Thursday, 20 May 2021

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ...


আর ভালো লাগছে না! ভাবছি সোশাল মিডিয়া থেকে অবসর নিয়ে নি। সবাই এত কিছু জানে যে আর কথাই নেই! এই যেমন;
-স্কুল পাস না করা ছেলেটাও মাস্টার্সের শেষ ইয়ারের বড় ভাইকে বা দিদিকে নিয়ে ফেসবুকে মতামত দিয়ে দিচ্ছে কিছু না বুঝেই।
-জীবনে যে গান গায়নি বা গানের সারেগামার স ও বোঝে না সেও কিনা ২০ বছর ধরে গানের জগতে কাজ করা বরেণ্য শিল্পীর কাজ নিয়ে অশালীন মতামত দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বারোটা পাঁচ বাজাচ্ছে।
-এখনো যে মানুষটি কোনো কর্পোরেট জবেই ঢোকেনি, ঢুকলেও আদপে ফেলিওর, সেও ১৫ বছর ধরে ৯ টা ৫ টা অফিস করে জীবন তেজপাতা করে ফেলা কাউকে নিয়ে ক্যারিয়ার সামারি ভিডিও বানিয়ে "আমি খুব বুঝি" ট্যাগ লাইনের স্ট্যাটাস পোস্ট করে দিচ্ছে।
-রাজনীতির ধারের কাছেও ছিলেন না যিনি আর মিছিল দেখলেই গলির ভেতর ঢুকে পড়তেন "চাচা আপন প্রাণ বাঁচা" ডিএনএর মানুষটাও ইচ্ছে মতো বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণে ভরা লেখা ভাইরাল করে দিচ্ছেন ওয়ালে ওয়ালে!

পরিবার থেকে বছরের পর বছর দূরে থেকে মরুভূমির নির্মম রোদ মাথায় নিয়ে অথবা সিয়াচেনে না গলতে চাওয়া বরফে কাজ করতে কতটা কষ্ট হয় সেটা না বুঝেই অনেকেই  সৈনিকদের নিয়ে কটুক্তি করে ফেলছেন শুধুমাত্র এয়ারপোর্টে, রাজভবনে বা অন্যান্য জায়গায় তাদের একটু কড়াকড়ি বা শোরগোল দেখে। সবাই নিজেকে বিজ্ঞ প্রমাণের চেষ্টায় কয়েক টাকার এমবি কিনে ফেসবুকে হাতি ঘোড়া সব মেরে ফেলছেন। নিজের গাড়িটা উল্টো পথে এনে হরদম রাস্তা আটকে দেওয়া মানুষটাও সুযোগ পেলেই ঘর্মাক্ত ট্রাফিক পুলিশ "শুধু টাকা খায়" নামের ট্রোলের শেয়ার করে দিচ্ছে বীরের মতো!

নিজে উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেও যিনি একবারের জন্যেও কলকাতার বাইরের কোনো দেশ, বা শুধু দেশ কেন, জেলা, উপজেলায় বা গ্রামের ছেলেমেয়েদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেষ্টাও করেননি তিনিও কড়া ইংরেজিতে দেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে "সব শেষ হয়ে গেলোরে" টাইপের বাণী আউড়ে যাচ্ছেন, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনেক ইমোজি, লাইক আশা করছেন ফেসবুকে!

কলকাতার মফস্বলের ৩০% রিক্সাওয়ালা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েও দিনরাত কিভাবে মানুষ হয়েও মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা না বুঝেই আমরা "তুই একটা
রিক্সাওয়ালা" নামের মিম শেয়ার করে খুব মজা নিচ্ছি। 'হেব্বি হয়েছে ফ্রেন্ড' বলে আবার অনেকে সেখানে কমেন্টও করছে অট্টহাসির ইমোজি দিয়ে। আবার একজন এসে আলতো করে কমেন্টও করে গেলো- "নিতে পারি?"

'প্রত্যেকে, আমরা সবাই আলসান্দ্রো ডেল পণ্ডিতো'

অপমানসূচক সংস্কৃতি একটা বিষাক্ত মদের মত। খুব সহজ আর নোংরা ধরনের আনন্দ দেয়! বয়সে আর অভিজ্ঞতায় বড় কাউকে নিয়ে, কোন বিষয়ে নিয়ে মতামত দিতেও একটা যোগ্যতা লাগে, যোগ্যতা ছাড়া মত প্রকাশ করা হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার সরাসরি অপব্যবহার!

সবাই রাষ্ট্রপতি না যে সব বিষয়ে মতামত থাকতেই হবে বা দিতেই হবে।

বয়স হতে দাও, অভিজ্ঞতা আসতে দাও জীবনে, অপমান নয় উৎসাহই হোক না আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ব্যবহারের প্রথম উদ্দেশ্য, একটু ভেবে দেখো কথাগুলো ... 🙏🏼

©উshaস~

#সোশ্যাল_মিডিয়ার_অপব্যবহার 

No comments:

Post a Comment