Tuesday, 13 July 2021
সংসার সংগ্রাম ...
সংসার সংগ্রাম:- সন্ধ্যায় রাহুলের হাতে বিশাল কাতলামাছ দেখে রিমার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়! ছেলেমেয়ে দুটো লাফালাফি শুরু করে বাবার হাতে মাছ দেখে!
গত চার মাসে আজকে তারা এত বড় মাছ দেখলো চোখে! গত চার মাসে শাক, আলু, সোয়াবিন আর ডিম এই ছিলো তাদের বাড়ির খাবার!
একদিনতো রাহুলের ছেলেটা মাকে বলেই বসলো, 'মা মুরগী আমাদের জন্যে ডিম পাড়তে পাড়তে ব্যথায় না কবে মারাই তো যাবে, তো সেই মরা মুরগির মাংস করলে হয় না!'
রিমা ছেলের কথা শুনতে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেলেও তার ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাওয়ার অবস্থা!
তার স্বামীর চাকরী গেছে করোনায়, লকডাউনে! নয় মাস ধরে চাকরী নেই! সাত মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে! দোকানেও বাকি জমতে জমতে লাখ খানেক টাকার কাছাকাছি হয়েছে! রাহুল যে পার্টি করত, সেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি। এমনিতেই ভোটে হেরে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা ...
বাড়িওয়ালা কয়েকবার টাকা টাকা করলে শেষ সম্বল তার এক জোড়া সোনার কানের দুল, আর ছিল এক নাকছাবি। তা বিক্রি করে সাথে আরো কিছু টাকা মিলিয়ে দুই মাসের বাড়ি ভাড়া দিয়ে সময় চেয়ে নেয় বাকি ভাড়া শোধ করার!
গ্রামেও তাদের কেউ নেই যে বাড়ি ছেড়ে গ্রাম গিয়ে উঠবে তারা!
অনেকের কাছেও ধারদেনা হয়ে আছে!
আগের লকডাইন উঠে কিছুদিন আগে নতুন একটা রেস্টুরেন্টে ম্যানেজারের চাকুরী পায় রাহুল, সেটাও এখন আবার বন্ধ নতুন করে দেশে লকডাউনের কারণে! বেশি কথাও বলতে পারে না রাহুল, কারণ যে পার্টি সমর্থন ও করে, তাদেরই কেন্দ্রে চলে! এ রাজ্যে না চললেই বা!
মাত্র দুই সপ্তাহ চাকরী করে বিদায়! এই বাজে অবস্থায় রাহুলের হাতে মাছ দেখে রিমা জিজ্ঞেস করলো কোনো খুশির খবর আছে? টাকা পেয়েছো কোথা থেকে?
রাহুল মুখে হাসি দিয়ে বললো, 'রিমা ঝাল করে মাছটা রান্না করো। আমি স্নান করে আসি। আজ সবাই মিলে এক সাথে ভাত খাবো!'
রান্না শেষ রিমাও স্নান করে আসে! মাছের গন্ধ গায়ে নিয়ে ঘুরতে কেমন ঘিনঘিন লাগতো তার। রিমার স্নান শেষে সবাই ভাত নিয়ে বসলো টেবিলে! আলু টমেটো দিয়ে রান্না করা মাছ দিয়ে ভাত পেয়ে তার ছেলেমেয়ে দুটো কী আরামেই না ভাত খাচ্ছে! অথচ দুপুরে ভাতে আলু আর সোয়াবিন দেখে প্লেট সরিয়ে উঠে যাচ্ছিল ছেলেটা!
রিমা চোখের জল আড়াল করে স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো, 'কী ব্যাপার বললে না? কোনো সুসংবাদ আছে নাকি? হঠাৎ মাছ? আর এত দাম দিয়ে মাছ কিনেছোই বা কিভাবে?'
রাহুল খাওয়া থামিয়ে বললো, 'সকালে বের হওয়ার সময় বাড়িওয়ালার সাথে দেখা হয় রিমা। বাড়ি ভাড়া দিতে না পারলে এই মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন তিনি আর আসবাবপত্র যা আছে তা যেন কিছু না নিই সাথে করে! ওগুলো বিক্রি করে তিনি ভাড়া বুঝে নেবেন!'
'খুব লজ্জা লাগছিলো রিমা! খুব লজ্জা লাগছিলো বাড়িওয়ালার কথা শুনে! কিন্তু বেচারাকে দোষ দিয়েইবা লাভ কী? তার নিজেরও চলতে হবে, তারও তো সংসার আছে! নিত্যনৈমিত্তিক খরচ, কারেন্ট, ট্যাক্স কিছু কী আর সরকার মাফ করেছে? অনেক দিনইতো ধৈর্য ধরেছেন আর কত, তাই না?'
কিছুক্ষণ থেমে মাছের কাঁটা ফেলতে ফেলতে রাহুল বলল, 'সাহেবের কথা মনে আছে তোমার? আমার বন্ধু? তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ধার করে বাজার করি আজকে। ছেলেমেয়ে দুটো কতদিন ভালোমন্দ খায় না! কত অকর্মা একজন স্বামী ও বাবা আমি! আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও রিমা!'
দেশে করোনায় প্রতিদিনে সংক্রমণ আর মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড করছে! আবার তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজকে যেই শোনা যাচ্ছে যে সংখ্যা কমেছে, সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক ছেড়ে ঘোরাঘুরি চালু আর পরেরদিনে একশোজনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ড! এত বিধি-নিষেধ, তবু লাভ হচ্ছে না, আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ, মূলত মধ্যবিত্ত ..
বড়ো করে লাল করে করোনায় একশোজনের মৃত্যুর ব্রেকিং নিউজের নিচে, "স্ত্রী সন্তানদের খাবারে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেন একজন বাবা!" সংবাদটি অনেকের চোখ এড়িয়ে গেছে!
পুলিশ রাহুলের ঘর থেকে ছোটো একটা চিরকুট পায় সেখানে লেখা, 'সংসার সংগ্রামে আমি হেরে গেলাম! আমাদের লাশেরতো আপনারা কেউ না কেউ সৎকার করবেন, শুধু একটি অনুরোধ, পারলে আমায় কবর দেবেন, এই আমার শেষ ইচ্ছা! আমার কবরে একটা নেমপ্লেট লাগিয়ে সেখানে আমার নামের জায়গায় "মধ্যবিত্ত" লিখে দেওয়ার শেষ একটা অনুরোধ রইলো আপনাদের কাছে!'...
©উshaস চttopaধ্যায়~
Labels:
Short Story,
Writings
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment