Thursday 19 August 2021

হিটলার ২-য় পর্বে!


 #হিটলার_২য়_পর্বে:


যেহেতু জার্মানির সামরিক বাহিনী কমাতে হয়েছিল, সেহেতু যুদ্ধের পর হিটলার আর সৈনিক থাকতে পারেননি, কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর জন্য একজন তথ্যদাতা(informer) হিসেবে কাজ করতে থাকেন। যুদ্ধের পরে, জার্মানিতে কমিউনিস্টরা একটি বিপ্লবের চেষ্টা করেছিল এবং সরকার সাধারণভাবে সাম্যবাদ নিয়ে চিন্তিত ছিল, তাই হিটলারের উপর অনুপ্রবেশ করা এবং কমিউনিস্ট হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন নতুন রাজনৈতিক দলের সম্বন্ধে রিপোর্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি নামে একটি নতুন দল পুরো লাল পতাকা জুড়ে ছেয়ে ফেলেছিল, মনে করা হয়েছিল যে বোধহয় কমিউনিস্ট পার্টি, তাই হিটলার তাদের একটি আয়োজিত সভায় গেছিলেন কিন্তু দেখা গেল যে তারা মোটেও কমিউনিস্ট ছিল না উল্টে, তারা ছিল চরম বামপন্থী একটা দল! এবং সেই পার্টি তার চরম বিশ্বাসের অনেক কিছুতেই মতের মিল পাওয়া যায়, তাই তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে এবং পার্টিতে যোগদান করেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই, তার অসাধারণ কথা বলার ক্ষমতা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সমর্থকদের মুগ্ধ করেছিল, এবং তিনি খুব দ্রুত উপরে উঠতে লাগলেন। খুব শীঘ্রই তিনি পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনও হন। এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে পার্টির ক'একটি পরিবর্তন বা মেকওভার দরকার, তাই তিনি এটির নতুন নামকরণ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি (National Socialist German Workers' Party), বা সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি, এবং তিনি একটিতে যে হালকা ব্যাঁকানো স্বস্তিকা চিহ্ন-র ব্যবহার করেছিলেন তা তার নিজেরই করা, একটি নতুন রঙের স্কিমও দিয়েছিলেন তিনি। নাৎসিরা নীতি সম্পর্কে খুব-একটা সুনির্দিষ্ট ছিল না, কিন্তু হিটলার জার্মানিকে তার আগের গৌরব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভার্সাই চুক্তি বাতিল করে এবং সমস্ত নৈতিক জার্মানদের এক জাতি, গোষ্ঠীতে পুনর্মিলন করতে, তিনি জার্মানি কে পুনরায় সমস্ত গৌরব ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর হন। তিনি আরও চেয়েছিলেন যে শুধুমাত্র বিশুদ্ধ আর্যদের(pure Aryans) নাগরিক হতে দেওয়া উচিত এবং সব ইহুদিরা তাদের নাগরিকত্ব হারাবে। চরম ডানপন্থী রাজনীতিতে এই ধারণাগুলো আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, কিন্তু যেটা নাৎসিদের বাকি চরম ডানপন্থী দলগুলোর থেকে আলাদা করেছিল তা হল হিটলার নিজেই। তারা খুব দ্রুতই জার্মানির চরম ডানপন্থী নেতৃস্থানীয় দল হয়ে ওঠে। সেই সময়ে জার্মানির অনেক রাজনৈতিক দলের আধাসামরিক শাখা ছিল এবং নাৎসিরাও এদের থেকে আলাদা ছিল না। হিটলার খুবই বর্ণনামূলক ভাবে এদের গঠন সম্পর্কে সচেষ্ট হন, এদের নামকরণ-এর বিভিন্নতা যেমন "হল সুরক্ষা বিচ্ছিন্নতা/Hall Protection Detachment," পরবর্তী সময়ে যা হয় "Gymnastic and Sports Division/জিমন্যাস্টিক এবং ক্রীড়া বিভাগ," এবং অবশেষে অশুভ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী "Storm Detachment/ঝড় বিচ্ছিন্নতা", বা সংক্ষেপে এসএ/SA গোষ্ঠী স্থাপন করা। তাদের কাজ ছিল নাৎসি দলের সভা, কার্যালয় রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং তারা প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত হত রাস্তা-ঘাটে কমিউনিস্টদের সাথে। যেহেতু মিত্র শক্তিরা জার্মানির সামরিক আকার-আকৃতি কমানোর দাবি করেছিল, তাই অনেক প্রশিক্ষিত সৈন্য বেকার হয়ে পড়েছিল। তারা স্বাভাবিক ভাবেই নাৎসি মতাদর্শ পছন্দ করত, এবং এসএ -তে যোগদান করা তাদের জন্য স্বাভাবিক ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে আরও বড় হতে থাকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হওয়া নতুন গণতান্ত্রিক সরকার বেশ দুর্বল এবং অকার্যকর ছিল। শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ (reparations) দিতে হয় মিত্র শক্তিদের কাছে, ফলে আরও বেশি পরিমানে অর্থ মুদ্রণের কাজ শুরু করে। সমস্যাটি হল, অর্থ মুদ্রণ বা টাকা ছাপানো আসলে একটি দেশকে বেশি অর্থের মালিকানা দেয় না - এটি শুধু অর্থকে কম মূল্যবান করে তোলে। সুতরাং জার্মানি দেশটি যত বেশি টাকা ছাপিয়েছে, ততই এটি কম এবং আরো কম মূল্যবান হয়ে উঠেছে এবং একসময় এসে মুদ্রার মূল্য ক্র্যাশ করেছে। ১৯১৯ সালে, একটি ইউ.এস. ডলারের মূল্য ছিল ৪.৫ জার্মান মুদ্রার সমান, কিন্তু ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি ইউ.এস. ডলার ছিল ৪,২ ট্রিলিয়ন মার্কের সমান। পাউরুটিরও দাম বেড়ে হয় ২০০ বিলিয়ন মার্কস। ব্যাঙ্কের ব্যবসা পুরোপুরি মূল্যহীন হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে, এই জাতীয় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জার্মানি মিত্র শক্তিদের অর্থ প্রদানের জন্য প্রচন্ড সংগ্রাম করছিল। ফরাসিরা এ নিয়ে বিরক্ত হয়েছিল। তাই তারা কারখানা দ্বারা পরিপূর্ণ এলাকা রুহর (Ruhr) অঞ্চল দখল করে নেয় এবং অর্থ প্রদানের পরিপূরক হিসাবে এলাকা থেকে অর্থনৈতিক উৎপাদন নিজেরাই গ্রহণ করে। তারা জার্মান নাগরিকদের সাথেও খারাপ আচরণে লিপ্ত হয় এবং মোটামুটিভাবে একশ ত্রিশজন জার্মান, এইসব ফরাসি দখলদারিত্বের সময় নিহত হয়েছিল। জার্মানরা ক্ষিপ্ত ছিলই এবং হিটলার এবং নাৎসিরা ভেবেছিল যে এখন এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার একটি দুর্দান্ত সময় হবে। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে, ঠিক এক বছর আগের এক সাহসী ইতালীয়র নকল করে(Benitto Mussolini),
হিটলার একটি বিয়ার হলে একটি সভায় ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেন। তার সমর্থকদের সাথে, তিনি মিউনিখের রাস্তায় মিছিল বের করেছিলেন, এই আশায় যে পুলিশ তার পাশে যোগ দেবে। কিন্তু না, তারা যেটা দিয়েছিল তা হল বন্দুকের গুলি! প্রায় ১৫জন সিনিয়র অফিসিয়াল সেই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন ও মারা যান, আহত হন হিটলার নিজেও। মাস খানেক আত্মগোপন করলেও তাকে ধরা পড়তে হয়। হিটলারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে আনা হয়েছিল। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারত, কিন্তু ডানপন্থী বিচারকরা ভেবেছিলেন তিনি একটি খুব শান্ত লোক, হিটলারও বিচারকদের চিনতেন এবং জানতেন যে তারা নমনীয় হবেন। তাই তিনি বিচারের সময় এবং শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট বক্তৃতা করার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন! তাকে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে তিনি মাত্র নয় মাস কারাভোগ করেছিলেন। যখন আমি কারাগার বলেছিলাম, তখন একেবারেই তার কারাবন্দি-র মতো ব্যবহার করা হয় নি, বরং এটি একটি মনোরম হোটেলে থাকার মতো ব্যাপার ছিল যেখানে তার একটি বিখ্যাত বই 'মেইন কাম্পফ' (Mein Kampf অর্থাৎ মাই স্ট্রাগল) লেখার জন্য প্রচুর সময় ছিল। যেটি একদিকে তার জীবনের কাহিনী তো অন্য দিকে এক সুনির্দিষ্টভাবে প্রস্তাবনা ও তার পার্টির হলফনামা নামে পরিচিত!
গোটা বিষয়টি দেশব্যাপী মিডিয়া দ্বারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল এবং এটি হিটলারকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। হিটলার এবং তার চরম বার্তা বা নীতি এখন পুরো জার্মানি জুড়ে পরিচিত হচ্ছিল। কিন্তু দৈনন্দিন জার্মানরা এখনও তার জন্য খুব একটা চিন্তিত ছিল না, এককথায় তারা পাত্তা দেয়নি। ১৯২৮ সালের নির্বাচনে, নাৎসিরা কেবল জেতে ২% ভোট। অনেকেই তখনও নাৎসি দের সহিংসবাদি চেহারা এবং হৈচৈতে রাজি ছিলেন না ও তারা হিটলারকে অ-রাজনীতিবিদ হিসেবে গন্য করেছিলেন। কিন্তু একটি নতুন অর্থনৈতিক সংকট সব পরিবর্তন করে দেয়। জার্মানিকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে সাহায্য করার জন্য, আমেরিকা তাকে লোন দিতে রাজি হয়েছিল। ১৯২৯ সালের অক্টোবরে, ওয়াল স্ট্রিট চরম অর্থাভাবের সূচনা ঘটেছিল এবং আমেরিকা তার টাকা ফেরত চেয়েছিল। ইতিমধ্যেই সংগ্রামী জার্মানির ওপর যে অর্থনৈতিক চাপ ছিল তা ছিল মারাত্মক।
বেকারত্ব হচ্ছিল আকাশচুম্বী। দারিদ্র্যতা ব্যাপক থেকে ব্যপকতর হচ্ছিল এবং জার্মানরা এটা ভালোভাবে নিচ্ছিল না। এটা স্পষ্ট ছিল যে নবগঠিত গণতন্ত্র কাজ করছে না। সংকটের মুখে, জার্মানরা সেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে, যা হল চরমপন্থী! চরমপন্থী দল হিসেবে জার্মানরা নিজেদের বিভাজন করছিলেন এবং পরিবর্তন করতে চাইছিল নিজেদের মানসিকতার, যদি তুমি একজন প্রকৃত জার্মান হও এবং দেশের বদল আনতে চাও, এখন তোমার পছন্দগুলি ছিল সীমিত, হয় কমিউনিস্ট বা নাৎসি।

হিটলার দাবি করেছিলেন তিনিই একমাত্র জার্মানিকে তার আগের গৌরবে ফিরিয়ে আনতে পারেন। নাৎসি দল হিটলারকে একজন মহান এবং শক্তিশালী হিসেবে মানুষের মনে ধরানোর জন্য প্রচার করেছিল, ব্যবহার করেছিল একটা প্রপোগান্ডা হিসেবে এবং তারা জার্মান জনগণকে তাদের সব কষ্টের জন্য দোষারোপ করার মতো একটি বলির পাঁঠাও খুঁজে দিয়েছিল। একক শক্তিশালী স্বৈরশাসকের প্রতিশ্রুতি ছিল ব্যর্থ গণতন্ত্রের এতবছর পরে জার্মানদের জন্য তাজা বাতাসের প্রশ্বাস। রাতারাতি সবকিছু পাল্টে যায়, হটাৎ যেন মনে হতে থাকে, কেউ কেউ তার চরম আদর্শকে কিনে নিয়েছে। কেউ কেউ বর্ণবাদ বা বৈষম্যের সাথে একমত নন, কিন্তু যেভাবেই হোক তাকে ভোট দিতে ইচ্ছুক। অনেকেই রাজনীতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না, কিন্তু শুধু প্রচারের জালে ধরা পড়ে তাকেই চেয়েছিল। নির্বাচনের পর নির্বাচন, নাৎসিরা ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ক্রমশ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সালে তারা জার্মান পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় দল হয়ে ওঠে। সেই দেশের লোকজন হিটলারের প্রতি সত্যিকারের অর্থেই বিশ্বাস করতে সমর্থ হয়েছিলেন যে তিনি জার্মানির এক ধরণের মহান নিয়ন্ত্রক, ত্রাণকর্তা ছিলেন। তিনি পরিণত হয়েছিলেন এক স্বৈরাচারী, মেগালোম্যানিয়াকে। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে ভাল ফলও করেছিলেন, কিন্তু তখনও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে অত্যন্ত জনপ্রিয় জেনারেল পল ভন হিন্ডেনবার্গের কাছে হেরে যান। যেহেতু হিটলার এখন সবচেয়ে বড় দলের নেতা, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে তাকে চ্যান্সেলর করার দাবি জানান। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ অনিচ্ছুক ছিলেন, হিটলারকে দেখে স্পষ্টতই তার মনে হত যে কত বড় বর্ণ-বৈষম্যবাদী। শিল্প নেতারা আগ্রহ জানান, যেন হিন্ডেনবার্গ হিটলারকে চ্যান্সেলরশিপ দিয়ে দেন, এছাড়াও কমিউনিজমের ক্রমবর্ধমান উপদ্রবের আশঙ্কায় এবং কেন্দ্রীয় দলের নেতা ভন পাপেন, যিনি গোপনে হিটলারের সাথে আলোচনা করেছিলেন, তিনি হিন্ডেনবার্গকে বললেন, যে 'আমরা হিটলারকে চ্যান্সেলর করব এই শর্তে যে আমি ভাইস চ্যান্সেলর হব এবং বেশিরভাগ সরকারি চাকরি আমাদের কাছেই যাবে, যা কিনা মধ্যপন্থী, রক্ষণশীল। এই ভাবে আমি আমার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারব, আমি বলতে চাইছি যে, আমরা আমাদের ক্ষমতা ধরে রাখব এবং আমরা হিটলারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এমনভাবে যেন সে আমাদের খেলনা ক্ষুব্ধ পুতুল হিসাবে। এতে কি আর ভুল হতে পারে?' যার উত্তর হল, সবকিছু...

হিটলার ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন, কিন্তু তিনি তখনও স্বৈরশাসক ছিলেন না। ফেব্রুয়ারিতে জার্মান পার্লামেন্ট ভবনে আগুন লাগানো হয়। ঐতিহাসিকরা এখনও নিশ্চিত নন যে এটি কে করেছে তবে অনেকেরই সন্দেহ নাৎসিরা নিজেরাই করেছে। হিটলার কিন্তু  কমিউনিস্টদের দায়ী করেছেন এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে একটি জরুরী ডিক্রিতে স্বাক্ষর করতে রাজি করান যা তাকে সকল কমিউনিস্ট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বন্দী করবার অনুমতি দেয়। কমিউনিস্টদের এবং অন্যান্যদের ডাকাউতে (Dachau) প্রথম কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। এই সময়ে, প্রবীণ রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গ মারা গেলেন, এই হল হিটলারকে নিখুঁত একটি সুযোগ দেওয়া। তিনি পার্লামেন্টে একটি আইন (1933 Enabling ACT) প্রবর্তন করেন যা তাকে ভবিষ্যতের সকল আইন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্পূর্ণ অনুমতি দেয় শুধুমাত্র তার নিজের উপর। কারাগারে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরকে এবং অন্যদের এসএর ভয় দেখিয়ে হিটলারের আইন পাস হয়। চ্যান্সেলর হওয়ার মাত্র দুই মাস পর হিটলার এখন একনায়ক, ডিকটেটর!
তার এখনও একটি সমস্যা ছিল। এস এ-এর নেতা রোহম(Rohm) চেয়েছিলেন এস এ, নিয়মিত জার্মান সেনাবাহিনীর চাকরি গ্রহণ করবে এবং জার্মান সেনাবাহিনী সেই ধারণা পছন্দ করেনি। হিটলারের তার পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত জার্মান সেনাবাহিনীর সমর্থন বজায় রাখার প্রয়োজন ছিল, তার রুক্ষ, রাগী, বদমেজাজি এবং খামখেয়ালি এস এ-র চেয়ে বেশি। তাই ১৯৩৪ সালে জুনের এক রাতে, তিনি রোহম এবং তার নিজের এস এ অফিসারদের অনেককে গ্রেপ্তার করে হত্যা করেছিলেন। তিনি সুযোগটি নিষ্ঠুরভাবে কিছু ব্যক্তিগত কিছু নিজস্ব হিসাবেরও নিষ্পত্তি করেছিলেন। কিছু রাজনীতিবিদ, যারা অতীতে তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, যেসব সাংবাদিক তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক নিবন্ধ ছাপিয়েছিলেন, এমন এক ব্যক্তি যিনি একেবারেই কিছুই করেননি, কিন্তু তারা ভেবেছিল সে অন্য কেউ, এরকম প্রচুর কারুর হত্যা করিয়েছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে, তাদের পরিবারের লোকজনকেও হত্যা করা হয়েছিল। মোট, ২০০ জন লোককে হত্যা করা হয়েছিল যা দীর্ঘ ছুরির রাত (the Night of the Long Knives) হিসাবে পরিচিত হয়েছিল। সেনাবাহিনী, এখন সন্তুষ্ট যে তাদের প্রতিস্থাপন করা হবে না, তাদের নতুন ফিউরারের (জার্মানিতে যার অর্থ নেতার ও নেতা) প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং হিটলারের নিয়ন্ত্রণ এখন নিশ্চিত। জার্মানিতে জীবন হিংস্রভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যার কিছুটা ছাপ ৭৫র ভারতেও দেখা যায়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, অভিব্যক্তি প্রকাশ, এবং জনসমাবেশ স্থগিত করা হয়েছিল। ইহুদিরা প্রাথমিকভাবে ব্র্যান্ডেড মানে চিহ্নিত করা এবং তাদের ব্যবসা বয়কট করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, হিটলার ছয় মিলিয়ন ইহুদি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদেরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে, যদিও এখনো অবধি পাওয়া কোনো তথ্যেই হিটলারের সই দেখা যায় নি, তবু একথা অনস্বীকার্য যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজই সংগঠিত হত না। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা বা অসম্পূর্ণতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষকে, বিশেষত শিশুদেরও  জীবাণুমুক্ত বা স্টেরিলাইজড করতে বাধ্য করা হয়েছিল। 'হিটলার ইয়ুথ' তরুণদের ব্রেনওয়াশ করার একটি সহজ উপায় হয়ে ওঠে। ছেলেদের যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত স্কুলে থাকতেই এবং ক্যাম্প থেকে হিংস্র অবস্থায় বাড়ি ফিরত। মেয়েদের বলা হয়েছিল তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল অনেক বিশুদ্ধ আর্য সন্তান জন্ম দেওয়া! তারা মাঝে মাঝেই গর্ভবতী হয়ে ক্যাম্প থেকে ফিরে আসত। যখন তাদের বাবা -মা বোধগম্যভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ত, তখন তাদের সন্তানরা তাদের হুমকি দিতো যে তারা তাদের গেস্টাপোর (Gestapo বা জার্মান পুলিশ) কাছে ধরিয়ে দেবে কারণ তারা বাধা দিচ্ছে জার্মানির মাহাত্ম্যকে ফিরিয়ে আনার কাজে। সাধারন অভিবাদনের রীতি নীতির পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং এটি ঠিকঠাক ব্যবহার না করার জন্যও আপনাকে একটি কনসেনট্রেশন শিবিরে পাঠানো যেতো। এই ভাবে, মনে হত যে সবাই নাৎসি সমর্থক। আপনি যদি হিটলারকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সাহস করেন বা তার বিরুদ্ধে কোনোভাবে কথা বলেন, আপনাকেও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হতো। এইভাবে জার্মান জাতীয়তাবাদ তরুণ অ্যাডলফাসকে মোহিত করেছিল। রাস্তায় কঠিন জীবন যাপনকারী একজন যুবক হিসেবে চরম মতাদর্শ এবং ইহুদি-বিরোধীতা তার মধ্যে যেন অন্তর্নিহিত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় তার মধ্যে ঘৃণা এবং প্রতিহিংসার তৃষ্ণায় তাকে পূর্ণ করে তুলেছিল। একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা তাকে ঈশ্বরের সমান বানিয়ে তুলেছিল এবং শত শত, হাজার হাজার মানুষ তাকে তার ত্রাণকর্তা বা রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখেছিল নিজেদের হারানো গৌরব, গর্ব ফিরিয়ে আনার জন্য যা তাকে একজন ক্ষমতালোভী, একজন মেগালোম্যানিয়াক বানিয়ে তুলেছিল এবং শীঘ্রই, তার আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতি বিশ্বকে দ্বিতীয় মর্মান্তিক বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে টেনে এনেছিল, যাকে আমরা চিনি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা World War 2 নামে ... 


©উshaস চttopaধ্যায়~

#দ্বিতীয়_বিশ্বযুদ্ধ #হিটলার #ইহুদি #কমিউনিস্ট  #হলোকাস্ট #জার্মান #প্রথম_বিশ্বযুদ্ধ

No comments:

Post a Comment