Sunday, 2 October 2022

গান্ধী, জাতির জনক নাকি...?

"গান্ধী জাতির জনক নাকি ভন্ড" 


                                    - উষস চট্টোপাধ্যায়!



গান্ধীজি, জাতির জনক! অর্থাৎ আমরা মানি আর না মানি, জন্মানোর পরপরই যবে থেকে গান্ধীজির কর্ম, নাম এবং কীর্তি র সাথে অবগত হই, তখনই নিজেদের বে.জ.ন্মা গালাগাল দিয়ে থাকি। হয়তো আমার এই কথার অনেক ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া হতে চলেছে, তবু একটু সময় দিলে, নিজের বিচারবুদ্ধি কে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। কিভাবে একটা দেশ শুধু একজনের ই বিচারবুদ্ধির সেবক হলো, আইডিয়োলজির শিকার হলো। না হলে আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ী, অবিভক্ত বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ, চিত্র পরিচালক তপন সিংহ, বা ফুটবলে উন্মাদনা প্রিয় বাঙালির সুভাষ ভৌমিকের ও আজ জন্মদিন। কারোর জন্মদিন নিয়ে এরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিনা, এমনই তাঁর মাহাত্ম্য! 


স্কুলে যাওয়ার সময় থেকেই শুনে আসছি যে মহাত্মা গান্ধী একজন ব্যারিস্টার ছিলেন। তখন থেকেই ভাবতাম যে উনি নিশ্চয়ই অনেক শিক্ষিত, অনেক জ্ঞানী। পরে জানতে পারলাম যে গান্ধীজি তাঁর সারাজীবনে একটিই মাত্র শিক্ষাগত সার্টিফিকেট অর্জন করতে পেরেছিলেন, তা হল ম্যাট্রিক পাসের সার্টিফিকেট। ১৮৮৭ সালে গান্ধীজি টেনেটুনে কোনমতে থার্ড ডিভিশনে ম্যাট্রিক পাশ করেন! তখনকার দিনে ব্যারিস্টার হতে হলে কোন পরীক্ষাই দিতে হতো না, কিছুদিন কোন বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ ব্যারিস্টারের সহকারী হিসেবে কাজ করলেই ব্যারিস্টার হিসেবে বার এসোসিয়েশনের সদস্য হওয়া যেতো। কিন্তু এই সহকারী হওয়ার জন্যও গান্ধীজির ভারতীয় সার্টিফিকেট এবং তার ফলাফল গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। এ জন্য গান্ধীজিকে আবার লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসতে হয়। প্রথম বার সেই পরীক্ষায় ফেল করার পর গান্ধীজি দ্বিতীয় বারে কোনমতে পরীক্ষায় পাশ করতে সক্ষম হন এবং একজন ব্যারিস্টারের সহকারী হওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করেন। তখনকার যুগের অনেক মানুষেরই প্রথাগত শিক্ষা খুব বেশি থাকতো না, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তাঁরা ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু গান্ধীজির আচরণে এটা স্পষ্ট হয় যে তাঁর মধ্যে সেই স্বশিক্ষা ছিল না।


গান্ধীজির এক গালে চড় মারার থিওরি নিয়ে নানা মানুষ মত দিয়েছেন কিন্তু তিনি নাকি এইটা বলতেন, “একজন সত্যাগ্রহী সব সময় আক্রমণকারীর দ্বারা নিহত হবার কামনা করবে, কিন্তু কাউকে হত্যা করার কামনা করবে না।" ভাবতে পারা যায়? 


যেখানে পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্রতম প্রাণীও আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে টিকে থাকার চেষ্টা করে, সেখানে গান্ধীজির এই নীতির অসারতা সহজেই অনুমেয়।


বসন্তের টিকা দেওয়াকে গান্ধীজি পাপ বলে মনে করতেন। এর মূল কারণ হল গান্ধীজি ছিলেন পাশ্চাত্য চিকিৎসা পদ্ধতির বিরোধী। তিনি ইঞ্জেকশন দেওয়াকে ও অপারেশন করাকে হিংসা বলে মনে করতেন। ১৯৪৬ সালে গান্ধীজির স্ত্রী কস্তুরবাইয়ের ম্যালেরিয়া জ্বর হয়। ডাক্তার তাঁকে পেনিসিলিন ইনজেকশন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই জন্য বৃটিশ সরকার তাঁর জন্য লণ্ডন থেকে পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন নিয়ে আসে, কিন্তু গান্ধীজী হিংসার নাম করে সেই ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে বাধা দিলেন। এর ফলে গান্ধীজির স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। অথচ ১৯২২ সালে যখন কারাবাসের সময় গান্ধীজির খুব আমাশা হয় এবং ডাক্তার তাঁকে নিয়মিত ইঞ্জেকশন নিতে বলেন, তখন তিনি তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর গান্ধীজির এ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়, গান্ধীজি তখন অপারেশন ও করান।


নেতাজি বলেছিলেন, “বৃটিশের নির্দেশে গান্ধীজি যখনই কোন আন্দোলন তুলে নিতেন, তখনই তিনি নিজের শয়তানীকে চাপা দেওয়ার জন্য বা দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য অনশন শুরু করতেন।” গান্ধীজির সকল প্রকার অনশন ও কারাবাস ছিল বৃটিশদের পরিকল্পনার অংশ।


ড. আম্বেদকরের মতে, “গান্ধীজি ছিলেন শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালীন একবার গান্ধীজি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলামের মধ্যে তুলনা করে একটি বক্তৃতা দেন, সেই বক্তব্যে একটি বিশেষ জাতি ক্ষুব্ধ হয় এবং ১৯০৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কয়েকজন 'শান্তিপ্রিয়' মানুষ তাঁর ওপর হামলা করে এবং তাঁকে প্রচণ্ড প্রহার করে। এরপর থেকেই গান্ধীজি সেই বিশেষ জাতির সর্বপ্রকার সমালোচনা করা বন্ধ করে দিলেন এবং তারপর থেকেই তিনি তাদের অত্যন্ত গর্হিত অপরাধকেও অপরাধ বলে মনে করতেন না।


মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। ১৯২২ সালে যখন তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে পুনের জেলে ছিলেন তখন তাঁর জন্য জেলের মধ্যে দুটি ঘর বরাদ্দ করেছিল চিরশত্রু ইংরেজ। একটি ঘর শোয়ার জন্য, আরেকটি চরকা চালানো ইত্যাদি কাজকর্মের জন্য। 


তাঁর রোজকার খাদ্য তালিকায় ছিল: ২৫০ গ্রাম আটার রুটি, মাখন, সওয়া এক কিলোগ্রাম ছাগলের দুধ, চারটে কমলা লেবু, দুটো পাতি লেবু, ৫০ গ্রাম কিসমিস, খাবার সোডা ইত্যাদি। 


এসব জেনেও প্রাণ কাঁদে! কি কষ্টেই না থাকতেন তিনি! আর চরকা চালিয়েই তো আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে… তাই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া জাতির জনককে শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর আরেক দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা আপামর জনসাধারণের মন থেকে মুছে দিতে চলেছি। তিনিও নাকি মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে এক বিরাট কোনো গোপন তথ্য জেনেছেন বলে তাঁর স্ত্রী কে জানিয়েছিলেন রাশিয়া থেকে। সেই গোপন তথ্য যে কী, তা তাঁর রহস্যময় মৃত্যুর সাথে ই চিরতরে হারিয়ে গেছে।


শহীদ ভগত সিংকে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানোর সময় “অহিংসা পরম ধর্ম”- এই কথার প্রবর্তক এবং প্রচারক মহান অহিংসাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “বৃটেনের বিনাশের বদলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা চাই না”। তিনি আরও বলেছিলেন, “ভগত সিং-এর বন্দনার ফলে দেশের সমূহ ক্ষতিসাধন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ফাঁসী শীঘ্র কার্য্যকর করা হোক। আর যাতে ৩০শে মার্চ, করাচীতে কংগ্রেসের অধিবেশনে কোনপ্রকার বাধাবিপত্তি না আসে, তার ও ব্যবস্থা করা হোক” অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর কথা অনুসারে তিনি কাউকে ফাঁসী দেওয়াকে হিংসা বলে গণ্য করতেন না। হিপোক্রিট কত ধরনের হতে পারে..


শহীদ উধম সিং যখন ইংল্যণ্ডে জেনারেল ডায়ার'কে হত্যা না করতে পেরে সেই বিচার দেওয়ার আরেক ম্যাজিসেট্রট ডায়ার কে হত্যা করেন, তখন মহাত্মা গান্ধী তাঁকে পাগল আখ্যা দেন। তাই প্রসিদ্ধ লেখক শ্রীযুক্ত নীরদ চৌধুরী লিখেছেন, “গান্ধী পৃথিবীর সবথেকে সফল ভণ্ড.."


আরও একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রীযুক্ত যতীন দাসকে যখন ইংরেজরা আগ্রায় মৃত্যুদণ্ড দেয়, তখন মহাত্মা গান্ধী আগ্রাতে ছিলেন। যখন মহাত্মা গান্ধীকে ওনার পার্থিব শরীরে মালা দিতে বলা হয় তখন উনি স্পষ্টতঃ অনীহা প্রকাশ করেন। অর্থাৎ মহান শহীদ যতীন দাসের দেশের জন্য এই আত্মবলিদান মহাত্মা গান্ধীর বিন্দুমাত্র সহানুভূতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয় নি। অথচ কংগ্রেস এবং মহাত্মা গান্ধী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজদের সমর্থন করেছিলেন। যতটুকু জানি যুদ্ধক্ষেত্রে কোন সৈনিক অপর পক্ষের সৈনিককে ভালোবেসে মিষ্টি উপহার দিতে আসে না, সেখানে হিংসারই প্রতিফলন ঘটে। আশ্চর্য্য অহিংসাবাদী নেতা ছিলেন আমাদের মহাত্মা গান্ধী! তাই না?


যখন ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস অধ্যক্ষ পদের নির্বাচনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং মহাত্মা গান্ধীর মনোনীত প্রার্থী ডঃ পট্টভী সীতারামাইয়া-এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হয় তখন মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ডঃ পট্টভী সীতারামাইয়া নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন। বলাবাহুল্য, নেতাজি বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়ী হন (অবশ্য পরে মহাত্মা গান্ধীর সম্মান রক্ষার্থে তিনি পদত্যাগ করেন)। যদিও আমরা দেখতে পাই যে মহাত্মা গান্ধী আমৃত্যু সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।


তদ্রূপ মহাত্মা গান্ধীর আরও একটি উক্তি ছিল যে, “পাকিস্তান যদি সৃষ্টি হয় তবে সেটা আমার মৃতদেহের উপরে হবে।” যদিও পাকিস্তান তাঁর সামনে সৃষ্টি ও হয়ে গেল আর এখন ও আমাদের পেছনে কাঠি করে চলেছে। এর পরেও কী মনে হয় না, যে এতে তাঁরও (মহাত্মা গান্ধীর) পূর্ণ সমর্থন ছিল। কি অসাধারণ সত্যবাদী ছিলেন আমাদের মহাত্মা গান্ধী তা পাঠকদের বিবেচনা ওপর ছেড়ে দিচ্ছি।


মহাত্মা গান্ধী তাঁর জীবনে তিনটি আন্দোলন এর সূচনা করেন এবং নেতৃত্ব দেন। আশ্চর্য্যের বিষয় যে সেই তিনটি আন্দোলনই তিনি মাঝপথে থামিয়ে দেন। তা সত্ত্বেও ভারতবর্ষে প্রচার করা হয় যে চরকা কেটে মহাত্মা গান্ধী ভারতবর্ষ স্বাধীন করেছিলেন। কি হাস্যকর কথা! 


ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সম্পর্কে ইতিহাসবিদ আর সি মজুমদার লিখেছেন, “ভারতের স্বাধীনতার জয়মাল্য গান্ধীর গলায় পরানো সত্যের সাথে মজা (মস্করা) করার সামিল হবে। এই কথা বলা যে সত্যাগ্রহ এবং চরকা দিয়ে উনি স্বাধীনতা এনেছেন এটা চরম মূর্খতা হবে। সেইজন্য গান্ধীকে স্বাধীনতার ‘নায়ক’ বলা সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা হবে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের রক্ত বইয়েছিলেন।” 


ঋষি অরবিন্দ বলেছিলেন- “ভারতবর্ষ সেদিনই প্রকৃত স্বাধীন হবে, যেদিন দেশবাসী গান্ধীবাদের আদর্শকে যতখানি সম্ভব ঝেড়ে ফেলতে পারবে। ....."


ক্লেমেন্ট রিচার্ড অ্যাটলী যিনি ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা সিদ্ধান্তের কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি ১৯৫৬ সালে একবার ভারত সফরে এসে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল জাস্টিস পি বি চক্রবর্তীর গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়েছিলেন। পি বি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি ক্লেমেন্ট অ্যাটলীকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কী কারণে আপনারা এত দ্রুত ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?’ তিনি আমাকে বলেন, ‘নেতাজির সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মধ্যে ব্রিটিশ রাজের প্রতি বিদ্রোহ দানা বাঁধছিল। তারা আর অনুগত থাকছিল না।’


পি বি চক্রবর্তী জানান, "আমি আরও জানতে চাইলাম, ভারত ছাড়ার পেছনে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের ভূমিকা কতটুকু ছিলো?’ অ্যাটলী তখন ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি টেনে বললেন, মি-নি-ম্যা-ল অর্থাৎ (সামান্যই)।"


যারা নেতাজীর ভয়ে দেশ ছেড়ে পালালো তারা নিজেরাই স্বীকার করছে তারা নেতাজী সুভাষের কর্মকাণ্ডের ভয়ে পালিয়েছে, আর আমরা ৭৫টা বছর ধরে গান্ধীজীর দর্শন নিয়ে মাথা কুটে মরছি। 


এতো কিছুর পরেও একটা জিনিসের কথা আমার অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, গান্ধী ভারতবর্ষের প্রথম সাধারণ ও সার্বিক নেতা, যে দেশবাসীর নাড়ির খবর রেখেছিল। এই পরিমান ব্যাপ্তি, যে দেশে দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার সকলের কাছের এবং নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল, তার কিছু পরিমাণ ক্যারিশমা তো ছিলই, তাই না? 


আমি গান্ধীর জন্মদিনে এই আলোচনা সবার সামনে রাখলাম, আশা করি লোকজনের চোখ একটু বেশিই উন্মুক্ত হবে, লোকজনের বিচার করার ক্ষমতা একটু বাড়বে, জয় হিন্দ!

        


*তথ্যসূত্র:-


১). "আম্বেদকর বনাম গান্ধী”, 

২). "গান্ধীজির অপকর্ম”, 

৩). “আমি সুভাষ বলছি”, 

৪). ”সুভাষ ঘরে ফেরে নাই”, 

৫). গান্ধীর আত্মজীবনী “My Experiment with truth”, 

৬). “হস্তান্তর”– শ্রীশঙ্কর ঘোষ, 

৭). নীরদ চৌধুরী ও ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার গ্রন্থ। 

Sunday, 13 February 2022

মোহর ভালোবাসার!


#মোহর_ভালোবাসার

[ভালোবাসা উপলক্ষে একটি ছোট্ট পরিবেশনা। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।]
...................................................

ছেলেটা অপরাধীর মতো মেয়েটার পাশে দাড়িয়ে আছে। আর মেয়েটা জেরা করে যাচ্ছে অনবরত।

: কি? আমাকে ভালোবাসো?
- হুম।
: খুব বেশী?
- হুম।
: প্রেম করতে চাও?
- হুম।
: আমি কিন্তু ডেঞ্জারাস টাইপের মেয়ে। দুদিন পর প্রেম করার শখ মিটে যাবে নাতো?
- না।
: আমার সাথে প্রেম করতে হলে অনেক শর্ত মেনে চলতে হবে। পারবে?
- পারবো।
: শর্ত না শুনেই পারবে?
- হুম।
: তবুও বলে দিচ্ছি, যখন তখন দেখা করতে চাইবে না!
- আচ্ছা।
: রিকসায় উঠলে আমার চেয়ে চার আঙ্গুল দূরে বসবে, অযথা রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা বলে রিকসার হুড উঠানোর চেষ্টা করবে না।
- আচ্ছা।
: রাস্তা পারাপারের সময়, রিকসায় ওঠা ইত্যাদি নানান অজুহাতে হাত ধরতে চাইবে না। এতোদিন একাই চলেছি। এসব আমি ভালোই পারি। আমার কেয়ার আমি নিজেই করতে পারি।
- আচ্ছা।
: আর সব শেষের কথা, আমার সাথে প্রেম করবে সে ভালো কথা কিন্তু আলগা পিরিত দেখাবে না। এসব আমার সহ্য হয়না। 'আলগা পিরিত' কি বোঝ তো?
- হুম বুঝি। আচ্ছা দেখাবো না। মাত্র এই ক'টা শর্ত!?
: আপাতত এই ক'টাই, পরে লাগলে আরও দেবো।

ছেলেটা মনে মনে ভাবছে, এই মেয়ে তো দেখি খাঁটি  দজ্জাল! দজ্জাল মেয়েদের সাথে প্রেম করার উপায়টা শিখে নিতে হবে। ছেলেটা আর কোন কথা না বাড়িয়ে সকল শর্তে রাজি হয়ে গেলো।

বেশ কিছুদিন পর, এই জুটি রিকসায় করে কোথাও যাচ্ছে। মেয়েটা ছেলেটার হাত আকড়ে হঠাৎ বলে উঠলো,
: এই তুমি কি সত্যিই ছেলে?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? কোন সন্দেহ আছে?
: সন্দেহ নেই, কিন্তু ছেলেরা তো অনেক কেয়ারিং হয়। তুমি মোটেও কেয়ারিং না।
- তোমার আবার কোন কেয়ারের অভাব পড়ল?
: দেখছো না কত ঠান্ডা? হুডটা উঠিয়ে দিলেই তো পারো।
- তুমি তো আমাকে হুড ওঠাতে বারন করেছিলে তো! শর্তের কথা মনে নেই?
: মনে আছে। কিন্তু সব কথা কি শুনতে হবে? কিছু কিছু শর্ত তো না শুনলেও পারো।
ছেলেটি রিকসার হুড ওঠাতে ওঠাতে বললো, "শর্ত ভাঙ্গলে তুমি কি আমাকে আস্তো রাখতে? ঝগড়া করে করে আমাকে শেষ করে দিতে না!"
: সব কথা শুনলেও তো ঝগড়া করি। এইযে, এখন যেমন করছি।
- এতো দেখি উভয় সঙ্কট! কথা শুনলেও ঝামেলা; না শুনলেও ঝামেলা।
: আচ্ছা, এখন থেকে সব কথা শুনতে হবে না। কিছু কিছু কথা না শুনলেও হবে। এখন টিস্যু পেপার দাও তো!
- টিস্যু দিয়ে কি করবে?
: লিপস্টিক মুছবো।
- কেন? কী দরকার? সুন্দর লাগছে তো।
: তাহলে কিন্তু তোমার গালে লাল লিপস্টিক লেগে যাবে।

ছেলেটা এই দজ্জাল মেয়েটাকে আর কিচ্ছু বলার সাহস পেলো না। তবে জীবনে এই প্রথম বার মেয়েটার সাথে 'আলগা পিরিত' দেখাল। টিস্যু বের করে নিজ হাতে ঠোঁটের লাল লিপস্টিক মুছে দিলো। সাদা টিস্যু পেপারে মেয়েটার টকটকে লাল ঠোঁটের ছাপ বসে যাচ্ছে। এই টিস্যু পেপারটা ফেলে দেওয়া যাবে না, যত্ন করে বুক পকেটে রেখে দিতে হবে।
...................................................
[একটা ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাস এরকমই ছিলো। তবে স্ট্যাটাসের প্রথম অংশটুকু তার নিজের জীবনের সাথে মিল থাকলেও পরের অংশটুকু শুধুই কল্পনা।]

কোনো এক ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেই ছেলেটি তার জুটিসহ রিকসায় করে ঘুরছিল। মেয়েটি হঠাৎ বলল,
: তুমি ওরকম স্ট্যাটাস যে দিলে, সবাই তো মনে করবে এটা আমাদের ঘটনা!
- প্রথম অংশটুকু তো আমাদের ঘটনাই।
: কী! তার মানে তুমি আমাকে দজ্জাল বলেছ?
- তুমি তো দজ্জালই। সমস্যা নেই, দজ্জাল মেয়েই আমার পছন্দ। আর কেউ কি জানে যে তোমাকে কল্পনা করে লিখেছি?
: জানুক আর না জানুক লিখেছ তো। তুমি এক্ষুনি এই স্ট্যাটাস ডিলিট করবে।
- আচ্ছা, আচ্ছা। করছি।
: থাক, হয়েছে। ডিলিট করতে হবে না। সবাই যা বোঝার বুঝে গেছে। আচ্ছা, সত্যিই তুমি কি টাইপের ছেলে গো? আমি বলা মাত্রই তুমি ডিলিট করতে গেলে কেন? আমার সব কথাই কি তোমার শুনতে হবে? মাঝেমাঝে কোন কথা না শুনে ঝগড়া করতে পারো না?
- কি ব্যাপার? আমার গল্পটা কি মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে নাকি?
: কেন? নায়িকা হিসেবে কি আমি পারফেক্ট না?
- পারফেক্ট, কিন্তু আমার কাছে কিন্তু টিস্যু পেপার নেই তো!
: জানতাম তোমার কাছে থাকবে না, সমস্যা নেই। আমার অনেকদিনের শখ তোমার গালে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দিই। সবাই আমার সীলমোহরযুক্ত তোমাকে দেখবে আর হাসবে। কোন মেয়ে আর কখনো তোমার দিকে তাকাবে না। সবাই জানবে এই সীলমারা পাগল ছেলেটা শুধুই আমার।

অতঃপর ছেলেটি নিজের লেখা গল্পে, নিজেই নায়ক হয়ে গেলো।

(মোহর ভালোবাসার)

#প্রেম #শুধু_তোমার_জন্য #প্রাপ্তমনস্কদের_জন্য

©উshaস চttopaধ্যায়~
< তাং- ১৩|০২|২০২২ খ্রিস্টাব্দ >
৷ব্যারাকপুর | কলকাতা৷

*-*-*

ভালো লাগলে কমেন্ট ও ফিডব্যাক এর মাধ্যমে উৎসাহ দেবেন, পাশে থাকবেন!😊🙏🏼