#ভূতুড়ে_গল্প
-স্টিল এ প্লেস ফর ওয়ান-
হোটেলের রিসেপশান থেকে রুমের চাবিটা নিয়ে এলিভেটারের দিকে পা বাড়াল অয়ন। অফিসের কাজে একদিনের জন্য শিকাগো শহরে এসেছে সে, কাজ শেষ হলে আগামীকাল ফিরে যাবে টরোন্টোতে। কাল সারাদিন একটার পর একটা মিটিং এ ব্যস্ত থাকতে হবে, সে সব সারা হলেই দৌড় দেবে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। সেজন্য শিকাগো শহরটা ঘুরেফিরে দেখবার আজই যা সুযোগ।
রুমটা খুব পছন্দ হয়ে গেল অয়নের। তিনতলার রুম, রাস্তা মুখো। জানালা দিয়ে লেক মিশিগান দেখা যায়। নীল রঙের জল, উপরে নীল আকাশ। চোখ জুড়িয়ে যায় একেবারে। লেক মিশিগান এতটাই বড়ো যে সমুদ্র বলে এক-একসময় ভ্রম হয়, শুধু ঢেউ নেই, একদম শান্ত।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ল অয়ন। দিনের আলো থাকতে থাকতে শহরটাতে যতটা পারা যায় চক্কর দিয়ে নিতে হবে। কাল আর সময় হবে না।
শিকাগো শহরে দেখবার জিনিসের অভাব নেই। বিল্ডিং এর আর্কিটেকচার দেখেই তো একবেলা দিব্বি কাটিয়ে দেয়া যায়। একটার থেকে আরেকটা সুন্দর। বেশিরভাগ আধুনিক ডিজাইনে তৈরি, কিছু কিছু অবশ্য পুরানো ধাঁচেরও রয়েছে। এছাড়া রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক, রয়েছে পিয়ের বা জাহাজঘাটা। শহরের প্রাণকেন্দ্র বা ডাউনটাউনে রয়েছে ম্যাগনিফিসেন্ট মাইল--- শপিং, হোটেল, রেস্তোরা, মিউজিয়ামের এক স্বর্গরাজ্য।
একবেলার মধ্যে যতটুকু সম্ভব ঘোরাঘুরি করে রাতের খাবার খেয়ে রুমে ফিরে এল অয়ন। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হবে, কাল খুব ধকল যাবে।
মাঝরাতে ঝটকা দিয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল অয়নের। রাস্তার আলো ঘরের মধ্যে ত্যারছাভাবে এসে পড়েছে। পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু ঘুম এলোনা। জায়গা বদল হয়েছে বলে হয় তো, ঘুমের প্রবলেম হতেই পারে। কী মনে করে বিছানা ছেড়ে জানালার সামনে এসে দাঁড়ালো। এত রাতে নীচের রাস্তা পুরো ফাঁকা। রাস্তার দুধারে সারি সারি গাড়ি পার্ক করে রাখা। তারিমধ্যে হঠাৎ একটা গাড়িতে চোখ আটকে গেল ওর। গাড়িটা বহু পুরোনো আমলের ঘোড়ার গাড়ি, সামনে কোচওয়ান বসা। আশ্চর্য হয়ে গেল অয়ন। শিকাগোর মত অত্যাধুনিক শহরে এ আদ্যিকালের গাড়ি এল কোথা থেকে? এত রাতে এখানে করছেই বা কী? ভাবতে ভাবতেই কোচোয়ান মুখ তুলে সরাসরি অয়নের দিকে তাকালো। ওকে উদ্দেশ্য করে বলল
--- স্টিল এ প্লেস ফর ওয়ান/একজনের জায়গা হবে!
চমকে এক পা পিছিয়ে এল অয়ন। অজানা ভয়ের এক ঠান্ডা স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল। কোচোয়ানের মুখটা ভয়ংকর, বীভৎস, অস্বাভাবিক। চোখ সরিয়ে নিল অয়ন। ঠিক তখনি খেয়াল করল ঘোড়ার গাড়িটা আসলে পুরোনো আমলের লাশবাহী গাড়ি। পাশাপাশি দুটা কফিন শোয়ানো রয়েছে তাতে। একপাশে কিছু জায়গা খালি রয়েছে, সেখানে আরেকটা কফিনের জন্য জায়গা খালি রয়েছে।
ছিটকে জানালা থেকে সরে এল অয়ন। বাকি রাত কাটালো অস্বস্তির মধ্যে, আধো ঘুম আধো জাগরণে।
পরেরদিন।
গতরাতের কথা মনে পড়তে হাসি পেয়ে গেল অয়নের। যত্তসব আজগুবী ব্যাপার। নিশ্চয় স্বপ্ন দেখেছিল সে, সেটাকে সত্যি বলে ধরে নিয়েছে। নাহলে শিকাগো শহরে মাঝরাতে পুরোনো আমলের লাশবাহী ঘোড়ার গাড়ি দেখা সম্ভব? চটপট তৈরি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল সে। বাকি দিনটা এত ব্যস্ততার মধ্যে গেল যে গতরাতের কথা কখন মন থেকে উধাও হয়ে গেল, নিজেও টের পেলনা।
বিকেল চারটের দিকে কাজকর্ম চুকে গেল। এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে। এলিভেটর ধরার জন্য ল্যান্ডিং এ এসে অপেক্ষা করতে লাগল সে। এ অফিসটা তেরোতলায়। এলিভেটর আসতে বেশ খানিকটা সময় নিল। অপেক্ষা করে করে যখন ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে যাবে, ঠিক তখনি পিং শব্দে এলিভেটরের দরজাটা খুলে গেল। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়। এলিভেটরে গিজগিজ করছে মানুষ। এতো ঠাসাঠাসির মধ্যে ঢুকবে কী ঢুকবে না যখন ভাবছে, ভীড়ের পিছন থেকে একজনের গলার আওয়াজে চমকে উঠল অয়ন
--- স্টিল এ প্লেস ফর ওয়ান, ইউ ক্যান কাম ইন!
গতরাতের সেই কোচওয়ান। ভয়ংকর, বীভৎস, অস্বাভাবিক তার চেহারা। অয়নকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বলেছে সে।
অজানা অস্বস্তি আর ভয় নিয়ে অয়ন বলে ফেলল
--- ই..ইউ গাইজ গো এহেড। আই উইল টেক দা নেক্সট এলিভেটর।
---অ্যাস ইউ উইশ মাই সান..
পিং শব্দে এলিভেটরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখের ঘাম মুছতে লাগলো অয়ন, পরের মুহূর্তেই বন্ধ এলিভেটর থেকে মর্মান্তিক আর্তনাদ ভেসে এল। কেবল ছিঁড়ে, প্রচন্ড গতিতে এলিভেটর একতলায় গিয়ে আছড়ে পড়ল, খুব সম্ভবত কেউ-ই আর বেঁচে নেই।
[বিঃদ্রঃ - এটা আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় লোকমুখে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় গল্প। ধারণা করা হয় যে এর উৎপত্তি আয়ারল্যান্ডে, একটি সত্য ঘটনার উপরে ভিত্তি করে। জনপ্রিয় গল্পটির ভাবানুবাদ করলাম বাঙালী পটভূমিকায়।]
#ভুত #গল্প #ভয়