Wednesday, 29 December 2021

মাঝি মাল্লার জীবন


 মাঝিমাল্লার জীবন

*****************

পাল উঠেছে নৌকো ভাসে
        পূর্ণিমার ঐ জ্যোৎস্না হাসে
ঢেউয়ের দোলায় দুলছে জীবন,
         দ্যাখো সময় কাটে রঙ্গরসে।

তাদের প্রাণের মাঝে তুমি
            বানিয়ে নিয়ে সুখের বাসা
জীবন চাইছে আকড়ে সেথায়
           ভরিয়ে দেবে ভালো বাসা।

ইচ্ছে গুলো স্বপ্নে রাতে   
         ঘুমের জমি দখল করা
বুনছে চারা রঙীন দিনের
          প্রভাত আলোয় ছন্ন ছাড়া।

হারালে খন তুমিও শেষে
            গেলে যোগ বিয়োগের দেশে
একলা ঘরে আমিও আছি
           বসে ঝরা পাতার বেশে।

সন্ধ্যা নামল মোহিনী রূপে
          স্থিতধী ঐ নদীর বুকে
আলো আঁধারি তরী মাঝে
           মাঝিরা মাতে গল্পে সুখে!

উপরে সেতু আলোক সাজে
          নিয়েছে যেন মৌন ব্রত
আঁধার বুকে হাসে উচ্ছ্বল
           তরঙ্গ রাশি অবি-রত।

নদীর বুকে ভাসে নৌকা
         অপরূপ সাঁঝের রূপ-কল্প
গোধূলি আলোয় মগ্ন দেখো
         মাঝি-মাল্লার জমায় গল্প॥
_______________________
©উshaস চttopaধ্যায়~
<তাং- ২৯|১২|২১>

Tuesday, 28 December 2021

পাহাড় কোলে!


 #কবিতা

#পাহাড়_কোলে
***************
পাহাড় চূড়ায় মেঘেরা অমন
হুঙ্কার কেনো ছাড়ে,               
নানা সূত্রে কলহ ওদের
যেনো যৌথ পরিবারে!
                           
গুমরে ওঠে কালো মেঘে,
বৃষ্টি আসছে ঝেঁপে                            
পাহাড় কোলের ঝর্ণা বয়ে
পুরো পাকদন্ডী কেঁপে। 
                       
শেষে তুমিও ঝর্না হলে 
পড়ছে চরণ যত্র-তত্র                       
মলিন সেতো স্মৃতি এখন  
তোমার পাঠানো শেষ পত্র।  
     
ঝর্ণা শাণিত, পাথর কেটে
রাস্তা বানায় নিজে,                                  
তুমিও চালাও ধারালো ছুরি
ঠিক হৃদয়েরই ভাঁজে?   
              
পাথর খন্ডে শ্যাওলা জমে
যে খানে জল পড়ে                              
তুমিও যেমন দুঃখ আঁকো
আমার দর্প চূর্ণ করে। 

পাহাড়ের ঐ কোলেই দ্যাখো
খোঁজে তাদের বাসা
এখানেই আছে হেঁয়ালি হয়তো
রূপকথার যাওয়া আসা..
                        
আরে, তুমি আমি কাছাকাছি 
হলেও সাত জন্মের তফাৎ,                   
বাঁচতে হলে মরতে হবেই
এটাও জানায় জলপ্রপাত।

©উষস চট্টোপাধ্যায়~
<তাং - ২৮|১২|২১>

Sunday, 26 December 2021

ঠুনকো সম্পর্ক!


ঠুনকো সম্পর্ক:-
*************
রানা ছুঁড়ে কাঁচের গ্লাসটা ফেলে ভাঙলো, যাতে ক্রিসমাসের রাতে মদ খাচ্ছিল।
টুকরো টুকরো কাঁচগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রইল মেঝেতে। সেই সাথে রেনুর লাসটাও, রানা ওঠাল না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়নাটায় ফুটে ওঠা প্রতিচ্ছবিটির দিকে। অবসন্ন, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত এক মানুষের প্রতিচ্ছবি যেন। রানা তাকিয়েই রইল। তারপর হঠাৎই পা ফেলে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গেল ভাঙা গ্লাসের কাঁচের টুকরোগুলোর ওপর দিয়ে। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জেগে উঠছে পায়ের তলায়। কাঁচের টুকরোগুলো পায়ের মাংসে গেঁথে গিয়ে তাকিয়ে আছে! কতটা ভীষণ তীক্ষ্ম, কি ভয়ংকর ক্ষুধার্ত!

রানা তাও আরেকবার হেঁটে গেল, তীব্র যন্ত্রণায় তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। সে বিড়বিড় করে বলল, 'আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?'

ঘরে তো আর কেউ নেই, শুধু রেনুর লাসটা। এই প্রশ্ন সে কাউকে করেও নি। স্রেফ স্বগতোক্তি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আয়নার ভেতর থেকে ক্লান্ত, অবসন্ন, বিধ্বস্ত একটা প্রতিমূর্তি কথা বলে উঠল, 'তুমি পাগল হয়ে যাও নি'!

রানার অবাক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সে একটুও অবাক না হয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল, 'তাহলে?'

আয়নার ভেতর থেকে প্রতিমূর্তিটা বলল, 'তাহলে আর কী? তুমি একটা সত্য আবিস্কার করে ফেলেছো'।

রানা বলল, 'কী সত্য?'

সেই রূপটা বলল, 'সম্পর্ক এত ছোট ছোট সন্দেহে টেকে না, মানছি রেনুর মৃত্যু তোমাকে ভাবিত করে তুলেছে কিন্তু ও যেটা দিনের পর দিন করছিল তাও তোমায় ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো, সম্পর্ক ভেঙে গেলে এমন খুনে, আততায়ী হয়ে যায়, লুকিয়ে থাকা চেহারাটা বের হয়।'

রানা বলল, 'কেন?'

রূপটা বলল, 'খানিক আগে যে গ্লাসটায় ঠোঁট ডুবিয়ে মদ খেলে, কি মোলায়েম, মসৃণ আর পেলবতা ছুঁয়ে দিল তোমার ঠোঁট। অথচ এখন দেখ, সেই গ্লাসটাই ভেঙে গিয়ে কতটা তীক্ষ্ণ আর ধারালো হয়ে উঠেছে, পা কেটে রক্ত অবধি বের করে দিল, তাই না?'

রানা জবাব দিল না। প্রতিমূর্তিটা বলল, 'অথচ এই ভয়ংকর টুকরোগুলোই কিন্তু আস্ত গ্লাসটার ভেতর লুকিয়ে ছিল! তখন কি একটুও বুঝতে পেরেছো?'

রানা অবাক গলায় বলল, 'না'।

রূপটা বলল, 'সম্পর্কগুলোও এমন, ভেঙে গেলেই শুধু পুরোপুরি টের পাওয়া যায়, ভেতরে কি লুকিয়ে ছিল, কি ধারালো, কি তীক্ষ্ণ আর ভয়ংকর!'

রানা কোনো কথা বলল না। সে তাকিয়ে রইল রেনুর মৃতদেহ আর কাঁচের টুকরোগুলোর দিকে। ঝাপসা চোখের ভেতর সেগুলো ক্রমশই যেন পুরনো সব স্মৃতি হয়ে ফিরে আসছে। খুব দ্রুত ফিরে আসছে স্মৃতিরা। ফিরে আসছে প্রিয় কিছু মানুষ, তাদের মুখ, ফেলে আসা সময়, কিংবা একান্ত নিজের একার কোন মানুষ হয়ে। তার একান্ত কোন স্মৃতি, স্মৃতিময় সময়, সম্পর্ক কিংবা অনুভব হয়ে!

আহা, সে বলার জন্য উপযুক্ত আর কিছু পেল না!

রানা আবার উঠে দাঁড়াল। উঠে সে পুলিশকে ফোন করে তার ঠিকানা দেয় আর খবর দেয় যা ঘটেছে, তারপর চট করে ঝাঁট দিয়ে মেঝে থেকে কাঁচগুলো সরিয়ে নিল। সে আর একবার কারুর পা কাটতে চায় না, রক্তাক্ত হতে দিতেও চায় না।

সে জানে, কিছু সম্পর্ক, সম্পর্কের স্মৃতিও এই কাঁচের মতনই ঠুনকো, তার থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, যত দ্রুত মুছে ফেলা যায় তত ভালো। না হলে ক্রমাগত এমন করেই কেটে কেটে যেতে হয়, রক্তাক্ত হতে হয়! হয়তো আরও বেশ কয়েকটা বছর...

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

Sunday, 19 December 2021

The Chaos...


Okay I get it. 💁🏻‍♂️


Life can literally have its shitty moments. It happens to us all. No matter how optimistic one can be, every now and then the f… bombs will fly out of our mouths.. 😄

Well maybe it is just me 🤣

However you choose to release that stress or frustration, chaos will find a way to do its thing. 🙏

The thing is this: It pulls things apart that we want to hold on to but don’t need to, in order to bring things together that will eventually workout to something better for us.

This is called CHANGE. And with it comes discomfort 😞

We will still kick and scream like children in a toy store not getting what they want, but once the dust settles we actually see what we are now receiving. We get a better playing hand 🤚🏽at life.

In the midst of chaos, hold steady, go with the flow and allow things to take their course.

#experience #leadership #success #motivation #education #ChinUpFiGHTERs 

Thursday, 9 December 2021

সূর্য সেন ও চট্টগ্রামে বিদ্রোহ


 

"বাবা, কি দেখছো?" ছেলে জিজ্ঞেস করলো। ছাত্র পড়িয়ে এখনকার কোভিড সময়ের CBSE ও ICSE-র টার্ম-১এর ফাঁকা টাইমে ইউটিউবে দেশাত্মবোধক এটা সেটা সার্চ করতে করতে সূর্য সেন নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, আমার রিসার্চের সেম-টাইমফ্রেমের মধ্যেই পড়ছিল।
উত্তরে আমি বললাম যে, "আজকের দিনে আমরা যে স্বাধীন দেশটি অর্জন করতে পেরেছি, যাদের জন্য পেরেছি, তাদেরই মধ্যে একজনের স্বমন্ধে প্রতিবেদন। এই যেমন গতকাল বিনয়, বাদল, দিনেশ এর জন্য মনে রাখা উচিত..."। বলে দুইজনে হুজুগে দু-দুটি সহজপ্রাপ্য সিনেমাও দেখে ফেললাম সকাল থেকে। ছেলেরও এখন ছুটি, সদ্য অ্যানুয়াল শেষ হওয়ায়। বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ও প্রতিবেদন দেখার পরে যে মুভি দুটি দেখলাম তা হল; ১: Chittagong (2012)
২: Khele Hum Jee Jaan Se (2010)
আপনারা আশা করি বুঝতেই পারছেন যে কোন বিপ্লবীর কথা আমরা বলাবলি করছিলাম। হ্যা, সূর্য সেন, 'মাস্টার দা' সূর্য সেন। তা ছেলের ইতিহাস বইতে সেও পড়েছে 'চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন'.. ব্যাস, ওর-ও বেশ ইচ্ছা চেপে বসল। ইতিহাসকে আরো জানার, আরো শেখার! স্বভাবতই প্রশ্ন এলো, "কে এই মাস্টার দা?" তার উত্তরে নিচের প্রতিবেদনটি লেখা রইল! 👇🏼

বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক হলেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক 'মাস্টার দা' সূর্য সেন। ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। সশস্ত্র অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যে সূর্য সেন তার ছাত্র ও সহযোগীদের নিয়ে 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি' গড়ে তোলেন। ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রি অম্বিকা চক্রবর্তী, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখ ৬৫ জন সঙ্গীকে নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ ও লুন্ঠন করেন। তাঁরা টেলিফোন, টেলিগ্রাফের তার বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে ‘স্বাধীন বিপ্লবী সরকার’ গঠন করেন। এরপর ইংরেজ সৈন্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করলে বিপ্লবীরা নিকটবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং যুদ্ধ শুরু করেন। সশস্ত্র যুদ্ধে কয়েকজন বিপ্লবী নিহত হন ও অন্যান্যরা পলায়ন করে কিছুদিন ধরে গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে যান। মাস্টারদার অন্যতম শিষ্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন এবং পুলিশের হাতে ধরা পরার আগে আত্মহত্যা করেন। অবশেষে ১৯৩৩ খ্রীষ্টাব্দে বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সূর্যসেন ধরা পড়েন, বিচারে তাঁর ফাঁসি (১৯৩৪ খ্রীঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী) হয়। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের এই যুব বিদ্রোহ সমগ্র ভারতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করে। চট্টগ্রামের ঘটনার গুরুত্ব বিচার করতে গিয়ে স্যার স্যামুয়ের হোয় একে ‘বিপ্লবীদের ইতিহাসে অভূতপূর্ব' বলে অভিহিত করেছেন।
এই হল সারমর্ম, কিন্তু আমার ইতিহাস আর ক্লাস সিক্সে পড়ার ইতিহাস কিছু হলেও ভিন্ন তো হবে, তাই না? আসুন আরো গভীরে যাওয়া যাক।

একপাশে কালী অপরদিকে বিবেকানন্দের ছবি রেখে যুদ্ধের বার্তা দিতেন মাস্টারদা:

'মৃত্যু কিংবা স্বাধীনতা', এই মন্ত্রে বিশ্বাস করতেন মাস্টারদা, তিনি সবার মাস্টারদা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বড় মুখ। সেই মাস্টারদা তাঁর সহ যোদ্ধাদের প্রত্যেকের ঘরে স্বামীজির ছবি রাখার কথা বলেছিলেন। বিবেকানন্দের আদর্শে যেমন উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন নেতাজী, তেমনই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনও। সেই তথ্য মেলে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে।

শঙ্করীপ্রসাদ বসু তাঁর ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’-এর ষষ্ঠ খণ্ডে ‘বিবেকানন্দ ও বিপ্লব আন্দোলন’ অধ্যায়ে বিপ্লবী অনন্ত সিংহের লেখা ‘সূর্য সেনের স্বপ্ন ও সাধনা’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, সূর্য সেন স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে কতখানি প্রভাবিত ছিলেন সে সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন তাঁর আর এক সহকর্মী অনন্ত সিংহ। "মাস্টারদা… বিনয়ের সঙ্গে অথচ অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে চারজন বিপ্লবী বন্ধুকে বললেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের বুকে বসে মাত্র এই পাঁচজনে ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবের পরিকল্পনা করছি। আমার মনে হয় বর্তমানে মূলত আনন্দমঠের আদর্শে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চলা উচিত এবং মা-কালী পূজা, স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগের বাণী ও গীতাপাঠ কর্তব্য হওয়া প্রয়োজনʼ, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবাই আলোচনার পরে মাস্টারদার এই সমস্ত প্রস্তাবগুলো মেনে নিলেন। প্রত্যেকের নিজের ঘরে মা-কালীর ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, স্বামী বিবেকানন্দের ছবি, ও একখানা গীতা রাখাটা নিয়মে পরিণত হল। আমাদের পরে যারা দলভুক্ত হয়েছে তারাও মা-কালী ও স্বামীজীর ছবি ঘরে রাখত এবং গীতা সঙ্গে রাখত।”

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য স্বামী পূর্ণাত্মানন্দকে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলেছেনঃ “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক লোকনাথ বল মহাশয়ের অধীনস্থ কর্মচারী ছিলাম। তাঁর নিজের মুখ থেকেই শুনেছি, মাস্টারদা যেমন আমাদের গীতার মর্মকথা বুঝিয়েছিলেন, তেমনি স্বামী বিবেকানন্দের বীরবাণী, বর্তমান ভারত, কর্মযোগ ও স্বামীজীর উদ্দীপনাময়ী বক্তৃতাবলী পড়তে উৎসাহ যোগাতেন।”

সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রাজমনি সেন এবং মায়ের নাম শশী বালা সেন। রাজমনি সেনের দুই ছেলে আর চার মেয়ে। সূর্য সেন তাদের পরিবারের চতুর্থ সন্তান। দুই ছেলের নাম সূর্য ও কমল। চার মেয়ের নাম বরদাসুন্দরী, সাবিত্রী, ভানুমতী এবং প্রমিলা। শৈশবে পিতা মাতাকে হারানো সূর্য সেন কাকা গৌরমনি সেনের কাছে মানুষ হন। সূর্য সেন ছেলেবেলা থেকেই খুব মনোযোগী ও ভাল ছাত্র ছিলেন এবং ধর্মভাবাপন্ন ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন।

১৯১৬ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সূর্য সেন সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন। বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি বলে প্রসিদ্ধ, অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। সূর্য সেনকে তিনি বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। সূর্য সেন ১৯১৮ সালে বিএ পাশের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রামে এসে গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেন ও উমাতারা উচ্চ-বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক রুপে যোগদান করেন। সেই শুরু, বাকিটা ইতিহাস।

১৯৩১ সালের এপ্রিল মাসে এক বিশেষ আদালতে রাজদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জন বন্দির বিচার আরম্ভ হয়। সূর্য সেন মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। একই সাথে তিনি আদালত ভবন ধ্বংস করারও উদ্যোগ নেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কল্পনা দত্ত। হামলার দিন ধার্য করা হয়েছিল ৩রা জুন। শেষ মুহূর্তে সর্বশেষ মাইনটি বসানোর সময় পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়ায় গোটা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।

সূর্য সেনের দলের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু সূর্য সেন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেলেন। এই সময় তাঁর গ্রেফতারের জন্য ৫০০০ টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়েছিল। এরই ভিতরে ১৩ জুন পটিয়ার ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে বিপ্লবীরা মিলিত হন। এই বাড়িতে তখন ছিলেন সূর্য সেন, নির্মল সেন, প্রীতিলতা এবং অপূর্ব সেন। সেখানে আচম্বিতে গোর্খা সৈন্য নিয়ে হানা দেয় ক্যাপ্টেন ক্যামেরন। এখানকার যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন নিহত হয়। বিপ্লবীদের পক্ষে শহিদ হয়েছিলেন নির্মল সেন। পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন অপূর্ব সেন (ভোলা)।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-এর ডায়রি থেকে জানা যায়, এই সময় অপূর্ব সেন জ্বরে কাতর ছিলেন। দোতলার একটি ঘরে প্রীতিলতা, অপূর্ব সেন ও নির্মল সেন ছিলেন। সৈন্যদের আগমনের কথা সূর্য সেন এসে সবাইকে জানান। সূর্যসেন প্রীতিলতাকে নিচের তলার মেয়েদের ভিতর পাঠিয়ে দেন। আক্রমণের শুরুতেই ক্যামেরন নির্মল সেনের গুলিতে আহত হয়। এরপর আরও কিছুক্ষণ উভয় পক্ষের ভিতর গুলি চলে। এক পর্যায়ে নির্মল সেন মৃত্যুবরণ করেন। পরে প্রীতিলতা ও অপূর্ব সেনকে নিয়ে সূর্য সেন সন্তর্পণে এই বাড়ি ত্যাগ করেন। এই সময় সৈন্যদের গুলিতে অপূর্ব সেন মৃত্যুবরণ করেন।

জুলাই মাসে সরকার সূর্য সেনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। তৎকালীন আনন্দবাজার পত্রিকায় এই বিষয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
'সূর্য সেনকে ধরিয়া দিতে পারিলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার।' এই ছিল শিরোনাম, নিচে বিস্তারিত খবরের বিবরণ দেওয়া হল।

খবরটি ছিল-
'১৯৩০ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কার্যে বিপ্লবী দলের নেতা বলিয়া কথিত সূর্য সেনকে যে ধরিয়া দিতে পারিবে, বা এমন সংবাদ দিতে পারিবে যাহাতে সে ধরা পড়ে, তাহাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হইবে বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। বিগত ১৩ই জুন তারিখে পটিয়ার বিপ্লবীদের সহিত যে সংঘর্ষের ফলে ক্যাপ্টেন ক্যামেরণ নিহত হইয়াছেন, সূর্যসেনই নাকি সেই সংঘর্ষের পারিচালক।'
(আনন্দবাজার। ৩রা জুলাই ১৯৩২)

এরপর সূর্য সেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করলেন। এ অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হল প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে আক্রমণ করা হল ইউরোপীয়ান ক্লাব। সফল আক্রমণ শেষে ফেরার পথে এক ইংরেজ অফিসারের গুলিতে প্রীতিলতা আহত হলেন। ধরা না দেবার প্রত্যয়ে, সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ পান করে তিনি আত্মাহুতি দিলেন। ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম নারী শহীদের নাম প্রীতিলতা।

‘ধন্যি ছেলে, দেখিয়ে গেছে আমরাও জবাব দিতে জানি’...তখন সবার মুখে মুখে এই কথা!

সূর্য সেন ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি গৈরালা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই সময় ইংরেজ সরকার তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছিল দশ হাজার টাকা। এখানে ব্রজেন সেন মাস্টারদাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। এই গ্রামের বিশ্বাস-বাড়ির গৃহবধু ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে ছিলেন। ব্রজেন সেনের বাসা থেকে কার জন্য খাবার নিয়ে ক্ষিরোদাপ্রভা বিশ্বাসের ঘরে যাচ্ছে, তা জানার জন্য ব্রজেন সেনের ভাই নেত্র সেন বিশেষ আগ্রহী হয়ে ওঠে। পরে সূর্য সেনের অবস্থানের কথা জানতে পরে, পুলিশকে খবর দেয়। তারপর রাতের বেলা আলোর সংকেত দেখিয়ে নেত্র সেন সৈন্যদের পথ দেখায়। বিষয়টি ব্রজেন সেন বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করেও সূর্য সেনকে রক্ষা করতে পারেননি। ক্যাপ্টেন ওয়ামস্‌লীর নেতৃত্বে একদল গোর্খা সৈন্য সূর্য সেনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারিতে তাঁর ফাঁসি হয়।

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। মূল লেখাটি ছিল ইংরেজিতে। নিচের তারই বাংলা তুলে ধরা হল -
'আমার শেষ বাণী –আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলছে। এই তো আমার সাধনার সময়। এই তো আমার বন্ধুরূপে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সময়, হারানো দিনগুলোকে নতুন করে স্মরণ করার এই তো সময়।

কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। তোমরা আমরা ভাই-বোনেরা তোমাদের মধুর স্মৃতি বৈচিত্রহীন আমার এই জীবনের একঘেয়েমিকে ভেঙে দেয়। উৎসাহ দেয় আমাকে। এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধুরা – এগিয়ে চল, এগিয়ে চল – কখনো থেমো না, পিছিয়ে যেও না। পরাধীনতার অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ঐ দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ। কখনো হতাশ হয়ো না। সাফল্য আমাদের হবেই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলের চট্টগ্রাম ইস্টারের দিনের সেই বিদ্রোহের কথা কোনো দিনই ভুলে যেও না। জালালাবাদ, জুলখা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের কথা সব সময় মনে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো। আমাদের সংগঠনে যেনো বিভেদ না আসে কখনো– এটাই আমার একান্ত আবেদন। যারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে, তাদের সকলকে জানাই আমার আশীর্বাদ। বিদায় নিলাম তোমাদের কাছ থেকে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

চট্টগ্রাম কারাগার
১১ই জানুয়ারি, ১৯৩৪
বন্দেমাতরম
সকাল ৭টা।

©উshaস চttopaধ্যায়~

[#তথ্যসূত্র_ঋন 👇🏼
• চিটাগং এন আপরাইসিং: মানিনি চ্যাটার্জি, কলকাতা ও সুবোধ রায়ের সাক্ষাৎকার ২০০৫

• চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : চারুবিকাশ দত্ত, কলকাতা

• আমি সুভাষ বলছি। প্রথম খণ্ড । শৈলেশ দে। বিশ্ববাণী প্রকাশনী। কলকাতা-৯। অগ্রহায়ণ, ১৩৭৫
ও শঙ্করীপ্রসাদ বসুর বই এবং উইকিপিডিয়া]

Thursday, 2 December 2021

রুজভেল্ট কে অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ!


১৯৩৩-এ অর্থনৈতিক অবস্থা! (রুজভেল্ট-কে সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গন্য করার কারণ)


#৮ম_এপিসোড #৮ম_অধ্যায় #বিশ্ব_পরিস্থিতির_৮ম_ভাগ


[৮ম এবং এই সিজনের অন্তিম পর্ব ***]


রুজভেল্টের মুখোমুখি হওয়া সমস্যার একটি অংশ ছিল যে ১৯৩৩ সালে কোন সুস্পষ্ট চুক্তি ছিল না, প্রকৃতপক্ষে কি কারণে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল কোন স্পষ্ট চুক্তি দ্বারা এটা বলা ছিল না যে কেন এটা এতটা খারাপ হয়ে গেছে অর্থনীতি, তাই রুজভেল্টের নতুন চুক্তি, বিভিন্ন উদ্যোগের একটি নীতি শুরু করেন। এমতাবস্থায় রুজভেল্ট ঘোষণা করেছিলেন, "আমাদের অবজেক্টিভস-এর মধ্যে আমি নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখি, এবং তা সমগ্র দেশের পুরুষ, নারী ও শিশুদের সর্বপ্রথম।" ৮ই এপ্রিল রুজভেল্ট তার অ্যাডভাইজারদের একথা জানান,  এবং এতে তারা যে খুব একটা খুশি ছিলেন, তা কিন্তু নয়। সবাই যে ক্ষেঁপে উঠেছিল তা না হলেও, সার্বিক মতামত ভালো ছিলনা। তার মধ্যে রয়েছে আরো একটি ব্যাপার, কার্যকরভাবে সোনার থেকে ডলারকে মুক্ত করা, মুদ্রার যথেষ্ট অবমূল্যায়ন করে সমগ্র আর্থিক বিশ্বের বিস্ময় ডেকে আনা।

অতিরিক্ত টাকা মুদ্রণ, মি. রুজভেল্ট মুদ্রাস্ফীতিকে অবলম্বন করেছিল যা আর আগের মতো ভয়ঙ্কর কার্যকরী কখনোই নয়। স্টক এক্সচেঞ্জের ডাউ, রকেটের মতো ওপরের দিকে উঠে গেল। সেই সময় নতুন যন্ত্রপাতির জন্য ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সামগ্রিক শিল্প উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাতীয় শিল্প পুনরুদ্ধারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়ে সে বছর। অনেকেই বলে যে এইসব ১৯৩৩ সালের আইনের অংশ ছিল কিন্তু পুনরুদ্ধারের গল্পের পুরোটা মোটেই এটা নয়, মানে বললে কম বলা হবে। এটি ১২২,০০০ পাবলিক বিল্ডিং, এক মিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা, ৭৭,০০০টি ব্রিজ বা সেতু এবং ২৮৫টি বিমানবন্দর ছাড়াও আরও অনেক কিছুর মধ্যে অর্থ নিবেশ করেছিল।

প্রায় ৪৫০,০০০ আমেরিকান, রাষ্ট্রীয় অফিসে তার প্রথম সপ্তাহে তাদের রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছিলেন এবং প্রতিদিন চার থেকে সাত হাজার আইটেমের মধ্যে মেল বা চিঠি আসতে থাকে। হুভারের প্রেসিডেন্সির সময় যেখানে একজন ব্যক্তি হোয়াইট হাউসের মেল রুমে কাজ করত, সেখানে এফ. ডি. আর.-এর জন্য কর্মীদের সংখ্যা ৭০-এ উন্নীত করা হয়।

বেশিরভাগ আমেরিকানরা তাদের রাষ্ট্রপতিকে আগে কখনও কথা বলতে শোনেনি, তাই তারা বিশ্বাস করেছিল যে, তিনি তাদের ভালো করতে চান। এবং যখন তার নীতি ব্যর্থ হয়, তখন তারা এই রূপ বলাবলি শুরু করে যে, আমাদের প্রেসিডেন্টকে ব্যাঙ্কার, কর্পোরেট হেডরা হারিয়ে দিচ্ছে, ওদের দ্বারা ব্যর্থ হচ্ছে ওনার তৈরী করা কর্মসূচী। আমাদের নিজের হাতে কিছু জিনিস তুলে নিতে হবে, নিজেরাই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি কারণ আমরা জানি এই যে রাষ্ট্রপতি আমাদের এগুলি করা দেখতে চান।
১৬ই জুন কংগ্রেসের জরুরি অধিবেশন শেষ হওয়ার সময়, রাষ্ট্রপতি যে অধিবেশনের আহ্বান করেছিলেন
শপথ নেওয়ার সময় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, এফ.ডি.আর. আইনে ১৫টি বিলে স্বাক্ষর করে লাগু করেছিল, আর এতেই একশো দিন পার হয়ে গেছিল!

নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন-এর মতে যে জিনিস টা পরিচালিত করেছিল সংস্কারক প্যাকেজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, যদিও কখনো এর আগে এত ব্যাপকভাবে আমেরিকান কংগ্রেসে আইন প্রবর্তন করা হয়নি, এটি ছিল কৃষি ও খামার বিল! এটি কৃষি খাতে কয়েক দশক ধরে চলা স্লাইডকে আটক করতে চাওয়া, যেটি ১৯৩৩ সাল নাগাদ প্রতি মাসে আনুমানিক ২০,০০০ হারে খামার বন্ধক রাখা, ব্যাংকগুলি এসব বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে এইসব কিছুর জন্য একটি সহযোগিতামূলক আদেশ আনার চেষ্টা করা হয়েছিল লন্ডনের রয়্যাল বরো অফ কেনসিংটনের একটি জাদুঘরে, পাথর এবং জীবাশ্মের মধ্যে সকলে একত্রিত হয়েছিল।

১৯৩৩ সালে লন্ডনে দ্বিতীয় বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি ডিসার্মামেন্ট সম্মেলনের সাথে মিলে যায়। এটিও কমবেশি একই সময়ে, জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হয়। পুরোটা না হলেও আংশিকভাবে, তবে কেন লন্ডনে? কারণ সমস্ত হোটেল জেনেভায় বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর লোকজনে ভর্তি। সম্মেলনে লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী (Ramsey Mcdonald) রামসে ম্যাকডোনাল্ডের বর্ণনা দিয়েছিলেন, "The fate of generations may well depend upon the courage the sincerity width of you which we are to show during the next few weeks. Let the world know, that we can show decision and give leadership অর্থাৎ প্রজন্মের ভাগ্য আপনার আন্তরিকতার ও সাহসের উপর নির্ভর করতে পারে। যা আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখাব। বিশ্বকে জানতে দিন, আমরা সিদ্ধান্ত দেখাতে পারি এবং নেতৃত্ব দিতে পারি।" তারপর এফ.ডি.আর. উদ্যোগটি ভেঙে দেয়, ৩-রা জুলাইয়ের বোমারু বার্তা হিসাবে যার পরিচিতি রয়েছে, তিনি এটি পরিষ্কার করে বলেছেন যে, জাতীয় অর্থনীতি ঠিক করা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ঠিক করার চেয়ে তার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে...


সুতরাং ১৯৩৩ সালের সারমর্ম, বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের ট্র্যাজেডি হল এই যে তিনটি প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তি একটি অর্থনৈতিক নীতি এবং একটি আর্থিক চুক্তি করতে সক্ষম হয়নি, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল। আমি বলতে চাইছি না যে, আপনারা তর্কে যেতে পারেন যে, তাদের সঠিক ধরণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না কিন্তু সহযোগিতা করার কোন রকম রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল না। এর ফলে হল যে
এরপরে জার্মানি বা ইতালি বা জাপানের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করার পরে যা কিছু হয়েছিল তা অনেক বেশি সমস্যাযুক্ত ছিল। অবশ্যই তাদের অর্থনীতি তার থেকে বিন্দুমাত্র ওপরের দিকে উঠে আসেনি, আরো বিষণ্ণতা ছেয়ে গেছিল, তার থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি যা অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, এক কথায় ১৯৩০-এর সম্পূর্ণ দশকে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল!

১৯৩৩ সালেই হিটলার চ্যান্সেলর হিসাবে তার প্রথম বক্তৃতা রেখেছিলেন, প্রকৃত ইতিহাস সর্বদা একই সময়ে অনেক কিছু ঘটার গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ১৯৩৩ সালে জেনারেল মোলা, যিনি স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পরিণত হওয়া ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তিনি লিখেছেন যে, 'হিটলার নিশ্চিত যে তার লোকেরা অর্থাৎ এন্টি সেমাইট জার্মান-রা আবার নিজেরা উপরের দিকে উঠতে পারবে না যতদিন ইহুদি জাতির লোকেরা তার মধ্যে মিলে মিশে থাকবে। সেজন্য সে তাদের নির্যাতিত করেছে, আর যা করেছে বেশ করেছে।' ১৯৩৩ সালে হিটলার সন্ত্রাসের ব্রাউন বইটি ২৭টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল খুবই সন্তর্পণে এবং যাচাইকরণের সাথে নাৎসি শাসনের রেজিমগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যাতে লোকেরা সেগুলো জানতে পারে। ১৯৩৩ সালে একটি জার্মান ক্যাথলিক সংবাদপত্র হিটলারের চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের বর্ণনা দেয় 'অন্ধকারে চলার মতো', কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আরো গাঢ় অন্ধকারে লাফেতে পরিণত হয়েছিল কিনা তা গোটা পৃথিবী জানে!!!

[১ম সিজন শেষ হল]

©উshaস চttopaধ্যায়~