Friday 6 August 2021

হিটলার ও ইন্ডিয়া!


ভারতের সাথে হিটলারের সম্পর্ক কি ছিল?

গোটা বিশ্ব হিটলারকে ঘৃণা করে, কিন্তু ভারতের কি একই অবস্থা? একজন নাৎসি স্বৈরশাসক যার সঙ্গে একসময় ভারতের নেতা-মন্ত্রীরা অবধি জড়িত ছিলেন! আমার রিসার্চের টপিক হিসাবে যা কিছু মন্তব্য করবার, আমি সেটাকে আত্মস্থ করব! তবু ভারতের জনপ্রিয় সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে, হিটলার অনমনীয়তার সমার্থক। মানুষ প্রায়ই তাদের বস বা কঠোর শিক্ষককে হিটলার বলে উল্লেখ করে থাকে।
সুতরাং, এই লোকটির সাথে ভারতের সম্পর্ক ঠিক কী ছিল তা নিয়ে আমার একটি বিশেষ প্রতিবেদন, আসুন একসাথে খুঁজে বার করি..

আউশভিটজ (Auschwitz) সম্পর্কে ভারত অনেকটা অজ্ঞ ছিল, হলোকাস্ট বা এই ধরনের ঘটনা, যার জন্যে দোষারোপ করা থেকে বিরত ছিল কারণ শারীরিক বা মানসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
অথবা বলা যায় যে ভারতের জন্য সার্বিক না হওয়ার কারণ হল এই যে, হলোকাস্টের গল্পগুলি ছিল অনেক দূরে একটি দেশ থেকে আসা গল্পের মতো। ১৯৪০ -এর দশকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ রাজের অধীনে ভারতের চূড়ান্ত কয়েক বছর ছিল, ভারত একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার ইচ্ছাতে পরিবর্তন আনতে চাইছিল, তার জন্য যে কোনো শৃঙ্খল কে ভাঙতে চাইছিল সমগ্র দেশবাসী বা ছোট বড় নেতারা।

ভারতীয় জনসাধারণের কাছে তখন হিটলারের ভাবনা ছিল, একজন 'নো-ননসেন্স ম্যান' বা এককথায় খাঁটি মানুষ! এমন একজন, যিনি দৃশ্যত জার্মানিকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য লড়াই করছিলেন। ভারত এবং হিটলারের উভয়েরই তখন একটি সাধারণ শত্রু ছিল, যা হল ব্রিটেন। এটি একটি তাৎক্ষণিক সংযোগ ছিল বলে মনে হয়!
হিটলার ভারতের শক্তি, সামর্থ্য কে স্বীকার করেছেন, কিন্তু তার নিজস্ব পদ্ধতিতে। তার জন্য ভারত ছিল এই পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী ভূমি এবং ব্রিটেনের ভারত শাসন ছিল, একটি শাসনের পাঠ্যপুস্তক স্বরূপ  উদাহরণ। ঠিক একভাবেই তিনি রাশিয়াকে শাসন করতে চেয়েছিলেন, হিটলার প্রায়ই তার লোকদের ভারতের থেকে শিক্ষা নিতে বলতেন, কেস হিস্ট্রি হিসেবে। এ সম্বন্ধে তার একটি উক্তি যা ১৭ই অক্টোবর ১৯৪১ সালে দেন যা হল,"The basic reason for English pride is India, 400 years ago the English didn't have this pride", অর্থাৎ এই উদ্ধৃতাংশ থেকেই পরিষ্কার যে, 'ইংরেজি গর্বের মূল কারণ হল ভারতবর্ষ, যা ৪০০ বছর আগে ইংরেজদের এই অহংকার ছিল না'। সেই বছরের শুরুর দিকে, হিটলার বলেছিলেন যে ব্রিটেন খুব ভালো করেই জানে, এটার, মানে ভারতের অস্তিত্বের উপর, তাদের সাম্রাজ্য নির্ভর করে। হিটলারের জন্য ভারত ছিল ব্রিটেনের 'অ্যাকিলিসের হিল'। ১৯৪২ সালে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বিতর্কিত সবচেয়ে প্রিয় নেতার সাথে দেখা করেন, ভারতীয় প্রথম জাতীয় সেনাবাহিনীর নেতা, সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে, এটি ছিল ২৭শে মে। বোস বিপ্লবের স্বার্থে, হিটলারের সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতে, তার কর্মপরিকল্পনায় একটি অভ্যুত্থান সহ উপনিবেশিক শক্তি কে বিভ্রান্ত করা! এটি তার নিজের দেশেরই অন্তর্ভূক্ত করা এক অন্তবর্তী ঝামেলায় ফাঁসানো স্বরূপ, তাই জন্য এটি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীকে আরো দুর্বল কর তুলবে। বোসের হিসাব অনুযায়ী, জার্মানি সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দখল করবে কারণ ব্রিটেনকে পরাজিত করবে এবং এর ডমিনো প্রভাব ভারতকেও মুক্ত করবে। হিটলার অবশ্য অস্বীকার করেছিলেন বোসকে সাহায্য করার জন্য। ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে এর একটি কারণ ছিল বোস, নাৎসি নেতাকে 'মেইন ক্যম্পফ' বা তার নিজের জীবনীর থেকে কয়েকটি প্যাসেজ কেটে দিতে বলেছিলেন, যা উনি ভালো ভাবে নেননি। তার জবাবে হিটলার লিখেছিলেন কিভাবে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারতের জন্য ভাল হবে। বোসের এর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
জার্মানরা অবশ্য জাপানে পালাতে বোসকে সাহায্য করেছিল। হিটলার সে বছর পরে যা বলেছিলেন তা হল, "in a book on India which I read recently it was said that India educated the British and gave them their feeling of superiority the lesson begins in the street itself" যার অর্থ, 'ভারত সম্পর্কে একটি বইয়ে যা আমি সম্প্রতি পড়েছি তাতে বলা হয়েছিল যে ভারত ব্রিটিশদের শিক্ষিত করেছে এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে।'
মহাত্মা গান্ধীও হিটলারকে চিঠি লেখেন যখন তিনি ১৯৩৯শে চেকোস্লোভাকিয়া দখল করেন। গান্ধী লিখেছিলেন তিনি মানবতার জন্য, যা কিছু মূল্যবান হতে পারে তার জন্য আবেদন করছেন। ইতিহাস এটার স্বাক্ষ্য বহন করছে যে হিটলার, ভারতীয় হকি কিংবদন্তি, মেজর ধ্যান চাঁদের ভক্ত ছিলেন। ১৯৩৬ সালের অলিম্পিকে ভারতের কাছে জার্মানি হেরেছিল।
হিটলার ধ্যানচাঁদের কাছে পৌঁছান, এমনকি তাকে জার্মান সেনাবাহিনীতে পদ দেওয়ারও প্রস্তাব দেন, যা পরবর্তী কালে মেজর প্রত্যাখ্যান করেন।
হলোকাস্টের সময়ে কয়েক বছর, ভারতের সাথে নাৎসি নেতা, হিটলারের সাথে যোগাযোগের সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ দেশের সিঙ্গেল পয়েন্ট দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছিল, যে কিনা আমাদের খুব নিজস্ব, নেতাজি, সুভাষ চন্দ্র বসু!

ইদানিং, এই ধরনের মডার্ন ইতিহাস সম্পর্কে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যদি পাঠকদের আপত্তি না থাকে বা মতামত পাই, তবে পরবর্তী সংখ্যা খুব শীঘ্রই আসবে! 🙏🏼

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

No comments:

Post a Comment