Saturday, 26 June 2021

আলটপকা ...

আলটপকা:


আগুনের মতো টকটকে সুন্দরী একটা মেয়ে দেখিয়ে বউ বলল, "এই মেয়েটা সুন্দর না?"

কী ভেবেছেন? আমি বলবো, "হ্যাঁ, খুব সুন্দর!"
উহু, আমি এতো বোকা না। এবার কী ভাবছেন? আমি বলবো, "না সুন্দর না।" না, আমি এটাও বলবো না। এটা বললেও ধরা পড়বো। আমি খুব অনাগ্রহের সুরে বললাম, "দেখিনি!"

এরপর একটা মেয়েকে দেখিয়ে বললো, "এই যে, এই মেয়ের কথা বলেছি। খুব সুন্দর না?" মেয়েটাকে দেখে যে কারও মাথা ঘুরে যাওয়া স্বাভাবিক। পুরো একঘর, পরীর মতো সুন্দর। চাইলেই নায়িকা হতে পারবে। কী ভেবেছেন? এবার আমি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবো? উহু!

আমি নাক-মুখ কুঁচকে বললাম, "এই মেয়েকে তোমার কোনদিক দিয়ে সুন্দর মনে হলো?"

©উshaস চttopaধ্যায়~

#অনুগল্প #আলটপকা 

Saturday, 19 June 2021

বৃষ্টি প্রেম...

বৃষ্টি প্রেম

অঝোর ঝোরে বৃষ্টি! কি মনে হল, হঠাৎ এইরকম উদ্দাম বৃষ্টির দিনে বাইকে করে গিয়ে হাজির হই ওর বাড়ির নিচে, তারপর ওকে একটা ফোন করি;

-বাড়ির নিচে একবার আসতে পারবে?

-এই বৃষ্টির মধ্যে? কেন?

-আমি এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এসছি, আর তুমি এটুকু আসতে পারবে না?ওসব জানি না! আসতে বলছি তাই আসবে।

পারুলের বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি! ওর জন্য একেবারেই যেন আচমকা, তবু খুব-একটা সময় নেয়নি। পারুল এসে একটা হট বক্স হাতে দিয়ে বলল..
-খেয়ে নিও, তোমার পছন্দের খিচুড়ি।

-আমার তো এখন খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে না।

-তো কি?

-চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।

-যাও, একদম বদমাইশি কোরো না।

পারুল চলে যাচ্ছে, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তার চলে যাওয়া দেখছি।

হঠাৎ সে পেছনে ফিরে দেখে, আমি দাঁড়িয়ে আছি।

পারুল আমার কাছে এসে বলে,
-মাথা নিচু করো।

আমি মাথা নিচু করতে পারুল তার ওড়না দিয়ে বৃষ্টির জলেতে ভেজা আমার চুল মুছে দিলো, গালে একটা চুমু খেয়ে দৌড়ে বাড়িতে চলে গেলো!

হাজারো কষ্ট, অসুবিধা এবং অসুন্দরের মধ্যে হঠাৎ মনে হলে জীবনটা কতটা সুন্দর..

©উshaস চttopaধ্যায়~ 

#অনুগল্প #বৃষ্টি_প্রেম

Monday, 14 June 2021

লাইট হাউজ না ডার্ক হাউজ...

যেকোনো ধরনের লেখা পাওয়া বা পড়া যেতে পারে, তাতে ভ্রান্ত কিছু অবিবেচকের মতো প্রশ্ন হয়তো কেউ করতেই পারে, কিন্তু কোনটায় জবাব দেবো আর কোনটায় না, এই স্বাধীনতা আমায় আমার শিক্ষা ও জুকারবার্গ বাবু আরো এটায় তোল্লা দিয়েছেন!

আমার প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশা আমি রাখি তাই এই খোলা, উন্মুক্ত কয়েকটি প্রশ্ন যার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা না হলেও চলবে, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এর সদুত্তর দিতে যে প্রস্তুত, তার/তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইচ্ছা রাখি!

সরকার কি মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ‍্যালয় থেকে দলীয় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে চায়? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, চায় না।

তার মানে হলো, সরকার চায় না আমাদের বিশ্ববিদ‍্যালয়গুলো “লাইট হাউজ” হয়ে উঠুক। সেগুলো থেকে বিশ্বমানের তরুণ বের হোক। প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের ভিতর থেকে সম্ভাবনাকে বের করে আনুক, সেটা চায় না।

সরকার চায় না বিদ্যালয়ে প্রয়োগমুলক কোনোকিছু শেখাতে, বিশ্ববিদ‍্যালয়গুলো জ্ঞান-গবেষণা ও উদ্ভাবনের আধার হোক। যদি চাইতো, তাহলে মাস্টার প্ল‍্যান থাকতো। যদি চাইতো, তাহলে বিশ্বমানের গবেষণার জন‍্য সেরকম পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতো, মেগা প্ল‍্যান তৈরি করতো। গবেষণার জন‍্য অর্থ দিতো এবং খুঁজে খুঁজে জাঁদরেল শিক্ষক নিয়োগ দিতো। আমরা দেশ জুড়ে শিল্পী হান্ট করি, খেলোয়াড় হান্ট করি, অথচ বিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষক হান্ট করি না। —তখন দেখি কে কতো বেশি পরিচিতি নিয়ে এসেছে, রাজনৈতিক টিকিট নিয়ে এসেছে! কে কার স্ত্রী বা কার ছেলে, যে তরুণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জন করে।

জ্ঞান-গবেষণায় দাঁড়াতে না পারলে একটা জাতির শক্তি বৃদ্ধি পায় না। আর শক্তি না থাকলে, জাতীয়তাবোধের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বা ইদানিং কালের ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যে জাতি হিসেবে আমরা শক্তি অর্জন করতে না পারলে, যে কোন সময় যে কোন দেশ আমাদের উপর অন‍্যায়ভাবে আক্রমণ করতে পারে। আর সেটার জন‍্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সে প্রস্তুতি হতে হবে বিশ্বমানের।

আমি বলছি না ভারতবর্ষ অন‍্য জাতি বা দেশের উপর অন‍্যায়ভাবে কিছু করবে। আমি সেটার বিপক্ষে। এবং এটাও সত‍্য যে স্বাধীন ভারত কোন দেশের সাথে অন‍্যায়ভাবে এখনো কিছু করেনি। কিন্তু আমাদেরকে উদ্ভাবনে, আবিষ্কারে, রণ সরঞ্জামে এখনো অনেক দূর যেতে হবে, অনেক আধুনিক হতে হবে। আমরা কি বুঝি যে, ভারতবর্ষ দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের (রাশিয়া ও চীন) মাঝখানে “স‍্যান্ডইউচ দেশ” হিসেবে আছে। সাথে আছে সামরিক, সাম্প্রদায়িক শক্তি শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার। এই দেশগুলোর ত্রিভূজীয় স্থানে আমরা কী আজীবন নিরাপদ? —মোটেও না! মিয়ানমারের মতো দেশ কিভাবে সহস্র সহস্র রোহিঙ্গাকে শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে প্রথমে বাংলাদেশে ও পরে এদেষে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের সাথে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও চীন কেউ ছিলো না, এমনকি সমধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঠিকানা দিতেও অপারগ, খালি অন্য দেশের ঘটনায় আমাদের আবেগকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, আরে! আগে তো নিজেকে সামলাই! —সাম্প্রতিক এই ঘটনাই বলে দেয়, আমারা কতোটা নিরাপদ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিও আমাদের জন‍্য কোন সমাধান আনেনি। বস্তুত আমাদের কোন শক্তিশালী বন্ধুরাষ্ট্র নেই। তার প্রধাণ কারণ হলো, আমরা নিজেরাই শক্তিশালী নই। হ্যা, আমরা ধীরে ধীরে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছি, এখনো পুরোপুরি উঠিনি!

বিশ্বরাজনীতির মাঠে সত‍্য হলো, শক্তি অর্জন করো। তা না হলে, দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন। আমাদের শক্তি না থাকলে, আমাদের পাশে কেউ তেমন শক্তি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়াবে না।

আর সে জন‍্য দরকার বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা। বিশ্ববিদ‍্যালয়গুলোকে “লাইট হাউজ” তৈরি করা। এই বিষয়টা কিছু দেশনেতা বুঝেছিলেন, যেমন টেং সিওয়াপিং (Deng Xiaoping) বুঝেছিলেন, পার্ক চুং-হি (Park Chung-hee) বুঝেছিলেন। জওহরলাল নেহেরু কি বুঝেছিলেন? স্বাধীন ভারতের কোন নেতা বোঝেননি। কারণ আমরা শুধু রাজনীতিক পেয়েছি, দক্ষ দূরদর্শী স্টেটসম‍্যান (Statesman) পাইনি। Not a single one!

বিশ্ববিদ‍্যালয়ে চলমান যে নোংরা সংস্কৃতি, নিয়ম-নীতি—এগুলো দিয়ে বিশ্বমানের তো দুঃস্বপ্ন, উন্নত বিশ্বের তৃতীয় শ্রেণীর বিশ্ববিদ‍্যালয়ের মানেও দাঁড় করাতে পারবো না। লাইট হাউজের পরিবর্তে দিন দিন প্রতিষ্ঠানগুলো “ডার্ক হাউজে” পরিণত হচ্ছে।

আমরা কি বুঝি, যে দেশে বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব আছে, বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা আছে, সে দেশে এমনিতেই প্রতিরক্ষার বারুদ তৈরি হয়। আমেরিকা, ইসরাইল, দ. কোরিয়া, চীন কী তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নয়! আমরা যদি চারপাশে তাকিয়ে না শিখি, আমাদের দিকে মারণাস্ত্র ছুটে আসলে অসহায়ত্ব বরণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না!

©Uষস চttopaধ্যায়~

Monday, 7 June 2021

'স্ট্রেসমুক্ত জীবন' ...


"স্ট্রেস" আমাদের জীবনের একটা বিশাল সমস্যা। সব কিছুতেই টেনশন করা, মেজাজ খারাপ করা, সামনে পেছনে কথা বলা, অবার্চীনের মতো সমালোচনা করা, আমাদের অনেকেরই প্রাত্যহিক রুটিন।


ইঁদুর দৌড়ের রেজাল্ট নিয়ে হা-হুতাশ করতে করতে দিন পার করে দেয় অনেকেই। এটা হলে কি হতো, ওটা না হলে কেমন হতো, সেটা হবে তো, এসব ভেবে ভেবে সবসময় একটা অযাচিত আশঙ্কায় দিন কাটানোর মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।

কোনো সমস্যার সামনে পড়লে আমি সবসময় শুধু একটা কথাই ভাবি যে, "আমার চেয়েও হাজার গুন ঝামেলায় আছে পৃথিবীর আরো বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ, একটা কবিতার কথা আমার প্রায়ই মনে পরে তখন;

একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে

দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে

ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে

গেলাম ভজনালয় ভজন কারণে

সেথা দেখি এক লোক পদ নাহি তার

অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার...

আমার শুধু মনে হয় এমন জনবহুল দেশে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারাটাই একটা বড় প্রাপ্তি। সুস্থ শরীর নিয়ে, পরিবার আর বন্ধু স্বজন নিয়ে এক একটা দিন আনন্দের সাথে পার করতে পারাতেই জীবনের সার্থকতা। ব্রিটেনের একটা হাসপাতালের নার্সদের ইন্টারভিউ পড়ছিলাম, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল মানুষ মৃত্যুর আগে কি নিয়ে বেশি আফসোস করে? উত্তর দিয়েছিলো বেশ কিছু আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ বিষয়। মানুষ সবচেয়ে বেশি আফসোস করে অন্যে কি ভাববে তাই ভেবে নিজের পছন্দের কাজ আর প্যাশনকে এড়িয়ে জীবন যাপন করাকে। মানুষ আরো বেশি যে জিনিসটাকে নিয়ে আফসোস করে সেটা হলো, পরিবার আর বন্ধুদের সাথে যথেষ্ট সময় কাটাতে না পারাকে। আমরা অনেকই চাকরি বা ব্যবসার ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে জীবনের দারুন সময়গুলোকে এলোমেলো করে ফেলি।

স্ট্রেস এর আরেকটা কারণ হলো সমালোচনা সহ্য করতে না পারা। পৃথিবীর কেউই পারফেক্ট না, সবার ভুল থাকবেই। ভুল নিয়ে কেউ হয়তো অবিবেচকের মতো সমালোচনা করবে, কেউ করবে গঠনমূলক ভাবে! সমালোচনাকে এড়িয়ে না গিয়ে হাসি মুখে গ্রহণ করতে পারলেই অনেক সমস্যার সুন্দর সমাধান হয়ে যায়। কে কি ভাবলো আর বললো তা নিয়ে নিজের সুন্দর সময় ক্রমাগত নষ্ট করে ফেলার কোনো মানে নেই। প্রাকৃতিক গাছেদের সবুজ, আকাশের নীল বা সকালের সূর্য দেখেই খুশি হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

বুড়ো বয়সে হা-হুতাশ করার চেয়ে প্রতিটা দিনকে জীবনের শেষ দিন হিসেবে উদযাপন করাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। "সবাই খারাপ আর আমিই সবচেয়ে ভালো" এটা আরেকটা ভয়ানক ভুল উপলব্ধি। নিজেকে নিয়ে অহমিকায় ভোগার মতো বোকামি আর নেই ...

নিজেকে সাধারণ আর বাকি সবাইকে অসাধারণ ভাবতে পারলে একটা দারুন তৃপ্তি আসে মনে!

জীবনে যেন বলার মতো একটা গল্প থাকে। ঘুরে তাকালে যেন জীবনকে একটা দারুন ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো মনে হয়। আমরা সবাই একেকটা গল্প, একটা ছবি, আমরা অমূল্য!

©Uষস চttopaধ্যায়~

Saturday, 5 June 2021

বিদায় কুট্টি, চললাম আমরা...

প্রিয় দেবু ঘোষ,
এই পৃথিবী থেকে আমরা চলে গেলাম, তোকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গেলাম, আশা করি তুই নিশ্চয়ই করবি। আমার ঘরের যা কিছু জিনিস আছে, দায়িত্ব নিয়ে বিক্রি করে দিবি এবং আমি যে ভাবে বলে যাচ্ছি সেই ভাবে টাকা দিয়ে দিবি। আমার যে টাকা বাইরে পড়ে আছে সেগুলি আর নাই বা নিলি, আমার ব্যবসার টাকা ....
বলে কাকে কত টাকা দিয়ে যেতে হবে তার এক লিস্ট তৈরি করলেন সুবীর বাবু! এতক্ষণে নিজের ছেলেকে বালিস চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছেন, বউ পাশে পাথর হয়ে বসেই রয়েছে, কত মানত করে এই ছেলে পেয়েছিলেন, নিজেই যখন থাকবো না তখন আর দুঃখ করার দরকার নেই!

-আর উপায়ও তো নেই! কত জায়গায় লজ্জিত হতে হয়, লজ্জার মাথা খেয়ে রোজ ধার-বাকি তে নিয়ে আসি। আর না পেরে এইটাই আমি স্থির করেছি!
--সত্যিই তো, এরপর তো লোকে দেখলে ছি ছি করবে! কিছুই যখন করার নেই তখন কাজটা করেই ফেলো।
-আমায় ক্ষমা করো, বলেই বউয়ের গলাটা টিপে ধরলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়ল, তার স্ত্রীয়ের শরীর, পাশেই পড়ে আছে নিজেদের ছেলের লাশ
-আমাদের দিন শেষ ... বলেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন সুবীর গুহ!

সুবীর বাবু যার একটি রেডিমেড কাপড়ের দোকান ছিল।
না! দোকান বলতে ঠিক এখন যা বোঝায় তা নয়, তবু সোদপুরের রাস্তার ধারে একটা টিনের দেওয়াল ঘেরা একটি অস্থায়ী দোকান। করোনা কালের আগে বেশ ভালোই চলছিল তাদের, পুজো, ঈদ, মহরম, পয়লা বৈশাখ এইসব মিলিয়ে ভালই পসার হয়েছিল। ছোট দোকান হলেও ব্যস্ততা তো কম নয়, সেই সকাল থেকে একনাগাড়ে একেবারে রাত ১২ টা, লাস্ট ট্রেন যতক্ষণ পর্যন্ত না যেত। তিনজনের সংসার সুবীর বাবু, তার বউ, আর তাদের ছেলে, এই তো দু বছর আগে এইচ এস দিল! করোনার জেরে লকডাউন। আর তাতেই রোজগার বন্ধ। স্ত্রী ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এদিকে বাজারে দেনার পর দেনা। কীভাবে ঋণ মেটাবেন বুঝে পাচ্ছিলেন না সুবীর গুহ।

সোদপুর যে অঞ্চলে কিছুদিন আগে ভাড়া এসেছিলেন সুবীর গুহ, সে জায়গায় বেশ ক'জন ধার দেনা দিয়ে তার সাহায্য করেছে, তবু এভাবে দিনের পর দিন তো চলতে পারে না! গত দু-তিন দিন ধরে এলাকার মানুষরা তাঁদের দেখতে পাচ্ছিলেন না। হঠাত্‍ শুক্রবার(৪তারিখ) তাঁদের ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। আশেপাশের বাসিন্দারা খড়দহ থানায় ফোন করে। পুলিস এসে দরজা ভেঙে সুবীর বাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে।

পাশেই পাওয়া যায় তার স্ত্রী ও তার একমাত্র ছেলেকে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই চিঠি, সেখানে স্পষ্ট কতটা সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন তাঁরা। সেখানেও তিনি দেনা মেটানোর কথাই বলে গিয়েছেন। দেবু ঘোষ নামের কাউকে লিখেছেন সেই চিঠি। তাকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন, বাড়ির জিনিস পত্র বেচে সেই টাকা দেনা পাওনাদের দিয়ে দিতে বলেছেন তিনি। চিঠির শেষে লেখা রয়েছে, বিদায় কুট্টি এবং তারিখ ২/৬/২০২১...

[বিঃদ্রঃ- ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে] 

Friday, 4 June 2021

মিছে গর্বের কাহিনী ...

ক' বছর আগে খুব কাছের এক বন্ধুর উপর রাগ করেছিলাম, খুবই সামান্য এক বিষয়ে।


প্রতিদিন সুযোগ না হলেও প্রায়ই দুজনের দেখা হতো, কিন্তু! কি জানি কি মনে করে আমরা কেউই কারো সাথে কথা বলতাম না। একদিন পাড়ার দোকানে আমরাই দুজনে মুখোমুখি, বন্ধু মুচকি হেসে বললো - 'কিরে! কেমন আছিস?'
আমি সেদিন অহেতুক একটু বেশি ঘ্যাম নিয়ে নিয়েছিলাম, উত্তর দিইনি আর। ভেবেছিলাম দু-একদিন পর ঠিক করে নেবো সবকিছু। মনে মনে যে খুশি হইনি তা নয়, 'সেই তো তুই আগে আসলি,' এরাম একটা ভাব ছিল আমার মধ্যে!

বন্ধুটি আমার দুদিন পরই বাইক এক্সিডেন্টে মারা গেলো! সুযোগ দিলোনা আমাকে কিছুরই...

আমার আর ঠিক করা হলো না বন্ধুত্বটা!

জিনিসটা আজও আমায় গভীর ভাবে নাড়া দেয়! নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, বন্ধু আমার মুচকি হেসে বলছে -  "সেদিন একটু কথা বললে তোর কি খুব ক্ষতি হতো? যাক্ এখন তোর গর্বের সাথে ভালো থাকিস!"

মানুষের জীবন আর কচুপাতার জলের ভেসে থাকার মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ নেই, ক্ষণস্হায়ী জীবনে মান অভিমানগুলোও পুষে রাখাটা বোকামী। হঠাৎ করে কখন যে কে কাকে বিবেকের কাছে অপরাধী করে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যাবে বলা খুব মুশকিল।

যতোক্ষণ পর্যন্ত সুযোগ আছে ততোক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত, নিঃস্বার্থ ভাবে!
নিজেকে বাহাদুর বা সুপেরিয়র ভাবার কোনো কারণ আদৌ নেই, মানুষের ফুসফুস আর বেলুনের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্যও নেই, দুটোতেই হাওয়া ভরা থাকে, আনুমানিক পাঁচশো মিলিলিটার।
হাওয়া কে তো ধরে রাখা যায়না। বায়বীয় পদার্থ, উড়ে যায়, উড়ে যাবেই!

মাত্র পাঁচশো মিলিলিটার হাওয়ার গর্বে গর্বিত মালিক হয়ে, ইয়া বড়ো ভাব নেওয়াটাই আসলেই ব্যাপক মূর্খতা!

©Uষস চttopaধ্যায়~