Tuesday, 3 August 2021

ভরসার ডিঙি ...


ভরসার ডিঙি:


বাইরে বাজ পড়ছে, বিকেল থেকেই আবহাওয়ার ঠিক নেই! এমনিতে বৃষ্টি ভালোবাসে মালতি, কিন্তু আজ সুজন আসবে বলেছিল না!

মালতি এমনি দেখতে সুন্দর, গায়ের রঙটি যদি পরিস্কার হতো, তবে হালকা আদল পাওয়া যেত আলিয়া ভট্টের সাথে! তা সে সন্ধ্যা বেলা গা টা ধুয়ে আলমারি থেকে সেই নীল রঙের শাড়ি, যেটা আগের বারে সুজন এনেছিল, জিয়াগঞ্জ এর হাট থেকে, সেটা পড়ল, তার সাথে পিঠে দড়ি বাঁধা ডিজাইন করা ব্লাউজ! আয়না দেখে চুল টুল আঁচড়ে নিচ্ছিল সে, এখন ঠোঁটের লালির দিকে নজর দিল। লাল লিপস্টিক ছাড়া তার আবার ভালো লাগে না কিছুই! রেডিওতে গান ভেসে আসছিল, "সাজনা হ্যা মুঝে, সাজনা কে লিয়ে..." শুনে, সে সাউন্ডটা আরেকটু বাড়িয়ে দিল।
মোটামুটি সে রেডি, ফাইনাল টাচআপ দিতে সে ব্যস্ত ..

এমন সময়, দরজার কড়া নাড়ার শব্দ, সাথে চাপা গলায় সুজন বলছে যে, "আরে খোল না, বেকার দেরী কর কেন, আর যে সবুর সয় না, ভিজে যাচ্ছি যে"... বলে ক্রমাগত কড়া নাড়িয়েই চলেছে!

বেশ কিছুক্ষণ পর মালতি গিয়ে দরজার খিল টা খুলে দিল, খুলে ও নিজে চলে এসে আসে আয়নায় নিজের অবয়ব টা দেখতে...

এতক্ষণে সুজনও ঘরে ঢুকে হাতের লন্ঠন টা রেখে জামাটামা খুলছে।
মালতি খাটে বসে পানের ডাবাটা নিয়ে একটা পান সাজলো, সুজন এতক্ষণে খাটে বসে ওর দিকে তাকাচ্ছে দেখে ওকে জিজ্ঞেস করল যে ওর জন্য সাজাবে কিনা!

শুনে সুজন ওকে টেনে নিল নিজের খুব কাছে, কানের কাছে মুখটা ঘষতে ঘষতে বলল, যে সে পান খেতে আসেনি, সে এসেছে অন্য কিছু খেতে, আর সেটা সে নিজেই খুঁজে নেবে...
দুজনেই একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে ভালবাসায় গড়িয়ে গেল, সুজন ধীরে ধীরে মালতির পিঠের ডিজাইনার দড়ি খুলে তার গলায় একটা গভীর চুম্বন করে, সাথে সাথে মালতি নিজের শরীর পুরো উজাড় করে দিল সুজনের কাছে, দুজনের মিলনে যেন কোথাও কোনো ত্রুটি নেই। সুজন ও মালতি সেই রাতে খুব নিবিড় এক ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকল! বর্ষা ও তেমন হলো সেই রাতে, যেন প্রকৃতি দু হাত পা ছড়িয়ে কেঁদেই চলেছে, সে কি বৃষ্টি।

এদিকে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী ভোর হয়েছে, আবার কাজে ফেরার তাড়া। সুজন স্বভাব মতো নিজের লন্ঠন হাতে তুলে রওনা দিল নিজের ডিঙি টার উদ্দেশ্যে! বাঙলার শস্য শ্যামলা ঝোপঝাড় পেরিয়ে যখন সে ঘাটটার কাছে এল, এসে দেখে যে তার ডিঙি টা নেই, নদীতে জোয়ার এসেছে, তাহলে কি জলের তোড়ে ভেসে গেছে তার ডিঙি খানা! মাথায় বাজ ভেঙে পড়লে তার, একটা মাঝির জীবনে, ডিঙি নৌকা যে কত গুরুত্ব রাখে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাতের বৃষ্টি তে নদী তে জলের পরিমান বেড়ে যায়, এমনিতেই স্রোতের টানে ভেসে কোথায় যে গেছে কেউ জানে না!

কাল রাতে তো এই ঘাটেই বেঁধে রেখেছিল, পাশাপাশি এই ঘাট সে ঘাট তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও পেল না। পাগলের মতো লাগছে সুজনের, খুঁজতে গিয়ে পথে দেখা হলো বন্ধু পরানের সাথে! তার কাছে কেঁদে নালিশ করল আর নিজের ভাগ্য কে দুষল! আরো বলল যে যদি কোনো জাগায় খোঁজ পায় তালে যেন জানায়। 
অবশেষে, এদিক সেদিক খুঁজে, আর চোখে না দেখতে পেয়ে মনের দুঃখে বাড়ির দিকে ফিরে এলো! মন-মেজাজ তার একদম ভালো নেই, বাড়ির দাওয়ায় বউ সুমনা মনমরা হয়ে বসে রয়েছে, তার সামনে একটা আঁশবোটি খুলে রাখা রয়েছে! তার কাছে গিয়ে মনের দুঃখের কথাটি বলা, যে সব ভেসে গেছে জোয়ারে।

সুমনা কেমন ভারি মুখে বলে, "সব তো শেষ হয়েই গেছে, আমার ভরসার ডিঙি টাও স্রোতের টানে চলে গেছে, তাহলে আর কি মুখে ফেরা বাড়ির দিকে!"

কথাটা শুনে সুজনের মাথায় রাগ চেপে বসল, সে এক লাথি মেরে ঐ বোঁটি টা ফেলে দিল! খুব রাগারাগি করল সে, হটাৎ সুমনার ওপর চেঁচামেচি করতে করতে তার নজর গেল বাড়ির পিছনের ঘাটের দিকে, নজর যেতেই তার স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ডিঙি টার নজরে আসে! হটাৎ করে সে যেন লাফিয়ে ওঠে, তার হারানো ডিঙি, যা কিনা এতক্ষণ ধরে খুঁজে পাচ্ছিল না, সে কিনা ভেসে নিজের ঠিকানায় চলে এসেছে। কি আনন্দ যে হচ্ছিল তখন, বলে বোঝানো যাবে না! সে ছুটে চলে যায় তার ডিঙির কাছে, সেখানে গিয়ে দেখে, যে তার ডিঙি টা বাঁধা আছে একটা খুঁটিতে, আর খুঁটিতে বাঁধা একটা সুমনার শাড়ি দিয়ে!...

কি করে সম্ভব, তালে কি বউ সব জেনে গেছে, সব জেনে শুনে...
এক বিশাল অপরাধের বোঝা যেন সুজনের বুকে চেপে বসেছে, নিশ্চয়ই ও তার আর মালতির কথা যেনে ফেলেছে, ওই দিকে সুমনার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্নার শব্দ, সুজনের বুঝতে আর বাকি রাখে না!... 

কানে একটাই কথা আসে, "তুমি আমারে ঠকালে মাঝি, আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিলা..."


©উshaস চttopaধ্যায়~

No comments:

Post a Comment