বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রশ্ন করেছিলেন ‘বিদুৎ চমকানো’ (Lightning) নিয়ে। নিউটন প্রশ্ন করেছিলেন, পৃথিবীমুখী বস্তুর গতি নিয়ে। আইনস্টাইন প্রশ্ন করেছিলেন, বস্তু যদি আলোর গতিতে চলে—তাহলে কী হবে? কালে কালে মানুষের এইসব প্রশ্ন, বহু অজানা থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে। মানুষ যখন অজানা থেকে বেরিয়ে আসে, সেটা অন্ধকার থেকে আলোক প্রাপ্তির তুল্য। প্রশ্ন, সভ্যতাকে আলোকিত করেছে।
ইউরোপে যে জাগরণের (রেঁনেসা) কথা বলা হয়, সেটা জিজ্ঞাসা থেকে হয়েছে, প্রশ্ন থেকে হয়েছে। ইউরোপের সমাজ ব্যবস্থায় প্রশ্ন করা একটা সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। বাইরের যে কোনো ইউনিভার্সিটিতে দেখেছি ছেলে-মেয়েরা কী করে প্রফেসরের সাথে প্রশ্নবাণে জড়িয়ে যায়। তর্ক চলে। শিক্ষার্থীদের মাথায় কোন ভয় বা দ্বিধা থাকে না। কিংবা প্রফেসররাও চিন্তা করে না, ‘ও পুঁচকে’ বলে। এই যে আবহ, রবীন্দ্রনাথ এটাকেই হয়তো বলেছিলেন ‘চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য’। আইনস্টাইন বলেছিলেন, প্রশ্ন করা থেকে বিরত থেকো না। ভলতেয়ার নাকি বলেছিলেন, একজন মানুষকে বিচার করো তার প্রশ্ন থেকে, উত্তর থেকে নয়।
আমাদের স্কুলগুলোতে প্রশ্ন নেই। কোমলমতি শিশু-কিশোরগুলো শিক্ষকের ভয়ে কুঁচকে থাকে। অথচ ওরাই হয় খুব উৎসুক। ওদের মনের ভিতর জাগে অসংখ্য প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নকে বের করে আনার চেষ্টা নেই শিক্ষকদের। সমাজের নীতির প্রতি প্রশ্ন করা উঠে গেছে!
আমাদের মহাবিদ্যালয়গুলিতে প্রশ্ন নেই। রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্ন করা যায় না। ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না। ডাক্তারদের প্রশ্ন করা যায় না। আমেরিকায়, রোগীর প্রশ্ন শোনা ডাক্তারের জন্য আবশ্যক। রোগীকে সচেতন করা, ডাক্তারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অথচ আমাদের সমাজে, প্রশ্ন করাই যেনো এক অপরাধ। প্রশ্ন না করে করে, আমাদের মগজগুলো কী ভয়ংকরভাবে নেতিয়ে যায়। শৈশব থেকেই আমরা প্রশ্ন করা ভুলে যাই, বা কেউ করতে উদ্যত হলেও তাকে বাধা দি, থামিয়ে দি।
এই যে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, আস্থা নিয়ে তর্ক করা—সেটা মানুষের মনের জানালা খুলে দেয়। সেসব জানালা দিয়ে মানুষ, একই বিষয়কে বহুভাবে কল্পনা করতে শেখে। তার ভাবনার জগৎ বিস্তৃত হয়। সেসব জানালা দিয়ে ঢুকে যাওয়া আলোয় আলোকিত হয় পুরো সমাজ।
প্রশ্নহীন সমাজে জঙ্গমতা থাকে না। সেখানে গতি হ্রাস পায়। এমিবিয় গতি আসে। একসময় স্থানু হয়ে যায়।
প্রশ্ন করুন, প্রশ্ন। তুমুল প্রশ্ন হবে ক্লাসরুমে। ময়দানে, অফিসে, ডাক্তারখানায়, মন্দিরে, মসজিদে, গির্জাতে। আলোকিত সমাজের জন্য প্রশ্ন যে অপরিহার্য...
©উshaস চttopaধ্যায়~
No comments:
Post a Comment