সুইসাইডাল বক্স
উষস চট্টোপাধ্যায়
পর্ব : ১০ / অন্তিম পর্ব
_____________________
সবকিছু রিমার চোখের সামনে ভাসছে৷ রিমার মাথাটা ভীষণ ঘোরাচ্ছে৷ ভীষণ ক্লান্তি লাগছে, মনে হচ্ছে এই ঘাসের মধ্যেই শুয়ে পড়লে আরাম পেতো সে ....
তারপরও সে সেখান থেকে উঠে দাঁড়ায়৷ ভালো লাগছে না এই খোলা হাওয়াও তার! মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে কি আর খোলা হাওয়ায় মন জুড়ায়?
কলেজ স্কোয়ারে-র কাছে সিগন্যালে গাড়িটা থেমে আছে৷ কিন্তু... এ..এ কীভাবে সম্ভব..?
গাড়ির জানালা দিয়ে রিমা স্পষ্ট দেখছে সমাপ্তি বই দামাদামি করছে৷ ফুটপাতের বইয়ের দোকানে দাঁড়ানো লাল শার্ট আর কালো প্যান্ট পরা ছেলেটা পুরো সমাপ্তি-ই তো! এই মুখ চিনতে রিমার ভুল হবার কথা নয়৷ তারপরও নিজের চোখ আবার কচলে নেয় রিমা৷ ভুল দেখছে না তো সে! না না...! এই তো সমাপ্তি ... সমাপ্তি কি তাহলে বেঁচে আছে, লোকের চোখে ফাঁকি দিতে ছেলের রূপ ধারণ করেছে কি!?
রিমা দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে ছেলেটির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ...
তারপর গলায় একগাদা বিস্ময় নিয়ে বলে "সমাপ্তি না..."
ছেলেটি রিমার দিকে ঘুরে তাকাতেই জ্ঞান হারিয়ে ধপাস করে সেখানে পরে যায় রিমা ...
**********
হঠাৎ করে এমন সব ঘটণা আমার সাথেই কেন হয় কে জানে! মেয়েটার এখনো জ্ঞান ফেরেনি৷ খুব বড়লোকের মেয়ে বোঝা যাচ্ছে৷ মেয়েটির বাবা এসেছে, তারপর থেকে এখানে ডাক্তার-নার্সদের ছোটাছুটি বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে৷
আমি এখন এখানে বসে থাকবো না কি চলে যাবো সেটাও বুঝতে পারছি না; আমার আসলে কি করা উচিত? মেয়েটা বোধহয় তিতলী-র পরিচিত৷ আমাদের একই রকম চেহারা হওয়ায় ও আমাকেই তিতলী ভেবেছে৷ মৃত একজন মানুষকে চোখের সামনে জলজ্যান্ত দেখে বোধহয় মেয়েটা নিজেকে সামলাতে পারেনি৷ আমি ওকে এটুকুও বলার সুযোগ পেলাম না যে আমি সমাপ্তি নই বা ওর কোন রূপ ও ধারণ করিনি! আমি ওর-ই জমজ ভাই অমিত, সমাপ্তি নই..
আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছে৷ তিতলী আর আমার কলেজ পর্যন্ত একসাথেই পড়াশোনা ছিলো৷ তারপর তিতলী চান্স পেয়ে গেলো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর আমি ভর্তি হলাম অ্যামিটি কলেজে৷ কলেজ পর্যন্ত আমাদের বন্ধুবান্ধব সেম থাকলেও হায়ার স্টাডিতে গিয়ে ওর অনেক নতুন নতুন বন্ধু হয়েছিলো৷ ও যে রকম প্রানবন্ত মেয়ে ছিলো, সবার সাথে বন্ধুত্ব করতে পারতো এক নিমেষেই, এতই মিশুকে ছিলো!
এই মেয়েটাও বোধহয় তিতলীর ফ্রেন্ড ই হবে৷ আমার বোধহয় ওর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উচিৎ!
***********
রিমার জ্ঞান ফিরলো দীর্ঘক্ষণ পর৷ রিমার বাবা ওর মাথার কাছেই বসে ছিলো৷ ভদ্রলোক কান্নাকাটি করেছেন চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷ চোখ মুখ কেমন ফুলে আছে! রিমা ধীরে ধীরে বললো "স..মা..প্তি.."
রিমার বাবা ডেকে পাঠালেন সেই ছেলেটিকে, যে ছেলেটা ড্রাইভারের সাহায্য নিয়ে রিমাকে হাসপাতাল পর্যন্ত এনেছে!
রিমা আর ছেলেটি এখন মুখোমুখি ...
—কিন্তু.. এ কী করে সম্ভব, এ তো সমাপ্তির মুখ, পুরো সমাপ্তি!
—আপনি ভুল করছেন৷ আমি অমিত ওরফে রণি, ওর জমজ ভাই৷ সমাপ্তি আমদের ছেড়ে চলে গেছে দু'বছর আগে ..
এটুকু শুনতেই ডুকরে কেঁদে ওঠে রিমা৷ তারপর প্রথমবারের মতো নিজ মুখে তার বাবা আর রণির সামনে স্বীকার করে সবটা ...
রণি যা স্বপ্নেও ভাবেনি, তাই হলো আজ!
তার সামনে হাসপাতালের সাদা চাদরে ঢাকা দিয়ে শোয়ানো মেয়েটি আসলে তার বোন তিতলী-র খুনী!
দুই হাত জোর করে ক্ষমাপ্রার্থনা করছে খুনী মেয়েটি!
রিমার দিকে তাকিয়ে রণি বলে "তোমার কি মনে হয় না পুলিশের কাছে ব্যাপারটা বলা উচিত? নিজের ভাগের শাস্তিটা ভোগ না করলে শান্তি তে বাঁচতে পারবে তো..?"
**********
রিমার বাবা কাঁদছে..
সময়ের ব্যবধানে পুলিশ হাসপাতালে এসে স্টেটমেন্ট নিচ্ছে রিমার, সে আকুল হয়ে কাঁদছে..
আরেকজন আজ উদাসীন হয়ে কাঁদছে, সে রণি, ওরফে আঁধার ...আজ সে জানে তার তিতলী কেন তাদের ছেড়ে চলে গেছে ..!
(সমাপ্ত)
#ধারাবাহিক_গল্প #সুইসাইডাল_বক্স #শেষ_পর্ব
No comments:
Post a Comment