Monday 26 July 2021

কার্গিল বিজয় দিবস...


চিন্তা করতে পারেন, আমাদের ভায়েরা, মায়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পোষাক বানাবে, তাতে লেখা হবে, মেড ইন পাকিস্তান! পারেন চিন্তা করতে?

চিন্তা করতে পারেন, আমাদের বিরাট কোহলি ম্যাচ জিতে ব্যাট ওঠাবে আর তখন বলা হবে, ম্যান ফ্রম পাকিস্তান! পারেন চিন্তা করতে?

চিন্তা করতে পারেন, বাঘের বদলে আপনার জাতীয় পশু হবে পাঠা! পারেন চিন্তা করতে?

চিন্তা করতে পারেন, "... বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছল জলধিতরঙ্গ ..." গেয়ে স্কুল শুরু করা হবে না! পারেন চিন্তা করতে?

চিন্তা করতে পারেন, আপনি চিৎকার করে গাইতে পারবেন না আপনার নিজের ভাষায়, বাংলা, হিন্দি, পাঞ্জাবি বা কন্নড় ভাষায়!

চিন্তা করতে পারেন, ডিডিএলজে, শোলে, ২২শে শ্রাবন-এর আগে বসবে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র! আহারে বুকটা ফেটে যায় চিন্তা করতেই পাঠকদের প্রিয় লেখক পাকিস্তানের আমিশ ত্রিপাঠী, চেতন ভগত এরা!

চিন্তা করতে পারেন, বারো লাখ ঊনসত্তর হাজার বর্গ মাইলের মালিক হয়েও মাথা উচু করতে পারবেন না আপনি! পারেন চিন্তা করতে, প্রায় তেরো লক্ষ বর্গ মাইলের মালিক হয়েও আপনি পরাধীন কোনো দেশের কাছে?

সৌরভ কালিয়া, অনুজ নায়ার বা বিক্রম বাত্রারা পারেন নি চিন্তা করতে, তাইতো হৃদস্পদন থামার আগে পর্যন্ত মেশিনগান চালিয়ে গিয়েছিলেন মেড ইন ইন্ডিয়ার জন্য।

চিন্তা করতে পারেন নি অজয় আহুজার বা কে. নচিকেতা রাও-এর মতো লোকেরা। তাইতো মিগ ২১ বিমান নিয়ে আকাশে উড়ে ছিলেন, নির্যাতন সহ্য করেছিলেন ধোনি, কোহলির দের মত নতুন ম্যান ফ্রম ইন্ডিয়ার জন্য।

বাঘের জাতের জাতীয় পশু হবে পাঠা? কোনদিনও না! তাইতো বোমায় কত সৈনিকের একহাত উড়ে গেলেও একাই যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল আরেক হাতে। বিধ্বস্ত কতকেউ ঝাঁপিয়ে পরেন পাহাড়ি উপত্যকায়! অপেক্ষায় থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারে দেশের এক আহত বাঘকে, সৌরভ কালিয়াকে, তাইতো তাদের জাতীয় পশু আজ পাঠা।

সহযোদ্ধাদের পিছেয়ে যেতে বলে সেদিন একাই মেশিন গান চালিয়ে গিয়েছিলেন বিক্রম। তার মেশিন গানের গুলি বন্ধ হলে সব সাথীরা মারা পরবে তাইতো একাই সেদিন পাকিস্তানিদের তিনটে ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেন। দেড়শত সহযোদ্ধার জীবন সেদিন বিক্রম বাত্রা বাঁচিয়ে দেন মর্টারের গোলায় শহীদ হয়ে। আমি সিওর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তার কানে বেজে ছিল, "ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর" যা পরে একটি পানীয়ের ট্যাগলাইন হয়!

আহত যোদ্ধাকে কাঁধে তুলেই এল.এম.জি চালিয়ে যান ক্যাপ্টেন বিজয়ন্ত থাপার। মর্টারের গোলায় নিজে আহত হয়েও সেদিন গুলি করা থামাননি। জানেন সেদিন বন্ধুদের বাঁচাতে পারলেও নিজে নিহত হন পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে। যিনি নিজে চিঠি লিখেছিলেন তার বাবা-মাকে, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, যে তিনি হয়তো জীবিত থাকবেন না যখন তারা সেই চিঠি পড়বেন, তিনি স্বর্গ থেকে দেখবেন! আবার যদি মানুষ হয়ে জন্মানো, তবে ইন্ডিয়ান আর্মি হিসেবে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।

তিনি চাইলেই পালিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু হয়তো জানতেন তিনি পিছিয়ে গেলে আর কোনো যুবক উদ্বুদ্ধ হবে না জে. পি. দত্তের বর্ডার সিনেমার ঐ এক গানে "সন্দেশে আতে হ্যায়", এল ও সি কার্গিল সিনেমায় তার স্থান হলেও আর কেউ অনুপ্রাণিত হবে না সৈন্যদলে নিজের নাম লেখাতেে। তাইতো এঁরা এল.এম.জি চালিয়ে গেছিলেন শত্রুর গুলি এসে লাগার আগে পর্যন্ত, তাইতো কয়েকজন ছাড়া বিশ্ব চেনে এনাদেরকে এখনো, মৃত্যুর ২২ বছর পরেও!

বীরের গুলি লাগে মাথায় কিংবা বুকে, বীর গুলি করতে করতেই সামনে এগিয়ে যায়। শত্রুদের শেষ করতে সেদিন মনোজ পান্ডে সাহেব গুলি করতে করতে এগিয়ে যান। তিনি কি জানতেন তার কারনে একদিন গোটা ভারত এগিয়ে যাবে। আমার মনেহয় তিনি জানতেন! তাইতো হাসতে হাসতে শত্রুর গুলি তিনি সেদিন মাথায় ও বুকে নেন। তাইতো আজ এত লক্ষ হাজার বর্গ মাইলের মালিক আমি স্বাধীন।

তারা চিন্তা করেছিলেন বলেই আজ আমরা এখনো স্বাধীন, নতুন করে কোনো পরাধীনতার আড়ালে... আচ্ছা আমরা চিন্তা করিতো এই স্বাধীনতার রক্ষার কথা? ভাবার সময় এখনো আসেনি কি?

©উshaস চttopaধ্যায়~

#কার্গিল_বিজয়_দিবস 

No comments:

Post a Comment