যেকোনো ধরনের লেখা পাওয়া বা পড়া যেতে পারে, তাতে ভ্রান্ত কিছু অবিবেচকের মতো প্রশ্ন হয়তো কেউ করতেই পারে, কিন্তু কোনটায় জবাব দেবো আর কোনটায় না, এই স্বাধীনতা আমায় আমার শিক্ষা ও জুকারবার্গ বাবু আরো এটায় তোল্লা দিয়েছেন!
আমার প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশা আমি রাখি তাই এই খোলা, উন্মুক্ত কয়েকটি প্রশ্ন যার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা না হলেও চলবে, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে এর সদুত্তর দিতে যে প্রস্তুত, তার/তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইচ্ছা রাখি!
সরকার কি মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলীয় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে চায়? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, চায় না।
তার মানে হলো, সরকার চায় না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো “লাইট হাউজ” হয়ে উঠুক। সেগুলো থেকে বিশ্বমানের তরুণ বের হোক। প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের ভিতর থেকে সম্ভাবনাকে বের করে আনুক, সেটা চায় না।
সরকার চায় না বিদ্যালয়ে প্রয়োগমুলক কোনোকিছু শেখাতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান-গবেষণা ও উদ্ভাবনের আধার হোক। যদি চাইতো, তাহলে মাস্টার প্ল্যান থাকতো। যদি চাইতো, তাহলে বিশ্বমানের গবেষণার জন্য সেরকম পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতো, মেগা প্ল্যান তৈরি করতো। গবেষণার জন্য অর্থ দিতো এবং খুঁজে খুঁজে জাঁদরেল শিক্ষক নিয়োগ দিতো। আমরা দেশ জুড়ে শিল্পী হান্ট করি, খেলোয়াড় হান্ট করি, অথচ বিদ্যালয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হান্ট করি না। —তখন দেখি কে কতো বেশি পরিচিতি নিয়ে এসেছে, রাজনৈতিক টিকিট নিয়ে এসেছে! কে কার স্ত্রী বা কার ছেলে, যে তরুণ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জন করে।
জ্ঞান-গবেষণায় দাঁড়াতে না পারলে একটা জাতির শক্তি বৃদ্ধি পায় না। আর শক্তি না থাকলে, জাতীয়তাবোধের শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বা ইদানিং কালের ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় যে জাতি হিসেবে আমরা শক্তি অর্জন করতে না পারলে, যে কোন সময় যে কোন দেশ আমাদের উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করতে পারে। আর সেটার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সে প্রস্তুতি হতে হবে বিশ্বমানের।
আমি বলছি না ভারতবর্ষ অন্য জাতি বা দেশের উপর অন্যায়ভাবে কিছু করবে। আমি সেটার বিপক্ষে। এবং এটাও সত্য যে স্বাধীন ভারত কোন দেশের সাথে অন্যায়ভাবে এখনো কিছু করেনি। কিন্তু আমাদেরকে উদ্ভাবনে, আবিষ্কারে, রণ সরঞ্জামে এখনো অনেক দূর যেতে হবে, অনেক আধুনিক হতে হবে। আমরা কি বুঝি যে, ভারতবর্ষ দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের (রাশিয়া ও চীন) মাঝখানে “স্যান্ডইউচ দেশ” হিসেবে আছে। সাথে আছে সামরিক, সাম্প্রদায়িক শক্তি শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার। এই দেশগুলোর ত্রিভূজীয় স্থানে আমরা কী আজীবন নিরাপদ? —মোটেও না! মিয়ানমারের মতো দেশ কিভাবে সহস্র সহস্র রোহিঙ্গাকে শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে প্রথমে বাংলাদেশে ও পরে এদেষে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের সাথে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও চীন কেউ ছিলো না, এমনকি সমধর্মীয় সম্প্রদায়ের ঠিকানা দিতেও অপারগ, খালি অন্য দেশের ঘটনায় আমাদের আবেগকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, আরে! আগে তো নিজেকে সামলাই! —সাম্প্রতিক এই ঘটনাই বলে দেয়, আমারা কতোটা নিরাপদ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিও আমাদের জন্য কোন সমাধান আনেনি। বস্তুত আমাদের কোন শক্তিশালী বন্ধুরাষ্ট্র নেই। তার প্রধাণ কারণ হলো, আমরা নিজেরাই শক্তিশালী নই। হ্যা, আমরা ধীরে ধীরে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছি, এখনো পুরোপুরি উঠিনি!
বিশ্বরাজনীতির মাঠে সত্য হলো, শক্তি অর্জন করো। তা না হলে, দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন। আমাদের শক্তি না থাকলে, আমাদের পাশে কেউ তেমন শক্তি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়াবে না।
আর সে জন্য দরকার বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে “লাইট হাউজ” তৈরি করা। এই বিষয়টা কিছু দেশনেতা বুঝেছিলেন, যেমন টেং সিওয়াপিং (Deng Xiaoping) বুঝেছিলেন, পার্ক চুং-হি (Park Chung-hee) বুঝেছিলেন। জওহরলাল নেহেরু কি বুঝেছিলেন? স্বাধীন ভারতের কোন নেতা বোঝেননি। কারণ আমরা শুধু রাজনীতিক পেয়েছি, দক্ষ দূরদর্শী স্টেটসম্যান (Statesman) পাইনি। Not a single one!
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান যে নোংরা সংস্কৃতি, নিয়ম-নীতি—এগুলো দিয়ে বিশ্বমানের তো দুঃস্বপ্ন, উন্নত বিশ্বের তৃতীয় শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানেও দাঁড় করাতে পারবো না। লাইট হাউজের পরিবর্তে দিন দিন প্রতিষ্ঠানগুলো “ডার্ক হাউজে” পরিণত হচ্ছে।
আমরা কি বুঝি, যে দেশে বিশ্বমানের শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব আছে, বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা আছে, সে দেশে এমনিতেই প্রতিরক্ষার বারুদ তৈরি হয়। আমেরিকা, ইসরাইল, দ. কোরিয়া, চীন কী তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নয়! আমরা যদি চারপাশে তাকিয়ে না শিখি, আমাদের দিকে মারণাস্ত্র ছুটে আসলে অসহায়ত্ব বরণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না!
©Uষস চttopaধ্যায়~