি, বাসন এইসব। এইগুলোতে তুমি মনোনিবেশ করলে। এরপর তুমি আরেকটু গুছিয়ে ব্যবসা করলে, যাতে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা সহজেই করা যায়!
তুমি এক পয়সা কারুর থেকে ধার করোনি, এবং তৎকালীন মহাজনের কাছ থেকে ধার পাওয়া এত সহজ ব্যাপার ছিল না।

তুমি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছ, ২০ ঘন্টা কাজের জন্য খরচ করেছ তুমি। তোমার সন্তান আছে, যাকে ভালো কোনো স্কুলে তুমি পড়াতে চাও, যার জন্যে লাগবে টাকা! কোনোরকম সরকারি অনুদান বা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ, কেউ স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু দেখে না!

দেখবে, কিভাবে ১০ বছরের মধ্যে তোমার জেলায় যত ধনী আছে, তাদের সমতুল্য তোমার বয়স বেড়ে চলেছে তবু ধনবৃদ্ধি হচ্ছে না, কিন্তু কেউ জানবে না এই ব্যাপারে, এমন ভাব করবে যে তুমি কেউ নও, তোমায় পাত্তা না দিয়ে! তুমি রাস্তা দিয়ে আগের মতোই চলবে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে, তুমি নিজের ছেলে কেও হয়তো পড়তে পাঠাবে, নামজাদা কোনো স্কুলে।

আমি গেছিলাম সেই এক মহিলার সান্নিধ্যে, তার বাড়িতে, ঐ চরম পরিস্থিতির মধ্যেকার, সমস্ত কথা শুনেছিলাম মন দিয়ে, উনি বলেন, "যদি তুমি করবে বলে ঠিক কর, তাহলে এমন কোনো শক্তি নেই যা তোমায় বাঁধা দেবে, কারণ তুমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করছ।" তিনি সবসময় ন্যায় এবং ধর্মের কথা বলতেন, কারণ তিনি একজন মা!

আসলে, এমন কোনো কিছুই নেই যা দিয়ে নিজের বা দশের অবস্থায় কোনো সুরাহা আনতে পারে, কিন্তু যেটা পারে তা হল, তোমার মনোভাব এত দৃঢ় করতে যাতে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির সামনে তুমি ভেঙে না পড়। এভাবেই এক সংগ্রামের দিকবদল হয়, কিন্তু তা যাতে মানুষের কাজে লাগে, সেটাই দেখার, নিজের অবস্থা দিয়ে শিখতে হয় ...

শুধুমাত্র কাজের জন্য প্ল্যান করা নয়, প্রত্যেককে নিজের প্রয়োজনে লাফিয়ে উঠে দৌড়োতে হবে। এমন কংক্রিটের মতো শক্ত নিজের লক্ষ্য স্থির কর, যা ভেঙে ফেলা অসম্ভব!


সমাপ্ত!

©উshaস~


ফটো ক্রেডিট: @toniespadas, #african_portraits

Sunday 23 May 2021

বাবা ...

 



বাবা:

আজকের বিষয়ে শুরুর আগে একটা গল্প বলি, নিজের বাড়ির ঘটনা, ছেলে কে আমার বাবা ডাকতে বলায় ডেকে দিলাম, দোতলার ঘর থেকে, কাল রাতের জন্য আনা মিষ্টি থেকে ভাগ বসাতে পারা যাবে জেনে একটু হলেও উত্তেজিত যে ছিলাম না তা নয়! তবু...
তা বাবা ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করল যে সে ওইটা খাবে কিনা, সেও ছিল তার হুজুগে, না বলায়, আমার মধ্যস্থতার প্রয়োজন পড়ল! খেতে খেতে বাবা ওকে অঙ্ক বোঝাল, ভগ্নাংশ সম্পর্কিত বিশেষ বাবা স্পেশাল জ্ঞান, সেখান থেকে অল্প মিষ্টি আমরা ৩ জনেই খেলাম, কাল-আজ-কাল, মানে দাদু-বাবা-ছেলে! মজার পরিস্থিতির একটা উদাহরণ ...
কিন্তু হটাৎ মনে প্রশ্ন এল কীভাবে একজন বাবা তার সন্তানদের তিক্তবিরক্ত করে তোলাকে পরিহার করতে পারে? একজন বাবা হিসেবে তার ভূমিকার গুরুত্ব বুঝতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। "সন্তানদের আবেগগত এবং মেধাগত উন্নতিতে পিতৃত্ব এক জটিল ও অদ্বিতীয় উপায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে," মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি পত্রিকায় বলা আছে।

তা একজন বাবার ভূমিকা কী? অনেক পরিবারে বাবাকে মূলত শাসন প্রয়োগকারী হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। একজন সন্তান যখন অশোভন আচরণ করে, তখন অনেক মা-ই সাধারণত তার সন্তানকে বলে, ‘দাঁড়া, তোর বাবা আজ আসুক!’ নিশ্চিতভাবেই, সন্তানরা যাতে পরিপক্ব হয়ে ওঠে, সেইজন্য ভারসাম্যপূর্ণ শাসন এবং যথেষ্ট দৃঢ়তা প্রয়োজন। কিন্তু, একজন ভালো বাবা হওয়ার সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত থাকে। তাই না? আজ একটু সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাক!

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, প্রত্যেক বাবার কাছেই, তার সন্তানের সাহায্য করার জন্য ভালো উদাহরণ থাকে না। কিছু ব্যক্তি বাবা ছাড়াই বা তার সান্নিধ্য ছাড়াই মানুষ হয়ে উঠেছে। কিন্তু, অন্যান্য ক্ষেত্রে যে-ব্যক্তিরা এক কঠোর, উদাসীন বাবার অধীনে বড়ো হয়েছে, তারা হয়তো তাদের সন্তানদের সঙ্গেও একই আচরণ করার প্রবণতা দেখাতে পারে। কীভাবে এই ধরনের একজন বাবা সেই একই ধারা অনুসরণ করা ত্যাগ করতে পারে এবং তার সন্তান লালনপালন করার দক্ষতায় উন্নতি করতে পারে? তা আমার কাছেও প্রশ্ন ...

যেভাবে একজন 'ভালো' বাবা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে ব্যবহারিক ও নির্ভরযোগ্য পরামর্শের এক উৎস রয়েছে। পারিবারিক জীবনের ওপর শাস্ত্রীয় বইগুলির থেকে সবচেয়ে সুষ্ঠু পরামর্শ পাওয়া যায়। এটির পরামর্শ নিছক তত্ত্বগত নয়; কিংবা এটির নির্দেশনা কখনো আমাদের ক্ষতি করে না। এগুলির পরামর্শ, এটির গ্রন্থকার সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে, যিনি পারিবারিক জীবনের উদ্যোক্তা। আপনি যদি একজন বাবা হয়ে থাকেন, তাহলে সন্তান লালনপালন সম্বন্ধে এইসব বইগুলি যা বলে, তা আপনার বিবেচনা করা উচিত।

একজন ভালো বাবা হওয়া কেবলমাত্র আপনার সন্তানদের দৈহিক এবং আবেগগত ভালোর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যে-সন্তানের তার বাবার সঙ্গে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তার পক্ষে এ-জগতের সঙ্গেও এক ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ হতে পারে!

আপনি যে সন্তানদের ভালোবাসেন তা বলতে কখনো দ্বিধা করবেন না, আমি সবসময় আমার সন্তানের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি আর তা কেবল আমি তাদেরকে ভালোবাসি, এই কথা বলার মাধ্যমেই নয়, বরং তাদের প্রত্যেকের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়েও করেছি, যদিও সবে ১০, কিন্তু ভীত আমি সক্ষমতা সঙ্গে গড়েছি। শুধুআমি কেন সব বাবারাই বোধহয় তাদের সন্তানের ডায়াপার বদলে দিত এবং তাদের স্নান করিয়ে দিত। এ ছাড়া, আপনার সন্তানদের জানা দরকার যে, তাদের প্রতি আপনার এক সহজাত অনুমোদন রয়েছে। তাই, অতিরিক্ত সমালোচক হবেন না, উঠতে-বসতে তাদের সংশোধন করবেন না। এর পরিবর্তে, প্রশংসা করার ব্যাপারে উদার হোন।

একজন বাবার তার সন্তানদের প্রশংসা করার বিভিন্ন সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। তাদের জন্য আপনার আস্কারা রয়েছে, এটা জানা আপনার সন্তানদের উপযুক্ত আত্মসম্মানবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। আর এটা তাদেরকে জীবনের যে কোনো সমস্যার আরও নিকটবর্তী হতে ও তার থেকে বেরিয়ে আসার সাহায্য করতে পারে!

আপনার সন্তানদের জন্য এক আনন্দপূর্ণ পরিবেশ দরকার। সন্তানদের সঙ্গে খেলাধুলা করার জন্য সময় করে নেওয়া, এই ধরনের এক পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করতে পারে। একসঙ্গে খেলাধুলা করা বাবা ও সন্তানকে এক গভীর বন্ধনে জড়াতে সাহায্য করে। যে বা যারা এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে তারাই বুঝবেন আশা করি। আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বিনোদনের জন্য সময় আলাদা করে রাখা, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন গেম খেলি, বন্ধু হিসেবে সঙ্গে মেলামেশা করি এবং বিনোদনের স্থানগুলোতে বেড়াতে যাই। এটায় পরিবারের একতাকে শক্তিশালী করেছে। তবে, সন্তানদের শাসন প্রয়োজন, যাতে তারা সৃজনশীল এবং দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। কিছু বাবা-মা মনে করে যে, তাদের সন্তানদের শাসন করার সঙ্গে নির্দয় আচরণ জড়িত, যার অন্তর্ভুক্ত হল তাদের রূঢ়ভাবে বকাঝকা বা ছোটো করা। কিন্তু সন্তানদের শাসন করার সময় বাবা-মাকে রূঢ় আচরণ করতেই হবে। মাঝে মাঝে, শাস্তির প্রয়োজনও হতে পারে। কিন্তু, সন্তানেরও বোঝা উচিত যে, কেন তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তাকে শিক্ষা দিন, মাথা ঠান্ডা করে। বাবা-মায়ের শাসন কখনো যেন সন্তানের মনে এইরকম অনুভূতি এনে না দেয় যে, সে পরিত্যক্ত। যে কোনো ধর্মে প্রচণ্ড মারধর করাকে সমর্থন করে না, যা একটা সন্তানের ক্ষতি করতে পারে, যখন গুরুতর বিষয়গুলোর জন্য সন্তানদেরকে আমার সংশোধন করার প্রয়োজন হবে, তখন আমি সবসময় এটা স্পষ্ট করার চেষ্টা করব, তাদের প্রতি ভালোবাসার জন্যেই আমি তাদেরকে সংশোধন করেছি, এটা ওদের বুঝতে হবে!

সবচেয়ে বড়ো যে-পুরস্কার একজন বাবা তার সন্তানদের দিতে পারে তা হল, পরিবেশ আর পরিস্থিতির সঙ্গে এক দৃঢ় ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তাদেরকে সাহায্য করা, উৎসাহ দেওয়া। বাবার উদাহরণ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাবাদের দেখাতে হবে যে, সত্যের মূল্যবোধের সঙ্গে তারা নিজেদের সম্পর্ককে কতটা মূল্যবান বলে গণ্য করে। এটা বিশেষভাবে তখন স্পষ্ট হওয়া উচিত, যখন তারা ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সমস্যা বা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, বাবা দেখায় যে সে পারিপার্শিক পরিস্থিতির ওপর কতটা গভীরভাবে নির্ভর করে। পারিবারিক প্রার্থনায় যাকে ঈশ্বর বলে মনে করা হয়, তার মঙ্গলভাবের জন্য তাঁর প্রতি বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হলে, সেটা সন্তানদেরকে এ জগতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার গুরুত্ব সম্বন্ধে শেখাবে...
প্রত্যেক বাবাই চায় তার ছেলের মধ্যে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে। ছেলেকে সফল দেখার আশায় অনেক ক্ষেত্রেই বাবারা বেশ কঠোর হয়। আর সেখানেই শুরু হয় সমস্যা। বাবা-ছেলের সম্পর্কের মাঝে এসে পড়ে অভিমান, রাগ, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা।
কিন্তু এই সমস্যার শিকড় কোথায়, তা তো খুঁজে বার করলেই হয়, তাই না? বার তো করতেই হবে। তবেই তো পাওয়া যাবে সমাধান!
একটা বয়সের পরে বাবা যখন অবসর নিচ্ছে আর ছেলের কর্মজীবন শুরু হচ্ছে, এই সময়টা খুব স্পর্শকাতর। এই সময়ে বাবারা অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ছোটখাটো কথাতেই হয়তো অপমানিত হয় বলে মনে করেন। অন্য দিকে ছেলেও কর্মজগতে পা রেখে বাবার কথা শুনতে নারাজ। এই সময়ে দু’জনকেই বুঝে চলতে হবে। ছেলেকেই তখন একটু পরিণত ভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, বাবাকে বোঝাতে হবে। আর এমন কোনও আচরণ করা চলবে না, যাতে বাবা আঘাত পায়। অন্য দিকে ছেলের সিদ্ধান্তের উপরে বাবাকেও ভরসা রাখতে হবে, নইলে ছেলের আত্মবিশ্বাসও কোনোদিন বাড়বে না।

ছেলের সঙ্গে সময় কাটান। দেখবেন, বাইরে মেশার দরকার পড়ছে না। ঘরের মধ্যে পেয়ে যাবেন আপনার প্রিয় বন্ধুকে! 😊

[বিঃদ্রঃ- ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সন্তান, ছবিটি প্রতীকী এবং লেখায় কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে ক্ষমা করবেন]

©উষস চট্টোপাধ্যায়~

Thursday 20 May 2021

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ...


আর ভালো লাগছে না! ভাবছি সোশাল মিডিয়া থেকে অবসর নিয়ে নি। সবাই এত কিছু জানে যে আর কথাই নেই! এই যেমন;
-স্কুল পাস না করা ছেলেটাও মাস্টার্সের শেষ ইয়ারের বড় ভাইকে বা দিদিকে নিয়ে ফেসবুকে মতামত দিয়ে দিচ্ছে কিছু না বুঝেই।
-জীবনে যে গান গায়নি বা গানের সারেগামার স ও বোঝে না সেও কিনা ২০ বছর ধরে গানের জগতে কাজ করা বরেণ্য শিল্পীর কাজ নিয়ে অশালীন মতামত দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বারোটা পাঁচ বাজাচ্ছে।
-এখনো যে মানুষটি কোনো কর্পোরেট জবেই ঢোকেনি, ঢুকলেও আদপে ফেলিওর, সেও ১৫ বছর ধরে ৯ টা ৫ টা অফিস করে জীবন তেজপাতা করে ফেলা কাউকে নিয়ে ক্যারিয়ার সামারি ভিডিও বানিয়ে "আমি খুব বুঝি" ট্যাগ লাইনের স্ট্যাটাস পোস্ট করে দিচ্ছে।
-রাজনীতির ধারের কাছেও ছিলেন না যিনি আর মিছিল দেখলেই গলির ভেতর ঢুকে পড়তেন "চাচা আপন প্রাণ বাঁচা" ডিএনএর মানুষটাও ইচ্ছে মতো বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণে ভরা লেখা ভাইরাল করে দিচ্ছেন ওয়ালে ওয়ালে!

পরিবার থেকে বছরের পর বছর দূরে থেকে মরুভূমির নির্মম রোদ মাথায় নিয়ে অথবা সিয়াচেনে না গলতে চাওয়া বরফে কাজ করতে কতটা কষ্ট হয় সেটা না বুঝেই অনেকেই  সৈনিকদের নিয়ে কটুক্তি করে ফেলছেন শুধুমাত্র এয়ারপোর্টে, রাজভবনে বা অন্যান্য জায়গায় তাদের একটু কড়াকড়ি বা শোরগোল দেখে। সবাই নিজেকে বিজ্ঞ প্রমাণের চেষ্টায় কয়েক টাকার এমবি কিনে ফেসবুকে হাতি ঘোড়া সব মেরে ফেলছেন। নিজের গাড়িটা উল্টো পথে এনে হরদম রাস্তা আটকে দেওয়া মানুষটাও সুযোগ পেলেই ঘর্মাক্ত ট্রাফিক পুলিশ "শুধু টাকা খায়" নামের ট্রোলের শেয়ার করে দিচ্ছে বীরের মতো!

নিজে উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেও যিনি একবারের জন্যেও কলকাতার বাইরের কোনো দেশ, বা শুধু দেশ কেন, জেলা, উপজেলায় বা গ্রামের ছেলেমেয়েদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেষ্টাও করেননি তিনিও কড়া ইংরেজিতে দেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে "সব শেষ হয়ে গেলোরে" টাইপের বাণী আউড়ে যাচ্ছেন, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনেক ইমোজি, লাইক আশা করছেন ফেসবুকে!

কলকাতার মফস্বলের ৩০% রিক্সাওয়ালা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েও দিনরাত কিভাবে মানুষ হয়েও মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা না বুঝেই আমরা "তুই একটা
রিক্সাওয়ালা" নামের মিম শেয়ার করে খুব মজা নিচ্ছি। 'হেব্বি হয়েছে ফ্রেন্ড' বলে আবার অনেকে সেখানে কমেন্টও করছে অট্টহাসির ইমোজি দিয়ে। আবার একজন এসে আলতো করে কমেন্টও করে গেলো- "নিতে পারি?"

'প্রত্যেকে, আমরা সবাই আলসান্দ্রো ডেল পণ্ডিতো'

অপমানসূচক সংস্কৃতি একটা বিষাক্ত মদের মত। খুব সহজ আর নোংরা ধরনের আনন্দ দেয়! বয়সে আর অভিজ্ঞতায় বড় কাউকে নিয়ে, কোন বিষয়ে নিয়ে মতামত দিতেও একটা যোগ্যতা লাগে, যোগ্যতা ছাড়া মত প্রকাশ করা হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার সরাসরি অপব্যবহার!

সবাই রাষ্ট্রপতি না যে সব বিষয়ে মতামত থাকতেই হবে বা দিতেই হবে।

বয়স হতে দাও, অভিজ্ঞতা আসতে দাও জীবনে, অপমান নয় উৎসাহই হোক না আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ব্যবহারের প্রথম উদ্দেশ্য, একটু ভেবে দেখো কথাগুলো ... 🙏🏼

©উshaস~

#সোশ্যাল_মিডিয়ার_অপব্যবহার 

Wednesday 19 May 2021

দুই শ্রেনীর মানুষ ও আমাদের দেশ...

 দু' রকম মানুষ চোখে পড়ছে। এক শ্রেনী আতংকে আছে তটস্থ কিছু মানুষ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা করোনা প্রকোপে মরছে। তবু সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে সেটা একটু হলেও কমেছে। রোজ ভালো থাকার মন্ত্র খুঁজে চলেছে! কারুর কথায় চিন্তার কিছু নেই, যা ভালো লাগে তাই করতে হবে। কবিতা ভালোলাগে, সেতার বা গিটার বাজাও, দেশবাসীর অধিকারকে বড় মানো, যদিও সেটা করা অবশ্যই বিপজ্জনক, কেউ জানে না কার ঘাড়ে কখন রাজনৈতিক কোপ এসে পড়বে। কারুর জন্য ধর্না অথবা কোথাও হুজ্জুতি এগুলি ততক্ষণ ঠিক যতক্ষণ রাজার স্বপক্ষে কথা, বিপক্ষে হলেই কপালে দুঃখ। প্রগতির কোনো লেখা আজকাল-কার সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ করলে না খেয়ে মরতে হবে। ভয়ংকর বীভৎস জল্লাদদের হাত থেকে দেশকে এবং নিজেদেরকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে সুস্থ সচেতন মানুষ। এইটা হচ্ছে এক প্যানিকড সম্প্রদায়।


আরেক শ্রেনী খুব রিল্যাক্সড। মোটেও চিন্তিত নয় মানুষের রোগ, মরক বা খুন নিয়ে। তারা দামি দামি গাড়ি চালাচ্ছে, দামি বাড়িতে থাকছে, দামি খাবার খাচ্ছে, দামি ক্লাবে যেতে পারছে না তো কি ক্লাবের পরিবেশ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। ফরেন ট্রিপেও সুযোগ পেলে চলে যাচ্ছে। নাচছে, গাইছে, হৈ হল্লা করছে, আনন্দ করছে। নিজেদের আরাম আয়েশ, সাজগোজ, পয়সাকড়ি ওড়ানো নিয়ে ভীষণভাবে ব্যস্ত। তারা মনে করে তাদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ তারাই খাঁটি মনুষ্য জাতি, তারা বিশ্বাস করে নিজের শান্তিই নিজের ধর্ম। কি হবে এ দেশের...

সত্য সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই দেশ!

হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই, এই মৃত্যু উপত্যকাই আমাদের দেশ। এখানে প্রতিদিন লাখো মানুষের ফুসফুস একা একা ছটফট করছে, একটুখানি অক্সিজেন ভিক্ষা চাইছে। বাতাস এখন বিষাক্ত, বাতাসে কিলবিল করছে লক্ষ কোটি ভাইরাস। একটু বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য আমাদের ভাঙাচোরা দোমড়ানো মুচরানো ফুসফুস কাতরাচ্ছে। কে দেবে আমাদের অক্সিজেন, তার ঠিক নেই! আমাদের পৃথিবী দখল করে নিয়েছে অদৃশ্য কিছু জীব। চারিদিকে শুধু মৃত্যু, চারিদিকে শুধু চিতার আগুন, চারিদিকে শুধু কবরের নিস্তব্ধতা। তবে এই মৃত্যুরাজ্যের হাল আমরা ছাড়বোনা, শেষ দেখে ছাড়ব। প্রয়োজনে আমরা চোখের জল ঢেলে আগুন নেভাবো, আবার বাসযোগ্য করবো এদেশটাকে, আবার উর্বর করবো এ মাটি, আবার পালন করবো জীবনের ঝলমলে সব উৎসব, করতেই হবে আমাদের!

©Uষস চttopadhyay~
তাং:- ১৯|৫|২১

Tuesday 18 May 2021

ইজরায়েল আর ফিলিস্তিন...


ইজরায়েলে যারা শাসন করে তারা মূলত ইউরোপীয় ইহুদী। এদেরকে বলা হয় আশকেনাজি জুইশ। এরা ইউরোপ থেকে এসে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গেঁড়ে বসা ইহুদী।

কিছু আরব ইহুদী আছে, যারা আগে থেকেই ফিলিস্তিনে ছিল। আর কিছু অন্যান্য আরব দেশ থেকে এসেছে। এদেরকে বলা হয় মিজরাহি জুউশ। হিস্পানিক কিছু জুইশও আছে।
তবে এলিট শ্রেণী হচ্ছে- আশকেনাজি জুইশ। এরাই মূলত জার্মান আর ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত হয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করেছে।

এরা অসম্ভব উগ্র, জেনোফোবিক এবং ধণী। ইজরায়েলের এলিট শ্রেণী হচ্ছে এরা। এদের কালচারের সাথে আরব ইহুদীদের কালচার কোনোভাবেই মেলেনা।

ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী মেসিয়াহ না আসা পর্যন্ত ইহুদীদের জন্য আলাদা দেশ গঠন করা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ।
এই কারণেই অন্যান্য দেশের অর্থোডক্স ইহুদী এবং ইহুদী ধর্মগুরুগণ ইজরায়েলের বিরোধী। কারণ এই রাষ্ট্র ইহুদী ধর্মমতেও নিষিদ্ধ।

ধর্মীয় দেশ দাবী করলেও ইজরায়েল মূলত কোনো ইহুদী দেশ নয়, এটা একটা জায়োনিস্ট দেশ। সহজ ভাষায় বললে- জায়োনিজম হচ্ছে ইহুদী জাতীয়তাবাদের একটি পলিটিকাল টার্ম। জায়োনিস্ট হওয়ার জন্য ইহুদী হওয়া শর্ত নয়। অর্থাৎ ইহুদী নন এমন ব্যক্তিরাও জায়োনিস্ট হতে পারেন। আবার ইহুদী মানেও জায়োনিস্ট নয়।
জায়োনিজমকে বাংলায় সম্ভবত ইহুদীবাদ বলা হয়। হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ যেমন এক নয়, অনেকটা সেরকম। ইহুদী ধর্মকে বলা হয় জুদাইজম।

তো জায়নবাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে স্টেট অব ইজরায়েল জাতির পিতা থিউডর হার্ৎজেল। যার স্বপ্ন ছিল তার মুভমেন্টের সমর্থক ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা দেশ হবে এবং সেটা হবে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে।
সে আবার অবশ্য তার জীবদ্দশায় ইজরায়েল দেখে যেতে পারেনি। তবে সে নানাভাবে চেষ্টা করেছিল।
ওসমানী খলীফা আব্দুল হামীদকে সে চিঠি লিখে প্রস্তাব দিয়েছিল যেন ইহুদীদের জন্য বাইতুল মোকাদ্দাসের কাছে কিছু জমি বরাদ্দ করে দেওয়া হয়। বিনিময়ে তুরস্কের সব ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হবে। খলীফা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে ১৯০১ সালের মে মাসে থিওডর তার ক্লোজফ্রেন্ড পোলিশ ফিলিপ নিউলিন্সকিকে দিয়ে আবার প্রস্তাব পাঠায়। এবারে খলীফার জন্য বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ সহ নানা উপহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ব্যবসা এবং সুদের ব্যবসা করে ইহুদীরা অনেক আগে থেকেই প্রচুর সম্পদের মালিক। ব্যাঙ্কিং কনসেপ্ট জিনিসটাই ইহুদীদের থেকে তাদের সুদের ব্যবসা থেকে এসেছে। এই কারণেই তাদের সম্পত্তি ছিল অঢেল।

খলীফা আব্দুল হামীদ বলেছিলেন- ফিলিস্তিনের ভূমি আমার একার সম্পদ নয় যে আমি লিখে দেব। এদেশের প্রতিটা মুসলমানের রক্তের ফোঁটাতে এর মালিকানা। আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারিনা।

খলীফা আব্দুল হামীদ মারা গেছেন, ওসমানী খিলাফত ধ্বংস হয়েছে। খিলাফত বিলুপ্ত হয়েছে। বৃটিশরা যুদ্ধে জিতেছে। থিউডর হার্ৎজেল মারা গেছে। কিন্তু তার আইডিওলজি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়েছে। তার স্বপ্নের দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বৃটিশরা ইউরোপে হিটলারের জার্মানির থেকে মার খাওয়া ইহুদীদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করে দিল ফিলিস্তিনে। থিউডরের স্বপ্নের সেই দেশ প্রতিষ্ঠিত হলো ফিলিস্তিনীদের রক্তের উপর। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হলো। ঘরবাড়ী এবং জীবন হারালো।

জায়োনিস্টদের তখন সশস্ত্র মিলিশিয়া ছিল।
তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতো, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে সেই ভূমি দখল করতো।
এবং তারা বিশেষভাবে বৃটিশদের সহায়তা পেত।

ইহুদীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই ইজরায়েলেও ইহুদীরাই বৈষম্যের শিকার হয়। যারা কালো ইহুদী তারাও বৈষম্যের শিকার হয়। এ নিয়ে তারা অনেকবার রাস্তায় নেমেছে। সবচেয়ে বেশী শিকার হয় আরব ইহুদীরা। কারণ তাদের ভাষা আরবী, তাদের বেশভূষা আরব মুসলমানদের মত। আরবী বলার কারণে তাদের চাকরী হয়না, আরবদের মত পোষাক পরায় চাকরী হয় না, ধর্মে ইহুদী হওয়ার পরও জাতি-উপজাতিতে একই না হওয়ায় তারা নানা বৈষম্য এবং হেনস্থার শিকার হয়। তাদের বলা হয় আরবদের ঘৃণা করতে। তো যারা পূর্বে আরব দেশে ছিল, তারা অর্থ্যাৎ বৃদ্ধরা বিষয়টা মেনে নিতে পারেনা। তারা প্রতিবাদ করে, স্বভাবতই কোনো লাভ হয় না।

তো যারা নিজ ধর্ম ইহুদীদের সাথেই এমন করে, তারা আরব মুসলমানদের সাথে কেমন আচরণ করবে সেটা সহজেই অনুমেয়। আবার আমরা তো দেখতেও পাই।

ইজরায়েল শুরু থেকেই বৃটিশ এবং আমেরিকানদের প্রত্যক্ষ সাপোর্ট পেয়ে আসছে। আরব ইজরায়েল যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যরা ইজরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে বলেও বলা হয়।

এখনো যখন ইজরায়েল ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যা করে, নারী-শিশুদেরও হত্যা করে, ধরে নিয়ে যায়! এ নিয়ে জাতিসংঘ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনলে আমেরিকা ভেটো দেয়। সরাসরি ইজরায়েলকে রক্ষা করে।

জাতিসংঘের আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ আইন সব কিছুই তারা নিয়মিত লংঘন করে। কিন্তু তাতে তাদের কোনো কিছুই হয় না। কারণ আমেরিকা আছে। তারা প্রকাশ্যেই ইজরায়েলকে রক্ষা করে নেয়, একদম নগ্নভাবে।

আসলে ইজরায়েলের কোনো সীমানা নেই। কারণ, তারা প্রতিদিনই দখল করে চলেছে।

যেকোনো দিন ইহুদী সেটেলার এসে আপনাকে বলবে এই ঘর আমার। এরপর ইজরায়েলী পুলিশ এসে আপনাকে বের করে দেবে, পুরুষদের জেলে নিয়ে যাবে। তারপর বুলডোজার এসে আপনার ঘর গুঁড়িয়ে দেবে। এরপর সরকারী টাকায় সেখানে ইহুদীদের জন্য ঘর বানানো হবে।

নিজেদের শত শত বছরের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনিরা এক দিনেই উদ্বাস্তু হয়ে গেল। রিফিউজি হিসেবে কোথাও আশ্রয় নিতে হবে।
এভাবে তারা প্রতিদিন ঘরবাড়ী দখল করে নেয় আর ফিলিস্তিনিরা উদ্বাস্তু হয়।

ইহুদীদের জন্য ঘরবাড়ী বানানোর জন্য যে টাকা খরচ হয়, তার জন্যও আমেরিকা থেকে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে টাকা আসে।

আবার প্রতিবছর ইজরায়েলের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা আসে।

পশ্চিমের দেশগুলোতে ইজরায়েলীদের জন্য প্রায় ভিসা ফ্রী। নামী দামী ইউনিভার্সিটি গুলোতে তারা স্কলারশিপ পায়। এর বাইরে আবার প্রায় সব বড় বড় কোম্পানীর বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট আছে ইজরায়েলে। তারা শিক্ষাখাতে ইনভেস্ট করে, গবেষণা খাতে ইনভেস্ট করে, ট্যুরিজম খাতে ইনভেস্ট করে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের বাড়ীটা থাকবে কিনা জানে না, প্রাণ থাকবে কিনা সেটাও জানেনা, স্কুলটা থাকবে কিনা তাও জানেনা। রাত বিরেতে এসে তল্লাশী চালিয়ে ইজরায়েলী পুলিশ যাকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। অল্পবয়সী শিশু হলেও কোনো রক্ষা নেই।

ফিলিস্তিনিদের সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ ফোর্স রাখারও পারমিশন নাই। ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স নামে একটা বাহিনী আছে, তাদের ভারী কোনো অস্ত্র রাখার অনুমতি নাই। ইজরায়েলের সাথে এক চুক্তিতে এটা মেনে নেয় ইয়াসির আরফাতের পিএলও। ফলে মাহমুদ আব্বাস নামের প্রেসিডেন্ট হলেও কাজে কোনো ক্ষমতা তার নাই।

ইজরায়েল দখল করতে করতে ফিলিস্তিনকে এমনভাবে দখল করেছে- একপাশে গাযা উপত্যকা, অন্যপাশে পশ্চিম তীর। মাঝখানে ইজরায়েল।
ব্যাপারটা অনেকটা পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মত পশ্চিম তীর আর গাজা, মাঝখানে ভারতের মত ইজরায়েল।
মনে করার সুবিধার্তে, গাজা হচ্ছে বাংলাদেশ, পশ্চিম তীর পাকিস্তান। মাঝখানে ভারত হচ্ছে ইজরায়েল।
(ভৌগোলিক অবস্থান বা ম্যাপ বোঝার সুবিধার্তে বললাম, অন্য কোনো স্বার্থ নেই)।

ইজরায়েলীরা পৃথিবীর ১৬০টি দেশে প্রায় ভিসা ফ্রী ঘুরতে পারলেও ফিলিস্তিনিরা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে ইজরায়েলের অনুমতি নিতে হয়। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে যদি কেউ ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে যেত চায়, তাহলে অনেকদিন আগে এপ্লাই করতে হয়। তাও ৯০% ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া যায় না। জিজ্ঞাসাবাদে ইজরায়েল সন্তুষ্ট হলেই কেবল অনুমতি দেয়।
বেশীরভাগ গাজাবাসী কখনো আল আকসা মসজিদ চোখে দেখেনি। কারণ আল আকসা পশ্চিমতীরে।

পিএলও আর হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের দুটি রাজনৈতিক দল। হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ গাজাতে আর পিএলও পশ্চিম তীরে।

তবে ২০০৬ সালে পুরো ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস পিএলওর উপরে জয়লাভ করে ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় আসে। ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়, কিন্তু মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দখল করে নেয়।
অনেকটা পাকিস্তানের নির্বাচনের মত। শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। ইসমাইল হানিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটে।

এরপর থেকে ইসমাইল হানিয়া তার এলাকা গাজাতেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকেন।
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ার মত, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন নিজেই তো স্বাধীন নয়।

মাহমুদ আব্বাসের পিএলও ইজরায়েলী সকল শর্ত মেনে ফিলিস্তিন তথা পশ্চিমতীরকে ডিমিলিটাইরাইজড করলেও গাজার হামাস সেটা মেনে নেয়নি।
পশ্চিম তীরে ইজরায়েলী শর্ত অনুযায়ী কোনো সেনাবাহিনী নেই। সিকিউরিটি ফোর্স আছে, যাদের নামে মাত্র একটা পুলিশ ফোর্স আছে। যেটা আছে তাদেরও শর্ত হচ্ছে ইজরায়েলী পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। তাদের কোনো ভারী অস্ত্র নেই। হাল্কা অস্ত্র যা আছে, সেটাও ইজরায়েলের দেওয়া। ওদের গাড়ীও ইজরায়েলের দেওয়া। যা ইজরাইল সবসময় ট্র‍্যাক করে।
কোনো ফিলিস্তিনিকে জোর করে বেআইনিভাবে ধরে নিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনি সিকিউরিটি ফোর্স কিছু করতে পারেনা।
এজন্য পশ্চিম তীরের যেকোনো বাড়ীতে ইজরায়েলী পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় তল্লাশী চালাতে পারে। আমরা যে পাথর ছোঁড়ার দৃশ্য দেখি, এগুলা বেশীরভাগই পশ্চিম তীরের। কারণ তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি নেই।
ইচ্ছে হলেই যে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দখল করে নেয়, সেটাও পশ্চিমতীরে। কারণ পশ্চিমতীর ইজরায়েলী অকিউপ্যাশনের আন্ডারে।
এখানকার বাসিন্দারা মোটামুটি চলাচলের স্বাধীনতা পেলেও ঘরবাড়ী কখন বেদখল হয়ে যাবে বলতে পারেনা। এতে ফাতাহ বা পিএলও কিছু করতে পারেনা।

অন্যদিকে হামাস শাসিত গাজা উপত্যকা ইজরায়েলের কোনো শর্ত মানেনা। তাদের মিলিটারী আছে। তাদের অঞ্চলে ইজরায়েলী পুলিশ ঢুকতে পারেনা। তারা নিজেরাই সেখানকার নিরাপত্তা দেয়। তাদের আর্টিলারি ইউনিট আছে। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র আছে। যার বেশীরভাগ তারা নিজেরাই তৈরী করে।
এখানে ইজরায়েলী সেটেলাররা তো দূরের কথা, ইজরায়েলী পুলিশ, ইজরায়েলী আর্মীও ঢুকতে পারেনা।

ইজরায়েলের শর্ত মেনে না নেয়ায় গাজা উপত্যকাকে ইজরায়েল চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। গাজার দুইদিকে ইজরায়েল, একদিকে মিশর আরেকদিকে সমুদ্র।
তাদের উপর ইজরায়েল ল্যান্ড, এয়ার এন্ড সী ব্লক দিয়ে রেখেছে। গাজা উপত্যকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেল খানা।
মিশর সীমান্তে আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি দেয়াল তুলে দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের চলাচলের জন্য মাটির নীচে সুড়ঙ্গ ছিল, সেগুলো সে বন্ধ করে দিয়েছে।
মুহাম্মদ মুরসী ক্ষমতায় আসার পর যখন মিশর সীমান্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খুলে দেয়, তখন ইজরায়েল মুরসীকে সবচেয়ে বড় থ্রেট হিসেবে নেয়।
ইজরায়েল, সৌদি ও আমিরাত জোট মুরসীকে হটিয়ে সিসিকে ক্ষমতায় আনে।
সে সময়ে সিসিকে সবার আগে অভিনন্দন জানায় সৌদি আরব।
যদিও ইজরায়েলের উদ্দেশ্য আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, লক্ষ্য ছিল একই। কপাল পোড়ে ফিলিস্তিনিদের।
এরপর থেকেই ফিলিস্তিনের জন্য সেই সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহারের জন্য মিশর সীমান্তে যে ঘরবাড়ি গুলো ছিল, বুলডোজার দিয়ে সেসব বাড়িও ভেঙে দেয় মিশর।

হামাস শাসিত গাজায় শিক্ষার হার ৯৯%। ইজরায়েলী হামলায় ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে সবার আগে তারা স্কুল গুলোকে ঠিক করে। তাদের একটা আন্তর্জাতিক মানের ইউনিভার্সিটি আছে।
গাজায় একটা বিমানবন্দর ছিল, গাজা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামে, যা ইজরায়েল ধ্বংস করে দেয়। পুরো ফিলিস্তিনে আর কোনো এয়ারপোর্ট নেই।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে ইজরায়েলের ফুল স্কেলে দুবার যুদ্ধ হয়। এতে ইজরায়েলী আর্মীর ব্যাপক প্রাণহানি কিছু ঘটেনি। ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইজরায়েলী সেনাদের গুটিকতক প্রাণহানি ঘটলে ইজরায়েল পিছু হটে। জুলাইয়ের ৮ তারিখ থেকে আগস্টের ২৬ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী এই যুদ্ধে প্রায় ১শ ইজরায়েলী সেনা নিহত হয়, অপরদিকে দুই হাজার ফিলিস্তিনিও নিহত হয়।
কিন্তু ইজরায়েলের জন্য এটাও ছিল বিশাল ধাক্কা।

গাজা উপত্যকায় খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় অষুধ সহ চোরাই পথে আনতে হয়।
ইরান চোরাইপথে অস্ত্র আর কাতার টাকা দেয়।
এর বাইরে তুরস্ক সমুদ্র সীমা আর ইজরায়েলী সীমা ব্যবহার করে জাহাজভর্তি খাবার, অষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গাজায় পৌঁছে দেয়। একবার তুরস্কের একটা জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল ইজরায়েল।
সৌদি আরব সহ অন্যান্য আরবদেশ গুলো তাদের দানের একটা বড় অংশ ফিলিস্তিনে পাঠায়। তবে সেটা গাজায় নয় বরং পশ্চিমতীরে যায়।

ইজরায়েল হামাসকে বার বার বলছে- তোমরা যদি আমাদের শর্ত মেনে নাও, সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করো, অস্ত্র সমর্পণ করো, নিরস্ত্র হও তাহলে তোমাদের ওপর থেকে সব অবরোধ আমরা তুলে নেব। তোমরা যেখানে চাও যেতে পারবে। আমাদের এখানে চাকরী করতে পারবে। যা কিনতে চাও, তা কিনতে পারবে।
মাহমুদ আব্বাসের পিএলও পশ্চিমতীরে এই শর্ত মেনে নিলেও ইসমাইল হানিয়া আর খালিদ মিশালের গাজা উপত্যকার হামাস সেটা মেনে নেয়নি। যার কারণে তারা এখনও অবরুদ্ধ।
এই কারণে পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনিরা ইজরায়েলের দিকে ঢিল আর পাথর ছুঁড়লেও গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে, ইজরায়েলের দিকে মিসাইল ছোঁড়ে।

যদিও ইজরায়েলী অত্যাধুনিক ডিফেন্স সিস্টেম আইরন ডোম ফিলিস্তিনিদের এই মিসাইল আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে। তবে এইবার ইজরায়েলের আইরন ডোম হামাসের মিসাইল গুলো সব আটকে দিতে সক্ষম হয়নি। অনেক গুলো মিসাইল ইজরায়েলের নানা শহরের রাস্তা এবং ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে ইজরায়েল সহ তার মিত্ররা বেশ অবাক হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে ইসমাইল হানিয়ে গত বছর বলেছিলেন।

আইরন ডোম কতটা আঘাত ঠেকাতে সক্ষম সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে, কারণ হামাসের মিসাইল গুলো কোনো অত্যাধুনিক মিসাইল নয়। এগুলো তারা পাইপ এবং অন্যান্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্র থেকে বানায়। এই হ্যান্ডমেইড রকেট গুলো আঘাত হানার পর আইরন ডোম কতটা সেফ সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বার্ষিক সামরিক সহায়তা, বিলিয়ন ডলারের শিক্ষা এবং রিসার্চের ইনভেস্টমেন্ট, প্রায় ভিসা ফ্রী ট্রাভেল, নামী ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের একনিষ্ঠ সাপোর্ট এত কিছু পাওয়া ইজরায়েলের সাথে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের তুলনা করার সময় আপনারা যারা "ইজরায়েল জ্ঞান বিজ্ঞানে কত এগিয়েছে অথচ ফিলিস্তিন জ্ঞান বিজ্ঞানে এগোয়নি কেন?" বলেন, তখন আপনাদের আর যাই হোক, লজ্জা করে না?

যাই হোক, এখন খবর হল যে, ইজরায়েল (Jew), জার্মানিকে ধন্যবাদ দিচ্ছে তাদের সাপোর্ট করার জন্য 🤣

সত্যি, জীবনে আর কিছু দেখার ইচ্ছে বাকি নেই! 🙂

#হিটলার #জার্মান #ফিলিস্তিন #ইজরায়েল

সূত্র: ইন্টারনেট

কলমে: ©উshaস~

টিউশনির সময় ...


এই শহরের প্রতিটা টিউশন করানো ছেলে-মেয়ে মাসে অন্তত একবার করে ভাবে, এভাবে আর সম্ভব না। না জেনেও অভিভাবকদের খবরদারি, অনেক ইচ্ছার স্বার্থত্যাগ করা, যে সময়ে বন্ধুরা আড্ডা দেয়, সেই সময়ে টিউশন অথবা টিউশনের এর জন্য ঘুরতে যাওয়াটা মিস করা; এভাবে আর হয়না আসলে..

এখন কর্পোরেট ট্রেনার হলেও, আদপে তো সেই একই!

তবু দিন শেষে ছেলেমেয়েগুলো টিউশন টা ছাড়েনা। কারণ এটা থেকেই আর্থিক একটা স্বাধীনতা আসে, নিজের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো, সখ-আহ্লাদ পূরণ হয়। আমার তো মনেহয়, বাড়িতে গিয়ে টিউশন করানো হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে কম টাকায় সবচেয়ে কষ্টের পেশা!
তাতে আবার যদি WB বোর্ডের স্টুডেন্ট হয়, তালে তো কথাই নেই, আমাদের সময় অ্যাডভান্সে মাইনের কথাটা ভাবাও যেত না!
তা, এমনিতেই ঘড়ি কম পরা হয়, সময়ের মূল্য আমার কাছে কম বলে, তবে আজ হঠাৎ করে একটি ঘড়ি খুব পছন্দ হয়ে গেল। ছোটো থেকেই ঘড়ি আর জুতোর ব্যাপারে একটু শৌখিন ছিলাম, আগ্রহ নিয়ে ঘড়িটা দেখছিলাম, দামটার দিকে চোখ পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল, হাঁটা শুরু করলাম গন্তব্যের পথে।

হাটতে হাটতে পেট্রল পাম্প এর মোড় ক্রস করতেই স্মৃতি চারণ করছিলাম। কলেজের দিনগুলোতে ছুটির পর মাঝে মাঝেই সোদপুরে যেতাম। সেখানে গেঞ্জি, পাঞ্জাবির দোকান গুলোর পাশে ফাস্টফুডের একটা দোকান ছিল। শোয়ার্মা বানানোর মেশিনটা বাইরে থেকে দেখা যেত, অনেক না চেনা খাবারের ঘ্রাণ পেতাম পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়। কোন দিন উঁকি মেরে দেখার ও সাহস হয়নি, মানিব্যাগ ব্যবহার করা হোতোনা তো তাই!

কিছু দিন আগে এক কাজে সোদপুরে যেতে হল। দোকান এর দিকে চোখ পড়তেই ঢুকে পড়লাম। দুই একটা আইটেম টেস্ট করার পর আমার খাওয়ার মত আর কিছু ছিল না, আর এক সময় এখানে খেতে পারা অনেক বিশাল কিছু ব্যপার ছিল 😊

একটা জিনিশ মনে পড়তেই মনটা আবার ভাল হয়ে গেল। আসলেই কোন এক মহাপুরুষ যথার্থই বলছেন-- " If something bothers you, just think. Will it matter in next 5 months, a year even in 5 years? If the answer is no. Then let it go "  

হয়ত এক সময় ৭০,০০০ টাকা দামের ঘড়িও কোন ব্যাপার হবে না 😊 সেই দিনের অপেক্ষায়, আজও টিইশনটা ছাড়া হয় না, কর্পোরেট ট্রেনার হয়েও!!

©উshas~ 

Monday 17 May 2021

শৈশবের সে দিনগুলি ...

শৈশব বড়ই কিম্ভুত-কিমাকার, তখন এরকম নিয়ন বাতির ঝকঝকে জৈষ্ঠ্যের সন্ধ্যা নামতো না!

সেই দিনগুলোতে সর্বজনবিদিত একটা সুত্র ছিলো- সন্ধ্যা মানেই লোডশেডিং ....মাঝেমধ্যে দুমিনিটের জন্য ইলেক্ট্রিসিটির দেখা মিললেও আবার নিমেষেই উধাও হয়ে যেতো। অনেকটা দিঘিতে ভেসে ওঠা পানকৌড়ির মতন। এই ক্ষণে দেখা যায়..আবার হঠাৎ করেই এক ডুবে নিরুদ্দেশ!

তো তখন লোডশেডিংয়ের কারণে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ভূতুড়ে অবস্হা বিরাজ করতো।

হ্যারিকেন কিংবা প্রদীপের আলোয় টুকটাক কাজ চলতো সবার। সন্ধ্যার পুজো-আচ্ছা করার পর চায়ের সাথে মুড়ি দিয়ে গলা ভিজিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ার টেবিলে বসতো ছেলেপুলেরা। যাদের বাবা-মামা বিদেশে থাকতো তাদের দুটো বিশেষ চিহ্ন ছিলো। হাতে কালো ফিতের ক্যাসিও ঘড়ি আর বাড়িতে বিশেষ ধাতব এক প্রকার লাইট।

আমার বাবা-কাকা-মামা বিদেশে না থাকার সুবাদে আমাদের কোনো মেটালের তৈরি কালো হাতলওয়ালা লম্বা লাইট ছিলো না। হারিকেনের সলতে জ্বলা সেইসব সন্ধ্যেবেলায় দরজা খোলা রেখে হাতের কাছে বড়জোর সেই টর্চের লাইটটা নিয়ে পড়তে বসতাম।

হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা শব্দ আসলেই সবার কান খাড়া হয়ে যেতো..সতর্ক হয়ে উঠতাম..কখন গাছে ঝুলে থাকা পাকা আম বাইরে সজোরে টিনের চালায় ধুমধাম পড়বে.. আর আমার মতন পড়ার টেবিলে সতর্ক হয়ে লাইট নিয়ে বসে থাকা ছেলেরা দৌড়ে গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে হুমড়ি খেয়ে সেই আমটা খুঁজে বের করে জয়ীর বেশে ফিরে আসবে...
আমার মায়ের আবার ছিল আরেকটি সখ্, নারকেল পড়লে যে ধূপ ধাপ শব্দ হয়, সেদিকে ওনার কান থাকতো সর্বদাই, এ ব্যাপারে আমি আর আমার বোন দুজনেই ছিলাম মায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট। খুব সস্তা একটা ব্যাপার, অথচ -কি সুখ! কি আনন্দ!!

আমাদের চারিদিকে এত কনক্রিটের দেওয়াল ছিলোনা তখন.. ফলতই দেয়াল ছিলোনা শিশুসুলভ মনেও, হাওয়ার মতন উড়তাম সবাই। সুখ দুঃখ বুঝতাম না, অথচ নিরন্তর সুখেই ডুবে থাকতাম।
ঘোড়ার লাগাম কষলে যেমন ঘোড়ার ছোটার গতি কমে আসে, বয়সের লাগাম তেমনি আমাদের সুখকে টেনে ধরে রেখেছে।
নিরালায় নিঝুম মনের নীরব ভাবনায় নিজেকে নিজের কেবলি জিজ্ঞাসা- কোথায় গেল সে অনিন্দ্য সুন্দর-সস্তা সুখ? কোথায় গেল সে অনাবিল আনন্দ!?

©উষস চট্টোপাধ্যায়~ 

Saturday 15 May 2021

যুদ্ধের দামামা বাজে ঐ...

সময়টা ভালো যাচ্ছে না, একে তো এই অতিমারীর সময়, তায় এ মহামারীর মধ্যেই মাথাচাড়া দিচ্ছে মহাযুদ্ধের আভাস। সারাক্ষণই আতঙ্কে কাটছে সাধারণ মানুষের দিনকাল। এই বুঝি বেজে উঠবে সাইরেনের তীক্ষ্ণ শিস।। মারণ ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চারদিকে। এই অবস্থাতেও যুদ্ধ ও দখলের রক্তাক্ত ইতিহাস পৃথিবীকে ছাড়তে চায়নি। দেখতে দেখতে কতগুলো দিন হয়ে গেছে। ইজরায়েল (Israel) ও ফিলিস্তাইনি জঙ্গি সংগঠন হামাসের (Hamas) মধ্যে সংঘর্ষ থামার কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। তাই, হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাই আঁকড়ে ছুটে গিয়ে লুকোতে হবে আন্ডারপাসে। কখন কোন বাড়িতে আছড়ে পড়বে রকেট, কে জানে! দূরে বসে আমরা দেখছি সেইসব ভিডিও। রাতের আকাশ আলো করে রেখেছে রাশি রাশি সব রকেট। যেন আতসবাজি, আসলে মৃত্যুবান, ঠিক যেন রামানন্দ সাগর-এর কোনো ঐতিহাসিক সিরিয়াল! কার জন্য মরণের শমণ আনছে কে তার হিসেব রাখে। অথবা কোনও উঁচু অট্টালিকা গুঁড়িয়ে গেল আছড়ে পড়া রকেটে। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে আর্ত চিৎকার, শেষ সময়ে নিজের ঈশ্বরকে ডেকে নিচ্ছে কেউ। এমনই সব ভিডিও ও ছবি দেখে আঁতকে উঠছে বিশ্ব, থুড়ি, অন্য আরেক বিশ্ব! এদিকে আছড়ে পড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, মানুষ মারা যাচ্ছে অক্সিজেনটুকু না পেয়ে। ঠিক সেই সময়ই আর একদল মানুষ উদ্যত এই চাহিদায়, যে একে অন্যকে শেষ করে ফেলতে হবে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে। আরও ক্ষয়, আরও মৃত্যুর খতিয়ান যেন তৈরি হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছে। কিন্তু কেন? ‘কেন’ ইজরায়েল ও ফিলিস্তাইনের (Palestine) মধ্যে এই লড়াই? আসলে এই লড়াই অনেক কাল পুরনো। দশকের পর দশক ধরে চলছে। কখনও তা তীব্র আকার ধারণ করে, কখনও আবার চলতে থাকে ঢিমে তালে। ইজরায়েলের তেল আভিভ বা অন্য বড় শহরের মানুষের কাছে তাই মাঝেমধ্যে আকাশ থেকে রকেট আছড়ে পড়তে দেখা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতিটা হয়ে গিয়েছে ভয়ংকর। তাই আশঙ্কায় কাঁপছে সারা বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। আমার মতো, অনেকেরই মনে পড়ছে ২০১৪ সালের কথা। সেবার টানা প্রায় ২ মাস চলেছিল একটানা লড়াই। গাজা (Gaza) ভূখণ্ডে ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণে চুরমার হয়েছিল ঘরবাড়ি। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল গাজা শহরটা। ইংল্যান্ডের প্লেয়ার মোইন আলির সাজাও হয়েছিল হাতে বিশেষ ধরনের ব্যান্ড পরার কারনে, যাতে লেখা ছিল 'SAVE GAZA'। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) সেবার তাকে হুঁশিয়ারি অবধি দিয়েছিল! এবারও ইতিমধ্যেই গাজা শহরের বড় বড় ইমারতের ক্ষতি হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। পাল্টা রকেট হামলা করে চলেছে হামাসও। যদিও ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে বেশির ভাগ রকেটকে প্রতিহত করে দিয়েছে ইজরায়েল, নাহলে গত চারদিনে ছোঁড়া ১৬০০ রকেটে তেল আভিভের মতো শহর তছনছ হয়ে যেতে পারত। 


আসলে এই সমস্যার শুরুয়াৎ অনেক গভীরে। ইতিহাস বলবে সেই খ্রিস্টজন্মের আগের সময়কালের কথা। তবে মোটামুটি আধুনিক সময়ের হিসেবে তার সূচনা গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে গঠিত হয় ইজরায়েল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশগুলি মান্যতা দেয়নি তাদের। অনেক টালবাহানার পরে স্থির হয় পশ্চিম জেরুসালেম থাকবে ইজরায়েলের অধীনে আর পূর্ব জেরুজালেম থাকবে জর্ডনের অধীনস্থ। কিন্তু তা ছিল একেবারেই অস্থায়ী ব্যাপার। দু’দশক যেতে না যেতে লাগল যুদ্ধ; ১৯৬৭ সালে সিরিয়া, জর্ডন ও ফিলিস্তাইনিদের সঙ্গে ইজরায়েলের লড়াইয়ের পরে পূর্ব জেরুসালেমও দখল করে নেয়। সেই সঙ্গে দখল করে আরেক উল্লেখযোগ্য স্থান ফিলিস্তাইনের ওয়েস্ট ব্যাংক। এরপর থেকেই এই সব অঞ্চলে ইজরায়ে‌ল ও ফিলিস্তানীয়দের সংঘর্ষ এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। 


এরই মধ্যে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় ফিলিস্তাইনের সবচেয়ে কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন হামাস। ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তাইনি গণজাগরণ শুরু হওয়ার পরে তাদের জন্ম হয়। এই জঙ্গিগোষ্ঠীর ঘোষিত লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ইজরায়েলের ধ্বংস। বর্তমানে যা ইজরায়েল, গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংককে একসঙ্গে নিয়ে তৈরি হবে একটি ইসলামপ্রধান রাষ্ট্র, এমনই স্বপ্ন দেখে তারা। প্রাথমিক ভাবে সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডসের মাধ্যমে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালানোর পরিকল্পনাই ছিল তাদের।

তবে ২০০৫ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেও অংশগ্রহণ করে হামাস। পরের বছর ফিলিস্তাইনের আইন পরিষদের নির্বাচনেও জিতে যায়। কিন্তু এরপরই ২০০৭ সালে আরেক প্রবল শক্তিশালী জঙ্গি গোষ্ঠী ফাতাহ-র সঙ্গে তাদের লড়াই লেগে যায়, কিন্তু সেই যুদ্ধে জিতে যায় হামাসই। আর তারপর থেকে গাজা রয়েছে তাদেরুই দখলে। আর সেই থেকেই ইজরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘর্ষ সমানে চলছে। ইজরায়েল চেষ্টা করে চলেছে গাজা দখল করে নিতে, আকাশপথে হানা দিয়েছে। আর হামাস বারবার রকেট ছুঁড়ে ইজরায়েলকে চায় পালটা জবাব দিতে। কেবল ২০০৮ সালেই ইজরায়েলের সেনার আক্রমণে ১৩০০ ফিলিস্তানি মারা যান। মৃত্যু হয় ১৩ জন ইজরায়েলির। পরে ফের ২০১২ সালে ইজরায়েলের এয়ার স্ট্রাইকে হামাসের কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার আহমেদ জাবারির মৃত্যু হলে শুরু হয় প্রবল সংঘর্ষ। সেবারও ১৭০ জন ফিলিস্তানি ও ৬ জন ইজরায়েলির মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালে শুরু হয় আরেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। হামলা, এবং পালটায় ক্ষতবিক্ষত হয় গাজা, মারা যান ২১৪৩ ফিলিস্তাইনি। আহত ১১ হাজার, ঘরছাড়া হতে হয় লক্ষাধিক সাধারণ মানুষকে! 


রাষ্ট্রসঙ্ঘ, কাতার ও ইজিপ্টের তৎপরতায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ না বাঁধলেও সেই থেকেই কার্যত বারুদের স্তূপের উপরে রয়েছে গাজা ও আশপাশের অঞ্চল। তবে হামাসের পক্ষে ইজরায়েলের বড় ক্ষতিসাধন সম্ভব হয়নি ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য।

২০১৪ সাল থেকে ২০২১। ফের শুরু হয়েছে বড় ধরনের সংঘাত। আসলে ইজরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জারাহ এলাকায় কয়েক ঘর ফিলিস্তানি পরিবারের ভিটেমাটিহারা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই নতুন করে সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছে, অথচ ওই অঞ্চলে ওই পরিবারগুলি থাকতে পারবে কিনা সেই নিয়ে মামলা চলছে ১৯৭২ সাল থেকে। সেই থেকেই ইহুদিদের দাবি ওই জমি তাদের। আর ফিলিস্তানিদের কাছে এ আসলে তাদের বাস্তুচ্যুত করার রাষ্ট্রীয় কৌশল বলে মনে হয়েছে। সেই থেকেই শুরু, প্রথমে ছোটখাটো সংঘর্ষ, ক্রমে বিষয়টা গত ক-দিন ধরেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘোর করোনা কালে পুরনো শত্রুতাকে আঁকড়ে ধরে দু’পক্ষের হানা সংঘর্ষ, হামলা-পালটা জবাবের এক অনর্গল বৃত্ত! ব্যাক টু স্কোয়ার ওয়ান! পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের আশঙ্কা, এবার বোধহয় আর পূর্ণাঙ্গের যুদ্ধ হওয়াটা আটকানো যাবে না। 


আর মানুষ? সাধারণ মানুষ? তাঁদের দিন কাটছে প্রার্থনায়, বিশেষ করে গাজার পাশ্ববর্তী এলাকায়। সাত বছর আগের সেই ধ্বংসলীলার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে সেখানে। হামাসের দাবি, এখনও পর্যন্ত এই ক’দিনে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এখানে। যার মধ্যে রয়েছে ১৭টি শিশুও! আহতের সংখ্যা প্রায় পাঁচশো! ইজরায়েলের অবশ্য দাবি, নিহতদের অধিকাংশই আসলে জঙ্গি। আতঙ্ক রয়েছে তেল আভিভ, আশকেলন, আশদদের মতো শহরেও। সব রকেট যে আটকাতে পারে না শক্তিশালী প্রযুক্তিও। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি একটি রকেটও আছড়ে পড়ে? প্রতি পদে তাই ঘুরে ঘুরে যায় মৃত্যুর সার্চলাইট। 


বৃহত্তর দৃষ্টিতে সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধে মৃত্যু আসলে সংখ্যা মাত্র, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের বারুদগন্ধের ভিতর থেকে যে ক্রন্দনধ্বনি ঠিকরে বেরোয়, তা বুঝিয়ে দেয় যুদ্ধে যেই জিতুক বা হারুক আসলে পরাজিত হয় সাধারন মানুষই। আমাদের কি, আজ শনিবার, উইকেন্ডে সবাই মিলে জমিয়ে মাংস খাওয়া যাবে! তার ওপর কাল থেকে ঘোষিত লকডাউন ... 😊 


©Uষস চttopadhyay~

তাং:- ১৫|৫|২১