Showing posts with label Education. Show all posts
Showing posts with label Education. Show all posts

Friday, 21 April 2023

How in different language say "When Pigs Fly."

 How different languages say “When Pigs Fly.”


Language diversity makes languages fun and interesting. It shows the varied potential of human genius and imagination. Imagine how much fun we would have been robbed of if we had only one language! Having different ways to say something across cultures is a great source of joy and fascination. I always ask my tremendously diverse community on Facebook about how they say stuff in their own languages and the results never stop to fascinate us. Down below is our latest thread of how different languages say “when pigs fly”, i.e. it will never happen. We hope you enjoy what you’re about to read...



Welsh:

When Christmas will be in the summer and goosberries in winter.


Turkish:

When a fish climbs a poplar tree.


Ukrainian:

When the crayfish on the hill whistles.


Portuguese:

On Saint Never’s day.


Tai:

When 7-11 closes.


German:

When Easter and Whistun fall on the same day.


On Saint Never’s day / on Saint Never.


When Hell freezes over.


When it snows in summer.


I’ve seen horses puke before.


On poodle’s Whitsunday.


Serbian:

When grapes grow on willows.


Chinese:

When the sun would rise from the West.


Croatian:

When grapes rippen the on willow.


On St. Nobody’s day.


Polish:

When a cactus grows on my hand.


Tagalog:

When the crow turns white.


Finnish:

When hell freezes over.


When cows fly.


When flagpoles bloom.


Danish:

When there’s two Thursdays in a week.


Swedish:

When hell freezes over.


When pigs fly.


When the asphalt blossoms.


Spanish:

When frogs grow hair.


When it rains upwards.



Slovenian:

On Saint Never’s Day.


Russian:

When the crayfish on the hill whistles.


French:

When chickens grow teeth.


In the week with 4 Thursdays.


On Saint Glinglin’s day (an imaginary saint).


Scots:

When two moons in the sky shall shine.


Italian:

When donkeys fly.


When Easter falls in May.


In the year of never and the month of then.


In the week with two thursdays.


When hens piss.



Hungarian:

When it’s snowing red snowflakes.


When Hell freezes over.


Romanian:

when I see the back of my head.


English:

When pigs fly / and pigs might fly.


When hell freezes over.


On a cold day in hell.


Not in a month of Sundays.


Occitan:

When hens pee.


Irish:

When the sky falls to the ground.



Norwegian:

When it’s snowing in hell.


Latvian:

When the owl’s tail blossoms.


Moroccan:

When a goat flies.


Korean:

The sound of a ghost eating rice seeds.


Hindi:

When the sun rises in the west.


Bengali:

যখন সুর্য পশ্চিমে উদয় হয়/When rise up in the West


Dutch:

If the calves dance on ice.


If the owls preach.


Danish:

When there’s two Thursdays in a week.


Bosnian:

When grapes rippen on the willow.


Algerian:

When salt produces flowers.


Greek:

When the sun rises from the west.


When the earth stops turning.


Brazilian Portuguese:

When cows cough.


There's lot of things to learn through fun, keep following for more, cheers!

Thursday, 9 December 2021

সূর্য সেন ও চট্টগ্রামে বিদ্রোহ


 

"বাবা, কি দেখছো?" ছেলে জিজ্ঞেস করলো। ছাত্র পড়িয়ে এখনকার কোভিড সময়ের CBSE ও ICSE-র টার্ম-১এর ফাঁকা টাইমে ইউটিউবে দেশাত্মবোধক এটা সেটা সার্চ করতে করতে সূর্য সেন নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, আমার রিসার্চের সেম-টাইমফ্রেমের মধ্যেই পড়ছিল।
উত্তরে আমি বললাম যে, "আজকের দিনে আমরা যে স্বাধীন দেশটি অর্জন করতে পেরেছি, যাদের জন্য পেরেছি, তাদেরই মধ্যে একজনের স্বমন্ধে প্রতিবেদন। এই যেমন গতকাল বিনয়, বাদল, দিনেশ এর জন্য মনে রাখা উচিত..."। বলে দুইজনে হুজুগে দু-দুটি সহজপ্রাপ্য সিনেমাও দেখে ফেললাম সকাল থেকে। ছেলেরও এখন ছুটি, সদ্য অ্যানুয়াল শেষ হওয়ায়। বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ও প্রতিবেদন দেখার পরে যে মুভি দুটি দেখলাম তা হল; ১: Chittagong (2012)
২: Khele Hum Jee Jaan Se (2010)
আপনারা আশা করি বুঝতেই পারছেন যে কোন বিপ্লবীর কথা আমরা বলাবলি করছিলাম। হ্যা, সূর্য সেন, 'মাস্টার দা' সূর্য সেন। তা ছেলের ইতিহাস বইতে সেও পড়েছে 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন'.. ব্যাস, ওর-ও বেশ ইচ্ছা চেপে বসল। ইতিহাসকে আরো জানার, আরো শেখার! স্বভাবতই প্রশ্ন এলো, "কে এই মাস্টার দা?" তার উত্তরে নিচের প্রতিবেদনটি লেখা রইল! 👇🏼

বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক হলেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক 'মাস্টার দা' সূর্য সেন। ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে সূর্য সেন তার ছাত্র ও সহযোগীদের নিয়ে 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি' গড়ে তোলেন। ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রি অম্বিকা চক্রবর্তী, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখ ৬৫ জন সঙ্গীকে নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ ও লুন্ঠন করেন। তাঁরা টেলিফোন, টেলিগ্রাফের তার বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে ‘স্বাধীন বিপ্লবী সরকার’ গঠন করেন। এরপর ইংরেজ সৈন্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করলে বিপ্লবীরা নিকটবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং যুদ্ধ শুরু করেন। সশস্ত্র যুদ্ধে কয়েকজন বিপ্লবী নিহত হন ও অন্যান্যরা পলায়ন করে কিছুদিন ধরে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে যান। মাস্টারদার অন্যতম শিষ্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন এবং পুলিশের হাতে ধরা পরার আগে আত্মহত্যা করেন। অবশেষে ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দে বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সূর্যসেন ধরা পড়েন, বিচারে তাঁর ফাঁসি (১৯৩৪ খ্রীঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী) হয়। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের এই যুব বিদ্রোহ সমগ্র ভারতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করে। চট্টগ্রামের ঘটনার গুরুত্ব বিচার করতে গিয়ে স্যার স্যামুয়ের হোয় একে ‘বিপ্লবীদের ইতিহাসে অভূতপূর্ব' বলে অভিহিত করেছেন।
এই হল সারমর্ম, কিন্তু আমার ইতিহাস আর ক্লাস সিক্সে পড়ার ইতিহাস কিছু হলেও ভিন্ন তো হবে, তাই না? আসুন আরো গভীরে যাওয়া যাক।

একপাশে কালী অপরদিকে বিবেকানন্দের ছবি রেখে যুদ্ধের বার্তা দিতেন মাস্টারদা:

'মৃত্যু কিংবা স্বাধীনতা', এই মন্ত্রে বিশ্বাস করতেন মাস্টারদা, তিনি সবার মাস্টারদা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বড় মুখ। সেই মাস্টারদা তাঁর সহ যোদ্ধাদের প্রত্যেকের ঘরে স্বামীজির ছবি রাখার কথা বলেছিলেন। বিবেকানন্দের আদর্শে যেমন উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন নেতাজী, তেমনই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনও। সেই তথ্য মেলে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে।

শঙ্করীপ্রসাদ বসু তাঁর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’-এর ষষ্ঠ খণ্ডে ‘বিবেকানন্দ ও বিপ্লব আন্দোলন’ অধ্যায়ে বিপ্লবী অনন্ত সিংহের লেখা ‘সূর্য সেনের স্বপ্ন ও সাধনা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, সূর্য সেন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে কতখানি প্রভাবিত ছিলেন সে সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন তাঁর আর এক সহকর্মী অনন্ত সিংহ। "মাস্টারদা… বিনয়ের সঙ্গে অথচ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে চারজন বিপ্লবী বন্ধুকে বললেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের বুকে বসে মাত্র এই পাঁচজনে ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবের পরিকল্পনা করছি। আমার মনে হয় বর্তমানে মূলত আনন্দমঠের আদর্শে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চলা উচিত এবং মা-কালী পূজা, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের বাণী ও গীতাপাঠ কর্তব্য হওয়া প্রয়োজনʼ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবাই আলোচনার পরে মাস্টারদার এই সমস্ত প্রস্তাবগুলো মেনে নিলেন। প্রত্যেকের নিজের ঘরে মা-কালীর ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, স্বামী বিবেকানন্দের ছবি, ও একখানা গীতা রাখাটা নিয়মে পরিণত হল। আমাদের পরে যারা দলভুক্ত হয়েছে তারাও মা-কালী ও স্বামীজীর ছবি ঘরে রাখত এবং গীতা সঙ্গে রাখত।”

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য স্বামী পূর্ণাত্মানন্দকে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলেছেনঃ “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক লোকনাথ বল মহাশয়ের অধীনস্থ কর্মচারী ছিলাম। তাঁর নিজের মুখ থেকেই শুনেছি, মাস্টারদা যেমন আমাদের গীতার মর্মকথা বুঝিয়েছিলেন, তেমনি স্বামী বিবেকানন্দের বীরবাণী, বর্তমান ভারত, কর্মযোগ ও স্বামীজীর উদ্দীপনাময়ী বক্তৃতাবলী পড়তে উৎসাহ যোগাতেন।”

সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রাজমনি সেন এবং মায়ের নাম শশী বালা সেন। রাজমনি সেনের দুই ছেলে আর চার মেয়ে। সূর্য সেন তাদের পরিবারের চতুর্থ সন্তান। দুই ছেলের নাম সূর্য ও কমল। চার মেয়ের নাম বরদাসুন্দরী, সাবিত্রী, ভানুমতী এবং প্রমিলা। শৈশবে পিতা মাতাকে হারানো সূর্য সেন কাকা গৌরমনি সেনের কাছে মানুষ হন। সূর্য সেন ছেলেবেলা থেকেই খুব মনোযোগী ও ভাল ছাত্র ছিলেন এবং ধর্মভাবাপন্ন ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন।

১৯১৬ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি বলে প্রসিদ্ধ, অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। সূর্য সেন ১৯১৮ সালে বিএ পাশের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন ও উমাতারা উচ্চ-বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক রুপে যোগদান করেন। সেই শুরু, বাকিটা ইতিহাস।

১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে এক বিশেষ আদালতে রাজদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জন বন্দির বিচার আরম্ভ হয়। সূর্য সেন মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। একই সাথে তিনি আদালত ভবন ধ্বংস করারও উদ্যোগ নেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কল্পনা দত্ত। হামলার দিন ধার্য করা হয়েছিল ৩রা জুন। শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ মাইনটি বসানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ায় গোটা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।

সূর্য সেনের দলের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু সূর্য সেন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেলেন। এই সময় তাঁর গ্রেফতারের জন্য ৫০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল। এরই ভিতরে ১৩ জুন পটিয়ার ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে বিপ্লবীরা মিলিত হন। এই বাড়িতে তখন ছিলেন সূর্য সেন, নির্মল সেন, প্রীতিলতা এবং অপূর্ব সেন। সেখানে আচম্বিতে গোর্খা সৈন্য নিয়ে হানা দেয় ক্যাপ্টেন ক্যামেরন। এখানকার যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন নিহত হয়। বিপ্লবীদের পক্ষে শহিদ হয়েছিলেন নির্মল সেন। পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন অপূর্ব সেন (ভোলা)।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর ডায়রি থেকে জানা যায়, এই সময় অপূর্ব সেন জ্বরে কাতর ছিলেন। দোতলার একটি ঘরে প্রীতিলতা, অপূর্ব সেন ও নির্মল সেন ছিলেন। সৈন্যদের আগমনের কথা সূর্য সেন এসে সবাইকে জানান। সূর্যসেন প্রীতিলতাকে নিচের তলার মেয়েদের ভিতর পাঠিয়ে দেন। আক্রমণের শুরুতেই ক্যামেরন নির্মল সেনের গুলিতে আহত হয়। এরপর আরও কিছুক্ষণ উভয় পক্ষের ভিতর গুলি চলে। এক পর্যায়ে নির্মল সেন মৃত্যুবরণ করেন। পরে প্রীতিলতা ও অপূর্ব সেনকে নিয়ে সূর্য সেন সন্তর্পণে এই বাড়ি ত্যাগ করেন। এই সময় সৈন্যদের গুলিতে অপূর্ব সেন মৃত্যুবরণ করেন।

জুলাই মাসে সরকার সূর্য সেনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তৎকালীন আনন্দবাজার পত্রিকায় এই বিষয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
'সূর্য সেনকে ধরিয়া দিতে পারিলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার।' এই ছিল শিরোনাম, নিচে বিস্তারিত খবরের বিবরণ দেওয়া হল।

খবরটি ছিল-
'১৯৩০ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কার্যে বিপ্লবী দলের নেতা বলিয়া কথিত সূর্য সেনকে যে ধরিয়া দিতে পারিবে, বা এমন সংবাদ দিতে পারিবে যাহাতে সে ধরা পড়ে, তাহাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হইবে বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। বিগত ১৩ই জুন তারিখে পটিয়ার বিপ্লবীদের সহিত যে সংঘর্ষের ফলে ক্যাপ্টেন ক্যামেরণ নিহত হইয়াছেন, সূর্যসেনই নাকি সেই সংঘর্ষের পারিচালক।'
(আনন্দবাজার। ৩রা জুলাই ১৯৩২)

এরপর সূর্য সেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করলেন। এ অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে আক্রমণ করা হল ইউরোপীয়ান ক্লাব। সফল আক্রমণ শেষে ফেরার পথে এক ইংরেজ অফিসারের গুলিতে প্রীতিলতা আহত হলেন। ধরা না দেবার প্রত্যয়ে, সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ পান করে তিনি আত্মাহুতি দিলেন। ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম নারী শহীদের নাম প্রীতিলতা।

‘ধন্যি ছেলে, দেখিয়ে গেছে আমরাও জবাব দিতে জানি’...তখন সবার মুখে মুখে এই কথা!

সূর্য সেন ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি গৈরালা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই সময় ইংরেজ সরকার তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছিল দশ হাজার টাকা। এখানে ব্রজেন সেন মাস্টারদাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। এই গ্রামের বিশ্বাস-বাড়ির গৃহবধু ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে ছিলেন। ব্রজেন সেনের বাসা থেকে কার জন্য খাবার নিয়ে ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে যাচ্ছে, তা জানার জন্য ব্রজেন সেনের ভাই নেত্র সেন বিশেষ আগ্রহী হয়ে ওঠে। পরে সূর্য সেনের অবস্থানের কথা জানতে পরে, পুলিশকে খবর দেয়। তারপর রাতের বেলা আলোর সংকেত দেখিয়ে নেত্র সেন সৈন্যদের পথ দেখায়। বিষয়টি ব্রজেন সেন বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করেও সূর্য সেনকে রক্ষা করতে পারেননি। ক্যাপ্টেন ওয়ামস্‌লীর নেতৃত্বে একদল গোর্খা সৈন্য সূর্য সেনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারিতে তাঁর ফাঁসি হয়।

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। মূল লেখাটি ছিল ইংরেজিতে। নিচের তারই বাংলা তুলে ধরা হল -
'আমার শেষ বাণী –আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই তো আমার সাধনার সময়। এই তো আমার বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সময়, হারানো দিনগুলোকে নতুন করে স্মরণ করার এই তো সময়।

কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্রহীন আমার এই জীবনের একঘেয়েমিকে ভেঙে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধুরা – এগিয়ে চল, এগিয়ে চল – কখনো থেমো না, পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলের চট্টগ্রাম ইস্টারের দিনের সেই বিদ্রোহের কথা কোনো দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলখা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো। আমাদের সংগঠনে যেনো বিভেদ না আসে কখনো– এটাই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

চট্টগ্রাম কারাগার
১১ই জানুয়ারি, ১৯৩৪
বন্দেমাতরম
সকাল ৭টা।

©উshaস চttopaধ্যায়~

[#তথ্যসূত্র_ঋন 👇🏼
• চিটাগং এন আপরাইসিং: মানিনি চ্যাটার্জি, কলকাতা ও সুবোধ রায়ের সাক্ষাৎকার ২০০৫

• চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : চারুবিকাশ দত্ত, কলকাতা

• আমি সুভাষ বলছি। প্রথম খণ্ড । শৈলেশ দে। বিশ্ববাণী প্রকাশনী। কলকাতা-৯। অগ্রহায়ণ, ১৩৭৫
ও শঙ্করীপ্রসাদ বসুর বই এবং উইকিপিডিয়া]

Thursday, 2 December 2021

রুজভেল্ট কে অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ!


১৯৩৩-এ অর্থনৈতিক অবস্থা! (রুজভেল্ট-কে সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ)


#৮ম_এপিসোড #৮ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৮ম_ভাগ


[৮ম এবং এই সিজনের অন্তিম পর্ব ***]


রুজভেল্টের মুখোমুখি হওয়া সমস্যার একটি অংশ ছিল যে ১৯৩৩ সালে কোন সুস্পষ্ট চুক্তি ছিল না, প্রকৃতপক্ষে কি কারণে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল কোন স্পষ্ট চুক্তি দ্বারা এটা বলা ছিল না যে কেন এটা এতটা খারাপ হয়ে গেছে অর্থনীতি, তাই রুজভেল্টের নতুন চুক্তি, বিভিন্ন উদ্যোগের একটি নীতি শুরু করেন। এমতাবস্থায় রুজভেল্ট ঘোষণা করেছিলেন, "আমাদের অবজেক্টিভস-এর মধ্যে আমি নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখি, এবং তা সমগ্র দেশের পুরুষ, নারী ও শিশুদের সর্বপ্রথম।" ৮ই এপ্রিল রুজভেল্ট তার অ্যাডভাইজারদের একথা জানান,  এবং এতে তারা যে খুব একটা খুশি ছিলেন, তা কিন্তু নয়। সবাই যে ক্ষেঁপে উঠেছিল তা না হলেও, সার্বিক মতামত ভালো ছিলনা। তার মধ্যে রয়েছে আরো একটি ব্যাপার, কার্যকরভাবে সোনার থেকে ডলারকে মুক্ত করা, মুদ্রার যথেষ্ট অবমূল্যায়ন করে সমগ্র আর্থিক বিশ্বের বিস্ময় ডেকে আনা।

অতিরিক্ত টাকা মুদ্রণ, মি. রুজভেল্ট মুদ্রাস্ফীতিকে অবলম্বন করেছিল যা আর আগের মতো ভয়ঙ্কর কার্যকরী কখনোই নয়। স্টক এক্সচেঞ্জের ডাউ, রকেটের মতো ওপরের দিকে উঠে গেল। সেই সময় নতুন যন্ত্রপাতির জন্য ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সামগ্রিক শিল্প উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাতীয় শিল্প পুনরুদ্ধারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়ে সে বছর। অনেকেই বলে যে এইসব ১৯৩৩ সালের আইনের অংশ ছিল কিন্তু পুনরুদ্ধারের গল্পের পুরোটা মোটেই এটা নয়, মানে বললে কম বলা হবে। এটি ১২২,০০০ পাবলিক বিল্ডিং, এক মিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা, ৭৭,০০০টি ব্রিজ বা সেতু এবং ২৮৫টি বিমানবন্দর ছাড়াও আরও অনেক কিছুর মধ্যে অর্থ নিবেশ করেছিল।

প্রায় ৪৫০,০০০ আমেরিকান, রাষ্ট্রীয় অফিসে তার প্রথম সপ্তাহে তাদের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছিলেন এবং প্রতিদিন চার থেকে সাত হাজার আইটেমের মধ্যে মেল বা চিঠি আসতে থাকে। হুভারের প্রেসিডেন্সির সময় যেখানে একজন ব্যক্তি হোয়াইট হাউসের মেল রুমে কাজ করত, সেখানে এফ. ডি. আর.-এর জন্য কর্মীদের সংখ্যা ৭০-এ উন্নীত করা হয়।

বেশিরভাগ আমেরিকানরা তাদের রাষ্ট্রপতিকে আগে কখনও কথা বলতে শোনেনি, তাই তারা বিশ্বাস করেছিল যে, তিনি তাদের ভালো করতে চান। এবং যখন তার নীতি ব্যর্থ হয়, তখন তারা এই রূপ বলাবলি শুরু করে যে, আমাদের প্রেসিডেন্টকে ব্যাঙ্কার, কর্পোরেট হেডরা হারিয়ে দিচ্ছে, ওদের দ্বারা ব্যর্থ হচ্ছে ওনার তৈরী করা কর্মসূচী। আমাদের নিজের হাতে কিছু জিনিস তুলে নিতে হবে, নিজেরাই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি কারণ আমরা জানি এই যে রাষ্ট্রপতি আমাদের এগুলি করা দেখতে চান।
১৬ই জুন কংগ্রেসের জরুরি অধিবেশন শেষ হওয়ার সময়, রাষ্ট্রপতি যে অধিবেশনের আহ্বান করেছিলেন
শপথ নেওয়ার সময় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, এফ.ডি.আর. আইনে ১৫টি বিলে স্বাক্ষর করে লাগু করেছিল, আর এতেই একশো দিন পার হয়ে গেছিল!

নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন-এর মতে যে জিনিস টা পরিচালিত করেছিল সংস্কারক প্যাকেজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, যদিও কখনো এর আগে এত ব্যাপকভাবে আমেরিকান কংগ্রেসে আইন প্রবর্তন করা হয়নি, এটি ছিল কৃষি ও খামার বিল! এটি কৃষি খাতে কয়েক দশক ধরে চলা স্লাইডকে আটক করতে চাওয়া, যেটি ১৯৩৩ সাল নাগাদ প্রতি মাসে আনুমানিক ২০,০০০ হারে খামার বন্ধক রাখা, ব্যাংকগুলি এসব বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে এইসব কিছুর জন্য একটি সহযোগিতামূলক আদেশ আনার চেষ্টা করা হয়েছিল লন্ডনের রয়্যাল বরো অফ কেনসিংটনের একটি জাদুঘরে, পাথর এবং জীবাশ্মের মধ্যে সকলে একত্রিত হয়েছিল।

১৯৩৩ সালে লন্ডনে দ্বিতীয় বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ডিসার্মামেন্ট সম্মেলনের সাথে মিলে যায়। এটিও কমবেশি একই সময়ে, জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হয়। পুরোটা না হলেও আংশিকভাবে, তবে কেন লন্ডনে? কারণ সমস্ত হোটেল জেনেভায় বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর লোকজনে ভর্তি। সম্মেলনে লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী (Ramsey Mcdonald) রামসে ম্যাকডোনাল্ডের বর্ণনা দিয়েছিলেন, "The fate of generations may well depend upon the courage the sincerity width of you which we are to show during the next few weeks. Let the world know, that we can show decision and give leadership অর্থাৎ প্রজন্মের ভাগ্য আপনার আন্তরিকতার ও সাহসের উপর নির্ভর করতে পারে। যা আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখাব। বিশ্বকে জানতে দিন, আমরা সিদ্ধান্ত দেখাতে পারি এবং নেতৃত্ব দিতে পারি।" তারপর এফ.ডি.আর. উদ্যোগটি ভেঙে দেয়, ৩-রা জুলাইয়ের বোমারু বার্তা হিসাবে যার পরিচিতি রয়েছে, তিনি এটি পরিষ্কার করে বলেছেন যে, জাতীয় অর্থনীতি ঠিক করা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ঠিক করার চেয়ে তার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে...


সুতরাং ১৯৩৩ সালের সারমর্ম, বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের ট্র্যাজেডি হল এই যে তিনটি প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তি একটি অর্থনৈতিক নীতি এবং একটি আর্থিক চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল। আমি বলতে চাইছি না যে, আপনারা তর্কে যেতে পারেন যে, তাদের সঠিক ধরণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না কিন্তু সহযোগিতা করার কোন রকম রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল না। এর ফলে হল যে
এরপরে জার্মানি বা ইতালি বা জাপানের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করার পরে যা কিছু হয়েছিল তা অনেক বেশি সমস্যাযুক্ত ছিল। অবশ্যই তাদের অর্থনীতি তার থেকে বিন্দুমাত্র ওপরের দিকে উঠে আসেনি, আরো বিষণ্ণতা ছেয়ে গেছিল, তার থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি যা অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, এক কথায় ১৯৩০-এর সম্পূর্ণ দশকে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল!

১৯৩৩ সালেই হিটলার চ্যান্সেলর হিসাবে তার প্রথম বক্তৃতা রেখেছিলেন, প্রকৃত ইতিহাস সর্বদা একই সময়ে অনেক কিছু ঘটার গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ১৯৩৩ সালে জেনারেল মোলা, যিনি স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পরিণত হওয়া ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তিনি লিখেছেন যে, 'হিটলার নিশ্চিত যে তার লোকেরা অর্থাৎ এন্টি সেমাইট জার্মান-রা আবার নিজেরা উপরের দিকে উঠতে পারবে না যতদিন ইহুদি জাতির লোকেরা তার মধ্যে মিলে মিশে থাকবে। সেজন্য সে তাদের নির্যাতিত করেছে, আর যা করেছে বেশ করেছে।' ১৯৩৩ সালে হিটলার সন্ত্রাসের ব্রাউন বইটি ২৭টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল খুবই সন্তর্পণে এবং যাচাইকরণের সাথে নাৎসি শাসনের রেজিমগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যাতে লোকেরা সেগুলো জানতে পারে। ১৯৩৩ সালে একটি জার্মান ক্যাথলিক সংবাদপত্র হিটলারের চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের বর্ণনা দেয় 'অন্ধকারে চলার মতো', কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আরো গাঢ় অন্ধকারে লাফেতে পরিণত হয়েছিল কিনা তা গোটা পৃথিবী জানে!!!

[১ম সিজন শেষ হল]

©উshaস চttopaধ্যায়~

Thursday, 18 November 2021

রুজভেল্ট এর শাসনের সূত্রপাত!


 ১৯৩৩-এ আমেরিকান অবস্থা! (রুজভেল্ট-র শাসনের সূত্রপাত)


#৭ম_এপিসোড #৭ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৭ম_ভাগ


[৭ম পর্ব ***]
২রা মার্চ, fdr বা রুজভেল্ট এর অফিস উদ্বোধনের দুই দিন আগেও, নিউ ইয়র্ক ফেডারেশন এর সর্বনিম্ন সোনার রিজার্ভের মূল্য অনুপাতের নিচে নেমে গেছিল। ৩ তারিখে এটি আরও ৩৫০ মিলিয়ন ডলার নেমে গেছিল, যার মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার ওয়্যার ট্রান্সফারের আকারে চলে গিয়েছিল দেশের বাইরে।
যখন (Charles Evans Hughes) চার্লস ইভান্স হিউজ একটি ডাচ বাইবেলে রুজভেল্টের শপথ গ্রহণ করান, যা রুজভেল্ট দের পরিবারে ৩০০ বছর ধরে ছিল, সেদিনও তড়িঘড়ি করা হয়, কারণ, আমেরিকার সেই সময় কার জরুরী অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারনা করা ছিল, 'নিড অফ দ্যাট আওয়ার'। সকলেই উৎকন্ঠার সাথে প্রতীক্ষায় ছিল কি হয়, কি হয়! রুজভেল্ট ঘোষণা করলেন, "This is preeminently the time to speak the truth! the whole truth frankly and boldly nor need we shrink from honestly facing conditions in our country today, this great nation will endure as it has endured অর্থাৎ, সত্য কথা বলার এটাই প্রধান সময়! সম্পূর্ণ সত্য অকপটে এবং সাহসিকতার সাথে এবং আমাদের দেশে আজ সততার সাথে পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া থেকে সঙ্কুচিত হওয়ার দরকার নেই, এই মহান দেশ দরকারে আরো সহ্য করবে যেমনটি এত বছর সহ্য করে এসেছে।"

যখন রুজভেল্ট অফিসের শপথ গ্রহণ করেছিলেন বেশিরভাগ রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ ছিল এবং অন্যগুলিতে, আপনি কতটা তুলতে পারবেন তার একটি সীমাবদ্ধতা ছিল এবং এটি একটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কতটা পক্ষাঘাতের কাছাকাছি, তা আমরা বুঝতে পারি। ২৮টি রাজ্যে ব্যাঙ্কগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল,
বাকি ২০ টির মধ্যে কিছু আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। সমস্ত ঘর-পরিবারের অর্ধেক বন্ধকী এমাউন্ট ডিফল্ট ছিল।
এবার আসি অটোমোবাইল শিল্পে, যা আগে দিনে কুড়ি হাজার যানবাহন উৎপাদন করতো, তা এখন নির্মাণ করছিল দুই হাজারের কাছাকাছি! পৃথিবীর বিতর্কিত সবচেয়ে ধনী দেশে, মোট জনসংখ্যা ১২০ মিলিয়নের মধ্যে, ৩৪ মিলিয়ন আমেরিকান দের,  যাদের আয়ের কোন আপাত নিশ্চিত উৎস ছিল না, উপায় ছিল না, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল। এরকম সময়ে, একটা নতুন কিছু করবার সময় ছিল, কিছু একটা অস্বাভাবিক রকমের হলেও!

রাষ্ট্রপতি হিসাবে FDR-এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল ৯ ই মার্চ পর্যন্ত সমস্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া। আশ্চর্যজনকভাবে আমেরিকানরা সেটিরও মোকাবিলা করে। তিনি অগত্যা গার্হস্থ্য নীতির ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক চিন্তাবিদ হয়ে ওঠেননি কখনোই, তবে তিনি একজন রাজনৈতিক বাস্তববাদী হয়ে উঠতে সক্ষম হন। তিনি প্রথম এবং সর্বাগ্রে জানতেন যে, একজন রাষ্ট্রপতি কে, ১৯৩৩ সালে আমেরিকাকে আবার নতুন করে তার পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেই হবে, পিছু হটার কোনো উপায় নেই।
(I OWE YOU) আই ওয়্য ইউ, যার অর্থ আপনাকে সাহায্য করার জন্য কাউকে ধন্যবাদ জানানো এবং আপনি ভবিষ্যতে তাদের জন্য কিছু করবেন বলে বলার উপায়, সেই সিস্টেম বা নীতি চালু করা হয়েছিল, সবার কাছে গৃহীত হয়েছিল এবং সম্মানিত বিনিময়ের প্রথা ভালোই নেওয়া হয়েছিল।
মিচিগানের বেশ ক'য়েকটি দোকান Saginaw Bay Herrings সেগিনায় বে হেরিংস বা মাছের তিনটি ব্যারেল জন্য একটি পোশাকের বিনিময় প্রথা চালু করেছিল। এমনকি বক্সিং টুর্নামেন্টের জন্য সমর্থকদের কাছ থেকে ৫০ সেন্ট মূল্য হিসাবে মূল্যায়ন করা কিছু নিতেও স্বীকার করেছিল।

রবিবার ১২ই মার্চ রুজভেল্ট রেডিওতে, তৎকালীন 'মন কি বাত', ইয়ে থুড়ি, 'ফায়ারসাইড চ্যাটে'র প্রথম শুরুয়াত করেন, 'আমার বন্ধুরা, আমি কয়েক মিনিটের জন্য কথা বলতে চাই ইউনাইটেড স্টেটস এর জনসাধারণের সাথে ব্যাঙ্কিং সম্পর্কে,' ৬০ মিলিয়ন মানুষ শুনেছিলেন সেই সম্প্রসারণ, যার মধ্যে হাস্যরসাত্মক (Will Rogers)উইল রজার্সও ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, "The president had taken the subject of banking and made everyone understand it, even the bankers! যার মানে, প্রেসিডেন্ট ব্যাঙ্কিং বিষয় নিয়ে সবাইকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছে, এমনকি ব্যাঙ্কারদেরও।" অনুষ্ঠানটি ১৫ মিনিটের কিছু কম সময় ধরে চলে। তার সম্প্রচারের জন্য দর্শকরা অসাধারণ, অভূতপূর্ব হারে, মানে ৭০%-এরও বেশী আমেরিকানরা যুক্ত হয়েছিলেন এই সম্প্রচারগুলিতে, এতটাই সফল হয় যা কিনা আমেরিকার প্রায় প্রতিটি সাধারন বাড়িতেই ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদিকে কেউ জানত না যে ব্যাঙ্কগুলি আবার চালু হলে কী হবে। আতঙ্কের সূত্রপাত ঘটে তা দেখতে পাওয়া যায়, সারা দেশে ব্যাঙ্কের বাইরে সুদীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। এটা ছিল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ঠিক একদিন পর এবং সেই সমস্ত আমেরিকানরা সারিবদ্ধভাবে আসেন তাদের সঞ্চিত অর্থ জমা করানোর জন্য। কেননা, তাদের অর্থ সুরক্ষিত বা ফেরত হবেই, যেখানে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে সেটি নিরাপত্তায় থাকবে।

আমরা শুধু এই 'ফায়ারসাইড চ্যাট' গুলিকেই যেন রাষ্ট্রপতি নেতৃত্বের প্রধান মুহূর্তগুলি হিসাবে ভাবতে অভ্যস্ত না হয়ে উঠি, সেদিকেও মনোনিবেশ করতে হবে, যদিও যতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আশ্চর্যজনকভাবে খুব কমই দেখা যাচ্ছে বা লেখা হয়েছে, তবুও; কিছু বছর তিনি তাদের ফ্রি-রেশনের ব্যবস্থা করছিলেন, আবারও এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় ছিল। তিনি নিজেকে বড়োবেশি উন্মুক্ত করেননি, তিনি এই সব ছোটোখাটো নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসগুলিকেই বড়ো করে তুলছিলেন। বড়ো ঘটনা, যাতে মানুষ বাস্তবে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতে চলেছে, সেজন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বলার আছে, শোনার আছে, এমনটা মনে করতে পারে।

মার্চের শেষ অবধি, জনসাধারণের যাবতীয় বাড়ির সঞ্চয় যেমন মোজার থেকে, গদি-বালিশের কভার, চালের ড্রাম, স্যুটকেস ইত্যাদি থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার সংযোজন করা হয় এবং আবার ব্যাঙ্কে রাখা হয়। ১৯৩৩ সালের মধ্যে মার্কিন বেকারত্ব ১২ মিলিয়নে পৌঁছেছিল, যার এক চতুর্থাংশ কর্মীদের মধ্যে অর্ধেক রাসায়নিক, ইস্পাত এবং মেশিন শিল্পে জড়িত ছিল। শহরের ফ্রি এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি বা কর্মসংস্থান সংস্থাগুলো সকাল ন'টায় খুলে বিকেল ৩টের মধ্যেই হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত, সারাটা দিন। যেন কখনও শেষ না হওয়া স্রোতের মতো তারা আসত! দৃশ্যগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে ঝামেলামুক্ত ছিল, যদিও মাঝে মাঝে, কেউ কেউ তার পালার আগে, লুকিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেই থাকতো, তা আর নতুন করে বলার নয়। এত কিছুর পরেও, ১৫ই মার্চ স্টক এক্সচেঞ্জের টিকার টেপটি এই কথাটির সাথে স্বাক্ষরিত হয়েছিল যে, 'হ্যাপি ডেজ আর হেয়ার এগেইন, মানে আনন্দের দিন আবার এখানে।' কথাটা কোথাও যেন শোনা শোনা মনে হচ্ছে না?
আচ্ছে দিন ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

[সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি দেখতে ক্লিক করুন 👇🏼]
https://www.facebook.com/ChUshas24/

Thursday, 7 October 2021

হিটলারের ক্ষমতায়নের পর...


১৯৩৩-এ জার্মানির অবস্থা! (হিটলারের ক্ষমতায়ন)

#পঞ্চম_এপিসোড #৫ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৫ম_ভাগ


ওয়েইমার রিপাবলিক কে প্রায়ই গণতান্ত্রিক ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক দুর্বলতার অন্যতম এক উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু যখন এটিকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করতে শুরু করেন, তখন দেখবেন যে এটি আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘতম বেঁচে থাকা গণতন্ত্রের মধ্যে একটি। তৃতীয় রাইকে রূপান্তরের শুরুর দিকে, ২৭-এ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ সন্ধ্যার ঠিক পরেই, পথচারীরা রাইকস্ট্যাগের বা তার কাছেপিঠের থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনতে পায় এবং কিছুক্ষণ পরেই ভবনের অভ্যন্তরে আগুন জ্বলতে দেখে। ঘটনাস্থলে হিটলার, গোয়ারিং এবং গোয়েবলস পৌঁছানোর পর অস্ত্রাগার আক্রমণকে কমিউনিস্ট চক্রান্ত বলে ঘোষণা করেন, যা করা হয়েছিল আগুন এবং সন্ত্রাস কে ব্যবহার করে, এটি  গোয়েবেল তার ডায়রিতে লিখেছিলেন, যা কিনা প্রদর্শিত হয় জনসাধারণের আতঙ্ককে ক্রমান্বয়ে বিভ্রান্তি হিসেবে তুলে ধরা এবং নিজেদের জন্য ক্ষমতার উপলব্ধি করানো হয়েছিল, যদিও এ ব্যাপারে দ্বিমত আছে। (Sefton Delmer) সেফটন ডেলমার, একজন নামী সাংবাদিক, যিনি সেদিনের জন্য রিপোর্ট করছিলেন, লন্ডন ডেইলি এক্সপ্রেসের হয়ে। তিনি ঘটনাস্থলে আসার সাথে সাথে, হিটলার তার কাছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বললেন, "you are now witnessing the beginning of a great new epoch in german history, Herr Delmer! অর্থাৎ আপনি এখন জার্মান ইতিহাসে একটি মহান নতুন যুগের সূচনা করতে দেখছেন"।
এ ব্যাপারে ডেলমারের রায়, বার্লিন স্পোর্টস প্যালেসের সমাবেশে, ১৫০০০ অন্যান্যদের সাথে যোগ দেওয়ার পর হিটলারের সম্বন্ধে দিয়েছিলেন এই বলে, "তিনি একজন ক্র্যাকপট মানে বোকা বা অবাস্তব লোক ছিলেন।"

অগ্নিকাণ্ডের ঠিক পরদিন সকালে মন্ত্রিসভা যেটা এখনও নাৎসি দের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, একটি জরুরী ডিক্রি তৈরির জন্য বৈঠক করে, যা জার্মানিতে নাগরিক স্বাধীনতা বাতিল করে। এটি বাক স্বাধীনতা, সমাবেশ বা মিটিং-মিছিল করবার অনুমতিকে, বিজ্ঞপ্তি বা সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাতিল করে দিয়েছিল, ঠিক আমাদের দেশের ইমার্জেন্সির সময়ের মতো। কয়েক মাসের মধ্যেই, মানে গরমকাল আগমনের আগেই সমস্ত বিরোধী দল চূর্ণ করা হয়ে গিয়েছিল, ১০০,০০০ জনেরও বেশি কমিউনিস্ট, সামাজিক গণতান্ত্রিক দলবলের লোকজন এবং নাজিদের অন্যান্য বিরোধীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগকেই 'Dachau/ডাকাউ' নামে শহরের বাইরে একটি নতুন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

এখন নাৎসিরাই ছিল একমাত্র আইনি দল এবং হিটলার এখনও কোনোভাবেই অসাংবিধানিকভাবে কোনো কাজ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তার ক্রিয়াকলাপ গণভোটে ৯৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিল।

৩২ এর অক্টোবরে, জার্মানি লীগ অফ নেশনস এবং নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসে এবং যার ফলে (Sir Horace Rumbold) স্যার হোরেস রাম্বোল্ড, যিনি হিস ম্যাজেস্টির এম্বাসেডর ছিলেন ও বার্লিনের মহামান্য রাষ্ট্রদূত হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন যে, "many in the diplomatic corps have a feeling that we are living in a country where fanatics, hooligans and eccentrics have got the upper hand! যার মানে, কূটনৈতিক মহলের অনেকের মনে এমন ভাবনা আছে যে আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে ধর্মান্ধ, গুন্ডা এবং খামখেয়ালি ছিটিয়ালরা সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে!"...

'ভয়' এখন জার্মান জনজীবনের মূল চালিত ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছিল। ভয়ের চোটে ৫০০ নেতৃস্থানীয় পৌরসভার সিভিল সার্ভেন্ট বা কর্মচারী এবং ৭০ টি শহরের মেয়রকে অফিস থেকে বের করে দিতে বাধ্য করেছিল, এমনই ছিল হঠাৎ করে অচেনা, অজানা আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক কিছুর আসল এবং স্পষ্ট ভয় যা, ৫৬ শতাংশ জার্মান, যাদের ভোট নাৎসিদের কাছে যায়নি, তারাও সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, কিছু পরিমান সাহসের দেখা দিয়েছিল কিন্তু খুব বেশি মানুষ তাতে অঙ্গভঙ্গিও করেনি, এককথায় সেটাও দাবিয়ে দেওয়া হয়। এখন স্লোগানগুলি তাদের কাছে একজোট হওয়ার দাবি করেছে, কিছু মানুষ সত্যিকারের উৎসাহ নিয়ে করছিল। লোকেরা একে অপরকে, তাদের প্রতিবেশীদের, ইউনিফর্মের ভিতর ফাঁকা ফানুসের মতো ঠগদের ভয় পেতে লাগল...

জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও প্রচারের জন্য গোয়েবলসের রাইকমিনিষ্ট্রি বা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছিল, ১৩ মার্চ। আমেরিকান মুভি কোম্পানি ট্রেড প্রেসকে এক দীর্ঘ ফটোশুটের জন্য একটি চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গোয়েবলস মেশিন, মানে লোকজন, তাদের এককথায় যা ভালো মনে করত তাই ওদের খাইয়ে বা গিলিয়ে দিত, তাই তারা একে প্রপোগান্ডা না বলে 'নাজি-গান্ডা' বলত। তাদের মতে, "হিটলারকে সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডানদিকের থেকে, বাম দিক থেকে, প্রতিটি এঙ্গেলস থেকে ছবি তোলা হয়েছিল, যেন সব ছবিতেই মেন আকর্ষণ হিটলার, হিটলার এবং হিটলারের সমাহার!
মিউজিক্যাল কমেডি, 'মাই উইকনেস' নামের এক মুভি, শুধু এই কারণেই জার্মান মুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়ে যে, মেয়েদের ছোট প্যান্টি বা অন্তর্বাস পড়ানো হয়। গোয়েবলসের অধীনস্থ মন্ত্রীসভার মতে সেটি তৎকালীন নতুন জার্মানির নৈতিকতাকে দূষিত করবে। কিং কং, যা কিনা বছরের অন্যতম উত্তেজনাপূর্ণ সিনেমা, সেটাকেও অনুমোদন দেওয়া হয় নি এই বলে যে, জার্মান জাতি প্রবৃত্তির ঘৃণ্য হিসেবে।
১০ই মে, গোটা জার্মানি জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, বইয়ের কার্টলোডগুলি অগ্নিকুণ্ডের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল পুরো যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো, সামরিক প্রস্তুতির চেতনায় জাতির শিক্ষার জন্য, তার মান আরো উন্নত করার জন্য, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় নি।
গোয়েবলস সেদিনের অসাধারণ জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা (Fritz Lang) ফ্রিটজ ল্যাংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, জার্মান চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান কার্যনির্বাহী হতে। নিচে তাদের পাওয়া কথোপকথনের অনুবাদ বাংলায় দেওয়া হল, যা ইন্টারনেট থেকে সহজেই পাওয়া যায়;
"তোমার জানা আছে কিনা জানি না" ল্যাং বলে, "যে আমার ঠাকুমা একজন ইহুদি ছিলেন"। নিজের ভয়ে স্বীকার করে বলেন, আর তার প্রত্যুত্তরে "আমি সিদ্ধান্ত নিই যে কে ইহুদি আর কে নয়", গোয়েবল শাসানোর সুরে বলে, ল্যাং ঠিক তার পরপরই জার্মানি ছেড়ে চলে যায় ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~

Thursday, 30 September 2021

১৯৩৩ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!


১৯৩৩, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!

#চতুর্থ_এপিসোড #৪থ_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৪থ_ভাগ



এখন আসে ১৯৩৩ সাল, ১ লা জানুয়ারী তে জার্মান সংবাদপত্র (Frankfurter Zeitung) ফ্রাঙ্কফুর্টার জেইটুং ঘোষণা করেছিল যে,- The mighty nazi assault on the democratic state has been repulsed অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী নাৎসি আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে এবং (Vosicha Zaitong)ভোসিচা জাইতং ঘোষণা করে যে,- The republic has been rescued! মানে প্রজাতন্ত্র কে উদ্ধার করা হয়েছে! আর মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসাবে বসানো হবে ...
এটি কোন দুর্ঘটনা নয়। আমি মনে করি ১৯৩৩ সালে যখন ওয়েইমার প্রজাতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছিল তখন এটি তাদের একটি ছোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। রক্ষণশীল অভিজাতরা, যারা ভেবেছিলেন এখানে তাদের সুযোগে হিটলারকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে, তারা তাকে হেরফের করা থেকে সাহায্য করতে পারে এবং তাদের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য  করবে যা তারা কোনভাবে ১৯১৯ সালে হারিয়েছিল।

অন্যদিকে, ১৯৩৩ সালের শুরুতেই হিটলার 'মেইন ক্যাম্পফ' থেকে রয়্যালটি বাবদ এবং সমর্থকদের কাছ থেকে উপহারগুলির মাধ্যমে যে জীবন অতিবাহিত করছিলেন, তা ছিল বেশ আরামদায়ক। প্রকৃতপক্ষে একজন কোটিপতির মতো, যা ছিল ইতিমধ্যে তার সমকালীন জার্মান জনগনের তুলনায় কল্পনার অতীত।
তার বাড়ি মিউনিখের একটি ফ্যাশনেবল অংশে একটি বড় অ্যাপার্টমেন্টে ছিল, তার পরিবহন ছিল চালকচালিত মার্সিডিজ লিমোজিন, তিনি নিজে কখনো গাড়ি চালানো শেখেননি। পার্টির সদর দপ্তর ছিল আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় প্রাসাদসম। ১৯৩০ সালের কর্মী ৫৬ জনের থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭৫ জন। তিনি দুপুরের আগে খুব কমই বিছানা থেকে বেরোতেন এবং বাভারিয়ান আল্পসে কেনা শ্যালে বা কাঠের তৈরি অট্টালিকা তে প্রায়শই ছুটি কাটাতেন। তাই তার জন্য জীবন অনেকের মত একেবারেই নয়,
তার সহকর্মী জার্মানদের মতোন তো কোনোভাবেই নয়। কেউ দাবিও করতে পারেনা যে তারও জীবন খারাপ চলছিল ঐ সময়ে, এবং তারপর এক সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায়, জানুয়ারী ৩০, ১৯৩৩ সালের পর থেকে এটি আরও ভালোতে পরিণত হয়ে গেল!
রাষ্ট্রপতি পল ভন হিন্ডেনবার্গ তাকে চ্যান্সেলর পদে বসানোর জন্য শপথ গ্রহণ করান। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের আশেপাশের লোকেরা অনুভব করেছিল যে তারা হিটলার ব্যবহার করতে পারে এবং
নাজিদের সমর্থন ব্যবহার করে যে কোনো কার্যসিদ্ধ করবে। ওরা ভেবেছিল যে তারা তাদের ব্যবহার করে একটি রক্ষণশীল কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং তারপর তারা তাদের থেকে মুক্তি পাবে। অবশ্যই তারা যে মারাত্মক ভুলটা করেছে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি, হিটলার ঠিক একই জিনিস ভাবছেন এবং তিনি তাদের থেকে পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছেন। আমি মনে করি হিটলারের মতো মানুষের সাথে সাধারন মানুষের ভুলের অনেক হিসেব-নিকেশ আছে, যাকে বলে 'হিউম্যান এরর'। হিটলার দীর্ঘদিন ধরে যা ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছিলেন তা বহাল রাখার শপথ করেছিলেন প্রজাতন্ত্রের আইন এবং সংবিধান মেনেই। এদিকে সাপ্তাহিক নিউজ রিল যা প্রপোগান্ডা ছড়াতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিল, তা সারা জার্মানি জুড়ে দেখানো হয়, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছয়টি গল্প নিয়ে তা গঠিত। সেখানে একটি স্কি জাম্প, ঘোড়দৌড় এবং একটি ঘোড়া শো তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যাডলফ হিটলারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটির ষষ্ঠ এবং চূড়ান্ত বিষয় ছিল ঐ রিলের।
এমন টা তখন জার্মানি তে প্রচার করা হয় যে, 'জার্মান জাতীয় আন্দোলনের নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর করা হয় এবং বার্লিন তার বিজয়ের উদযাপনে বন্য হয়ে যায়। বার্লিন নাইটদের মতো টর্চলাইটের(মশাল) কুচকাওয়াজ, সমর্থকরা রাস্তায় এবং ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের মধ্য দিয়ে মিছিল করে তাঁর বিজয়কে স্মরণ ও উদযাপিত করে,' ইত্যাদি!

হিটলারের নিয়োগ কোন অলৌকিক ঘটনা ছিল না, যদিও এটি নিজের সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করেছিল, তিনি নিজের নিয়তির সাথে আপসহীন, একজন অপ্রতিরোধ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন।
কিছুই না, এটা একটা জরাজীর্ণ, লজ্জাজনক, ব্লান্ডারে পরিণত হয়েছিল! ওয়েইমার সংবিধানে চ্যান্সেলরের পদ মন্ত্রিসভা চেয়ারম্যানের চেয়ে একটু বেশি ছিল এবং সরকারী সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার ভোটে নিতে হতো। এত চতুরতার সাথে তারা সব গোছগাছ করেছিল, যেভাবে তারা ভেবেছিলেন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং তার উপদেষ্টারা হিটলারকে রাজি করেছেন যে নাৎসিজম কেবিনেটকে মাত্র তিনটিতে সীমাবদ্ধ করতে এবং ভন পাপেনকে তার ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ করতে। এর মানে হল যে পাপেন সবসময় মন্ত্রিসভায় ৮-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং দুই মাসের মধ্যে পাপেন বলেছিলেন, "We will have pushed hitler so far into a corner that he will squeak অর্থাৎ আমরা হিটলারকে এতদূর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব যে সে চিৎকার করে গুটিয়ে যাবে", কিন্তু সময় অন্য কথা বলছিল...

হিটলার কখনও অসাংবিধানিকভাবে কাজ না করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, নাৎসিরা একটি বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপে উঠেছিল। আমি মনে করি ভোটারদের সাফল্যের দিক থেকে যারা হিটলারকে ক্ষমতায় এনেছে এবং যারা জার্মানদের মধ্যে ভোটার ছিল তারা, তার স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কাছে এককথায় হোস্টেজ, সমর্পিত বা বাধ্য হয়েছিলেন, তা আসলে (Alfred Hugenberg) আলফ্রেড হুগেনবার্গের মিডিয়া সাম্রাজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম সংস্থাগুলির দ্বারা, তারা ঐসব মাধ্যমকে সমর্থন করেছিলেন, ওরা যা কিছু খবর বানিয়েছে তাই আপামর জনসাধারণ দেখতে বাধ্য হয়।
এটা সত্যিই যে হিটলারের দল এবং তার এজেন্ডার জন্য হুগেনবার্গের সমর্থন বিশেষ ভুমিকা পালন করে, আমি বিশ্বাস করি যে এটি ৩২ থেকে ৩৩ এর মধ্যে তার প্রচারণার সাফল্যের জন্য একটি সিদ্ধান্তমূলক পার্থক্য তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তার ক্যারিশমা হিসাবে যা জানি, তারও উত্থানের জন্য মিডিয়ার দায় অনস্বীকার্য। হিটলারকে অনেক লোকের সত্যিই বেশ হাস্যকর লেগেছিল, অনেকে তাকে খুব একটা গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। অবশ্য সেই মানুষটা, মানে হিটলার, খুব ভালো ভাবে জানত, কিভাবে জনতাকে বশ করতে হয়, তার কাছে ছিল শব্দের, বক্তৃতার জাদুকাঠি, যার ছোঁয়ায় লোককে বশীভূত করতে পারত তার কথায় ও যুক্তিতে।
এমন চরম পলিটিক্যালি কারেক্টনেস এর কথা যে কেউ ভাবতে বাধ্য হবে, "You would think that the end of the world is coming, proclaiming the dawn of a new nation but calling on all not to let Germany forget what she had suffered at the hands of her enemies!" অর্থাৎ এই যে পৃথিবীর শেষ দিনে এসে একটি নতুন জাতির কাছে ভোরের ঘোষণা করছে, সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে জার্মানিকে যাতে ভুলে না যাওয়া হয় যে কিভাবে সে তার শত্রুদের হাতে এবং কতটা নিষ্ঠুর আচরণ সে ভোগ করেছিল!

জানুয়ারিতে চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের দুই দিনের মধ্যেই হিটলার একটি নির্বাচন ডেকেছিলেন যাতে নাৎসিরা রাইকস্ট্যাগে তাদের অবস্থান উন্নত করেছিল। যখন নতুন সংসদ একত্রিত হয়, হিটলারের (enabling act)এনাবলিং অ্যাক্টকে আইনের দিকে ঠেলে দিতে কোনও অসুবিধা হয়নি, চ্যান্সেলরকে ডিক্রি দিয়ে রাইকস্ট্যাগ এবং শাসনকে বাইপাস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা হিন্ডেনবার্গের অধীনে কর্তৃত্ববাদী একনায়কত্বের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, তা হিটলারের অধীনে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। সাংবিধানিক সংকট পতনের হাত থেকে বাঁচতে একটি প্রজাতন্ত্রের জোটের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, অ-সংসদীয় চ্যান্সেলরদের সরাসরি নিয়োগ বা হিন্ডেনবার্গের হিটলারের প্রতি ঝোঁক পুরো বিষয়টিকে চরম ডানপন্থী দিকে নিয়ে যায় ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

Thursday, 23 September 2021

১৯৩২ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!


 সাল ১৯৩২, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!


#তৃতীয়_এপিসোড #৩য়_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৩য়_ভাগ

২৬ শে ফেব্রুয়ারি হিটলার (Brunswick) ব্রান্সউইকের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি এবং পরিমাপের অফিসে একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে তার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি ব্যবস্থা, যা তাকে টেকনিক্যালি অস্ট্রিয়ান-জার্মান নাগরিকত্ব দিয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেছিল। ১৯৩২ সালে, ১৩ মিলিয়ন জার্মানরা নাজিদের পক্ষে ভোট দিয়েছিল কিন্তু হিটলারকে ক্ষমতায় আনার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না। তিনি শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় চ্যান্সেলরশিপ অর্জন করতে পারেননি, তাকে সেদেশের মূর্খ নাগরিকদের কিছু ব্যবসায়ীক সদস্যরা, যাদের অহংকার ও নির্বুদ্ধিতা তাদের প্ররোচিত করেছিল, অনেকের কাছে এই 'ভালগারিয়ান'কে একনায়কতন্ত্র বা ডিকটেটরশিপ এর পরিচালনা করতে। বলতে হয় যে, সেই সময় এমন সব পুরানো পরিবারের লোকজন ছিল যারা হিটলারকে ভেবেছিল শুধু একটু লাফিয়ে, লাফিয়ে, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে পারে, তার বেশী কিছু না! ওরা তাকে ততদিন সিরিয়াসলি নেয়নি যতক্ষণ না খুব দেরি হয়ে যায়।

"We engaged him for our own ends/আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনে তাকে নিযুক্ত করেছি", এমন মন্তব্য ছিল (Franz Yosef Hermann Michael Mario Von Pappen) ফ্রাঞ্জ ইয়োসেফ হারমান মাইকেল মারিও ভন পাপ্পেনের। আভিজাত্য এবং সম্পদে জন্মগ্রহণ করা, ভন পাপেনকে চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
বার্লিনে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত অবিশ্বাস্যতার সাথে তার সাথে দেখা করেছিলেন। (Andre Francois)আন্দ্রে ফ্রাঙ্কোয়া একবার বলেছিলেন যে, "Pappen was taken seriously by neither his friends nor his enemies অর্থাৎ পাপেনকে শুধু তার বন্ধুরা কেন শত্রুরাও, মানে কেউই গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।" সেই পাপেনের মতানুযায়ী, "German people desire nothing more than to live in peace in order to turn all the energies which they possess to the great problems which will have to be solved to bring about reconstruction of the world after the war অর্থাৎ, জার্মান জনগণ শান্তিতে বসবাস করা ছাড়া আর কিছুই চায় না যাতে তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে বড় বড় বিষয়গুলি কে মীমাংসার দিকে  পরিণত করে যা যুদ্ধের পর বিশ্বের পুনর্গঠন আনার জন্য সমাধান করতে পারে।"

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিন্ডেনবার্গের কাছে হিটলারের চরম পরাজয়ের পর সেই পাপেনই, নতুন নির্বাচন ডেকে এনেছিলেন। মানুষজন সাধারণ নির্বাচনে সমর্থনের দিক দিয়ে নাজির পতন মোটামুটি অব্যাহত ছিল, যদিও তারা আন্দোলনের আবেদনে স্পষ্টভাবে তুঙ্গে তুলে ধরেছিল। "We won't get to an absolute majority this way/আমরা এভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব না', (Goebbels) গোয়েবলস তার ডায়েরিতে একথা স্বীকার করেছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রুশিয়াতেও আবার নির্বাচন হয়েছিল এবং নাজিরা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়, শক্তি নিয়ে প্রচার চালায় এবং প্রথম রাজনৈতিক পটভূমিতে আসে একটি বিমান, ঠিক যেন আকাশ থেকে নেমে আসছেন, কোনো দেবদূত। হিটলার তার দলের প্রতিনিধিত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়, যেটা ১৯২৮ সালে মাত্র ৬ সিট বা আসন পেয়েছিল, সেখান থেকে ১৬২ আসনে উপনীত হয় ১৯৩২ সালে। অন্যান্য রাজ্য যেমন (Bavaria, Wittenberg, Anhult) বাভেরিয়া, উইটেনবার্গ, আনহল্ট এই ধারা অনুসরণ করেছিল। "it's a fantastic victory, এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়", গোয়েবলস বলেছিলেন।
তাদের সাফল্যে হবু নাৎসিদের মধ্যে একজন (Richard J Evans) রিচার্ড জে ইভান্সের বাক্যে প্রকাশ করেছে, "A rainbow coalition of the discontented অর্থাৎ অসন্তুষ্টদের একটি রামধনু জোট রুপে জয়লাভ সাধিত হয়।"

১৯৩২ সালের মধ্যে (SA)এস এ, বা (Sturmabteilung) ব্রাউন শার্ট নামে যারা পরিচিত ছিল, তারা শান্তি বন্দোবস্তের অধীন অনুযায়ী অনুমোদিত ছোট সেনাবাহিনীর এক জনের চেয়ে চার জন, অর্থাৎ আগের থেকে এত বেশি হয়ে গেছিল। (Reichsbanner) রাইক্সব্যানার যা কিনা সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের আধাসামরিক শাখা এবং আধা সামরিক ভেটেরান্স বা প্রবীণ দের সংগঠনে ৩০০,০০০ সেনা, শক্তিশালী (Stalhom) স্টালহোমেরও একই অবস্থা ছিল। ইউনিফর্মের মধ্যে ৪০০,০০০ (Stormtroopers) স্টর্মট্রুপারও ছিল। এখন কল্পনা করা কঠিন যে এই ধরনের 'বেসরকারি সেনাবাহিনী' সহ্য করা ও পালন করা হচ্ছিল যা, এতো পরিপক্ক গণতন্ত্রে প্রশংসা কম হলেও কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।
যা দেখা গিয়েছিল, তা হল গণতান্ত্রিক ভোটে এর প্রভাব! যেমন মানুষজন যারা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছিল, অতীতের গুন্ডাদের যারা শীতলতার সাথে মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা করত, তাদেরকে টপকে কিভাবে তারা ভোট দিয়েছিল, তা মূল্যায়ন করা রীতিমতো কঠিন।
ভয় ইতিমধ্যেই সীমান্তের পারে লোকবল পাঠাচ্ছিল। ১৯০১ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে জার্মানিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে ২৫ জন নোবেল বিজয়ী ছিলেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন মাত্র পাঁচজন।
বেশিরভাগই (national socialism) ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের বা জাতীয় সমাজতন্ত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, এইরকম আটজন রিফিউজি বিজ্ঞানী (Manhattan Project) ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, পরমাণু বোমা তৈরি করতে।

১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে (Geneva) জেনেভায় শান্তি সম্মেলন তৈরিতে ছয় বছর লেগেছিল এবং এটি প্রায় সার্বজনীন ভাবে আশাবাদী ছিল যে এতে শান্তি সুরক্ষিত হবে। সাধারণের কাছে এমনই একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং যতই সময় যায়, ক্রমবর্ধমান ভাবে ভঙ্গুর বলে মনে হচ্ছিল। প্রায় বিশ্বব্যাপী ৬৪টি ভিন্ন দেশের প্রায় সার্বজনীন প্রতিনিধিরা 'জেনেভার কনফারেন্স হলে' এসেছেন বৈঠকের জন্য যা আশা করা যায় বিশ্বব্যাপী অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োগ হ্রাস করাবে। মিটিংয়ে তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে আবেদনে উৎসাহিত হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ স্বাক্ষর নিয়ে গঠিত হয় মহাদেশ হিসাবে, ১৮ মাস ধরে তারা একে অপরের সাথে বিতর্ক করেছিল। আর ঠিক তারপরেই, হিটলার তার প্রতিনিধিদলকে বের করে নেয়, যা পুরো ব্যাপারটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
লক্ষ লক্ষ অনুগত অনুসারীদের নেতৃত্বে তাদের বলিষ্ঠ নেতা, অ্যাডলফ হিটলার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে সরে আসছেন। হিটলার লিগ অফ নেশনস থেকে পদত্যাগ করলে বিশ্বের দূর্বল স্নায়ু ভীত হয়ে পড়ে। অনেক কিছুই আছে যেমন, যদি এটা করা যেত, বা ওটা করলে হয়তো হতো না, কিংবা এটা অমুক জানতেন, বা এটি অবশ্যই বন্ধ করা যেত ইত্যাদি, ইত্যাদি! এখন এইরকম হাজার একটা জিনিস থাকবে! কিন্তু আসল জিনিসটি হল যখন আপনি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গতে শুরু করেন, তখন যদি একজন ব্যক্তি কিছু নিয়ে গায়ের জোয়ারি করে পালিয়ে যায় বা একটি দেশ কিছু নিয়ে পালিয়ে যায় তা অন্যদেরও উৎসাহিত করে। (Aldous Huxley) অ্যালডাস হাক্সলির Chilling Future Vision/চিলিং ফিউচার ভিশন নামে বইয়ের সিরিজ ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি এটিকে Brave New World বা সাহসী নতুন বিশ্ব বলেছিলেন ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~

Thursday, 9 September 2021

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় হতাশার সময়!


বিংশ শতাব্দীতে, আগের শতকে শান্তি কি অসম্ভব ছিল?


#প্রথম_এপিসোড #১ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতি

দুটি পনেরো বছরের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ বিংশ শতাব্দীর হৃদয় কে একেবারে জীর্ণ করে তোলে, এককথায় ধ্বংসের দিকে নিয়ে ফেলে! এই ইতিহাসের যাত্রার সূত্রেই এবং এই যাত্রার কেন্দ্রে একটি যুদ্ধ থেকে আরেকটি যুদ্ধের মাঝে বিশ্বব্যাপী মানুষের চাওয়া, পাওয়া, হতাশা ও ভয়ংকর দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি এবং তার সামনে উঠে আসা নায়কদের নিয়ে একটি গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি সিরিজ রুপে! ভালো লাগলে পাশে থাকবেন আর না লাগলে এড়িয়ে যাবেন 🙏🏼

আপনি যদি ১৯২০ সালের দিকে একটু ফিরে তাকান, আপনি মনে করতে পারেন যে সেসময় কিছু ভাল নেতাও ছিলেন, যেমন ফ্রান্সে (Lebrun)লেব্রুন ছিলেন, জার্মানিতে (Strazimon)স্ট্রাজিমন ছিলেন ইত্যাদি। আপনি হয়তো জানেন বা নাও জানতে পারেন যে ইউরোপের স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা ছিল এবং আপনি যদি সেই দিকে তাকান যে দৃশ্যপটের থেকে সেই সমস্ত লোকেরা কিভাবে হারিয়েও গেলেন, আপনি কিছু বুঝতেই পারবেন না! শুধু তাই নয় এবং দেখবেন যে প্রকৃত ক্ষমতায় কে কে আছেন যখন একটি বাস্তব এবং আসল সংকট বিশ্বকে আঘাত করে। এই সময়ের মধ্যে একটি দুর্দান্ত বিষণ্নতা সমগ্র মানবজাতির জন্য এসে পড়ে এবং এটি বেশ কয়েকটি দেশকে খুব কঠিনভাবে আঘাত করে। প্রকৃতপক্ষে, আমার কথাগুলো উড়িয়ে দিতে পারেন, তবু বলে রাখা ভালো যে প্রতিটি কথা আমার নিজের মনোভাবের হলেও যা কিনা সমর্থিত অধ্যাপক (Prof. Margaret Macmillan) মার্গারেট ম্যাকমিলানের দ্বারা, যিনি টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক। তা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩২ সালে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন যা একেবারে তলানিতে নেমে আসে এটা সবারই জানা। উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল, বিনিয়োগ ৫০ শতাংশ, দাম বা মুনাফা ১০ শতাংশ। এই সময় একটাই জিনিসের বৃদ্ধি হয়, তা হল কেবল বেকারত্ব, যা ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। ১৯২৯ সালে আমেরিকান কর্পোরেশনগুলি ১০ বিলিয়ন ডলার মুনাফা বুক বা রেজিস্টার করেছিল, এবং ১৯৩২ সালে এটি ৩ বিলিয়ন ডলার লোকসান করেছিল।
"আমাদের সমগ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থা", প্রাক্তন ট্রেজারি সেক্রেটারি (Mcadoo)ম্যাকাদু ঘোষনা করেন, "একটি সংগ্রহ কে কৃতিত্ব বা মর্যাদা দেয়, যা হল একটি বোকার স্বর্গে!"
এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক (Prof. Richard Overy)রিচার্ড ওভারির মতে, উন্নত রাজ্যে ৪০ মিলিয়ন মানুষ বেকার, লাখ লাখ মানুষ অভুক্ত, বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য অর্ধেকেরও কম হয়ে যায়। সেই সময়কালে, আপনি আজকের দিনে কল্পনাও করতে পারবেন না যা ঘটেছে এবং এর পরিণতি ছিল গভীর দারিদ্র্যতা, সর্বত্র শক্তিশালী সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি, পুঁজিবাদের একটি শক্তিশালী অনুভূতি যা কাজ করে নি এবং সম্ভবত কমিউনিজম যা কিনা হটাৎ করে ডানা মেলে বেরিয়ে আসবে বলে আশঙ্কা বাড়ছিল। হঠাৎ করে এই সব জিনিস পশ্চিম বিশ্বকে হুমকি দেওয়া শুরু করে..।

এটি কেবলমাত্র শিল্পের জন্য হতাশাগ্রস্ত অবস্থা ছিল না, এটি ছিল দুর্দান্ত বা চরম হতাশা এবং এটি সবারই জন্য ছিল। ১৫০০০০ আমেরিকান বাড়ির মালিকরা ১৯৩০ সালে তাদের সম্পত্তি হারিয়েছে, ২০০০০০ জনে ৩১ সালে এবং ২৫০০০০ জনে ৩২ সালে।
১৯২৯ সালে আমেরিকান অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ছিল প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা কিনা ১৯৩২ সালের মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল মাত্র এক তৃতীয়াংশে এবং মনে করা হয়েছিল যে এমন কিছুই নেই মানে কোনো সিস্টেম যা কেউ সঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারে। জুলাইয়ের শেষের দিকে সেই পরিস্থিতি যতটা ভয়ঙ্কর ভাবা যেতে পারে ততটাই কম, অ্যানাকোস্টিয়া ফ্ল্যাটের সংঘাতে, (Hoover)হুভারের রাষ্ট্রপতি পদের মৃত্যুর জন্য যেন গড়ে উঠেছিল, যখন তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাটেলিয়নের সেনা পাঠিয়েছিলেন, কাদের বিরুদ্ধে? না, যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হাজার হাজার অভিজ্ঞ সৈন্য, তাদের ওয়াশিংটনে একত্রিত হওয়ার থেকে হটাতে, যুদ্ধ পরিষেবার নামে বোনাসের অর্থ তাড়াতাড়ি প্রদানের দাবিতে, যা তাদের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। এটা অন্যায় যুদ্ধ, ১৮৬৫ সাল থেকে ওয়াশিংটনে যুদ্ধরত সৈন্যদের সর্বাধিক ঘনত্ব ঘটেছিল তত্কালীন। তাদের কর্তৃপক্ষকে মানে অ্যানাকোস্টিয়া ফ্ল্যাটে বিক্ষোভকারীদের, তাদের ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে বিপথে চালাতে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় ঘোড়ার পিঠে চড়ে, ট্যাঙ্কের সাহায্যে, টিয়ার গ্যাসের আশ্রয়ে। তাদের আশ্রয়স্থল জ্বালানো হয়, যার জন্য হুভারকে সম্পূর্ণ রুপে দায়ী করা হয় না, এই বাড়াবাড়ির জন্য নিন্দা করা হয়েছিল সেই ঘটনার কমান্ডারের, যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে মাঝখান থেকে বহুচর্চিত জাতীয় নায়ক হয়েছিলেন, তার নাম ছিলো (Douglas Macarthur)ডগলাস ম্যাকার্থার। এই সময়ে একটি খুব বিখ্যাত চলচ্চিত্র ছিল যার নাম 'আই অ্যাম এ ফিউজিটিভ ফ্রম আ চেইন গ্যাং' মানে একটি চেইন গ্যাং থেকে একজন পলাতক - যেখানে নায়ক হিসাবে যে অভিনয় করেছেন, দেখানো হয়েছে যে তিনি আমেরিকান স্বপ্নকে সরাসরি অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু আমেরিকান রাষ্ট্র দ্বারা সে প্রবর্তিত, বঞ্চিত এবং বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে তার সাথে, সে প্রতিটি সুযোগ হারিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং শেষে তার বান্ধবীর কাছে যখন ফিরে আসে এবং সে তাকে খুব সংক্ষিপ্তভাবে আলিঙ্গনে বলে 'তুমি এক বছর আগে পালিয়ে গেছিলে, কেন তুমি যোগাযোগ করোনি'। উত্তরে সে বলে 'আমি পারি নি, তারা আমাকে অনুসরণ করেছে, তারা সবখানেই আছে, সর্বত্র' এবং মেয়েটি বলে, 'তুমি কি থাকবে?' উত্তরে ছেলেটি বলে 'না, আমি থাকতে পারব না, আমাকে যেতে হবে'। 'কিন্তু তুমি কিভাবে থাকো, জীবন অতিবাহিত করো কিভাবে? তুমি কেমন আছো .. তুমি কি খাবে'? এবং সে বলে, 'আমি চুরি করি... আমি চুরি করি এবং সেই লাইনটি ফিসফিস করে বলে, আমি চুরি করি .. এটা .. সে সময় ভীষণ জনপ্রিয়, মেলোড্রামাটিক এবং আইকনিক একটা মুভি, ওদের ব্যাপার-ই আলাদা, ওটা হলিউড বলে কথা!

যাই হোক, বাস্তবে ফিরি! যেহেতু ১৯৩২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গণনা করা হয়েছিল, সেই সময়ে গ্রামীণ আমেরিকা একটি হতাশাজনক অবস্থার মধ্যে যাচ্ছিল, তখন গবাদি পশু মারা যাচ্ছে হাজারে হাজারে, মানুষ ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা থেকে বীতশ্রদ্ধ। একটি সত্যিকারের প্লেগ একটি দেশের বিভাগের একসময়ের সমৃদ্ধ খামার যা ভালো ফলাফল করেছে, তাকেও জর্জরিত করেছে। এরূপ সময়ে, "আমাদের মধ্যে একটি বিপ্লব হবে, ১২ মাসেরও কম সময়ে, প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে" রক্ষণশীল সংযুক্ত খামার বা কনসারভেটিভ ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশনের (Ward Ed O'Neal)ওয়ার্ড এড ও'নিল বলেন, তিনি গণতান্ত্রিক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্কের গভর্নর পদে নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালের রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ক্যাম্পেনের জন্য তার কমন কথা যেটা পরবর্তী সময়ে চর্চার বিষয় ছিল বা আছে, তা হল,'হ্যাপি ডেজ আর হেয়ার এগেইন' মানে সুখের দিন আবার এখানে, মানে পাতি কথায় 'আচ্ছে দিন'। সেই সময় এক ব্যক্তি উঠে এসেছিলেন, তার নাম ছিল (Franklin Delano Roosevelt)ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট। তিনি ১৮৬৪ সালে আব্রাহাম লিঙ্কনের বিজয়ের পর থেকে একতরফা নির্বাচনে বর্তমান প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, একেবার প্রকৃত ভূমিধসের মতো। তিনি স্বভাবতই একজন পরীক্ষক, একজন বাস্তববাদী ছিলেন, মানে তার কথার ধরনই ছিল যে, 'আসুন চেষ্টা করি', 'দেখা যাক কিছু কাজ না করলে আমরা অন্য কি কাজ করতে পারি', 'নিরুৎসাহিত হবেন না, আমরা অন্য কিছু চেষ্টা করবো'... ইত্যাদি ইত্যাদি। যে আশাবাদ, উৎফুল্লতা, সহানুভূতি, পরীক্ষামূলকতা এবং প্রজাতান্ত্রিক আমেরিকানদের প্রতি সুগভীর বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন যা তিনি কখনো হারাননি এবং যা তাকে রাজনৈতিকভাবে অপরিহার্য এক ব্যক্তি বানায়।

এইসময়ে একদা অর্থনৈতিক ভাবে সর্বশক্তিমান (Al Capone)আল ক্যাপোন কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন, কম উত্তেজিত মেজাজের আলফনসো ক্যাপোনের চেয়ে বড় কিছু এই সময়ে আসে না যা ১৯৩২এর সালে শূন্যতা থেকে উঠে আসা একটি ছোট খাটো একজন বাউন্সার (স্কারফেস) মুখে কাটা দাগ সমেত আলফনসো, নিয়ন্ত্রণের উচ্চ শিখরে উঠে এসেছে এবং একটি অপরাধমূলক সিন্ডিকেটের যা বছরে একশ মিলিয়ন ডলার আয় করে, সেটির পরিচালনায় ব্যস্ত। আটলান্টা, জর্জিয়া রাজ্যের পেনিটেন্টিয়ারিতে তাঁর পরিচয়পত্রে নিম্নলিখিত বিবরণ রেকর্ড করে;
• শাস্তি শুরু হয় ৪ঠা মে ১৯৩২,
• জন্ম তারিখ ১৭ই জানুয়ারি ১৮৯৯,
• পেশা জুয়াড়ি এবং তার মুখের তিনটি দাগ, স্কারফেসের সাবধানে ও সুবিস্তৃত বর্ণনা আছে।

এবার আসি ব্রিটেনের কথায়, ব্রিটেনে রাজনৈতিকভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে বিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদ (Oswald Moseley)ওসওয়াল্ড মোসলে ১৯৩২ সালে একটি ফ্যাসিবাদী দল গঠন করেছিলেন। তিনি রোম ঘুরে আসার পর তার অবিকল নকল করতে যাচ্ছিলেন এবং মুসোলিনি তাকে যা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাই তিনি অনুকরণ করেছিলেন। কালো শার্টের ইউনিফর্ম যার জন্য অনুসারীরা অর্থ প্রদান করেছিলেন, পাঁচটি শিলিং প্রতিটি শক্ত বাহু, অনেকটা হাত খাড়া করে স্যালুট করা, ইত্যাদি। ইটালি তার আন্দোলনের তহবিল পাঠানোর জন্য যে পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছিল তার জন্য এটির হিসাব ঠিক করা ছিল, পুনরায় তার কথায় ফিরব।

ভক্তদের কাছে প্রশংসার বিশ্বের রাজধানী ছিল, শুধু ছিল কেনো, এখনো আছে সোভিয়েত রাশিয়ায়, যেখানে কেবল মানবতার দিগন্ত ছাড়িয়ে ছিল স্ট্যালিনের অর্কেস্ট্রেটেড উচ্চতা, হয়তো একটু বেশীই বললাম, তবু স্যাটায়ার রুপে হলেও চালিয়ে নেবেন। ১৯৩২ সালে যখন (Pravda)প্রভদা, যা ছিল অফিসিয়ালি পার্টির সংবাদপত্র, তার পাঠকদের একটি বিস্ময়কর আবিষ্কারের কথা বলেছিল। এটিতে প্রকাশিত সমস্ত নিবন্ধ (Lenin)লেনিনের নামের অধীনে যা লেখা হত, তা সম্প্রতি শেখা যাচ্ছিল যে কমরেড (Stalin)স্ট্যালিন দ্বারা নাম লুকিয়ে লেখা হয়েছে, যাকে বলে 'ঘোস্ট রাইটিং'। আপনাকে মিথ্যা কথা বলতে হত, পার্টির স্লোগানগুলি পুনরাবৃত্তি করতে হত, অন্যথায় এমন মনোভাব ছিল যে স্ট্যালিন আপনাকে হত্যা করবে। রাশিয়ান ম্যাক্সিমের মতে আপনি একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতো মিথ্যা বলতে বাধ্য ছিলেন। স্ট্যালিনের ভাবমূর্তি সর্বত্র ছিল এবং সাম্যবাদ আর রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, এটি একটি ধর্মে বা আচারে রূপান্তরিত হয়েছিল। এবং এতদ্বারা উত্পাদিত সবচেয়ে বেছে নেওয়া সুগন্ধি, যা কিনা ছিল সরকারি সুগন্ধি, সেই সুগন্ধি কে বলা হত 'ব্রেথ অফ স্ট্যালিন বা স্ট্যালিনের নিঃশ্বাস'। প্রপোগান্ডাই ছিল সব বা এর কি যে বিশাল এক প্রয়োজন, রাশিয়াতে এই সাক্ষ্য ১৯৩০ -এর দশকের মানুষ যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিত তার থেকেই আপনি দেখতে পেতেন।

(ক্রমশ)

Sunday, 22 August 2021

Look at only 'ME' syndrome...

We can't see that we are in an era of attention. There are pointless things being recycled on social media platforms that scream only 😱 for that attention of “look at me,” or if needed with a 'pleeeeaaaasssseeee!'

So many have been duped into the delusion that if I get enough attention I will get paid… Now, there is nothing wrong with earning money for services rendered because you should get paid.

But… You must ask yourself what is service really? Am I doing this for the attention or I am really doing this to impact and help to change lives for the better?

Impact lasts to improve lives while popularity is just a flash in the pan of attention, cheers…

#sundaymotivation #success #leadership #mindcoach #ushas #change #chinupfIghterS 

Thursday, 19 August 2021

হিটলার ২-য় পর্বে!


 #হিটলার_২য়_পর্বে:


যেহেতু জার্মানির সামরিক বাহিনী কমাতে হয়েছিল, সেহেতু যুদ্ধের পর হিটলার আর সৈনিক থাকতে পারেননি, কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর জন্য একজন তথ্যদাতা(informer) হিসেবে কাজ করতে থাকেন। যুদ্ধের পরে, জার্মানিতে কমিউনিস্টরা একটি বিপ্লবের চেষ্টা করেছিল এবং সরকার সাধারণভাবে সাম্যবাদ নিয়ে চিন্তিত ছিল, তাই হিটলারের উপর অনুপ্রবেশ করা এবং কমিউনিস্ট হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন নতুন রাজনৈতিক দলের সম্বন্ধে রিপোর্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি নামে একটি নতুন দল পুরো লাল পতাকা জুড়ে ছেয়ে ফেলেছিল, মনে করা হয়েছিল যে বোধহয় কমিউনিস্ট পার্টি, তাই হিটলার তাদের একটি আয়োজিত সভায় গেছিলেন কিন্তু দেখা গেল যে তারা মোটেও কমিউনিস্ট ছিল না উল্টে, তারা ছিল চরম বামপন্থী একটা দল! এবং সেই পার্টি তার চরম বিশ্বাসের অনেক কিছুতেই মতের মিল পাওয়া যায়, তাই তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে এবং পার্টিতে যোগদান করেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই, তার অসাধারণ কথা বলার ক্ষমতা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সমর্থকদের মুগ্ধ করেছিল, এবং তিনি খুব দ্রুত উপরে উঠতে লাগলেন। খুব শীঘ্রই তিনি পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনও হন। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে পার্টির ক'একটি পরিবর্তন বা মেকওভার দরকার, তাই তিনি এটির নতুন নামকরণ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি (National Socialist German Workers' Party), বা সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি, এবং তিনি একটিতে যে হালকা ব্যাঁকানো স্বস্তিকা চিহ্ন-র ব্যবহার করেছিলেন তা তার নিজেরই করা, একটি নতুন রঙের স্কিমও দিয়েছিলেন তিনি। নাৎসিরা নীতি সম্পর্কে খুব-একটা সুনির্দিষ্ট ছিল না, কিন্তু হিটলার জার্মানিকে তার আগের গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে এবং সমস্ত নৈতিক জার্মানদের এক জাতি, গোষ্ঠীতে পুনর্মিলন করতে, তিনি জার্মানি কে পুনরায় সমস্ত গৌরব ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর হন। তিনি আরও চেয়েছিলেন যে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ আর্যদের(pure Aryans) নাগরিক হতে দেওয়া উচিত এবং সব ইহুদিরা তাদের নাগরিকত্ব হারাবে। চরম ডানপন্থী রাজনীতিতে এই ধারণাগুলো আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, কিন্তু যেটা নাৎসিদের বাকি চরম ডানপন্থী দলগুলোর থেকে আলাদা করেছিল তা হল হিটলার নিজেই। তারা খুব দ্রুতই জার্মানির চরম ডানপন্থী নেতৃস্থানীয় দল হয়ে ওঠে। সেই সময়ে জার্মানির অনেক রাজনৈতিক দলের আধাসামরিক শাখা ছিল এবং নাৎসিরাও এদের থেকে আলাদা ছিল না। হিটলার খুবই বর্ণনামূলক ভাবে এদের গঠন সম্পর্কে সচেষ্ট হন, এদের নামকরণ-এর বিভিন্নতা যেমন "হল সুরক্ষা বিচ্ছিন্নতা/Hall Protection Detachment," পরবর্তী সময়ে যা হয় "Gymnastic and Sports Division/জিমন্যাস্টিক এবং ক্রীড়া বিভাগ," এবং অবশেষে অশুভ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী "Storm Detachment/ঝড় বিচ্ছিন্নতা", বা সংক্ষেপে এসএ/SA গোষ্ঠী স্থাপন করা। তাদের কাজ ছিল নাৎসি দলের সভা, কার্যালয় রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং তারা প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত হত রাস্তা-ঘাটে কমিউনিস্টদের সাথে। যেহেতু মিত্র শক্তিরা জার্মানির সামরিক আকার-আকৃতি কমানোর দাবি করেছিল, তাই অনেক প্রশিক্ষিত সৈন্য বেকার হয়ে পড়েছিল। তারা স্বাভাবিক ভাবেই নাৎসি মতাদর্শ পছন্দ করত, এবং এসএ -তে যোগদান করা তাদের জন্য স্বাভাবিক ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরও বড় হতে থাকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হওয়া নতুন গণতান্ত্রিক সরকার বেশ দুর্বল এবং অকার্যকর ছিল। শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ (reparations) দিতে হয় মিত্র শক্তিদের কাছে, ফলে আরও বেশি পরিমানে অর্থ মুদ্রণের কাজ শুরু করে। সমস্যাটি হল, অর্থ মুদ্রণ বা টাকা ছাপানো আসলে একটি দেশকে বেশি অর্থের মালিকানা দেয় না - এটি শুধু অর্থকে কম মূল্যবান করে তোলে। সুতরাং জার্মানি দেশটি যত বেশি টাকা ছাপিয়েছে, ততই এটি কম এবং আরো কম মূল্যবান হয়ে উঠেছে এবং একসময় এসে মুদ্রার মূল্য ক্র্যাশ করেছে। ১৯১৯ সালে, একটি ইউ.এস. ডলারের মূল্য ছিল ৪.৫ জার্মান মুদ্রার সমান, কিন্তু ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি ইউ.এস. ডলার ছিল ৪,২ ট্রিলিয়ন মার্কের সমান। পাউরুটিরও দাম বেড়ে হয় ২০০ বিলিয়ন মার্কস। ব্যাঙ্কের ব্যবসা পুরোপুরি মূল্যহীন হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে, এই জাতীয় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জার্মানি মিত্র শক্তিদের অর্থ প্রদানের জন্য প্রচন্ড সংগ্রাম করছিল। ফরাসিরা এ নিয়ে বিরক্ত হয়েছিল। তাই তারা কারখানা দ্বারা পরিপূর্ণ এলাকা রুহর (Ruhr) অঞ্চল দখল করে নেয় এবং অর্থ প্রদানের পরিপূরক হিসাবে এলাকা থেকে অর্থনৈতিক উৎপাদন নিজেরাই গ্রহণ করে। তারা জার্মান নাগরিকদের সাথেও খারাপ আচরণে লিপ্ত হয় এবং মোটামুটিভাবে একশ ত্রিশজন জার্মান, এইসব ফরাসি দখলদারিত্বের সময় নিহত হয়েছিল। জার্মানরা ক্ষিপ্ত ছিলই এবং হিটলার এবং নাৎসিরা ভেবেছিল যে এখন এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার একটি দুর্দান্ত সময় হবে। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে, ঠিক এক বছর আগের এক সাহসী ইতালীয়র নকল করে(Benitto Mussolini),
হিটলার একটি বিয়ার হলে একটি সভায় ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেন। তার সমর্থকদের সাথে, তিনি মিউনিখের রাস্তায় মিছিল বের করেছিলেন, এই আশায় যে পুলিশ তার পাশে যোগ দেবে। কিন্তু না, তারা যেটা দিয়েছিল তা হল বন্দুকের গুলি! প্রায় ১৫জন সিনিয়র অফিসিয়াল সেই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন ও মারা যান, আহত হন হিটলার নিজেও। মাস খানেক আত্মগোপন করলেও তাকে ধরা পড়তে হয়। হিটলারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে আনা হয়েছিল। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারত, কিন্তু ডানপন্থী বিচারকরা ভেবেছিলেন তিনি একটি খুব শান্ত লোক, হিটলারও বিচারকদের চিনতেন এবং জানতেন যে তারা নমনীয় হবেন। তাই তিনি বিচারের সময় এবং শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট বক্তৃতা করার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন! তাকে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে তিনি মাত্র নয় মাস কারাভোগ করেছিলেন। যখন আমি কারাগার বলেছিলাম, তখন একেবারেই তার কারাবন্দি-র মতো ব্যবহার করা হয় নি, বরং এটি একটি মনোরম হোটেলে থাকার মতো ব্যাপার ছিল যেখানে তার একটি বিখ্যাত বই 'মেইন কাম্পফ' (Mein Kampf অর্থাৎ মাই স্ট্রাগল) লেখার জন্য প্রচুর সময় ছিল। যেটি একদিকে তার জীবনের কাহিনী তো অন্য দিকে এক সুনির্দিষ্টভাবে প্রস্তাবনা ও তার পার্টির হলফনামা নামে পরিচিত!
গোটা বিষয়টি দেশব্যাপী মিডিয়া দ্বারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল এবং এটি হিটলারকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। হিটলার এবং তার চরম বার্তা বা নীতি এখন পুরো জার্মানি জুড়ে পরিচিত হচ্ছিল। কিন্তু দৈনন্দিন জার্মানরা এখনও তার জন্য খুব একটা চিন্তিত ছিল না, এককথায় তারা পাত্তা দেয়নি। ১৯২৮ সালের নির্বাচনে, নাৎসিরা কেবল জেতে ২% ভোট। অনেকেই তখনও নাৎসি দের সহিংসবাদি চেহারা এবং হৈচৈতে রাজি ছিলেন না ও তারা হিটলারকে অ-রাজনীতিবিদ হিসেবে গন্য করেছিলেন। কিন্তু একটি নতুন অর্থনৈতিক সংকট সব পরিবর্তন করে দেয়। জার্মানিকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে সাহায্য করার জন্য, আমেরিকা তাকে লোন দিতে রাজি হয়েছিল। ১৯২৯ সালের অক্টোবরে, ওয়াল স্ট্রিট চরম অর্থাভাবের সূচনা ঘটেছিল এবং আমেরিকা তার টাকা ফেরত চেয়েছিল। ইতিমধ্যেই সংগ্রামী জার্মানির ওপর যে অর্থনৈতিক চাপ ছিল তা ছিল মারাত্মক।
বেকারত্ব হচ্ছিল আকাশচুম্বী। দারিদ্র্যতা ব্যাপক থেকে ব্যপকতর হচ্ছিল এবং জার্মানরা এটা ভালোভাবে নিচ্ছিল না। এটা স্পষ্ট ছিল যে নবগঠিত গণতন্ত্র কাজ করছে না। সংকটের মুখে, জার্মানরা সেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে, যা হল চরমপন্থী! চরমপন্থী দল হিসেবে জার্মানরা নিজেদের বিভাজন করছিলেন এবং পরিবর্তন করতে চাইছিল নিজেদের মানসিকতার, যদি তুমি একজন প্রকৃত জার্মান হও এবং দেশের বদল আনতে চাও, এখন তোমার পছন্দগুলি ছিল সীমিত, হয় কমিউনিস্ট বা নাৎসি।

হিটলার দাবি করেছিলেন তিনিই একমাত্র জার্মানিকে তার আগের গৌরবে ফিরিয়ে আনতে পারেন। নাৎসি দল হিটলারকে একজন মহান এবং শক্তিশালী হিসেবে মানুষের মনে ধরানোর জন্য প্রচার করেছিল, ব্যবহার করেছিল একটা প্রপোগান্ডা হিসেবে এবং তারা জার্মান জনগণকে তাদের সব কষ্টের জন্য দোষারোপ করার মতো একটি বলির পাঁঠাও খুঁজে দিয়েছিল। একক শক্তিশালী স্বৈরশাসকের প্রতিশ্রুতি ছিল ব্যর্থ গণতন্ত্রের এতবছর পরে জার্মানদের জন্য তাজা বাতাসের প্রশ্বাস। রাতারাতি সবকিছু পাল্টে যায়, হটাৎ যেন মনে হতে থাকে, কেউ কেউ তার চরম আদর্শকে কিনে নিয়েছে। কেউ কেউ বর্ণবাদ বা বৈষম্যের সাথে একমত নন, কিন্তু যেভাবেই হোক তাকে ভোট দিতে ইচ্ছুক। অনেকেই রাজনীতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না, কিন্তু শুধু প্রচারের জালে ধরা পড়ে তাকেই চেয়েছিল। নির্বাচনের পর নির্বাচন, নাৎসিরা ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ক্রমশ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সালে তারা জার্মান পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় দল হয়ে ওঠে। সেই দেশের লোকজন হিটলারের প্রতি সত্যিকারের অর্থেই বিশ্বাস করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে তিনি জার্মানির এক ধরণের মহান নিয়ন্ত্রক, ত্রাণকর্তা ছিলেন। তিনি পরিণত হয়েছিলেন এক স্বৈরাচারী, মেগালোম্যানিয়াকে। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে ভাল ফলও করেছিলেন, কিন্তু তখনও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে অত্যন্ত জনপ্রিয় জেনারেল পল ভন হিন্ডেনবার্গের কাছে হেরে যান। যেহেতু হিটলার এখন সবচেয়ে বড় দলের নেতা, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে তাকে চ্যান্সেলর করার দাবি জানান। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ অনিচ্ছুক ছিলেন, হিটলারকে দেখে স্পষ্টতই তার মনে হত যে কত বড় বর্ণ-বৈষম্যবাদী। শিল্প নেতারা আগ্রহ জানান, যেন হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে চ্যান্সেলরশিপ দিয়ে দেন, এছাড়াও কমিউনিজমের ক্রমবর্ধমান উপদ্রবের আশঙ্কায় এবং কেন্দ্রীয় দলের নেতা ভন পাপেন, যিনি গোপনে হিটলারের সাথে আলোচনা করেছিলেন, তিনি হিন্ডেনবার্গকে বললেন, যে 'আমরা হিটলারকে চ্যান্সেলর করব এই শর্তে যে আমি ভাইস চ্যান্সেলর হব এবং বেশিরভাগ সরকারি চাকরি আমাদের কাছেই যাবে, যা কিনা মধ্যপন্থী, রক্ষণশীল। এই ভাবে আমি আমার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারব, আমি বলতে চাইছি যে, আমরা আমাদের ক্ষমতা ধরে রাখব এবং আমরা হিটলারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এমনভাবে যেন সে আমাদের খেলনা ক্ষুব্ধ পুতুল হিসাবে। এতে কি আর ভুল হতে পারে?' যার উত্তর হল, সবকিছু...

হিটলার ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন, কিন্তু তিনি তখনও স্বৈরশাসক ছিলেন না। ফেব্রুয়ারিতে জার্মান পার্লামেন্ট ভবনে আগুন লাগানো হয়। ঐতিহাসিকরা এখনও নিশ্চিত নন যে এটি কে করেছে তবে অনেকেরই সন্দেহ নাৎসিরা নিজেরাই করেছে। হিটলার কিন্তু  কমিউনিস্টদের দায়ী করেছেন এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে একটি জরুরী ডিক্রিতে স্বাক্ষর করতে রাজি করান যা তাকে সকল কমিউনিস্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বন্দী করবার অনুমতি দেয়। কমিউনিস্টদের এবং অন্যান্যদের ডাকাউতে (Dachau) প্রথম কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। এই সময়ে, প্রবীণ রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গ মারা গেলেন, এই হল হিটলারকে নিখুঁত একটি সুযোগ দেওয়া। তিনি পার্লামেন্টে একটি আইন (1933 Enabling ACT) প্রবর্তন করেন যা তাকে ভবিষ্যতের সকল আইন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্পূর্ণ অনুমতি দেয় শুধুমাত্র তার নিজের উপর। কারাগারে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরকে এবং অন্যদের এসএর ভয় দেখিয়ে হিটলারের আইন পাস হয়। চ্যান্সেলর হওয়ার মাত্র দুই মাস পর হিটলার এখন একনায়ক, ডিকটেটর!
তার এখনও একটি সমস্যা ছিল। এস এ-এর নেতা রোহম(Rohm) চেয়েছিলেন এস এ, নিয়মিত জার্মান সেনাবাহিনীর চাকরি গ্রহণ করবে এবং জার্মান সেনাবাহিনী সেই ধারণা পছন্দ করেনি। হিটলারের তার পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত জার্মান সেনাবাহিনীর সমর্থন বজায় রাখার প্রয়োজন ছিল, তার রুক্ষ, রাগী, বদমেজাজি এবং খামখেয়ালি এস এ-র চেয়ে বেশি। তাই ১৯৩৪ সালে জুনের এক রাতে, তিনি রোহম এবং তার নিজের এস এ অফিসারদের অনেককে গ্রেপ্তার করে হত্যা করেছিলেন। তিনি সুযোগটি নিষ্ঠুরভাবে কিছু ব্যক্তিগত কিছু নিজস্ব হিসাবেরও নিষ্পত্তি করেছিলেন। কিছু রাজনীতিবিদ, যারা অতীতে তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, যেসব সাংবাদিক তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক নিবন্ধ ছাপিয়েছিলেন, এমন এক ব্যক্তি যিনি একেবারেই কিছুই করেননি, কিন্তু তারা ভেবেছিল সে অন্য কেউ, এরকম প্রচুর কারুর হত্যা করিয়েছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে, তাদের পরিবারের লোকজনকেও হত্যা করা হয়েছিল। মোট, ২০০ জন লোককে হত্যা করা হয়েছিল যা দীর্ঘ ছুরির রাত (the Night of the Long Knives) হিসাবে পরিচিত হয়েছিল। সেনাবাহিনী, এখন সন্তুষ্ট যে তাদের প্রতিস্থাপন করা হবে না, তাদের নতুন ফিউরারের (জার্মানিতে যার অর্থ নেতার ও নেতা) প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং হিটলারের নিয়ন্ত্রণ এখন নিশ্চিত। জার্মানিতে জীবন হিংস্রভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যার কিছুটা ছাপ ৭৫র ভারতেও দেখা যায়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অভিব্যক্তি প্রকাশ, এবং জনসমাবেশ স্থগিত করা হয়েছিল। ইহুদিরা প্রাথমিকভাবে ব্র্যান্ডেড মানে চিহ্নিত করা এবং তাদের ব্যবসা বয়কট করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, হিটলার ছয় মিলিয়ন ইহুদি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদেরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে, যদিও এখনো অবধি পাওয়া কোনো তথ্যেই হিটলারের সই দেখা যায় নি, তবু একথা অনস্বীকার্য যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজই সংগঠিত হত না। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বা অসম্পূর্ণতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে, বিশেষত শিশুদেরও  জীবাণুমুক্ত বা স্টেরিলাইজড করতে বাধ্য করা হয়েছিল। 'হিটলার ইয়ুথ' তরুণদের ব্রেনওয়াশ করার একটি সহজ উপায় হয়ে ওঠে। ছেলেদের যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত স্কুলে থাকতেই এবং ক্যাম্প থেকে হিংস্র অবস্থায় বাড়ি ফিরত। মেয়েদের বলা হয়েছিল তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল অনেক বিশুদ্ধ আর্য সন্তান জন্ম দেওয়া! তারা মাঝে মাঝেই গর্ভবতী হয়ে ক্যাম্প থেকে ফিরে আসত। যখন তাদের বাবা -মা বোধগম্যভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ত, তখন তাদের সন্তানরা তাদের হুমকি দিতো যে তারা তাদের গেস্টাপোর (Gestapo বা জার্মান পুলিশ) কাছে ধরিয়ে দেবে কারণ তারা বাধা দিচ্ছে জার্মানির মাহাত্ম্যকে ফিরিয়ে আনার কাজে। সাধারন অভিবাদনের রীতি নীতির পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং এটি ঠিকঠাক ব্যবহার না করার জন্যও আপনাকে একটি কনসেনট্রেশন শিবিরে পাঠানো যেতো। এই ভাবে, মনে হত যে সবাই নাৎসি সমর্থক। আপনি যদি হিটলারকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সাহস করেন বা তার বিরুদ্ধে কোনোভাবে কথা বলেন, আপনাকেও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হতো। এইভাবে জার্মান জাতীয়তাবাদ তরুণ অ্যাডলফাসকে মোহিত করেছিল। রাস্তায় কঠিন জীবন যাপনকারী একজন যুবক হিসেবে চরম মতাদর্শ এবং ইহুদি-বিরোধীতা তার মধ্যে যেন অন্তর্নিহিত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় তার মধ্যে ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার তৃষ্ণায় তাকে পূর্ণ করে তুলেছিল। একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা তাকে ঈশ্বরের সমান বানিয়ে তুলেছিল এবং শত শত, হাজার হাজার মানুষ তাকে তার ত্রাণকর্তা বা রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখেছিল নিজেদের হারানো গৌরব, গর্ব ফিরিয়ে আনার জন্য যা তাকে একজন ক্ষমতালোভী, একজন মেগালোম্যানিয়াক বানিয়ে তুলেছিল এবং শীঘ্রই, তার আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতি বিশ্বকে দ্বিতীয় মর্মান্তিক বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে টেনে এনেছিল, যাকে আমরা চিনি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা World War 2 নামে ... 


©উshaস চttopaধ্যায়~

#দ্বিতীয়_বিশ্বযুদ্ধ #হিটলার #ইহুদি #কমিউনিস্ট  #হলোকাস্ট #জার্মান #প্রথম_বিশ্বযুদ্ধ

Thursday, 12 August 2021

শিশু বা যুবক হিটলার...


 এই শিশুটির দিকে তাকান। এত ভদ্র, সুন্দর, এত নিরীহ। আপনি কি ভাববেন, যে এই শিশুটি বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ, একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠবে। ঠিক আছে, আবার একটু ভাবুন। কারন এটি হিটলারের প্রথম প্রকাশিত ছবি!

হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির একটি ছোট শহরের ব্রানাউ(Braunau) অঞ্চলে, অ্যাডলফাস হিটলার(Adolphus Hitler) নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অ্যালোইস শিকলগ্রুবার(Alois Schicklgruber) নামে জন্মগ্রহণ করলেও, নানা জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে, শেষ পর্যন্ত তার নাম পরিবর্তন করে তার সৎ বাবার নামে নাম রাখেন এবং অ্যালোইস হিটলার হন। অ্যালোইস ছিলেন একজন মধ্য-স্তরের অস্ট্রিয়ান কাস্টমস অফিসার! নগদ ঘুষ বা টাকা-পয়সার দিক থেকে তিনি সেরকম বিশেষ কিছু লাভ করতে সক্ষম ছিলেন তা নয়, তবে অবশ্যই মহিলাদের মধ্যে তার যে সৌখিনতা ছিল, তার পরিচয় মেলে। তিনি একজন ধনী, বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু তারপরেই খুব অল্প বয়সী গৃহকর্মী বা চাকর সম্প্রদায়ের একজনের সাথে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর পরে, তিনি তার অসুস্থ স্ত্রীকে তার উপপত্নীর (গৃহকর্মী) সাথে রেখে কার্যসূত্রে বাইরে যান, কিন্তু যেহেতু ক্যাথলিক চার্চ সেই সময় বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেয়নি, তাই তিনি তাকে বিয়ে করতে পারেননি। তাই তিনি তার বৃদ্ধ স্ত্রীর মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলেন এবং এরই মধ্যে তাদের একটি সন্তানও হয়। তারপরে তার স্ত্রী মারা যান, তাই তিনি তার উপপত্নীকে বিয়ে করেন এবং অন্য একটি সন্তান পান, কিন্তু এরপর তার নতুন স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে, তিনি তার অনেক, অনেক দূরের এবং বয়সে ছোট এক তুতো বোন ক্লারাকে তার যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। তারপর যখন তার নতুন স্ত্রী মারা যান, তখনই তিনি ক্লারাকে, যে কিনা তার তুতো বোন ছিল তাকে গর্ভবতীও করেছিলেন এবং তারপর তার সাথে বিয়েও সম্পন্ন করেছিলেন ...
সেই জন্য, এক কথায় এইদিকে তিনি খেলোয়াড় ছিলেন! ক্লারা এবং অ্যালোইস, তাদের একত্রে তিনটি সন্তান ছিল যারা শৈশবেই দুঃখজনকভাবে মারা গিয়েছিল, তাই যখন চতুর্থ সন্তান অ্যাডলফ এসেছিল, ক্লারা তাকে যথেষ্ট আস্কারা দিয়ে নষ্ট করেছিল। হিটলারদের আরও দুটি বাচ্চা ছিল এবং পরিবারটিকে গ্রেটার জার্মানি তে কয়েকবছর ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল, যার ফলে অ্যাডলফকে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে হয়েছিল।
অ্যাডলফের বাবা ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, দ্রুত রেগে যেতেন। যার ফল ভোগ করত প্রথম পক্ষের সবচেয়ে বড় ছেলে। তার উপর বেশিরভাগটাই ছাপিয়ে পড়ার কারণের ফলে সে ততদিন নিয়ে যায় যতক্ষণ না তার পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি হয়ে যাচ্ছিল এবং শেষপর্যন্ত সে পালিয়ে যায়, চোদ্দ বছর বয়সে! এর ফলে, সাত বছর বয়সী অ্যাডলফকে বেশিরভাগ কাজ, যেমন বাগান পরিস্কার, বাগানের বেড়ার রক্ষনাবেক্ষন, বাড়ির সীমান্ত পরিস্কার ইত্যাদি করতে হত এবং পান থেকে চুন খসলেই তার বাবার বিরক্তির কারণ হতে হত এবং তার দ্বারা উত্তম মধ্যম মার হজম করতে হত। যেটা বিভিন্ন ঐতিহাসিক দের মতে তার কঠিন হৃদয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ! ফলাফলটি এই যে, তার বাবার সাথে তার একটি খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল যেখানে তিনি তার মায়ের সাথে অত্যন্ত কাছের হয়ে বেড়ে উঠেছিলেন এবং তার স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত চিন্তিত ছিলেন তার মা, ক্লারা। প্রথমদিকে হিটলার স্কুলে ভালো উন্নতি করছিল, তার গ্রেড যথেষ্ট ভাল ছিল এবং তার শিক্ষকরা তার প্রশংসা করেছিলেন। তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন এবং যুদ্ধের খেলা খেলতে বা তাদের সাথে একজোট হওয়া বা তাদের একত্রিত করাকে উপভোগ করতেন, একজন পাদ্রি বা বিশপ হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। তিনি পড়তে পছন্দ করতেন এবং বিশেষ করে কাউবয় এবং নানান ফিকশনাল গল্প পড়া তিনি পছন্দ করতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, তিনি সমস্যায় পড়তে শুরু করেন। তিনি একবার ধূমপান করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন স্কুলে শিক্ষকদের হাতে, একটি স্থানীয় আপেল বাগানে অভিযানের আয়োজন করেছিলেন তিনি, ভাবা যায়! এমন কি, তার অস্ট্রিয়াপন্থী ধর্মের শিক্ষককে প্রতীকী অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে জ্বালাতন করে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন যা তার আনুগত্য প্রদর্শনের রাস্তা। এগুলি করে সে বৃহত্তর জার্মান রাষ্ট্রের অধীনে ঐক্যবদ্ধ জার্মানি-অস্ট্রিয়ার জনগণের ধারণা সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।।

এ সবই অ্যাডলফের বাবাকে ক্ষুব্ধ করেছিল, যিনি তাকে কঠোর শাস্তি দিতেন। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যে অঞ্চলে হিটলার বসবাস করতেন তা একসময় জার্মান কনফেডারেশনের অংশ ছিল, তার নাম ছিল বাভেরিয়া। সেখানে বসবাসকারী অনেকেই নিজেদেরকে জার্মান বলে মনে করতেন, তাদের ভাষা, ওঠা-বসা সবেতেই, মানে তারা মনে প্রাণে ছিলেন ও তাই, জার্মান। অ্যাডলফ কে তার বাবা যা যা বলেছিলেন, তিনি তার বিরুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন এবং যেহেতু তার বাবা অস্ট্রিয়ান পাবলিক অফিসিয়াল ছিলেন মানে অস্ট্রিয়ার একজন নিষ্ঠাবান নিবাসী, হিটলার তাই জার্মান জাতীয়তাবাদে ভর করে বড়ো হচ্ছিলেন। এসব কিছু অ্যাডলফের বাবাকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, ফলস্বরূপ উনি তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। এমনও দিন গেছে, যে উনি লোহার রড, বেল্ট ইত্যাদি দিয়ে প্রহার করতে করতে, তার মার গায়ে কয়েক ঘা পড়ে যেত, এর থেকেই তার মনে এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়, যে ভয় আর জোর খাটিয়ে যা খুশি তা করা যায়, যদিও মতান্তর থাকতেও পারে। এই সময় একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি ঘটে। তার ছয় বছর বয়সী ভাই, যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন, অ্যাডলফের ১০ বছর বয়সের সময়, হাম হওয়ার কারণে মারা যায় এবং তাদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই তাকে কবরস্থ করা হয়। এই সময় প্রায়ই প্রতিবেশীরা উঠতি বালকটির আচরণের পরিবর্তনের সম্পর্কে খবর দেয়। অদ্ভুত কিছু আচরণ যেমন, গাছের সাথে কথা বলা এবং কবরস্থানের পাঁচিলে শুয়ে, দাঁড়িয়ে থেকে তারার দিকে তাকিয়ে থাকা, ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের মনে কথা বলে চলা, ইত্যাদি। তিনি ধর্মের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং তার স্কুলের গ্রেড কমতে শুরু করে, যা তার বাবাকে আরো ক্ষুব্ধ করে তোলে, যিনি আবারো তাকে কঠোর শাস্তি দেন।
এর পরে সে সদ্য উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল এবং শহরের মারকুটে ছেলেদের তার সংস্পর্শ খুব একটা ভালো ছিল না। তার সাথে গ্রামীণ চাষাভুষো বলে অপদস্থ করায়, বা বাজে আচরণ করায় তাকে ক'একটি ক্লাসের পুনরাবৃত্তিও করতে হয়েছিল! এতেও তার লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বেশিরভাগ স্কুলের বিষয়গুলিতে তার আগ্রহ ছিল না বরং তার চেয়ে, সে সময় ইতিহাস পড়া এবং ছবি আঁকাতে সে ব্যয় করত যাতে সে বেশ ভাল হয়ে উঠেছিল। এ সম্বন্ধে একটা বিখ্যাত কথা মনে পড়ে, তা হল, একদিন তার বাবা বলেছিলেন যে 'একদিন, তুমি আমার মতো বড় রকমের পাবলিক অফিসার হবে' এবং অ্যাডলফ তাতে উত্তর দিয়েছিল, 'না বাবা, আমি একজন শিল্পী হতে চাই এবং চিন্তা করতে চাই যে আমি ঈগলদের সাথে মেঘের উপরে উড়ে যাচ্ছি'। এতে তার বাবা যথেষ্ট রুষ্ট হয়েছিল। এই সময়ে তিনি যথেষ্ট বৃদ্ধ হয়েছিলেন, ও ফুসফুসের একটি রক্তক্ষরণের কারণে হিটলার তার শেষ সেমিস্টার পাস করার পরপরই বা আগেই, তিনি মারা যান। এটি তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়, প্রায়ই তিনি মাতাল হয়ে রাস্তায় ঘাটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতেন। যাইহোক, তিনি সামগ্রিক ফাইনাল স্কুল পরীক্ষা দেননি বরং শুধু শুধু স্কুল থেকে তিনি বাদ পড়েছিলেন। এখন ১৬ বছর বয়সী ছেলেটি জীবনের অনেক উদ্দেশ্য ছিল, মানে কোনো একটাতে মনোনিবেশ করতে পারত না। এর পরবর্তী তিন বছর বেকার ছিলেন তিনি। তার একমাত্র বন্ধু অগাস্ট কুবিজেকের(August Kubizek) সাথে অপেরাতে, থিয়েটারে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন। আগস্ট কুবিজেক পরে তরুণ হিটলারের স্মৃতিতে লিখেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি আবেগের সাথে অনেক কিছুতে আগ্রহী ছিলেন, অনুভব করেছিলেন যে তিনি তার বয়সের চেয়ে অনেক বিষয়ে ভালো ছিলেন, তার পিতার মতো বদমেজাজি এবং অবিশ্বাস্য বক্তা ছিলেন, যা তিনি বারংবার নিজের চেষ্টায় রপ্ত করছিলেন।
যখন তার বয়স ১৮, তখন সে তার মাকে খুব দুঃখজনক অবস্থায় বিদায় জানাতে বাধ্য হয়েছিল। তখন সে আর্ট স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে ভিয়েনায় গিয়েছিল, যদিও সে ব্যর্থ হয়েছিল। খুব শীঘ্রই তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল কারণ তার মা অসুস্থ ছিলেন এবং তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটছিল। হিটলার ঠায় তার পাশে ছিলেন এবং যখন তাঁর মা শেষ পর্যন্ত মারা যান তখন পারিবারিক ডাক্তার বলেছিলেন যে, তিনি হিটলারের মতো দুঃখ নিয়ে এতটা অভিভূত হতে কাউকে দেখেননি। তারপর হিটলার চারুকলায় নিজের ক্যারিয়ার খুঁজে পাওয়ার আশায় ভিয়েনায় ফিরে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু পিতামাতার সমর্থন ছাড়া তিনি কখনোই কোনো কিছুতেই সফলতা লাভ করতে পারেননি। হিটলার এখন ২০-র দশকের প্রথম দিকে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তিনি গৃহহীন হয়ে অনাথদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতেন এবং ঘরছাড়া হয়ে বাড়ির বাইরে বেশ কিছুদিন, কয়েকটা বছর কাটিয়েছেন। পোস্টকার্ড বিক্রি করে তিনি যা কিছু রোজগার করতে পেরেছিলেন তা তিনি করেছিলেন। হিটলারের চরমতা কখন এবং কীভাবে গড়ে উঠেছিল তা ঠিক ভাবে হয়তো ব্যক্ত করা কঠিন, সময়-অসময়ে নানান মতাদর্শিক বিশ্বাস গড়ে ওঠে, কিন্তু ভিয়েনা সেই সময় অবশ্যই এন্টি-সেমাইটিসম বা ইহুদি বিরোধ একটি বিশেষ ভূমিকা নেয় যা কিনা পালন করতে সবাই অগ্রসর হয়। কোনো সভ্য সমাজের সামনে যদি বহু প্রচলিত কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলন চলে, তবে তা নিশ্চিত হারে ক্ষমতা আসতে চাওয়া কোনো দল যদি চায়, যে সেটাই নিয়ে প্রচার চালাবে, তবে তা ব্যাপক ভাবে প্রসার পায়। শহরে ইহুদি-বিরোধীতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে হিটলার যিনি একজন স্পষ্টভাষী-বিরোধী সমর্থক ছিলেন, তিনি সমর্থন করেছিলেন।
এ সময় অনেক ডানপন্থী এন্টি-সেমিটিক দল ছিল, যাদের কাজ, লিফলেট বিলি বা নিউজলেটারের মাধ্যমে প্রচার হচ্ছিল, হিটলার এইসব ষড়যন্ত্র তথ্যগুলিকে কেনার ব্যাপারে, সংকলনের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ নিয়েছিলেন এবং একই ধারণায় দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছিলেন। অনেকে আছেন, যারা একে অপরের সাথে বিভিন্ন জাতিসত্তার লড়াই এবং ক্রমাগত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান, যা হিটলারের মনোবৃত্তির সাথে খাপ খায়, তা ছিল জার্মান আর্য জনগোষ্ঠী এবং এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যে জনগোষ্ঠী ছিল (হিটলারের মতে) তা হল ইহুদীদের। যেহেতু অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ছিল একটি বহু-জাতিগত সাম্রাজ্য যা কমবেশি প্রচুর জাতি, উপজাতি তে ভরা, তাই হিটলার কখনোই এর অন্ধ ভক্ত ছিল না। তার কাছে প্রধান জাতি হল আরয়ান, আর সবচাইতে শুদ্ধ হল জার্মান আরয়ান।

তাই যখন তার বয়স ২৪, তখন সামরিক সেবা অর্থাৎ মিলিত হয়ে দেশ সেবা করা এড়াতে তিনি জার্মানির মিউনিখে চলে যান এবং আরও একটি বছর পর্যন্ত তিনি রাস্তায় একজন ভবঘুরের মতো দিনযাপন করছিলেন। এরপর তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন আসে, বিশাল একটা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, সমগ্র ইউরোপকে। ১৯১৪ সালে ইউরোপে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরম্ভ হয়েছিল। ইউরোপ জুড়ে জনতা এই খবর উদযাপন করেছে, রীতিমতো ভয়াবহতার সৃষ্টি হয় সবার মধ্যে। কিছুদিনের মধ্যে হিটলার জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য স্বেচ্ছায়, স্বতস্ফূর্ত ভাবে যোগদান  করেছিলেন এবং এটি তাকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য দিয়েছিল। তার সহযোদ্ধারা তাকে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্ব উপহার দিয়েছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্ত্বেও হিটলার এটিকে তার জীবনের সেরা সময় বলে মনে করতেন, পরবর্তীকালে তার আত্মজীবনীতেও তার উল্লেখ করেন। তিনি একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন, খবরাখবর আদানপ্রদানের জন্য তাকে যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হত। যাতে তিনি যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দেন। ভাগ্যও তাকে বেশ ক'কয়েকবার তার সহায়তা করে, খুব অল্পের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি বোমের আঘাত থেকে রক্ষা পান এবং তাকে আয়রন ক্রস, প্রথম শ্রেণীতে অর্থাৎ করপোরাল পদে ভূষিত করা হয়েছিল। তিনি খুবই ভাগ্যবান ছিলেন এবং মৃত্যুর সাথে অনেকবার তার খুব ঘনিষ্ঠ মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯১৬ সালে তার ভালো ভাগ্যের পালা ফুরিয়ে যায়, যখন একটি কামানের গোলা তার পায়ে আঘাত করে। তখন সে শুশ্রুষার জন্য জার্মানিতে ফিরে যায় এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পুনরায় ফিরে আসেন। এসময় কিছুসংখ্যক ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত জার্মান জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের তিনি সম্মুখীন হন। জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সার্থে তিনি ফ্রন্টলাইনে ফিরে আসেন কিন্তু ১৯১৮ সালে ব্রিটিশদের ভয়ানক বিষ গ্যাসের আক্রমণের কারণে সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এক মাস পরে, যখন তিনি হাসপাতালে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় হিটলার জার্মানির পরাজয় এবং আত্মসমর্পণ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। শান্তি চুক্তির শর্তাবলী(Versailles Treaty) জার্মানির জন্য কঠিন ছিল, এতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ প্রদান, যা যুদ্ধ শুরু করার জন্যে তাদের ঘাড়ে বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং প্রচুর সংখ্যক সৈন্য হারাতে হয়েছিল। পরবর্তী পরিস্থিতি জার্মানিকে দুর্বল করে এবং জার্মান জনগণকে ক্রমাগত অপমানিত করে। বলা হয় যে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে ইঙ্গ-ফ্রেন্চ-মার্কিন রা যেখানে যখন খুশি ঢুকে পড়ে যেকোনো জার্মানকে কয়েক ঘা কষাতে পারবে, যাতে জার্মানদের কিছুই বলার বা করার থাকবে না! যুদ্ধের পর ইউরোপের সীমানাও বদল হয় আমূল ভাবে। রাশিয়ার হারানো ভূখণ্ড থেকে নতুন দেশ গঠিত হয়েছিল, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি বিলুপ্ত হয়েছিল এবং সেখানে একটি বড় নতুন দেশ, পোল্যান্ড, জার্মানিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিল। হিটলার, দেশের এই অবস্থা দেখে, তিনি এইভাবে অপমানিত হতেন যে, তার মধ্যে ঘৃণা, ক্ষোভ এবং প্রতিহিংসা জন্মেছিল। যুদ্ধে আত্মসমর্পণের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল অর্থাৎ কমিউনিস্ট এবং ইহুদিরা, যাঁরা বিশ্বাস করতেন যে ভিন্নমতেরও প্রয়োজন আছে ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারের মাধ্যমে জার্মানির পিঠে ছুরিকাঘাত করেছিলেন বলে তার মনে দৃঢ়তার সাথে গেঁথে যায় ...

(চলবে)

©উshaস চttopaধ্যায়~

#দ্বিতীয়_বিশ্বযুদ্ধ #হিটলার #ইহুদি #কমিউনিস্ট  #হলোকাস্ট #জার্মান #পোল্যান্ড #অস্ট্রিয়া #হাঙ্গেরি #প্রথম_বিশ্বযুদ্ধ

Friday, 6 August 2021

হিটলার ও ইন্ডিয়া!


ভারতের সাথে হিটলারের সম্পর্ক কি ছিল?

গোটা বিশ্ব হিটলারকে ঘৃণা করে, কিন্তু ভারতের কি একই অবস্থা? একজন নাৎসি স্বৈরশাসক যার সঙ্গে একসময় ভারতের নেতা-মন্ত্রীরা অবধি জড়িত ছিলেন! আমার রিসার্চের টপিক হিসাবে যা কিছু মন্তব্য করবার, আমি সেটাকে আত্মস্থ করব! তবু ভারতের জনপ্রিয় সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে, হিটলার অনমনীয়তার সমার্থক। মানুষ প্রায়ই তাদের বস বা কঠোর শিক্ষককে হিটলার বলে উল্লেখ করে থাকে।
সুতরাং, এই লোকটির সাথে ভারতের সম্পর্ক ঠিক কী ছিল তা নিয়ে আমার একটি বিশেষ প্রতিবেদন, আসুন একসাথে খুঁজে বার করি..

আউশভিটজ (Auschwitz) সম্পর্কে ভারত অনেকটা অজ্ঞ ছিল, হলোকাস্ট বা এই ধরনের ঘটনা, যার জন্যে দোষারোপ করা থেকে বিরত ছিল কারণ শারীরিক বা মানসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
অথবা বলা যায় যে ভারতের জন্য সার্বিক না হওয়ার কারণ হল এই যে, হলোকাস্টের গল্পগুলি ছিল অনেক দূরে একটি দেশ থেকে আসা গল্পের মতো। ১৯৪০ -এর দশকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ রাজের অধীনে ভারতের চূড়ান্ত কয়েক বছর ছিল, ভারত একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার ইচ্ছাতে পরিবর্তন আনতে চাইছিল, তার জন্য যে কোনো শৃঙ্খল কে ভাঙতে চাইছিল সমগ্র দেশবাসী বা ছোট বড় নেতারা।

ভারতীয় জনসাধারণের কাছে তখন হিটলারের ভাবনা ছিল, একজন 'নো-ননসেন্স ম্যান' বা এককথায় খাঁটি মানুষ! এমন একজন, যিনি দৃশ্যত জার্মানিকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লড়াই করছিলেন। ভারত এবং হিটলারের উভয়েরই তখন একটি সাধারণ শত্রু ছিল, যা হল ব্রিটেন। এটি একটি তাৎক্ষণিক সংযোগ ছিল বলে মনে হয়!
হিটলার ভারতের শক্তি, সামর্থ্য কে স্বীকার করেছেন, কিন্তু তার নিজস্ব পদ্ধতিতে। তার জন্য ভারত ছিল এই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী ভূমি এবং ব্রিটেনের ভারত শাসন ছিল, একটি শাসনের পাঠ্যপুস্তক স্বরূপ  উদাহরণ। ঠিক একভাবেই তিনি রাশিয়াকে শাসন করতে চেয়েছিলেন, হিটলার প্রায়ই তার লোকদের ভারতের থেকে শিক্ষা নিতে বলতেন, কেস হিস্ট্রি হিসেবে। এ সম্বন্ধে তার একটি উক্তি যা ১৭ই অক্টোবর ১৯৪১ সালে দেন যা হল,"The basic reason for English pride is India, 400 years ago the English didn't have this pride", অর্থাৎ এই উদ্ধৃতাংশ থেকেই পরিষ্কার যে, 'ইংরেজি গর্বের মূল কারণ হল ভারতবর্ষ, যা ৪০০ বছর আগে ইংরেজদের এই অহংকার ছিল না'। সেই বছরের শুরুর দিকে, হিটলার বলেছিলেন যে ব্রিটেন খুব ভালো করেই জানে, এটার, মানে ভারতের অস্তিত্বের উপর, তাদের সাম্রাজ্য নির্ভর করে। হিটলারের জন্য ভারত ছিল ব্রিটেনের 'অ্যাকিলিসের হিল'। ১৯৪২ সালে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিতর্কিত সবচেয়ে প্রিয় নেতার সাথে দেখা করেন, ভারতীয় প্রথম জাতীয় সেনাবাহিনীর নেতা, সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে, এটি ছিল ২৭শে মে। বোস বিপ্লবের স্বার্থে, হিটলারের সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতে, তার কর্মপরিকল্পনায় একটি অভ্যুত্থান সহ উপনিবেশিক শক্তি কে বিভ্রান্ত করা! এটি তার নিজের দেশেরই অন্তর্ভূক্ত করা এক অন্তবর্তী ঝামেলায় ফাঁসানো স্বরূপ, তাই জন্য এটি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীকে আরো দুর্বল কর তুলবে। বোসের হিসাব অনুযায়ী, জার্মানি সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দখল করবে কারণ ব্রিটেনকে পরাজিত করবে এবং এর ডমিনো প্রভাব ভারতকেও মুক্ত করবে। হিটলার অবশ্য অস্বীকার করেছিলেন বোসকে সাহায্য করার জন্য। ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে এর একটি কারণ ছিল বোস, নাৎসি নেতাকে 'মেইন ক্যম্পফ' বা তার নিজের জীবনীর থেকে কয়েকটি প্যাসেজ কেটে দিতে বলেছিলেন, যা উনি ভালো ভাবে নেননি। তার জবাবে হিটলার লিখেছিলেন কিভাবে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারতের জন্য ভাল হবে। বোসের এর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
জার্মানরা অবশ্য জাপানে পালাতে বোসকে সাহায্য করেছিল। হিটলার সে বছর পরে যা বলেছিলেন তা হল, "in a book on India which I read recently it was said that India educated the British and gave them their feeling of superiority the lesson begins in the street itself" যার অর্থ, 'ভারত সম্পর্কে একটি বইয়ে যা আমি সম্প্রতি পড়েছি তাতে বলা হয়েছিল যে ভারত ব্রিটিশদের শিক্ষিত করেছে এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে।'
মহাত্মা গান্ধীও হিটলারকে চিঠি লেখেন যখন তিনি ১৯৩৯শে চেকোস্লোভাকিয়া দখল করেন। গান্ধী লিখেছিলেন তিনি মানবতার জন্য, যা কিছু মূল্যবান হতে পারে তার জন্য আবেদন করছেন। ইতিহাস এটার স্বাক্ষ্য বহন করছে যে হিটলার, ভারতীয় হকি কিংবদন্তি, মেজর ধ্যান চাঁদের ভক্ত ছিলেন। ১৯৩৬ সালের অলিম্পিকে ভারতের কাছে জার্মানি হেরেছিল।
হিটলার ধ্যানচাঁদের কাছে পৌঁছান, এমনকি তাকে জার্মান সেনাবাহিনীতে পদ দেওয়ারও প্রস্তাব দেন, যা পরবর্তী কালে মেজর প্রত্যাখ্যান করেন।
হলোকাস্টের সময়ে কয়েক বছর, ভারতের সাথে নাৎসি নেতা, হিটলারের সাথে যোগাযোগের সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ দেশের সিঙ্গেল পয়েন্ট দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছিল, যে কিনা আমাদের খুব নিজস্ব, নেতাজি, সুভাষ চন্দ্র বসু!

ইদানিং, এই ধরনের মডার্ন ইতিহাস সম্পর্কে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যদি পাঠকদের আপত্তি না থাকে বা মতামত পাই, তবে পরবর্তী সংখ্যা খুব শীঘ্রই আসবে! 🙏🏼

©উshaস চttopaধ্যায়~