Tuesday, 17 August 2021

তিস্তার কান্না!


---তিস্তার কান্না:-



তিস্তার গায়ে হলুদ আজকে। ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন তার। রাতে বরপক্ষ অল্প কিছু মানুষ নিয়ে আসবে বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ে নিয়ে চলে যাবে এই হচ্ছে আয়োজন।

মেয়ের বিয়েতে বড়ো আয়োজন করার ইচ্ছে থাকলেও তাড়াহুড়া করে বিয়েতেও তিস্তার মা তার মেয়ের জন্যে গায়ে হলুদের আয়োজন রেখেছেন।

বরপক্ষ আসতে আসতে রাত হবে আর বিকালের মধ্যেই গায়ে হলুদের পর্ব সেরে, মেয়েকে তিনি সন্ধ্যার মধ্যে বিয়ের জন্যে সাজিয়ে দেবেন।

সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি আসলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তিস্তাদের একতলা বাড়ির সামনে অনেক খানি জায়গা জুড়ে উঠোন। বাড়ির উঠোন ডুববে তো ডুববে সাথে বাড়ির সামনের রাস্তায় জল জমলে বরপক্ষের গাড়ি ঢুকবে কিভাবে সেই চিন্তায় তিস্তার বাবা, ভাই আর ছোটো কাকা বাড়ির সামনে জল যাওয়ার ব্যবস্থা করে বরপক্ষের খাবারের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত এখন।

তিস্তার গায়ে বিয়ে উপলক্ষে আসা মানুষজন হলুদ দিচ্ছেন, গান গাইছেন আজকাল কার ট্র্যাডিশন মেনে সবাই মিলে কিন্তু তিস্তা নির্লিপ্ত হয়ে বসে আছে। বাপের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় এমন মন খারাপ মেয়েদের হওয়াই স্বাভাবিক ধরে নিয়েছেন সবাই।

গায়ে হলুদ পর্ব শেষ করে তিস্তা স্নান করে আসলে তিস্তার আত্মীয় স্বজন তিস্তাকে বউয়ের সাজে সাজিয়ে বসিয়ে অপেক্ষা করছে বর আসার জন্যে,  ঠিক তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে!

বৃষ্টি নামার সাথে সাথে বাড়ির ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েরা ওদের উঠোনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে! বাড়ির বড়রা বাচ্চাদের শাসন করতে গেলেও চুপ হয়ে যায়, একটু আমোদ ফুর্তি বিয়ের দিন করাই যায় এটা ভেবে!

তিস্তা তার ঘরে চুপ করে বউ সেজে বসে আছে আর তখন তার ছোটো বোন দৌড়ে আসে তার রুমে! তার হাতে দুটো কদম ফুল! এসেই বলে, দিদি দেখ দেখ ঝড়ে গাছের সব কদম পড়ে গেছে!

তিস্তা বোনের হাতে কদম দেখে দৌড়ে গিয়ে নিজের ঘরের জানালা খুলে! গাছ ভর্তি কদম এসেছে খেয়ালই করা হয় নি তার!

বোনের হাত থেকে কদম দুটো নিয়ে চুপ চাপ বসে আছে তিস্তা! তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে! বাড়ি ঘরদোর সবকিছু কাঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! ভীষণ মনে পড়ছে রানার কথা! প্রতিবার রানা গলির মুখে তাকে নামিয়ে দিতে এসে উঠোনের কদম গাছটা দেখিয়ে বলতো বিয়ের পরে এই গাছটা উঠিয়ে নিয়ে যাবো আমরা! বর্ষায় এমন ঝাঁকে ঝাঁকে কদম ধরা গাছ কলকাতা শহরে আর কোথাও কখনো দেখে নি সে! কদম ফুল দেখলেই বাচ্চাদের মতন খুশি হয়ে যেতো রানা!

তিস্তার খুব ইচ্ছে করছে শেষবারের মতন একবার রানার সাথে কথা বলতে! আর কথা বলেই বা কী হবে? তবুও সে ভাবছে কী করছে রানা এখন? নিশ্চয়ই চুপচাপ বসে জোরে জোরে পা নাচাচ্ছে সে! রানা অস্থির হয়ে গেলে, কষ্ট পেলে কখনো মুখ ফুটে বলে না। চুপচাপ বসে পা নাচাবে। নিশ্চয় অনেক কষ্ট হচ্ছে রানার!! একবারের জন্যে শেষ কথা বলাও হবে না রানার সাথে আর তার! তিস্তার খুব ইচ্ছে করছে আশেপাশে কাউকে জড়িয়ে ধরে বলতে আমি রানার কাছে যাবো! আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!

বিয়ের আয়োজন শেষে নতুন বউকে গাড়িতে উঠিয়ে তিস্তার বর সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে দেখে তিস্তা কাঁদছে! খুব চিৎকার করে তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে একটাবার আমাকে রানার কাছে নিয়ে যাবেন? আমি রানাকে বলতেও পারি নি 'তুমি ভালো থেকো!'

তিস্তার বর চুপচাপ বসে তিস্তার কান্না দেখছে। কী বলে তিস্তাকে সে থামাবে বুঝতেও পারছে না। তবে বাপের বাড়ি ছেড়ে আসার সময় মেয়েরা কাঁদবেই স্বাভাবিক! কিছু বলল না, কাঁদুক কিছুক্ষণ! কিন্তু বেচারা কোনোদিন জানতেও পারবে না এই কান্না প্রেমিক হারানো এক প্রেমিকার কান্না!...

-©উshaস চttopaধ্যায়~----

No comments:

Post a Comment