Thursday, 12 August 2021

শিশু বা যুবক হিটলার...


 এই শিশুটির দিকে তাকান। এত ভদ্র, সুন্দর, এত নিরীহ। আপনি কি ভাববেন, যে এই শিশুটি বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ, একজন সৎ মানুষ হয়ে উঠবে। ঠিক আছে, আবার একটু ভাবুন। কারন এটি হিটলারের প্রথম প্রকাশিত ছবি!

হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির একটি ছোট শহরের ব্রানাউ(Braunau) অঞ্চলে, অ্যাডলফাস হিটলার(Adolphus Hitler) নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অ্যালোইস শিকলগ্রুবার(Alois Schicklgruber) নামে জন্মগ্রহণ করলেও, নানা জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে, শেষ পর্যন্ত তার নাম পরিবর্তন করে তার সৎ বাবার নামে নাম রাখেন এবং অ্যালোইস হিটলার হন। অ্যালোইস ছিলেন একজন মধ্য-স্তরের অস্ট্রিয়ান কাস্টমস অফিসার! নগদ ঘুষ বা টাকা-পয়সার দিক থেকে তিনি সেরকম বিশেষ কিছু লাভ করতে সক্ষম ছিলেন তা নয়, তবে অবশ্যই মহিলাদের মধ্যে তার যে সৌখিনতা ছিল, তার পরিচয় মেলে। তিনি একজন ধনী, বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু তারপরেই খুব অল্প বয়সী গৃহকর্মী বা চাকর সম্প্রদায়ের একজনের সাথে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর পরে, তিনি তার অসুস্থ স্ত্রীকে তার উপপত্নীর (গৃহকর্মী) সাথে রেখে কার্যসূত্রে বাইরে যান, কিন্তু যেহেতু ক্যাথলিক চার্চ সেই সময় বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেয়নি, তাই তিনি তাকে বিয়ে করতে পারেননি। তাই তিনি তার বৃদ্ধ স্ত্রীর মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলেন এবং এরই মধ্যে তাদের একটি সন্তানও হয়। তারপরে তার স্ত্রী মারা যান, তাই তিনি তার উপপত্নীকে বিয়ে করেন এবং অন্য একটি সন্তান পান, কিন্তু এরপর তার নতুন স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে, তিনি তার অনেক, অনেক দূরের এবং বয়সে ছোট এক তুতো বোন ক্লারাকে তার যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। তারপর যখন তার নতুন স্ত্রী মারা যান, তখনই তিনি ক্লারাকে, যে কিনা তার তুতো বোন ছিল তাকে গর্ভবতীও করেছিলেন এবং তারপর তার সাথে বিয়েও সম্পন্ন করেছিলেন ...
সেই জন্য, এক কথায় এইদিকে তিনি খেলোয়াড় ছিলেন! ক্লারা এবং অ্যালোইস, তাদের একত্রে তিনটি সন্তান ছিল যারা শৈশবেই দুঃখজনকভাবে মারা গিয়েছিল, তাই যখন চতুর্থ সন্তান অ্যাডলফ এসেছিল, ক্লারা তাকে যথেষ্ট আস্কারা দিয়ে নষ্ট করেছিল। হিটলারদের আরও দুটি বাচ্চা ছিল এবং পরিবারটিকে গ্রেটার জার্মানি তে কয়েকবছর ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল, যার ফলে অ্যাডলফকে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে হয়েছিল।
অ্যাডলফের বাবা ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, দ্রুত রেগে যেতেন। যার ফল ভোগ করত প্রথম পক্ষের সবচেয়ে বড় ছেলে। তার উপর বেশিরভাগটাই ছাপিয়ে পড়ার কারণের ফলে সে ততদিন নিয়ে যায় যতক্ষণ না তার পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি হয়ে যাচ্ছিল এবং শেষপর্যন্ত সে পালিয়ে যায়, চোদ্দ বছর বয়সে! এর ফলে, সাত বছর বয়সী অ্যাডলফকে বেশিরভাগ কাজ, যেমন বাগান পরিস্কার, বাগানের বেড়ার রক্ষনাবেক্ষন, বাড়ির সীমান্ত পরিস্কার ইত্যাদি করতে হত এবং পান থেকে চুন খসলেই তার বাবার বিরক্তির কারণ হতে হত এবং তার দ্বারা উত্তম মধ্যম মার হজম করতে হত। যেটা বিভিন্ন ঐতিহাসিক দের মতে তার কঠিন হৃদয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ! ফলাফলটি এই যে, তার বাবার সাথে তার একটি খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল যেখানে তিনি তার মায়ের সাথে অত্যন্ত কাছের হয়ে বেড়ে উঠেছিলেন এবং তার স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত চিন্তিত ছিলেন তার মা, ক্লারা। প্রথমদিকে হিটলার স্কুলে ভালো উন্নতি করছিল, তার গ্রেড যথেষ্ট ভাল ছিল এবং তার শিক্ষকরা তার প্রশংসা করেছিলেন। তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন এবং যুদ্ধের খেলা খেলতে বা তাদের সাথে একজোট হওয়া বা তাদের একত্রিত করাকে উপভোগ করতেন, একজন পাদ্রি বা বিশপ হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। তিনি পড়তে পছন্দ করতেন এবং বিশেষ করে কাউবয় এবং নানান ফিকশনাল গল্প পড়া তিনি পছন্দ করতেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে, তিনি সমস্যায় পড়তে শুরু করেন। তিনি একবার ধূমপান করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন স্কুলে শিক্ষকদের হাতে, একটি স্থানীয় আপেল বাগানে অভিযানের আয়োজন করেছিলেন তিনি, ভাবা যায়! এমন কি, তার অস্ট্রিয়াপন্থী ধর্মের শিক্ষককে প্রতীকী অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে জ্বালাতন করে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন যা তার আনুগত্য প্রদর্শনের রাস্তা। এগুলি করে সে বৃহত্তর জার্মান রাষ্ট্রের অধীনে ঐক্যবদ্ধ জার্মানি-অস্ট্রিয়ার জনগণের ধারণা সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।।

এ সবই অ্যাডলফের বাবাকে ক্ষুব্ধ করেছিল, যিনি তাকে কঠোর শাস্তি দিতেন। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যে অঞ্চলে হিটলার বসবাস করতেন তা একসময় জার্মান কনফেডারেশনের অংশ ছিল, তার নাম ছিল বাভেরিয়া। সেখানে বসবাসকারী অনেকেই নিজেদেরকে জার্মান বলে মনে করতেন, তাদের ভাষা, ওঠা-বসা সবেতেই, মানে তারা মনে প্রাণে ছিলেন ও তাই, জার্মান। অ্যাডলফ কে তার বাবা যা যা বলেছিলেন, তিনি তার বিরুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন এবং যেহেতু তার বাবা অস্ট্রিয়ান পাবলিক অফিসিয়াল ছিলেন মানে অস্ট্রিয়ার একজন নিষ্ঠাবান নিবাসী, হিটলার তাই জার্মান জাতীয়তাবাদে ভর করে বড়ো হচ্ছিলেন। এসব কিছু অ্যাডলফের বাবাকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, ফলস্বরূপ উনি তাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। এমনও দিন গেছে, যে উনি লোহার রড, বেল্ট ইত্যাদি দিয়ে প্রহার করতে করতে, তার মার গায়ে কয়েক ঘা পড়ে যেত, এর থেকেই তার মনে এই মনোভাবের সৃষ্টি হয়, যে ভয় আর জোর খাটিয়ে যা খুশি তা করা যায়, যদিও মতান্তর থাকতেও পারে। এই সময় একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি ঘটে। তার ছয় বছর বয়সী ভাই, যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন, অ্যাডলফের ১০ বছর বয়সের সময়, হাম হওয়ার কারণে মারা যায় এবং তাদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই তাকে কবরস্থ করা হয়। এই সময় প্রায়ই প্রতিবেশীরা উঠতি বালকটির আচরণের পরিবর্তনের সম্পর্কে খবর দেয়। অদ্ভুত কিছু আচরণ যেমন, গাছের সাথে কথা বলা এবং কবরস্থানের পাঁচিলে শুয়ে, দাঁড়িয়ে থেকে তারার দিকে তাকিয়ে থাকা, ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের মনে কথা বলে চলা, ইত্যাদি। তিনি ধর্মের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং তার স্কুলের গ্রেড কমতে শুরু করে, যা তার বাবাকে আরো ক্ষুব্ধ করে তোলে, যিনি আবারো তাকে কঠোর শাস্তি দেন।
এর পরে সে সদ্য উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল এবং শহরের মারকুটে ছেলেদের তার সংস্পর্শ খুব একটা ভালো ছিল না। তার সাথে গ্রামীণ চাষাভুষো বলে অপদস্থ করায়, বা বাজে আচরণ করায় তাকে ক'একটি ক্লাসের পুনরাবৃত্তিও করতে হয়েছিল! এতেও তার লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বেশিরভাগ স্কুলের বিষয়গুলিতে তার আগ্রহ ছিল না বরং তার চেয়ে, সে সময় ইতিহাস পড়া এবং ছবি আঁকাতে সে ব্যয় করত যাতে সে বেশ ভাল হয়ে উঠেছিল। এ সম্বন্ধে একটা বিখ্যাত কথা মনে পড়ে, তা হল, একদিন তার বাবা বলেছিলেন যে 'একদিন, তুমি আমার মতো বড় রকমের পাবলিক অফিসার হবে' এবং অ্যাডলফ তাতে উত্তর দিয়েছিল, 'না বাবা, আমি একজন শিল্পী হতে চাই এবং চিন্তা করতে চাই যে আমি ঈগলদের সাথে মেঘের উপরে উড়ে যাচ্ছি'। এতে তার বাবা যথেষ্ট রুষ্ট হয়েছিল। এই সময়ে তিনি যথেষ্ট বৃদ্ধ হয়েছিলেন, ও ফুসফুসের একটি রক্তক্ষরণের কারণে হিটলার তার শেষ সেমিস্টার পাস করার পরপরই বা আগেই, তিনি মারা যান। এটি তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়, প্রায়ই তিনি মাতাল হয়ে রাস্তায় ঘাটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতেন। যাইহোক, তিনি সামগ্রিক ফাইনাল স্কুল পরীক্ষা দেননি বরং শুধু শুধু স্কুল থেকে তিনি বাদ পড়েছিলেন। এখন ১৬ বছর বয়সী ছেলেটি জীবনের অনেক উদ্দেশ্য ছিল, মানে কোনো একটাতে মনোনিবেশ করতে পারত না। এর পরবর্তী তিন বছর বেকার ছিলেন তিনি। তার একমাত্র বন্ধু অগাস্ট কুবিজেকের(August Kubizek) সাথে অপেরাতে, থিয়েটারে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন। আগস্ট কুবিজেক পরে তরুণ হিটলারের স্মৃতিতে লিখেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি আবেগের সাথে অনেক কিছুতে আগ্রহী ছিলেন, অনুভব করেছিলেন যে তিনি তার বয়সের চেয়ে অনেক বিষয়ে ভালো ছিলেন, তার পিতার মতো বদমেজাজি এবং অবিশ্বাস্য বক্তা ছিলেন, যা তিনি বারংবার নিজের চেষ্টায় রপ্ত করছিলেন।
যখন তার বয়স ১৮, তখন সে তার মাকে খুব দুঃখজনক অবস্থায় বিদায় জানাতে বাধ্য হয়েছিল। তখন সে আর্ট স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে ভিয়েনায় গিয়েছিল, যদিও সে ব্যর্থ হয়েছিল। খুব শীঘ্রই তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল কারণ তার মা অসুস্থ ছিলেন এবং তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটছিল। হিটলার ঠায় তার পাশে ছিলেন এবং যখন তাঁর মা শেষ পর্যন্ত মারা যান তখন পারিবারিক ডাক্তার বলেছিলেন যে, তিনি হিটলারের মতো দুঃখ নিয়ে এতটা অভিভূত হতে কাউকে দেখেননি। তারপর হিটলার চারুকলায় নিজের ক্যারিয়ার খুঁজে পাওয়ার আশায় ভিয়েনায় ফিরে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু পিতামাতার সমর্থন ছাড়া তিনি কখনোই কোনো কিছুতেই সফলতা লাভ করতে পারেননি। হিটলার এখন ২০-র দশকের প্রথম দিকে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তিনি গৃহহীন হয়ে অনাথদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতেন এবং ঘরছাড়া হয়ে বাড়ির বাইরে বেশ কিছুদিন, কয়েকটা বছর কাটিয়েছেন। পোস্টকার্ড বিক্রি করে তিনি যা কিছু রোজগার করতে পেরেছিলেন তা তিনি করেছিলেন। হিটলারের চরমতা কখন এবং কীভাবে গড়ে উঠেছিল তা ঠিক ভাবে হয়তো ব্যক্ত করা কঠিন, সময়-অসময়ে নানান মতাদর্শিক বিশ্বাস গড়ে ওঠে, কিন্তু ভিয়েনা সেই সময় অবশ্যই এন্টি-সেমাইটিসম বা ইহুদি বিরোধ একটি বিশেষ ভূমিকা নেয় যা কিনা পালন করতে সবাই অগ্রসর হয়। কোনো সভ্য সমাজের সামনে যদি বহু প্রচলিত কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলন চলে, তবে তা নিশ্চিত হারে ক্ষমতা আসতে চাওয়া কোনো দল যদি চায়, যে সেটাই নিয়ে প্রচার চালাবে, তবে তা ব্যাপক ভাবে প্রসার পায়। শহরে ইহুদি-বিরোধীতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে হিটলার যিনি একজন স্পষ্টভাষী-বিরোধী সমর্থক ছিলেন, তিনি সমর্থন করেছিলেন।
এ সময় অনেক ডানপন্থী এন্টি-সেমিটিক দল ছিল, যাদের কাজ, লিফলেট বিলি বা নিউজলেটারের মাধ্যমে প্রচার হচ্ছিল, হিটলার এইসব ষড়যন্ত্র তথ্যগুলিকে কেনার ব্যাপারে, সংকলনের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ নিয়েছিলেন এবং একই ধারণায় দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছিলেন। অনেকে আছেন, যারা একে অপরের সাথে বিভিন্ন জাতিসত্তার লড়াই এবং ক্রমাগত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান, যা হিটলারের মনোবৃত্তির সাথে খাপ খায়, তা ছিল জার্মান আর্য জনগোষ্ঠী এবং এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যে জনগোষ্ঠী ছিল (হিটলারের মতে) তা হল ইহুদীদের। যেহেতু অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ছিল একটি বহু-জাতিগত সাম্রাজ্য যা কমবেশি প্রচুর জাতি, উপজাতি তে ভরা, তাই হিটলার কখনোই এর অন্ধ ভক্ত ছিল না। তার কাছে প্রধান জাতি হল আরয়ান, আর সবচাইতে শুদ্ধ হল জার্মান আরয়ান।

তাই যখন তার বয়স ২৪, তখন সামরিক সেবা অর্থাৎ মিলিত হয়ে দেশ সেবা করা এড়াতে তিনি জার্মানির মিউনিখে চলে যান এবং আরও একটি বছর পর্যন্ত তিনি রাস্তায় একজন ভবঘুরের মতো দিনযাপন করছিলেন। এরপর তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন আসে, বিশাল একটা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, সমগ্র ইউরোপকে। ১৯১৪ সালে ইউরোপে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরম্ভ হয়েছিল। ইউরোপ জুড়ে জনতা এই খবর উদযাপন করেছে, রীতিমতো ভয়াবহতার সৃষ্টি হয় সবার মধ্যে। কিছুদিনের মধ্যে হিটলার জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য স্বেচ্ছায়, স্বতস্ফূর্ত ভাবে যোগদান  করেছিলেন এবং এটি তাকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য দিয়েছিল। তার সহযোদ্ধারা তাকে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্ব উপহার দিয়েছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্ত্বেও হিটলার এটিকে তার জীবনের সেরা সময় বলে মনে করতেন, পরবর্তীকালে তার আত্মজীবনীতেও তার উল্লেখ করেন। তিনি একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন, খবরাখবর আদানপ্রদানের জন্য তাকে যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হত। যাতে তিনি যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দেন। ভাগ্যও তাকে বেশ ক'কয়েকবার তার সহায়তা করে, খুব অল্পের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি বোমের আঘাত থেকে রক্ষা পান এবং তাকে আয়রন ক্রস, প্রথম শ্রেণীতে অর্থাৎ করপোরাল পদে ভূষিত করা হয়েছিল। তিনি খুবই ভাগ্যবান ছিলেন এবং মৃত্যুর সাথে অনেকবার তার খুব ঘনিষ্ঠ মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯১৬ সালে তার ভালো ভাগ্যের পালা ফুরিয়ে যায়, যখন একটি কামানের গোলা তার পায়ে আঘাত করে। তখন সে শুশ্রুষার জন্য জার্মানিতে ফিরে যায় এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পুনরায় ফিরে আসেন। এসময় কিছুসংখ্যক ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত জার্মান জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের তিনি সম্মুখীন হন। জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সার্থে তিনি ফ্রন্টলাইনে ফিরে আসেন কিন্তু ১৯১৮ সালে ব্রিটিশদের ভয়ানক বিষ গ্যাসের আক্রমণের কারণে সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এক মাস পরে, যখন তিনি হাসপাতালে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় হিটলার জার্মানির পরাজয় এবং আত্মসমর্পণ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। শান্তি চুক্তির শর্তাবলী(Versailles Treaty) জার্মানির জন্য কঠিন ছিল, এতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ প্রদান, যা যুদ্ধ শুরু করার জন্যে তাদের ঘাড়ে বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং প্রচুর সংখ্যক সৈন্য হারাতে হয়েছিল। পরবর্তী পরিস্থিতি জার্মানিকে দুর্বল করে এবং জার্মান জনগণকে ক্রমাগত অপমানিত করে। বলা হয় যে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে ইঙ্গ-ফ্রেন্চ-মার্কিন রা যেখানে যখন খুশি ঢুকে পড়ে যেকোনো জার্মানকে কয়েক ঘা কষাতে পারবে, যাতে জার্মানদের কিছুই বলার বা করার থাকবে না! যুদ্ধের পর ইউরোপের সীমানাও বদল হয় আমূল ভাবে। রাশিয়ার হারানো ভূখণ্ড থেকে নতুন দেশ গঠিত হয়েছিল, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি বিলুপ্ত হয়েছিল এবং সেখানে একটি বড় নতুন দেশ, পোল্যান্ড, জার্মানিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিল। হিটলার, দেশের এই অবস্থা দেখে, তিনি এইভাবে অপমানিত হতেন যে, তার মধ্যে ঘৃণা, ক্ষোভ এবং প্রতিহিংসা জন্মেছিল। যুদ্ধে আত্মসমর্পণের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল অর্থাৎ কমিউনিস্ট এবং ইহুদিরা, যাঁরা বিশ্বাস করতেন যে ভিন্নমতেরও প্রয়োজন আছে ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারের মাধ্যমে জার্মানির পিঠে ছুরিকাঘাত করেছিলেন বলে তার মনে দৃঢ়তার সাথে গেঁথে যায় ...

(চলবে)

©উshaস চttopaধ্যায়~

#দ্বিতীয়_বিশ্বযুদ্ধ #হিটলার #ইহুদি #কমিউনিস্ট  #হলোকাস্ট #জার্মান #পোল্যান্ড #অস্ট্রিয়া #হাঙ্গেরি #প্রথম_বিশ্বযুদ্ধ

No comments:

Post a Comment