Saturday, 5 June 2021

বিদায় কুট্টি, চললাম আমরা...

প্রিয় দেবু ঘোষ,
এই পৃথিবী থেকে আমরা চলে গেলাম, তোকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গেলাম, আশা করি তুই নিশ্চয়ই করবি। আমার ঘরের যা কিছু জিনিস আছে, দায়িত্ব নিয়ে বিক্রি করে দিবি এবং আমি যে ভাবে বলে যাচ্ছি সেই ভাবে টাকা দিয়ে দিবি। আমার যে টাকা বাইরে পড়ে আছে সেগুলি আর নাই বা নিলি, আমার ব্যবসার টাকা ....
বলে কাকে কত টাকা দিয়ে যেতে হবে তার এক লিস্ট তৈরি করলেন সুবীর বাবু! এতক্ষণে নিজের ছেলেকে বালিস চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছেন, বউ পাশে পাথর হয়ে বসেই রয়েছে, কত মানত করে এই ছেলে পেয়েছিলেন, নিজেই যখন থাকবো না তখন আর দুঃখ করার দরকার নেই!

-আর উপায়ও তো নেই! কত জায়গায় লজ্জিত হতে হয়, লজ্জার মাথা খেয়ে রোজ ধার-বাকি তে নিয়ে আসি। আর না পেরে এইটাই আমি স্থির করেছি!
--সত্যিই তো, এরপর তো লোকে দেখলে ছি ছি করবে! কিছুই যখন করার নেই তখন কাজটা করেই ফেলো।
-আমায় ক্ষমা করো, বলেই বউয়ের গলাটা টিপে ধরলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়ল, তার স্ত্রীয়ের শরীর, পাশেই পড়ে আছে নিজেদের ছেলের লাশ
-আমাদের দিন শেষ ... বলেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন সুবীর গুহ!

সুবীর বাবু যার একটি রেডিমেড কাপড়ের দোকান ছিল।
না! দোকান বলতে ঠিক এখন যা বোঝায় তা নয়, তবু সোদপুরের রাস্তার ধারে একটা টিনের দেওয়াল ঘেরা একটি অস্থায়ী দোকান। করোনা কালের আগে বেশ ভালোই চলছিল তাদের, পুজো, ঈদ, মহরম, পয়লা বৈশাখ এইসব মিলিয়ে ভালই পসার হয়েছিল। ছোট দোকান হলেও ব্যস্ততা তো কম নয়, সেই সকাল থেকে একনাগাড়ে একেবারে রাত ১২ টা, লাস্ট ট্রেন যতক্ষণ পর্যন্ত না যেত। তিনজনের সংসার সুবীর বাবু, তার বউ, আর তাদের ছেলে, এই তো দু বছর আগে এইচ এস দিল! করোনার জেরে লকডাউন। আর তাতেই রোজগার বন্ধ। স্ত্রী ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এদিকে বাজারে দেনার পর দেনা। কীভাবে ঋণ মেটাবেন বুঝে পাচ্ছিলেন না সুবীর গুহ।

সোদপুর যে অঞ্চলে কিছুদিন আগে ভাড়া এসেছিলেন সুবীর গুহ, সে জায়গায় বেশ ক'জন ধার দেনা দিয়ে তার সাহায্য করেছে, তবু এভাবে দিনের পর দিন তো চলতে পারে না! গত দু-তিন দিন ধরে এলাকার মানুষরা তাঁদের দেখতে পাচ্ছিলেন না। হঠাত্‍ শুক্রবার(৪তারিখ) তাঁদের ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। আশেপাশের বাসিন্দারা খড়দহ থানায় ফোন করে। পুলিস এসে দরজা ভেঙে সুবীর বাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে।

পাশেই পাওয়া যায় তার স্ত্রী ও তার একমাত্র ছেলেকে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই চিঠি, সেখানে স্পষ্ট কতটা সমস্যার মধ্যে পড়েছিলেন তাঁরা। সেখানেও তিনি দেনা মেটানোর কথাই বলে গিয়েছেন। দেবু ঘোষ নামের কাউকে লিখেছেন সেই চিঠি। তাকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন, বাড়ির জিনিস পত্র বেচে সেই টাকা দেনা পাওনাদের দিয়ে দিতে বলেছেন তিনি। চিঠির শেষে লেখা রয়েছে, বিদায় কুট্টি এবং তারিখ ২/৬/২০২১...

[বিঃদ্রঃ- ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে] 

Friday, 4 June 2021

মিছে গর্বের কাহিনী ...

ক' বছর আগে খুব কাছের এক বন্ধুর উপর রাগ করেছিলাম, খুবই সামান্য এক বিষয়ে।


প্রতিদিন সুযোগ না হলেও প্রায়ই দুজনের দেখা হতো, কিন্তু! কি জানি কি মনে করে আমরা কেউই কারো সাথে কথা বলতাম না। একদিন পাড়ার দোকানে আমরাই দুজনে মুখোমুখি, বন্ধু মুচকি হেসে বললো - 'কিরে! কেমন আছিস?'
আমি সেদিন অহেতুক একটু বেশি ঘ্যাম নিয়ে নিয়েছিলাম, উত্তর দিইনি আর। ভেবেছিলাম দু-একদিন পর ঠিক করে নেবো সবকিছু। মনে মনে যে খুশি হইনি তা নয়, 'সেই তো তুই আগে আসলি,' এরাম একটা ভাব ছিল আমার মধ্যে!

বন্ধুটি আমার দুদিন পরই বাইক এক্সিডেন্টে মারা গেলো! সুযোগ দিলোনা আমাকে কিছুরই...

আমার আর ঠিক করা হলো না বন্ধুত্বটা!

জিনিসটা আজও আমায় গভীর ভাবে নাড়া দেয়! নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়, বন্ধু আমার মুচকি হেসে বলছে -  "সেদিন একটু কথা বললে তোর কি খুব ক্ষতি হতো? যাক্ এখন তোর গর্বের সাথে ভালো থাকিস!"

মানুষের জীবন আর কচুপাতার জলের ভেসে থাকার মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ নেই, ক্ষণস্হায়ী জীবনে মান অভিমানগুলোও পুষে রাখাটা বোকামী। হঠাৎ করে কখন যে কে কাকে বিবেকের কাছে অপরাধী করে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যাবে বলা খুব মুশকিল।

যতোক্ষণ পর্যন্ত সুযোগ আছে ততোক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত, নিঃস্বার্থ ভাবে!
নিজেকে বাহাদুর বা সুপেরিয়র ভাবার কোনো কারণ আদৌ নেই, মানুষের ফুসফুস আর বেলুনের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্যও নেই, দুটোতেই হাওয়া ভরা থাকে, আনুমানিক পাঁচশো মিলিলিটার।
হাওয়া কে তো ধরে রাখা যায়না। বায়বীয় পদার্থ, উড়ে যায়, উড়ে যাবেই!

মাত্র পাঁচশো মিলিলিটার হাওয়ার গর্বে গর্বিত মালিক হয়ে, ইয়া বড়ো ভাব নেওয়াটাই আসলেই ব্যাপক মূর্খতা!

©Uষস চttopaধ্যায়~