Monday, 17 May 2021

শৈশবের সে দিনগুলি ...

শৈশব বড়ই কিম্ভুত-কিমাকার, তখন এরকম নিয়ন বাতির ঝকঝকে জৈষ্ঠ্যের সন্ধ্যা নামতো না!

সেই দিনগুলোতে সর্বজনবিদিত একটা সুত্র ছিলো- সন্ধ্যা মানেই লোডশেডিং ....মাঝেমধ্যে দুমিনিটের জন্য ইলেক্ট্রিসিটির দেখা মিললেও আবার নিমেষেই উধাও হয়ে যেতো। অনেকটা দিঘিতে ভেসে ওঠা পানকৌড়ির মতন। এই ক্ষণে দেখা যায়..আবার হঠাৎ করেই এক ডুবে নিরুদ্দেশ!

তো তখন লোডশেডিংয়ের কারণে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ভূতুড়ে অবস্হা বিরাজ করতো।

হ্যারিকেন কিংবা প্রদীপের আলোয় টুকটাক কাজ চলতো সবার। সন্ধ্যার পুজো-আচ্ছা করার পর চায়ের সাথে মুড়ি দিয়ে গলা ভিজিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে পড়ার টেবিলে বসতো ছেলেপুলেরা। যাদের বাবা-মামা বিদেশে থাকতো তাদের দুটো বিশেষ চিহ্ন ছিলো। হাতে কালো ফিতের ক্যাসিও ঘড়ি আর বাড়িতে বিশেষ ধাতব এক প্রকার লাইট।

আমার বাবা-কাকা-মামা বিদেশে না থাকার সুবাদে আমাদের কোনো মেটালের তৈরি কালো হাতলওয়ালা লম্বা লাইট ছিলো না। হারিকেনের সলতে জ্বলা সেইসব সন্ধ্যেবেলায় দরজা খোলা রেখে হাতের কাছে বড়জোর সেই টর্চের লাইটটা নিয়ে পড়তে বসতাম।

হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা শব্দ আসলেই সবার কান খাড়া হয়ে যেতো..সতর্ক হয়ে উঠতাম..কখন গাছে ঝুলে থাকা পাকা আম বাইরে সজোরে টিনের চালায় ধুমধাম পড়বে.. আর আমার মতন পড়ার টেবিলে সতর্ক হয়ে লাইট নিয়ে বসে থাকা ছেলেরা দৌড়ে গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে হুমড়ি খেয়ে সেই আমটা খুঁজে বের করে জয়ীর বেশে ফিরে আসবে...
আমার মায়ের আবার ছিল আরেকটি সখ্, নারকেল পড়লে যে ধূপ ধাপ শব্দ হয়, সেদিকে ওনার কান থাকতো সর্বদাই, এ ব্যাপারে আমি আর আমার বোন দুজনেই ছিলাম মায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট। খুব সস্তা একটা ব্যাপার, অথচ -কি সুখ! কি আনন্দ!!

আমাদের চারিদিকে এত কনক্রিটের দেওয়াল ছিলোনা তখন.. ফলতই দেয়াল ছিলোনা শিশুসুলভ মনেও, হাওয়ার মতন উড়তাম সবাই। সুখ দুঃখ বুঝতাম না, অথচ নিরন্তর সুখেই ডুবে থাকতাম।
ঘোড়ার লাগাম কষলে যেমন ঘোড়ার ছোটার গতি কমে আসে, বয়সের লাগাম তেমনি আমাদের সুখকে টেনে ধরে রেখেছে।
নিরালায় নিঝুম মনের নীরব ভাবনায় নিজেকে নিজের কেবলি জিজ্ঞাসা- কোথায় গেল সে অনিন্দ্য সুন্দর-সস্তা সুখ? কোথায় গেল সে অনাবিল আনন্দ!?

©উষস চট্টোপাধ্যায়~ 

4 comments:

  1. কারেন্ট চলে গেলে কখন আসবে সেই অপেক্ষায় পুরো সন্ধ্যা কেটে যেতো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম, ভালো লাগল তোর কমেন্ট পড়ে, পাশে থাকিস!🙏🏼

      Delete
  2. কখন কারেন্ট আসবে সেই অপেক্ষায় সন্ধ্যা কেটে যেতো।

    ReplyDelete