Sunday, 30 May 2021

বন্ধুদের স্মৃতি ...

বন্ধু! এই শব্দটির সাথে আমাদের অনেক স্মৃতি, অনেক মায়া জড়িয়ে থাকে, আমারও আছে!


ছোটবেলায় আমাদের পরিবারের বাইরে অধিকাংশ সময় কাটতো বন্ধুদের সাথেই।

স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস- জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আমাদের জীবনে বন্ধুদের ভূমিকা অপরিসীম।

স্কুলে খেলার সাথী ছিলো বন্ধু। পরীক্ষার হলে দুঃসময়ের সাথী ছিলো বন্ধু। স্কুল পালানো সহ সকল দুষ্টুমির সাথী ছিলো বন্ধু।

একটু বড় হয়ে যখন স্কুলগন্ডি পেরিয়ে কলেজে গেলাম তখন স্কুলের বন্ধুগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলো সময়ের ব্যবধানে। কলেজে যেতেই নতুন বন্ধু হলো। নতুন স্বপ্নের শুরুটাও এই বন্ধুর হাত ধরেই। কাউকে ভালো লাগলেও সেই বন্ধুদেরই সাথে শেয়ার করা, কেউ কষ্ট দিলেও কাঁধে হাত রাখে ঐ বন্ধুটিই।

কলেজ পেরিয়ে জীবনের সংগ্রাম, অফিস, তাতে যেতে হলে ট্রেন বাস বা কতকিছু। পুরোনো বন্ধুগুলো তখন জীবনের নতুন বন্ধু পেয়ে ভুলে যায় কিংবা সময়ের অভাবে ব্যস্ততার অজুহাতে দেখা করা বা ওভাবে ফোনে কথা বলার সুযোগ পায় না। আমরাও আস্তে আস্তে ভুলে যাই নতুন জায়গায় নতুন বন্ধুদের পেয়ে!

জীবন সংগ্রামের এই কঠিন পথে এখনো সময়ে অসময়ে আমাদের একমাত্র ভরসা এই বন্ধু। যে কথা পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারি না সেই কথা কতো সহজেই না শেয়ার করতে পারি কাছের বন্ধুটির সাথে। আমি হাসলে তারাও হাসে। আমি কাঁদলে তারা কাঁদে। মন খারাপ দেখলে নানা অজুহাতে মন টা ভালো করার চেষ্টা করে। কি না করে বন্ধুরা!

একটা সময়, যখন লেখাপড়া শেষ হয়, বন্ধুরা সবাই কর্ম জীবনে প্রবেশ করে, সংসার শুরু করে, একদিকে চাকরি, আরেকদিকে সংসারের দায়িত্ব, সন্তানের দায়িত্ব, বৃদ্ধ বাবা - মা এদের দায়িত্ব। এতো এতো দায়িত্বের ভীড়ে বন্ধুদের সাথে নিয়ম করে কথা বলা, দেখা করাটা আর হয়ে ওঠে না।

আমরা আস্তে আস্তে ভুলতে শুরু করি তাদের সাথে কাটানো মূহুর্তের সেই স্মৃতিগুলো। কতো সন্ধ্যায় একসাথে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নিজের জীবনের গল্প বলতে চেয়ে কতো হেসেছি তাদের সাথে, কতো চোখের জল মুছে দিয়েছে তারা। সময়ের পরিক্রমায় সেসব স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে যায়।

পথ চলতে চলতে কিংবা কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অথবা কোনো রেস্টুরেন্টে কখনো যদি বন্ধুর সাথে দেখা হয় তখন শুধুমাত্র কুশল বিনিময় টুকুই হয়। কেমন আছিস? কেমন চলছে? ব্যস, এই টুকুই!

ব্যস্ত সময়ের মাঝে একটু ফাঁকা সময় পেলে যখন আমাদের গান শুনতে ইচ্ছে করে তখন মনের অজান্তেই সার্চ করে ফেলি সায়ানের "এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে সকাল বিকেল বেলা, কতো পুরনো নতুন পরিচিত গান গাইতাম খুলে গলা।" কিংবা পার্থ বড়ুয়ার, "দেখা হবে বন্ধু কারণে অকারণে, দেখা হবে বন্ধু চাপা কোনো অভিমানে" অথবা অনুপমের "বন্ধু চল রোদ্দুরে। মন কেমন মাঠজুড়ে। খেলবো আজ ঐ ঘাসে। তোর টিমে, তোর পাশে.."

কখনও মনের অজান্তেই গেয়ে উঠি মান্না দে র অতি পরিচিত সেই গানের একটি লাইন "কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেল গুলো সেই, আজ আর নেই।"

হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা অবসর সময়ে স্মৃতিচারণ হয়ে যায় বন্ধুদের সাথে কাটানো সেই সোনালী সময়ের হাজারো মূহুর্তের কথা। মনের অজান্তেই তখন মুখে ম্লান হাসি এঁকে আমরা বলি "যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস বন্ধুরা..."

#বন্ধুদের_স্মৃতি

©উষস চট্টোপাধ্যায়~
তাং- ৩০|৫|২১

Friday, 28 May 2021

কানের দুল ...

--ম্যাডাম, আগামী মাসের মাইনেটা অ্যাডভান্সে দেওয়া যাবে?

- খুব বেশী প্রয়োজন কী স্যার?
--আঞ্জে হ্যা, একটু প্রয়োজন তো ছিলই।
- আচ্ছা।।

যাক দু হাজার টাকার জোগাড় হল টিউশন থেকে। বাকী আরো তিন হাজার। হাতে সময় বেশি নেই।

আমি হাটছি। আর ভাবছি কীভাবে তিন হাজার টাকা জোগাড় করা যায়।

বন্ধু বিতান বলেছিলো একটা টিউশনি পেয়েছে, কথা হয়ে গিয়েছে। সেখানে গেলাম। ক্লাশ নাইনের দুজন ছাত্র। অথচ মাইনে মাত্র সাত 'শ টাকা করে। তবুও রাজী হয়ে গেলাম। বলতেই এক মাসের মাইনে অগ্রিম পেয়ে গেলাম। বাড়িতে এসে গত এক বছর ধরে জমানো টাকা গুনলাম। একুশ 'শ টাকা হল।

আজ আমি অনেক খুশি। পাঁচ হাজার টাকার মতোন জোগাড় হল।

ধর স্বর্নকারের দোকানে প্রতিদিন যেতাম। এক জোড়া কানের দুল কিনব। মনের মতন কানের দুলটা শুধু এই দোকানটাতেই আছে। গত একটি বছর যাবত দুলটি পাহারা দিয়ে আসছি। অবশ্য প্রতিমাসে একশ টাকা করে দিতাম যাতে দুলটি বিক্রি না করে। আজ পাঁচ হাজার টাকায় আমার দুলটি কিনে নিলাম।।

আমি অয়ন, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত টিচার, মা গৃহিনী, আর ছোট বোনটা এখনো উচ্চ-মাধ্যমিক দেয়নি। অভাবটা আমার বড়ই আপন। মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সময় কোনভাবেই ভর্তির টাকাটা ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। মা আমার বাবার দেওয়া একমাত্র স্মৃতি একজোড়া কানের দুল আমার হাতে তুলে দেন। তখন আমি নিরুপায়। বাবাও নিশ্চুপ। বাধ্য হয়েই সেই দুল জোড়া ধর স্বর্নকারের দোকানে বিক্রি করে দিলাম। আজ সেই দুলজোড়াই আবার কিনলাম।

আজ মে মাসের শেষ রবিবার। এই মে মাসেই, দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস, সেদিনের মধ্যে চেষ্টা করেছি অনেক, কিন্তু হয়ে ওঠেনি, আজ পারলাম। মেস থেকে বাড়ি আসলাম। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মায়ের দুটো কান খালি।বেশ বেমানান লাগছে।

সুন্দর একটা কেক নিয়ে ছিলাম। মাকে কেকটা কাটতে দিলাম, বললাম মাদার্স ডে তে আসা হয় নি, তো রোজই তো মাদের দিন, তাই না। ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা কৌটো। মা হাতে নিলেন। কৌটোটা খুললেন। মা'র চোখ আটকে গেল এক বছর আগে হারানো কানের দুলটির দিকে।

মা আমার কাঁদছেন। দুচোখের জল মুছে বললাম "এমা, কাঁদছো কেন, সুন্দর একটা দিন সেলিব্রেট করছি, কাঁদতে নেই। আজকের এই দিনটা শুধু তোমার জন্য"।

বাবা নিরব দর্শক ছিলেন, উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, বোন ও জড়িয়ে ধরল আমায়, চোখের কোনটা আমারও কিচকিচ করে উঠল।।

তিনজন তিনপাসে আকড়ে ধরে আছে আমায়। মা-বাবা-বোনের শীতল স্পর্শে মনটা নেচে উঠল।।

:
"সুখগুলো আমারই থাকে দুঃখগুলো না। কষ্টগুলো ভাগ করে নেয়, সে যে আমার মা"।

জনম জনম মায়ের প্রতি ভালোবাসা হোক অকৃত্রিম।।

©Uষস চttopadhyay~
তাং:- ২৮|৫|২১