Thursday 7 October 2021

হিটলারের ক্ষমতায়নের পর...


১৯৩৩-এ জার্মানির অবস্থা! (হিটলারের ক্ষমতায়ন)

#পঞ্চম_এপিসোড #৫ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৫ম_ভাগ


ওয়েইমার রিপাবলিক কে প্রায়ই গণতান্ত্রিক ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক দুর্বলতার অন্যতম এক উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু যখন এটিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করতে শুরু করেন, তখন দেখবেন যে এটি আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘতম বেঁচে থাকা গণতন্ত্রের মধ্যে একটি। তৃতীয় রাইকে রূপান্তরের শুরুর দিকে, ২৭-এ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ সন্ধ্যার ঠিক পরেই, পথচারীরা রাইকস্ট্যাগের বা তার কাছেপিঠের থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনতে পায় এবং কিছুক্ষণ পরেই ভবনের অভ্যন্তরে আগুন জ্বলতে দেখে। ঘটনাস্থলে হিটলার, গোয়ারিং এবং গোয়েবলস পৌঁছানোর পর অস্ত্রাগার আক্রমণকে কমিউনিস্ট চক্রান্ত বলে ঘোষণা করেন, যা করা হয়েছিল আগুন এবং সন্ত্রাস কে ব্যবহার করে, এটি  গোয়েবেল তার ডায়রিতে লিখেছিলেন, যা কিনা প্রদর্শিত হয় জনসাধারণের আতঙ্ককে ক্রমান্বয়ে বিভ্রান্তি হিসেবে তুলে ধরা এবং নিজেদের জন্য ক্ষমতার উপলব্ধি করানো হয়েছিল, যদিও এ ব্যাপারে দ্বিমত আছে। (Sefton Delmer) সেফটন ডেলমার, একজন নামী সাংবাদিক, যিনি সেদিনের জন্য রিপোর্ট করছিলেন, লন্ডন ডেইলি এক্সপ্রেসের হয়ে। তিনি ঘটনাস্থলে আসার সাথে সাথে, হিটলার তার কাছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বললেন, "you are now witnessing the beginning of a great new epoch in german history, Herr Delmer! অর্থাৎ আপনি এখন জার্মান ইতিহাসে একটি মহান নতুন যুগের সূচনা করতে দেখছেন"।
এ ব্যাপারে ডেলমারের রায়, বার্লিন স্পোর্টস প্যালেসের সমাবেশে, ১৫০০০ অন্যান্যদের সাথে যোগ দেওয়ার পর হিটলারের সম্বন্ধে দিয়েছিলেন এই বলে, "তিনি একজন ক্র্যাকপট মানে বোকা বা অবাস্তব লোক ছিলেন।"

অগ্নিকাণ্ডের ঠিক পরদিন সকালে মন্ত্রিসভা যেটা এখনও নাৎসি দের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, একটি জরুরী ডিক্রি তৈরির জন্য বৈঠক করে, যা জার্মানিতে নাগরিক স্বাধীনতা বাতিল করে। এটি বাক স্বাধীনতা, সমাবেশ বা মিটিং-মিছিল করবার অনুমতিকে, বিজ্ঞপ্তি বা সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাতিল করে দিয়েছিল, ঠিক আমাদের দেশের ইমার্জেন্সির সময়ের মতো। কয়েক মাসের মধ্যেই, মানে গরমকাল আগমনের আগেই সমস্ত বিরোধী দল চূর্ণ করা হয়ে গিয়েছিল, ১০০,০০০ জনেরও বেশি কমিউনিস্ট, সামাজিক গণতান্ত্রিক দলবলের লোকজন এবং নাজিদের অন্যান্য বিরোধীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগকেই 'Dachau/ডাকাউ' নামে শহরের বাইরে একটি নতুন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

এখন নাৎসিরাই ছিল একমাত্র আইনি দল এবং হিটলার এখনও কোনোভাবেই অসাংবিধানিকভাবে কোনো কাজ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তার ক্রিয়াকলাপ গণভোটে ৯৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিল।

৩২ এর অক্টোবরে, জার্মানি লীগ অফ নেশনস এবং নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসে এবং যার ফলে (Sir Horace Rumbold) স্যার হোরেস রাম্বোল্ড, যিনি হিস ম্যাজেস্টির এম্বাসেডর ছিলেন ও বার্লিনের মহামান্য রাষ্ট্রদূত হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন যে, "many in the diplomatic corps have a feeling that we are living in a country where fanatics, hooligans and eccentrics have got the upper hand! যার মানে, কূটনৈতিক মহলের অনেকের মনে এমন ভাবনা আছে যে আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে ধর্মান্ধ, গুন্ডা এবং খামখেয়ালি ছিটিয়ালরা সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে!"...

'ভয়' এখন জার্মান জনজীবনের মূল চালিত ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছিল। ভয়ের চোটে ৫০০ নেতৃস্থানীয় পৌরসভার সিভিল সার্ভেন্ট বা কর্মচারী এবং ৭০ টি শহরের মেয়রকে অফিস থেকে বের করে দিতে বাধ্য করেছিল, এমনই ছিল হঠাৎ করে অচেনা, অজানা আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক কিছুর আসল এবং স্পষ্ট ভয় যা, ৫৬ শতাংশ জার্মান, যাদের ভোট নাৎসিদের কাছে যায়নি, তারাও সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, কিছু পরিমান সাহসের দেখা দিয়েছিল কিন্তু খুব বেশি মানুষ তাতে অঙ্গভঙ্গিও করেনি, এককথায় সেটাও দাবিয়ে দেওয়া হয়। এখন স্লোগানগুলি তাদের কাছে একজোট হওয়ার দাবি করেছে, কিছু মানুষ সত্যিকারের উৎসাহ নিয়ে করছিল। লোকেরা একে অপরকে, তাদের প্রতিবেশীদের, ইউনিফর্মের ভিতর ফাঁকা ফানুসের মতো ঠগদের ভয় পেতে লাগল...

জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও প্রচারের জন্য গোয়েবলসের রাইকমিনিষ্ট্রি বা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছিল, ১৩ মার্চ। আমেরিকান মুভি কোম্পানি ট্রেড প্রেসকে এক দীর্ঘ ফটোশুটের জন্য একটি চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গোয়েবলস মেশিন, মানে লোকজন, তাদের এককথায় যা ভালো মনে করত তাই ওদের খাইয়ে বা গিলিয়ে দিত, তাই তারা একে প্রপোগান্ডা না বলে 'নাজি-গান্ডা' বলত। তাদের মতে, "হিটলারকে সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডানদিকের থেকে, বাম দিক থেকে, প্রতিটি এঙ্গেলস থেকে ছবি তোলা হয়েছিল, যেন সব ছবিতেই মেন আকর্ষণ হিটলার, হিটলার এবং হিটলারের সমাহার!
মিউজিক্যাল কমেডি, 'মাই উইকনেস' নামের এক মুভি, শুধু এই কারণেই জার্মান মুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়ে যে, মেয়েদের ছোট প্যান্টি বা অন্তর্বাস পড়ানো হয়। গোয়েবলসের অধীনস্থ মন্ত্রীসভার মতে সেটি তৎকালীন নতুন জার্মানির নৈতিকতাকে দূষিত করবে। কিং কং, যা কিনা বছরের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ সিনেমা, সেটাকেও অনুমোদন দেওয়া হয় নি এই বলে যে, জার্মান জাতি প্রবৃত্তির ঘৃণ্য হিসেবে।
১০ই মে, গোটা জার্মানি জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, বইয়ের কার্টলোডগুলি অগ্নিকুণ্ডের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল পুরো যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো, সামরিক প্রস্তুতির চেতনায় জাতির শিক্ষার জন্য, তার মান আরো উন্নত করার জন্য, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি।
গোয়েবলস সেদিনের অসাধারণ জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা (Fritz Lang) ফ্রিটজ ল্যাংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, জার্মান চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান কার্যনির্বাহী হতে। নিচে তাদের পাওয়া কথোপকথনের অনুবাদ বাংলায় দেওয়া হল, যা ইন্টারনেট থেকে সহজেই পাওয়া যায়;
"তোমার জানা আছে কিনা জানি না" ল্যাং বলে, "যে আমার ঠাকুমা একজন ইহুদি ছিলেন"। নিজের ভয়ে স্বীকার করে বলেন, আর তার প্রত্যুত্তরে "আমি সিদ্ধান্ত নিই যে কে ইহুদি আর কে নয়", গোয়েবল শাসানোর সুরে বলে, ল্যাং ঠিক তার পরপরই জার্মানি ছেড়ে চলে যায় ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~

No comments:

Post a Comment