Thursday, 30 September 2021

১৯৩৩ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!


১৯৩৩, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!

#চতুর্থ_এপিসোড #৪থ_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৪থ_ভাগ



এখন আসে ১৯৩৩ সাল, ১ লা জানুয়ারী তে জার্মান সংবাদপত্র (Frankfurter Zeitung) ফ্রাঙ্কফুর্টার জেইটুং ঘোষণা করেছিল যে,- The mighty nazi assault on the democratic state has been repulsed অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী নাৎসি আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে এবং (Vosicha Zaitong)ভোসিচা জাইতং ঘোষণা করে যে,- The republic has been rescued! মানে প্রজাতন্ত্র কে উদ্ধার করা হয়েছে! আর মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসাবে বসানো হবে ...
এটি কোন দুর্ঘটনা নয়। আমি মনে করি ১৯৩৩ সালে যখন ওয়েইমার প্রজাতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটেছিল তখন এটি তাদের একটি ছোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। রক্ষণশীল অভিজাতরা, যারা ভেবেছিলেন এখানে তাদের সুযোগে হিটলারকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে, তারা তাকে হেরফের করা থেকে সাহায্য করতে পারে এবং তাদের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য  করবে যা তারা কোনভাবে ১৯১৯ সালে হারিয়েছিল।

অন্যদিকে, ১৯৩৩ সালের শুরুতেই হিটলার 'মেইন ক্যাম্পফ' থেকে রয়্যালটি বাবদ এবং সমর্থকদের কাছ থেকে উপহারগুলির মাধ্যমে যে জীবন অতিবাহিত করছিলেন, তা ছিল বেশ আরামদায়ক। প্রকৃতপক্ষে একজন কোটিপতির মতো, যা ছিল ইতিমধ্যে তার সমকালীন জার্মান জনগনের তুলনায় কল্পনার অতীত।
তার বাড়ি মিউনিখের একটি ফ্যাশনেবল অংশে একটি বড় অ্যাপার্টমেন্টে ছিল, তার পরিবহন ছিল চালকচালিত মার্সিডিজ লিমোজিন, তিনি নিজে কখনো গাড়ি চালানো শেখেননি। পার্টির সদর দপ্তর ছিল আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় প্রাসাদসম। ১৯৩০ সালের কর্মী ৫৬ জনের থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭৫ জন। তিনি দুপুরের আগে খুব কমই বিছানা থেকে বেরোতেন এবং বাভারিয়ান আল্পসে কেনা শ্যালে বা কাঠের তৈরি অট্টালিকা তে প্রায়শই ছুটি কাটাতেন। তাই তার জন্য জীবন অনেকের মত একেবারেই নয়,
তার সহকর্মী জার্মানদের মতোন তো কোনোভাবেই নয়। কেউ দাবিও করতে পারেনা যে তারও জীবন খারাপ চলছিল ঐ সময়ে, এবং তারপর এক সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায়, জানুয়ারী ৩০, ১৯৩৩ সালের পর থেকে এটি আরও ভালোতে পরিণত হয়ে গেল!
রাষ্ট্রপতি পল ভন হিন্ডেনবার্গ তাকে চ্যান্সেলর পদে বসানোর জন্য শপথ গ্রহণ করান। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের আশেপাশের লোকেরা অনুভব করেছিল যে তারা হিটলার ব্যবহার করতে পারে এবং
নাজিদের সমর্থন ব্যবহার করে যে কোনো কার্যসিদ্ধ করবে। ওরা ভেবেছিল যে তারা তাদের ব্যবহার করে একটি রক্ষণশীল কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং তারপর তারা তাদের থেকে মুক্তি পাবে। অবশ্যই তারা যে মারাত্মক ভুলটা করেছে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি, হিটলার ঠিক একই জিনিস ভাবছেন এবং তিনি তাদের থেকে পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছেন। আমি মনে করি হিটলারের মতো মানুষের সাথে সাধারন মানুষের ভুলের অনেক হিসেব-নিকেশ আছে, যাকে বলে 'হিউম্যান এরর'। হিটলার দীর্ঘদিন ধরে যা ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছিলেন তা বহাল রাখার শপথ করেছিলেন প্রজাতন্ত্রের আইন এবং সংবিধান মেনেই। এদিকে সাপ্তাহিক নিউজ রিল যা প্রপোগান্ডা ছড়াতে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিল, তা সারা জার্মানি জুড়ে দেখানো হয়, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছয়টি গল্প নিয়ে তা গঠিত। সেখানে একটি স্কি জাম্প, ঘোড়দৌড় এবং একটি ঘোড়া শো তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যাডলফ হিটলারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটির ষষ্ঠ এবং চূড়ান্ত বিষয় ছিল ঐ রিলের।
এমন টা তখন জার্মানি তে প্রচার করা হয় যে, 'জার্মান জাতীয় আন্দোলনের নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর করা হয় এবং বার্লিন তার বিজয়ের উদযাপনে বন্য হয়ে যায়। বার্লিন নাইটদের মতো টর্চলাইটের(মশাল) কুচকাওয়াজ, সমর্থকরা রাস্তায় এবং ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের মধ্য দিয়ে মিছিল করে তাঁর বিজয়কে স্মরণ ও উদযাপিত করে,' ইত্যাদি!

হিটলারের নিয়োগ কোন অলৌকিক ঘটনা ছিল না, যদিও এটি নিজের সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করেছিল, তিনি নিজের নিয়তির সাথে আপসহীন, একজন অপ্রতিরোধ্য মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন।
কিছুই না, এটা একটা জরাজীর্ণ, লজ্জাজনক, ব্লান্ডারে পরিণত হয়েছিল! ওয়েইমার সংবিধানে চ্যান্সেলরের পদ মন্ত্রিসভা চেয়ারম্যানের চেয়ে একটু বেশি ছিল এবং সরকারী সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার ভোটে নিতে হতো। এত চতুরতার সাথে তারা সব গোছগাছ করেছিল, যেভাবে তারা ভেবেছিলেন প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং তার উপদেষ্টারা হিটলারকে রাজি করেছেন যে নাৎসিজম কেবিনেটকে মাত্র তিনটিতে সীমাবদ্ধ করতে এবং ভন পাপেনকে তার ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ করতে। এর মানে হল যে পাপেন সবসময় মন্ত্রিসভায় ৮-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং দুই মাসের মধ্যে পাপেন বলেছিলেন, "We will have pushed hitler so far into a corner that he will squeak অর্থাৎ আমরা হিটলারকে এতদূর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব যে সে চিৎকার করে গুটিয়ে যাবে", কিন্তু সময় অন্য কথা বলছিল...

হিটলার কখনও অসাংবিধানিকভাবে কাজ না করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, নাৎসিরা একটি বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধ্বংসস্তূপে উঠেছিল। আমি মনে করি ভোটারদের সাফল্যের দিক থেকে যারা হিটলারকে ক্ষমতায় এনেছে এবং যারা জার্মানদের মধ্যে ভোটার ছিল তারা, তার স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কাছে এককথায় হোস্টেজ, সমর্পিত বা বাধ্য হয়েছিলেন, তা আসলে (Alfred Hugenberg) আলফ্রেড হুগেনবার্গের মিডিয়া সাম্রাজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম সংস্থাগুলির দ্বারা, তারা ঐসব মাধ্যমকে সমর্থন করেছিলেন, ওরা যা কিছু খবর বানিয়েছে তাই আপামর জনসাধারণ দেখতে বাধ্য হয়।
এটা সত্যিই যে হিটলারের দল এবং তার এজেন্ডার জন্য হুগেনবার্গের সমর্থন বিশেষ ভুমিকা পালন করে, আমি বিশ্বাস করি যে এটি ৩২ থেকে ৩৩ এর মধ্যে তার প্রচারণার সাফল্যের জন্য একটি সিদ্ধান্তমূলক পার্থক্য তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তার ক্যারিশমা হিসাবে যা জানি, তারও উত্থানের জন্য মিডিয়ার দায় অনস্বীকার্য। হিটলারকে অনেক লোকের সত্যিই বেশ হাস্যকর লেগেছিল, অনেকে তাকে খুব একটা গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। অবশ্য সেই মানুষটা, মানে হিটলার, খুব ভালো ভাবে জানত, কিভাবে জনতাকে বশ করতে হয়, তার কাছে ছিল শব্দের, বক্তৃতার জাদুকাঠি, যার ছোঁয়ায় লোককে বশীভূত করতে পারত তার কথায় ও যুক্তিতে।
এমন চরম পলিটিক্যালি কারেক্টনেস এর কথা যে কেউ ভাবতে বাধ্য হবে, "You would think that the end of the world is coming, proclaiming the dawn of a new nation but calling on all not to let Germany forget what she had suffered at the hands of her enemies!" অর্থাৎ এই যে পৃথিবীর শেষ দিনে এসে একটি নতুন জাতির কাছে ভোরের ঘোষণা করছে, সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে জার্মানিকে যাতে ভুলে না যাওয়া হয় যে কিভাবে সে তার শত্রুদের হাতে এবং কতটা নিষ্ঠুর আচরণ সে ভোগ করেছিল!

জানুয়ারিতে চ্যান্সেলর হিসেবে তার নিয়োগের দুই দিনের মধ্যেই হিটলার একটি নির্বাচন ডেকেছিলেন যাতে নাৎসিরা রাইকস্ট্যাগে তাদের অবস্থান উন্নত করেছিল। যখন নতুন সংসদ একত্রিত হয়, হিটলারের (enabling act)এনাবলিং অ্যাক্টকে আইনের দিকে ঠেলে দিতে কোনও অসুবিধা হয়নি, চ্যান্সেলরকে ডিক্রি দিয়ে রাইকস্ট্যাগ এবং শাসনকে বাইপাস করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা হিন্ডেনবার্গের অধীনে কর্তৃত্ববাদী একনায়কত্বের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, তা হিটলারের অধীনে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। সাংবিধানিক সংকট পতনের হাত থেকে বাঁচতে একটি প্রজাতন্ত্রের জোটের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, অ-সংসদীয় চ্যান্সেলরদের সরাসরি নিয়োগ বা হিন্ডেনবার্গের হিটলারের প্রতি ঝোঁক পুরো বিষয়টিকে চরম ডানপন্থী দিকে নিয়ে যায় ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

Tuesday, 28 September 2021

খুশির হাসি ...


খুশির হাসি:-

আমার সাথেই এগুলো হতে হয়, সকাল থেকে খালি উল্টো-পাল্টা ক্লায়েন্টদের প্রেশার সামলাতে হচ্ছে, তার ওপর আজকে আমার সিনিয়রও ডুব মেরে বসল। যাই হোক, আমার যতগুলো ক্লায়েন্ট ভিজিট ছিল, সেই গুলো তো করতেই হবে উল্টে তারও দু-চারটে ভিজিটে যেতে হবে! চাকরি তো করি না, যেন ওদের কেনা গুলাম...

এসব ভাবতে ভাবতে, ডায়েরি টা উল্টে-পাল্টে একটু দেখে নিতে গেলাম। সব ঠিক আছে কিনা, তা আমার কপালে একস্ট্রা ৩টে ভিজিট বরাদ্দ হল! আমি স্যাম্পল কালেক্টর, এক বেসরকারি সংস্থার সাথে যুক্ত। লোকজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে, তাদের রক্ত, মল, মূত্র, কফ ইত্যাদি কালেক্ট করে বেড়াই। এমনিতেই ফোন নং ছড়িয়ে আছে এপাড়া সেপাড়াতে ল্যাম্পপোস্টে বা ব্যানারে। রোজ মিনিমাম ৫টা কল চলেই আসে আর্জেন্ট বেসিসে! সেইদিন ও এল।
সেই সকাল বেলা বাড়ির থেকে বেরোই, কিছু টিফিনের জোগাড় করতে পারি না। রাস্তার চায়ের দোকান বা ছোটোখাটো ধাবাই ভরসা। তাই ডায়েরি খুলে ছক কষে নেওয়া যে কোনটিতে কখন যাব!

সব ঠিক আছে, কিন্তু একটা মজার ব্যাপার চোখে পড়ল! লাস্ট নামটা রয়েছে একটি খুশি নামের ক্লায়েন্টের! একটু হলেও খুশি যে হইনি তা না, নামটিতেই যেন আনন্দ উথলে পড়ছে। কি জানি, যার নামেই এত আনন্দ সে নিজে কত না রূপসী হবে। তো যাই হোক, মনে মনে নিজের সিনিয়র কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সারাদিনের কাজের ম্যাপিং করে ফেললাম। কাজগুলোও হয়ে গেল ভীষনই সুষ্ঠু ভাবে! হতে পারে মনের মধ্যে একটা স্পৃহা কাজ করছিল, যে কখন খুশি নামের রূপসীর সান্নিধ্যে আসতে পারি। এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!

ঠিকানা যা দেওয়া আছে, সেটা ঠিক করে মিলিয়ে নিলাম, দিয়ে কলিং বেল বাজালাম। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এল! এসে বলে;
--হ্যা কি ব্যাপার?
-না, আমি সুশ্রুত থেকে এসেছি। কারুর বোধহয় ব্লাড স্যাম্পল নেওয়ার ছিল...
বলতেই, সাথে সাথে এত আতিথেয়তার সাথে ভিতরে নিয়ে গেল যে বলার নয়। কিন্তু আমার মনটা কেমন করছে! যিনি আমায় সাথে করে নিয়ে গেলেন, তিনি ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী, হিজড়ে। মনটা স্বাভাবিকভাবেই কেমন মুষড়ে পড়েছে। কত কি না আশা করেছিলাম, কিন্তু শেষ অবধি এই! যাই হোক, ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখি সেকি তোড়জোড়, পুরো বাড়ি টা যেন সাজানো হয়েছে। বেলুন, ফুলের মালা, আরো কত কী! আমি আঁটোসাঁটো হয়ে বসলাম একটা দেখিয়ে দেওয়া সোফায়। দিয়ে একজন সুস্মিতা নামের আমার সামনে মিষ্টির থালা সাজিয়ে ধরল, বলল;
--কোনটা আপনার পছন্দ, একটা মিষ্টি খেতেই হবে আপনাকে।
আমি ইতস্ততঃ করছি দেখে, যিনি ভিতরে এনেছিলেন, মানবী, তিনি বলে উঠলেন;
--আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, কেননা আমাদের সেলিব্রশন এর সময়, একজনের জন্মদিন তাই!
আমিও সাথে সাথে একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে বললাম
-নানা, এতো খুব ভালো ব্যাপার!
বলে একটা কাজু বরফি তুলে নিলাম, আর নিজের কাজের তাড়া দেখিয়ে বললাম;
-যদি, কার স্যাম্পল নিতে হবে একটু ডেকে দেন তো...
সঙ্গে সঙ্গে মানবী বলল,
--হ্যা হ্যা একদম ভুলেই গেছি, এই সুস্মিতা একটু খুশি কে নিয়ে আয়তো..
আমি ততক্ষণে মিষ্টি টার সদ্ব্যবহার করে ফেললাম। করে জল খাচ্ছি তখনই ঘরে ঢুকল ৩কি সাড়ে ৩ বছরের একটি ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে! সবার আপ্যায়ন দেখেই নিশ্চিত করা গেল, যে এই সেই খুশি!
কী সুন্দর একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে, তো তার সাথে কি আর বন্ধুত্ব না করে আর পারা যায়। ও আসতেই সবার মধ্যে একটা উৎফুল্লতা, উৎসাহ চোখে পড়ল! এমনিতেই খুব ভালো ব্লাড কালেক্ট করি আমি, ওকেও বললাম;
- এই তো, এইবার এই হাতটা চেপে পাম্প করতে হবে, তোমার কোন কার্টুন টা সবচাইতে পছন্দ?
ও বলল; --বার্বি ডল! আমার খুব পছন্দ,
আমি বললাম; - ওরে বাবা, তা আজকে বার্বি ডলের কোন এপিসোড দেখিয়েছে টিভিতে...

কথায় ভুলিয়ে ব্লাড কালেক্ট করাই ছিল আসল কাজ, তা সম্পন্ন হয়েছে! দিয়ে ওকে বললাম যে;
-হয়ে গেছে, ব্যথা একটুও বুঝতে দিইনি, তাইনা...
ও হাসি মুখে সরে গেল। মানবী বলে ওঠে যে;
--কবে এই রিপোর্ট টা, পাওয়া যাবে?
-এই তো, এখনই স্যাম্পল টা অফিসে পাঠিয়ে দেবো, কাল কে দুপুরের মধ্যে বিল দেখিয়ে রিপোর্ট টা কালেক্ট করে নিলেই হবে। তা বার্থডে টা কার ছিল জানতে পারি কি?
--এ মা, আজকে খুশি-রই বার্থডে, সরি বলা হয়নি!
-না না, সে ঠিকআছে, তা ওর বয়স কত হল?
--আমাদের জন্য তো একদিন, আজই ওকে ভোরে পাওয়া গিয়েছে এক ডাস্টবিন থেকে, আমাদের লোকেরা ওকে নিয়ে আসে, ও আসলে আমাদেরই মতোন তো!

কথাটা যেন তির হয়ে বুকে বিঁধলো, ঐ টুকু ফুলের মতো বাচ্চাকেও কে ছেড়ে দিতে পারে? দুনিয়ার লোকেরা কি পাশবিক যে হয়ে গেছে, তা আর বলার নয়! এদের কেই এখনো সমাজ সঠিক মর্যাদা দেয় না, আর ওরাই কিনা বাঁচিয়ে তুলছে একটা নিষ্পাপ প্রান!

মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল, সব বুঝিয়ে দিয়ে যখন বেরিয়ে এসছি, তখন মনটা খচখচ করতে লাগল। সামনের দোকান থেকে একটা এক'শ টাকার ক্যাডবেরি কিনে আবার দরজার কলিং বেল বাজাই, যথারীতি মানবী দরজা খোলে। ওর হাতে ক্যাডবেরি টা দিয়ে বলি যেন খুশি কে দেয়। ওর মুখে প্রশস্তিমূলক হাসি। ফিরে যাওয়ার পথে ভাবতে থাকলাম খুশি কে নিয়ে, ও এখন ভালো লোকেদের সাথে ই আছে!...


©উshaস চttopaধ্যায়~ 

Thursday, 23 September 2021

১৯৩২ এর বিশ্ব পরিস্থিতি!


 সাল ১৯৩২, এর বিশ্ব পরিস্থিতি!


#তৃতীয়_এপিসোড #৩য়_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৩য়_ভাগ

২৬ শে ফেব্রুয়ারি হিটলার (Brunswick) ব্রান্সউইকের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি এবং পরিমাপের অফিসে একজন সরকারি কর্মচারী হিসাবে তার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি ব্যবস্থা, যা তাকে টেকনিক্যালি অস্ট্রিয়ান-জার্মান নাগরিকত্ব দিয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেছিল। ১৯৩২ সালে, ১৩ মিলিয়ন জার্মানরা নাজিদের পক্ষে ভোট দিয়েছিল কিন্তু হিটলারকে ক্ষমতায় আনার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না। তিনি শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় চ্যান্সেলরশিপ অর্জন করতে পারেননি, তাকে সেদেশের মূর্খ নাগরিকদের কিছু ব্যবসায়ীক সদস্যরা, যাদের অহংকার ও নির্বুদ্ধিতা তাদের প্ররোচিত করেছিল, অনেকের কাছে এই 'ভালগারিয়ান'কে একনায়কতন্ত্র বা ডিকটেটরশিপ এর পরিচালনা করতে। বলতে হয় যে, সেই সময় এমন সব পুরানো পরিবারের লোকজন ছিল যারা হিটলারকে ভেবেছিল শুধু একটু লাফিয়ে, লাফিয়ে, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে পারে, তার বেশী কিছু না! ওরা তাকে ততদিন সিরিয়াসলি নেয়নি যতক্ষণ না খুব দেরি হয়ে যায়।

"We engaged him for our own ends/আমরা আমাদের নিজের প্রয়োজনে তাকে নিযুক্ত করেছি", এমন মন্তব্য ছিল (Franz Yosef Hermann Michael Mario Von Pappen) ফ্রাঞ্জ ইয়োসেফ হারমান মাইকেল মারিও ভন পাপ্পেনের। আভিজাত্য এবং সম্পদে জন্মগ্রহণ করা, ভন পাপেনকে চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
বার্লিনে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত অবিশ্বাস্যতার সাথে তার সাথে দেখা করেছিলেন। (Andre Francois)আন্দ্রে ফ্রাঙ্কোয়া একবার বলেছিলেন যে, "Pappen was taken seriously by neither his friends nor his enemies অর্থাৎ পাপেনকে শুধু তার বন্ধুরা কেন শত্রুরাও, মানে কেউই গুরুত্ব সহকারে নেয়নি।" সেই পাপেনের মতানুযায়ী, "German people desire nothing more than to live in peace in order to turn all the energies which they possess to the great problems which will have to be solved to bring about reconstruction of the world after the war অর্থাৎ, জার্মান জনগণ শান্তিতে বসবাস করা ছাড়া আর কিছুই চায় না যাতে তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে বড় বড় বিষয়গুলি কে মীমাংসার দিকে  পরিণত করে যা যুদ্ধের পর বিশ্বের পুনর্গঠন আনার জন্য সমাধান করতে পারে।"

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিন্ডেনবার্গের কাছে হিটলারের চরম পরাজয়ের পর সেই পাপেনই, নতুন নির্বাচন ডেকে এনেছিলেন। মানুষজন সাধারণ নির্বাচনে সমর্থনের দিক দিয়ে নাজির পতন মোটামুটি অব্যাহত ছিল, যদিও তারা আন্দোলনের আবেদনে স্পষ্টভাবে তুঙ্গে তুলে ধরেছিল। "We won't get to an absolute majority this way/আমরা এভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব না', (Goebbels) গোয়েবলস তার ডায়েরিতে একথা স্বীকার করেছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রুশিয়াতেও আবার নির্বাচন হয়েছিল এবং নাজিরা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়, শক্তি নিয়ে প্রচার চালায় এবং প্রথম রাজনৈতিক পটভূমিতে আসে একটি বিমান, ঠিক যেন আকাশ থেকে নেমে আসছেন, কোনো দেবদূত। হিটলার তার দলের প্রতিনিধিত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়, যেটা ১৯২৮ সালে মাত্র ৬ সিট বা আসন পেয়েছিল, সেখান থেকে ১৬২ আসনে উপনীত হয় ১৯৩২ সালে। অন্যান্য রাজ্য যেমন (Bavaria, Wittenberg, Anhult) বাভেরিয়া, উইটেনবার্গ, আনহল্ট এই ধারা অনুসরণ করেছিল। "it's a fantastic victory, এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়", গোয়েবলস বলেছিলেন।
তাদের সাফল্যে হবু নাৎসিদের মধ্যে একজন (Richard J Evans) রিচার্ড জে ইভান্সের বাক্যে প্রকাশ করেছে, "A rainbow coalition of the discontented অর্থাৎ অসন্তুষ্টদের একটি রামধনু জোট রুপে জয়লাভ সাধিত হয়।"

১৯৩২ সালের মধ্যে (SA)এস এ, বা (Sturmabteilung) ব্রাউন শার্ট নামে যারা পরিচিত ছিল, তারা শান্তি বন্দোবস্তের অধীন অনুযায়ী অনুমোদিত ছোট সেনাবাহিনীর এক জনের চেয়ে চার জন, অর্থাৎ আগের থেকে এত বেশি হয়ে গেছিল। (Reichsbanner) রাইক্সব্যানার যা কিনা সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের আধাসামরিক শাখা এবং আধা সামরিক ভেটেরান্স বা প্রবীণ দের সংগঠনে ৩০০,০০০ সেনা, শক্তিশালী (Stalhom) স্টালহোমেরও একই অবস্থা ছিল। ইউনিফর্মের মধ্যে ৪০০,০০০ (Stormtroopers) স্টর্মট্রুপারও ছিল। এখন কল্পনা করা কঠিন যে এই ধরনের 'বেসরকারি সেনাবাহিনী' সহ্য করা ও পালন করা হচ্ছিল যা, এতো পরিপক্ক গণতন্ত্রে প্রশংসা কম হলেও কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।
যা দেখা গিয়েছিল, তা হল গণতান্ত্রিক ভোটে এর প্রভাব! যেমন মানুষজন যারা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছিল, অতীতের গুন্ডাদের যারা শীতলতার সাথে মারপিট, দাঙ্গা হাঙ্গামা করত, তাদেরকে টপকে কিভাবে তারা ভোট দিয়েছিল, তা মূল্যায়ন করা রীতিমতো কঠিন।
ভয় ইতিমধ্যেই সীমান্তের পারে লোকবল পাঠাচ্ছিল। ১৯০১ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে জার্মানিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে ২৫ জন নোবেল বিজয়ী ছিলেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন মাত্র পাঁচজন।
বেশিরভাগই (national socialism) ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের বা জাতীয় সমাজতন্ত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, এইরকম আটজন রিফিউজি বিজ্ঞানী (Manhattan Project) ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, পরমাণু বোমা তৈরি করতে।

১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে (Geneva) জেনেভায় শান্তি সম্মেলন তৈরিতে ছয় বছর লেগেছিল এবং এটি প্রায় সার্বজনীন ভাবে আশাবাদী ছিল যে এতে শান্তি সুরক্ষিত হবে। সাধারণের কাছে এমনই একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং যতই সময় যায়, ক্রমবর্ধমান ভাবে ভঙ্গুর বলে মনে হচ্ছিল। প্রায় বিশ্বব্যাপী ৬৪টি ভিন্ন দেশের প্রায় সার্বজনীন প্রতিনিধিরা 'জেনেভার কনফারেন্স হলে' এসেছেন বৈঠকের জন্য যা আশা করা যায় বিশ্বব্যাপী অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োগ হ্রাস করাবে। মিটিংয়ে তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে আবেদনে উৎসাহিত হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ স্বাক্ষর নিয়ে গঠিত হয় মহাদেশ হিসাবে, ১৮ মাস ধরে তারা একে অপরের সাথে বিতর্ক করেছিল। আর ঠিক তারপরেই, হিটলার তার প্রতিনিধিদলকে বের করে নেয়, যা পুরো ব্যাপারটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
লক্ষ লক্ষ অনুগত অনুসারীদের নেতৃত্বে তাদের বলিষ্ঠ নেতা, অ্যাডলফ হিটলার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন থেকে সরে আসছেন। হিটলার লিগ অফ নেশনস থেকে পদত্যাগ করলে বিশ্বের দূর্বল স্নায়ু ভীত হয়ে পড়ে। অনেক কিছুই আছে যেমন, যদি এটা করা যেত, বা ওটা করলে হয়তো হতো না, কিংবা এটা অমুক জানতেন, বা এটি অবশ্যই বন্ধ করা যেত ইত্যাদি, ইত্যাদি! এখন এইরকম হাজার একটা জিনিস থাকবে! কিন্তু আসল জিনিসটি হল যখন আপনি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভাঙ্গতে শুরু করেন, তখন যদি একজন ব্যক্তি কিছু নিয়ে গায়ের জোয়ারি করে পালিয়ে যায় বা একটি দেশ কিছু নিয়ে পালিয়ে যায় তা অন্যদেরও উৎসাহিত করে। (Aldous Huxley) অ্যালডাস হাক্সলির Chilling Future Vision/চিলিং ফিউচার ভিশন নামে বইয়ের সিরিজ ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি এটিকে Brave New World বা সাহসী নতুন বিশ্ব বলেছিলেন ...

(ক্রমশ)

©উshaস চttopaধ্যায়~

Tuesday, 21 September 2021

বোধের বোধোদয় ..


 বোধের বোধোদয়:-


মার্কেটের শো রুম বন্ধ করে এক্সাইড মোড়ে সিগন্যালের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বাস, গাড়ি আসছে আর যাচ্ছে। সিগন্যালেও থামার কোনো নাম নাই কারণ বাস ভর্তি যাত্রী। সবাই পুজোর ছুটিতে যার যার বাড়ি যেতে ব্যস্ত! দশমীর একদিন পরেই ঈদুল ফিতর, ফলে ব্যস্ততা আর ও বেশি! আর আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যস্ত এই সড়কের যেকোনো একটা বাসের নিচে ঝাঁপ দেবো বলে অপেক্ষা করছি!

নতুন জয়েন করেছি মাল্টিপ্ল্যানের একটা কম্পিউটারের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে। মাত্র দশ দিন হয়েছে চাকরীর। বাড়ির বড়ো ছেলে হিসেবে আমার উপর এখন সংসার চালানোর দায়িত্ব!

বাবা ব্যবসায় লস খেয়ে পথে নেমেছেন অনেকদিন। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াও আমার পক্ষে আর সম্ভব হল না। তাই লেখাপড়া ছেড়ে কাজে নেমেছি সংসারের চাকা ঘোরাতে!

দশদিন জয়েনের চাকরী তাই মাইনে হয় নি আমার, আর কদিন পরেই পুজো! ছোটো ছেলেটা টুতে পড়ে আর বোন সামনে টুয়েল্ভ দেবে! বোন যতই বড়ো হয়ে যাক, বায়না তো একটু দাদার কাছে করবেই, এমনিতে বোঝদার হলেও ছোটো বোনটার পুজোর আগের থেকেই বায়না এই বার লাল রঙের একটা কুর্তি লাগবেই, আর তার সাথে আমার ছেলের আবদার পাঞ্জাবী! বড়দের না হয় বোঝাতে পারা যায় তবে ছোটদের?

বাড়িতে গেলেই ছোটো ছেলেটা আমার পিছু পিছু ঘুরবে আর আস্তে আস্তে করে কানের কাছে এসে বলবে "বাবা, আনবে কবে?" তাকে বলা হয়েছে, সেলাই করতে দেওয়া হয়েছে! পুজোতে অনেক মানুষ জামা কাপড় বানায় তাই জামা দিতে দেরি হচ্ছে কিন্তু অষ্টমীর আগেই নতুন পাঞ্জাবী চলে আসবে; সাথে জুতো, বড়োদের জামাকাপড়, আমাদের পায়জামা, পাঞ্জাবী ইত্যাদি!

দোকান থেকে বাড়িতে গেলেই সে দৌড়ে আমার জন্যে জল নিয়ে আসে, খাতির যত্ন করে, মাথা টিপে দেয়, আর এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করবে, "বাবা, আমার পাঞ্জাবী?"

মোটামুটি সচ্ছল পরিবারেরই ছিলাম আমরা, কিন্তু আমার বাবার মানুষের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস আর খরুচে হাতের ফল খুব করে টের পাচ্ছি এখন! একটা পুজোতে নিজেরা কিছু গায়ে না দি, কিন্তু ছোটো ছেলেটার কথা ভাবতেই চোখটা ভিজে যাচ্ছে আমার!

দোকান মালিককে বলতেও লজ্জা লাগলো আমাকে কিছু টাকা এডভান্স দিন! মাত্র কয়েকদিন চাকরীতে ঢুকেই এখনই টাকা পয়সা এডভান্সে চেয়ে চাকরীটাই না যায় ভেবে তাকেও বলা হয় নি!

খালি হাতে বাড়িতে ফিরে ছেলেটার চোখের দিকে তাকাতে পারবো না! বড়ো মানুষ হলেও বুঝিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু বাচ্চা মানুষকে কেমন করে বোঝাই? লজ্জায় চোখে জল যেমন আসলো তেমনি গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেয়ার জন্যেও সাহসও এলো!

সাহস করে ঝাঁপ দেয়ার মুহূর্তে পেছন থেকে এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন, "এই যে একটু শুনুন!"

পেছন ফিরে দেখলাম ভদ্রলোকের গায়ে সাদা চেক শার্ট, শার্টের হাতা গোটানো, সুঠাম দেহ, দারুণ একটা পারফিউমের গন্ধ আসছে তার থেকে ভেসে! সাদা পাকা চুলের মানুষটা বললেন, "আসুন চা খাই! ঝাঁপ পরেও দিতে পারবেন, রাস্তাতো আর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে না!"

অবাক হয়ে ভদ্রলোককে দেখলাম! উনি জানলেন কিভাবে আমি ঝাঁপ দেবো?

ভদ্রলোক বললেন, "অবাক হচ্ছেন? তা এটা স্বাভাবিক! আমার জানার কথা না আপনি বাসের নিচে ঝাঁপ দেবেন! তবুও কেন জানি না, আমার মনে হলো আপনি ঝাঁপ দেবেন! আসুন, চা খেতে খেতে গল্প করি! এক্সাইড মোড়ে সিগন্যালের এই মালাই চাটা হেব্বি কিন্তু!"

চা হাতে নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, "বছর পঁচিশ আগে আমিও আপনার মতন অবস্থায় পড়েছিলাম! লজ্জায় আমিও গাড়ি খুঁজছিলাম ঝাঁপ দিতে! আচ্ছা আপনি ঝাঁপ দিলেন, তারপর? মারা গেলেন কিন্তু এরপর? আপনার পরিবারের কী অবস্থা হবে? মানে আপনার লাশ পোড়ানোর পয়সা কী আছে? সেটা থাকলে ছোট্ট ছেলেটার পাঞ্জাবী কেনাই হয়ে যেত, তাই না? পরে আরেক বিপদ হবে আপনার লাশ পোড়ানোর জন্যে মানুষের কাছ থেকে টাকা ওঠানো! সেটা আরো লজ্জার হবে তাই না? আবার ধরুন গাড়ির নিচে পড়লেন কিন্তু মরলেন না কিন্তু হাত পা কিছু ভেঙ্গে পড়ে আছেন তখন চিকিৎসা করবে কে? খরচই বা কোথায় পাবেন? বা কাজকর্মই বা করবেন কিভাবে?"

ভদ্রলোক কী করে জানলেন আমার ছেলের একটা পাঞ্জাবী লাগবে, ভাবতেই বললেন, "শুনুন! আমার ছেলেরও পাঞ্জাবীর জন্যেই আমি ঝাঁপ দিচ্ছিলাম সেদিন গাড়ির নিচে! লজ্জা লাগছিলো এই ভেবে একটা পাঞ্জাবী ছেলেকে কিনে দিতে পারবো না? তখন আমাকেও কেউ একজন থামায়! কে থামায় একদিন আপনিও বের করতে পারবেন। যান যান বাড়িতে যান! ছেলেকে বোঝান যে, এক পুজোতে পাঞ্জাবী গায়ে না দিলে কিচ্ছু হবে না! বেঁচে থাকুন! বেঁচে থাকলে পুজোর শপিং প্রতিদিন করতে পারবেন পরিবারের জন্যে! বেঁচে থাকাটা উপভোগ করুন! বেঁচে থাকাটা অনেকে আনন্দের! যান যান বাড়িতে যান! আর তারপরেও যদি মনেহয় আপনার স্বাধীনতা আছে ঝাঁপ দেওয়ার ব্যস্ত নগরীতে গাড়ির অভাব নেই!"

ভদ্রলোক চলে যাচ্ছেন! ভদ্রলোককে কেমন যেন খুব চেনা চেনা লাগছে আমার! তার সাথে আমার খুব গভীর সম্পর্ক আছে কিন্তু সেটা কী, তা আমি জানি না! আমার কাছে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন হচ্ছে! ঘোরের ভেতর আছি আমি!

আমি বাড়িতে ফিরি! ছেলে দৌড়ে এসে দরজা খুলে বলে, "বাবা, পাঞ্জাবী এনেছো?" তাকে জড়িয়ে ধরে বলি, "একদিন একটা পাঞ্জাবীর দোকান কিনে দেবো তোমাকে! আমি বাঁচি! আমি বাঁচলে তোরাও বাঁচবি!"

আমার ক্লাস টুতে পড়া ছোট্ট ছেলেটা এখন ডাক্তারি পড়ছে! আমি যে খুব বড়োলোক হয়ে গেছি তা না, তবে সচ্ছল হয়েছি অনেক! বোনটার বিয়ে দিয়েছি। আমার বাবা রোজ সকালে উঠে বাজারে যান, বাড়িতে এসে বারান্দায় চা হাতে কাগজ আর পত্রিকা পড়েন আর সংসার চালান আমার মা আর আমার গিন্নি! ছেলেমেয়েদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি কাজে যাই!

প্রায়শই আমি আমার অতীতের কথা ভাবি! প্রায় আমাকে সেদিন গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিতে বাধা দেয়া মানুষটার কথা ভাবি! কে ছিলেন তিনি? আয়নার সামনে মাঝেমাঝে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখি! আমি দেখতে ঠিক সেই মানুষটার মতন এখন! একদম সেই মানুষটাই আমি!

সাদা চেক, শার্টের হাতা গুটিয়ে দামী পারফিউম মেখে আয়নার সামনে দাঁড়াই, প্রায় সেই মানুষটাকে দেখতে! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি না হাসলেও আয়নার ভেতরে থাকা মানুষটা হাসে! হেসে হেসে বলে, "কী দেখলেনতো, বেঁচে থাকাটা কত আনন্দের?"

মাঝেমাঝে ভাবি, ভবিষ্যতের আমিই কী সেদিন আমাকে বাঁচাতে অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম, নাকি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো আমার বোধ?

©উshaস চttopaধ্যায়~

Tuesday, 14 September 2021

অবিস্মরণীয় মূহুর্তের দোষী ...


"অবিস্মরণীয় মূহুর্তের দোষী"


মঞ্চে উঠলেন অরুনা। এটি ছিল মাইসোরের একটি বিখ্যাত আর্টস কলেজের কোনো এক বিশেষ বর্ষপূর্তির শেষ দিন উদযাপন। অরুনা একজন নামকরা সমাজকর্মী। সে তার সামাজিক সেবার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেছে। সে ঐ কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী হওয়ায় তাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্যাকড অডিটোরিয়ামে সে মাইক হাতে নিয়ে তার বক্তব্য শুরু করল। "বন্ধুরা, সুপ্রভাত! এটি আপনাদের জন্য একটি বিশেষ দিন। আপনার তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সের আজ শেষ দিন। আপনাদের মাঝে কেউ হয়তো উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করেছেন, আবার আপনারা কেউ হয়তো ক্যাম্পাসের চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং পরীক্ষার পর যোগদানের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আপনার নিজ নিজ ক্ষেত্র নির্বাচন করার জন্য আমি আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আজ আমি বক্তৃতা দেওয়ার পরিবর্তে আপনাদেরকে একটি গল্প বলতে যাচ্ছি। এটি একটি বাস্তব গল্প যা ১০ বছর আগে ঘটেছিল। কোনো এক সময়ে এক কলেজে একদল শিক্ষার্থী তাদের চূড়ান্ত বর্ষের ব্যাচেলর ডিগ্রি করছিল। সেই দলের ভিড়ে ছিল দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অরুনা এবং নিকিতা। তারা স্কুলকাল থেকেই বন্ধু ছিল এবং তারা দুজন একই কলেজে স্নাতক হওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল। উভয়ই পড়াশোনায় এবং অতিরিক্ত ক্রিয়াকলাপেও দুর্দান্ত ছিল। অরুনা এবং নিকিতা দুজনেই তাদের পিতামাতার একমাত্র সন্তান ছিল। যদিও তারা প্রায় সব কিছুতেই সমান ছিল, কিন্তু নিকিতা অরুনার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল, বিশেষ করে পড়াশোনায়। স্কুলের দিন এবং কলেজের দিনগুলিতে, নিকিতা সবসময় অরুনার চেয়ে ভাল গ্রেড বা স্কোর অর্জন করেছিল। কমপক্ষে একবার নিকিতাকে পরাজিত করার জন্য অরুনা খুব চেষ্টা করেছিল। একবার, শুধুমাত্র নবম শ্রেণীতে ছাড়া অরুনা কখনোই কোনো বিষয়ে নিকিতার চেয়ে বেশি স্কোর অর্জন করতে পারেনি, তাও সেবছর কোনো উপলক্ষ্য ছাড়াই যখন নিকিতা অসুস্থ হয়ে পড়ে, এছাড়া আর কোনো বছর না।

তারপর এল ডিগ্রির বছর, যেহেতু এটি স্নাতকের শেষ বছর ছিল, তাই অরুনা জানত যে, সুযোগটি তার হাত ফস্কাতে চলেছে, নাও অর নেভার। সে ভীষনভাবে পড়াশোনা করেছিলো, কিন্তু মক্ টেস্ট পরীক্ষায় সে জানতে পেরেছিল যে নিকিতা অনেক এগিয়ে আছে এবং সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা দশজন রেঙ্ক হোল্ডারদের মধ্যে হতে পারে। অরুনা, নিকিতাকে পরাজিত করার উপায় বের করতে শুরু করে। সেই সময়ই সুযোগটা বেরিয়েও এল। এইরকম চূড়ান্ত সময়ে, নিকিতা এবং অরুনাসহ একদল ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলে গেট-টুগেদারের পর রাতের খাবারে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। গ্রুপের ছেলেরা দাবি করেছিল, যেহেতু এটি বর্ষের শেষ দিন, তাই তারা মদ্যপান করতে চায় এবং তারা একটি বার-কাম-রেস্তোরাঁয় গেলেই তারা যোগ দেবে, নচেৎ নয়। যেহেতু তারা একে অপরকে ভালভাবে চিনত, জানত, তাই মেয়েরাও রাজি হয়েছিল।

তারা তাদের রাতের খাবারের জন্য একটি ভাল হোটেলে গিয়েছিল এবং খাবার খেতেও শুরু করেছিল। তারা সেই দুর্দান্ত মুহূর্তগুলির ছবি তুলছিল। নিকিতা এবং অরুনার ছবি ও ছোট ভিডিও ক্লিপও নিতে শুরু করে। ছেলেরা বিয়ার অর্ডার করেছিল এবং তারা পান করতে শুরু করে। তারপর তারা মেয়েদের এই পানীয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেয়েরা তা প্রত্যাখ্যান করে। এইসময় ছেলেরা জেদ ধরে বসে, ছেলেরা মেয়েদের চ্যালেঞ্জ করে বলে, 'তোমরা সবসময় লিঙ্গ সমতার কথা বলো কিন্তু তোমাদের কখনো মদ খাওয়ার সাহস থাকে না। তোমাদের কোন আত্মনিয়ন্ত্রণ নেই এবং তোমরা ভয় পাও যে, একবার তোমরা এটি পেয়ে গেলে, এটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। তোমাদের যদি সাহস থাকে তাহলে এই রকম ভাবে অফার ফিরিয়ে দিতে না, অন্তত সাহস করো এটির স্বাদ নেওয়ার'। মেয়েরা একে অপরের দিকে তাকাল। নিকিতা গ্রুপের সবচেয়ে সাহসী হওয়ায় বিয়ারের বোতলটা হাতে নিল। অরুনা-ও তার সুযোগ হাতে নাতে পেয়েছে। সে উঠল এবং তার ফোনে ঘেঁটে সে বলল "আমার এক পিসি আমাকে স্কাইপে ইনভাইট করছে, অনেক দুরে থাকে, আমাকে নিতেই হবে কলটা"। সেই অজুহাতে সে ভিডিওটি চালু করে এবং একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করে যেখানে নিকিতা বোতল থেকে সরাসরি বিয়ার খাচ্ছিল এবং তার চারপাশের বন্ধুরা জোরে জোরে উল্লাস করছিল। নিকিতা কেবল একটি চুমুক নিয়ে বোতলটি ফেরত দিয়ে বলল "আমাদের সাহস আছে, তাই চ্যালেঞ্জ করবে না"। কিন্তু, ততক্ষণে অরুনা ক্লিপটা পেয়ে গিয়েছে। অরুনা প্রাথমিকভাবে ক্লিপটি মুছে ফেলার কথা ভেবেছিল। কিন্তু, সে এটা রেখে দিয়েছিল। দ্বিতীয় মক্ টেস্ট এর (চূড়ান্ত পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ আগে) ফলাফল দেখার পর, অরুনা নিশ্চিত হয় যে, সে কখনো নিকিতাকে হারাতে পারবে না। তারপর সে চরম সিদ্ধান্তটি নিয়ে নেয়। সে "অবিস্মরণীয় মুহূর্ত" ক্যাপশন দিয়ে ক্লিপটি তার বন্ধুদের কাছে পাঠিয়েছিল এবং তার পরে কি হবে তা আপনারা বিচার করতে পারেন। ক্লিপটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং শুধু ২ দিনের মধ্যে! এটি তাদের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ লক্ষ লক্ষের কাছে পৌঁছে যায়। আপলোড করা অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে "অবিস্মরণীয় মুহূর্ত" থেকে ক্যাপশনটি "আজকের দায়িত্বজ্ঞানহীন মাতাল মেয়ে" তে পরিণত হয়ে গেছে। নিকিতাকে তার আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় মানুষ এবং বন্ধুদের দ্বারা মাতাল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অরুনা যা পরিকল্পনা করেছিল তা ঘটেছিল। নিকিতা বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল। নিকিতা ফার্স্ট পেপার টির জন্য পরীক্ষায় এসেছিল। কিন্তু, সে চূড়ান্ত পরীক্ষার বাকি কোনোটিতেও উপস্থিত হয়নি। নিকিতা তার ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরে বসেছিল। শেষ পরীক্ষার পরের দিন, অরুনা খবর পেল যে নিকিতা নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

যখন অরুনা তার বন্ধুর শেষকৃত্যে গিয়েছিল, নিকিতার বাবা -মায়ের মনোভাব তাকে অবাক করেছিল। তারা বলেছিল, "এইভাবে তাও ভাল। অন্যথায়, আমাদের সারা জীবনে এবং আমাদের আত্মীয়দের জন্য সে একটি বোঝা হয়ে উঠত"।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত করেছিল, এটি ছিল 'ননসেন্স' এর একটি স্পষ্ট ঘটনা। একটি পার্টি চলাকালীন একটি মেয়ে হোটেলে অ্যালকোহল গ্রহন করেছিল, তার পরিণতি চিন্তা না করেই এবং সে যার জন্য ভুগেওছিল, মামলা বন্ধ করে দিয়েছিল তারা!

কিন্তু সেটাই ছিল অরুনার গল্পের শুরু। দোষী নিজের দোষ সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় তাকে তাড়া করতে শুরু করে নিজের বিবেক এবং অরুনা হতাশ হয়ে পড়ে। সে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যে, এটি নিকিতার অজ্ঞতার কাজ যা তার ভাগ্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তার মস্তিষ্কের আরেক অংশ সেই যুক্তিটা মানতে প্রস্তুত ছিল না। এটা তাকে বলতে থাকে, সেই দায়ী। অরুনার সামনে দুটি চয়েস ছিল, হয় একজন অপরাধীর মত আচরণ শুরু করা, যে বিশ্বাস করে তার অন্যের জীবনের ওপর অধিকার আছে কারণ অন্যরা অতটা স্মার্ট নয়। অতএব তার কাজগুলি ন্যায়সঙ্গত এবং যে কোনও উপায়ে অন্যদের দ্বারা তাদের পথে আটকে দাঁড়িয়ে থাকাকে দূর করাতে কোন ভুল নেই। আর অন্য বিকল্প ছিল অনুশোচনা করা এবং ভুল সংশোধনের জন্য যা সম্ভব তা করা। অরুনা অপরাধমূলক মানসিকতা নিয়ে জন্মায়নি বা বড় হয়নি, তাই সে দ্বিতীয়টি বেছে নেয়। অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েশনের রেজাল্ট বেরিয়েছিল এবং অরুনা কলেজের টপার হয়েছিল। এটি তাকে একটি ভাল চাকরি পেতে করতে সাহায্য করেছিল। সে নিকিতার বাবা -মায়ের সাথে দেখা করে তাদের বলেছিল যে তাকে নিজের মেয়ে হিসাবে দেখতে বা বিবেচনা করতে। সে তার বেতনের ৫০% নিকিতার বাবা -মাকে দেওয়া শুরু করেছিল যারা ততক্ষণে অবসর নিয়েছিলেন। তার নিজের বাড়িতে, অরুনার বাবা -মা তার জন্য সম্বন্ধ খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু সে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। অপরাধবোধ তাকে তাড়া করে বেড়াত এবং সে জানত, এটা তাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। অনেক বছর পর, অরুনা উইমেনস ফোরামে একটি সামাজিক সেবার চাকরি হিসাবে বেছে নেয় যেখানে সে বিষণ্নতার সমস্যাযুক্ত তরুণ ছেলে-মেয়েদের পরামর্শ দেয়। এখন আমার বন্ধুরা দেখো, একটি ক্ষণস্থায়ী ভুল অনেক জীবনকে বিপদে ফেলেছে। অরুনা খুশি নয় এবং সে কখনো সুখী হবে না। নিকিতা তার জীবন হারিয়েছে এবং তার বাবা -মা তাদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছে। অরুনা তাদের মেয়ে হওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোন কিছুই প্রকৃত কন্যার জায়গা নিতে পারে না এবং এই প্রক্রিয়ায়, অরুনার বাবা -মাও একটি কন্যা সন্তানের সুখ থেকে বঞ্চিত হন। সবাই অসুখী ছিল। সুতরাং, ক্ষণস্থায়ী লাভের জন্য কখনও, কখনও বোকার মতো কিছু করবে না। তুমি যে দোষী সেই অনুভূতিটাই সামলাতে পারবে না। আর তোমরা যে গল্পটি শুনছো তাতে অরুনা, হলাম আমি"।

তারপর সে কথা বন্ধ করে দিল...

পরদিন ছাত্ররা সোশ্যাল মিডিয়ার খবর পড়ে যে, “অরুনা, যিনি একজন সুপরিচিত সমাজকর্মী, তার বন্ধুর আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে যা ১০ বছর আগে ঘটেছিল। কলেজে অরুনা যে ভাষণটি দিয়েছে তা তার অপরাধের স্বীকারোক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পুলিশ মামলাটি পুনরায় চালু করেছে”...

--©উshaস চttopaধ্যায়~----

###########################
[আপনার কি এই গল্পটি পছন্দ হয়েছে? একটি নতুন গল্প প্রকাশিত হলে আপনি কি বিজ্ঞপ্তি পেতে চান? যদি আপনার উত্তর হ্যা হয়, তবে অনুগ্রহ করে এই পেজে ক্লিক করুন এবং লাইক করুন, এবং সঙ্গে থাকুন॥] 🙏🏼

Thursday, 9 September 2021

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় হতাশার সময়!


বিংশ শতাব্দীতে, আগের শতকে শান্তি কি অসম্ভব ছিল?


#প্রথম_এপিসোড #১ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতি

দুটি পনেরো বছরের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধ বিংশ শতাব্দীর হৃদয় কে একেবারে জীর্ণ করে তোলে, এককথায় ধ্বংসের দিকে নিয়ে ফেলে! এই ইতিহাসের যাত্রার সূত্রেই এবং এই যাত্রার কেন্দ্রে একটি যুদ্ধ থেকে আরেকটি যুদ্ধের মাঝে বিশ্বব্যাপী মানুষের চাওয়া, পাওয়া, হতাশা ও ভয়ংকর দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি এবং তার সামনে উঠে আসা নায়কদের নিয়ে একটি গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি সিরিজ রুপে! ভালো লাগলে পাশে থাকবেন আর না লাগলে এড়িয়ে যাবেন 🙏🏼

আপনি যদি ১৯২০ সালের দিকে একটু ফিরে তাকান, আপনি মনে করতে পারেন যে সেসময় কিছু ভাল নেতাও ছিলেন, যেমন ফ্রান্সে (Lebrun)লেব্রুন ছিলেন, জার্মানিতে (Strazimon)স্ট্রাজিমন ছিলেন ইত্যাদি। আপনি হয়তো জানেন বা নাও জানতে পারেন যে ইউরোপের স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার একটা সম্ভাবনা ছিল এবং আপনি যদি সেই দিকে তাকান যে দৃশ্যপটের থেকে সেই সমস্ত লোকেরা কিভাবে হারিয়েও গেলেন, আপনি কিছু বুঝতেই পারবেন না! শুধু তাই নয় এবং দেখবেন যে প্রকৃত ক্ষমতায় কে কে আছেন যখন একটি বাস্তব এবং আসল সংকট বিশ্বকে আঘাত করে। এই সময়ের মধ্যে একটি দুর্দান্ত বিষণ্নতা সমগ্র মানবজাতির জন্য এসে পড়ে এবং এটি বেশ কয়েকটি দেশকে খুব কঠিনভাবে আঘাত করে। প্রকৃতপক্ষে, আমার কথাগুলো উড়িয়ে দিতে পারেন, তবু বলে রাখা ভালো যে প্রতিটি কথা আমার নিজের মনোভাবের হলেও যা কিনা সমর্থিত অধ্যাপক (Prof. Margaret Macmillan) মার্গারেট ম্যাকমিলানের দ্বারা, যিনি টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক। তা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩২ সালে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন যা একেবারে তলানিতে নেমে আসে এটা সবারই জানা। উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল, বিনিয়োগ ৫০ শতাংশ, দাম বা মুনাফা ১০ শতাংশ। এই সময় একটাই জিনিসের বৃদ্ধি হয়, তা হল কেবল বেকারত্ব, যা ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। ১৯২৯ সালে আমেরিকান কর্পোরেশনগুলি ১০ বিলিয়ন ডলার মুনাফা বুক বা রেজিস্টার করেছিল, এবং ১৯৩২ সালে এটি ৩ বিলিয়ন ডলার লোকসান করেছিল।
"আমাদের সমগ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থা", প্রাক্তন ট্রেজারি সেক্রেটারি (Mcadoo)ম্যাকাদু ঘোষনা করেন, "একটি সংগ্রহ কে কৃতিত্ব বা মর্যাদা দেয়, যা হল একটি বোকার স্বর্গে!"
এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক (Prof. Richard Overy)রিচার্ড ওভারির মতে, উন্নত রাজ্যে ৪০ মিলিয়ন মানুষ বেকার, লাখ লাখ মানুষ অভুক্ত, বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য অর্ধেকেরও কম হয়ে যায়। সেই সময়কালে, আপনি আজকের দিনে কল্পনাও করতে পারবেন না যা ঘটেছে এবং এর পরিণতি ছিল গভীর দারিদ্র্যতা, সর্বত্র শক্তিশালী সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি, পুঁজিবাদের একটি শক্তিশালী অনুভূতি যা কাজ করে নি এবং সম্ভবত কমিউনিজম যা কিনা হটাৎ করে ডানা মেলে বেরিয়ে আসবে বলে আশঙ্কা বাড়ছিল। হঠাৎ করে এই সব জিনিস পশ্চিম বিশ্বকে হুমকি দেওয়া শুরু করে..।

এটি কেবলমাত্র শিল্পের জন্য হতাশাগ্রস্ত অবস্থা ছিল না, এটি ছিল দুর্দান্ত বা চরম হতাশা এবং এটি সবারই জন্য ছিল। ১৫০০০০ আমেরিকান বাড়ির মালিকরা ১৯৩০ সালে তাদের সম্পত্তি হারিয়েছে, ২০০০০০ জনে ৩১ সালে এবং ২৫০০০০ জনে ৩২ সালে।
১৯২৯ সালে আমেরিকান অর্থনীতিতে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ছিল প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা কিনা ১৯৩২ সালের মধ্যে সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল মাত্র এক তৃতীয়াংশে এবং মনে করা হয়েছিল যে এমন কিছুই নেই মানে কোনো সিস্টেম যা কেউ সঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারে। জুলাইয়ের শেষের দিকে সেই পরিস্থিতি যতটা ভয়ঙ্কর ভাবা যেতে পারে ততটাই কম, অ্যানাকোস্টিয়া ফ্ল্যাটের সংঘাতে, (Hoover)হুভারের রাষ্ট্রপতি পদের মৃত্যুর জন্য যেন গড়ে উঠেছিল, যখন তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাটেলিয়নের সেনা পাঠিয়েছিলেন, কাদের বিরুদ্ধে? না, যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হাজার হাজার অভিজ্ঞ সৈন্য, তাদের ওয়াশিংটনে একত্রিত হওয়ার থেকে হটাতে, যুদ্ধ পরিষেবার নামে বোনাসের অর্থ তাড়াতাড়ি প্রদানের দাবিতে, যা তাদের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। এটা অন্যায় যুদ্ধ, ১৮৬৫ সাল থেকে ওয়াশিংটনে যুদ্ধরত সৈন্যদের সর্বাধিক ঘনত্ব ঘটেছিল তত্কালীন। তাদের কর্তৃপক্ষকে মানে অ্যানাকোস্টিয়া ফ্ল্যাটে বিক্ষোভকারীদের, তাদের ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে বিপথে চালাতে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় ঘোড়ার পিঠে চড়ে, ট্যাঙ্কের সাহায্যে, টিয়ার গ্যাসের আশ্রয়ে। তাদের আশ্রয়স্থল জ্বালানো হয়, যার জন্য হুভারকে সম্পূর্ণ রুপে দায়ী করা হয় না, এই বাড়াবাড়ির জন্য নিন্দা করা হয়েছিল সেই ঘটনার কমান্ডারের, যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে মাঝখান থেকে বহুচর্চিত জাতীয় নায়ক হয়েছিলেন, তার নাম ছিলো (Douglas Macarthur)ডগলাস ম্যাকার্থার। এই সময়ে একটি খুব বিখ্যাত চলচ্চিত্র ছিল যার নাম 'আই অ্যাম এ ফিউজিটিভ ফ্রম আ চেইন গ্যাং' মানে একটি চেইন গ্যাং থেকে একজন পলাতক - যেখানে নায়ক হিসাবে যে অভিনয় করেছেন, দেখানো হয়েছে যে তিনি আমেরিকান স্বপ্নকে সরাসরি অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু আমেরিকান রাষ্ট্র দ্বারা সে প্রবর্তিত, বঞ্চিত এবং বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে তার সাথে, সে প্রতিটি সুযোগ হারিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং শেষে তার বান্ধবীর কাছে যখন ফিরে আসে এবং সে তাকে খুব সংক্ষিপ্তভাবে আলিঙ্গনে বলে 'তুমি এক বছর আগে পালিয়ে গেছিলে, কেন তুমি যোগাযোগ করোনি'। উত্তরে সে বলে 'আমি পারি নি, তারা আমাকে অনুসরণ করেছে, তারা সবখানেই আছে, সর্বত্র' এবং মেয়েটি বলে, 'তুমি কি থাকবে?' উত্তরে ছেলেটি বলে 'না, আমি থাকতে পারব না, আমাকে যেতে হবে'। 'কিন্তু তুমি কিভাবে থাকো, জীবন অতিবাহিত করো কিভাবে? তুমি কেমন আছো .. তুমি কি খাবে'? এবং সে বলে, 'আমি চুরি করি... আমি চুরি করি এবং সেই লাইনটি ফিসফিস করে বলে, আমি চুরি করি .. এটা .. সে সময় ভীষণ জনপ্রিয়, মেলোড্রামাটিক এবং আইকনিক একটা মুভি, ওদের ব্যাপার-ই আলাদা, ওটা হলিউড বলে কথা!

যাই হোক, বাস্তবে ফিরি! যেহেতু ১৯৩২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গণনা করা হয়েছিল, সেই সময়ে গ্রামীণ আমেরিকা একটি হতাশাজনক অবস্থার মধ্যে যাচ্ছিল, তখন গবাদি পশু মারা যাচ্ছে হাজারে হাজারে, মানুষ ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা থেকে বীতশ্রদ্ধ। একটি সত্যিকারের প্লেগ একটি দেশের বিভাগের একসময়ের সমৃদ্ধ খামার যা ভালো ফলাফল করেছে, তাকেও জর্জরিত করেছে। এরূপ সময়ে, "আমাদের মধ্যে একটি বিপ্লব হবে, ১২ মাসেরও কম সময়ে, প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে" রক্ষণশীল সংযুক্ত খামার বা কনসারভেটিভ ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশনের (Ward Ed O'Neal)ওয়ার্ড এড ও'নিল বলেন, তিনি গণতান্ত্রিক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্কের গভর্নর পদে নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালের রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ক্যাম্পেনের জন্য তার কমন কথা যেটা পরবর্তী সময়ে চর্চার বিষয় ছিল বা আছে, তা হল,'হ্যাপি ডেজ আর হেয়ার এগেইন' মানে সুখের দিন আবার এখানে, মানে পাতি কথায় 'আচ্ছে দিন'। সেই সময় এক ব্যক্তি উঠে এসেছিলেন, তার নাম ছিল (Franklin Delano Roosevelt)ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট। তিনি ১৮৬৪ সালে আব্রাহাম লিঙ্কনের বিজয়ের পর থেকে একতরফা নির্বাচনে বর্তমান প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, একেবার প্রকৃত ভূমিধসের মতো। তিনি স্বভাবতই একজন পরীক্ষক, একজন বাস্তববাদী ছিলেন, মানে তার কথার ধরনই ছিল যে, 'আসুন চেষ্টা করি', 'দেখা যাক কিছু কাজ না করলে আমরা অন্য কি কাজ করতে পারি', 'নিরুৎসাহিত হবেন না, আমরা অন্য কিছু চেষ্টা করবো'... ইত্যাদি ইত্যাদি। যে আশাবাদ, উৎফুল্লতা, সহানুভূতি, পরীক্ষামূলকতা এবং প্রজাতান্ত্রিক আমেরিকানদের প্রতি সুগভীর বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন যা তিনি কখনো হারাননি এবং যা তাকে রাজনৈতিকভাবে অপরিহার্য এক ব্যক্তি বানায়।

এইসময়ে একদা অর্থনৈতিক ভাবে সর্বশক্তিমান (Al Capone)আল ক্যাপোন কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন, কম উত্তেজিত মেজাজের আলফনসো ক্যাপোনের চেয়ে বড় কিছু এই সময়ে আসে না যা ১৯৩২এর সালে শূন্যতা থেকে উঠে আসা একটি ছোট খাটো একজন বাউন্সার (স্কারফেস) মুখে কাটা দাগ সমেত আলফনসো, নিয়ন্ত্রণের উচ্চ শিখরে উঠে এসেছে এবং একটি অপরাধমূলক সিন্ডিকেটের যা বছরে একশ মিলিয়ন ডলার আয় করে, সেটির পরিচালনায় ব্যস্ত। আটলান্টা, জর্জিয়া রাজ্যের পেনিটেন্টিয়ারিতে তাঁর পরিচয়পত্রে নিম্নলিখিত বিবরণ রেকর্ড করে;
• শাস্তি শুরু হয় ৪ঠা মে ১৯৩২,
• জন্ম তারিখ ১৭ই জানুয়ারি ১৮৯৯,
• পেশা জুয়াড়ি এবং তার মুখের তিনটি দাগ, স্কারফেসের সাবধানে ও সুবিস্তৃত বর্ণনা আছে।

এবার আসি ব্রিটেনের কথায়, ব্রিটেনে রাজনৈতিকভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে বিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদ (Oswald Moseley)ওসওয়াল্ড মোসলে ১৯৩২ সালে একটি ফ্যাসিবাদী দল গঠন করেছিলেন। তিনি রোম ঘুরে আসার পর তার অবিকল নকল করতে যাচ্ছিলেন এবং মুসোলিনি তাকে যা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাই তিনি অনুকরণ করেছিলেন। কালো শার্টের ইউনিফর্ম যার জন্য অনুসারীরা অর্থ প্রদান করেছিলেন, পাঁচটি শিলিং প্রতিটি শক্ত বাহু, অনেকটা হাত খাড়া করে স্যালুট করা, ইত্যাদি। ইটালি তার আন্দোলনের তহবিল পাঠানোর জন্য যে পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছিল তার জন্য এটির হিসাব ঠিক করা ছিল, পুনরায় তার কথায় ফিরব।

ভক্তদের কাছে প্রশংসার বিশ্বের রাজধানী ছিল, শুধু ছিল কেনো, এখনো আছে সোভিয়েত রাশিয়ায়, যেখানে কেবল মানবতার দিগন্ত ছাড়িয়ে ছিল স্ট্যালিনের অর্কেস্ট্রেটেড উচ্চতা, হয়তো একটু বেশীই বললাম, তবু স্যাটায়ার রুপে হলেও চালিয়ে নেবেন। ১৯৩২ সালে যখন (Pravda)প্রভদা, যা ছিল অফিসিয়ালি পার্টির সংবাদপত্র, তার পাঠকদের একটি বিস্ময়কর আবিষ্কারের কথা বলেছিল। এটিতে প্রকাশিত সমস্ত নিবন্ধ (Lenin)লেনিনের নামের অধীনে যা লেখা হত, তা সম্প্রতি শেখা যাচ্ছিল যে কমরেড (Stalin)স্ট্যালিন দ্বারা নাম লুকিয়ে লেখা হয়েছে, যাকে বলে 'ঘোস্ট রাইটিং'। আপনাকে মিথ্যা কথা বলতে হত, পার্টির স্লোগানগুলি পুনরাবৃত্তি করতে হত, অন্যথায় এমন মনোভাব ছিল যে স্ট্যালিন আপনাকে হত্যা করবে। রাশিয়ান ম্যাক্সিমের মতে আপনি একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতো মিথ্যা বলতে বাধ্য ছিলেন। স্ট্যালিনের ভাবমূর্তি সর্বত্র ছিল এবং সাম্যবাদ আর রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, এটি একটি ধর্মে বা আচারে রূপান্তরিত হয়েছিল। এবং এতদ্বারা উত্পাদিত সবচেয়ে বেছে নেওয়া সুগন্ধি, যা কিনা ছিল সরকারি সুগন্ধি, সেই সুগন্ধি কে বলা হত 'ব্রেথ অফ স্ট্যালিন বা স্ট্যালিনের নিঃশ্বাস'। প্রপোগান্ডাই ছিল সব বা এর কি যে বিশাল এক প্রয়োজন, রাশিয়াতে এই সাক্ষ্য ১৯৩০ -এর দশকের মানুষ যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিত তার থেকেই আপনি দেখতে পেতেন।

(ক্রমশ)