Wednesday 26 May 2021

এত বছরের সামাজিক আন্দোলন ও একটি মেয়ে ...


#এত_বছরের_সামাজিক_আন্দোলন_ও_একটি_মেয়ে:

যদি তোমার মনে হয় 'এই জীবন চাই না'...

একথা অনস্বীকার্য যে, আমরা তো বেঁচে থাকি অন্যের মধ্যে দিয়েই। কোনও অস্তিত্বই তো কখনো হয় না সম্পূর্ণ একক অস্তিত্ব। কিন্তু, তা সত্ত্বেও কোনো কোনো অস্তিত্ব যেন একটু বেশিই অন্যের দৃষ্টি দ্বারা নির্ধারিত হয়। মানে, একটু স্পষ্ট করে বলি। একজন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বা গৃহবধূর জীবনে ঠিক কতটা থাকে অন্যের স্মৃতিচারণ করার মতো? কী থাকে সেই স্মৃতিচারণের কেন্দ্রস্থলে? তার মেয়েবেলা, রাঁধাবাড়া, অন্যের যত্নআত্তি আর সংসারটাকে ধরে রাখার নিত্যনৈমিত্তিকতা ছাড়া? যে নিত্যনৈমিত্তিকতা আবার ঠিক ইতিহাসের বিষয়বস্তু নয়, কোনোদিন সেইভাবে হয়েও ওঠেনি? পারিবারিকতাই তাই বহু সময়ে হয়ে ওঠে একজন মধ্যবিত্ত গৃহবধূর জীবনের প্রধান বেঁচে থাকার কেন্দ্র, পরিচিতির কেন্দ্র। তবু, যদি সহজ করে বলতেই হয়, তবে মনে কর, এটা ৭০এর দশক, তুমি একজন বাঙালি নারী কিন্তু তোমার না আছে সেরকম কোনো তথাকথিত শিক্ষা, শুধুমাত্র ২-৪টি ক্লাস পড়াশোনা, গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র ছড়িয়ে প্রশাসনের কড়া নজরদারি। এলাকা ছাড়লে তুমি ভালো ভবিষ্যতের আশায় যেখানে তোমার অন্যান্য বোনেরা থাকে। সেখান থেকে তুমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে জড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক কাজে, যা কিনা তোমার চোখে ন্যায়সঙ্গত অধিকারের লড়াই মনে হয়েছিল! ধরা পড়ে মারাত্মক মার, লাঞ্ছনা ও কত কিছুর শিকার হলে তুমি, অর্ধমৃত অবস্থার থেকে প্রান বাঁচাতে যা মনে হয়েছে তাই করেছ তুমি।

তুমি পালিয়ে গেলে সেখান থেকেও, কারণ অর্ধেকের বেশি বন্ধু হয় মারা গেছে নয়তো জেলে ঢুকেছে, নয়তো তারাও কোথাও পালিয়েছে। কিছু স্বল্পবয়স্ক তোমার আত্মীয়স্বজনেরা শক্তিশালী সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার বৃথা স্বপ্ন দেখে, আসলে তাদের নিজের প্রানটুকুও তারা ফেরত আনবে কিনা জানেনা!

এই বিদেশ বিভুঁয়ে তোমার কোনো যোগ্যতা নেই যে তুমি শিক্ষিত সমাজে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ পাবে বা করবে! তুমি নিজের মতো করে চাইলে কোনো ছোটোখাটো কাপড় বা অন্য কিছুর ব্যবসা করতে। কিন্তু ব্যাগড়া দিল প্রশাসন, এবং কপালে জুটল আরও লাঞ্ছনা, তোমার সমস্ত জিনিস লুঠতরাজ হতে লাগল!

তবু কিছু পরিমাণ তুমি সঞ্চয় করতে শিখলে, এখান সেখান থেকে, এবং সবচেয়ে বড় কথা, তুমি আলাদা করে সরিয়ে রাখতে শিখলে ওইসব বাবুদের চোখে পড়ার আগেই!
এরপর তোমার বিচরন স্থান হল ছোটখাটো কাপড়ের দোকান থেকে আসবাব; পিঁড়ে, মোড়া, ঘটি, বাসন এইসব। এইগুলোতে তুমি মনোনিবেশ করলে। এরপর তুমি আরেকটু গুছিয়ে ব্যবসা করলে, যাতে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা সহজেই করা যায়!
তুমি এক পয়সা কারুর থেকে ধার করোনি, এবং তৎকালীন মহাজনের কাছ থেকে ধার পাওয়া এত সহজ ব্যাপার ছিল না।

তুমি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছ, ২০ ঘন্টা কাজের জন্য খরচ করেছ তুমি। তোমার সন্তান আছে, যাকে ভালো কোনো স্কুলে তুমি পড়াতে চাও, যার জন্যে লাগবে টাকা! কোনোরকম সরকারি অনুদান বা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ, কেউ স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু দেখে না!

দেখবে, কিভাবে ১০ বছরের মধ্যে তোমার জেলায় যত ধনী আছে, তাদের সমতুল্য তোমার বয়স বেড়ে চলেছে তবু ধনবৃদ্ধি হচ্ছে না, কিন্তু কেউ জানবে না এই ব্যাপারে, এমন ভাব করবে যে তুমি কেউ নও, তোমায় পাত্তা না দিয়ে! তুমি রাস্তা দিয়ে আগের মতোই চলবে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে, তুমি নিজের ছেলে কেও হয়তো পড়তে পাঠাবে, নামজাদা কোনো স্কুলে।

আমি গেছিলাম সেই এক মহিলার সান্নিধ্যে, তার বাড়িতে, ঐ চরম পরিস্থিতির মধ্যেকার, সমস্ত কথা শুনেছিলাম মন দিয়ে, উনি বলেন, "যদি তুমি করবে বলে ঠিক কর, তাহলে এমন কোনো শক্তি নেই যা তোমায় বাঁধা দেবে, কারণ তুমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করছ।" তিনি সবসময় ন্যায় এবং ধর্মের কথা বলতেন, কারণ তিনি একজন মা!

আসলে, এমন কোনো কিছুই নেই যা দিয়ে নিজের বা দশের অবস্থায় কোনো সুরাহা আনতে পারে, কিন্তু যেটা পারে তা হল, তোমার মনোভাব এত দৃঢ় করতে যাতে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির সামনে তুমি ভেঙে না পড়। এভাবেই এক সংগ্রামের দিকবদল হয়, কিন্তু তা যাতে মানুষের কাজে লাগে, সেটাই দেখার, নিজের অবস্থা দিয়ে শিখতে হয় ...

শুধুমাত্র কাজের জন্য প্ল্যান করা নয়, প্রত্যেককে নিজের প্রয়োজনে লাফিয়ে উঠে দৌড়োতে হবে। এমন কংক্রিটের মতো শক্ত নিজের লক্ষ্য স্থির কর, যা ভেঙে ফেলা অসম্ভব!


সমাপ্ত!

©উshaস~


ফটো ক্রেডিট: @toniespadas, #african_portraits

2 comments:

  1. যদি তুমি করবে বলে ঠিক কর, তাহলে এমন কোনো শক্তি নেই যা তোমায় বাঁধা দেবে, কারণ তুমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করছ। er theka valo kono line nai nijer confidence boosting er jonno..

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো লাগল,তোর কমেন্টে, 😊🌼

      Delete