Tuesday 5 October 2021

শেষের সূচনা!


 #শেষের_সূচনা :-
===================
রনি ক'দিন ধরে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। তার বোন কি এখনো তার সাথে কথা বলবে না? এই নিয়ে প্রায় সাত বছর হলো, তার বোন রিনি তার সাথে শেষ কথা বলেছে; দীর্ঘ সাত বছর…

রনি বেঙ্গালুরুর একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। তার বয়স ২৫ বছর। সে আর্কিটেকচার ও ডিজাইনে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে এবং ক্যাম্পাসিং নিয়োগের মাধ্যমে এক কোম্পানিতে যোগদান করে। তার বোন রিনি তার থেকে মাত্র এক বছরের ছোট ছিল। কেরালার ত্রিচুরে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর করার পর সেও 'পি ডব্লিউ ডি'তে কাজ করছে। আগামী মাসে রিনির বিয়ে।

তাদের মা, রীতা ফোন করে রনিকে জানিয়েছিলেন যে, রিনি এক চমৎকার ছেলের প্রেমে পড়েছিল এবং তারা উভয় পরিবার, তাদের বিষয়ে যৌথভাবে তাদের বিয়েতে সম্মত হয়েছিল।

"তুই কি এখানে তোর বোনের বিয়ের জন্য আসবি? - হ্যাঁ কি না?" রীতা জিজ্ঞেস করল।

"হ্যাঁ মা! আমি যাব” রনি বলল।

“তুই তো এখন অন্তত বলতে পারিস, তোদের দুজনের মধ্যে কি হয়েছে? সে ওর জন্মের দিন থেকে তোরা অবিচ্ছেদ্য, একসাথে সবকিছু, এবং তারপর একটা বাজে দিনের সকালের পর থেকে, তোরা একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলি। আমি জানি, তুই ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে ছিলিস, একটা চুরির ঘটনায়, কিন্তু, সেতো অনেক আগে। একটা আধটা ভুল যে কারোরই হতে পারে। কেন তুই ওকে জ্বালাবি আর নিজেও কষ্টে থাকবি, শুধু শুধু তুই ওকে ক্ষমা করতে এবং মিলমিশ করতে পারছিস না?" বলে রিতা কাঁদছিল।

"তুমি বুঝতে পারবে না মা। ওর সাথে কথা বলতে আমার কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু, ও নিজেই কথা বলতে চায় না। আমি অনেকবারই চেষ্টা করেছি। আশা করি আমি যখন ওর বিয়ের জন্য আসব তখন ও কথা বলবে, তুমি দেখো, সব ঠিকঠাক হবে” রনি বলল।

মিলমিশ, ঠিকঠাক এটা সত্যি ছিল, কিন্তু চুরির ঘটনা .... সেটা অন্য কথা। রনি ঠিক যেন গতকালের ঘটনার মতো সবকিছু মনে করতে থাকে।

এই ঘটনাটা ঘটে যখন রনি ১১তম ক্লাসে ওঠে, সে একটি নতুন বন্ধু পেয়েছিল, যার নাম অনিল। তারা যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সেখানে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত শিশুরাই পড়াশোনা করত। রিনিও একই স্কুলে তার এক বছরের জুনিয়র হিসাবে পড়াশোনা করেছিল। এই অনিলই রনিকে ধূমপানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। স্কুলের একটি বিশাল ক্যাম্পাস ছিল যেখানে প্রচুর খালি জমি, পিছনের দিকটা জঙ্গল মতো এবং স্কুল-বাড়ির পিছনের অংশে পুরোনো বিল্ডিংটা ছিল ভাঙা ভাঙা গোছের, তাদের পক্ষে লুকিয়ে ধূমপান করাও সহজ ছিল, এবং কেউ দেখলেও লুকিয়ে পড়াটা ছিল আরো সহজ। তারা মজা করার জন্য প্রথমে শুরু করেছিল এবং শীঘ্রই রনি এতে জড়িয়ে পড়ে। তখনই একদিন অনিল ধূমপানের জন্য গঞ্জিকা বা "স্টাফ" নিয়ে আসে।

প্রথমদিকে রনি এটা স্পর্শ করার ব্যাপারেও খুব ভয় পেয়েছিল, খুবই কনশ্যাস ছিল ও। সে ঐটা মুখে নিতে সরাসরি অস্বীকার করে দেয়।

রনির বাবার মা-বাবা অর্থাৎ রনির দাদু-ঠাম্মা মারা যাওয়ার পর থেকে রনির কাকা রনির পরিবারের সাথেই থাকতেন। তার বাবা তার ছোট ভাইকে তার নিজের বাচ্চা হিসাবে মানুষ করেছিলেন। কিন্তু, যখন রনির বাবা জানতে পারলেন, তার কাকা মাদকাসক্ত, তখন তিনি রনির কাকাকে সময় নষ্ট না করে ও বিনা আস্কারায়, করুণায় বাড়ি থেকে বের করে দেন। রনির বাবা সবসময় বলতেন, "আমি মাদক ব্যবহার ছাড়া সব কিছু ক্ষমা করতে পারি। মাদক মানুষকে দিশেহারা, শয়তান করে তোলে।”

রনির কাকা পাঁচ বছর আগে রাস্তায় মারা যান। এমনকি তার বাবা মৃতদেহ গ্রহণ করতেও স্বীকার করেননি। রনির কাকাকে পৌরসভার শ্মশানে দাহ করা হয়েছে, পারিবারিক রীতিনীতি ছাড়াই।

কিন্তু কিছু দিন পর থেকে, রনি শুধু সিগারেট খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেল। এবার যখন অনিল অন্য জিনিসপত্রের প্রস্তাব দিল, তখন সে একটা পাফ বা টান লাগাল। তারপর, আস্তে আস্তে সে আরও বেশি করে পাফ নিতে লাগল। কিন্তু, ততদিনে তার, গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে, সে যানে যে কিভাবে জিনিসের লোভ লাগাতে হয় এবং সাথে সাথে অনিলও "স্টাফ" বিনামূল্যে দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সে রনিকে জিনিস কিনতে টাকার জোগাড় করতে বলে।

রনির সামান্য যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তা খুব তাড়াতাড়ি গ্রাস করা হয়ে যায়। তারপর থেকে যখনই সে বাড়ির কিছু কেনাকাটার জন্য যেত তখন সে জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে মিথ্যা বলতে শুরু করে। তাড়াতাড়ি সে দিনও গেল, এটিও তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তারপর সে বই কেনার অজুহাত করতে লাগল এবং বাবা-মার কাছ থেকে টাকা আদায় করার সুযোগ পেল। যখন সে বুঝতে পারলো, যে তার বাবা তাকে সন্দেহ করতে শুরু করছেন, তখনই সে বন্ধ করে দিলো।

কিন্তু, সে এত সহজে নেশার থেকে বের হতে পারেনি। এক সপ্তাহের মধ্যেই সে আবার ড্রাগ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবার সে রিনির কাছে গেল। সে রিনিকে বলল, সে এবং তার বন্ধুরা ট্রেকিং করতে যেতে চায়। কিন্তু, সে তাদের বাবাকে বলতে পারবে না কারণ, সে নিশ্চিত যে তিনি তা করতে যেতে দেবেন না। সে রিনিকে দিয়ে বাবাকে বানিয়ে বলতে বলেছিল, তাদের স্কুলে কিছু বিশেষ ফি দিতে হবে, সরকারি রেজিস্ট্রেশন, সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট হিসেবে। এসব বুজরুকি দিয়ে কিছু পরিমাণে টাকা যাতে তার হাতে আসে!

রিনি প্রথমে বাধা দেয়, কিন্তু সে তার ভাইকে সাহায্য করতে খুব আগ্রহী ছিল। সে মিথ্যা কথা বলে, রনির জন্য টাকা পেয়ে তাকে দেয়। কিন্তু বিকেলে, রিনি এবং বন্ধুরা যখন তাদের স্কুল নাটকের অনুশীলনের জন্য পুরনো বিল্ডিং এ এসেছিল, তখন সে তার ভাইকে এবং তার অন্য দুই বন্ধুকে, আধা অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। তখনই সে জানতে পারে, যে তার ভাই মাদকাসক্ত, আর তার ভাই সেই টাকা ব্যবহার করে ড্রাগস কিনতো, তখন আর দেখে কে!

রিনি তার বাবা -মাকে পুরো বিষয়টা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু, তখনই তার কাকার মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সে নিশ্চিত হয়ে গেছিল যে, রনির পরিণতি তাদের কাকার মতো হবে, একই ভাগ্যের শিকার হবে তারা, মুখোমুখি হবে কঠোর শাস্তির, যদি সে তাদের বাবাকে বলে। যখন সে স্কুল থেকে বাড়ি পৌঁছল, সে দেখতে পেল তার বাবা রেগে আগুন। তার বাবা তাকে চড় মেরে জিজ্ঞেস করলেন, "তুই আমার কাছ থেকে ফি বাবদ যে টাকা নিয়েছিলিস তা দিয়ে তুই কী করেছিস? এত টাকা তোর কি কাজে লাগে? তুই আমাকে না বলে আর কি কি করছিস? অনেক বড়ো হয়ে গেছিস? তুই আমাকে ঠকিয়েছিস, নাহলে এতো টাকা তোর কি কাজে লাগে তুই আমায় বল, খুব সহজে আমাদের বোকা বানিয়েছিস তুই, এক কথায় চুরি করেছিস তুই, কেন, বল কেন?"

রিনি বুঝতে পেরেছিল যে, তার বাবা কোনো ভাবে জানতে পেরেছিলেন, সে ফি সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। রিনি মুখ খোলেনি, সে চুপ করে থাকে। যদি সে মুখ খুলত, তাহলে তার ভাই পরিবারের বাইরে থাকত। কিন্তু, সত্যি না বলার অর্থ, তার বাবা তাকে কঠোর শাস্তি দিতে যাচ্ছেন। সে দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছিলো। সে তার বাবার কাছে মার খেয়েছে। পরে তার বাবা রিনিকে তাদের সামনের উঠোনে বালির উপর ২ ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে দেন।

তখনই রনি মাদকের প্রভাব মিটে যাওয়ার ফলে বাড়ি ফিরে আসে। সে রিনিকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। রিনি তাকে শুধু একটি কথা বলে,

"আমি জানি তুমি টাকা দিয়ে কি করেছো" এটাই ছিল রনির সাথে কথা বলা শেষ বাক্য।

রনি বিপদ বুঝতে পেরে তাকে অনুরোধ করে, এটা তাদের বাবার কাছে না বলার করার জন্য। পরে রনি জানতে পারে কি ঘটেছে তার মায়ের কাছ থেকে। সে মরিয়া হয়ে রিনিকে যন্ত্রণা ও অপমান থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু, তার মানে, সে তো নিজে জড়িত হবে। রনি কিছু বলল না!

এর পর, রনি মাদক ব্যবহার ছেড়ে দেয়। সে অনেকবার রিনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, রিনি কখনো কথা বলেনি। সময় পেরিয়ে যায়। রনি এবং রিনি তাদের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি পেয়েছে এবং নিজের নিজের জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।


****
বিয়ের দুই দিন আগে রনি বাড়িতে এসে পৌঁছায়। সন্ধ্যায় সে রিনিকে তার সাথে সমুদ্রের সৈকতে, যা তাদের বাড়ির কাছেই ছিল, সেখানে আসতে বলে। তাকে অবাক করে রিনিও রাজি হয়ে গেল। মুখে স্নিগ্ধ হাসি!

যখন তারা সৈকতে হাঁটছিল, রনি আবার রিনির কাছে ক্ষমা চাইল। সাত বছর পর রিনি তার সাথে কথা বলে।

“হ্যাঁ, আমি তোমার উপর রাগ করেছিলাম। কিন্তু, রাগের কারণে আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করিনি। তুমি আমার খুব প্রিয় ছিলে এবং আমিও তোমার আদরেরই ছিলাম। অপমান এবং যন্ত্রণা আমাকে কখনো প্রভাবিত করেনি। কিন্তু, যখনই আমি তোমাকে আমাদের কাকার জায়গায় কল্পনা করতাম, তখন আমি তা সহ্য করতে পারিনি। তাই, আমি ভাবলাম আমি কি আর করতে পারি। আমি চেয়েছিলাম এমন কিছু একটা করতে যাতে তুমি খুব মনে আঘাত পাও, যা তোমার আবার ড্রাগস ব্যবহার করতে বারন করবে। তারপর আমি খুঁজে পেলাম, আমার নীরবতাই সেরা বাজি হবে। আমি চেয়েছিলাম তুমি এটা অনুভব কর, যখনই তুমি আবার ড্রাগস ব্যবহার করতে চাও তখনই যেন তোমার মনে পড়ে যে ড্রাগ ব্যবহারের কারণে তুমি আমাকে হারিয়েছো।"

"আমি খুবই নিশ্চিত, আর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এটি কাজ করেছে। আজ, আমি আমার নিজের নতুন জীবনে প্রবেশ করছি। তুমিও সেই খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত, তুমি সফল। আমি তোমার জন্য খুশি” রিনি বলে!

“আমি ভীষণই খুশি, ইটস আ কজ্ ফর সেলিব্রশন, আমি এটি উদযাপন করব। আমি আমার বোনকে ফিরে পেয়েছি” রনি মুক্ত কন্ঠে ঘোষণা করল।

রিনির বিয়ের আগেরদিন রাতে, রনি একটি ফাইভ স্টার মলে বন্ধুর সাথে উদযাপন করতে বেরিয়েছিল। যেখানে তার সেই পুরনো বন্ধু অনিলের সাথে দেখা হয়, সব বন্ধু বান্ধব দের মধ্যে সেও পড়ে, যে এখন একজন পূর্ণকালীন মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত। যখন অনিল রনিকে আনন্দিত মেজাজে দেখল, তখন সে রনিকে একটি উদ্দীপনার ড্রাগ দিয়েছিল, রনির অজান্তেই, যাতে সে উদযাপনের আসল অনুভূতি পায়। একটা ড্রিঙ্কস এর সাথে সে ওই মাদকটি মিশিয়ে দেয়। রনিও খুবই ভালো মনে আনন্দ উপভোগ করতে লাগে, এটা জেনে যে, তার বোন অন্য পরিবারে যাচ্ছে এবং সে আর যাই হোক স্বাধীন, রনি সেই পানীয় টি নেয় ও তাতে পুরো চুমুক দেয় ..

এবং, এটি ছিল তার জীবনের "শেষের সূচনা"...

উshaস চttopaধ্যায়~

####################
[একটি অনুরোধ: কোনো মিল যদি থাকে তা সাম্প্রতিক বিতর্ক প্রসঙ্গে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক, ছোটোখাটো ভুলত্রুটি জন্য  ক্ষমা প্রার্থী, একটু মানিয়ে নেবেন। যদি আপনি গল্পটি পছন্দ করে থাকেন, তবে অনুগ্রহ করে পেজে ক্লিক করুন এবং লাইক করুন, যাতে একটি নতুন গল্প প্রকাশিত হলে আপনাকে অবহিত করা হয়।] 🙏🏼

No comments:

Post a Comment